ইসলামে শিক্ষা ও তার গুরুত্ব / Education

মুহাম্মাদ এনামুল হাসান সকল সৃষ্টির মধ্যে বিশেষভাবে মানুষকেই আল্লাহ তাআলা জ্ঞান অর্জনের যোগ্যতা দান করেছেন। এর মাধ্যমে মানুষ যেমন তার পার্থিব প্রয়োজন পূরণের উত্তম পন্থা আবিষ্কার করতে পারে তেমনি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি এবং আখিরাতের সফলতা-ব্যর্থতার জ্ঞানও ধারণ করতে পারে। ন্যায়-অন্যায়বোধ এবং আসমানী ইলমের উপযুক্ততার কারণেই মানুষের জন্য এসেছে হালাল-হারামের বিধান। মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণীর এই যোগ্যতা নেই। তাদের জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় উপকরণ তাদের সাথেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেমন শীত-গ্রীষ্মের প্রকোপ থেকে আত্মরক্ষার জন্য পশম, অন্ধকারে পথ দেখার জন্য চোখে বিশেষ শক্তি ইত্যাদি। তদ্রূপ প্রত্যেক প্রাণীর মধ্যেই রয়েছে জীবন ধারণের জন্য সহজাত বোধ ও প্রবণতা। যার দ্বারা চালিত হয়ে তারা আত্মরক্ষা করে ও বংশ বিস্তার করে। কিন্তু এ পর্যন্তই। পশু-পাখির জীবন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে স্বভাবের গন্ডিতে বাধা। স্বভাবের বৃত্ত থেকে তাদের উত্তরণ ঘটে না। পক্ষান্তরে মানুষ শিক্ষা অর্জন করে এবং শিক্ষা দান করে। শিক্ষার মাধ্যমে অজানাকে জানার এবং জানা বিষয়কে কাজে লাগিয়ে অজানার সন্ধান করার যোগ্যতা একমাত্র মানুষেরই আছে। তাই পৃথিবীর শাসন ও নিয়ন্ত্রণের ভার তাদের উপর অর্পিত। ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। হেরা গুহায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর সর্বপ্রথম যে ওহী নাযিল হয় তা হচ্ছে, ‘পড়, তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্তপিন্ড থেকে।’-সূরা আলাক : ১-২ আল্লাহ তাআলার আদেশে মানুষ যেমন লাভ করেছে জীবনের আলো তেমনি আল্লাহরই নিকট থেকে সে লাভ করেছে ইলমের নূর। ইলমের মাধ্যমে মানুষ নবজন্ম লাভ করে। আল্লাহর মারিফত যখন মানুষের মধ্যে আসে তখনই সে প্রকৃত মানুষ হয়। শিক্ষাকে যদি বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে দেখা যাবে যে, শিক্ষা মৌলিকভাবে দুই প্রকার : জাগতিক শিক্ষা ও দ্বীনী শিক্ষা। মানুষের জাগতিক প্রয়োজন পূরণের উপযোগী জ্ঞান ও বিদ্যা হচ্ছে জাগতিক শিক্ষা। যেমন বিজ্ঞান, চিকিৎসা, গণিত ইত্যাদি। এই শিক্ষার মূল সূত্র অভিজ্ঞতা। পক্ষান্তরে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির জ্ঞান হচ্ছে দ্বীনী শিক্ষা। এই শিক্ষার মূল সূত্র ওহী।  

জাগতিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা

  আল্লাহ তাআলা দুনিয়াকে দারুল আসবাব (উপকরণের জগত) বানিয়েছেন। এখানে মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজন রয়েছে। এই প্রয়োজনগুলো পূরণের জন্য এবং অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে আঞ্জাম দেওয়ার জন্য মানুষকে দান করা হয়েছে পঞ্চ ইন্দ্রিয় ও জ্ঞান-বুদ্ধি। এগুলোকে কাজে লাগানোর জন্য ইসলাম পূর্ণমাত্রায় গুরুত্ব দিয়েছে।  

জাগতিক জ্ঞান অর্জনের হুকুম

  এ প্রসঙ্গে ইমাম গাযালী রাহ.বলেন, অনুমোদিত জাগতিক জ্ঞান দুই ভাগে বিভক্ত : ১. যা চর্চা করা অপরিহার্য ২. যা চর্চা করা উত্তম। প্রথমটি হচ্ছে ওই সব জ্ঞান যা জীবন যাপনের ক্ষেত্রে অপরিহার্য। যেমন চিকিৎসা বিদ্যা। কেননা, স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য এই জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তদ্রূপ গণিত। কেননা, লেনদেন, মিরাছ বন্টন ইত্যাদি বিষয়ে তা প্রয়োজন। গোটা জনপদে যদি এই জ্ঞানের পারদর্শী কেউ না থাকে তাহলে সকলেই কষ্টে পতিত হবে। একইভাবে কৃষি, বয়ন, রাষ্ট্রনীতি ইত্যাদির মৌলিক পর্যায়ের জ্ঞানও অপরিহার্য।-ইহইয়াউ উলূমিদ দ্বীন ১/২৯-৩০ পক্ষান্তরে যা মানুষকে কুফর ও ইলহাদের দিকে টেনে নিয়ে যায় তা চর্চা করা হারাম। যেমন ইসলামবিরোধী প্রাচীন ও আধুনিক দর্শন, কুফরী সাহিত্য ইত্যাদি। তদ্রূপ অকল্যাণকর ও অপ্রয়োজনীয় বিষয় চর্চা করাও নিষেধ। মোটকথা, পার্থিব জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয় ও কল্যাণকর জ্ঞান অর্জন ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকেও কাম্য। তাই জাগতিক জ্ঞান-বিজ্ঞানকে মৌলিকভাবে অনৈসলামিক মনে করার অবকাশ নেই। তবে প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণের ফলে শিক্ষার উপাদান ও পরিবেশে নাস্তিকতা ও ধর্মহীনতার অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়েছে। যা একটি মুসলিম দেশের জন্য সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। সামান্য চিন্তা করলেই দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জনের ক্ষেত্রে এই সব দর্শন ও অনৈসলামিক পরিবেশের কোনো প্রয়োজন নেই। এ প্রসঙ্গে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যে, জাগতিক জ্ঞান ও কলাকৌশল অর্জন করার একটি খালিছ দ্বীনী দিকও রয়েছে। সেক্ষেত্রে তা দ্বীনী খিদমত হিসেবেই গণ্য হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষার যুগে মুসলমানদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সামরিক শক্তিতে সর্বোচ্চ পারদর্শিতা প্রয়োজন। কুরআন মজীদে মুসলমানদেরকে আদেশ করে বলা হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের সাধ্যমতো শক্তি অর্জন কর …।’ -সূরা আনফাল : ৬০ অতএব ইসলামের খিদমতের জন্য আধুনিক প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হওয়ার জন্য জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চার করা হলে সেটা আর দুনিয়াবী কাজ থাকে না, সম্পূর্ণরূপে ইসলামের খিদমত হিসেবে গণ্য হয়। তদ্রূপ দ্বীনের প্রচার-প্রসারের জন্য কম্পিউটার শিক্ষা এবং প্রকাশনার অত্যাধুনিক মাধ্যমগুলোর জ্ঞান অর্জন করার প্রয়োজন রয়েছে। মোটকথা, খালিছ দ্বীনী খিদমতের জন্য বিভিন্ন জাগতিক শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। দ্বীনী খিদমতের উদ্দেশ্যে তা অর্জন করা হলে তা দ্বীনী কাজে পরিণত হয় এবং তাতে ভিন্ন মাত্রা যুক্ত হয়। উপরোক্ত আলোচনা থেকে এই প্রশ্নেরও উত্তর পাওয়া যায় যে, আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় সওয়াব হয় কি না? যদি দ্বীনের খিদমতের উদ্দেশ্যে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় আত্মনিয়োগ করা হয় তবে যে এতে সওয়াব হবে তা তো বলাই বাহুল্য। পক্ষান্তরে হালাল পন্থায় জীবিকা উপার্জন, পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের খিদমত, পরিবার-পরিজনের হক আদায়, সমাজসেবা ইত্যাদি উদ্দেশ্য জ্ঞান অর্জনের পিছনে কার্যকর থাকলে এতেও সওয়াব রয়েছে। কিন্তু এই প্রেরণা তো তখনই সৃষ্টি হতে পারে যদি জাগতিক শিক্ষা অর্জনরত ছাত্রদের মধ্যে আল্লাহমুখিতা তৈরি করা হয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক সত্য এই যে, শিক্ষার উদ্দেশ্য হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি অর্জন, সুনাম-সুখ্যাতি লাভ ইত্যাদি বিষয়কে এত ফলাও করে প্রচার করা হয় যে, শিক্ষার্থীদের মনে উপরোক্ত দ্বীনী চেতনা জাগ্রত হওয়ার সুযোগই হয় না। আমরা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষার পরিবেশ সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে এতটাই ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছি; বরং অনেক ক্ষেত্রে ইসলাম-বিরোধী বানিয়ে রেখেছি যে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইসলামী চেতনা বিকশিত হওয়ার সুযোগই নেই। বলাবাহুল্য, এজন্য কিয়ামতের দিনে দায়িত্বশীলদের অবশ্যই জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হবে।  

 

দ্বীনী শিক্ষা ও তার গুরুত্ব

  দুনিয়ার নিযাম ও ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখার জন্য যেমন জাগতিক শিক্ষার প্রয়োজন তেমনি দ্বীনের হিফাযতের জন্য এবং দুনিয়ার সকল কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টি মোতাবেক হওয়ার জন্য দ্বীনী শিক্ষার প্রয়োজন। মুসলিম সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষ যেন দ্বীন মোতাবেক চলতে পারে এবং হারাম থেকে বেঁচে হালালভাবে জীবন যাপন করতে পারে সেজন্য কুরআন-সুন্নাহয় পারদর্শী একটি জামাআত বিদ্যমান থাকা অপরিহার্য। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে, ‘কেন বের হয় না প্রত্যেক সম্প্রদায় থেকে একটি দল, যাতে তারা দ্বীনের তাফাক্কুহ অর্জন করে এবং ভীতি প্রদর্শন করে তাদের জাতিকে যখন তারা ফিরে আসে তাদের নিকট। সম্ভবত তারা আল্লাহ ভীতি অর্জন করবে।’ সূরা তাওবা : ১২২ এজন্য প্রত্যেক জনপদে দ্বীনের ইলমে পারদর্শী ব্যক্তিত্ব বিদ্যমান থাকা ফরযে কিফায়া। আর এই উদ্দেশ্যে দ্বীনের ইলমের চর্চা অব্যাহত রাখা সমাজের অপরিহার্য কর্তব্য। কুরআন-সুন্নাহর চর্চা ও অনুসরণের অভাব হলে সমাজের সকল অঙ্গনে দুর্নীতি ও অনাচার দেখা দিবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সমাজ যতই উন্নতি লাভ করুক ঈমান ও আল্লাহভীতি না থাকলে তা মানুষের ক্ষতি ও অকল্যাণে ব্যবহৃত হবে। মানুষের সকল আবিষ্কারকে অর্থপূর্ণ ও কল্যাণমুখী করার জন্যই অপরিহার্য প্রয়োজন ইলমে ওহীর চর্চা। তদ্রূপ ইসলামের প্রকৃত শিক্ষাকে সম্পূর্ণ অবিকলভাবে সংরক্ষণ করার জন্য কুরআন-সুন্নাহর বিশেষজ্ঞ তৈরি করা অপরিহার্য। ইসলামের অপব্যাখ্যা ও বিভিন্ন বাতিল মতবাদের স্বরূপ উন্মোচন করে সঠিক ইসলামী শিক্ষা ও ইসলামী চিন্তাধারা পরবর্তী প্রজন্মের নিকট পৌঁছে দেওয়াও আলিমদের কর্তব্য। এ বিষয়ে হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক প্রজন্মের ন্যায়-নিষ্ঠ লোকেরা দ্বীনের এই ইলমকে ধারণ করবে। তারা সীমালংঘনকারীদের বিকৃতি, বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচার এবং মূর্খদের অপব্যাখ্যা থেকে একে রক্ষা করবে।’-সুনানে বায়হাকী ১০/২০৯  

দ্বীনী শিক্ষার ফযীলত

  এশিক্ষার বিষয়বস্ত্ত যেহেতু সরাসরি দ্বীনের সাথে সম্পৃক্ত তাই এর ফযীলতও অন্যান্য শিক্ষার তুলনায় বেশি। নিম্নে এ সংক্রান্ত কিছু আয়াত ও হাদীস উল্লেখ করা হল : ১. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে ইলম দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন বহুগুণ।’ সূরা মুজাদালা : ১১ ২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি যে কুরআন শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়।’-সহীহ বুখারী ২/৭৫২ ৩. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ইলম শিক্ষার জন্য কোনো পথ অবলম্বন করে আল্লাহ তার জান্নাতের পথ আসান করে দেন।’-সহীহ মুসলিম ২/৩৪৫ ৪. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তির চেহারা উজ্জ্বল করে দিন, যে আমার কোনো হাদীস শুনেছে। অতঃপর অন্যের কাছে পৌঁছে দিয়েছে।’-সুনানে আবু দাউদ ২/৫১৫ ৫. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ আল্লাহ তাআলা যাকে প্রভূত কল্যাণ দিতে চান তাকে দ্বীনের প্রজ্ঞা দান করেন।’ – সহীহ বুখারী ১/১৬ ৬. অন্য হাদীসে আছে, ‘আলিমগণ নবীগণের ওয়ারিস।’-তিরমিযী ২/৯৭ ৭. আরেক হাদীসে এসেছে, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ইলম অনুসন্ধানে বের হয় সে ফিরে আসা পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় থাকে।’-জামে তিরমিযী ২/৯৩ তবে দ্বীনী ইলমের উপরোক্ত ফযীলত লাভের জন্য শর্ত হল : ইখলাছ। শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এই ইলম অর্জন করতে হবে। পার্থিব কোনো উদ্দেশ্যে তা অর্জন করা যাবে না। পার্থিব সুনাম-সুখ্যাতির উদ্দেশ্যে দ্বীনী ইলম অর্জন করা হলে তার পরিণাম হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। হাদীস শরীফে এসেছে যে, জাহান্নামে সর্বপ্রথম নিক্ষিপ্ত তিন ব্যক্তির একজন হবে ঐ আলিম, যে লোকের কাছে আলিম হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার জন্য ইলম চর্চা করেছে। অন্য হাদীসে বলা হয়েছে, ‘যে দুনিয়াবী স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে এমন ইলম শিখল, যা শুধু আল্লাহর জন্যই শেখা হয় সে কিয়াতমতের দিন জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না।-সুনানে আবু দাউদ ২/৫১৫ মোটকথা, ইসলামে দ্বীনী শিক্ষার যেমন গুরুত্ব রয়েছে তেমনি জাগতিক শিক্ষারও গুরত্ব রয়েছে। পার্থিব প্রয়োজন পূরণ ও সামাজিক ব্যবস্থাপনা ও ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য জাগতিক শিক্ষা অতীব জরুরি। উপরন্তু বহু দ্বীনী কাজের জন্যও জাগতিক শিক্ষার প্রয়োজন পড়ে। পক্ষান্তরে জীবনের সকল কাজ ইসলামের বিধান মোতাবেক করার জন্য দ্বীনী শিক্ষার বিকল্প নেই। দ্বীনী ইলমের চর্চা ও বিকাশের মাধ্যমেই সমাজে ঈমান-আমল, আল্লাহ ভীতি ও আখিরাত-মুখিতা সৃষ্টি হবে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো ছাড়া যেমন আল্লাহ তাআলার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে আখিরাতের কামিয়াবী অর্জন করা যায় না তেমনি দুনিয়ার জীবনও দুর্নীতি, অনাচার, জুলুম ও শোষণ থেকে মুক্ত করা যায় না। এজন্য আখিরাতে কামিয়াবী ও দুনিয়ায় শান্তি নিরাপত্তার জন্য দ্বীনী ইলমের চর্চা অপরিহার্য। এখানে উল্লেখ্য যে, প্রত্যেক মানুষের মেধা, আয়ু ও সামর্থ্য সীমিত, সকল বিষয় একই ব্যক্তি শিখে ফেলবে এটা সম্ভব নয়। অতীতেও এরকম হয়নি। বর্তমানেও হয় না। সমাজে যে ডাক্তার হয় সে একই সাথে অর্থনীতিবিদ, সাহিত্যিক, আইনবিদ, কৃষিবিদ, দার্শনিক সবকিছু হয় না। হতে পারেও না। তাই ইসলামের দিকনির্দেশনাও হচ্ছে প্রতিটি প্রয়োজনীয় বিষয়ে সমাজের কিছু কিছু লোক পারদর্শী হবে। প্রত্যেকে তার স্ব স্ব শিক্ষার মাধ্যমে অন্যকে সাহায্য করবে। এভাবে পুরো সমাজ একটি ইউনিটের ন্যায় হবে। পেশা ও বিষয়বস্ত্তর বৈচিত্র সত্ত্বেও যে বিষয়টি সবাইকে মেলবন্ধনে আবদ্ধ রাখবে তা হচ্ছে ঈমান ও ইসলাম। কর্মক্ষেত্র ভিন্ন হলেও সবার বিশ্বাস ও আদর্শ হবে অভিন্ন এবং এই আদর্শিক অভিন্নতার ভিত্তিতেই সকল মুসলিম হবে ভাই ভাই। মুসলিম শিক্ষাব্যবস্থা ও সমাজব্যবস্থার রূপরেখা এটাই। মুসলিম জাতি যখন বিজয়ীর আসনে ছিল তখন তাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও সমাজব্যবস্থা এমনই ছিল। মুসলমান যদি তাদের গৌরবময় অতীত ফিরে পেতে চায় তাহলে তাদেরকে এ পন্থাই অনুসরণ করতে হবে।

 

 

Islami Dawah Center Cover photo

 

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টারকে সচল রাখতে সাহায্য করুন!

 

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার ১টি অলাভজনক দাওয়াহ প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠানের ইসলামিক ব্লগটি বর্তমানে ২০,০০০+ মানুষ প্রতিমাসে পড়ে, দিন দিন আরো অনেক বেশি বেড়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।

বর্তমানে মাদরাসা এবং ব্লগ প্রজেক্টের বিভিন্ন খাতে (ওয়েবসাইট হোস্টিং, CDN,কনটেন্ট রাইটিং, প্রুফ রিডিং, ব্লগ পোস্টিং, ডিজাইন এবং মার্কেটিং) মাসে গড়ে ৫০,০০০+ টাকা খরচ হয়, যা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। সেকারনে, এই বিশাল ধর্মীয় কাজকে সামনে এগিয়ে নিতে সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে আপনাদের দোয়া এবং আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন, এমন কিছু ভাই ও বোন ( ৩১৩ জন ) দরকার, যারা আইডিসিকে নির্দিষ্ট অংকের সাহায্য করবেন, তাহলে এই পথ চলা অনেক সহজ হয়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।

যারা এককালিন, মাসিক অথবা বাৎসরিক সাহায্য করবেন, তারা আইডিসির মুল টিমের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন, ইংশাআল্লাহ।

আইডিসির ঠিকানাঃ খঃ ৬৫/৫, শাহজাদপুর, গুলশান, ঢাকা -১২১২, মোবাইলঃ +88 01609 820 094, +88 01716 988 953 ( নগদ/বিকাশ পার্সোনাল )

ইমেলঃ info@islamidawahcenter.com, info@idcmadrasah.com, ওয়েব: www.islamidawahcenter.com, www.idcmadrasah.com সার্বিক তত্ত্বাবধানেঃ হাঃ মুফতি মাহবুব ওসমানী ( এম. এ. ইন ইংলিশ, ফার্স্ট ক্লাস )

 

ইলম অর্জনের পদ্ধতি : কিছু প্রয়োজনীয় কথা

 

আবদুল্লাহ আবু মুহাম্মাদ

ইসলামে দ্বীনী ইলম অর্জনের অবকাশ সবার জন্য উন্মুক্ত। যে কোনো বংশের লোক, যে কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষ, যে কোনো অঞ্চলের অধিবাসী কুরআন-সুন্নাহর ইলম অর্জন করতে পারেন; বরং ইসলামে তা কাম্য। কুরআন-সুন্নাহয় এ বিষয়ে উৎসাহিত করা হয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللهُ لَهُ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ যে কেউ ইলমের খোঁজে কোনো পথে চলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। -মুসনাদে আহমদ ১৪/৬৬ ইমাম তিরমিযী রাহ. এ হাদীসের উপর শিরোনাম দিয়েছেন باب ما جاء في فضل الفقه অর্থাৎ ‘ফিকহের (দ্বীনের সহীহ সমঝ) মর্যাদা সংক্রান্ত বর্ণনা’। দ্বীনী ইলম অর্জনের এই সাধারণ সুযোগ ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ সৌন্দর্য। এই সৌন্দর্য উপলব্ধি করা যাবে যদি এ বিষয়ে অন্যান্য সম্প্রদায়ের ধর্ম-গ্রন্থ ও ধর্মীয় বিধিবিধান সম্পর্কে জানা শোনা থাকে। ইসলামের আরেক সৌন্দর্য হচ্ছে দ্বীনী ইলমের চর্চা ও গবেষণার ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা রোধ। ইসলাম একদিকে যেমন ইলম অর্জনের সুযোগ সবার জন্য উন্মুক্ত করেছে অন্যদিকে সঠিক উপায়ে ইলম অর্জন না করে দ্বীনী বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়াকে চরম অপরাধ সাব্যস্ত করেছে। সুতরাং ইসলামে ইলমের ক্ষেত্রে যেমন ব্রাহ্মন্যবাদ বা শ্রেণিবিশেষের ইজারাদারি নেই তেমনি অরাজকতা বা অযোগ্য লোকের অনুপ্রবেশেরও সুযোগ নেই। এই দুই প্রান্তিকতার মাঝে যে ভারসাম্যপূর্ণ নীতি সেটিই ইসলামী নীতি- ইলম অর্জনের সুযোগ সবার জন্য অবারিত আর সঠিক উপায়ে ইলম অর্জন ছাড়া ইলমী সিদ্ধান্ত দেওয়া নিষিদ্ধ।  

 

ইলম অর্জনের সঠিক পদ্ধতি

 

  দ্বীনী ইলম অর্জনের সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে, আলিমগণের নিকট থেকে ইলম অর্জন করা। হযরত আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের বললেন- خُذُوا الْعِلْمَ قَبْلَ أَنْ يَذْهَبَ ‘ইলম অর্জন কর তা বিদায় নেওয়ার আগে’। সাহাবীগণ আরয করলেন- وَكَيْفَ يَذْهَبُ الْعِلْمُ يَا نَبِيَّ اللَّهِ، وَفِينَا كِتَابُ اللَّهِ؟ আল্লাহর নবী! ইলম কীভাবে বিদায় নেবে, আমাদের মাঝে তো রয়েছে আল্লাহর কিতাব? বর্ণনাকারী বলেন, এ কথায় তিনি রুষ্ট হলেন। এরপর বললেন- ثَكِلَتْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ أَوَلَمْ تَكُنِ التَّوْرَاةُ وَالْإِنْجِيلُ فِي بَنِي إِسْرَائِيلَ، فَلَمْ يُغْنِيَا عَنْهُمْ شَيْئًا؟ إِنَّ ذَهَابَ الْعِلْمِ أَنْ يَذْهَبَ حَمَلَتُهُ، إِنَّ ذَهَابَ الْعِلْمِ أَنْ يَذْهَبَ حَمَلَتُهُ তোমাদের  মরণ হোক! বনী ইসরাইলের মাঝে কি তাওরাত ও ইঞ্জীল ছিল না, কিন্তু এতে তো তাদের কোনোই উপকার হল না! ইলমের প্রস্থানের অর্থ তার বাহকগণের প্রস্থান। -মুসনাদে আহমদ ৫/২৬৬; আদদারেমী ১/৮৬, হাদীস ২৪৫ হাদীসের শুরুতে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন ‘ইলম গ্রহণ কর তা বিদায় নেওয়ার আগে’। এরপর ‘ইলম বিদায় নেওয়ার’ অর্থ ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ইলম বিদায় নেওয়ার অর্থ আলিমগণের বিদায় নেওয়া। তাহলে এ হাদীসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইলমের বাহক তথা আলিমগণের নিকট থেকে ইলম গ্রহণ করতে বলেছেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ শিক্ষার প্রতিধ্বনি আমরা শুনতে পাই তাঁর সাহাবীগণের কণ্ঠে। হযরত আবুদ দারদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- مَا لِي أَرَى عُلَمَاءَكُمْ يَذْهَبُونَ وَجُهَّالَكُمْ لَا يَتَعَلَّمُونَ؟ تعلَّموا قَبْلَ أَنْ يُرْفَعَ الْعِلْمُ، فَإِنَّ رَفْعَ الْعِلْمِ ذَهَابُ الْعُلَمَاءِ হায়! তোমাদের আলিমগণ বিদায় নিচ্ছেন কিন্তু তোমাদের বে-ইলম শ্রেণি ইলম অর্জন করছে না। ইলম উঠিয়ে নেওয়ার আগেই ইলম হাসিল কর। ইলম উঠিয়ে নেওয়ার অর্থ আলিমদের প্রস্থান। -আদ দারেমী ২৫১ শুধু একটি উদাহরণ দেওয়া হল। হাদীসের কিতাবে এরকম আরো অনেক উদাহরণ রয়েছে। এটি হচ্ছে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপরোক্ত হাদীসের একটি শিক্ষা। ঐ হাদীস থেকে দ্বিতীয় যে বিষয়টি জানা যাচ্ছে, তা হচ্ছে, শুধু গ্রন্থ নির্ভুল ইলমের জামিন নয় এবং শুধু গ্রন্থ-নির্ভরতা ইলম অর্জনের সঠিক উপায় নয়। এমনকি তা আসমানী কিতাব হলেও না। এ ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক জ্বলন্ত বাস্তবতার- তাওরাত ও ইঞ্জিলের উদাহরণ দান করেছেন। বনু ইসরাইলের মাঝে তো তাওরাত ও ইঞ্জিল ছিল। কিন্তু যোগ্য বাহকগণের বিদায় নেওয়ার পর তাদের সুযোগ্য উত্তরসূরীর অভাবে শুধু তাওরাত-ইঞ্জিলের আসমানী ইলম থেকেই ঐ জাতি বঞ্চিত হয়নি খোদ তাওরাত-ইঞ্জিলের মূল পাঠই হারিয়ে গেছে এবং এর মর্ম ও শিক্ষাও চরম বিকৃতির শিকার হয়েছে। এমনই হয়। কিতাবের যথার্থ শিক্ষা গ্রহণে যদি মানব-মস্তিষ্ক ব্যর্থ হয় এবং কিতাবের আলোয় তার হৃদয় ও কর্ম সংশোধিত না হয় তখন ঐ পাঠক নিজের চিন্তা ও রুচির আলোকে কিতাব ‘সংশোধনে’ প্রয়াসী হয়ে ওঠে। এভাবে এবং আরো বিভিন্নভাবে তাহরীফ ও বিকৃতির সূত্রপাত ঘটে। আর এতো বলাই বাহুল্য যে, কিতাবের সঠিক মর্ম ও শিক্ষা অনুধাবন ও গ্রহণের জন্য এমন প্রাজ্ঞ ও আদর্শ শিক্ষকের প্রয়োজন যিনি হবেন সব অর্থে ঐ কিতাবের বাহক। নতুবা কিতাব জ্ঞান ও আলোর সূত্র হওয়া সত্তে¡ও গ্রহণের উপায় সঠিক না হওয়ার কারণে কিতাবের পাঠক কিতাবের আলো থেকে বঞ্চিত থাকবে। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে, শুধু ব্যক্তিগত অধ্যয়ন ইলম অর্জনের সঠিক পদ্ধতি নয়। এ প্রসঙ্গে আরেকটি হাদীস লক্ষ করুন। আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- মানুষের উপর এমন এক যুগের আগমন ঘটবে যখন অনেক হবে পাঠকের সংখ্যা আর হ্রাস পাবে ফকীহের সংখ্যা আর ইলম তুলে নেওয়া হবে ও রক্তপাত ছড়িয়ে পড়বে। -আলমুজামুল আওসাত তবারানী,  হাদীস ৩২৭৭; আলমুসতাদরাক হাকীম ৪/৪৫৭, হাদীস ৮৪১২ এ হাদীসে দুটো শব্দ আছে : القراء (আলকুররা) এটি قارئ(কারিউন) শব্দের বহুবচন। কারিউন মানে পাঠক। الفقهاء (আলফুকাহা) এটি فقيه (ফকীহুন) শব্দের বহুবচন। فقيه অর্থ বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ। তাহলে এ হাদীসে বলা হয়েছে, ‘অনেক হবে পাঠকের সংখ্যা আর হ্রাস পাবে বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞের সংখ্যা।’ এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, পাঠমাত্রই বিজ্ঞতা নয় এবং পাঠকমাত্রই বিজ্ঞ নয়। এ এমন এক বাস্তবতা যা উপলব্ধি করা খুবই প্রয়োজন। বিষয়টি সব যুগেই প্রাসঙ্গিক ছিল। এখন তা আরো প্রাসঙ্গিক। এ হাদীসে পাঠকের সংখ্যা অনেক হওয়ার সাথে আরো বলা হয়েছে, ‘ইলম তুলে নেওয়া হবে’। ইলম তুলে নেওয়ার অর্থ ইতিপূর্বে বর্ণিত হয়েছে। ঐ অর্থ অনুসারে এ হাদীস থেকে জানা যাচ্ছে যে, পাঠকমাত্রই ইলমের বাহক নয়। এ হাদীসে আরো বলা হয়েছে, ‘রক্তপাত ছড়িয়ে পড়বে’। বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ আলিমের তিরোধানের সাথে এ প্রসঙ্গটির সম্পর্ক যে কত গভীর তা জ্ঞানীমাত্রই উপলব্ধি করবেন।  

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন!

 

আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে  জানতে  লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।

আইডিসি  মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আপনি আইডিসি  মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।

 

এ হাদীসে যে শিক্ষা এসেছে তার প্রতিধ্বনি শুনুন সালাফের কণ্ঠে:

  ইমাম শাফেয়ী রাহ. বলেছেন- مَنْ تَفَقَّهَ مِنْ الْكُتُبِ ضَيَّعَ الْأَحْكَامَ যে (শুধু) বইপত্র থেকে ফিকহ অর্জন করে সে (শরীয়তের) বিধিবিধান ধ্বংস করে।- আলমাজমু’ শরহুল মুহায্যাব ১/৩৮ এ কথা বলার অধিকার তো তাঁর মতো ব্যক্তিদেরই রয়েছে। ইমাম শাফেয়ী রাহ.-এর ইন্তিকাল ২০৪ হিজরীতে। কত আগে, সেই হিজরী তৃতীয় শতকের শুরুতে তিনি এই জ্ঞানগত অনাচার সম্পর্কে বলেছেন এবং এর সূত্র নির্দেশ করেছেন। সালাফের এক জ্ঞানী ব্যক্তির বাস্তবসম্মত উক্তি- من اعظم البلية تشيخ الصحيفة ‘শুধু বই-পত্র উস্তাযে পরিণত হওয়া এক মহাবিপদ।’ কিছু সাধারণ মানুষ নিজেদের একজনকে নেতা বানিয়ে দ্বীনী-ব্যাখ্যা ও বিধিবিধানের মজলিস কায়েম করা ভুল আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- إِنَّ اللَّهَ لاَ يَقْبِضُ العِلْمَ انْتِزَاعًا يَنْتَزِعُهُ مِنَ العِبَادِ، وَلَكِنْ يَقْبِضُ العِلْمَ بِقَبْضِ العُلَمَاءِ، حَتَّى إِذَا لَمْ يُبْقِ عَالِمًا اتَّخَذَ النَّاسُ رُءُوسًا جُهَّالًا، فَسُئِلُوا فَأَفْتَوْا بِغَيْرِ عِلْمٍ، فَضَلُّوا وَأَضَلُّوا আল্লাহ তাআলা এলমকে এমন ভাবে তুলে নিবেন না যে বান্দাদের (অন্তর) থেকে তা তুলে নিলেন; বরং ইলমকে তুলে নিবেন আলিমদের তুলে নেওয়ার মাধ্যমে। অবশেষে যখন আলিম থাকবে না তখন লোকেরা বেইলম লোকদের নেতা বানাবে আর তারা ইলম ছাড়া ফতোয়া দিবে। ফলে নিজেরা গোমরাহ হবে, অন্যদের গোমরাহ করবে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১০০; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩ আজকাল কিছু সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত ও নানা পেশায় নিয়োজিত লোকদের মাঝে এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তারা নিজেরা নিজেরা দ্বীনী বিধান নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করেছেন এবং খেয়াল খুশি মতো নতুন নতুন সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন। একশ্রেণির তরুণের মধ্যেও এ প্রবণতা আছে। বলাবাহুল্য, এ কর্মপন্থাও উপরোক্ত হাদীসে উল্লেখিত ঐ নিন্দিত কর্মপন্থার মধ্যে পড়ে। এ জাতীয় ‘গবেষণা’র বা আলোচনার পরিণাম ইলম নয়, গোমরাহী। এভাবে দ্বীনী-ইলম অর্জন করা যায় না। ইমাম আবু হানীফা রাহ.কে জানানো হল যে, في مسجد كذا حلقة يتناظرون في الفقه ‘অমুক মসজিদে কিছু লোক একত্র হয়ে ফিকহ বিষয়ে আলোচনা করে।’ তিনি জিজ্ঞাসা করলেন- ألهمْ رأس ؟ তাদের কোনো মাথা (শিক্ষক) আছে কি? বলা হল – لا জ্বী না। তিনি বললেন, لا يفقهونَ أبداً ‘এরা কখনো ফিকহ অর্জনে সমর্থ হবে না।’ এখানে ‘শিক্ষক’ মানে সত্যিই যিনি শিক্ষক হওয়ার উপযুক্ত। দ্বীনের ব্যাখ্যা ও বিধান জাগতিক শিক্ষায় শিক্ষিত লোকের নিকট থেকে গ্রহণ করা ভুল জনৈক সাহাবী আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন আমানত বিনষ্ট করা হবে তখন কিয়ামতের অপেক্ষা কর। প্রশ্নকারী জিজ্ঞাসা করলেন, আমানত কীভাবে বিনষ্ট করা হয়? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- إِذَا وُسِّدَ الأَمْرُ إِلَى غَيْرِ أَهْلِهِ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ যখন অযোগ্য লোকের উপর কর্মের ভার অর্পণ করা হবে তখন কেয়ামতের অপেক্ষা কর। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৯ এক বিষয়ের পণ্ডিত অন্য বিষয়ে অযোগ্য। একজন চিকিৎসক চিকিৎসা-বিদ্যায় যোগ্য হলেও প্রকৌশল শাস্ত্রে অযোগ্য। একজন প্রকৌশলী প্রকৌশল-বিষয়ে যোগ্য হলেও চিকিৎসা-শাস্ত্রে অযোগ্য। সুতরাং বিশেষ কোনো শাস্ত্রে পারদর্শী ব্যক্তির কাছে অন্য শাস্ত্রের সমাধান চাওয়া অযোগ্য লোকের উপর কর্মের ভার অর্পণ করার মধ্যেই পড়ে। এতো হল ভার অর্পণ করা। ভার গ্রহণ করা সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা দেখুন : সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম-এ হাদীস আছে যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কারো নিকট থেকে বাইআত নিতেন তখন এই অঙ্গিকারও নিতেন যে, الاننازع الامر أهله আমরা দায়িত্বশীল (ও যোগ্য) লোকের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিবাদ করব না। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৭০৫৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৭০৯/৪১ দ্বীনের বিষয়ের সিদ্ধান্ত দ্বীনী বিষয়ে পারদর্শী ব্যক্তিদের উপর না ছেড়ে সাধারণ লোকদের অনুপ্রবেশ এই নিন্দিত বিবাদের শামিল। উল্লেখ্য যে, এখানে দ্বীনী বিষয়ে ব্যাখ্যা ও সিদ্ধান্ত দেয়ার কথা বলা হচ্ছে, দ্বীনের সর্বজনবিদিত বিষয়াদি নিজেদের মধ্যে আলোচনা করা এবং যা সবারই জানা আছে এমন সহজ-সরল বিষয়গুলো কর্মে ও আমলে আনার জন্য আলোচনার কথা বলা হচ্ছে না। এটা কুরআন-সুন্নাহর ভাষায় ‘তাযকীর’ অর্থাৎ স্মরণ করানো, ‘ইফতা’ বা ফতোয়া দান নয়। দ্বীনী বিষয়ে ফতোয়া বা সিদ্ধান্ত যেমন জাগতিক বিষয়ের লোকদের নিকট থেকে নেওয়া ভুল তেমনি দ্বীনী ক্ষেত্রেও এক শাস্ত্রের বিষয় অন্য শাস্ত্রের লোকের নিকট থেকে নেওয়া ভুল। অনেকে ওয়ায়েজ বা আলোচকমাত্রকেই আলিম ও ফকীহ মনে করেন। অথচ দু’টো সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। হাঁ, কারো মধ্যে দু’টো বৈশিষ্ট্যই থাকতে পারে। তিনি ওয়ায়েজ বা আলোচকও আবার বিজ্ঞ আলিম ও ফকীহও। কিন্তু ওয়ায়েজ বা আলোচকমাত্রকেই আলিম ও ফকীহ মনে করা ঠিক নয়। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন- إِنَّكُمْ فِي زَمَانٍ: كَثِيرٌ فُقَهَاؤُهُ، قَلِيلٌ خُطَبَاؤُهُ، قَلِيلٌ سُؤَّالُهُ، كَثِيرٌ مُعْطُوهُ، الْعَمَلُ فِيهِ قَائِدٌ لِلْهَوَى. وَسَيَأْتِي مِنْ بَعْدِكُمْ زَمَانٌ: قَلِيلٌ فُقَهَاؤُهُ، كَثِيرٌ خُطَبَاؤُهُ، كَثِيرٌ سُؤَّالُهُ، قَلِيلٌ مُعْطُوهُ، الْهَوَى فِيهِ قَائِدٌ لِلْعَمَلِ، اعْلَمُوا أَنَّ حُسْنَ الْهَدْيِ، فِي آخِرِ الزَّمَانِ، خَيْرٌ مِنْ بَعْضِ الْعَمَلِ তোমরা এমন যুগে রয়েছ, যে যুগে আলিম বেশি, বক্তা ও আলোচক কম। যাঞ্চাকারী কম, দানকারী বেশি। এ যুগে কর্ম হচ্ছে প্রবৃত্তির পরিচালক। কিন্তু তোমাদের পরে অচিরেই এমন এক যুগ আসছে যখন ফকীহ হবে কম আর বক্তা হবে বেশি। অনেক হবে যাঞ্চাকারী, কম হবে দানকারী। ঐ সময় প্রবৃত্তি হবে কর্মের নিয়ন্ত্রক।… -আল আদাবুল মুফরাদ, বুখারী হাদীস ৭৮৯; সুতরাং দ্বীনী ক্ষেত্রেও কোন বিষয় কার নিকট থেকে গ্রহণ করার সে সম্পর্কে সচেতন হওয়া কাম্য। মনে রাখতে হবে, ওয়ায়েজ বা আলোচক মাত্রই বিজ্ঞ-আলিম ও ফকীহ হওয়া অনিবার্য নয়। সুতরাং কোনো কুশলী আলোচকের সুন্দর উপস্থাপনার কারণে আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে উদাসীন হওয়ার সুযোগ নেই। এ লেখার শিরোনাম অনেক দীর্ঘ আলোচনার দাবি রাখে। আপাতত দু’চারটি কথা কল্যাণকামিতার প্রেরণা থেকে লেখা হল। আরো জানার ও বোঝার প্রয়োজন হলে কোনো বিজ্ঞ আলিমের সাহচর্য গ্রহণ করা উচিত।  

 

তালিবুল ইলমের আদবসমূহ

  প্রশ্ন: আল্লাহ্‌ আমার প্রতি ইল্‌ম অন্বেষণ শুরু করার অনুগ্রহ করেছেন। আপনারা আমাকে কি কি শিষ্টাচারে ভূষিত হওয়ার নসীহত করবেন? উত্তর আলহামদুলিল্লাহ। নিশ্চয় ইল্‌ম অর্জনের বেশ কিছু আদব রয়েছে; একজন তালিবুল ইল্‌মের সে আদবগুলোতে সুশোভিত হওয়া উচিত। আমরা আপনার সমীপে সে আদব ও উপদেশগুলো পেশ করছি; আশা করি আল্লাহ্‌ সেগুলোর মাধ্যমে আপনাকে উপকৃত করবেন:

এক: ধৈর্য: প্রিয় ভাই, নিঃসন্দেহে ইল্‌ম অর্জন উচ্চ মর্যাদার বিষয়। পরিশ্রমের সিঁড়ি না পেরিয়ে উচ্চ শিখরে পৌঁছা যায় না। কবি আবু তাম্মাম নিজেকে সম্বোধন করে বলেন: ছেড়ে দে আমায়, আমি মর্যাদার শীর্ষে পৌঁছতে চাই্, সাধারণতঃ যেথায় পৌঁছা যায় না। কঠিন শিখরে পৌঁছতে হয় কাঠিন্য পার হয়ে, সহজ স্তরে পৌঁছা যায় সহজে। তুমি সস্তা পথে উচ্চ শিখরের নাগাল পেতে চাও? মধু খেতে হলে মধুকরের হুলে বিদ্ধ হতে হয়। অন্য এক কবি বলেন: তুমি বৃদ্ধের গতিতে মর্যাদার পানে আগাচ্ছ। অথচ অন্যেরা কষ্টের চূড়ান্তে পৌঁছে লুঙ্গি ফেলে রেখে ছুটে চলছে। মর্যাদার লক্ষ্যপানে কঠিন পরিশ্রম করে তাদের অধিকাংশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। মর্যাদার নাগাল তারাই পায় যারা অধ্যাবসায় চালিয়ে যায় ও ধৈর্য রাখে। তুমি মর্যাদায় পৌঁছাকে খেজুর খাওয়ার মত সহজ মনে করো না। বরং তুমি তিতা ঔষুধ চেটে খাওয়া ব্যতীত মর্যাদার সীমানায় পৌঁছতে পারবে না। সুতরাং ধৈর্য ধর, অধ্যবসায়ী হও। কারণ জিহাদের সবর হয় সামান্য কিছু সময়ের জন্য; কিন্তু তালিবুল ইল্‌মকে জীবনের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে হয়। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “হে ঈমানদারগণ, তোমরা ধৈর্য ধারণ কর, ধৈর্যে প্রতিযোগিতা কর এবং সর্বদা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাক, আর আল্লাহ্‌ ভীতি অবলম্বন কর যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।”[সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ২০০]

দুই: কর্মনিষ্ঠা আপনি নিষ্ঠার সাথে কর্ম করুন। আপনার উদ্দেশ্য যেন হয় আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি ও পরকাল; লৌকিকতা ও সঙ্গি-সাথীদের উপরে উঠার লিপ্সা থেকে বেঁচে থাকুন। কারণ রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জন করে আলিমদের ওপর গৌরব করার জন্য অথবা জাহিল-মূর্খদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করার জন্য অথবা মানুষকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য; আল্লাহ তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।”[সুনানে নাসাঈ (২৬৫৪), আলবানী সহিহুন নাসাঈ গ্রন্থে হাদিসটিকে হাসান বলেছেন] মোটকথা আপনার ভেতর ও বাহির বড়-ছোট সব ধরণের গুনাহ থেকে পবিত্র হতে হবে।

তিন: ইল্‌ম অনুযায়ী আমল করা: জেনে রাখুন, আমল হচ্ছে– ইল্‌মের ফলাফল। যে ব্যক্তি ইল্‌ম অর্জন করল কিন্তু আমল করল না সে ব্যক্তি ইহুদীদের মত; আল্লাহ্‌ কুরআনে যাদের ক্ষেত্রে সর্বনিকৃষ্ট উদাহরণ টেনে এনেছেন। তিনি বলেন: “যাদেরকে তওরাত দেয়া হয়েছিল, অতঃপর তারা এর অনুসরণ করেনি, তাদের দৃষ্টান্ত সেই গাধা; যে পুস্তক বহন করে, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে, তাদের দৃষ্টান্ত কত নিকৃষ্ট। আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না।”[সূরা জুমুআ, আয়াত: ৫] আর যে ব্যক্তি ইল্‌ম ছাড়া আমল করে সে খ্রিস্টানদের মত। যাদেরকে সূরা ফাতিহাতে পথভ্রষ্ট বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আপনি যে যে কিতাবগুলো পড়বেন সে সম্পর্কে ইতিপূর্বে 20191 নং প্রশ্নোত্তরে উল্লেখ করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিধায় সে উত্তরটি পড়ে নিন।

চার: আল্লাহ্‌ আপনাকে পর্যবেক্ষণ করছেন এ অনুভুতি লালন করা: প্রকাশ্যে ও গোপনে সর্বদা আল্লাহ্‌ আপনাকে পর্যবেক্ষণ করছেন এটা মনে জাগ্রত রাখা উচিত। ভয় ও আশা এ দুয়ের মাঝে আপনি আপনার রবের দিকে আগাচ্ছেন। একজন মুমিনের জন্য এ দুটো গুণ পাখির দুই ডানার তুল্য। পরিপূর্ণভাবে আল্লাহ্‌ অভিমুখী হোন; যাতে করে আপনার অন্তর আল্লাহ্‌র ভালবাসায় ভরপুর হয়ে উঠে, আপনার জিহ্বা যিকিরে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে। আল্লাহ্‌র বিধান ও গূঢ় রহস্যগুলো জেনে আনন্দ-খুশি-উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠে। প্রত্যেক সিজদাতে গিয়ে আল্লাহ্‌র কাছে বেশি বেশি দোয়া করুন যেন আল্লাহ্‌ আপনার জন্য ইল্‌মের দ্বার খুলে দেন, আপনাকে উপকারী ইল্‌ম দান করেন। নিশ্চয় আপনি যদি আল্লাহ্‌র সাথে বিশ্বস্ত হন আল্লাহ্‌ আপনাকে তাওফিক দিবেন, আপনাকে রাব্বানী আলেমদের মর্যাদায় পৌঁছিয়ে দিবেন।

পাঁচ: সময়ের সদ্ব্যবহার করা: ওহে বুদ্ধিমান, আপনার যৌবনকে, জীবনকালকে ইল্‌ম অর্জনে দ্রুত কাজে লাগান। এই তো করব, আগামীতে করব এ ধরণের ধোকা যেন আপনাকে প্রবঞ্চিত না করে। আপনার জীবন থেকে যে ঘণ্টাটি চলে যাচ্ছে সেটার কোন প্রতিস্থাপন নেই, সেটার কোন বদলি নেই। আপনার পারিপার্শ্বিক ব্যস্ততা, লক্ষ্যপানের পথে প্রতিবন্ধকতা, সর্বোচ্চ পরিশ্রম ও উদ্দীপনা বিনিয়োগের রাস্তায় বাধা-বিপত্তি যতটুকু সম্ভব সরিয়ে ফেলুন। কেননা এ বাধাগুলো হচ্ছে– যাত্রাপথের দস্যুর মত। এ কারণে সলফে সালেহীন পরিবার থেকে দূরে ও স্বদেশ ত্যাগ করে ইল্‌ম হাছিল করাকে মুস্তাহাব মনে করতেন। কেননা চিন্তা-ভাবনা যদি বিক্ষিপ্ত হয়ে যায় সেটা গূঢ় রহস্য ও সূক্ষ্ম তত্ত্ব বুঝার ক্ষেত্রে অযোগ্য হয়ে পড়ে। আল্লাহ্‌ তাআলা একজন লোকের অন্তরে দুটো অন্তর রাখেননি। আরও বলা হয় আপনি যদি ইল্‌মকে আপনার পুরাটুকু না দেন ইল্‌ম আপনাকে সামান্যটুকুও দিবে না। ছয়: সতর্কতা: ইল্‌ম অর্জনের সূচনালগ্নে আপনি আলেমদের মতভেদ কিংবা সাধারণ মানুষের মতভেদের পেছনে পড়বেন না। কারণ এটি স্মৃতিকে হয়রান করে ফেলে, বিবেক-বুদ্ধিকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে দেয়। নানাবিধ কিতাবপুস্তক থেকেও আপনি সতর্ক থাকবেন। কেননা এতে আপনার সময় নষ্ট হয়ে যাবে এবং আপনার চিন্তা বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়বে। বরং আপনি যে কিতাব পড়ছেন বা যে বিষয়টি পড়ছেন সেটাকে আত্মস্থ করার জন্য আপনার সমস্ত শক্তি নিয়োগ করুন। কোন কারণ ছাড়া এক কিতাব থেকে আরেক কিতাবে স্থানান্তরিত হওয়া থেকে সতর্ক থাকুন। কারণ এটি অস্বস্তি ও বিফলতার আলামত। আপনার উচিত প্রত্যেক শাস্ত্রের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর উপর গুরুত্ব দেয়া, এরপর এর চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া।

সাত: পাকাপোক্তভাবে মুখস্ত করা: আপনি যা মুখস্ত করতে চান সেটা কোন শাইখের তত্ত্বাবধানে কিংবা অন্য কারো সহযোগিতা নিয়ে সুনিপুনভাবে শুদ্ধ করে নিতে সচেষ্ট হোন; এরপর পোক্তভাবে মুখস্ত করুন। এরপর দিনের নির্দিষ্ট একটি সময়ে বারবার আওড়াতে থাকুন যাতে করে আপনি যা মুখস্ত করেছেন তা ভুলে না যান।

আট: কিতাব অধ্যয়ন: আপনি ছোট ছোট পুস্তিকাগুলো মুখস্ত করা, এগুলোর ব্যাখ্যা আত্মস্থ করা এবং এগুলোর মধ্যে যেসব গুরুত্বপূর্ণ জটিলতা ও ফায়েদা রয়েছে সেগুলো রপ্ত করার পর আপনি বড় কলেবরের কিতাবপত্র অধ্যয়নে মনোনিবেশ করবেন। সার্বক্ষণিক পড়াশুনায় থাকবেন। যখনই কোন মূল্যবান ফায়েদা, সূক্ষ্ম মাসয়ালা, বিরল শাখা মাসয়ালা, কোন জটিলতার সমাধান কিংবা সমজাতীয় বিধানগুলোর মাঝে পার্থক্য আপনার নজরে পড়বে সাথে সাথে সেটা নোট করবেন। এটা সকল শাস্ত্রের ক্ষেত্রেই। কোন একটি ফায়েদা শুনলে কিংবা কোন একটি কায়েদা জানলে আপনি সেটাকে ছোট মনে করবেন না; বরং সাথে সাথে সেটা নোট করবেন এবং মুখস্ত করে নিবেন। ইল্‌ম অর্জনের ক্ষেত্রে আপনার উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকা চাই। তাই আপনার বেশি ইল্‌ম অর্জন করার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও অল্পেতে তুষ্ট হবেন না। নবীদের মীরাছ সামান্যটুকু পেয়ে আপনি তৃপ্ত হবেন না। কোন একটি ফায়েদা অর্জন করার সুযোগ থাকলে সেটা হাত ছাড়া করবেন না। আগামীতে শিখব এ ধোকা যেন আপনাকে প্রবঞ্চিত না করে। কারণ রেখে দেয়ার অনেক সংকট আছে। আর আপনি বর্তমান সময়ে যদি এই ফায়েদাটা শিখে ফেলতে পারেন দ্বিতীয় সময়ে আপনি অন্য কিছু শিখতে পারবেন। বেকারত্ব কিংবা দায়িত্বের প্রতিবন্ধকতা আসার পূর্বে আপনি আপনার অবসর ও কর্মোদ্দীপনাময় সময়কে কাজে লাগান। সুস্থতা ও যৌবনকালকে গনীমত মনে করুন। আপনার স্মৃতির নির্মলতা ও ব্যস্ততার স্বল্পতাকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করুন। আপনার যে কিতাবগুলো প্রয়োজন সেগুলো পাওয়ার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করুন। কেননা কিতাব হচ্ছে– ইল্‌ম অর্জনের মাধ্যম। কোন উপকার ছাড়া বেশি বেশি কিতাব সংগ্রহ করা যেন আপনার ইল্‌মী অর্জন না হয়, আপনার বোধশক্তির অংশ না হয়। বরং আপনার কর্তব্য হচ্ছে– সাধ্যানুযায়ী কিতাবগুলো থেকে ফায়েদা নেয়ার চেষ্টা করা।

নয়: সঙ্গি নির্বাচন করা: আপনি একজন নেককার ও ইল্‌ম নিয়ে ব্যস্ত থাকে, স্বভাব প্রকৃতি ভাল এমন সঙ্গি গ্রহণে সচেষ্ট হোন; যে বন্ধু আপনাকে আপনার লক্ষ্যে পৌঁছতে সাহায্য করবে। কোন ফায়দা ছুটে গেলে সেটা পূর্ণ করতে সহযোগিতা করবে। অধিক ইল্‌ম অর্জনে আপনাকে উদ্বুদ্ধ করবে। আপনার বিরক্তি দূর করবে। সে যেন স্বীয় দ্বীন-ধর্মের ব্যাপারে এবং উন্নত চরিত্রের ব্যাপারে বিশ্বস্ত হয়। আল্লাহ্‌র জন্য উপদেশদাতা হয়।[দেখুন: ইবনে জামাআর ‘তাযকিরাতুস সামে’] অসৎ সঙ্গি থেকে দূরে থাকবেন। কেননা মানুষের স্বভাব-প্রকৃতি অন্যের দ্বারা সংগোপনে প্রভাবিত হয়। মানুষ হচ্ছে- পাখির ঝাঁকের মতন; একটা আরেকটাকে অনুকরণ করে থাকে। এমন কোন সঙ্গির সঙ্গিত্ব থেকে সাবধান থাকুন। কেননা এটি রোগতুল্য। এতে আক্রান্ত হওয়ার আগেই প্রতিহত করা সহজ।

দশ: উস্তাদের সাথে আদব রক্ষা করা: প্রাথমিক স্তরের ইল্‌ম কিতাবের বুক থেকে গ্রহণ করা যায় না। বরঞ্চ অবশ্যই একজন শাইখ থেকে নিতে হয়; মৌলিক জ্ঞানগুলো যার রপ্ত আছে; যাতে করে স্খলন থেকে নিরাপদ থাকা যায়। আপনার কর্তব্য হচ্ছে– শাইখের সাথে আদব রক্ষা করে চলা। কেননা এটাই হচ্ছে– আপনার কল্যাণ, সফলতা এবং ইল্‌ম হাছিলের চাবিকাঠি। আপনার শাইখ যেন আপনার সম্মান, মর্যাদা ও কোমল আচরণের পাত্র হন। আপনি আপনার শাইখের সাথে যাবতীয় আদব রক্ষা করে চলবেন: তাঁর সাথে বসার ক্ষেত্রে, কথা বলার ক্ষেত্রে, প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে, শ্রবণ করার ক্ষেত্রে, তার সামনে কিতাবের পৃষ্ঠা উল্টানোর ক্ষেত্রে, তার সামনে উচ্চবাচ্য পরিত্যাগ করার ক্ষেত্রে, কোন কথা বা হাঁটার মাধ্যমে তাঁর অগ্রবর্তী না হওয়া, তার সামনে অধিক কথা না বলা, নিজের কথা দিয়ে তার দরসের মধ্যে সংযোজনী না দেয়া, কোন জবাব দেয়ার জন্য চাপাচাপি না করা, অধিক প্রশ্ন না করা বিশেষতঃ অনেক মানুষের উপস্থিতিতে। কেননা এটি আপনাকে প্রবঞ্চিত করবে, আপনার বিরক্তির উদ্রেক করবে। আপনি শাইখকে তার নাম ধরে বা কুনিয়ত ধরে ডাকবেন না। বরং এভাবে বলবেন: ইয়া শাইখি (হে আমার শাইখ) কিংবা বলবেন: ইয়া শাইখানা (হে আমাদের শাইখ)। যদি আপনার কাছে শাইখের কোন ভুল চোখে পড়ে কিংবা কোন বিস্মৃতি ধরা পড়ে তাহলে এটার কারণে আপনার চোখে যেন শাইখের মর্যাদা খাটো হয়ে না যায়। কেননা এটি আপনার ইল্‌ম থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ। ভুল থেকে বাঁচতে পারেন এমন কেউ কি আছে?।[দেখুন: শাইখ বাকর আবু যায়েদ এর ‘হিলাতু তালিবুল ইল্‌ম] আমরা আল্লাহ্‌র কাছে আমাদের জন্য ও আপনাদের জন্য তাওফিক ও অবিচলতা প্রার্থনা করছি। তিনি যেন আমাদেরকে সেই দিনটি দেখান যেই দিন আপনি আলেম হবেন, আল্লাহ্‌র দ্বীনের জন্য সকলের রেফারেন্স হবেন, মুত্তাকীদের ইমাম হবেন। আমীন… আমীন। নিকটবর্তী কোন সাক্ষাতে আবার দেখা হবে। ওয়াস সালাম। সূত্র: শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ  

ইসলামে তর্ক-বিতর্ক করার বিধান কী?

ইসলামে তর্ক-বিতর্ক করার বিধান কী? মানুষ সাধরণত মতের অমিল হলে পরস্পরে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়। বিষয়টি সত্য কিংবা মিথ্যা হোক তর্ক-বিতর্ক সম্পর্কে ইসলামের বিধানই বা কী? এ বিষয়ে হাদিসে পাকে রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা। মিথ্যা ও অসাড় কথাবার্তাসহ যুক্তি-তর্কের গোড়ামি থেকে বিরত থাকা ঈমানদারের প্রধান কাজ। বিষয়টি সত্য হোক কিংবা মিথ্যা হোক কোনো বিষয়েই বিতর্ক করা ঠিক নয়। তিনটি কাজের ফলে আল্লাহ তাআলা মুমিন বান্দার জন্য জান্নাতের তিনটি স্তরে ঘর নির্মাণ করেন। এ তিনটি কাজের একটি হলো যারা সত্য বিষয়ে বিতর্ক পরিহার করে। হাদিসে এসেছে- হজরত মুআজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের পাশ্বদেশে, জান্নাতের মধ্যভাগে এবং জান্নাতের উপরিভাগে একটি ঘর নির্মাণ করা হবে। যে ব্যক্তি সত্যাশ্রয়ী হওয়া সত্বেও তর্ক পরিহার করে, উপহাসস্বরূপ হলেও মিথ্যা কথা বর্জন করে, আর নিজের চরিত্রকে সুন্দর করে। (মুসনাদে বাযযার, তারগিব) এ হাদিসে মানুষের ৩টি গুণের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো সত্যাশ্রয়ী হওয়া সত্ত্বেও অর্থাৎ বিষয়টি সঠিক হলেও সে বিষয় সম্পর্কে তর্ক করা থেকে বিরত থাকে। আবার অনিচ্ছা সত্ত্বেও মিথ্যা কথা বর্জন করে। আর নৈতিক চরিত্রবান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে।   বিষয়টি সত্য কিংবা মিথ্যা হোক উভয় বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক পরিহার করা আবশ্যক। কেননা সত্য কিংবা মিথ্যা উভয় বিষয়ে বির্তক পরিহার করায় রয়েছে ফজিলত। হাদিসে এসেছে- হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহ আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘অন্যায়ের স্বপক্ষে থেকে যে ব্যক্তি তর্ক-বিতর্ক পরিহার করে তার জন্য জান্নাতের পাশে এক গৃহ নির্মাণ করা হয়। আর ন্যায়ের স্বপক্ষে থেকেও যে ব্যক্তি তর্ক পরিহার করে তার জন্য জান্নাতের মধ্যস্থলে এক গৃহ নির্মাণ করা হয়। আর যে ব্যক্তি তার চরিত্রকে সুন্দর করে তার জন্য জান্নাতের উপরিভাগে এক গৃহ নির্মাণ করা হয়। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, বায়হাকি) সুতরাং বিষয়টি সত্য হোক কিংবা মিথ্যা হোক উভয় ক্ষেত্রে তর্ক-বিতর্ক পরিহার করার প্রতি হাদিসে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। কারণ অন্যায় বিষয়ে বিতর্ক করা থেকে বিরত থাকার ফলে যেমন জান্নাতের ঘর নির্মাণ করা হয় তেমনি ন্যায় বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক পরিহার করলেও জান্নাতে ঘরের মালিক হওয়া যায়। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অযথা তর্ক-বিতর্ক করা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। নৈতিক ও উন্নত চরিত্র গঠনে আত্মনিয়োগ করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।  

 

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন!

 

আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে  জানতে  লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।

আইডিসি  মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আপনি আইডিসি  মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।

 

সুরা নাহালের ১০, ১১ ও ১২৫ নং আয়াত সম্পর্কে কিছু লিখা!

 

16(125 ادْعُ إِلِى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ

আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন পছন্দ যুক্ত পন্থায়। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তাই ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষ ভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে, যারা সঠিক পথে আছে। Invite (all) to the Way of thy Lord with wisdom and beautiful preaching; and argue with them in ways that are best and most gracious: for thy Lord knoweth best, who have strayed from His Path, and who receive guidance.

আল্লাহ সুরা নাহালের ১২৫ নং আয়াতে বলেছেন “ জ্ঞান-বুদ্ধি আর উত্তম উপদেশের (প্রজ্ঞা বা হিকমত) মাধ্যমে (মানুষকে) তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান জানাও আর লোকেদের সাথে বিতর্ক কর এমন পন্থায় যা অতি উত্তম। তোমার প্রতিপালক ভালভাবেই জানেন কে তাঁর পথ ছেড়ে গুমরাহ হয়ে গেছে। আর কে সঠিক পথে আছে তাও তিনি বেশি জানেন।” কিন্তু আমি বিগত কয়েক বছর যাবত অতি মনোযোগ সহকারে বাংলাদেশের মাটিতে যত আলেম ইসলামের খেদমতে আছেন অথবা মাযহাবি ও লা-মাযহাবি সাবার মাঝে আল্লাহর উল্লেখ্য হিকমত শব্দের মুল ভাব এবং হিকমতের ব্যবহারিক ফলাফল খুঁজে ক্লান্ত, যত বিশ্লেষণ শুনেছি বা বিভিন্ন তাফসিরে পড়েছি তাতে আমার যতটা বোধগম্য হয়েছে তা থেকে কিন্তু এখনও পর্যাপ্ত জ্ঞান আমি নিতে পারি নাই, আরও বুঝতে বাকি আছে, আমার অল্প জ্ঞানের তুলিতে এর যতাযত চিত্র আঁকা সম্ভব নয়, তার পরও হিকমতের (প্রজ্ঞা) একটা চিত্র আঁকার চেষ্টা করব। ইসলামে হিকমতের গুরুত্ব অপরিসীম। হিকমত শব্দের অর্থ হল-প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, বিজ্ঞতা, সারগর্ভ উক্তি, তাৎপর্য, দর্শন, উদার, উপযুক্ত, আধুনিক, বন্ধুত্বপূর্ণ, সৃ, স্বাভাবিক, মনোযোগী, গুরুতর, আনন্দদায়ক, ভাগ্যবান, সক্রিয়, উদ্বায়ী প্রভৃতি। পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধর্মের অনুসারী হিসেবে হিকমতের মতো গুণের অর্জন অপরিহার্য। একজন মুসলিম হিসেবে পৃথিবীতে নিজ নিজ অধিকার, স্বাধীনতা নিয়ে বেঁচে থাকতে হলে কঠিন সংগ্রামের ভেতর দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হয়। এখানে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য সবচেয়ে বেশি যা দরকার তা হল হিকমত (প্রজ্ঞা) অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংঘাতকে এড়িয়ে যে পদ্ধতির মাধ্যমে তর্ক-বিতর্ক, প্রোপাগান্ডা, বহুমুখী প্রচারণার মাধ্যমে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে হয় তাকে আপাত দৃষ্টিতে হিকমত বলা যায় কিন্তু পরিমিত নয়, আলাহ যে হিকমতের কথা বলেছেন তা রাসুল (সাঃ) এর জীবনী থেকে গবেষণা করে আরও গভীর ভাবে বুঝা মুসলিম উম্মার জন্য খুব জরুরি। পবিত্র কোরআনে হিকমতের গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে “যাকে হিকমত দান করা হয়েছে তাকে অনেক কল্যাণ দান করা হয়েছে” (সুরা বাকারা-২৬৯)। অর্থাৎ হিকমতের সঙ্গে যিনি কাজ আদায় করতে পারেন তিনি অনেক কল্যাণের অধিকারী। বেশি কাজ করতে পারার মধ্যেই কৃতিত্ব নেই। বরং কৃতিত্ব হলো কে কত সুন্দর এবং নিখুঁতভাবে কাজটি পূর্ণতার সঙ্গে সম্পাদন করতে পারলেন। কাজ অনেকেই করে, কিন্তু সবাই সুন্দরভাবে কাজ করতে পারে না। একজন প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি যত কম সময় এবং যত নিখুঁতভাবে কাজ করতে পারে একজন প্রজ্ঞাহীন ব্যক্তি তার চেয়ে অনেক বেশি সময় নিয়ে কাজ করেন। বিশেষ করে একজন মুমিন সব সময় চেষ্টা করেন নিজের সৎ উদ্দেশ্য পূরণে যথাসাধ্য সুন্দর পথ অবলম্বন করার। আল্লাহভোলা মানুষগুলোকে দ্বীনের পথে নিয়ে আসার। হিকমাহ শব্দটা আল-কুরআনের একটি পরিভাষা। আল কুরআনে হিকমাহ শব্দটি মোট ২০ বার এসেছে। সুরায় দেখে নেয়া যাক বিভিন্ন কোরআনে আল্লাহ হিকমত শব্দ ব্যবহার করেছেন –

  • **“তোমরা দাওয়াহ কর হিকমত ও মাউয়েযা হাসানার দ্বারা আর সর্বোত্তম পন্থায় যুক্তি তর্ক করো।” [ সূরা আন নাহল : ১২৫]
  • ** “যাকে হিকমত দান করা হয়, সে প্রভূত কল্যাণ প্রাপ্ত হয়।” [সূরা বাকারা : ২৬৯]
  • **“আমি ইব্রাহিম ও তাঁর বংশধরদের দান করেছি কিতাব ও হিকমত” [সূরা নিসা : ৫৪]
  • **“আমি অবশ্যই লোকমানকে হিকমত দান করেছি এই মর্মে যে তুমি আল্লাহর প্রতি কৃতঞ্জ হও।” [সূরা লোকমান : ১২]
  • আল-কুরআন হল সবচেয়ে হিকমতপূর্ন কিতাব। মহান আল্লাহ বলেন- “হিকমতপূর্ণ কুরআনের কসম” [সূরা ইয়াসিন : ২]

এই সবগুলা আয়াতের তাফসির পড়লেও আরও ভাল করে বুঝে আসবে হিকমত বলতে আল্লাহ কি বুঝাতে চেয়েচেন। এবার আমরা দেখবো প্রসিদ্ধ মুজতাহিদ, মুফাসসির, মুহাদ্দিস ও আলেমগণ হিকমত শব্দের কি ব্যাখা করেছেন-

  • ১- আল্লামা সাইয়্যিদ আবুল হাসান আলী নদভী রহঃ পূর্বে উল্লেখিত সূরা নাহলের ১২৫ নং আয়াতের ব্যখ্যায় বলেন- “আয়াতে উল্লিখিত হিকমত শব্দটি গভীর তাৎপর্যপূর্ণ আরবী শব্দ, যা অন্য ভাষায় অনুবাদ করা সম্ভব বলে আমি বিশ্বাস করি না।” (রাওইয়াই’উ মিন আদাবিদ দাওয়াহ)
  • ২- বিশিষ্ট তাবেঈ মুজাহিদ রহঃ বলেন- “কথা ও কাজে সঠিক তথা যথাযথ করার নামই হিকমত।” (ইবনে জারীর তাবারী) প্রখ্যাত মুফাসসির তাবারী ও খাযেনও রহঃ অনুরূপ মত প্রকাশ করেছেন। (তাফসীরে খাযেন)
  • ৩- ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহঃ এ প্রসঙ্গে বলেন- “কথা ও কাজে সঠিক তথা যথাযথ এবং প্রত্যেকটি বিষয় বা বস্তুকে যথাযথ স্থানে রাখাকে হিকমত বলে।” (আত তাফসীরুল কাবীর) তাফসীরে খাযেনের প্রণেতা এর সাথে যুক্ত করেছেন যে যে কথা ও কাজকে যথাযথ স্থানে রাখে না তাকে হাকীম বলা যাবে না।
  • ৪- ইমাম মালিক রহঃ বলেন- “হিকমতের অর্থ আমার বুঝে যা আসে তা হল এটা আল্লাহর দ্বীন সম্পর্কে পান্ডিত্য। আর এটা মহান স্বীয় দয়া ও করুনার দ্বারা মানুষের অন্তরে ঢেলে দেন।” (ইবনে কাছীর)
  • ৫- আল্লামা তাবারী রহঃ স্বীয় তাফসীরে ইবনে যায়েদ (রঃ) থেকে একটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করেছেন- “হিকমত এমন একটা বস্তু যা আল্লাহপাক মানব অন্তরে স্থাপন করে দেন যা দ্বারা অন্তর আলোকিত হয়ে যায়।” (ইবনে জারীর তাবারী)
  • ৬- আল্লামা আলূসী রহঃ এক বর্ণণায় উল্লেখ করেন- “হিকমত হল এক ধরনের জ্যোতি বিশেষ, যা দ্বারা পার্থক্য করা যায় কোনটা শয়তানের পক্ষ থেকে আর কোনটা আল্লাহর পক্ষ থেকে।” (রূহুল মাআনী)
  • ৭- আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রহঃ বলেন- “ইবনে কুতাইবা ও অন্যান্য আলেমদের মতে হিকমত হল সত্যে উপনীত হওয়া এবং সে অনুসারে কাজ করা। এটা হল উপকারী বিদ্যা ও নেক কাজ।” (ইবনুল কায়্যিম, মিফতাহুস সাআদা)
  • ৮- লিসানুলআরবের প্রণেতা, ইবনে মানযূর রহঃ বলেন- “সর্বোত্তম বিদ্যার মাধ্যমে সর্বোত্তম বিষয়সমূহ জানার নাম হল হিকমত।” (লিসানুল আরব)
  • ৯- আল্লামা রাগেব ইসফাহানীর রহঃ মতে- “হিকমত হল উত্তম উত্তম বিদ্যা ও নেক কাজ। আর এটা ফলিত বিদ্যার সাথেই বেশী সম্পর্কযুক্ত।” (আয যারিয়াতু মাকারিমিশ শরিয়াহ)

উপরোক্ত সব সংঞ্জা ও মতামত পর্যালোচনার মাধ্যমে বলা যায়- একঃ হিকমত কথা ও কাজের একপ্রকার বিশেষণ। আর তা হল এ গুলো যথার্থ হতে হবে। দুইঃ এটা আল্লাহ প্রদত্ত একটা নূর বা সহজাত জ্যোতি যার দ্বারা মানুষ সত্য, মিথ্যা ও কল্যাণ ও অকল্যাণের পার্থক্য করতে পারে। তিনঃ এটা একটা তাত্ত্বিক ও ফলিত বিদ্যা যার মাধ্যমে কোন কিছুকে সর্বাঙ্গীনভাবে সুষ্ঠু, সুন্দর, সার্থক ও পরিপূর্ন করা যায়। একটু খেয়াল করলে বুঝা যায়, হিকমত সম্পর্কে দুনিয়ার যত মতামত আছে এগুলার মধ্যে কোন বিরোধ নেই বরং পরিপূরক যা বিভিন্ন জন বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে ব্যক্ত করা করেছেন, কেউ এর মূল উৎসের উপর, আবার কেউ এর বিশেষনের উপর, আবার কেউবা এর ফলাফলের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। কিন্তু যেটা কেউ বলেন নি বা বুঝেন নি দুখের বিষয় হল আমাদের কিছু ভাই তা বুঝেছেন ভিন্ন ভাবে-যেমন- “হিকমত হল দাওয়াহর প্রয়োজনে হারাম ও কুফরি কাজে লিপ্ত হওয়ার অজুহাত। হিকমত হল হালাল বিষয়টাই আরো সুন্দরভাবে সম্পাদন করা। হিকমত হল দুটি হালাল কাজের মাঝে অপেক্ষাকৃত উত্তমটি ও উপযোগীটা বাছাই করা। (একটি হালাল আর একটি হারাম থেকে হারামটি বাছাই কোনদিনও হিকমত না!) সবশেষে আমি আমার প্রিয় ভাইদের অনুরোধ করবো তারা যেন এই বড় নিয়ামতটিকে কোনভাবেই অপর পক্ষকে আক্রমনের বস্তু না বানান। আর যারা বিভিন্ন ভুল ব্যাখ্যার স্বীকার হয়ে কুফরি ও বিদআত কাজে লিপ্ত তাদের অনুরোধ করবো এই বিষয়টাকে আরো গভীরভাবে চিন্তা করার জন্য। মহান আল্লাহ সত্যের জন্য আমাদের অন্তর আরও প্রসারিত করে দিন। জিবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের হিকমত অবলম্বনের তাওফিক দান করুন। সুরা নাহালে আল্লাহ বললেন – “তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন যাতে আছে তোমাদের জন্য পানীয় আর তাতে জন্মে বৃক্ষ লতা যা তোমাদের পশুগুলোকে খাওয়াও।” সুরা নাহাল আয়াত নং-১০ “তিনি তা দিয়ে তোমাদের জন্য জন্মান শস্য, যায়তূন, খেজুর, আঙ্গুর এবং সর্বপ্রকার ফল। এতে চিন্তাশীল মানুষদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।” সুরা নাহাল আয়াত নং-১১ আল্লাহ্‌ বললেন তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন যাতে লতা পাথা জন্মায় ফসল ও ফলফলাদি উৎপান্ন হয়, অনেকে বলেন বৃষ্টির পানি দিয়ে সব জাগায় সব ফল হয় না ওখানে কৃষক কাজ করে প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার পর ফসল উৎপন্ন হয় অনেক যত্ন করা হয়। আল্লাহ্‌ ইচ্ছা করেলে সবই স্বয়ংক্রিয় হতে পারত, এখানে মানুষকে প্রজ্ঞা ব্যবহারের ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছেন যাতে করে মানুষ হিকমতের শিক্ষা নিতে পারে। আল্লাহ্‌ যদি বৃষ্টির পানি না ঝরাতেন তাহলে কোন প্রানের অস্তিত্ব এই পৃথিবীতে থাকত না তাই পরোক্ষভাবে সকল জীবনের মুলেই বৃষ্টির পানি, চিন্তা করেন হাজার হেক্টর জমি নিয়ে অ্যামাজন বনজঙ্গলের অবস্থান ব্রাজিলে এই জঙ্গলে যে ফলফলাদি জন্মায় তা কেবল মাত্র আল্লাহর রহমতে জন্মায়- সুবহানআল্লাহ। বৃষ্টির পানিতে ফলমূল জন্মানোয় আর আল্লাহ্‌ বললেন এতে চিন্তাশীল মানুষদের জন্য নিদর্শন রয়েছে কি নিদর্শন রয়েছে ? সুরা নাহালের শুরুতে আল্লাহ্‌ তার একত্ব তারপর তার অপার রহমত ও জান্নাত এবং আজাব ও জাহান্নামের বর্ণনা করলেন এবং একই সুরার বলেছেন- “ (অতীতের রসূলদেরকে পাঠিয়েছিলাম) স্পষ্ট প্রমাণাদি আর কিতাব দিয়ে; আর এখন তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করছি মানুষকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য যা তাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে আর যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে” সুরা নাহাল আয়াত নং-৪৪। আল্লাহ্‌ ৪৪ নং আয়াতে কোরআনের নাযিলের কথা বলছেন যাহা আয়াত নং ১১ ও ১২ তে উল্লেখিত বৃষ্টির সাথে সম্পর্কিত আল্লাহ্‌ এখানে বুঝাতে চেয়েছেন যে বৃষ্টি পানি যে ভাবে মৃত প্রায় মাটিতে ফসল ফলায় উর্বর করে টিক তেমনি মানুষের মৃত আত্মা কে জীবিত করতে পারে কোরআন, মানুষের উপর বর্ষিত কোরআনের আয়াত জীবিত করতে পারে যে কোন মরু আন্তর কে। কিছু মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে কোন দাওয়াত ছাড়া কোন মুসলিম ভাইয়ের মেহনত ছাড়াই যেমন আল্লাহ্‌ বৃষ্টির পানি বর্ষণ করেন আর তরুলতা জন্মায় আবার মানুষের মেহনতেও ফলফলাদি জন্মায় যেমন মানুষের দাওয়াতি মেহনতে মানুষ ইসলামের পথে আসে। এখানে আল্লাহ্‌ মানুষকে হিকমতের নমুনা শিক্ষা দিলেন, যাতে মানুষ হিকমতের সাথে ইসলামের প্রচার ও প্রসার করতে পারে। আল্লাহ্‌ মানুষকে তার পথের দিকে আহবান করতে বললেন কিন্তু আমি অনেককে দেখেছি মানুষকে গন্তব্যের দিকে আহবান করতে, আসল গন্তব্য আর গন্তব্যে পিছানোর পথ এক নয়, মুসলিম হওয়া বা ইসলাম গ্রহণ করাই কেবল নয় মানুষকে আল্লাহ্‌র উল্লেখিত পথের দিকে আহবান করে সেই পথে নিয়ে আসতে হবে। যত ভাই নিজের উপর জুলুম করেছেন নিরাশ হওয়ার কোন কারন নাই আল্লাহ্‌র কোরআন আঁকড়ে ধরেন আপনার মৃত অন্তর জেগে উঠবে হয়ে যাবেন জান্নাতি মেহমান ইনশাআল্লাহ্‌। আশাকরি বাংলার মুসলিম উম্মাহর সকল ভাই হিকমতের সহিত দাওয়াতের কাজ করবেন এবং আল্লাহ্‌ দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৪১: ইলমের ফযীলত

  আল্লাহ বলেন, ﴿ وَقُلْ رَبِّ زِدْنِي عِلْمًا ﴾ (طه: ١١٤) অর্থাৎ বল, হে আমার প্রতিপালক! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি কর। (ত্বা-হা ১১৪ আয়াত) তিনি অন্যত্র বলেন, ﴿ قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ ﴾ (الزمر: ٩) অর্থাৎ বল, যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান? (যুমার ৯ আয়াত) আল্লাহ আরও বলেন,﴿يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ ﴾ (المجادلة: ١١) অর্থাৎ যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে বহু মর্যাদায় উন্নত করবেন। (মুজাদালা ১১ আয়াত) তিনি অন্য জায়গায় বলেন,﴿ إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ﴾ (فاطر: ٢٨) অর্থাৎ আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই তাঁকে ভয় করে থাকে। (ফাত্বের ২৮ আয়াত) ১/১৩৮৪। মুআবিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকেই দ্বীনী জ্ঞান দান করেন।” (বুখারী) [1] [1] সহীহুল বুখারী ৭১, ৩১১৬, ৩৬৪১, ৭৩১২, ৭৪৬০, মুসলিম ১০৩৭, ইবনু মাজাহ ২২১, আহমাদ ১৬৩৯২, ১৬৪০৭, ১৬৪১৮, ১৬৪৩২, ১৬৪৪৬, ১৬৪৪৫১, ১৬৪৬০, ১৬৪৭৬, মুওয়াত্তা মালিক ১৬৬৭, দারেমী ২২৪, ২২৬ بابُ فَضْلِ الْعِلْمِ وَعَن مُعَاوِيةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم «مَنْ يُرِدِ اللهُ بِهِ خَيْراً يُفَقِّهْهُ فِي الدِّينِ». متفقٌ عَلَيْهِ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) পুনঃনিরীক্ষণঃ রিয়াযুস স্বা-লিহীন ১৩/ ইলম (জ্ঞান ও শিক্ষা) বিষয়ক অধ্যায় (كتاب العلم)

পরিচ্ছেদঃ ২৪১: ইলমের ফযীলত

  ২/১৩৮৫। ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কেবল দু’জন ব্যক্তি ঈর্ষার পাত্র। সেই ব্যক্তি যাকে আল্লাহ ধন-সম্পদ দান করেছেন এবং তাকে তা সৎপথে ব্যয় করার শক্তিও দিয়েছেন। আর সেই লোক যাকে আল্লাহ জ্ঞান-বুদ্ধি দান করেছেন, যার বদৌলতে সে বিচার-ফায়সালা করে থাকে ও তা অপরকে শিক্ষা দেয়।” (বুখারী ও মুসলিম) [1] এখানে ঈর্ষা বলতে, অপরের ধন ও জ্ঞান দেখে মনে মনে তা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করা। সেই সাথে এই কামনা থাকে না যে, অপরের ধ্বংস হয়ে যাক। [1] সহীহুল বুখারী ৭৩, ১৪০৯, ৭১৪১, ৭৩১৬, মুসলিম ৮১৬, ইবনু মাজাহ ৪২০৮, আহমাদ ৩৬৪৩, ৪০৯৮ بابُ فَضْلِ الْعِلْمِ وَعَنِ ابنِ مَسعُود رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «لاَ حَسَدَ إِلاَّ فِي اثْنَتَيْنِ: رَجُلٌ آتَاهُ اللهُ مَالاً، فَسَلَّطَهُ عَلَى هَلَكَتِهِ فِي الحَقِّ، وَرَجُلٌ آتَاهُ اللهُ الحِكْمَةَ، فَهُوَ يَقْضِي بِهَا وَيُعَلِّمُهَا». متفقٌ عَلَيْهِ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) পুনঃনিরীক্ষণঃ রিয়াযুস স্বা-লিহীন ১৩/ ইলম (জ্ঞান ও শিক্ষা) বিষয়ক অধ্যায় (كتاب العلم) পরিচ্ছেদঃ ২৪১: ইলমের ফযীলত   ৩/১৩৮৬। আবূ মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে সরল পথ ও জ্ঞান দিয়ে আমাকে পাঠানো হয়েছে তা ঐ বৃষ্টি সদৃশ যা জমিনে পৌঁছে। অতঃপর তার উর্বর অংশ নিজের মধ্যে শোষণ করে। অতঃপর তা ঘাস এবং প্রচুর শাক-সবজি উৎপন্ন করে। এবং তার এক অংশ চাষের অযোগ্য (খাল জমি); যা পানি আটকে রাখে। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তার দ্বারা মানুষকে উপকৃত করেন। সুতরাং তারা তা হতে পান করে এবং (পশুদেরকে) পান করায়, জমি সেচে ও ফসল ফলায়। তার আর এক অংশ শক্ত সমতল ভূমি; যা না পানি শোষণ করে, না ঘাস উৎপন্ন করে। এই দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির যে আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে জ্ঞানার্জন করল এবং আমি যে হিদায়েত ও জ্ঞান দিয়ে প্রেরিত হয়েছি, তার দ্বারা আল্লাহ তাকে উপকৃত করলেন। সুতরাং সে (নিজেও) শিক্ষা করল এবং (অপরকেও) শিক্ষা দিল। আর এই দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তিরও যে এ ব্যাপারে মাথাও উঠাল না এবং আল্লাহর সেই হিদায়েতও গ্রহণ করল না, যা দিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি।” (বুখারী ও মুসলিম) [1] [1] সহীহুল বুখারী ৭৯, মুসলিম ২২৮২, আহমাদ ২৭৬৮২ بابُ فَضْلِ الْعِلْمِ وَعَن أَبي مُوسَى رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: «مَثَلُ مَا بَعَثَنِي الله بِهِ مِنَ الهُدَى وَالعِلْمِ كَمَثَلِ غَيْثٍ أَصَابَ أَرْضاً ؛ فَكَانَتْ مِنْهَا طَائِفَةٌ طَيِّبةٌ قَبِلَتِ المَاءَ فَأَنْبَتَتِ الكَلأَ، وَالعُشْبَ الكَثِيرَ، وَكَانَ مِنْهَا أَجَادِبُ أَمْسَكَتِ المَاءَ، فَنَفَعَ اللهُ بِهَا النَّاسَ، فَشَرِبُوا مِنْهَا وَسَقَوْا وَزَرَعُوا، وَأَصَابَ طَائِفَةً مِنْهَا أُخْرَى إِنَّمَا هِيَ قِيعَانٌ ؛ لاَ تُمْسِكُ مَاءً وَلاَ تُنْبِتُ كَلأً، فَذَلِكَ مَثَلُ مَنْ فَقُهَ فِي دِينِ اللهِ، وَنَفَعَهُ مَا بَعَثَنِي اللهُ بِهِ، فَعَلِمَ وَعَلَّمَ، وَمَثَلُ مَنْ لَمْ يَرْفَعْ بِذَلِكَ رَأساً، وَلَمْ يَقْبَلْ هُدَى اللهِ الَّذِي أُرْسِلْتُ بِهِ» . متفقٌ عَلَيْهِ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) পুনঃনিরীক্ষণঃ রিয়াযুস স্বা-লিহীন ১৩/ ইলম (জ্ঞান ও শিক্ষা) বিষয়ক অধ্যায় (كتاب العلم) পরিচ্ছেদঃ ২৪১: ইলমের ফযীলত   ৪/১৩৮৭। সাহাল ইবনে সায়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (খায়বার যুদ্ধের সময়) আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে সম্বোধন করে বললেন, “আল্লাহর শপথ! তোমার দ্বারা একটি মানুষকেও যদি আল্লাহ সৎপথ দেখান, তবে তা (আরবের মহামূল্যবান) লাল উঁটনী অপেক্ষা উত্তম হবে।” (বুখারী-মুসলিম) [1] [1] সহীহুল বুখারী ২৯৪২, ৩০০৯, ৩৭০১, ৪২১০, মুসলিম ২৪০৬, আবূ দাউদ ৩৬৬১, আহমাদ ২২৩১৪ بابُ فَضْلِ الْعِلْمِ وَعَن سَهلِ بنِ سَعدٍ رضي الله عنه:أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ لِعَليٍّ رضي الله عنه: «فَوَاللهِ لأَنْ يَهْدِيَ اللهُ بِكَ رَجُلاً وَاحِداً خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ يَكُونَ لَكَ حُمْرُ النَّعَمِ» . متفقٌ عَلَيْهِ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) পুনঃনিরীক্ষণঃ রিয়াযুস স্বা-লিহীন ১৩/ ইলম (জ্ঞান ও শিক্ষা) বিষয়ক অধ্যায় (كتاب العلم)

 

পরিচ্ছেদঃ ২৪১: ইলমের ফযীলত

  ৫/১৩৮৮। ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইসরাইল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত-ভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদিস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিলো।” (বুখারী) [1] ** (প্রকাশ থাকে যে, বনী-ইসরাইল হতে কেবল ইসলাম সমর্থিত হাদিস বর্ণনা করতে পারা যায়। ব্যাপকভাবে তাদের সব রকম হাদিস গ্রহণ করা সমীচীন নয়। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামে মিথ্যা আরোপ করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। ফলে হাদিস অতি সতর্কভাবে বর্ণনা করা আবশ্যক এবং জাল ও দুর্বল হাদিস থেকে বিরত থাকা নৈতিক কর্তব্য। সহীহ-দ্ব‘ঈফ হাদিসের গ্রন্থ ও কম্পিউটার পোগ্রাম বর্তমানে প্রায় সর্বত্র সুলভ। সুতরাং হাদিস সম্বন্ধেও যাচাই-বাছাই করা মুসলিমদের একটি দ্বীনী কর্তব্য।) [1] সহীহুল বুখারী ১০৭, ইবনু মাজাহ ৩৬, আবূ দাউদ ৩৬৫১, আহমাদ ১৪১৬, ১৪৩১, দারেমী ২৩৩ بابُ فَضْلِ الْعِلْمِ وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً، وَحَدِّثُوا عَنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَلاَ حَرَجَ، وَمَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّداً فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ». رواه البخاري হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) পুনঃনিরীক্ষণঃ রিয়াযুস স্বা-লিহীন ১৩/ ইলম (জ্ঞান ও শিক্ষা) বিষয়ক অধ্যায় (كتاب العلم) পরিচ্ছেদঃ ২৪১: ইলমের ফযীলত ৬/১৩৮৯। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি এমন পথে গমন করে; যাতে সে বিদ্যা অর্জন করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের রাস্তা সহজ করে দেন।” (মুসলিম) [1] [1] মুসলিম ২৬৯৯, ২৭০০, তিরমিযী ১৪২৫, ১৯৩০, ২৬৪৬, ২৯৪৫৪, আবূ দাউদ ১৪৫৫, ৪৯৪৬, ইবনু মাজাহ ২২৫, আহমাদ ৭৩৭৯, ৭৮৮২, ১০১১৮, ১০২৯৮, দারেমী ৩৪৪ بابُ فَضْلِ الْعِلْمِ وَعَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «وَمَنْ سَلَكَ طَرِيقاً يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْماً، سَهَّلَ اللهُ لَهُ طَرِيقاً إِلَى الجَنَّةِ» . رواه مسلم হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) পুনঃনিরীক্ষণঃ রিয়াযুস স্বা-লিহীন ১৩/ ইলম (জ্ঞান ও শিক্ষা) বিষয়ক অধ্যায় (كتاب العلم) পরিচ্ছেদঃ ২৪১: ইলমের ফযীলত ৭/১৩৯০। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি সৎপথের দিকে আহ্বান জানাবে, সে তার অনুসারীদের সমতুল্য নেকীর অধিকারী হবে; তাতে তাদের নেকীর কিছুই হ্রাস পাবে না।” (মুসলিম) [1] [1] মুসলিম ২৬৭৪, তিরমিযী ২৬৭৪, আবূ দাউদ ৪৬০৯, আহমাদ ৮৯১৫, দারেমী ৫১৩ بابُ فَضْلِ الْعِلْمِ وَعَنه أَيضاً رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ دَعَا إِلَى هُدىً كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئاً» . رواه مسلم হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) পুনঃনিরীক্ষণঃ রিয়াযুস স্বা-লিহীন ১৩/ ইলম (জ্ঞান ও শিক্ষা) বিষয়ক অধ্যায় (كتاب العلم) পরিচ্ছেদঃ ২৪১: ইলমের ফযীলত ৮/১৩৯১। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আদম সন্তান যখন মারা যায়, তখন তার তিন প্রকার আমল ছাড়া অন্য সব রকম আমলের ধারা বন্ধ হয়ে যায়; সদকা জারিয়াহ (বহমান দান খয়রাত, মসজিদ নির্মাণ করা, কূপ খনন করে দেওয়া ইত্যাদি) অথবা ইলম (জ্ঞান সম্পদ) যা দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় অথবা সুসন্তান যে তার জন্য নেক দো‘আ করতে থাকে।” (মুসলিম) [1] [1] মুসলিম ১৬৩১, তিরমিযী ১৩৭৬, নাসায়ী ৩৬৫১, আবূ দাউদ ২৮৮০, ৩৫৪০, আহমাদ ৮৬২৭, দারেমী ৫৫৯ بابُ فَضْلِ الْعِلْمِ وَعَنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «إِذَا مَاتَ ابْنُ آدَمَ انْقَطَعَ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاثٍ: صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ» . رواه مسلم হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) পুনঃনিরীক্ষণঃ রিয়াযুস স্বা-লিহীন ১৩/ ইলম (জ্ঞান ও শিক্ষা) বিষয়ক অধ্যায় (كتاب العلم) পরিচ্ছেদঃ ২৪১: ইলমের ফযীলত ৯/১৩৯২। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, “ইহজগৎ অভিশপ্ত, এর মধ্যে যা কিছু আছে সব অভিশপ্ত। তবে মহান আল্লাহর যিকির ও তার সংশ্লিষ্ট ক্রিয়া (তাঁর আনুগত্য) এবং আলেম অথবা তালিবে ইলমের কথা স্বতন্ত্র।” (তিরমিযী হাসান) [1] [1] তিরমিযী ২৩২২, ইবনু মাজাহ ৪১১২ بابُ فَضْلِ الْعِلْمِ وَعَنه، قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: «الدُّنْيَا مَلْعُونَةٌ، مَلْعُونٌ مَا فِيهَا، إِلاَّ ذِكْرَ اللهِ تَعَالَى، وَمَا وَالاَهُ، وَعَالِماً، أَوْ مُتَعَلِّماً» . رواه الترمذي، وقال: حديث حسن হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan) পুনঃনিরীক্ষণঃ রিয়াযুস স্বা-লিহীন ১৩/ ইলম (জ্ঞান ও শিক্ষা) বিষয়ক অধ্যায় (كتاب العلم) পরিচ্ছেদঃ ২৪১: ইলমের ফযীলত ১০/১৩৯৩। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে লোক জ্ঞানার্জন করার জন্য বের হয় সে ফিরে না আসা পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদের মাঝে) আছে বলে গণ্য হয়। (ইমাম তিরমিযী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন) [1] [1] প্রথমে হাদীসটিকে দ্ব‘ঈফ (দুর্বল) বললেও পরবর্তীতে শাইখ আলবানী হাসান লিগাইরিহি আখ্যা দেন। দেখুন “সহীহ্ তারগীব অত্তারহীব”(৮৮) ও “মুখতাসারু কিতাবিল ই‘লাম বেআখিরি আহকামিল আলবানী আলইমাম” (২২০)। অতএব এ হাদীসটি দুর্বল নয় বরং হাসান লিগাইরিহি। بابُ فَضْلِ الْعِلْمِ وَعَنْ أنسٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم : «مَن خَرَجَ فِيْ طَلَبِ الْعِلْمِ، فَهُوَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ حَتّىٰ يَرْجِعَ» رواهُ الترْمِذيُّ وقال: حديثٌ حَسنٌ . হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan) পুনঃনিরীক্ষণঃ রিয়াযুস স্বা-লিহীন ১৩/ ইলম (জ্ঞান ও শিক্ষা) বিষয়ক অধ্যায় (كتاب العلم)  

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন!

 

আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে  জানতে  লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।

আইডিসি  মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আপনি আইডিসি  মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।

 

পবিত্র কুরআনে জ্ঞান ও বিবেক-বুদ্ধি প্রসঙ্গ

মো. আশিফুর রহমান ভূমিকা …قُلْ هَلْ يَسْتَوِى الَّذِيْنَ يَعْلَمُوْنَ وَ الَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ إنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُوا الْأَلْبَابِ …‘(হে নবী!) বল,যারা মূর্খ ও যারা বিদ্বান তারা কি সমান? বোধশক্তিসম্পন্ন লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে।’১ মানুষ বুদ্ধিমান বা বিবেকসম্পন্ন প্রাণী। অন্যান্য প্রাণীর সাথে তার মূল পার্থক্যই হল তার জ্ঞানের ব্যবহার। যদি জ্ঞান দিয়ে মানুষকে সজ্জিত করা না হত তা হলে অন্যান্য প্রাণীর সাথে তার কোন পার্থক্যই থাকত না। অন্যান্য প্রাণী যেমন খাদ্য গ্রহণ করে ও বংশ বৃদ্ধি করে,একইভাবে মানুষেরও এর থেকে বেশি কিছু করার থাকত না। কেবল বিবেক-বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়েই মানুষ এত উন্নত হতে পেরেছে। বাবুই পাখি সেই সৃষ্টির শুরু থেকে আজও একইভাবে বাসা তৈরি করে,অন্যদিকে মানুষ চাঁদে বসতি স্থাপনের চেষ্টা করছে। মানুষ তার জ্ঞান-বুদ্ধি ব্যবহারের মাধ্যমে তার জীবন যাপন ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করতে পেরেছে। যদি সে জ্ঞানের ব্যবহার না করত তা হলে তার অবস্থাও অন্যান্য প্রাণীর মতই হত। আবার মহান আল্লাহর প্রতিটি সৃষ্টিই তাঁর ইবাদত করে। কিন্তু অন্যান্য সৃষ্টির ইবাদতের সাথে মানুষের ইবাদতের পার্থক্য রয়েছে। মহান আল্লাহ্ তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টিকে বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এজন্যই যে,সে যেন জ্ঞানবুদ্ধি ব্যবহার করে তার স্রষ্টার পরিচিতি লাভ করার মাধ্যমে ইবাদত করতে পারে। আর তাই মহান আল্লাহ্ বার বার মানুষকে জ্ঞান-বুদ্ধি ব্যবহার করার জন্য বলেছেন। লক্ষণীয় বিষয় যে,অন্যান্য ধর্মের বিপরীতে ইসলামই একমাত্র ধর্ম যা জ্ঞান ও বিবেক-বুদ্ধির ব্যবহারে এত অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে। জ্ঞান ও বিবেক-বুদ্ধির ব্যবহারে যে বিপুল সংখ্যক নির্দেশনা ইসলাম ধর্মে পাওয়া যায় তা অন্য কোন ধর্মে পাওয়া যায় না। বাইবেলে এমনকি জ্ঞানকে আদি পাপের সাথে সংশ্লিষ্ট করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে কেবল সত্যধর্মের পক্ষেই জ্ঞান ও বিবেক-বুদ্ধির ব্যবহারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ সম্ভব। কেননা,সত্যে উপনীত হওয়ার মূল প্রক্রিয়াটি হচ্ছে জ্ঞানগত চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালানো। পবিত্র কুরআনের নাযিলকৃত প্রথম আয়াতে মহান আল্লাহ্ মানুষকে জ্ঞান শিক্ষা দানের কথা বলেছেন : إِقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِيْ خَلَقَ خَلَقَ الْإِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ إِقْرَأْ وَ رَبُّكَ الْأَكْرَامُ الّذِيْ عَلَّمَ بَالْقَلَمِ عَلَّمَ الْإِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ ‘পাঠ কর তোমার প্রতিপালকের নামে,যিনি সৃষ্টি করেছেন,সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে,পাঠ কর,আর তোমার প্রতিপালক মহিমান্বিত,যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন,শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।’২ আবার রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর হাদিসেও জ্ঞান অর্জনের ব্যাপারে বলা হয়েছে : طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيْضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ ‘জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরয।’৩ আরেকটি প্রসিদ্ধ হাদিসে বলা হয়েছে : اُطْلُبِ الْعِلْمَ مِنَ الْمَهْدِ إِلَى اللّهَدِ ‘দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান অন্বেষণ কর।’ পবিত্র কুরআনে ‘তারা কি চিন্তা করে না’ (أَفَلَا يَتَفَكَّرُوْنَ),‘তারা কি গবেষণা করে না’ (أَفَلَا يَتَدَبَّرُوْنَ),‘তোমরা কি বোঝ না’ (أَفَلَا تَعْقِلُوْنَ),‘তারা কি লক্ষ্য করে না’ ( أَلَمْ يَرَوْا),‘তারা কি (সৃষ্টি প্রক্রিয়া) অবলোকন করে না’ (أَفَلَا يَنْظُرُوْنَ) এমন বাক্য ব্যবহার করে মানুষকে বিবেক-বুদ্ধি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। আবার কুরআনের কোন কোন স্থানে বলা হয়েছে : ‘এতে নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানবান জাতির জন্য’ (لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ) অথবা ‘অনুধাবনকারী সম্প্রদায়ের জন্য আমি নিদর্শনসমূহ বিবৃত করেছি’ (فَصَّلْنَا الآيَاتِ لِّقَوْمٍ يَّفْقَهُوْنَ)। মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে অসংখ্য উপমা উপস্থাপন করেছেন এবং এর কারণও তিনি বলে দিয়েছেন যে,যেন মানুষ এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। …وَ يَضْرِبُ اللهُ الْأَمْثَالَ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُوْنَ ‘…এবং আল্লাহ্ মানুষের জন্য উপমা দিয়ে থাকেন,যাতে তারা শিক্ষা গ্রহণ করে।’৪ বিবেক-বুদ্ধির ব্যবহার যারা বিবেক ব্যবহার করে আর যারা বিবেক ব্যবহার করে না তাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ বলছেন : …قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الْأَعْمَى وَ الْبَصِيْرُ… …‘বল,‘অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান?’…৫ যারা বিবেক-বুদ্ধি কাজে লাগায় না,কোনরূপ চিন্তা করে না,গবেষণা করে না তাদেরকে কুরআনে মূক,বধির,অন্ধ ইত্যাদি অভিধায় তিরস্কৃত করা হয়েছে : إِنَّ شَرَّ الدَّوَابِّ عِنْدَ اللهِ الصُّمُّ الْبُكْمُ الَّذِيْنَ لَا يَعْقِلُوْنَ ‘আল্লাহর নিকট নিকৃষ্টতম জীব সেই বধির ও মূক যারা কিছুই উপলব্ধি করে না।’৬ আরও বলা হয়েছে : وَ مَنْ كَانَ فِيْ هٰذِه أَعْمَى فَهُوَ فِى الْآخِرَةِ أَعْمَى وَ أَضَلُّ سَبِيْلًا ‘আর যে ব্যক্তি এখানে অন্ধ সে আখিরাতেও অন্ধ এবং অধিকতর পথভ্রষ্ট।’৭ এমনকি তাদের পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট বলা হয়েছে : …لَهُمْ قُلُوْبٌ لَّا يَفْقَهُوْنَ بِهَا وَ لَهُمْ أَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُوْنَ بِهَا وَ لَهُمْ آذَانٌ لَّا يَسْمَعُوْنَ بِهَا أُولَائِكَ كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ أُولَائِكَ هُمُ الْغَافِلُوْنَ …‘তাদের হৃদয় আছে,কিন্তু তা দিয়ে তারা উপলব্ধি করে না,তাদের চোখ আছে,তা দিয়ে দেখে না এবং তাদের কান আছে,তা দিয়ে শোনে না,এরাই পশুর ন্যায়,বরং তারা তার চেয়েও নিকৃষ্ট। তারাই গাফেল।’৮ মহান আল্লাহ্ বলছেন : …فَإِنَّهَا لَا تَعْمَى الْأَبْصَارُ وَ لكِنْ تَعْمَى الْقُلُوْبُ الَّتِيْ فِي الصُّدُوْرِ …‘বস্তুত চোখ তো অন্ধ নয়,বরং অন্ধ হচ্ছে বক্ষস্থিত হৃদয়।’৯ আর তাই চিন্তা-গবেষণা করতে হবে,বিবেকের যথাযথ ব্যবহার করতে হবে এবং এর মাধ্যমেই ইহকালীন ও পরকালীন জীবনকে সুন্দর করতে হবে। আল কুরআনে জ্ঞানের প্রতি আহবান স্রষ্টার অস্তিত্ব ও একত্ব প্রমাণে,নবী-রাসূলগণের সত্যতা প্রমাণে,কিয়ামতে পুনরুত্থান প্রমাণে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে অসংখ্য যুক্তি উপস্থাপন করে জ্ঞানের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের কতিপয় আয়াত উপস্থাপন করা হল।

স্রষ্টার অস্তিত্ব মানুষের মৌলিক বিশ্বাসের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে প্রশ্ন উত্থাপিত হয় তা হল স্রষ্টার অস্তিত্ব আছে কি নেই। মহান আল্লাহ বুদ্ধিবৃত্তিকভাবেই এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নেওয়ার ব্যাপারে বারবার তাকিদ দিয়েছেন। অসংখ্য আয়াতের মাধ্যমে তিনি যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। কোথাও চমৎকার উপমার মাধ্যমে বিষয়টির সহজভাবে উপস্থাপন করেছেন। মহান আল্লাহ মানুষকে নিজের সৃষ্টি সম্পর্কেই চিন্তা করার মাধ্যমে স্রষ্টার অস্তিত্বের ব্যাপার উপসংহারে পৌঁছতে বলেছেন : أَمْ خُلِقُوْا مِنْ غَيْرِ شَيْءٍ أَمْ هُمُ الْخَالِقُوْنَ ‘তারা কি অন্যের দ্বারা সৃষ্ট নাকি তারা নিজেরাই স্রষ্টা?’১০ তিনি সৃষ্টিজগতের অন্যান্য সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা করার কথা বলেছেন : أَفَلَا يَنْظُرُوْنَ إِلَى الْإِبِلِ كَيْفَ خُلِقَتْ وَ إِلَى السَّمَاءِ كَيْفَ رُفِعَتْ وَ إِلَى الْجِبَالِ كَيْفَ نُصِبَتْ وَ إِلَى الْأَرْضِ كَيْفَ سُطِحَتْ ‘তারা কি উটের দিকে লক্ষ্য করে না যে,কীরূপে সৃষ্টি করা হয়েছে,আর আসমানের দিকে যে কীরূপে সুউচ্চ করা হয়েছে,আর পর্বতমালার দিকে যে,কীরূপে দাঁড় করানো হয়েছে,আর যমিনকে যে,কীরূপে সম্প্রসারিত করা হয়েছে?’১১ তিনি সৃষ্টিজগতের নিয়মশৃঙ্খলা নিয়ে চিন্তা করতে বলেছেন : إِنَ فِيْ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَ الْأَرْضِ وَ اخْتِلَافِ الّيْلِ وَ النَّهَارِ وَ الْفُلْكِ الَّتِيْ تَجْرِيْ فِي الْبَحْرِ بِمَا يَنْفَعُ النَّاسَ وَ مَا أَنْزَلَ اللهُ مِنَ السَّمَاءِ مِن مَّاءٍ فَأَحْيَا بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَ بَثَّ فِيْهَا مِنْ كُلِّ دَابَّةٍ وَّ تَصْرِيْفِ الرِّيَاحِ وَ السَّحَابِ الْمُسَخَّرِ بَيْنَ السَّمَاءِ وَ الْأَرْضِ لآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ ‘নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে,রাত্রি ও দিবসের পরিবর্তনে,যা মানুষের হিত সাধন করে,তা সহ সমুদ্রে বিচরণশীল নৌযানসমূহে,আল্লাহ্ আকাশ থেকে যে বারি বর্ষণ দ্বারা পৃথিবীকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন তাতে এবং তার মধ্যে যাবতীয় জীবজন্তুর বিস্তারণে,বায়ুর দিক পরিবর্তনে,আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে নিয়ন্ত্রিত মেঘমালাতে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে।’১২

স্রষ্টার একত্ব যখন কারো কাছে স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণ হয়ে যায় তখন তার কাছে দ্বিতীয় যে প্রশ্নের উদ্ভব হয় তা হল স্রষ্টা কি এক,নাকি একের অধিক। পবিত্র কুরআন এ বিষয়েও চমৎকার যুক্তি উপস্থাপন করেছে। বলা হয়েছে : قُلْ لَّوْ كَانَ مَعَهُ آلِهَةٌ كَمَا يَقُوْلُوْنَ إِذًا لَّابْتَغَوْا إِلَى ذِي الْعَرْشِ سَبِيْلًا ‘বল,‘যদি তাঁর সাথে আরো উপাস্য থাকত,যেমন তারা বলে,তবে তারা আরশ-অধিপতির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার উপায় অন্বেষণ করত।’১৩ আল্লাহ্ একাধিক স্রষ্টার অস্তিত্ব থাকার পরিণাম সম্পর্কে বিবেককে জাগ্রত করার জন্য বলছেন : …لَوْ كَانَ فِيْهِمَا آلِهَةٌ إِلَّا اللهُ لَفَسَدَتَا… …‘যদি এতদুভয়ের মধ্যে (আকাশ ও পৃথিবীতে) আল্লাহ ব্যতীত বহু উপাস্য থাকত তা হলে উভয়ই (আকাশ ও পৃথিবী) ধ্বংস হয়ে যেত’…১৪

নবী-রাসূলগণ সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ নিরর্থক কোন কিছুই সৃষ্টি করেননি। তাঁর প্রতিটি সৃষ্টি উদ্দেশ্যমণ্ডিত। তিনি পৃথিবীতে মানব সৃষ্টি করে পাঠিয়েছেন এরও উদ্দেশ্য রয়েছে। মানবের পূর্ণতা অর্জনই হল সেই উদ্দেশ্য। তাই এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপায়-উপকরণও তিনি পৃথিবীতে দিয়েছেন। এর অন্যতম হল নবী-রাসূল প্রেরণ যেন মানুষ তাঁদের নিকট থেকে প্রশিক্ষণ ও নির্দেশনা নিয়ে সাফল্য লাভ করতে পারে। কেউ প্রশ্ন করতে পারেন যে,সৃষ্টিকর্তা মানুষের সব ধরনের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে পুরোপুরি জ্ঞাত,তবে কেন তিনি তাদেরকে কোন বিষয় জানানো বা কোন বিষয়ে সতর্ক করার কোন পদক্ষেপ নিলেন না? এ প্রশ্নেরই জবাব নিহিত রয়েছে নবী-রাসূলগণকে প্রেরণের মধ্যে। প্রকৃতপক্ষেই এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে,মানুষের জানার ক্ষেত্র সীমিত,তাই কোনটি ভাল,কোনটি মন্দ,কোনটি তার জন্য কল্যাণকর,কোনটি তার জন্য অকল্যাণকর তার সবকিছুই সে নিজে থেকে জানতে বা বুঝতে পারে না। এক্ষেত্রে সে বিকল্প কোন কিছুর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। সে চিন্তা করে এমন কোন উৎস থাকতে হবে যে উৎস থেকে মানুষ এ বিষয়গুলো জানতে পারে। আর এমন উৎসই হলেন নবী-রাসূলগণ। আবার মানুষ তার স্বভাবের কারণে অনেক সময় কল্যাণকর বিষয় থেকে দূরে যায় বা তা তার মধ্যে নিষ্পৃহতা দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে তাকে এ বিষয়গুলো স্মরণ করিয়ে দেওয়া ও সতর্ক করারও প্রয়োজন হয়ে পড়ে। আর তাই মহান আল্লাহ্ও মানুষের জন্য অনুগ্রহ স্বরূপ ঐশী ব্যক্তিত্বদের পাঠাবার ব্যবস্থা করেছেন। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে : …وَ إِنْ مِنْ أُمَّةٍ إِلَّا خَلَا فِيْهَا نَذِيْرٌ …‘এমন কোন জাতি নেই যেখানে ভীতি প্রদর্শনকারী পাঠানো হয়নি।’১৫ আরও বলা হয়েছে : إِنَّمَا أَنْتَ مُنْذِرٌ وَ لِكُلِّ قَوْمٍ هَادٍ ‘নিশ্চয়ই আপনি সতর্ককারী এবং প্রতিটি জাতির জন্য পথপ্রদর্শক রয়েছে।’১৬ নবী-রাসূলগণ প্রেরণের অন্যতম কারণ হল যেহেতু পৃথিবীর ভাল ও মন্দ কর্মের প্রতিদান পরকালে দেওয়া হবে সেহেতু মানুষ যেন কোন অজুহাত দেখাতে না পারে যে,তারা কিছুই জানত না অথবা তারা অনেক বিষয়ই ভুলে গিয়েছিল। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে : رُسُلاً مُّبَشِّرِيْنَ وَ مُنْذِرِيْنَ لِئَلَّا يَكُوْنَ لِلنَّاسِ عَلَى اللهِ حُجَّةٌ بَعْدَ الرُّسُلِ… ‘আমি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে রাসূল প্রেরণ করেছি যাতে রাসূলের পর আল্লাহর বিরুদ্ধে মানুষের কোন অজুহাত না থাকে।’…১৭ হযরত আদম (আ.),নূহ (আ.),ইবরাহীম (আ.),মূসা (আ.),ঈসা (আ.) এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সহ মোট ছাব্বিশ জন নবী সম্পর্কে তিনি পরিচয় দিয়েছেন। যেমন : وَ لَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوْحًا إِلَى قَوْمِهِ… ‘আমি নূহকে তার সম্প্রদায়ের নিকট পাঠিয়েছিলাম।’…১৮ وَ لَقَدْ أَرْسَلْنَا مُوْسى بِآيَاتِنَا وَ سُلْطَانٍ مُّبِيْنٍ ‘আমি মূসাকে আমার নিদর্শনাবলি ও স্পষ্ট প্রমাণসহ পাঠিয়েছিলাম।’১৯ তবে যে কেউ নবুওয়াত দাবি করলেই যে তাকে মেনে নিতে হবে পবিত্র কুরআন তা সমর্থন করে না। বরং এ ক্ষেত্রেও পবিত্র কুরআন জ্ঞানবুদ্ধি ব্যবহার করতে বলেছে। নবী-রাসূলগণ মোজেজার মাধ্যমে তাঁদের নবুওয়াতের সত্যতা প্রমাণ করতেন যেটা অন্য কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। অনেকের কাছেই তা যাদুবিদ্যা মনে হতে পারে। কিন্তু মানুষ যদি তার জ্ঞান দিয়ে যাচাই করে তবে তার কাছে এ বিষয়টি প্রমাণ হয়ে যায়। আমরা হযরত মূসা (আ.)-এর সাথে যাদুকরদের মোকাবিলার ঘটনায় এটি দেখতে পাই।২০

পবিত্র কুরআন সম্পর্কে নবী-রাসূল প্রেরণের সাথে সাথে মহান আল্লাহ্ জীবনবিধান সম্বলিত ঐশী গ্রন্থও প্রেরণ করেছেন। যারা স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে তারা স্বাভাবিকভাবেই স্রষ্টার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত গ্রন্থকেও অস্বীকার করে। তাই স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণে পবিত্র কুরআনে যেমন বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা করা হয়েছে তেমনি সর্বশেষ ঐশী গ্রন্থ সম্পর্কেও যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে। এমনকি মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনের সত্যাসত্য নির্ণয়ের জন্যও বিবেক কাজে লাগানোর কথা বলেছেন। তিনি পবিত্র কুরআনের মত কোন রচনা নিয়ে আসার জন্য যে চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন,তার মাধ্যমেই বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে বুঝে নিতে বলেছেন যে,এটা মানুষের রচনা নয়। মহান আল্লাহ্ কুরআনের অনুরূপ রচনা করার চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছেন : فَلْيَأْتُوْا بِحَدِيْثٍ مِّثْلِهِ إِنْ كَانُوْا صَادِقِيْنَ ‘তারা যদি সত্যবাদী হয়,তবে এর সদৃশ কোন রচনা উপস্থিত করুক!’২১ এরপর সেই চ্যালেঞ্জকে সহজ করে দিয়ে বলেছেন : قُلْ فَأْتُوْا بِعَشْرِ سُوَرٍ مِّثْلِهِ مُفْتَرَيَاتٍ وَ ادْعُوْا مَنِ اسْتَطَعْتُمْ مِنْ دُوْنِ اللهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ ‘বল,তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে তোমরা এর অনুরূপ দশটি সূরা আন এবং আল্লাহ্ ব্যতীত অপর যাকে পার ডেকে নাও।’২২ সবশেষে মাত্র একটি সূরা রচনা করে আনার চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন : وَ إِنْ كُنْتُمْ فِيْ رَيْبٍ مِمَّا نَزَّلْنَا عَلَى عَبْدِنَا فَأْتُوْا بِسُوْرَةٍ مِنْ مِثْلِهِ وَ ادْعُوْا شُهَدَاءَكُمْ مِنْ دُوْنِ اللهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ ‘আমরা আমাদের বান্দার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি তাতে যদি তোমরা সন্দেহে নিপতিত হও তা হলে এর অনুরূপ একটি সূরা (রচনা করে) নিয়ে আস,আর আল্লাহ্ ছাড়া তোমাদের অন্যসব সাক্ষীকে আহ্বান কর,যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক।’২৩ أَمْ يَقُوْلُوْنَ افْتَرَاهُ قُلْ فَأْتُوْا بِسُوْرَةٍ مِثْلِهِ وَ ادْعُوْا مَنِ اسْتَطَعْتُمْ مِنْ دُوْنِ اللهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ ‘তারা কি বলে সে এটা রচনা করেছে? বল : তবে তোমরা এর অনুরূপ একটি সূরা (রচনা করে) নিয়ে এস,আর আল্লাহ্ ছাড়া অন্য যাকে পার আহ্বান কর,যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক।’২৪ তিনি এ চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় কেবল মানুষ নয়,বরং মানুষ ও জ্বিন জাতির সম্মিলিত শক্তির অক্ষমতার কথা তুলে ধরেছেন : قُلْ لَئِنِ اجْتَمَعَتِ الْإِنْسُ وَ الْجِنُّ عَلَى أَنْ يَأْتُوْا بِمِثْلِ هَذا الْقُرْآنِ لَا يَأْتُوْنَ بِمِثْلِهِ وَ لَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيْرًا ‘যদি এই কুরআনের অনুরূপ আনার জন্য মানুষ ও জ্বিন সমবেত হয় তবুও তারা এর অনুরূপ আনতে পারবে না,এমনকি যদি তারা পরস্পরকে সাহায্যও করে।’২৫ পরিশেষে তিনি এ ব্যাপারে সতর্ক করছেন : فَإِنْ لَمْ تَفْعَلُوْا وَ لَنْ تَفْعَلُوْا فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِيْ وَقُوْدُهَا النَّاسُ وَ الْحِجَارَةُ أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِيْنَ ‘আর যদি (তা) না পার এবং কখনই পারবে না,তা হলে সেই (দোযখের) আগুনকে ভয় কর,যার ইন্ধন মানুষ ও পাথর,যা কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।’২৬ অন্যত্র মহান আল্লাহ্ আরেকটি দৃষ্টিকোণ থেকে কুরআন যে তিনি ব্যতীত আর কারও পক্ষে রচনা করা সম্ভব নয় সে সম্পর্কে বলেছেন : …وَ لَوْ كَانَ مِنْ عِنْدِ غَيْرِ اللهِ لَوَجَدُوْا فِيْهِ اخْتِلَافاً كَثِيْرًا ‘…যদি তা (কুরআন) আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারও নিকট থেকে আসত,তবে তারা তাতে অনেক অসংগতি পেত।’২৭

কিয়ামতে পুনরুত্থান সম্পর্কে পূর্বেও যেমন নানা প্রশ্ন উত্থাপন করে কিয়ামতকে অস্বীকার করা হত,বর্তমানেও তা করা হচ্ছে। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ কিয়ামত অস্বীকারকারীদের এসব প্রশ্নের যথাযথ জবাব দিয়েছেন এবং তা অনুধাবন করার জন্য বলেছেন। فَسَيَقُوْلُوْنَ مَن يُّعِيْدُنَا قُلِ الَّذِيْ فَطَرَكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ ‘তারা বলবে,কে আমাদেরকে পুনরুত্থিত করবে? বল,তিনিই যিনি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন।’২৮ فَانْظُرْ إِلَى آثَارِ رَحْمَتِ اللهِ كَيْفَ يُحْيِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا إِنَّ ذٰلِكَ لَمُحْيِ الْمَوْتَى وَ هُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٍ ‘আল্লাহর অনুগ্রহের ফল সম্পর্কে চিন্তা কর,কীভাবে তিনি ভূমির মৃত্যুর পর এটাকে পুনর্জীবিত করেন,এভাবেই আল্লাহ্ মৃতকে জীবিত করেন,কারণ,তিনি সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।’২৯ وَ يَقُوْلُ الْإِنْسَانُ ءَإِذَا مَامِتُّ لَسَوْفَ أُخْرَجُ حَيًّا أَوَ لَا يَذْكُرُ الْإِنْسَانُ أَنَّا خَلَقْنَاهُ مِنْ قَبْلُ وَ لَمْ يَكُ شَيْئًا ‘মানুষ বলে,‘আমার মৃত্যু হলে আমি কি জীবিত অবস্থায় উত্থিত হব?’ মানুষ কি স্মরণ করে না যে,আমি তাকে পূর্বে সৃষ্টি করেছি যখন সে কিছুই ছিল না?’৩০ এমনকি মানুষ আজ গবেষণার মাধ্যমে যে বিষয়টি জানতে পেরেছে যে,প্রত্যেক মানুষের হাতের আঙ্গুলের রেখা স্বতন্ত্র সেই স্বতন্ত্র রেখাও আল্লাহ্ কিয়ামতে পুনরুত্থানের সময় সৃষ্টি করতে সক্ষম এটি উল্লেখ করেছেন : أَ يَحْسَبُ الْإِنْسَانُ أَ لَّنْ نَّجْمَعَ عِظَامَهُ بَلَى قَادِرِيْنَ عَلَى أَنْ نُّسَوِّيَ بَنَانَهُ ‘মানুষ কি মনে করে যে,আমি তার অস্থিসমূহ একত্র করতে পারব না? বস্তুত আমি তার আঙ্গুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত পুনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম।’৩১

পবিত্র কুরআনে যুক্তি প্রদর্শনের নমুনা পবিত্র কুরআন থেকেই আমরা জেনেছি যে,নবী-রাসূলগণ মানুষকে হেদায়েত করার জন্য বারবার বিবেক-বুদ্ধি ব্যবহার করতে বলেছেন। কীভাবে জ্ঞান-বুদ্ধি ব্যবহার করে যুক্তি প্রদর্শন করতে হয় তার শিক্ষাও তাঁদের জীবনী থেকে পাওয়া যায়। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল নমরুদের মোকাবিলায় ইবরাহীম (আ.)-এর যুক্তি প্রদর্শনের ঘটনা। أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِيْ حَاجَّ إِبْرَاهِيْمَ فِيْ رَبِّهِ أَنْ آتَاهُ اللهُ الْمُلْكَ إِذْ قَالَ إِبْرَاهِيْمُ رَبِّيَ الَّذِيْ يُحْيِي وَ يُمِيْتُ قَالَ أَنَا أُحْيِي وَ أُمِيتُ قَالَ إِبْرَاهِيْمُ فَإِنَّ اللهَ يَاْتِيْ بِالشَّمْسِ مِنَ الْمَشْرِقِ فَأْتِ بِهَا مِنَ الْمَغْرِبِ… ‘তুমি কি ঐ ব্যক্তিকে দেখনি,যে ইবরাহীমের সাথে তার প্রতিপালক সম্বন্ধে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিল,যেহেতু আল্লাহ্ তাকে কর্তৃত্ব দিয়েছিলেন। যখন ইবরাহীম বলল,‘তিনি আমার প্রতিপালক যিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান’,সে বলল,‘আমিও তো জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই’। ইবরাহীম বলল,‘আল্লাহ্ সূর্যকে পূর্ব দিক থেকে উদিত করান,তুমি তাকে পশ্চিম দিক থেকে উদয় করাও তো…।’৩২ প্রাসঙ্গিকভাবেই এখানে নমরুদের জীবন দান ও মৃত্যু ঘটানোর বিষয়টি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। যখন নমরুদের সাথে বিতর্কের এক পর্যায়ে ইবরাহীম (আ.) এ যুক্তি প্রদর্শন করেন যে,‘আমার প্রতিপালক জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান’,তখন নমরুদও দাবি করে যে,সেও জীবন দান করে ও মৃত্যু ঘটায়। এর প্রমাণ হিসাবে সে এক নিরপরাধ ব্যক্তিকে ধরে এনে হত্যা করার নির্দেশ দেয়। জল্লাদ এ হুকুম তাৎক্ষণিকভাবে পালন করে। এরপর সে একজন মৃত্যু দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত অপরাধীকে জেলখানা থেকে ডেকে এনে মুক্ত করে দেয়ার আদেশ দেয়।৩৩ ইবরাহীম (আ.) বুঝতে পারলেন যে,নমরুদ জনসাধারণকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে এবং এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বোঝানোর মত পরিস্থিতিও নেই,তাই তিনি প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে এমন এক প্রসঙ্গের অবতারণা করেন যাতে নমরুদ কোনরকম ভুল ব্যাখ্যা করার সুযোগ না পায়। তিনি বলেন : ‘আমার প্রতিপালক সূর্য পূর্ব দিক থেকে উদিত করেন,তুমি তাকে পশ্চিম দিক থেকে উদয় কর’। আর এ যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে তিনি নমরুদকে হতবুদ্ধি করে দেন। ভিন্ন ভিন্ন গ্রহ-নক্ষত্রের উপাস্যের উপাসনাকারীদের নিকট ইবরাহীম (আ.) যে যুক্তি প্রদর্শন করেছেন সেসবও অতুলনীয়। فَلَمَّا جَنَّ عَلَيْهِ الَّيْلُ رَأَ كَوْكَبًا قَالَ هٰذَا رَبِّيْ فَلَمَّا أَفَلَ قَالَ لَا أُحِبُّ الْآفِلِيْنَ فَلَمَّا رَأَ الْقَمَرَ بَازِغًا قَالَ هذَا رَبِّيْ فَلَمَّا أَفَلَ قَالَ لَئِنْ لَّمْ يَهْدِنِيْ رَبِّيْ لَأَكُوْنَنَّ مِنَ الْقَوْمِ الضَّالِّيْنَ فَلَمَّا رَأَ الشَّمْسَ بَازِغَةً قَالَ هٰذَا رَبِّيْ هذَا أَكْبَرُ فَلَمَّا أَفَلَتْ قَالَ يَاقَوْمِ إِنِّيْ بَرِئٌ مِّمَّا تُشْرِكُوْنَ ‘অতঃপর রাত্রির অন্ধকার যখন তাকে আচ্ছন্ন করল তখন সে নক্ষত্র দেখে বলল,‘এটাই আমার প্রতিপালক।’ অতঃপর যখন তা অস্তমিত হল তখন সে বলল,‘যা অস্তমিত হয় তা আমি পছন্দ করি না।’ অতঃপর যখন সে চন্দ্রকে সমুজ্জ্বলরূপে উদিত হতে দেখল তখন বলল,‘এটা আমার প্রতিপালক।’ যখন এটাও অস্তমিত হল তখন বলল,‘আমাকে আমার প্রতিপালক সৎপথ প্রদর্শন না করলে আমি অবশ্যই পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হব।’ অতঃপর যখন সে সূর্যকে দীপ্তিমানরূপে উদিত হতে দেখল তখন বলল,‘এটা আমার প্রতিপালক,এটা সর্ববৃহৎ।’ যখন এটাও অস্তমিত হল,তখন সে বলল,‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা যাকে আল্লাহর শরীক কর,তার সাথে আমার কোন সংশ্রব নেই।’৩৪ এখানে অনেক সময় ভুল বোঝার অবকাশ রয়ে যায় যে,ইবরাহীম (আ.) বোধ হয় সত্যিসত্যি এগুলোকে তাঁর প্রতিপালক মনে করেছিলেন এবং পরে তাঁর বিবেকের কাছে প্রমাণ হয়েছে যে,এরা তাঁর প্রতিপালক হতে পারে না। বিষয়টি এমন নয়। বরং তিনি গ্রহ-নক্ষত্রের পূজারীদের কাছে এসব উপাস্যের দুর্বলতা প্রকাশ করার জন্যই এমনভাবে যুক্তি প্রয়োগ করেছেন যাতে তা তাদের বিবেককে নাড়া দিতে সক্ষম হয়। পবিত্র কুরআনের সূরা আনআমের ৮৩ নং আয়াতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে : وَ تِلْكَ حُجَّتُنَا آتَيْنَاهَا إِبْرَاهِيْمَ عَلَى قَوْمِهِ… ‘আর এটা আমার যুক্তি-প্রমাণ যা ইবরাহীমকে দিয়েছিলাম তার সম্প্রদায়ের মোকাবিলায়…।’ পবিত্র কুরআনে কাফির মুশরিকদের মূর্তির অক্ষমতা বুঝানোর জন্য ইবরাহীম (আ.) যে কৌশল অবলম্বন করেছিলেন সে সম্পর্কে বলা হয়েছে : فَجَعَلَهُمْ جُذَاذًا إِلَّا كَبِيْرًا لَّهُمْ لَعَلَّهُمْ إِلَيْهِ يَرْجِعُوْنَ قَالُوْا مَنْ فَعَلَ هٰذَا بِآلِهَتِنَا إِنَّهُ لَمِنَ الظَّالِمِيْنَ ‘অতঃপর সে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিল মূর্তিগুলোকে তাদের প্রধান ব্যতীত; যাতে তারা তার দিকে ফিরে আসে। তারা বলল,‘আমাদের উপাস্যগুলোর প্রতি এরূপ করল কে? সে নিশ্চয়ই সীমালঙ্ঘনকারী।’৩৫ এরপর বলা হয়েছে : قَالُوْا ءَأَنْتَ فَعَلْتَ هٰذَا بِآلِهَتِنَا يَا إِبْرَاهِيْمُ قَالَ بَلْ فَعَلَهُ كَبِيْرُهُمْ هٰذَا فَسْئَلُوهُمْ إِنْ كَانُوْا يَنْطِقُوْنَ فَرَجَعُوْا إِلَى أَنْفُسِهِمْ فَقَالُوْا إِنَّكُمْ أَنْتُمُ الظَّالِمُوْنَ ثُمَّ نُكِسُوْا عَلَى رُءُوسِهِمْ لَقَدْ عَلِمْتَ مَا هَؤُلَاءِ يَنْطِقُوْنَ قَالَ أَفَتَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لَا يَنْفَعُكُمْ شَيْئًا وَّ لَا يَضُرُّكُمْ أُفٍّ لَّكُمْ وَ لِمَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ أَفَلَا تَعْقِلُوْنَ ‘তারা বলল,‘হে ইবরাহীম! তুমিই কি আমাদের উপাস্যগুলোর প্রতি এরূপ করেছ?’ সে বলল,‘বরং এদের এই প্রধান,সে-ই তো এটা করেছে,এদেরকে জিজ্ঞাসা কর,যদি এরা কথা বলতে পারে।’ তখন তারা মনে মনে চিন্তা করে দেখল এবং একে অপরকে বলতে লাগল,‘তোমরাই তো সীমালঙ্ঘনকারী।’ অতঃপর তাদের মাথা অবনত হয়ে গেল এবং তারা বলল,‘তুমি তো জানই যে,এরা কথা বলে না।’ ইবরাহীম বলল,‘তবে কি তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদত কর যা তোমাদের কোন উপকার করতে পারে না,ক্ষতিও করতে পারে না। ধিক্ তোমাদেরকে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ইবাদত কর তাদেরকে। তুবও কি তোমরা বুঝবে না?’৩৬ কত চমৎকারভাবে জ্ঞানকে ব্যবহার করেছেন ইবরাহীম (আ.)। আমাদের তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করতে হয়।

 

উপসংহার

 

ইসলাম জ্ঞানের ধর্ম। ইসলাম যুক্তির ধর্ম। তাই ইসলামের প্রচার কাজও হতে হবে যুক্তিভিত্তিক। আমরা যখন কোন অমুসলিমের কাছে ইসলাম ধর্মকে উপস্থাপন করব তখন অবশ্যই যুক্তি-প্রমাণের মাধ্যমে এ ধর্মের সত্যতা তুলে ধরতে হবে। একইভাবে অন্যান্য ধর্মের অসারতাও যুক্তির ভিত্তিতেই প্রমাণ করতে হবে। কুরআন যে সর্বশেষ ঐশী ধর্মগ্রন্থ তা প্রমাণ করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) যে সর্বশেষ নবী ও রাসূল এবং তাঁর প্রচারিত ধর্ম যে আল্লাহর মনোনীত একমাত্র ধর্ম তাও প্রমাণ করতে হবে। তার কাছে পবিত্র কুরআনের এ দলিল উপস্থাপন করা অর্থহীন যে,যেহেতু মহান আল্লাহ তাঁর পবিত্র গ্রন্থ কুরআনে বলেছেন পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থগুলো বিকৃত হয়ে গেছে,তাই সেসব ধর্ম বাতিল হয়ে গেছে। বরং এ পুরো প্রক্রিয়ার জন্য স্বতঃসিদ্ধ যুক্তিবুদ্ধির ব্যবহার অপরিহার্য; অন্যথায় ইসলাম ধর্মে অবিশ্বাসীদের নিকট তা অগ্রহণযোগ্য হয়ে পড়বে। আবার একইভাবে নাস্তিকের কাছে ধর্মের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে হবে। ধর্মবিরোধীরা ধর্ম সম্পর্কে যে সব আপত্তি উত্থাপন করে তার যৌক্তিক জবাব প্রদান করতে হবে। ধর্মহীনতা মানব জীবনে কী ক্ষতিকর প্রভাব রাখে তা ব্যাখ্যা করতে হবে। ধর্মীয় জীবন যাপন মানব সমাজের জন্য যে সব কল্যাণকর ভূমিকা রাখতে পারে সেগুলো বুঝিয়ে বলতে হবে। অর্থাৎ জ্ঞানের বিকল্প কোন কিছুই এ ব্যাপারে ভূমিকা রাখতে সক্ষম নয়। তাই ধর্মকে যথাযথভাবে প্রত্যেকের কাছে উপস্থাপন করতে হবে যেমনটি পবিত্র কুরআনও নির্দেশ দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-কে মহান আল্লাহ্ প্রজ্ঞাসহকারে মানুষকে ধর্মের দিকে আহ্বান করতে বলেছেন : أُدْعُ إِلَى سَبِيْلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَ الْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَ جَادِلْهُمْ بِالَّتِيْ هِيَ أَحْسَنُ ‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহ্বান কর হিকমত (প্রজ্ঞা) ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে তর্ক করবে উত্তম পন্থায়।’৩৭ এতো অমুসলিম ও নাস্তিকদের প্রসঙ্গ। কিন্তু একজন মুসলমানের কাছেও সবকিছু উপস্থাপন করতে হবে যুক্তি দিয়ে। কোন মুসলমান যে কোন বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারে- সেটা হতে পারে আল্লাহ্ সম্পর্কে,হতে পারে নবী-রাসূলগণ সম্পর্কে অথবা ইসলাম ধর্মের কোন বিধান সম্পর্কে,যেমন উত্তরাধিকার আইন,পুরুষের একের অধিক বিবাহের বিষয় ইত্যাদি। যদি যথোপযুক্ত জবাব দানের মাধ্যমে তাকে সন্তুষ্ট করা না যায় তবে হয়তো সে তা মনে-প্রাণে গ্রহণ করতে সক্ষম হবে না। যখন সে সঠিক জবাব পেতে ব্যর্থ হবে তখন সে ধর্মের ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলতে পারে। ইসলাম ধর্মের প্রতি তার সন্দেহের সৃষ্টি হতে পারে। সে মনে করতে পারে যে,এটি জবর-দস্তিমূলক কোন ধর্ম যেখানে যুক্তিকে অগ্রাহ্য করা হয়,যে ধর্ম জ্ঞানের পরিবর্তে কুসংস্কারকে প্রশ্রয় দেয় অথবা এটি অজ্ঞ ও অন্ধ অনুসারীদের ধর্ম। মানুষের মধ্যে যে সহজাত সত্যাণ্বেষী মনোবৃত্তি রয়েছে তা অবশ্যই পরিতৃপ্ত করতে হবে। মানুষের মনে প্রশ্ন আসবেই। তাকে ধমক দিয়ে অথবা যেন-তেনভাবে বুঝিয়ে দাবিয়ে রাখা উচিত নয়,বিশেষ করে বর্তমান নাস্তিকতাপূর্ণ পরিবেশে যেখানে ধর্মের বাঁধন শিথিল হয়ে যাচ্ছে। মুসলমানদের মধ্যেও নানা মত ও পথের বিভাজন রয়েছে এবং স্বাভাবিকভাবেই সকলের মধ্যেই নিজেকে সঠিক দাবি করার ব্যাপারটি ঘটে থাকে। এ ক্ষেত্রেও সকল মুসলমানের জন্য পবিত্র কুরআনে যে বিবেক-বুদ্ধি ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে সেই বিবেক-বুদ্ধিরই আশ্রয় নেওয়া উচিত। দুর্ভাগ্যজনক যে,কেউ কেউ এ বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে নিষেধ করে থাকেন অথবা নিরুৎসাহিত করেন। যেন তাঁরা কুরআনের নির্দেশনার বিপরীতে আশংকা করেন যে,বুদ্ধিবৃত্তির ব্যবহার তাঁদেরকে সত্যপথ থেকে বিচ্যুত করে ফেলতে পারে। আসলে হয় তাঁরা নিজেদের জ্ঞানের স্বল্পতা হেতু এ ধরনের অমূলক আশংকায় ভোগেন অথবা কোন বিষয়ের প্রতি অন্ধ ভাললাগা বা আনুগত্য এ ধরনের একপেশে অযৌক্তিক মত প্রকাশ করতে তাঁদের বাধ্য করে। প্রশ্ন করা যেতে পারে যে,রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর যুগের মানুষের সাথে আজকের যুগের মানুষের কী পার্থক্য? রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর ওপর যে ওহী নাযিল হয়েছিল এবং যা তিনি তাঁর যুগের মানুষের কাছে সরাসরি মৌখিকভাবে উপস্থাপন করেছেন সে কথাই লিখিত আকারে কুরআন রূপে আমাদের মধ্যে বিদ্যমান। যদি চৌদ্দশ’ বছর পূর্বে পবিত্র কুরআন বিবেক-বুদ্ধি ব্যবহারের কথা বলে থাকে,তবে আজ কি তার আবেদন নিঃশেষ হয়ে গেছে? কুরআন কি কেবলই রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর যুগের জন্য এসেছিল? এর আহ্বান কি কেবল সেই সময়ের মানুষের জন্য ছিল? প্রকৃতপক্ষে পবিত্র কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রচেষ্টা চালালেই মানুষ মহান আল্লাহ্কে চিনতে পারবে,নবী-রাসূলগণকে চিনতে পারবে,জীবনকে কীভাবে গঠন করবে তার দিক নির্দেশনা পাবে,পার্থিব ও পরকালীন জীবনের মুক্তির দিশা পাবে। যদি বিবেক-বুদ্ধিকে কাজে লাগানো না হয়,যদি কুরআন নিয়ে গবেষণা না করা হয়,তা হলে না আল্লাহকে চেনা সম্ভব,না নবী-রাসূলগণকে। মানুষ যেমন পার্থিব জীবনের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে,তেমনি পরকালীন অনন্ত জীবনের কল্যাণ থেকেও বঞ্চিত হবে। আর যদি আল্লাহ্কে চেনা সম্ভব না হয়,তাঁর রাসূল (সা.)-কে চেনা সম্ভব না হয় তাহলে মানুষ নিজেরা যেমন পথভ্রষ্ট হবে,তেমনি অন্যদেরও পথভ্রষ্টতার দিকে ঠেলে দেবে। মক্কার কাফেররা যেমন (নাউযুবিল্লাহ) রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে কবি,যাদুকর,পাগল বলেছিল,অনেক প্রাচ্যবিদ বিধর্মী লেখক যেমন রাসূলকে মৃগী রুগী,নারীলিপ্সু,যুদ্ধবাজ বলেছে,মুসলমানরাও তেমনি রাসূলকে (নাউযুবিল্লাহ্) ভুল-ভ্রান্তির শিকার হওয়া,ধর্মীয় বিধানের ব্যাপারে উদাসীন হওয়া অথবা অন্য কোন দোষে দোষী সাব্যস্ত করবে এবং দুঃখজনকভাবে সত্য হল এটিই যে,আজ মুসলমানদের মধ্যে একটি বিরাট অংশ রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর সঠিক পরিচয় লাভ করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর মর্যাদার পরিপন্থী অসংখ্য হাদিসকে অবলীলায় সত্য বলে গ্রহণ করেছে। শুধু তা-ই নয়,প্রতিটি অসত্য হাদিসকে সত্য প্রমাণ করার জন্য নানারূপ অপব্যাখ্যারও আশ্রয় নিয়েছে। যা হোক পার্থিব যে কোন কিছুকে মানুষ বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে যাচাই-বাছাই করে গ্রহণ করে থাকে। পার্থিব জীবনের নানা কাজ,যেমন পড়ালেখা,জীবিকার ব্যবস্থা করা,বিবাহ,সন্তান গ্রহণ,বাসস্থান তৈরি ইত্যাদি কাজে মানুষ জ্ঞান-বুদ্ধির যথোপযুক্ত ব্যবহার করার চেষ্টা করে। আর এর সবই করছে পৃথিবীতে মাত্র কয়েক বছরের জীবনকে আরামপ্রদ করার জন্য। অথচ মৃত্যুর পর যে জীবন রয়েছে,সে জীবনের ব্যাপারে বিশ্বাস থাকার পরও সে জীবনকে সুখময় করার জন্য মুসলমানদের মধ্যে চেষ্টা-প্রচেষ্টার ঘাটতি চরম মাত্রায় পরিলক্ষিত হয়। মৃত্যুর পরের এ জীবনকে সুখময় করার জন্য একমাত্র পথই হল জ্ঞান-বুদ্ধির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে সত্যপথ খুঁজে নিয়ে সে পথের অনুসরণ। যদি মৃত্যু-পরবর্তী অনন্তকালের জীবনকে সুখময় করার জন্য জ্ঞানের ব্যবহার করা না হয় তবে কি মহান আল্লাহ কেবল এ ক্ষণস্থায়ী পার্থিব জীবনে ব্যবহারের জন্যই মানুষকে জ্ঞান ও বিবেক-বুদ্ধি দিয়েছেন? সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে জ্ঞান-বুদ্ধি প্রয়োগ করা ছাড়া আর কোন পথ আছে কি? আর যদি বিষয়টি এমন হয় যে,সকলেই পূর্বপুরুষদের অথবা অন্যান্যের দোহাই দেবে যে,আমি তাঁদের যে পথের ওপর পেয়েছি সে পথই অনুসরণ করেছি,এ ছাড়া আমার আর কোন পথ ছিল না। এটা কি নবী-রাসূলগণের যুগের সেই মূর্তিপূজকদের কথা নয় যারা পূর্বপুরুষদের দোহাই দিত? পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াতে কাফেরদের কথা বার বার বলা হয়েছে যারা পূর্বপুরুষদের দোহাই দিয়ে রাসূলগণের আনুগত্য করতে অস্বীকার করেছিল। হযরত সালেহ (আ.)-এর জাতি তাঁকে বলেছিল : …أَتَنْهَانَا أَنْ نَّعْبُدَ مَا يَعْبُدُ آبَاؤُنَا… …‘তুমি কি আমাদেরকে তাদের ইবাদত করতে নিষেধ করছ,আমাদের পিতৃপুরুষরা যাদের ইবাদত করত?’…৩৮ হযরত শুয়াইব (আ.)-এর জাতি এ ব্যাপারে বলেছিল : …يَا شُعَيْبُ أَصَلَوتُكَ تَأْمُرُكَ أَنْ نَّتْرُكَ مَا يَعْبُدُ آبَاؤُنَا أَوْ أَنْ نَّفْعَلَ فِيْ أَمْوَالِنَا مَا نَشَاؤُا …‘হে শুয়াইব! তোমার সালাত কি তোমাকে নির্দেশ দেয় যে,আমাদের পিতৃপুরুষরা যার ইবাদত করত আমাদেরকে তা বর্জন করতে হবে অথবা আমরা আমাদের ধনসম্পদ সম্পর্কে যা করি তাও?’৩৯ হযরত মূসা (আ.)-এর জাতি বলেছিল : أَجِئْتَنَا لِتَلْفِتَنَا عَمَّا وَجَدْنَا عَلَيْهِ أبَاءَنَا ‘আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদের যাতে পেয়েছি তুমি কি তা থেকে আমাদেরকে বিচ্যুত করার জন্য আমাদের নিকট এসেছ?’৪০ একইভাবে রাসূল (সা.)-কেও কাফেররা একই কথা বলেছিল যা পবিত্র কুরআনে এভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে : وَ إِذَا قِيْلَ لَهُمُ اتَّبِعُوا مَا أَنْزَلَ اللهُ قَالُوْا بَلْ نَتَّبِعُ مَا أَلْفَيْنَا عَلَيْهِ آبَاءُنَا أَوَ لَوْ كَانَ آبَاؤًهُمْ لَا يَعْقِلُوْنَ شَيْئًا وَّ لَا يَهْتَدُوْنَ ‘যখন তাদেরকে বলা হয়,‘আল্লাহ্ যা অবতীর্ণ করেছেন তা তোমরা অনুসরণ কর’,তারা বলে,‘না,বরং আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে যাতে পেয়েছি তার অনুসরণ করব। এমনকি,তাদের পিতৃপুরুষরা যদিও কিছুই বুঝত না এবং তারা সৎ পথেও পরিচালিত ছিল না,তথাপি।’৪১ তা হলে কী পার্থক্য সেদিনের সেই কাফেরদের সাথে আমাদের? আজকের বিধর্মীদের তবে কী দোষ যে,তারা তাদের ধর্ম ত্যাগ করবে? তারাও তো তাদের পিতৃপুরুষদের তাদের ধর্মের ওপর পেয়েছে। তাই আবার বলতে হয় পবিত্র কুরআনের আবেদন কি তবে নিঃশেষ হয়ে গেছে? পবিত্র কুরআনের এ আয়াতের অন্তর্নিহিত অর্থের দিকে অবশ্যই মুসলমানদের গভীর মনোযোগ দিতে হবে : وَ لَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ إلَّا عَلَيْهَا وَ لَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى… ‘প্রত্যেকে স্বীয় কৃতকর্মের জন্য দায়ী। কেউ বহন করবে না অন্যের বোঝা।’…৪২ তাই প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্যকর্তব্য হল মহান আল্লাহর কিতাবের নির্দেশ মান্য করা। সম্পূর্ণ স্বাধীন বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করে নিজের আকীদা নির্ধারণ করা। আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসাবে বিচারবুদ্ধি ব্যবহারের মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলগণের পরিচয় লাভ করা এবং কুরআন ও রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর নির্দেশিত সঠিক পথ বেছে নিয়ে সে অনুযায়ী জীবন যাপন করে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক মুক্তির ব্যবস্থা করা। যারা এ কাজ করতে পারবে তারাই মহান আল্লাহর দৃষ্টিতে বুদ্ধিমান। কারণ,মহান আল্লাহ্ বলছেন : الَّذِيْنَ يَسْتَمِعُوْنَ الْقَوْلَ فَيَتَّبِعُوْنَ أَحْسَنَهُ أُولَائِكَ الَّذِيْنَ هَدٰهُمْ اللهُ وَ أُولَائِكَ هُمْ أُولُوا الْأَلْبَابِ ‘যারা মনোযোগ সহকারে কথা শোনে এবং তার মধ্যে যা উত্তম তা গ্রহণ করে। তাদেরকে আল্লাহ্ সৎপথে পরিচালিত করেন এবং তারাই বোধশক্তিসম্পন্ন।’৪৩ আর মহান আল্লাহ্ তো পবিত্র কুরআনে ওয়াদা করেছেন যে,যাঁরা এজন্য চেষ্টা-প্রচেষ্টা করবেন তাঁদের তিনি নিজেই পথ প্রদর্শন করবেন : وَ الَّذِيْنَ جَاهَدُوا فِيْنَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا… ‘যারা আমাদের উদ্দেশ্যে কঠোর চেষ্টা করে,আমরা তাদের অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব…।’৪৪ তথ্যসূত্র: ( ১. সূরা যুমার : ৯,) (২. সূরা আলাক : ১-৫,) (৩. ইবনে মাজাহ,১ম খণ্ড,হাদীস নং ২২৪,আধুনিক প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত, ) ( ৪. সূরা ইবরাহীম : ২৫,) ( ৫. সূরা রাদ : ১৬,) (৬.সূরা আনফাল : ২২,) (৭. সূরা বনি ইসরাইল : ৭২,) ( ৮. সূরা আরাফ : ১৭৯, ) (৯. সূরা হাজ্ব : ৪৬, ) (১০. সূরা তূর : ৩৫ ) ( ১১. সূরা গাশিয়াহ্ : ১৭-২০ ) ( ১২. সূরা বাকারা : ১৬৪ ) (১৩. সূরা বনি ইসরাইল : ৪২) (১৪. সূরা আম্বিয়া : ২২) (১৫. সূরা ফাতির : ২৪) (১৬. সূরা রাদ : ৭ ) (১৭. সূরা নিসা : ১৬৫) (১৮. সূরা হুদ : ২৫) (১৯. সূরা হুদ : ৯৬) (২০. সূরা ত্বহা : ৬১-৭৩) (২১. সূরা তূর : ৩৪) (২২. সূরা হুদ : ১৩) (২৩. সূরা বাকারা : ২৩) (২৪. সূরা ইউনূস : ৩৮) (২৫. বনি ইসরাইল : ৮৮) (২৬. সূরা বাকারা : ২৪) (২৭. সূরা নিসা : ৮২) (২৮. সূরা বনি ইসরাইল : ৫১) (২৯. সূরা রূম : ৫০) (৩০. সূরা মারইয়াম : ৬৬-৬৭) (৩১. সূরা কিয়ামাহ : ৩-৪) (৩২. সূরা বাকারা : ২৫৮) (৩৩. কাছাছুল কোরআন,১ম খণ্ড,পৃ. ১৮৪,এমদাদিয়া লাইব্রেরী,ঢাকা কর্তৃক প্রকাশিত) (৩৪. সূরা আনআম : ৭৬-৭৮) (৩৫. সূরা আম্বিয়া : ৫৮-৫৯) (৩৬. সূরা আম্বিয়া : ৬২-৬৭) (৩৭. সূরা নাহল : ১২৫) (৩৮. সূরা হুদ : ৬২) (৩৯. সূরা হুদ : ৮৭) (৪০. সূরা ইউনূস : ৭৮) (৪১. সূরা বাকারা : ১৭০) (৪২. সূরা আনআম : ১৬৪) (৪৩. সূরা যুমার : ১৮) (৪৪. সূরা আনকাবুত : ৬৯) ((সূত্র:প্রত্যাশা,১ম বর্ষ,২য় সংখ্যা।)  

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন!

 

আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে  জানতে  লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।

আইডিসি  মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আপনি আইডিসি  মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।

 

ইসলামে নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব

  ইসলামে নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে উত্সাহিত করা হয়েছে এবং নারী জাতির মেধা, মনশীলতা, বিবেক ও বুদ্ধিবৃত্তিক উত্কর্ষের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (স) অত্যন্ত গুরুত্ব প্রদানের সাথে সাথে নারী শিক্ষায় ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতাও দিয়েছেন। কেননা তিনি মনে করতেন, নারীকে শিক্ষাবঞ্চিত রেখে যেমন আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব নয় তেমনি শিক্ষিত জাতি গঠনে এবং পারিবারিক শিক্ষার ভিত্তি মজবুত করার জন্য মেয়েদের শিক্ষা কার্যক্রমে আত্মনিয়োগ করা অনস্বীকার্য। যেমনভাবে উম্মুল মুমিনীন তাঁদের কাছে আগত মহিলাদেরকে ধর্মীয়, ব্যক্তিগত, পারিবারিক প্রভৃতি বিষয়ে নৈতিক শিক্ষাদান করতেন। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘বলো, যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান?’ (সূরা আল-যুমার, আয়াত : ৯) তাই নবী করিম (স) স্বয়ং নারীদের বিদ্যাশিক্ষা গ্রহণের প্রতি বিশেষভাবে সতর্ক দৃষ্টি রাখতেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে নারীদের উদ্দেশে শিক্ষামূলক ভাষণ দিয়ে উদাত্ত কণ্ঠে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য জ্ঞানার্জন করা ফরজ।’ (ইবনে মাজা) ইসলাম নারীকে মৌলিক মানবাধিকার তথা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিত্সা প্রভৃতি ক্ষেত্রে পুরুষের সমান মর্যাদা প্রদান করেছে। ইসলাম নারীকে বিদ্যাশিক্ষার অধিকার দিয়েছে। ধর্মীয় ও বৈষয়িক জীবনের শিক্ষা-দীক্ষা এবং যাবতীয় দায়-দায়িত্বের সাথে সুসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রয়োজনীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার সুযোগ নারীর রয়েছে। ইসলামের প্রারম্ভিক সময়ে আরবে মাত্র ১৭ জন লোক পড়ালেখা জানতো, এর মধ্যে ৫ জনই ছিল নারী। তাই নারীর ব্যক্তিসত্তার পরিচর্যা, আত্মিক উন্নয়ন ও নৈতিক গুণাবলির উত্কর্ষ সাধনের জন্য রাসূলুল্লাহ (স) পুঁথিগত বিদ্যার বাইরেও জ্ঞানার্জনের পরামর্শ দিতেন। মুসলিম পরিবারে কন্যাশিশুর শিক্ষা-দীক্ষা, ভরণ-পোষণসহ যাবতীয় দায়ভার পিতাকে গ্রহণ করতে হয় স্বেচ্ছায় সুসম্মতিতে তার বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত। এজন্য কন্যাশিশু প্রতিপালন ও মেয়েদের উপযুক্ত শিক্ষাদানের জন্য বেহেশতের সুসংবাদ দিয়ে নবী করিম (স) ফরমান, ‘যার দুটি বা তিনটি কন্যা সন্তান আছে এবং তাদের উত্তম শিক্ষায় সুশিক্ষিত ও প্রতিপালিত করে সত্ পাত্রস্থ করবে, সে জান্নাতে আমার সঙ্গে সহঅবস্থান করবে।’ (মুসলিম) নবী করিম (স) নারীদেরকে সৃজনশীল চিন্তা-চেতনায় ও শিক্ষা-গবেষণায় সুদক্ষ করার জন্য সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ব্যবস্থা চালু করেন। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিন শুধু নারীদের শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন। রাসূলুুল্লাহ (স)-এর কাছে নারীরা এই মর্মে অভিযোগ করলেন যে, আপনার কাছে শিক্ষার্জনের ক্ষেত্রে আমাদের চেয়ে পুরুষরা এগিয়ে। আমাদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো দিন বরাদ্দ করুন। রাসূলুল্লাহ (স) প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেন এবং নির্দিষ্ট দিনে তাদের সাথে সাক্ষাত্ করে দিক-নির্দেশনামূলক জ্ঞান, শিক্ষা ও উপদেশ দিতেন। (বুখারী) মহানবী (স)-এর সহধর্মিণী হজরত আয়েশা (রা) সহ অনেকেই নারী শিক্ষার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁকে হাদিস বর্ণনাকারী ইমাম ও অধিক জ্ঞানসম্পন্ন সাহাবীদের মধ্যে গণ্য করা হয়। বহু সংখ্যক সাহাবী ও তাবেয়ী তাঁর কাছ থেকে হাদিস বর্ণনা করেন এবং ইলমে দ্বীন শিক্ষা লাভ করেন। তাঁর বর্ণিত ২২১০টি হাদিসের মধ্যে ১৭৪টি বুখারী ও মুসলিম উভয় গ্রন্থে স্থান লাভ করেছে। মুসলিম রমণীদের মাঝে তিনি ছিলেন প্রথম শিক্ষিকা, সর্বোচ্চ মুফতি, সবচেয়ে জ্ঞানবতী ও বিচক্ষণা। সেই যুগে জ্ঞানের জগতে তাঁর ছিল অসাধারণ ভূমিকা। আরবদের ইতিহাস, চিকিত্সাবিদ্যা ও পদ্য সাহিত্যে তিনি ছিলেন অধিকতর জ্ঞানী, সঠিক সিদ্ধান্ত ও দৃঢ় যুক্তি উপস্থাপিকা, জাগতিক জ্ঞানে অধিক পারদর্শী আর দ্বীনের বিষয়ে অধিক বোধসম্পন্না। তিনি ধর্ম, দর্শন বিষয়ক বিভিন্ন মাসআলার উদ্ভাবক ছিলেন। তিনি লিখতে ও পড়তে জানতেন। পবিত্র কোরআনের তাফসির, হাদিস, আরবি সাহিত্য ও নসবনামা সম্পর্কে পূর্ণ পাণ্ডিত্য এবং বাগ্মিতায়ও তাঁর সুখ্যাতি ছিল। জ্ঞান সাধনার ক্ষেত্রে নবী করিম (স)-এর আদরের দুহিতা খাতুনে জান্নাত হজরত ফাতেমা (রা) ছিলেন অনন্যা। তিনি পিতার কাছ থেকে দ্বীনের শিক্ষা অর্জন করে নিজেই একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিলেন। মদিনায় তাঁর গৃহে প্রায়ই বিভিন্ন জ্ঞানপিপাসু মহিলার ভিড় লেগে থাকত। তখন তাঁর ঘর ছিল একটি শিক্ষাকেন্দ্র। অতএব, মেধাবী নারীদের কোণঠাসা করে না রেখে, তাদের শালীনভাবে নিরাপদে চলাফেরা ও উপযুক্ত শিক্ষা-দীক্ষায় সুযোগ করে দিতে হবে; এজন্য আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। দেশের নারীরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হলে তাদের সন্তান-সন্ততিরাও সঠিক শিক্ষা পাবে। তাদের উপযোগী ও পৃথক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশও আর্থিকভাবে লাভবান হবে। lলেখক: প্রফেসর ও এডভাইজার, ইসলামিক স্টাডিজ ও ইসলামের ইতিহাস বিভাগ, স্কুল অব লিবারেল আর্টস, ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা, উত্তরা, ঢাকা রাসূল সা: জ্ঞান অর্জনের বিষয়ে নারীকে পুরুষের সমান মর্যাদার অধিকারী করেছে, নারী শিক্ষাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখেছেন। এ প্রসঙ্গে নবী করিম সা: জোরালোভাবে বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য জ্ঞানার্জন করা ফরজ’ (ইবনে মাজাহ : ২২৪ )। ওই হাদিসে জ্ঞান অর্জনের ব্যাপারে নারী-পুরুষের মাঝে কোনো পার্থক্য করা হয়নি। বরং জ্ঞান অর্জন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার ওপর কর্তব্য। নারীদের শিক্ষার ব্যাপারে অবহেলা ও অবজ্ঞা করা যাবে না। হাদিসে এদের প্রতিও পুত্রসন্তানের সমান গুরুত্বের প্রতি উৎসাহ দেয়া হয়েছে। রাসূল সা: বলেছেন : ‘কোনো ব্যক্তির যদি একজন কন্যাসন্তান থাকে এবং সে তাকে হত্যা করেনি, কোনো প্রকার অবহেলা করেনি এবং পুত্রসন্তানকে কন্যাসন্তানের ওপর কোনো প্রকার প্রাধান্য দেয়নি। আল্লাহ তাকে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন’ (আবু দাউদ : ৫১৪৬)। নারী শিক্ষার কত দৃষ্টান্ত ফোটে উঠেছে নিচের হাদিসে : একবার এক মহিলা নবীকরীম সা:-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহ্ রাসূল! আপনার হাদিস তো কেবল পুরুষেরা শুনতে পায়। সুতরাং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট করে দিন, যেদিন আমরা আপনার কাছে আসব, আল্লাহ আপনাকে যা কিছু শিখিয়েছেন তা থেকে আপনি আমাদের শেখাবেন। তিনি বললেন : ‘তোমরা অমুক অমুক দিন অমুক অমুক জায়গায় একত্র হবে।’ সে মোতাবেক তারা একত্র হলেন এবং নবী সা: তাদের কাছে এলেন এবং আল্লাহ তাকে যা কিছু শিখিয়েছেন তা থেকে তাদের শিক্ষা দিলেন (সহিহ বুখারি : ৭৩১০)। আশ-শিফা বিনতু আবদুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা আমি হাফসাহ রা:-এর নিকট ছিলাম, তখন নবী সা: আমাকে বললেন : ‘তুমি কি ওকে (হাফসাহকে) যেভাবে লেখা শিখিয়েছ, সেভাবে পিঁপড়া (পোকা) কামড়ের ঝাড়ফুঁক শিক্ষা দেবে না?’ (আবু দাউদ : ৩৮৮৭) আল্লাহর রাসূল সা: তিন শ্রেণীর লোকের জন্য দু’টি পুণ্যের কথা বলেছেন। তাদের মধ্যে এক শ্রেণী হলোÑ ‘এমন লোক যার দাসী ছিল, তারপর তাকে সে সুন্দরভাবে আদাব-কায়দা শিক্ষা দিয়েছে এবং ভালোভাবে দ্বীন ইলম শিক্ষা দিয়েছে, অতঃপর তাকে আজাদ করে বিয়ে করেছে’ (সহিহ বুখারি : ৯৭)। অন্য হাদিসে রাসূল সা: নারীদের উত্তম শিক্ষার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘তোমরা নারীদের উত্তম উপদেশ দাও (অর্থাৎ উত্তম শিক্ষায় শিক্ষিত করো)’ (বুখারি : ৩৩৩১)। ইসলামের মহান পয়গম্বর হজরত মুহাম্মদের (সা.) ওপর অবতীর্ণ অহির প্রথম শব্দটিই ছিল ‘ইকস্ফরা’ অর্থাৎ পড়ো। পড়ার মাধ্যমেই অর্জিত হয় শিক্ষা আর সেই শিক্ষার সোপান বেয়েই মানুষরা লাভ করে থাকে ইহজাগতিক ও পারলৌকিক আবশ্যকীয় জ্ঞান; যা মানবজীবনের জন্য অপরিহার্য। জ্ঞানের কোরআনি পরিভাষাই হচ্ছে ‘ইলম’- রাসুলে কারিমের (সা.) ভাষায় যা অর্জন করা প্রতিটি নর-নারীর জন্যই ফরজ তথা অবশ্য কর্তব্য হিসেবে পালনীয়। শিক্ষা ও জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে ইসলাম কখনোই নর-নারীভেদে ভিন্ন ভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করেনি, বরং এটি সবার জন্যই অবধারিত ঘোষণা করা হয়েছে। জ্ঞানের অপর নাম আলো আর আলোকের কাজই হলো অন্ধকার বিদূরিত করা। সমাজদেহে নারী-পুরুষ উভয়েরই বাস। তাই সমাজে বিদ্যমান অজ্ঞতার অন্ধকারাচ্ছন্নতাকে দূরীকরণের লক্ষ্যে নারী ও পুরুষ সবাইকে শিক্ষা ও জ্ঞানের আলোকে উদ্ভাসিত করতে হবে। নারী হচ্ছে সম্মান, মর্যাদা ও মাতৃত্বের প্রতীক। বলা হয়ে থাকে, ‘হেযনুল উম্মাহাতে হিয়াল মাদরাসাতিল বানিনা ওয়াল বানাত’ অর্থাৎ মাতৃক্রোড় প্রতিটা শিশুর জন্য প্রথম বিদ্যায়তন; যেখানে ছেলে কি মেয়ে সবারই প্রথম বুনিয়াদি তালিমটুকু গ্রহণ করতে হয়। সুতরাং এ ক্ষেত্রে মাতৃক্রোড়ের অধিকারী নারীর জন্য শিক্ষা ও জ্ঞানের ধারক হওয়া আবশ্যক; নচেৎ প্রতিটি নবজাতক বাচ্ছার প্রথম এই শিক্ষালয়ে কী পাঠ তারা গ্রহণ করবে? সন্তানরা শৈশব ও কৈশোরে বেশিরভাগ সময় মায়ের তত্ত্বাবধানেই লালিত-পালিত হয় বিধায় একজন শিক্ষিত, জ্ঞানী মা-ই পারেন তার সন্তানকে জীবনের প্রকৃত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে। এদিক থেকে নারী শিক্ষার গুরুত্ব অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। পবিত্র কোরআন ও মহানবীর (সা.) হাদিসে শিক্ষা ও জ্ঞানার্জনের যত তাগিদ এসেছে তার সবকিছুই নর-নারী নির্বিশেষে, কোথাও নারীকে অপেক্ষাকৃত কম শিখতে বা কম জানতে-পড়তে বলা হয়নি। একজন নারী তার শিক্ষার মধ্য দিয়েই তিনি আদর্শ কন্যা, আদর্শ স্ত্রী, আদর্শ মা- সর্বোপরি আদর্শ নারী হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করবেন; এটিই নারী শিক্ষার লক্ষ্য। ইসলামের ইতিহাসে হজরত খাদিজাতুল কুবরা (রা.), হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.), হজরত ফাতেমাতুজ জাহরা (রা.), হজরত হাফসা (রা.), হজরত উম্মে কুলসুম (রা.), প্রমুখের মতো মহীয়সী নারী শিক্ষা ও জ্ঞানের নানা শাখায় দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। মহান আল্লাহর বাণী- নশ্বর পৃথিবীতে কোনো জিনিসই আল্লাহতায়ালা অনর্থক সৃষ্টি করেননি। তাই তিনি তাঁর সব সৃষ্টি ও সৃষ্ট জগৎ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা, গবেষণা করতে বলেছেন। উন্নত চিন্তা আর সৃষ্টিশীল গবেষণার জন্য স্বল্প পড়াশোনা যথেষ্ট নয়, এ জন্য উচ্চশিক্ষা লাভ জরুরি; যা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অর্জন করবে। মহান রব আরও বলেন- আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই তাঁকে প্রকৃত অর্থে ভয় করেন। আল্লাহর বাণী- ‘ইত্তাকুল্লাহ’ আল্লাহকে ভয় করো, এই নির্দেশনা নারী-পুরুষ সবার প্রতি; নারী যদি জ্ঞানার্জন না করে, তাহলে কীভাবে সে আল্লাহকে প্রকৃতপক্ষে ভয়ের নীতি গ্রহণ করবে? আল্লাহ বলেছেন- তোমাদের রাসুল যা কিছু নিয়ে এসেছেন, তা তোমরা মেনে চলো আর যেসব বিষয়ে তিনি নিষেধ করেছেন, সেসব থেকে নিজেদের বিরত রেখো। নারী যদি পর্যাপ্ত বা প্রয়োজনীয় পড়াশোনা না করে, তবে সে তার প্রতি নির্দেশিত মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সব নির্দেশনা কীভাবে জানবে ও মানবে? পবিত্র কোরআন শিক্ষার ব্যাপারে প্রসিদ্ধ হাদিস- তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই উত্তম, যে নিজে কোরআন শিখবে এবং অন্যদের শিক্ষা দেবে। একজন নারীর পড়াশোনা আর জ্ঞান না থাকলে কীভাবে সে নিজে কোরআন পড়বে আর কীভাবেই-বা সে অন্যদের শিক্ষা দেওয়ার মতো কাজটি সম্পন্ন করবে? তাহলে কি একজন নারী রাসুলের (সা.) কথামতো মানুষ হিসেবে উত্তম হওয়ার প্রচেষ্টা চালাতে পারবে না? ইসলামের দৃষ্টিতে একজন নারী নিজেকে উত্তম ব্যক্তিত্বে পরিণত করার সব অধিকার সংরক্ষণ করেন। ইরশাদ হচ্ছে- পৃথিবীতে মানব আর জিনের সৃষ্টি শুধু আমার ইবাদতের জন্যই। আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে মানুষের অগ্রাধিকার কর্মের এক অনিবার্য অনুষঙ্গ হচ্ছে ‘ইবাদত’। মহান প্রভুর উপাসনা, তাঁর বন্দেগি, সব আদেশ-নিষেধের ফরমাবরদারি করাই বান্দার কাজ। ইবাদত একটি বিস্তৃত পরিসরের বিষয়, এক সামষ্টিক কর্মপ্রক্রিয়ার নাম। স্রষ্টার ইবাদত সম্বন্ধে জানতে হলে প্রথমেই মানুষের জ্ঞানার্জন অত্যাবশ্যক। শিক্ষা ও জ্ঞানের মাহাত্ম্য অর্জন ব্যতিরেকে ইবাদতের মর্মার্থ অনুধাবন কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। অন্যদিকে, মহান আল্লাহ ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত হিসেবে জ্ঞানার্জনকে সুনির্দিষ্ট উপকরণ হিসেবে ঘোষণা করেছেন; ইবাদতের পূর্বেই জ্ঞানার্জনকে ফরজ করেছেন। নারীদের সব ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার জন্য তাদের জ্ঞানার্জনের রাস্তায় চলতে হবে; নচেৎ তাদের কৃত সব ইবাদত অজ্ঞতার আঁধার-গলিতে নিপতিত হবে। বুখারি, মুসলিম ও তিরমিজি শরিফের হাদিসমতে, একদা রাসুলের কাছে এক নারী এসে কোনো বিষয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষা গ্রহণ করল। বিদায়ের সময় রাসুল (সা.) তাকে বললেন, তোমার যদি এর বাইরে অন্য কোনো বিষয়ে জানতে ইচ্ছা হয় বা প্রয়োজন পড়ে, তবে আবারও এসে জেনে নিও। নারী বললেন, যদি আপনাকে না পাই অথবা আপনি যদি দুনিয়া হতে বিদায় হয়ে যান, তবে আমরা কী করব? রাসুল (সা.) জবাবে বললেন, তবে তা আবু বকরের (রা.) কাছ থেকে জেনে নিও। তারপরও শিক্ষা ও জ্ঞানের ধারা রহিত করা যাবে না। অন্য একসময় নারীরা এসে রাসুলকে বলেন, আপনি সবসময় পুরুষদের দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকেন, আমাদের জন্য তাহলে একটা দিন নির্দিষ্ট করুন, যাতে আমরা জ্ঞান আহরণ করতে পারি। নবীজি সে অনুযায়ী তাঁদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন। এ হাদিসদ্বয়ের আলোকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, রাসুল (সা.) নারীদের শিক্ষা দিতেন এবং তাঁর অবর্তমানেও যেন নারী শিক্ষার এ ধারা অব্যাহত থাকে, সে জন্যও তিনি নির্দেশনা প্রদান করেছেন। সে যুগে নারীরা শুধু নিজেরা পড়াশোনা করেছেন তাই নয়, অন্যদের শিক্ষাও দিয়েছেন। হজরত আয়েশা (রা.) ছিলেন অজস্র মানুষের শিক্ষক; চার খলিফাসহ অসংখ্য সাহাবি তাঁর কাছ থেকে জ্ঞানার্জন করেছেন। ইসলামের বিধান হলো, নারীরা শিক্ষা ও জ্ঞানের যে কোনো স্তরেই অধ্যয়ন ও গবেষণা করতে পারবেন এবং অর্জিত জ্ঞান ও প্রজ্ঞার মিশেলে অন্যদের শিক্ষাদানও করতে পারবেন। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন- ‘তোমাদের গৃহে মহান আল্লাহর যে বাণী ও হেকমত পঠিত ও পরিবেশিত হয়, তা তোমরা স্মরণ ও প্রচার করো (সুরা আহযাব, ৩৪)। মানবেতিহাসের সর্বনিকৃষ্ট যুগ ছিল আরবের আইয়ামে জাহেলিয়া। অজ্ঞতা ও মূর্খতার জন্য সেই যুগটি বর্বর, অমানবিক ও নিষ্ঠুরতার সব উপকরণে ঢেকে গিয়েছিল। জেহালতের সেই অন্ধকারাচ্ছন্নতা শুধু শিক্ষা ও জ্ঞানের আলোকবর্তিকার মাধ্যমেই দূরীভূত হয়েছিল; নারী-পুরুষের সম্মিলিত জ্ঞানের মাধ্যমেই আঁধার মরুর বুকে যে আলোকিত সমাজ নির্মিত হয়েছিল, তা আজও পর্যন্ত সভ্যতার ইতিহাসে সর্বোৎকৃষ্ট যুগ হিসেবে স্বীকৃত। লেখক ও গবেষক; অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়   ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন বিধান। স্রষ্টা প্রদত্ত এ ব্যবস্থা তাঁর সমগ্র সৃষ্টির কল্যাণেই মনোনীত হয়েছে। আর যাঁর মাধ্যমে এ জীবন বিধান প্রদত্ত ও প্রদর্শিত হয়েছে, সে শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে বলা হয়েছে ‘সমগ্র সৃষ্টির কল্যাণ’ রাহমাতুলি্লল আলামীন, যেমন বলা হয়েছে- ওয়ামা আরসালনাকা ইল্লা রাহমাতালি্লল আলামীন (আল-কোরআন)। তাই, ইসলাম কোনো নিকৃষ্ট জীবকেও অবহেলা করে না বরং তাদেরও অধিকার নিশ্চিত করে। তাইতো দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ফারুক রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেছিলেন, ‘ফোরাতের ওই তীরে একটি কুকুরও যদি না খেয়ে মরে তবে এজন্য কাল হাশরের ময়দানে আমি ওমরকে পাকড়াও করা হবে।’ আর মানুষতো সৃষ্টির সেরা আশরাফুল মাখলুকাত। বাবা আদম আর মা হাওয়া আলায়হিস সালাম দিয়েই মানব জাতির ইতিহাস সূচিত হয়েছে। যা কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। সুতরাং মানুষ শুধু নরসর্বস্ব নয়, নারী তার অবিচ্ছেদ্য অংশ। এক নর ও নারী হতেই পরিবার, সমাজ এবং সমগ্র মানব জাতি। তাই ইসলাম নর-নারীর ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করেই বিশ্বজনীন হতে পেরেছে যা অনেক ধর্ম ও দর্শনে ইতোপূর্বে ছিলো অনুপস্থিত। আজ থেকে চৌদ্দশ’ বছরাধিককাল আগের যে আরব ভূমিতে সমগ্র সৃষ্টির কল্যাণ ও আদর্শ হিসেবে হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর আবির্ভাব ঘটেছিলো সেখানে কন্যা শিশুর জন্ম ছিলো যেনো আজন্ম অভিশাপ ও অপমানের বিষয়। আর সে অপমান ঢাকতে গিয়ে জন্মদাতা নিজেই তার শিশু কন্যাকে জীবন্ত কবর দিতো। সমগ্র সৃষ্টির এ মহান কল্যাণ দূত এসেই তো সে নারী জাতিকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে বাঁচার এবং পুরুষের পাশাপাশি সকল ন্যায্য অধিকার সংরক্ষণ করে পৃথিবীতে বিচরণের সুযোগ দান করেছেন। যে সমাজে বিধবা বিবাহকে নিষিদ্ধ করে রেখেছিল সেখানেই সে কুসংস্কার ভঙ্গ করা হলো বিধবা এবং অধিকতর বয়স্ক বিধবা খাদিজা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহাকে শাদী করার মাধ্যমে। নারীরা লাভ করলো লুটের সম্পত্তির অবস্থান থেকে সম্মানিত স্ত্রীর মর্যাদা। লাভ করলো সম্পত্তিতে ন্যায্য অধিকার। ব্যবসায়-বাণিজ্যে, শিক্ষা-দীক্ষা, যুদ্ধ-বিগ্রহসহ সর্বত্র পুরুষের পাশাপাশি নারীর অধিকার নিশ্চিত হলো। শুধু তাই নয়, বলা হয়েছে, ‘নারীদের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে ভয় করো’। (আল-হাদিস) সুতরাং যার মধ্যে আল্লাহর ভয় রয়েছে সে কখনো নারীর প্রতি সীমালঙ্ঘন করতে পারে না। একজন নারী কেমন স্বামীকে নিজের জন্য পছন্দ করবে-এ প্রশ্নের উত্তরে ইসলামের শিক্ষা হলো, যে আল্লাহকে বেশি ভয় করে। কারণ যে স্বামী আল্লাহকে বেশি ভয় করবে সে পছন্দ না হলেও স্ত্রীর প্রতি অসদাচরণ করতে কখনো সাহস করবে না আর পছন্দসই স্ত্রী হলেতো কথাই নেই। মোটকথা, ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষের বৈষম্য অকল্পনীয়। সুতরাং জ্ঞান অর্জন ও বিতরণের ক্ষেত্রেও নারী-পুরুষের ন্যায্য অধিকার সংরক্ষিত। ইসলামের প্রথম বাণী ‘পড়’ এ নির্দেশ ইসলামের সকল অনুসারীর উপর সমভাবে প্রযোজ্য, হোক না সে পুরুষ কিংবা নারী। ‘জ্ঞান অর্জনের জন্য সুদূর চীন দেশেও যাও’। (আল-হাদিস) এতেও নারী-পুরুষের পার্থক্য করে নির্দেশ দেয়া হয়নি বরং আরো পরিষ্কার করে বলা হয়েছে প্রত্যেক ‘নর-নারীর জন্য জ্ঞান অর্জন করা ফরয’ (আল হাদিস) এ উক্তির মাধ্যমে। সুতরাং যতটুকু জ্ঞানার্জন ফরজ তা আয়ত্ব করার পাশাপাশি অধিকতর জ্ঞানার্জন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকেই উৎসাহিত করা হয়েছে এ প্রগতিশীল ধর্ম ইসলামে। বলা হয়েছে ‘দোলনা থেকে কবরে যাওয়া পর্যন্ত জ্ঞান অর্জন কর।’ (আল হাদিস) আরো বলা হয়েছে, ‘জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও শ্রেয়।’ (আল-হাদিস) এ সকল নির্দেশ শুধু উম্মতের জন্য বিতরণ করেই তিনি দায়িত্ব শেষ করেননি বরং তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী, মুমিনদের মা হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহাকে সে যুগের শীর্ষস্থানীয় জ্ঞানী গুণীদের পর্যায়ে উন্নীত করে যান যে, পরবর্তীকালে এ মহীয়সী রমণীর গৃহ আরবের এক খ্যাতনামা শিক্ষাঙ্গন হয়ে উঠেছিলো। উচ্চ মর্যাদায় পুরুষ সাহাবী এবং নারী নির্বিশেষে অসংখ্য জ্ঞান-পিপাসু তাঁর কাছে ধরনা দিতেন অজানাকে জানার জন্য। সমসাময়িক আইন বিজ্ঞান, হাদীস শাস্ত্র, কাব্য সাহিত্য এবং কুরআনুল কারীমের একজন শীর্ষ পণ্ডিত হিসেবে তাঁর খ্যাতি সমগ্র মুসলিম জাহানে ছড়িয়ে পড়েছিল। মুসলিম ফরায়েজ তথা উত্তরাধিকার আইনে তাঁর কোনো তুলনা ছিলো না। অথচ এ ফরায়েজ সংক্রান্ত জ্ঞানে প্রভুত্ব করতে গণিত শাস্ত্রেও অগাধ জ্ঞান থাকা ছিলো অপরিহার্য। তাই সমসাময়িক কালের একজন গণিত শাস্ত্রবিদও ছিলেন মা আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা। যা বর্তমান সময়ের বিবেচনায় নেহায়েৎ ক্লাস ফোর-ফাইভ পাস পর্যন্ত লেখাপড়ার অশুভ মনগড়া নসিহতের সাথে কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে না। সমপ্রতি হেফাজতে ইসলামের আমির মৌলানা আহমদ শফি মেয়েদেরকে উচ্চ শিক্ষার পরিবর্তে ক্লাস ফোর-ফাইভ পর্যন্ত লেখাপড়া শেখার যে নসিহত করেছেন এবং যে তেতুল তত্ত্ব নারীদের ব্যাপারে অশালীন ও অমার্জিত উপমায় ঘোষণা করেছেন তা নারীদের ব্যাপারে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এটাকে বরং নারী বিষয়ক ওহাবী কওমী তত্ত্ব কিংবা তালেবানী নারী তত্ত্ব বলা যেতে পারে। এ তত্ত্বের প্রভাব মুসলিম সমাজে বড় ধরনের সঙ্কটের জন্ম দিতে সক্ষম। এ ওহাবী মোল্লারা ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সময় ইংরেজি শিক্ষাকে হারাম ফতোয়া দিয়ে একবার মুসলিম জনগোষ্ঠীকে এমনভাবে পিছিয়ে দিয়েছিল যে, তারা শেষ পর্যন্ত জীবনযুদ্ধে হার মানতে বাধ্য হয়েছিলো। যার রেশ শত শত বছর পর্যন্ত মুসলমানদের টানতে হয়েছিলো অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপনের মধ্য দিয়ে। আজ আবারও মুসলিম নারীদের উচ্চ শিক্ষা বন্ধ করবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে; যা এ প্রতিযোগিতামূলক গ্লোবাল বিশ্বে মূলতঃ মুসলিম নারীদেরই সর্বনাশ ডেকে আনবে। আজ যদি জিজ্ঞেস করা হয় মৌং শফি সাহেব আপনার মেয়েকে, স্ত্রীকে কিংবা পুত্রবধূকে পুরুষ ডাক্তারের কাছে পাঠাতে আগ্রহী নাকি মহিলা ডাক্তারের কাছে? যদি প্রাইমারীতে মেয়ের লেখাপড়া সাঙ্গ করে দিতে হয় তবে নারী ডাক্তার পাবেন কোথায়? নাকি পুরুষ ডাক্তারের কাছে পাঠাতে চান আপনার হেরেমের (তথাকথিত তেতুলের চেয়েও খারাপ) নারীদের। এ অবস্থায় পুরুষ ডাক্তারেরই বা কী অবস্থা হবে? সুতরাং এসব ওহাবী তত্ত্বের ধ্বংসাত্মক পরিণতি থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে ইসলামের মূলধারার শিক্ষা তালাশ করতে হবে, এটাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের দাবি। কুরআন-সুন্নাহ-ইজমা-কিয়াস ও ইজতেহাদ অনুসারে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরাই সুনি্ন মুসলমান। আর ইজমা-কিয়াস-ইজতেহাদের সুযোগ রাখা হয়েছে পৃথিবীর যে কোনো ক্রান্তিকালের যে কোনো আধুনিক সমস্যার সহজ সমাধান কোরআন-সুন্নাহর আলোকে নিশ্চিত করতে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের এ অগ্রসর বিশ্বে ইসলাম একশত ভাগ নিজেকে মানিয়ে নিতে সক্ষম উক্ত আইনি উৎস সমূহের চর্চার মাধ্যমে। তাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত মনে করে অবশ্যই নারী তাঁর সামর্থ্য এবং পরিস্থিতি বিবেচনা সাপেক্ষে, শালীন পোশাক, পর্দা বজায় রেখে ঘরের বাইরে প্রয়োজনের তাগিদে, রিজিকের সন্ধানে এবং জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে বের হতে পারবে। তবে, অবশ্যই নারীর জন্য পৃথক পরিবেশ সর্বক্ষেত্রেই নিরাপদ, মানানসই এবং স্বস্তিকর। দেশে যত বেশি মহিলাদের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ ইত্যাদি গড়ে উঠবে ততবেশি তারা উচ্চ শিক্ষার ব্যাপক সুযোগ লাভ করবে এবং আগ্রহী হবে যা আজ বিবেচনায় রাখা সময়ের দাবিও বটে। তাই, দেশের নারী সমাজকে বলবো, ওহাবীবাদী নারী তত্ত্বকে ইসলামের বাণী মনে করে ভুল করবেন না। তারা তো ইসলামের শক্রদের ধ্বংস সাধনের ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে, ইসলামের শক্রদের সাথে হাত মিলিয়ে। আজ ইসলামের বিরুদ্ধে ইউরোপ-আমেরিকায় যেসব মিডিয়া সন্ত্রাস শুরু হয়েছে তা আরো শক্তিশালী হবে নারী জাতিকে অপমান করে দেয়া আহমদ শফি সাহেবের ‘তেতুল তত্ত্বে’র কারণে। তারা অহরহ চলচ্চিত্র, কার্টুনসহ নানা মাধ্যমে ইসলাম নারী বিদ্বেষী এবং মুসলিমরা সন্ত্রাসী বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে আর এ দুই ভিত্তিহীন অভিযোগের যাবতীয় মাল-মসল্লা সরবরাহের দায়িত্ব নিয়ে বিশ্বব্যাপী সক্রিয় রয়েছে ওহাবী জঙ্গিরা। সুতরাং তাদের উগ্রতা এবং চরমপন্থার বিরুদ্ধে ইসলামের সঠিক অবস্থান ও ব্যাখ্যা ঘরে ঘরে পেঁৗছাতে না পারলে মানুষ এ বাতিল মতবাদকেই ইসলাম মনে করে ভুল করবে এবং ইসলামের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে নাস্তিক-মুরতাদ হয়ে যেতে পারে। তাই আসুন, এসব কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক ওহাবী জঙ্গীদের শিক্ষা ও নসিহতকে প্রত্যাখ্যান করি। কওমি মাদ্রাসাগুলোকে আলিয়া মাদ্রাসার সাথে একই শিক্ষানীতি ও সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনার পক্ষে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের দাবিকে জোরদার করে দেশকে নিশ্চিত হানাহানি ও পিছিয়ে পড়া থেকে রক্ষা করি। একই সাথে অতি সমপ্রতি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মিডিয়ায় প্রচারিত মৌং আহমদ শফির নারী সম্পর্কিত ওয়াজের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য ও মন্তব্যগুলোর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।  

নারী শিক্ষার গুরুত্ব:

  (সংকেত: ভূমিকা; নারী শিক্ষার গুরুত্ব; নারীর উন্নয়নে নারী শিক্ষা; কর্মসংস্থানের জন্য নারী শিক্ষা; পরিবারের সুরক্ষায় নারী শিক্ষা; সন্তানের শিক্ষার জন্য নারী শিক্ষা; দেশ গঠনে নারী শিক্ষা; ইসলাম ধর্মে নারী শিক্ষা; সামাজিক সচেতনতায় নারী শিক্ষা; নারী শিক্ষার প্রসারে অন্তরায় বা বাধাসমূহ; নারী শিক্ষার প্রসারে আমাদের করণীয়; উপসংহার।) ভূমিকা: ‘আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি শিক্ষিত জাতি দিব’ -নেপোলিয়ান বোনাপোর্ট এর এই চিরস্মরণীয় উক্তিটি আমাদের সবার জানা। একজন শিক্ষিত নারী একটি পরিবারকে শিক্ষিত করতে পারে। এ জন্য আরবিতে একটি প্রবাদ আছে, ‘একজন পুরুষ মানুষকে শিক্ষা দেওয়া মানে একজন ব্যক্তিকে শিক্ষিত করে তোলা, আর একজন মেয়েকে শিক্ষা দেওয়া মানে একটি গোটা পরিবারকে শিক্ষিত করে তোলা।’ পৃথিবীর অর্ধেক জনসমষ্টি নারী। তাই মানব জাতির সামগ্রিক কল্যাণের কথা মাথায় রেখে বলা যায়, নারী শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব: নারী শিক্ষার গুরুত্ব বর্ণনাতীত। কেননা নারী মানব জাতির অর্ধেক অংশ। জনসমষ্টির অর্ধেককে শিক্ষার বাইরে রেখে সমাজের পক্ষে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এই অর্ধেক জনগণকে সুশিক্ষিত করতে না পারলে জাতীয় উন্নয়ন, অগ্রগতি ও কল্যাণ আসতে পারে না। নিম্নে নারী শিক্ষার গুরুত্ব আলোচনা করা হলোঃ নারীর উন্নয়নে নারী শিক্ষা: যুগের পরিক্রমায় নারী শিক্ষার গুরুত্ব বর্তমানে অনস্বীকার্য হয়ে উঠেছে। নারীর অবস্থান সমাজে চিরকাল ধরেই অবহেলিত এবং পশ্চাদপদ। নারীর এই অবস্থান থেকে উত্তরণের জন্য শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষা অর্জন করে নারী তার নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হবে, স্বাস্থ্য সচেতন হবে। তাই নারীর উন্নয়নের জন্য প্রাথমিক উপাদান হলো নারী শিক্ষা। কর্মসংস্থানের জন্য নারী শিক্ষা: নারীকে স্বাবলম্বী হতে হলে কর্মসংস্থানের প্রয়োজন। কেননা কর্মসংস্থানই নারীর আর্থিক নিরাপত্তা দিতে পারে। নারীর জন্য যুগোপযোগী কর্মসংস্থানের জন্য শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমান সময়ে সরকার নারীর জন্য কোটা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছে যা শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে নারীর কর্মে প্রবেশাধিকারের নিশ্চয়তা দেয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে ৬০% নারী শিক্ষক নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যা নারীর কর্মসংস্থানের একটি বিরাট সুযোগ। পরিবারের সুরক্ষায় নারী শিক্ষা: একটি পরিবারের সুরক্ষায় একজন শিক্ষিত নারী একটি সুরক্ষিত দুর্গের মতো কাজ করে। কারণ একজন সুশিক্ষিত নারী স্বাস্থ্য সচেতন। আর একজন স্বাস্থ্য সচেতন মা, স্ত্রী বা বোন তার সন্তান, স্বামী বা ভাই-বোনকে সব সময় সুরক্ষিত রাখতে সচেষ্ট থাকেন। আবার একজন শিক্ষিত মা সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য সর্বদা চিন্তিত থাকেন এবং সে অনুযায়ী সন্তানকে চালিত করেন। সন্তানের চলাফেরা, নিয়মানুবর্তীতাসহ যাবতীয় বিষয় খেয়াল করেন। ফলে সন্তান মানুষের মতো মানুষ হতে পারে। একজন সুশিক্ষিত নারী সুরক্ষিত পরিবারের জন্য খুবই প্রয়োজন। সন্তানের শিক্ষার জন্য নারী শিক্ষা: সন্তান জন্মের পর থেকে মায়ের সংস্পর্শেই বেশির ভাগ সময় থাকে। মায়ের আচার-আচরণ, চাল-চলন, কথাবার্তা সব কিছুই সন্তানকে প্রভাবিত করে। মায়ের হাতে সন্তানের শিক্ষার হাতে খড়ি। মা যদি শিক্ষিত হন তাহলে সন্তান অবশ্যই শিক্ষিত হবে। একজন নারী শিক্ষিত হওয়ার অর্থ ওই পরিবারের পরবর্তী প্রজন্ম শিক্ষিত হবে। দেশ গঠনে নারী শিক্ষা: বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। এই বিশাল জনসমষ্টিকে শিক্ষার মাধ্যমে সম্পদে পরিণত করে দেশকে এগিয়ে নেওয়া বর্তমানে সময়ের দাবী। নারীকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করলে দেশ গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এজন্য বাংলাদেশ সরকার নারী শিক্ষার প্রসারে বিভিন্ন ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ইসলাম ধর্ম-মতে নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা:মানুষ জ্ঞানী বা শিক্ষিত হয়ে জš§গ্রহণ করে না। মানুষকে জ্ঞান অর্জন করতে হয়। এ জন্য হাদিসে বলা হয়েছে ‘জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক নর-নারীর উপর ফরজ।’ ইসলামে পুরুষের মতো নারীর জন্যও শিক্ষা লাভ করা ফরজ করা হয়েছে। যেখানে পুরুষের শিক্ষার প্রসঙ্গে এসেছে সেখানে নারীদের শিক্ষার কথাও বলা হয়েছে। নবী করিম (স.) এর সহধর্মিনী হযরত আয়েশা (রা.) ছিলেন তৎকালীন সময়ে সবচেয়ে বেশি শিক্ষিত নারী। বিয়ে করার সময় মেয়ের শিক্ষার দিকে নজর দেওয়ার জন্য রাসূল (স.) নির্দেশ দিয়েছেন। সামাজিক সচেতনতায় নারী শিক্ষা: যেকোনো সমাজকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিকে এগিয়ে নিতে হলে নারী ও পুরুষ উভয়কেই তার অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। নারী শিক্ষাই পারে সমাজের সকল স্তরের নারীদেরকে তাদের সামাজিক অধিকার ও করণীয় সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে।  

নারী শিক্ষার প্রসারে বাধাসমূহ:

  নারী শিক্ষার বিষয়টি এখনও আমাদের সমাজে বেশ কন্টকাকীর্ণ। এ ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতাগুলো নিম্নরূপ- সচেতনতার অভাব: নারী শিক্ষার প্রসারে প্রধান অন্তরায় হলো গণসচেতনতার অভাব। নারী শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষ এখনো অসচেতন। বাল্য বিবাহ: মেয়েদেরকে অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া হয়। বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরানোর আগেই বাবা-মা মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করেন ফলে এক মেয়ের পক্ষে কাংক্ষিত শিক্ষা অর্জন করা সম্ভব হয় না। ধর্মীয় গোঁড়ামী: ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে নারীকে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করে রাখা হচ্ছে। নারী ঘরে থাকার জন্য বা নারী ঘরের বাইরে গেলে পাপ এসব কথা বলে মেয়েকে বিদ্যা অর্জন থেকে বিরত রাখা হয়। মেয়েদের প্রতি নীচু ধারণা: মেয়েরা ছেলেদের থেকে দুর্বল, কম মেধাবী মেয়েদের সম্পর্কে এ ধরণের ধারণা নারী শিক্ষার জন্য বাধা।  

নারী শিক্ষার প্রসারে আমাদের করণীয়: নারী শিক্ষার প্রসারে আমাদের করণীয় সমূহ নিম্নরূপ-

  সচেতনতা বৃদ্ধি:নারী শিক্ষার গুরুত্ব বুঝিয়ে জনসাধারণের মধ্যে প্রচারনা চালাতে হবে। নারীকে শিক্ষিত করে তুললে কী ধরণের লাভ হবে আর না করলে কী ক্ষতি হবে তা সবাইকে বুঝাতে হবে। মানসিকতার পরিবর্তন: নারী শিক্ষার প্রসারে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার। নারীকে পুরুষের থেকে উত্তম মনে করে নারী বা মেয়েদেরকে অবহেলা করার মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। ধর্মীয় নেতাদের এগিয়ে আসা দরকার: শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীদের পশ্চাদপদতার অন্যতম কারণ হলো ধর্মীয় গোঁড়ামী। এই গোঁড়ামী দূর করার জন্য ধর্মীয় নেতাদের এগিয়ে আসতে হবে। কারণ সাধারণ মানুষ ধর্মীয় নেতাদের দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয়। মেয়ে ছেলে বৈষম্য হ্রাস: শিক্ষার ক্ষেত্রে নারী পুরুষ বা ছেলেমেয়ের মধ্যে কোনো ধরণের বৈষম্য করা উচিত নয়। ছেলে হোক মেয়ে হোক সব সন্তানকে শিক্ষিত করার জন্য বাবা-মাকে এগিয়ে আসতে হবে। উপসংহার: একটি সমাজের সার্বিক অগ্রগতির জন্য নারী শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। নারী শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে প্রচলিত ধ্যান ধারণা ও মানসিকতা সবচেয়ে বড় বাধা। প্রত্যন্ত গ্রাম ও মফস্বল থেকে যে সব মেয়ে উচ্চ শিক্ষার আশায় শহরে পাড়ি জমায় অনেক ক্ষেত্রেই তারা আশাহত হয়। দীর্ঘমেয়াদী বিষয় কোর্স, আবাসন সমস্যা, সেশন জট, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা প্রভৃতি বিষয় ছাত্রীদেরকে মানসিক ও আর্থিক দিক থেকে বিপর্যস্ত করে তোলে। তাই এ সব বাধা দূর করে আমাদের নিজেদের সাথেই নারী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। আর এ জন্য নারীকেও এগিয়ে আসতে হবে।  

নারী শিক্ষার ব্যাপারে কী বলেছে ইসলাম?

লিখেছেন ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ ইসলামে নারী শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যক্তি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে নারী শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে একটি পরিবারকে সুশিক্ষিত করে তুলতে হলে শিক্ষাক্ষেত্রে নারীকে অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমরা যদি কোরআন ও হাদীস পর্যালোচনা করি তাহলে দেখতে পাব, নবী (সা.) সর্ব প্রথম নারীদেরকে শিক্ষার প্রতি উৎসাহিত করেছেন এবং এই শিক্ষার বিধান সর্ব প্রথম বাস্তবায়ন করার সুবর্ণ সুযোগ পান রাসুলে পাক (সা.) -এর প্রিয় সহধর্মিণী হজরত খাদীজাতুল কুবরা (রা.)। মহানবি (সা.) দ্বিধাহীনভাবে ঘোষণা করেছেন, প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য জ্ঞানার্জন ফরজ-অবশ্য কর্তব্য। আরবের মাটিতে উম্মি নবি (সা.) নারী-পুরুষ নির্বিশেষে শিক্ষা গ্রহণকে ফরজ বলে ঘোষণা করেছেন এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীর অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন। ইসলামের প্রাথমিক যুগের নারীরা শিক্ষা ক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। হজরত মোহাম্মদকে (সা.) শিক্ষানুরাগী নারীরা একবার বললেন, আপনি জ্ঞান শিক্ষা দেয়ার জন্য সবসময় পুরুষদের দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকেন। তাই আমাদের জন্য একদিন নির্দিষ্ট করুন। মহানবি (সা.) সে অনুযায়ী তাঁদের শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করেছিলেন। এমনকি তিনি প্রতিনিধি পাঠিয়েও নারীদের শিক্ষা দিতেন। ফলে অনেক নারী জ্ঞানীর উদয় হয়েছিল, যারা ইসলামের মহান শিক্ষা প্রচারে অংশগ্রহণ করেছিলেন। অগণিত হাদীস দ্বারা এটাও সুস্পষ্ট প্রমাণিত নবী (সা.) নিজেই নারীদেরকে শিক্ষাদান করতেন, নারীদেরকে শিক্ষার প্রতি উৎসাহিত করতেন। সাহাবায়ে কেরামের নিকট থেকে নারীরা শিক্ষা গ্রহণ করতেন এমনকি বড় বড় সাহবীগণও নারীদের নিকট থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতেন। হজরত জুবায়ের ইবনে মুতইম (রা.) বর্ণিত হাদীসে আছে- ‘একবার এক নারী রাসূল (সা.) -এর দরবারে এসে কিছু বিষয় শিক্ষা গ্রহণ করলো। বিদায় নিয়ে যাবার সময় রাসূল (সা.) তাকে বললেন আর জানার মত কিছু থাকলে অন্য সময় জেনে নিও। নারীটি আরজ করলো- ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি আপনাকে না পাই অর্থাৎ যদি আপনি দুনিয়াতে না থাকেন তখন কি হবে? রাসূল (সা.) বললেন- আবু বকর (রা.) এর নিকট তখন শিক্ষা গ্রহণ করিও’ (বুখারী ও মুসলিম, তিরমিজী)। ইসলামী দর্শন নারী শিক্ষার উৎসাহদাতা ও পথপ্রদর্শক। ইসলামে নারী শিক্ষার সুযোগ সীমিত এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। মুসলিম সমাজেও নারী শিক্ষক, অধ্যাপক, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, দার্শনিক ও প্রযুক্তিবিদের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। সুতরাং যত দূর সম্ভব ইসলামী জীবনবিধান প্রদত্ত সীমারেখা ও অনুশাসন মেনে নারীর জন্য উপযুক্ত শিক্ষা তথা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত। রাসূল (সা.) -এর যুগে এবং পরবর্তী সময়ে অগণিত মহিয়সী মুসলিম নারী শিক্ষাদান করেছেন এবং তারা শিক্ষকতা করে নিরক্ষরতা দূর করেছেন। নারী সাহাবীদের মধ্যে অনেকে ছিলেন অগাধ পাণ্ডিত্ব্যের অধিকারী। হজরত আয়শা (রা.) ছিলেন হাদীস ও ফিকাহ শাস্ত্রের এক বিশেষজ্ঞ ছিলেন। চার খলিফা সহ বড় বড় সাহাবীরা তার নিকট থেকে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। হজরত আবু মুসা আশআরী (রা.) বর্ণিত হাদীসে তিনি বলেন, আমরা রাসূল (সা.) -এর সাহাবীরা যখনই কোন মাসআলার ব্যাপারে সন্দেহ বা সমস্যায় পড়তাম তখনই আমরা হজরত আয়শা (রা.) এর নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করতাম এবং সঠিক সমাধান পেয়ে যেতাম (তিরমিজী, মিশকাত শরীফ: পৃষ্ঠা-৫৭৪)। পুরুষ সাহাবীগণ নারী সাহাবীদের নিকট মাসআলা শিক্ষার জন্য যেতেন যা উক্ত হাদীসে উল্লেখ আছে। এর দ্বারা প্রমাণ হলো- নারীদের জন্য শিক্ষকতা করা বা নারীদের নিকট গিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করার ব্যাপারে ইসলামের কোনো বাধা নেই। তবে শর্ত হলো সর্বদা পর্দা রক্ষা করতে হবে। কেউ যদি পর্দাহীন হয় তাহলে সে তার চরিত্র ও নৈতিকতা হারিয়ে ফেলবে। আর চরিত্র নষ্ট হলে তো শিক্ষা লাভ করেও লাভ নেই।  

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন!

 

আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে  জানতে  লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।

আইডিসি  মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আপনি আইডিসি  মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।

 

Islami Dawah Center Cover photo

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টারকে সচল রাখতে সাহায্য করুন!

 

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার ১টি অলাভজনক দাওয়াহ প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠানের ইসলামিক ব্লগটি বর্তমানে ২০,০০০+ মানুষ প্রতিমাসে পড়ে, দিন দিন আরো অনেক বেশি বেড়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।

বর্তমানে মাদরাসা এবং ব্লগ প্রজেক্টের বিভিন্ন খাতে (ওয়েবসাইট হোস্টিং, CDN,কনটেন্ট রাইটিং, প্রুফ রিডিং, ব্লগ পোস্টিং, ডিজাইন এবং মার্কেটিং) মাসে গড়ে ৫০,০০০+ টাকা খরচ হয়, যা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। সেকারনে, এই বিশাল ধর্মীয় কাজকে সামনে এগিয়ে নিতে সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে আপনাদের দোয়া এবং আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন, এমন কিছু ভাই ও বোন ( ৩১৩ জন ) দরকার, যারা আইডিসিকে নির্দিষ্ট অংকের সাহায্য করবেন, তাহলে এই পথ চলা অনেক সহজ হয়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।

যারা এককালিন, মাসিক অথবা বাৎসরিক সাহায্য করবেন, তারা আইডিসির মুল টিমের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন, ইংশাআল্লাহ।

আইডিসির ঠিকানাঃ খঃ ৬৫/৫, শাহজাদপুর, গুলশান, ঢাকা -১২১২, মোবাইলঃ +88 01609 820 094, +88 01716 988 953 ( নগদ/বিকাশ পার্সোনাল )

ইমেলঃ info@islamidawahcenter.com, info@idcmadrasah.com, ওয়েব: www.islamidawahcenter.com, www.idcmadrasah.com সার্বিক তত্ত্বাবধানেঃ হাঃ মুফতি মাহবুব ওসমানী ( এম. এ. ইন ইংলিশ, ফার্স্ট ক্লাস )