সার্টিফিকেট জাল করে চাকরি এবং বেতন নেয়ার ইসলামী শরীয়তের হুকুম!

প্রশ্নঃ সার্টিফিকেট জাল করে ফার্স্ট ক্লাস নিয়ে কেউ একজন ৩০ বছর আগে ঘুষ দিয়ে চাকরি নিল, চাকরি থেকে সারা জীবন সে যে বেতন পাবে, এই ব্যাপারে তার ইসলামী শরীয়তের হুকুম কি হবে? এমন ইমামের পিছনে নামাজ পড়া যাবে কিনা? কোরআন হাদিসের রেফারেন্সসহ বিস্তারিত জানতে চাই।

উত্তরঃ আপনার প্রশ্নটি খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল। ইসলামী শরীয়তের আলোকে এধরনের ঘটনা বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি দিক থেকে বিষয়টি পর্যালোচনা করা যায়:


প্রথম অংশ: জাল সার্টিফিকেট ও ঘুষ দিয়ে চাকরি গ্রহণ

১. জাল সার্টিফিকেট বানানো:

জাল কাগজপত্র বানানো স্পষ্ট প্রতারণা (ধোকাবাজি), যা ইসলামে হারাম।

কোরআন:

“وَلَا تَبْخَسُوا النَّاسَ أَشْيَاءَهُمْ”
“এবং মানুষকে তাদের প্রাপ্য বস্তুতে কম দিও না।”
(সূরা হুদ, ১১:৮৫)

জাল সার্টিফিকেট তৈরি করে সে সমাজ ও রাষ্ট্রের অধিকার হরণ করেছে।

২. ঘুষ (রিশওয়াত):

ঘুষ ইসলামে জঘন্য হারাম কাজ। ঘুষ প্রদানকারী, গ্রহণকারী এবং মধ্যস্থতাকারী—তিনজনই গুনাহগার।

হাদিস:

“لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَّاشِيَ وَالْمُرْتَشِيَ”
“রাসূল (সা.) ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতাকে অভিশাপ দিয়েছেন।”
(সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৩৫৮০)

৩. অন্যায়ভাবে সরকারি চাকরি গ্রহণ:

অন্যদের ন্যায্য অধিকার হরণ করে জালিয়াতির মাধ্যমে চাকরি লাভ করা জুলুম ও হারাম। এমনভাবে অর্জিত সম্পদ হারাম আয় হিসেবে গণ্য হবে।


দ্বিতীয় অংশ: এমন ব্যক্তির আয় হালাল কি না?

যেহেতু চাকরি লাভের মাধ্যম জালিয়াতি ও ঘুষ, তাই তার চাকরি থেকে উপার্জিত অর্থ ইসলামী দৃষ্টিতে হারাম হিসেবে বিবেচিত হবে। কারণ চাকরি পাওয়ার যোগ্যতা এবং পদ্ধতি বৈধ ছিল না।

হাদিস:

“كُلُّ جَسَدٍ نَبَتَ مِنْ سُحْتٍ فَالنَّارُ أَوْلَى بِهِ”
“যে শরীর হারাম উপার্জন দিয়ে গঠিত, তার স্থান জাহান্নামে।”
(সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৬১৪)


তৃতীয় অংশ: এমন ইমামের পেছনে নামাজ আদায়ের হুকুম

যদি ঐ ব্যক্তি ইমাম হিসেবে নিয়োজিত থাকে, তবে তার পেছনে নামাজ আদায়ের বিষয়টি দ্বিমতপূর্ণ:

১. শরীয়তের দৃষ্টিতে নামাজ সহি হবে কি?

যদি ইমাম ফারয, সুন্নত, ক্বেরাত ইত্যাদি সঠিকভাবে আদায় করে, তাহলে তার পেছনে নামাজ সহি হবে, কিন্তু মাকরুহ তাহরিমি (অপছন্দনীয় পর্যায়ে) হতে পারে, কারণ সে একজন ফাসিক (অধর্মাচারী)।

ইবনে কুদামাহ (রহ.):

“ফাসিক বা বিদআতী ইমামের পেছনে নামাজ আদায় করা সহি হবে, তবে সে না থাকলে উত্তম।”
(আল-মুগনি, ২/৩৮)

২. উত্তম পন্থা:

শরীয়তের দৃষ্টিতে এমন ব্যক্তিকে ইমাম বানানো অনুচিত। যদি বিকল্প ইমাম পাওয়া যায়, তাহলে তার পেছনে নামাজ না পড়াই উত্তম।


সারসংক্ষেপ:

 

বিষয় শরীয়তের হুকুম
জাল সার্টিফিকেট বানানো হারাম
ঘুষ দিয়ে চাকরি নেওয়া হারাম
এমন চাকরি থেকে উপার্জন হারাম আয়
এমন ইমামের পেছনে নামাজ সহি হলেও মাকরুহ, বিকল্প থাকলে পরিহার করা উত্তম

 

জীবন ঘনিষ্ঠ ইসলামিক সমাধান পেতে Islami Dawah Center এ প্রশ্ন করুন।

Join IDC & be a part of Sadaqah Jariyah.

 

Related posts

How to perfect your Wudu (ablution)?

by IDCAdmin
6 months ago

25 Questions-সাহাবাদের ২৫ টি প্রশ্ন এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর উত্তর

by IDCAdmin
4 years ago

তাবিজের ব্যবহার: শরীয়তের দৃষ্টিভঙ্গি, দলীল, এবং বিশ্লেষণ।

by IDCAdmin
1 month ago
Exit mobile version