আহলে হাদিস আন্দোলন বাংলাদেশ: দাওয়াতি কার্যক্রম ও সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ।

Ahle Hadith Movement Bangladesh – আহলে হাদিস আন্দোলন বাংলাদেশ: দাওয়াতি কার্যক্রম ও সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ

লেখক: S M Nahid Hasan

বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে আহলে হাদিস আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। সম্প্রতি, ঈদের সালাত আদায় করতে গিয়ে আহলে হাদিস আন্দোলনের প্রধান কার্যালয় আল মারকাজু সালাফি, আম চত্তরে একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণের সুযোগ হয়। এতে আহলে হাদিস আন্দোলনের বর্তমান অবস্থা, তাদের দাওয়াতি কার্যক্রম ও সাম্প্রতিক কিছু চ্যালেঞ্জ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে।


আহলে হাদিস আন্দোলনের অবদান

আহলে হাদিস আন্দোলন বাংলাদেশে শিরক ও বিদআতের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ শিক্ষিত মানুষকে কুরআনের তাফসির পড়া, নবিজীর সীরাত অধ্যয়ন, ফিকহের দলিল বোঝা এবং সামগ্রিকভাবে দ্বীন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করছে। এটি নিঃসন্দেহে তাদের একটি বড় অর্জন।

তবে দুঃখজনকভাবে, আহলে হাদিসের ব্র্যান্ডিং তাদের প্রকৃত স্কলারদের মাধ্যমে হয়নি। বরং এমন কিছু ব্যক্তিদের মাধ্যমে হয়েছে, যাদের নিয়ে বিতর্ক রয়েছে এবং যাদেরকে আহলে হাদিসের বিজ্ঞ স্কলাররাও পছন্দ করেন না। ফলে, সম্প্রতি অনেক মানুষ এই আন্দোলন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।


আহলে হাদিস আন্দোলনের চ্যালেঞ্জ ও সমাধান

আলোচনার ভিত্তিতে আহলে হাদিস আন্দোলনের কিছু চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাব্য সমাধান নিচে উল্লেখ করা হলো:

১) অন্যায়ভাবে মানুষকে দোষারোপ করা

অনেক সময় দেখা যায়, কোনো ভুল বা ত্রুটি শতকরা পাঁচ ভাগ লোকের হলেও সেটাকে এত বেশি বাড়িয়ে বলা হয় যে, মনে হয় সমস্যাটি ৫০ ভাগের। এতে স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় এবং তারা শত্রুতা পোষণ করে।
সমাধান:
– মতের অমিল হলেও প্রতিপক্ষকে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়ে কথা বলা উচিত।
– কঠোর সমালোচনার পরিবর্তে মানুষকে ধীরে ধীরে বুঝানোর চেষ্টা করা উচিত।

২) ছোটখাটো মাসালায় অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া

নামাজের ছোটখাটো মাসালায় এত বেশি আলোচনা হয় যে, মৌলিক বিষয় যেমন তাওহীদ, শিরক ও বিদআতের বিরুদ্ধে দাওয়াত মানুষের কাছে গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে।
সমাধান:
– দাওয়াতি কাজের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত মানুষকে প্রকৃত অর্থে ভালো মুসলিম হিসেবে গড়ে তোলা।
– দলগত পরিচয়ের চেয়ে ইসলামের মৌলিক শিক্ষা প্রচারে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

৩) মাযহাব সম্পর্কে অতিরিক্ত কঠোরতা

অনেক সময় এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যেন মুজতাহিদ ইমামগণ নিজেদের ইজতিহাদ কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতে করেননি, বরং কেবল বাপ-দাদার থেকে শুনে মত দিয়েছেন।
সমাধান:
– মাযহাবের আলিমদের যথাযথ সম্মান করা উচিত এবং তাদের ইজতিহাদের গুরুত্ব স্বীকার করা উচিত।
– কখনোই মাযহাবকে কুরআন-হাদিসের বিপরীতে দাঁড় করানো যাবে না।

৪) রাজনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুতে নিষ্ক্রিয়তা

অনেক সময় সামাজিক বা রাজনৈতিক ইস্যুতে আহলে হাদিস নেতৃবৃন্দ কোনো ভালো দিকনির্দেশনা দেয় না, বরং “ফিতনা” বলে এড়িয়ে যায়। ফলে তারা বাস্তব জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলোর সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়।
সমাধান:
– সামাজিক বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
– সরকারের নীতি বা দরবারের কার্যক্রম যৌক্তিকভাবে বিশ্লেষণ করা উচিত।

৫) অপরিপক্ক বক্তাদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি

বর্তমানে কিছু বক্তা জ্ঞানের চেয়ে পরিচিতির কারণে জনপ্রিয় হয়েছেন। অনেকেই পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও ধর্মীয় বিষয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন, যা বিভ্রান্তির কারণ হচ্ছে।
সমাধান:
– শুধুমাত্র বিজ্ঞ ও অভিজ্ঞ স্কলারদের দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া উচিত।
– সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপরিপক্ক বক্তাদের প্রচার সীমিত করা প্রয়োজন।

৬) শিক্ষার ক্ষেত্রে ঘাটতি

আহলে হাদিসের অনেক বক্তার কুরআন তেলাওয়াত শুদ্ধ নয় এবং আরবি ভাষা, ফিকহ ও ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান নেই। তবে হাদিস মুখস্থের বিষয়ে তারা ভালো।
সমাধান:
– আরবি ভাষা ও ফিকহ শিক্ষার প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
– বক্তাদের মধ্যে কুরআন-হাদিসের গভীর জ্ঞান অর্জনের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

৭) যয়ীফ হাদিসের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন

অনেক সময় আহলে হাদিস স্কলাররা যয়ীফ হাদিসকে জাল হাদিসের মতো গণ্য করেন এবং আলোচনার টেবিল থেকে সরিয়ে দেন।
সমাধান:
– যয়ীফ হাদিসকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য না করে যথাযথ গবেষণা ও পর্যালোচনা করা উচিত।
– শুধুমাত্র নির্দিষ্ট স্কলারদের তাকলিদ না করে সকল বিশ্বস্ত আলিমের গবেষণা বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

৮) বিভেদমূলক সম্বোধন পরিহার

অনেক সময় “হানাফি,” “মাযহাবি” ইত্যাদি সম্বোধন নেতিবাচকভাবে ব্যবহার করা হয়, যা ঘৃণা তৈরি করে।
সমাধান:
– মতামত আলোচনা করার সময় প্রত্যেককে সম্মান দেওয়া উচিত।
– বিভেদমূলক শব্দ পরিহার করে যুক্তিবাদী আলোচনা করা প্রয়োজন।


আহলে হাদিস আন্দোলনের ভবিষ্যৎ: করণীয় কী?

আহলে হাদিস আন্দোলনের বিভিন্ন শাখা রয়েছে, যেমন:
আন্দোলন
জমিয়ত
শাইখ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফের অনুসারী দল
শাইখ মুজাফফর বিন মুহসিনের অনুসারী দল
ড. মোসলেহ উদ্দিনের অনুসারী দল

সব শাখার বিষয়ে উপরোক্ত অভিযোগ প্রযোজ্য নয়, তবে আহলে হাদিস আন্দোলনের ব্র্যান্ডিং সঠিকভাবে হয়নি। বরং বিতর্কিত ব্যক্তিদের বক্তৃতার মাধ্যমে এই আন্দোলন পরিচিত হয়েছে, যা এর গ্রহণযোগ্যতাকে ব্যাহত করেছে।

আমি নিজে যদি সুযোগ পাই, তাহলে আহলে হাদিস আন্দোলনের দাওয়াতকে আরো গ্রহণযোগ্য করে তুলতে কাজ করতে আগ্রহী। যাতে তাদের দাওয়াত ভুল বোঝাবুঝির কারণে মানুষের কাছে বিতর্কিত না হয়।


উপসংহার

শাইখ মামুনুল হক বলেছেন, “আহলে হাদিস একটি মানহাজের নাম, যেমন অন্যান্য ফিকহি মাযহাবগুলোরও নিজস্ব পদ্ধতি রয়েছে।” আসলে বড় বড় আলিমরা আহলে হাদিসকে ভ্রান্ত ফিরকা হিসেবে সাব্যস্ত করেন না।

সকল মাসলাকের মধ্যেই ভালো ও খারাপ উভয় উদাহরণ রয়েছে। তাই শুধু খারাপ দিক নিয়ে আলোচনা না করে, বরং ইতিবাচক দিককে সামনে রেখে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়াত দান করুন এবং ইসলামের প্রকৃত দাওয়াতের কাজকে সহজতর করুন। আমীন।


📢 সংবাদটি আপনার মতামত জানাতে নিচে কমেন্ট করুন!
📌 শেয়ার করুন এবং ইসলামের দাওয়াত ছড়িয়ে দিন।

 

🔗 সূত্র: news.mahbubosmane.com

সঠিক মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনার বিজনেসের সফলতা নিশ্চিত করুন! 

মাহবুবওসমানী.কম দিচ্ছে আনলিমিটেড ফেসবুক অ্যাড ক্রেডিট, গ্যারান্টেড SEO র‍্যাঙ্কিং, এবং প্রফেশনাল ওয়েব ডেভেলপমেন্ট – সবকিছু একসাথে, ইংশাআল্লাহ্‌!

১৪+ বছরের অভিজ্ঞতা – গ্যারান্টেড SEO র‍্যাঙ্কিং
৮০০+ সন্তুষ্ট ক্লায়েন্ট – আনলিমিটেড ফেসবুক অ্যাড ক্রেডিট
প্রমাণিত ফলাফল, সর্বোচ্চ ROI – প্রফেশনাল ওয়েব ডেভেলপমেন্ট

📩 আজই যোগাযোগ করুন এবং আপনার ব্যবসার সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিন!
🌍 ভিজিট করুন: MahbubOsmane.com

Related posts

Salafi – আহলে হাদিস ও লামাযহাবীদের কিছু ভ্রান্ত আক্বিদা!

by IDCAdmin
10 years ago

Dos and don’ts on Eid day -ঈদের দিনে করনীয় ও বর্জনীয়

by IDCAdmin
4 years ago

Shabe-Barat in the eyes of Qur’an and Hadith -কোরআন ও হাদীসের দৃষ্টিতে শবে-বরাত

by IDCAdmin
4 years ago
Exit mobile version