How to Perform the Sunnah Prayer of Fajr?
লিখেছেনঃ মাহবুব ওসমানী – ঊৎসঃ ইসলামি দাওয়াহ সেন্টার | islamidawahcenter.com
ভূমিকা
ফজরের নামাজের দুই রাকআত সুন্নাতকে রাসূলুল্লাহ ﷺ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে আদায় করতেন। তিনি কখনও তা ত্যাগ করেননি—যাত্রাপথে, অসুস্থ অবস্থায় কিংবা যুদ্ধের সময়ও না। কিন্তু অনেক সময় এমন ঘটে যে, কেউ দেরি করে ঘুম থেকে ওঠে বা মসজিদে পৌঁছাতে বিলম্ব হয়, ফলে ফজরের ফরজ নামাজ শুরু হয়ে যায়। তখন প্রশ্ন আসে—ফরজের আগে পড়া সম্ভব না হলে, ফজরের সুন্নাত নামাজ কখন আদায় করতে হবে?
ফজরের সুন্নাতের মর্যাদা
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ:
قَالَ النَّبِيُّ ﷺ: «رَكْعَتَا الْفَجْرِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا»অর্থঃ নবী করিম ﷺ বলেছেন, “ফজরের দুই রাকআত সুন্নাত পুরো দুনিয়া ও এর ভেতরের সব কিছুর চেয়ে উত্তম।”
— (সহীহ মুসলিম, হাদীস: 725)
এ হাদীস থেকে বোঝা যায় যে, ফজরের এই সুন্নাত নামাজ অত্যন্ত মূল্যবান এবং তা অবহেলা করা ঠিক নয়।
যদি ফরজের আগে পড়া না হয় — তাহলে কী করতে হবে?
১️⃣ যদি ফরজ জামাত শুরু হয়ে যায়
যদি কেউ ফজরের ফরজ জামাতে দেরিতে আসে এবং জামাত শুরু হয়ে গেছে, তখন সুন্নাত নামাজ আগে পড়া উচিত নয়, বরং প্রথমে ফরজ জামাতে অংশ নিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে হাদীসে এসেছে—
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَرْجِسَ، قَالَ:
رَأَى رَجُلٌ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ وَقَدْ أُقِيمَتِ الصَّلَاةُ، فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: أَصَلَاةُ الْفَجْرِ مَرَّتَيْنِ؟অর্থঃ এক ব্যক্তি ফজরের জামাত দাঁড়ানো অবস্থায় দুই রাকআত পড়ছিলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, “তুমি কি ফজরের নামাজ দুইবার পড়ছো?”
— (সহীহ মুসলিম, হাদীস: 711)
অর্থাৎ জামাত শুরু হয়ে গেলে, তখন আর সুন্নাত পড়া বৈধ নয়।
ফরজের পর সুন্নাত পড়া যাবে কি?
এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে সাহাবা ও ইমামদের মধ্যে বিশদ আলোচনা রয়েছে।
🔹 রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আমল
উম্মুল মুমিনীন ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত—
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ:
كَانَ النَّبِيُّ ﷺ إِذَا لَمْ يُصَلِّ رَكْعَتَيْ الْفَجْرِ صَلَّاهُمَا بَعْدَ طُلُوعِ الشَّمْسِঅর্থঃ নবী ﷺ যদি কখনও ফজরের দুই রাকআত সুন্নাত নামাজ আদায় করতে না পারতেন, তবে সূর্য উঠার পর তা আদায় করতেন।
— (সুনান আত-তিরমিযী, হাদীস: 423)
এটি প্রমাণ করে যে, ফরজের পর নয়, বরং সূর্যোদয়ের পর আদায় করা উত্তম।
চার ইমামের (মাযহাব) মতামত
১️⃣ ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)
- যদি ফজরের ফরজ হয়ে যায়, তখন ফরজের আগে সুন্নাত পড়া বৈধ নয়।
- তবে ফরজের পর সূর্য উঠার আগে সময় থাকলে পড়তে পারবেন না, কারণ সেটি নিষিদ্ধ সময়।
- বরং সূর্য উঠার পর (প্রায় ১৫ মিনিট পর) ক্বাযা হিসেবে আদায় করবেন।
📚 (আল-হিদায়া, ১/৬৯)
২️⃣ ইমাম মালিক (রহঃ)
- ফরজের আগে যদি সময় না থাকে, তাহলে সুন্নাত ছেড়ে ফরজে অংশগ্রহণ করবেন।
- পরে সূর্য ওঠার পর ক্বাযা করবেন।
📚 (আল-মুদাওয়ানাহ, ১/৭৭)
৩️⃣ ইমাম শাফেয়ী (রহঃ)
- ফরজের আগে না পারলে, ফরজের পর সরাসরি পড়া যাবে না।
- তবে সূর্য ওঠার পর ক্বাযা করা মুস্তাহাব।
📚 (আল-উম্ম, ১/৯৫)
৪️⃣ ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল (রহঃ)
- তিনি বলেন, ফজরের ফরজ নামাজের পর যদি সূর্য ওঠার আগে কিছু সময় থাকে এবং মানুষ জিকিরে ব্যস্ত না হয়, তবে তখনই পড়া জায়েয।
📚 (আল-মুগনী, ২/৫৬৫)
সারসংক্ষেপ (ফিকহি হুকুম)
| অবস্থা | করণীয় |
|---|---|
| ফজরের আগে সময় আছে | ফরজের আগে সুন্নাত পড়া ফরজের অংশের মতোই গুরুত্বপূর্ণ |
| জামাত শুরু হয়ে গেছে | জামাতে অংশ নাও, সুন্নাত না পড়ো |
| ফরজ শেষ, সূর্য ওঠেনি | পড়া মাকরূহ, কারণ এটি নিষিদ্ধ সময় |
| সূর্য ওঠার পর | ক্বাযা হিসেবে ২ রাকআত পড়া সুন্নাত ও মুস্তাহাব |
সূর্য ওঠার পর ক্বাযা করার দলিল
হাদীসে এসেছে:
عَنْ قَيْسِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ:
رَأَى رَسُولُ اللَّهِ ﷺ رَجُلًا يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ بَعْدَ صَلَاةِ الْفَجْرِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: صَلَاةُ الصُّبْحِ مَرَّتَيْنِ؟ فَقَالَ الرَّجُلُ: إِنِّي لَمْ أَكُنْ صَلَّيْتُ رَكْعَتَيِ الْفَجْرِ، فَصَلَّيْتُهُمَا الْآنَ، فَسَكَتَ النَّبِيُّ ﷺ.অর্থঃ এক ব্যক্তি ফজরের ফরজের পর দুই রাকআত নামাজ পড়ছিলেন। রাসূল ﷺ বললেন, “তুমি কি ফজরের নামাজ দুইবার পড়ছো?” সে বলল, “না, আমি ফরজের আগে পড়তে পারিনি, তাই এখন পড়ছি।” তখন নবী ﷺ নীরব থাকলেন (অর্থাৎ অনুমোদন দিলেন)।
— (সুনান আবু দাউদ, হাদীস: 1267)
এ হাদীস থেকে বোঝা যায়—ফরজের পরে কেউ যদি অল্প সময়ের মধ্যে ফজরের সুন্নাত পড়েন, তাহলে সেটি নিষিদ্ধ নয়, বরং অনুমোদিত।
উপসংহার
ফজরের দুই রাকআত সুন্নাত নামাজের মর্যাদা অত্যন্ত উচ্চ। তাই মুসলমানের উচিত এই নামাজকে সর্বদা গুরুত্ব দেওয়া। কিন্তু যদি কখনও তা ফরজের আগে আদায় সম্ভব না হয়—
✅ তবে জামাতে অংশ নিয়ে ফরজ পড়বেন,
✅ এবং সূর্য ওঠার পর (প্রায় ১৫–২০ মিনিট পর) ক্বাযা হিসেবে দুই রাকআত সুন্নাত আদায় করবেন।
এটাই অধিকাংশ ফকীহদের মতে সাবধানী ও উত্তম আমল।
সংক্ষিপ্ত করণীয় সারাংশ:
- ফজরের সুন্নাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ – না পড়া উচিত নয়।
- ফরজের আগে না পারলে, জামাতে অংশ নিন।
- ফরজের পর তৎক্ষণাৎ নয়, সূর্য উঠার পর ক্বাযা করুন।
- ক্বাযা করার নীতি – ২ রাকআত নফল নিয়তে আদায় করবেন।
উপকারী সূত্র
- সহীহ মুসলিম (হাদীস: 711, 725)
- সুনান আবু দাউদ (হাদীস: 1267)
- সুনান আত-তিরমিযী (হাদীস: 423)
- আল-হিদায়া (ইমাম মারগিনানী)
- আল-উম্ম (ইমাম শাফেয়ী)
- আল-মুগনী (ইবন কুদামা)
দোয়া
اللَّهُمَّ اجْعَلْنَا مِنَ الْمُحَافِظِينَ عَلَى الصَّلَاةِ وَمِنَ الْمُقِيمِينَ لِلسُّنَنِ، وَتَقَبَّلْ مِنَّا يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের নামাজে স্থির রাখুন, সুন্নাতসমূহের রক্ষাকারী বানান, এবং আমাদের ইবাদত কবুল করুন, হে সর্বাধিক দয়ালু।
প্রয়োজনে যোগাযোগ
🕌 ইসলামের সঠিক জ্ঞান, কুরআন-হাদীস ভিত্তিক আর্টিকেল ও দাওয়াহ সম্পর্কিত তথ্য জানতে ভিজিট করুন:
👉 https://islamidawahcenter.com
📞 যোগাযোগ: +966549485900
🌐 Website: https://mahbubosmane.com
📧 Email: mahbubosmane@gmail.com