Porn

Porn পর্নোগ্রাফি  মানবতার জন্য হুমকি

বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম।

ভার্সিটির লাইফ, বিশেষ করে হল লাইফটা মন্দ ছিলনা নাবিলের । ফেসবুকিং করার ফাঁকে ফাঁকে ক্লাস করা, ক্লাসে বসে ঝিমানো, শর্টপিচ ক্রিকেটে চিতার ক্ষিপ্রতায় ফিল্ডিং করা, মসজিদের বারন্দায় বসে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দেওয়া। কোন চিন্তা নেই কোন ভাবনা নেই, দুনিয়া উলটে যাক তাতে নাবিলের কী… শুধু চিল আর চিল। . বাবা-মার নজরদারি যেহেতু ছিলনা কাজেই ছোটবেলা থেকে মেনে আসা সান্ধ্য আইনের থোড়াই কেয়ার করে ইচ্ছেমতো রাত বিরাতে ঘুরে বেড়ানো যেত। কতো গভীর হাওয়ার রাত পামগাছের তলায় বসে কাটিয়ে দিয়েছে সে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো রূপালী চাঁদের দিকে তাকিয়ে থেকেছে। সবুজ ঘাসের বুকে শুয়ে পার করে দিয়েছে অজস্র বৈশাখী বিকেল। . সবকিছুরই শেষ আছে। একদিন রূপকথা শেষ হয়ে গেল। স্বপ্নভঙ্গ হল। বের হতে হল পৃথিবীর নির্দয় পথে। সময়ের কাছে মানুষ বড় অসহায়। . পৃথিবীর রূঢ় রৌদ্রে প্রতিনিয়ত দগ্ধ হতে হতে, নানা সাইজের নানা গুতো খেতে খেতে নাবিল ঠিক বুঝে গেল কতো ধানে কতো চাল- হাউ ম্যানি রাইস ইন হাউ ম্যানি প্যাডি। রৌদ্রাহত, গুতো খাওয়া,টালমাটাল হৃদয় শান্তি খুঁজে বেড়ায়। শান্তি … দুদন্ড শান্তি। . চৈত্রের বিকেলে অশত্থ গাছের পাতায় বাতাসের দাপাদাপি আর কাকের চোখের মতো টলটলে স্বচ্ছ দিঘীর পানির মতো শান্তি। ভাদ্রের ভ্যাঁপসা গরম, শহর পঁচে গেছে। রাজপথে জট লেগেছে লোকাল বাস, সিএনজি, রিকশা। ঘড়ির কাটা দুর্বল হয়ে গিয়েছে। দরদর করে ঘামছে মানুষ। তারপর হঠাৎ করেই একে একে আসলো অতিথিরা। প্রথমে সুসংবাদবাহী বাতাস, তারপর কালো মেঘ, তারপর বৃষ্টি। অঝোর বৃষ্টি। কান্নার মতো বৃষ্টি। শান্তির বৃষ্টি। . বাংলাদেশের জাতীয় রোগে আক্রান্ত হয়ে গেল নাবিল। কিছুই ভালো লাগেনা। কিছুই না। সবকিছু ভাংচুর করতে ইচ্ছে করে। . কলিংবেল টিপে অপেক্ষা করা বড় কষ্টের। দরজা খুলেই দুষ্টু ছোটভাইয়ের ওরাংওটাঙের মতো চেহারা দেখা আরো কষ্টের। নাবিলের একজোড়া কালো চোখ দরকার, দরজা খুললেই যেটা নাবিলকে প্রশান্তি দিবে। একজোড়া লতানো হাত দরকার। দুঃখের প্রহরে যে জড়িয়ে ধরে উষ্ণতা জোগাবে। তেলাপোকা দেখে ভয় পেয়ে কেউ একজন দৌড়ে আশ্রয় খুঁজুক নাবিলের কাছে, রাস্তা পার হবার সময় নাবিলের বাম বাহুটা আঁকড়ে ধরুক পরম নির্ভরতা আর নিশ্চিন্ততায়। . খুব বেশি কিছুনা, দুআঙ্গুলের ডগায় যতোটুকু লবন আটকে নাবিল ঠিক ততোটুকু ভালোবাসা চায়। বন্ড সই করে হলেও সামান্য হৃদয়ের ঋণ চায়। . চারপাশে ভালোবাসার জোয়ারে ভেসে যাওয়া মানুষদের দেখে নাবিলের বড় মন খারাপ হয়। কতো কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে রাখে। কায়মনোবাক্যে দু’আ করে আল্লাহ্‌র কাছে। . দু’আ আর অষ্টপ্রহরের মাঝে অচেনা তুমি এক দূরতরো দ্বীপ হয়েই রইলে । আমার দুরু দুরু বুক, ছেঁড়া পাল, গোলমেলে ক্যাম্পাস। ছোঁয়া হলোনা তোমাকে’- সে ভাবে। . আল্লাহ (সুবঃ) মানুষকে বানিয়েছেনই এভাবে যে যখন সে বালেগ হবে তখন একজন সঙ্গী বা সঙ্গিনীর জন্য তার মন আঁকুপাঁকু করবে। সংগীহীনতায়, একাকীত্বে অন্তরে হাহাকার করে উঠবে। যদি এই হাহাকার দূর করার ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে তা একসময় ধ্বংস আর পতনের আহ্বানে পরিণত হবে। এই একাকীত্ব, এই অভাববোধ, শরীরের ক্ষুধা মেটানোর এই সমস্যার সহজ সমাধান দিয়ে দিয়েছেন আল্লাহ (সুবঃ) – বিয়ে। বাবা-মা’দের আদেশ করেছেন যখন ছেলেমেয়েরা বালেগ হয়ে যাবে তখন তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করে দিতে। বিয়েকে সহজ করতে বলা হয়েছে। যতো বেশি সহজ করা যায়। যেন সমাজের ভারসাম্য বজায় থাকে। উন্নতি আর প্রগতির কক্ষপথ থেকে সমাজ বিচ্যুত না হয়ে পড়ে। . মদীনা সনদে চলা দেশে (!), ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের (!) এই সমাজ এই সহজ সমীকরণ বোঝেনা। এই সভ্যতা, এই সমাজ কতোকিছু বুঝে ফেললো নিমিষেই,বুঝে ফেললো রকেট সায়েন্স, নিউট্রণ বোমা। বুঝলোনা শুধু মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোকে। বুঝলোনা একজন তরুণ কী চায়। মানুষের সহজাত ফিতরাতকে চোখ বুঝে জোর করে অস্বীকার করে ফেলল এই সমাজ। আগাগোড়া পুরো সংজ্ঞাটাই বদলে দিল। . যতোবেশিভাবে করা সম্ভব বিয়েকে কঠিন করে দেওয়া হল। অদ্ভূত অদ্ভূত হাস্যকর কিন্তু কঠিন সব শর্ত জুড়ে দেওয়া হল। বিয়ে করতে হলে আগে বড় হতে হবে। কতো বড়? তার কোনো লিমিট নেই। শুধু চাকুরী থাকলেই হবে না সরকারী চাকুরী থাকতে হবে, যেন মানুষকে বড় মুখে বলা যায়, ৪০-৫০ হাজার স্যালারি পেতে হবে মাস মাস, বাড়ি থাকতে হবে গাড়ি থাকতে হবে, লাখ লাখ টাকা দেনমোহর দিতে হবে- মেয়ে গাংগের জলে ভেসে এসেছে নাকি? . মেরুদন্ড ভাংগা শিক্ষাব্যবস্থা ২৭-২৮ বছর ধরে ছেলেমেয়েদের ক্লাসরুমে আটকিয়ে রাখে। বের হলেও নিস্তার নেই। চাকুরী সোনার হরিণ। মামা খালু চাচা থাকা ,সঠিক দলের লোক হওয়া আর বস্তা ভর্তি টাকা না থাকলে জীবন যৌবন ব্যায় করে অর্জন করা সার্টিফিকেটের কোনো দামই নেই। বয়স ৩০ এর কোঠা পার হয়ে যায়, মেঘে মেঘে অনেক বেলা হয়ে যায় কিন্তু বিয়ের যোগ্যতা অর্জন করা আর হয়ে ওঠেনা। কোটি কোটি বেকার ছেলেমেয়ে চরম হতাশায় দিন কাটায়। মাদকে ডুবে নিজের দুঃখ কষ্ট ভুলতে চায়। কেউ কেউ বেছে নেয় আত্মহননের পথ। . সমাজ না বুঝুক, চোখ বুজে অস্বীকার করুক, এই ছেলেমেয়েদের শরীরে তো যৌবনের ফাগুন আসেই। হালাল উপায়ে ক্ষুধা মেটানোর তো কোনো ব্যবস্থায় নেই। অন্যদিকে হারামের পথ অত্যন্ত সহজ। এই ছেলেমেয়েগুলো কী করবে? কেউই এদের কথা ভাবেনা। এদেরকে আমরা কেন নির্বাসন দিয়ে রেখেছি? এদের কেন ভুলে গিয়েছি? . ক্ষুধার্ত ছেলেমেয়েদের সামনে থেকে সমাজ যদি খাবার সরিয়ে রাখতো,বা আড়াল করে রাখতো তাহলে ছেলেমেয়েদের কষ্ট কিছুটা কম হতো। নিজেকে সংবরণ করে রাখতে কিছুটা কষ্ট কম হতো। কিন্তু সর্বগ্রাসী বিষাক্ত অশ্লীল বাতাসে প্রকম্পিত এই সভ্যতা। বড় বেশি লোভ,বড় বেশি বিজ্ঞাপন, বড় বেশি চাহিদা- কাম আর লালসার। চতুর্দিকে ভালোবাসার বড্ডো আকাল। নারী স্বাধীনতার নামে নারীকে এখানে শুধু পণ্যে (আইটেম) পরিণত করা। নারী যেন শুধু আমোদ ফুর্তি করার জমাট একটা মাংসপিন্ড। . প্রথম আলো অশ্লীল ছবির অভিনেতা অভিনেত্রীদের ঘরের মানুষ বানিয়ে ছাড়লো, নকশা, অধুনা শিখিয়ে দিল কীভাবে পোশাক পরলে যৌবন জ্বালায় অস্থির ছেলেদের হাতের আংগুলে খেলানো যাবে। ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প শেখালো, সারোয়ার ফারুকী ভাই বেরাদর মিলে লিটনের ফ্ল্যাট চেনালো। আইটেম সং, বিজ্ঞাপন, মুভি সিরিয়াল, নাটক, ইউটিউবের মিউজিক ভিডিও,সালমান মুক্তাদির গং, ট্রল পেইজ-গ্রুপ, ফেইসবুক লাইভ, বিলবোর্ড, বিপিএল সব কিছু, সব কিছু তরুণদের উস্কানি দেয়। অবদমিত যৌবনকে ছারখার করে দেয় কামের আগুনে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে। . এই জেনারেশনের কষ্ট,টানপোড়েন বোধহয় আগের জেনারেশন কখনোই বুঝতে পারবেনা। আসলে ওদের কোনো দোষ নেই। কষ্টগুলো এতোটাই তীব্র, পরীক্ষাগুলো এতোটাই কঠিন যারা এগুলোর মুখোমুখি হননি তাদের পক্ষে কষ্টের তীব্রতা অনুভব করা অত্যন্ত কঠিন। . কয়জন শখ করে রিকশায় লুইচ্চামি করে? লিটনের ফ্ল্যাটে যায়? যারা যায় সব দোষ কী একা তাদেরই? সমাজের কোনো দোষ নেই? এই ছেলেমেয়েগুলোর দিকে আংগুল তোলার আগে আমাদের নিজেদের দশবার চিন্তা করা উচিত। আমরা তরুণ তরুণীদের দিনের পর দিন ক্ষুধার্ত রেখেছি, ক্ষুধার্তদের সামনে আকর্ষনীয়ভাবে লোভনীয় লোভনীয় সব খাবার উপস্থাপন করেছি আর হালাল উপায়ে সে খাবার খাবার সব উপায় দুর্গম গিরি কান্তারের মতো করে রেখেছি। হারামকে করে রেখেছি একদম সহজ। এখন তরুণ তরুনীরা যদি পাপে জড়ায়, জিনা ব্যাভিচার করে তার দোষ যেমন তাদের ঠিক তেমনি এই সমাজের মানুষগুলোরও। . এস্টাব্লিশডমেন্ট, সোস্যাল স্ট্যাটাস, লাখ লাখ টাকার দেনমোহর, লৌকিকতা, ওয়েডিং ফটোগ্রাফি, সঙ্গীত সন্ধ্যা, হলদি নাইটসের বেড়াজাল ডিংগিয়ে তরুণ-তরূনীদের প্রতি ভালোবাসা আবার কবে ফিরে আসবে মানুষের হৃদয়ে হৃদয়ে? কবে ভালোবাসা পাবে ভালো রেসাল্ট করেও সিস্টেমের দোষে বেকার বসে থাকা লাখ লাখ যুবক? কবে ভালোবাসা পাবে নিজের চরিত্র রক্ষায় ছাত্র থাকা অবস্থাতেই বিয়ে করতে চাওয়া তরুণ? . পুরোনো রঙিন সেই শৈশবের দিনগুলোতে হা হুতাশ করত নাবিল- কবে বড় হবে, কবে স্বাধীনতা পাবে! ভাবতো জীবনের সব সুখ, সব আনন্দ,সব স্বাধীনতা সবই বোধহয় সুদূরের এই বয়সটাতে। বহু আকাঙ্ক্ষিত এই বয়সটাতে এসে অবাক হয়ে আবিষ্কার করলো সব সুখ,সব আনন্দ শৈশবে ফিরে গিয়ে ভেংচি কাটছে। . আবার শিশু হতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে পরাধীন হতে, টেনিস বলে টেপ পেঁচিয়ে অদ্ভূত অদ্ভূত সব আইন বানিয়ে শর্ট পিচ খেলতে , মাগরিবের আযান শোনামাত্র খেলা ফেলে তড়িঘড়ি করে বাসায় ফিরে যেতে। এক টাকার নারিকেল দেওয়া বরফ খেতে। . আবার বাবা হাত বাড়িয়ে দেবেন। নাবিল তাঁর কনিষ্ঠ আঙ্গুল শক্ত করে ধরে রাখবে। মানুষের ভীড়ে নাবিল আর হারিয়ে যেতে চায়না। . ঈশ! আবার যদি ফিরে পেতাম শৈশবের সেই পবিত্র দিনগুলো। যখন বুনো হলুদ ফুলের মতো নরম স্নিগ্ধ ছিল হৃদয়, এখনকার মতো দাউ দাউ আগুন জ্বলতোনা অষ্টপ্রহর- নাবিল আফসোস করে। . ব্যালকনির আলোর দীর্ঘ ছায়া এসে পড়ে অন্ধকার ঘরে। নারিকেলের পাতায় আছড়ে পড়ে ভেজা বাতাস। মাঝে মাঝে পথ ভুলে ঢুকে পড়ে ঘরে। ছুঁয়ে যায় আলো আর অন্ধকার, আশা আর নিরাশা। নাবিল এক নব্য প্রাচীন যুবক। বিছানায় শুয়ে ছটফট করে। . সমীকরণ ধীরে ধীরে জটিল হতে থাকে। যোগ হতে থাকে একের পর এক নতুন ভ্যারিয়েবল। সমাধান করবে কে? আদৌ কি সমাধান আছে না সমাধান অনির্ণীত? . আল্লাহ্‌ সুবহানু তা’আলা কোন সমস্যা সৃষ্টি করেছেন আর তার সমাধান দেননি এমনতো হতে পারেনা । তিনি কখনোই মানুষের ওপর জুলুম করেননা । মানুষের প্রতি দয়া করাকে তিনি নিজের কর্তব্য হিসেবে স্থির করেছেন। মানুষের প্রতি তিনি অত্যন্ত দয়াশীল। তিনিই তালা সৃষ্টি করেছেন আবার সেই তিনিই তো চাবি সৃষ্টি করেছেন। আধার যতোই ঘনকালো হোকনা কেন আলোর দেখাতো এক সময় মেলেই। এই সিরিজে আমরা ইনশা আল্লাহ চেষ্টা করব বিয়ে নিয়ে তরুণদের মধ্যে প্রচলিত ভুল ধারণা দূর করার। কীভাবে বাবা মাকে বোঝাতে হবে, কীভাবেই বা বিয়ের জন্য আর্থিক সামর্থ্য অর্জন করতে হবে সেই বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হবে আমাদের আলোচনা। ইনশা আল্লাহ। ========================================================================= বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম। . মাঝে মাঝেই তোমার মন খারাপ হবে। ছুটির দুপুরগুলো কাটতে চাইবেনা কিছুতেই। ঈদের দিনগুলোতে ভীষণ একা একা লাগবে। খুব স্বাভাবিক ভাই। সবারই এমন হয়। কিন্তু এই মন খারাপ লাগা ফেসবুকে শেয়ার না করাই ভালো। . ফেসবুকে তোমার মন খারাপের অনুভূতি ছড়িয়ে দিয়ে তুমি কখনো শান্তি পাবেনা ভাই, জেনে রেখো। জানি ভাই তোমার বুকে অনেক কষ্ট। লাল কষ্ট নীল কষ্ট। মাল্টিকালারের কষ্ট। বুকভাঙ্গা দীর্ঘশ্বাসে ভরা কষ্টগুলোর কথা ফেইসবুকে শেয়ার করে তুমি হয়তো নিজেকে কিছুটা হালকা করতে চাচ্ছো। কিন্তু ভাই এভাবে শান্তি পাওয়া যায়না। আমি পাইনি, কেউ কখনো পাইনি, তুমিও পাবেনা। . এরচেয়ে বরং তুমি সবর করো। ব্যথিত হৃদয়ে আল্লাহকে স্মরণ করো। মনের কথাগুলো, কষ্টগুলোর কথা তাঁকে বল যিনি এ অবস্থা বদলাতে পারবেন। যিনি এ সবরের বিনিময়ে তোমাকে পুরস্কৃত করবেন। যাদের হৃদয় ভেংগে যায়, তাদের সাথে আল্লাহ থাকেন। তোমার সৃষ্টিকর্তাকে খুলে খুলে দেখাও তোমার মনের সব দুঃখ গুলো। একাকীত্বে, নির্জনতায় কুরআনকে তোমার সংগী বানাও। কান পেতে শোনো তোমার রব তোমাকে কী বলছেন। . দেখ ভাই, আল্লাহ তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বান্দাদের সবচেয়ে বেশি কষ্টের, সবচেয়ে বেশি ফিতনাহর মধ্যে ফেলেন। ইউসুফ (আঃ) এর কথা ধরো, দাদা নবী ছিলেন, বাবা নবী, নিজেও নবী হবেন। নবীরা নিষ্পাপ। কোনো দোষ ছিলনা তাঁর। হিংসুক ভাইয়েরা খেলতে যাবার নাম করে ছোট্ট ইউসুফকে ফেলে দিল জংগলের ধারে নির্জন অন্ধকূপে। নিজের ভাইদের দ্বারা প্রতারিত হয়ে সেই অন্ধকার কূয়ার তাঁকে পড়ে থাকতে হলো অনেক সময়। তখন তাঁর মানসিক অবস্থার কথা চিন্তা করো। আপন লোকদের হাতে প্রতারিত হলে কেমন কষ্ট লাগে! . তারপর দাস হিসেবে তাঁকে বিক্রী করে দেওয়া হল মিশরের আযিযের কাছে। আযিযের স্ত্রী ইউসুফের (আঃ) রূপে মুগ্ধ হয়ে গেল। অভিজাত,সুন্দরী সবচেয়ে বড় কথা, কৃতদাস ইউসুফের (আঃ) মালিকের স্ত্রী, ইউসুফকে (আঃ) জিনার আহ্বান করল। নির্জন কক্ষে ইউসুফকে (আঃ) সাথে নিয়ে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দিল। . আযিযের স্ত্রী জুলায়খা-রূপবতী,লাস্যময়ী,অভিজাত। নির্জন কক্ষ। হাতছানি দিয়ে একজন সুন্দরী নারী, যুবক ইউসুফ (আঃ) কে এমন এক কাজের জন্য আহ্বান করছে যা যেকোনো পুরুষের স্বপ্ন। পরম আরাধ্য বিষয়। ভাই, তুমি আমি কী এই ফিতনাহর মাঝে পড়েছি? তখন ইউসুফের (আঃ) মানসিক অবস্থার কথা চিন্তা করো একবার। কী ঝড় চলছিল তাঁর মনে! . সবাই জানতো জুলেয়খা যা বলছে তা মিথ্যে। ইউসুফ (আঃ) নিষ্পাপ, নিরাপরাধ। যিনার হাত থেকে বাঁচার জন্য তিনি বন্ধ দরজার দিকে ছুটে গিয়েছিলেন, জুলায়খা পেছন থেকে তাঁর (আঃ) জামা টেনে ছিঁড়ে ফেলেছিল তারপরেও ইউসুফ (আঃ) কে দিয়ে জিনা করাতে পারেনি। কিন্তু তারপরেও জিনার অপবাদ মাথায় নিয়ে তাঁকে কারাগারে কাটাতে হলো সুদীর্ঘ সময়। তুমি কি ইউসুফের (আঃ) চাইতেও বেশি ফিতনাহ, বেশি কষ্টের মধ্যে পড়েছো? . রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কথা চিন্তা করো। তাঁর চেয়ে আল্লাহর নিকট আর প্রিয় ব্যক্তি কে ছিলেন? অথচ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কেও কতো কষ্ট করতে হয়েছে। বাবাকে জীবনে চোখেও দেখেননি, মমতাময়ী মাকে হারিয়েছেন ছয় বছর বয়সেই। পাথরের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন, নিজের লোকেরা এলাকা থেকে উচ্ছেদ করেছে, মাসের পর মাস চলে গিয়েছে চুলায় আগুন জ্বলেনি, খেজুর খেয়ে দিন কাটাতে হয়েছে, নিজ হাতে একে একে কবরে শুইয়েছেন প্রিয়তম সন্তানদের, বন্ধু আর প্রিয়মানুষদের। কাফির মুশরিকদের ব্যঙ্গ বিদ্রুপতো আছেই। . আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয়মানুষ, সবচেয়ে শুদ্ধ আত্মাকে যদি এতোটা কষ্ট করতে হয়, তাহলে তুমি আমি কেন একটু কষ্ট সহ্য করতে পারবনা? . ভাই, আল্লাহর শোকর আদায় করো। আল্লাহ তোমাকে দ্বীনের বুঝ দিয়েছেন। হাত বাড়ালেই তুমি হারাম রিলেশনের নাগাল পেয়ে যেতে, লিটনের ফ্ল্যাটে গিয়ে নিজেকে শান্ত করতে পারতে। ফিতনায় ভরপুর এই জমানায়ও আল্লাহ তোমাকে কলুষতা থেকে দূরে সরিয়ে পবিত্র রেখেছেন, বা কলুষতার জীবন ছুঁড়ে ফেলে ফিরে যেতে হবে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে – এই বোধ তোমার মধ্যে রেখেছেন। এটি এক বিশাল নিয়ামত! কতো ছেলে অন্ধকার কানা গলিতে সদর্পে হেঁটে বেড়াচ্ছে, মদ, গাজা,ইয়াবা, উদ্দাম যৌনতায় ডুবে আছে আপাদমস্তক। ভুলেও বুঝতে পারছেনা বা চাইছেনা কী ভুল তারা করছে। তুমি তো অন্তত তাদের চাইতে ভালো আছো। নিজের চাহিদা হালাল উপায়ে পূরণ করতে চাচ্ছো। . আল্লাহ (সুবঃ) তো এই কষ্টের মধ্যে ফেলে তোমাকে সম্মানিত করছেন। মুসলিমের জীবন যদি সুখ আর স্বাচ্ছ্যন্দ্যে পার হয়, যদি কোনো দুঃখ কষ্ট না আসে, কোনো পরীক্ষা না আসে তাহলে অন্তরের ঈমান, অনুসৃত পথ নিয়ে সন্দিহান হবার সময় চলে আসে। দুনিয়ার জীবনতো মুমীনের জন্য এক কারাগারের জীবন। কারাগারের জীবনে কী দুঃখ কষ্ট পরীক্ষা থাকবেনা, বলো? . এ পথ তো সেই পথ! যে পথে চলতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন আদম। ক্রন্দন করেছিলেন নূহ। আগুনে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন ইব্রাহীম খলীলুল্লাহ। যবেহ্ করার জন্য শোয়ানো হয়েছে ইসমাইলকে। খুব স্বল্প মূল্যে বিক্রি করা হয়েছিল ইউসুফকে, কারাগারে কাটাতে হয়েছিল জীবনের দীর্ঘ কয়েকটি বছর। যবেহ্ করা হয়েছে নারী সংশ্রব থেকে মুক্ত ইয়াহইয়াকে। রোগে ভুগেছেন আইয়ূব। দাউদের ক্রন্দন, সীমা অতিক্রম করেছে। নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করেছেন ঈসা। আলাইহিমুস সালাতু ওয়াস সালাম। নানা দুঃখ-দুর্দশা, কষ্ট-ক্লেশ ভোগ করেছেন শেষ নবী মুহাম্মাদ ﷺ। আর তুমি এখনও খেল-তামাশায় মত্ত?! [১] . আর তুমি সেই পথে হেসেখেলে চলবে, ক্ষতবিক্ষত হবেনা তোমার হৃদয়, রক্তাক্ত হবেনা তোমার পা, তা কী করে হয়? . তুমি কি ভাবছো, আল্লাহ (সুবঃ) তোমাকে ভুলে গিয়েছেন? তুমি যে এতো দুঃখ,কষ্ট ভোগ করছো, তা আল্লাহ দেখছেননা? ভাই কাবার রবের কসম। আল্লাহ তোমাদের এই কষ্টের উত্তম প্রতিদান দিবেন। এমন উত্তম প্রতিদান যা তুমি কল্পনাও করতে পারবেনা। . ‘ সেই মুমিনরাই সফল, যারা তাঁদের লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করে’ (সূরা মুমিনুন,আয়াত ১ও ৪) . নিশ্চয় আমি তাদের ধৈর্যের কারণে আজ তাদেরকে পুরস্কৃত করলাম, নিশ্চয় তারাই হল সফলকাম। ( সূর মুমিনূন : ১১১) . আল্লাহর কাছে সফলতার মানে কী? . সুতরাং যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সে-ই সফলতা পাবে। ( সূরা আলে ইমরান : ১৮৫) . রাসুলুল্লাহ (ﷺ) তো তোমাকে জান্নাতের গ্যারান্টি দিয়েছেন। বলেছেন- ‘‘যে ব্যক্তি তার দুই চোয়ালের মাঝের বস্তু (জিহবা) এবং দু’ পায়ের মধ্যখানের (লজ্জাস্থান) হেফাযতের গ্যারান্টি দিবে, আমি তার জান্নাতের ব্যাপারে গ্যারান্টি দেব’’। [বুখারী] . ভাই, এগুলো আল্লাহর চিরন্তন ওয়াদা – আল্লাহর চেয়ে আর কে বেশি ওয়াদা রক্ষাকারী। . যারা সবর করে, যারা পরীক্ষার মাঝ দিয়ে যায়, নির্জন মুহূর্তে আল্লাহ্কে ভয় করে, যারা যৌবনের হেফাযত করে, আল্লাহর ইবাদাতে নিজেদের যৌবন পার করে দেয় আল্লাহ তাঁদের ওপর ভোরের শিশিরের মতো রহমত বর্ষণ করেন। . ইউসুফ (আঃ) এর কথায় ধরো। ভাইদের কাছ থেকে প্রতারণার শিকার হওয়া, কূয়াতে নিক্ষেপ, নারীদের ফিতনা, বন্দীত্ব এতোসব ফিতনাহর মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে।সবর করেছেন।আল্লাহর ওপর আস্থা হারাননি। এরপর আল্লাহ তায়ালা তাকে মিসরের রাজত্ব দান করেন। অথচ তিনি মিসরে প্রবেশ করেছিলেন একজন ক্রীতদাস হিসেবে।আল্লাহ (সুবঃ) এই দাসকেই দিলেন সুবিশাল রাজত্ব। ক্রীতদাসের মাথায় পরিয়ে দিলেন সম্মানের মুকুট। [২] . মুসা (আঃ) ফিরাউনের ভয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। ক্ষুধার্ত, সহায় সম্বল, আশ্রয়হীন। একদিন কুয়োর ধারে এক গাছের নিচে বসেছিলেন। খেয়াল করলেন, সেখানে দুইজন মেয়ে পুরুষদের ভীড়ের কারণে তাদের পশুদের পানি পান করাতে পারছেনা। মুসা (আঃ) তাদের সাথে অত্যন্ত সম্মান দিয়ে কথা বললেন। অত্যন্ত শালীনতার সাথে তাঁদের সাহায্য করলেন। এই শালীনতাবোধ, এই লজ্জাবোধের পুরষ্কার হিসেবে তিনি কি কি পেলেন? . সহায় সম্বলহীন, ক্ষুধার্ত মুসা (আঃ) আল্লাহর নবী শোয়াইব (আঃ) এর মেয়েকে পেলেন নিজের স্ত্রী হিসেবে। কাজ জুটলো। জুটলো নিরাপদ আশ্রয়। . ৫০ হাজার বছর ধরে বিচার চলবে হাশরের ময়দানে। সূর্য থাকবে মানুষের অতি নিকটে। মাথার আড়াই হাত ওপরে। সূর্য আমাদের থেকে কতো কোটি কিলোমিটার দূরে। তারপরেও তার তাপে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে যাই। হাশরের সেই ভয়ঙ্কর দিনের কথা চিন্তা করো। সূর্য থাকবে মানুষের মাথার খুব কাছে। সেদিন কী দুরাবস্থায় পড়তে হবে মানুষদের। ঘামের সাগরে মানুষ হাবুডুবু খাবে, তৃষ্ণায় বুকের ছাতি ফেটে যাবে, ছায়া মিলবেনা। আল্লাহর আরশের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবেনা। আল্লাহ (সুবঃ) সেই আরশের ছায়ায় দয়া করে যাদের আশ্রয় দিবেন তাদের একজন হলো সেই যুবক যার যৌবন কেটেছে আল্লাহ্র ইবাদাতে, যাকে পরমাসুন্দরী অভিজাত মহিলার জিনার আহ্বান ফিরিয়ে দিয়ে বলে আমি আল্লাহ্কে ভয় করি।

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন।

 

আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে বিস্তারিত জানতে  লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।

আইডিসি  মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আপনি আইডিসি  মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।

 
 
Islami Dawah Center Cover photo

 

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টারকে সচল রাখতে সাহায্য করুন!

 

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার ১টি অলাভজনক দাওয়াহ প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠানের ইসলামিক ব্লগটি বর্তমানে ২০,০০০+ মানুষ প্রতিমাসে পড়ে, দিন দিন আরো অনেক বেশি বেড়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।

বর্তমানে মাদরাসা এবং ব্লগ প্রজেক্টের বিভিন্ন খাতে (ওয়েবসাইট হোস্টিং, CDN,কনটেন্ট রাইটিং, প্রুফ রিডিং, ব্লগ পোস্টিং, ডিজাইন এবং মার্কেটিং) মাসে গড়ে ৫০,০০০+ টাকা খরচ হয়, যা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। সেকারনে, এই বিশাল ধর্মীয় কাজকে সামনে এগিয়ে নিতে সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে আপনাদের দোয়া এবং আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন, এমন কিছু ভাই ও বোন ( ৩১৩ জন ) দরকার, যারা আইডিসিকে নির্দিষ্ট অংকের সাহায্য করবেন, তাহলে এই পথ চলা অনেক সহজ হয়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ। যারা এককালিন, মাসিক অথবা বাৎসরিক সাহায্য করবেন, তারা আইডিসির মুল টিমের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন, ইংশাআল্লাহ।

আইডিসির ঠিকানাঃ খঃ ৬৫/৫, শাহজাদপুর, গুলশান, ঢাকা -১২১২, মোবাইলঃ +88 01609 820 094, +88 01716 988 953 (নগদ/বিকাশ পার্সোনাল) ইমেলঃ info@islamidawahcenter.com, info@idcmadrasah.com, ওয়েব: www.islamidawahcenter.com, www.idcmadrasah.com সার্বিক তত্ত্বাবধানেঃ হাঃ মুফতি মাহবুব ওসমানী ( এম. এ. ইন ইংলিশ )

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন!

 

আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে  জানতে  লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।

আইডিসি  মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আপনি আইডিসি  মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।

  ভাই, হতাশ হয়োনা। যুগে যুগে যারা নিজেদের পবিত্রতা রক্ষা করেছে, আল্লাহ তাঁদের এই দুনিয়াতে দু’হাত ভরে দিয়েছেন। আর ওপারের ঐ জীবনটার পুরষ্কারের কথা তো বলায় বাহুল্য। তুমি কি মনে করছো, যেই আল্লাহ ইউসুফকে (আঃ), মূসাকে (আঃ) তাঁদের শালীনতাবোধ, পবিত্রতার জন্য এতো এতো নিয়ামত দিয়েছেন সেই একই আল্লাহ কি তোমাকে বঞ্চিত করবেন ? তোমাকে চিরকাল দুঃখ,কষ্ট ভোগ করাবেন? কক্ষনোই নয়। ভাই, কক্ষনোই নয়। . আল্লাহ (সুবঃ) অচিরেই তোমাকে সুসংবাদ দান করবেন। এমন একজন মানুষের সঙ্গে তোমার জোড়া বেঁধে দিবেন যাকে দেখে তোমার চোখ শীতল হবে এবং তোমাকে দেখেও যার চোখ শীতল হবে। তোমাকে সকল ফিতনাহ থেকে রক্ষা করবেন। এই দুনিয়ায় তোমার ঘরেই নামিয়ে আনবেন জান্নাত। তোমাকে সম্মানিত করবেন। দাঁতে দাঁত চেপে আর কয়েকটা দিন লড়ে যাও ভাই। আমাদের জান্নাত ভাই, এই সামনেই। আর মাত্র কয়েকটা দিনের দূরত্ব। . “কষ্টের সাথেই স্বস্তি রয়েছে। নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে”। (সূরা ৯৪:আয়াত ৫-৬) . “অচিরেই তোমার রব্ব তোমাকে এমন অনুগ্রহ দান করবেন যাতে তুমি সন্তুষ্ট হবে”। (সূরা দুহাঃআয়াত ৫) . চলবে ইনশা আল্লাহ ….. রেফারেন্সঃ [১]আল-ফাওয়ায়িদ, ইবনুল কাইয়্যিম [২]https:/www.raindropsmedia.org/nobider-jibon/ ========================================================================= বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম ভাই, দেখ দুনিয়ার নারী,ধন সম্পদ, সন্তানসন্ততি এগুলো একধরণের ফিতনাহ। এগুলো দ্বারা দুনিয়াকে সুশোভিত করে রাখা হয়েছে। ‘জেনে রাখ! তোমাদের অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পরীক্ষার বিষয় মাত্র। আল্লাহর কাছে এর চেয়েও মহান প্রতিদান আছে।’ (সূরা আনফাল : ২৮) ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের প্রতিপত্তি, ধন-সম্পত্তি ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদের আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না রাখে। যদি তোমরা গাফেল বা উদাসীন হও তবে অবশ্যই তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সূরা মুনাফিকুন : ৯) কতো সৎ মানুষের পদস্খলন হলো নারীর ফিতনায়, দ্বীনের অর্ধেক পূরণ করার জন্য বিয়ে করল, তারপর দ্বীনের বাকি অর্ধেকও হারিয়ে ফেলল, এমন মানুষ সমাজে বহু আছে। আল্লাহ্‌র দ্বীন কায়েমের স্বপ্ন দেখতো যেই যুবকের দু’চোখ, সেই যুবক বউয়ের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে গিয়ে আর ওসব নিয়ে ভাবার সময়ই পায়না।  বিপ্লবের মৃত্যু ঘটে শুরুর আগেই। বিয়ে মানে শুধু রোমান্টিসিজমই নয়। বিয়ের পরে তোমার ঘাড়ে অনেক দায়িত্ব, কর্তব্য আসবে। তুমি যদি বিয়েকে শুধু রোমান্টিসিজম ভেবে বসে থাকো তাহলে  বিয়ের পরে  খাপ খাওয়াতে ঝামেলা হবে। মধুমাসের পরে  তোমার মোহভঙ্গ হবে। কঠিন,কঠোর  বাস্তবতা আঘাত হানবে। আগে থেকে প্রস্তুতি না থাকলে হয়তো তুমি ভেঙ্গেই পড়বে। কেন যে বিয়ে করলাম, বিয়ের আগেই তো ভালো ছিলাম এই চিন্তাও চলে আসতে পারে মাথাতে। ভাই দেখ, তোমার এই বয়সে আগুন জ্বলে ওঠে প্রত্যেক শিরা উপশিরায়,সেই উত্তাপে বদলে যায় তোমার দুনিয়া। বদলে যায় দেখার দু’চোখ। নারীকে শুধু আর রক্তমাংসের মানুষ বলে মনে হয়না,নারীর মানবীয় বৈশিষ্ট্যের কথা তুমি ভুলে যাও। নারীকে সৌন্দর্য আর  পরিপূর্ণতার এমন পোষাক তুমি পরিয়ে রাখো যার আড়ালে ঢাকা পড়ে নারীর সকল দোষত্রুটি। নারীর কোনো ভুল, কোনো সীমাবদ্ধতা ধরা পড়েনা।  মূর্তি পুজারীর মতো নারীকে বানিয়ে ফেলো কল্যাণের প্রতিমা। মনে প্রাণে পুজো করো তাকে। যেন শুধু নারীর স্পর্শেই তোমার মুক্তি। নারী যেন পরশ পাথর যার ছোঁয়াতে আপাদমস্তক নিজেকে পালটিয়ে নিবে তুমি। কিন্তু পরে যখন আবিষ্কার করো নারীরও সীমাবদ্ধতা আছে, দোষত্রুটি আছে, সেও রক্ত মাংসের একজন মানুষ তখন মোহভঙ্গ হয়। হতাশ হও। তোমার এই অপরিপক্ক চিন্তাভাবনার পালে জোর হাওয়া লাগায় নাটক,সিনেমা, গান আর পর্ন । অন্তরে নিঃসঙ্গতার অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। তোমাকে রোমান্টিসিজমে ভাসিয়ে নেয়। আর যৌবনের উত্তাপ ছড়িয়ে দেয় শিরা উপাশিরায়, প্রতিটি লোহিত রক্তকণিকায়। মুভি আইটেমসং পর্ন হস্তমৈথুন, গার্লফ্রেন্ড জাস্ট ফ্রেন্ড, ফ্রি মিক্সিং এগুলো থেকে শতভাগ দূরে থাকতে হবে। কঠোরভাবে চোখের হেফাযত করতে হবে। এগুলোই তো প্রধান কারণ যার কারণে তুমি অন্ধকার কানাগলিতে মাথা কুটে মরছো। যিনা,ব্যভিচার,বেহায়াপনা,লুচ্চামির হাতছানি উপেক্ষা করতে পারছনা।  বাবা মা, আত্মীয়স্বজন, একান্ত আপন মানুষগুলো তোমার প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। তুমি ঠাট্টা,তামাশার পাত্রে পরিণত হয়েছো। বিয়ে পাগলা সহ আরো অনেক উপাধি পেয়ে গিয়েছো।। ভাই এগুলো থেকে দূরে থাকো। দেখবে, তোমার অশান্ত হৃদয় অনেকটাই শান্ত হয়ে গিয়েছে। বিয়ের তীব্র প্রয়োজনীয়তা অনেকটাই কমে এসেছে। তুমি সবর করতে পারছো।  বালেগ হবার পরে তোমার যে শরীরের ক্ষুধা লাগবে সেটা বিয়ে ছাড়া  পুরোপুরি মিটবেনা, কিন্তু কিছুটা তো মিটবে। পুরো পেট না ভরুক, অর্ধেক পেট ভরবে। ক্ষিদের কথা, তীব্রতা কিছুটা ভুলে থাকতে পারবে। মুক্ত বাতাসের খোঁজে  বইটা ভালোমতো পড়ো। সে অনুসারে আমল করো। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও। আল্লাহ সহজ করে দিবেন।তাই বলে এটা না যে তুমি বিয়ে করতে দেরি করবে বা বিয়ে করার চেষ্টা থামিয়ে দেবে। বিয়ের চেষ্টা চলবে। পাশাপাশি এগুলোর দিকেও নজর দিবে। মনে করো তুমি রোযা রেখেছো। ইফতারির অনেক দেরি। বারবার ফ্রিজ খুলে সুস্বাদু খাবার দেখতে থাকো, আম্মা রান্না করছে, সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকো, তাহলে তোমার ক্ষুধার তীব্রতা,কষ্ট বেড়ে যাবেনা? এখন এটা কী কোনো বুদ্ধিমানের কাজ হবে  রোযা রেখে সুস্বাদু খাবারের আশেপাশে ঘুরে বেড়ানো? তাদের ঘ্রাণ নেওয়া? বরং যতো বেশি খাবার থেকে দূরে থাকা যায়, যতো বেশি খাবারের কথা ভুলে থাকা যায় ততো ভালো। তোমার জন্য ইফতারি পর্যন্ত অপেক্ষা করা ততোবেশি সহজ হয়ে যাবে। ভাই তাহলে চিন্তা করো, শরীরের ক্ষুধা নিয়ে( ক্ষুধা পূরণের হালাল উপায়ও নেই) কেন তুমি এমন কিছু করো  যা তোমাকে বারবার ক্ষুধার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়? কেন তুমি মুভি আর নাটকে  ডুবে থাকো যা প্রতিনিয়ত  তোমার  শরীরের ক্ষুধা, তোমার নিঃসঙ্গতা বাড়িয়ে তোলে? কেন ইউটিউবে একটার পর একটা রোমান্টিক মিউজিক ভিডিও দেখে চলছো?  কেন তুমি জাস্টফ্রেন্ডদের সাথে একই রিকশায় ঘোরো, গায়ে হাত দিয়ে কথা বলো? কেন তুমি শপিংমল,রেস্তোরা, গার্লসস্কুল,কলেজ বা এমন জায়গাগুলোতে ঘোরাফেরা করো যেখানে  সুন্দরী, আকর্ষনীয়  মেয়েদের আনাগোনা? কেন রাস্তায় চোখ নামিয়ে চলোনা? কেন ফেসবুক ইন্সটাগ্রামে লাস্যময়ী,রুপবতী নারীদের ছবি জুম করে দেখ? ট্রল পেইজ বা গ্রুপগুলোতে ‘ফান’ করার নামে অশ্লীল, উত্তেজক কথাবার্তা বলো? রাত জেগে  খোল্লামখোল্লা মেয়েদের লাইভে একটিভ থাকো? ভাই, তুমি তো রোযা রেখেছো, ইফতারির আগে তো খাবার খাবেনা, তাহলে কেন এভাবে নিজের ক্ষুধা বাড়িয়ে তুলছো? ক্ষুধা বাড়তে বাড়তে একসময় এমন অবস্থা হবে তুমি আর ক্ষুধার কষ্ট সহ্য করতে পারবেনা। হালালের পথ যেহেতু খোলা নেই, তুমি বেছে নিবে হারাম। পর্ন,হস্তমৈথুন, রুম ডেটিং,লিভ টুগেদার, ক্লাসরুমে,পার্কে,বাসে,চিপায় চাপায় বেহায়াপনা। আখিরাত তো নষ্ট হবেই, দুনিয়ার এই জীবনটাও বরবাদ হয়ে যাবে।কখনো  শান্তি পাবেনা। বুক জ্বলে যাবে ভাই, বুক জ্বলে যাবে।  অশান্তি আর অস্থিরতায়। তীব্র হতাশায়। নারীর সাথে অন্তরংগতার ব্যাপারটিকে তোমরা  অপার্থিব সুখ আর শিহরণের প্যাকেজ ভেবে দিন রাত কল্পনা করো,  তা আসলে খুব সামান্য একটা ব্যাপার। মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কিন্তু স্বাভাবিক, সাধারণ একটা ব্যাপার। তোমরা যেরকম ভাবে একে কল্পনা করো, সেটি এর ধারে কাছেও নেই। ভাত খাওয়া, পানি খাওয়ার মতোই সাধারণ ব্যাপার এটি। সেরকম বিশেষত্ব কিছুই নেই।  অথচ এগুলো ভেবেই দিন রাত অস্থিরতা,অশান্তিতে ভোগো তুমি। হারাম রিলেশন,লুচ্চামি ছেড়ে দাও। ফিরে আসো রবের পথে। যারা ফিরে এসেছে তারা বলেছে, যারা ফেরেনি তারাও বলেছে- ওপথে শান্তি নেই, সুখ নেই। প্রীতি নেই, ভালোবাসা নেই। ভালোবাসা ওপথে নয় , বরং ভালোবাসা তোমার রবের পথে, হ্যাঁ ভালোবাসা তোমার দ্বীনের পথে রয়েছে। চারপাশে ছড়ানো ছিটানো। অবশ্যই পড়- শান্তি পাবো কোথায় গিয়ে তো যা বলছিলাম বিয়ে কিন্তু সকল সমস্যার সমাধান না। নারী কোনো ম্যাজিক জানেনা, যে চোখের পলকে তোমার জীবনের সকল সমস্যার সমাধান করে দিবে ম্যাজিলওয়ালারা যেমন টুপির ভেতর থেকে কবুতর বের  করে আনে। নারী তোমাকে হয়তো কিছুটা পাপ পঙ্কিলতা থেকে উদ্ধার করবে, কলুষতাময় নিশ্চিত পতন থেকে রক্ষা করবে, জীবনটাকে আরো একটু গুছিয়ে দিবে, কিন্তু সকল সমস্যার সমাধান করে দেবে না।বিয়ে সকল প্রশান্তির উৎসও না। এটা শতোভাগ সত্য যে আল্লাহ (সুবঃ) স্ত্রীদের মধ্যে চোখের শীতলতা রেখেছেন, স্ত্রীদেরকে প্রশান্তির উৎস বানিয়েছেন। কিন্তু  স্ত্রীরাই একমাত্র চোখের শীতলতার কারণ নয়, প্রশান্তি পাবার আশ্রয় স্থল নয়। তাই যদি হতো, তাহলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলতেন না , সালাতেই দান করা হয়েছে আমার চক্ষুর শীতলতা। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১২২৯৩; সুনানে নাসাঈ, হাদীস ৯৩৪০ অন্য হাদীসে বেলাল রা.-কে সম্বোধন করে বলেছেন, সালাতের ব্যবস্থা করে আমাকে শান্তি দাও, হে বেলাল!। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৯৮৫ একটি বিষয় বোঝার চেষ্টা করি, যদি স্ত্রীই সর্বোচ্চ প্রশান্তির উৎস হতো, তাহলে সাহাবাগণ স্ত্রীর সাথেই বেশি সময় কাটাতেন। স্ত্রীর উষ্ম স্পর্শ ছেড়ে তাহাজ্জুতে দাঁড়াতেন না; স্ত্রীর মায়াবি আচলের বাধন খুলে দিনের বেলা  জিহাদের ময়দানে নামতেন না। . খালিদ বিন ওলীদ (রাঃ) বলতেন না, ‘আমি যেই নারীকে ভালবাসি তার সংগে আমার বিয়েও আমাকে ততটো আনন্দিত করবেনা, আমাকে যদি আমার ঔরসজাত কোন পুত্র সন্তান জন্মের সুসংবাদ দেওয়া হয় তাহলেও আমি ততোটা খুশি হবনা যতোটা খুশি আমি হব কোন এক হাড়কাঁপানো শীতের রাতে মুসলিম সৈন্যবাহিনীর সংগে কাফিরদেরকে আক্রমনের জন্য অপেক্ষা করা’   ভাই,আমরা তোমাকে বিয়ে করতে নিরুৎসাহিত করছিনা কোনোমতেই শুধু বাস্তবতাটা বোঝানোর চেষ্টা করছি। তুমি দেরি না করে অবশ্যই বিয়ে করে নিবে। বিয়ে তোমাকে অনেক পাপ পঙ্কিলতা থেকে রক্ষা করবে, অগোছালো জীবনটাকে গুছিয়ে দিবে, রিযিকে বারাকাহ দিবে, চোখ শীতল হবে। তবে তুমি এটা ভেবে বসে থেকোনা যে বিয়ের পর তোমরা রূপকথার রাজকন্যা রাজপুত্রদের   মতো ‘সুখে শান্তিতে চিরকাল বসবাস করিতে থাকবে’। কখনো আকাশে ঝড় উঠবেনা। দাম্পত্য জীবন মানে এই সুখের তুফান তো, এই ঝগড়াঝাটি, মন কষাকষি । কখনো ঝকঝকে রোদ তো কখনো কালো মেঘ। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এবং তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে পর্যন্ত মনোমালিন্য হতো। এখন তুমি যে পরীক্ষা যে কষ্টগুলোর সম্মুখীন হচ্ছো বিয়ের পরে হয়তো এই কষ্টগুলো আর থাকবেনা, কিন্তু তুমি তখন হয়তো অন্য অনেক পরীক্ষার সম্মুখীন হবে, অন্য দিক থেকে কষ্টের মধ্যে পড়বে। কাজেই এই ব্যাপারগুলো তোমার মাথাতে যেন থাকে, তুমি এগুলোর জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে থাকবে। আবারো বলছি, আমাদেরকে ভুল বুঝোনা। জলদি বিয়ে করে নাও। একটুকু দেরি করোনা। কিন্তু এই ব্যাপারগুলোও মাথাতে রেখো। চলবে ইনশা আল্লাহ… ========================================================================= তো যা বলছিলাম তুমি যে বিয়ে করার উপযুক্ত হয়েছো, ম্যাচিউরড হয়েছো তার অন্যতম একটি নিদর্শন হলো, তুমি ফেইসবুকে বিয়ে নিয়ে অনর্থক লাফালাফি  কম করবে। যারা এরকম করে তাদের নিয়ে মানুষজন হাসাহাসি করে, ইমম্যাচিউরড ভাবে। আর এই ইমম্যাচিউরড ছেলেদের হাতে কোন বাপ তাঁর মেয়েকে, কোন ভাই তার বোনকে তুলে দিবে, বলো? এভাবে ঘন্টায় ঘন্টায় ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিলে বিয়ে হয়না। তোমার নিজের এই লড়াইয়ের কথা মনের মধ্যে গেঁথে নাও ভালোভাবে। ভুলে যেওনা কীভাবে সমাজ তোমাকে নির্বাসন দিয়ে রেখেছে, কতোটা কষ্ট,কতোটা দুঃখ বুকে নিয়ে তুমি দিন পার করছো। ভালোকরে গেঁথে নাও। কক্ষনো ভুলে যেওনা। তোমার অনাগত সন্তানদের এই কষ্টে পড়তে দিওনা। তাদের যৌবনের দুঃসময়ে তুমি বন্ধু হয়ে পাশে থেকো। অধিকাংশ বাবা মা, বাবা-মা হবার পরে নিজেদের  কৈশোর, যৌবনের সংগ্রামরত দিনগুলোর কথা ভুলে যান, একান্ত আপন হয়েও মনের অজান্তেই জল্লাদের নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন। তুমি এই ভুল কোরোনা। সযত্নে মনে গেঁথো রাখো। যদি কোনো ডায়েরীতে লিখে রাখতে পারো তাহলে খুব ভালো হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণত বাবা আর আমাদের মাঝে এক অদ্ভূত দূরত্ব তৈরি হয়ে যায়। মিটার কিলোমিটারের হিসেবে খুব বেশি দূরত্ব নেই কিন্তু তারপরেও মনে হয় বাবা ভূমধ্যসাগরের একপাশে আর আমরা অন্যপাশে। জীবনবাবু এই দূরত্বের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন… ‘এতো কাছে তবু কতো দূর…’। একসময় যে বাবার সঙ্গে ক্রিকেট,রাজনীতি নিয়ে অকালপক্ক্বের মতো আলোচনা চলত, আমার ছোট্ট জীবনের ছোটো ছোটো সুখ,দুঃখ, টুকরো টুকরো অভিমান,আবদার … আমার ভেতর আমার বাহির সবটাই ছিল তাঁর কাছে কাঁচের মতো স্বচ্ছ সেই বাবার কাছে আমি এখন প্রায় অপরিচিত এক মানুষ। স্বল্প পরিচিত প্রতিবেশির বা অন্য সেকশনের ক্লাসমেটদের মতো যাদের সঙ্গে দেখা হলে হাই হ্যালো করে কুশলাদি জানা যায়, কিন্তু বেশিদূর কথা গড়ায় না।চোখের সামনেই  আমি কেমন বদলে গেলাম, কেমন অনাতিক্রম্য ব্যবধান  তৈরি হয়ে গেল… মা, বোন,ছোটোভাই বা অন্য কারো  সাহায্য ছাড়া যে দূরত্ব  অতিক্রম করে বাবার কাছে পৌঁছানো সম্ভব না। এ বড় শক্ত ম্যাজিক। বাঙালী বাবাদের পুত্রস্নেহ, ভালোবাসা,  তাঁদের গাম্ভীর্য আর ব্যক্তিত্বের কাছে প্রতিনিয়ত হেরে যায়।  খুব কম সৌভাগ্যবান  বাবারাই এই দেয়াল ভাঙতে পারেন। ঘাড়ে করে স্কুলে দিয়ে আসা, গলা জড়িয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া,ভাত তুলে খাওয়ানো বাবারাও ছেলের ব্যর্থতা আর দুঃখের প্রহরে কিছু দ্বিধা,কিছু সঙ্কোচ কিছু গাম্ভীর্য কাটিয়ে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে দুঃখ ভোলাতে পারেন না। ঘাড়ে হাত রেখে  সাহস যোগাতে পারেন না। আমরা ছেলেরাও কি ছেলে হিসেবে হেরে যাইনি?  দুষ্টু ছেলেগুলো যখন আমার দুইটাকার সন্দেশ কেড়ে নিয়ে খেয়ে নিত, ওপরের ক্লাসের শুভ ভাইয়া যখন প্রায়ই আমাকে সারা দুপুর বল করিয়ে নিত কিন্ত এক ওভারও ব্যাট করতে দিতনা তখন আমি কি দৌড়ে গিয়ে বাবার কাছে নালিশ জানাতাম না? আজ যখন ‘জীবন’ আমাদের সাথে শুভ ভাইয়ার মতো বেঈমানি করে যাচ্ছে  আমরা কেন বাবার কাছে নালিশ করতে পারিনা? কেন বাবার কাছে গিয়ে বলতে পারিনা বাবা আমি আর পারছিনা… ? কী আমাদের টেনে ধরে রাখে? কে সেই কালপ্রিট যে আমাদেরকে আমাদের বাবাদের থেকে এক ধাক্কায় অনেক দূরে সরিয়ে ফেলল? এক প্রজন্মের সঙ্গে আরেক প্রজন্মের জেনারেশন গ্যাপ থাকবেই, থাকবে কিছুটা আড়াল, আড়ালের ফলশ্রুতিতে ভুল বোঝাবুঝি। নিপাতনে সিদ্ধ ব্যাপার এগুলো। কিন্তু বর্তমানে তিন চার বছরের ব্যবধানেই যেভাবে ব্যবধান গড়ে উঠছে সেখানে বাবাদের জেনারেশনের সঙ্গে (মায়েদের জেনারেশনের সঙ্গেও) ছেলেদের জেনারশনের দূরত্ব যেন অনেক আলোক বর্ষের হিসেব। তাই হুট করে বাবা বা মাকে চমকে দিয়ে বিয়ের কথা  না বলাই উচিত। এই আপাত অস্বস্তিকর  আলোচনা করার টাইমিংটা খুব গুরুত্বপূর্ণ! তোমাকে সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় সঠিক কথা বলতে হবে। সঠিক সময়,সঠিক জায়গা,সঠিক কথা- এই তিনটি বিষয়ের একটি এদিক সেদিক হলে গিট্টু লেগে যাবার সম্ভাবনা আছে। মনে কর, বাবা অফিস থেকে বিদ্ধস্ত হয়ে রাতে ঘরে ফিরেছেন তখন গিয়ে যদি বল, তাহলে দুই একটা লাঠি তোমার পিঠে ভাংলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা। একটু খেয়াল করতে হবে।  তোমাকে এমন এক সময় এই কথাগুলো বলা শুরু করতে হবে যখন তোমারর বাবা-মায়ের মন ভালো থাকবে,  শারীরিক ক্লান্তি বা অন্য কোনো কারণ তোমার হৃদয়ের আকুতি আর তোমার বাবা-মা’র মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে না পারে. . হুট করে বাসায় বিয়ের কথা না বলে বরং কিছুটা প্ল্যান করে নাও। মনে মনে কথাগুলো সাজিয়ে নাও। বাবা,মা,  বড়ভাইয়া,বড়আপু যার সঙ্গে নির্ভয়ে, সাচ্ছন্দ্যে কথা বলতে পারো, তাঁর কাছে যাও সময় এবং অবস্থা বুঝে। দু’রাকাত নামায পড়ে নিতে পারো। কিছু দান সাদকা করতে পারো। ইস্তেগফার করে নাও। (আস্তাগফিরুল্লাহ পড়া) আলাদা বসিয়ে তাঁকে সব কথা খুলে বলো। তুমি বিয়ে করতে চাও,কেন চাও, কেন বিয়ে করা দরকার ইত্যাদি। মাথা ঠান্ডা রাখবে। তর্কে জড়াবেনা, সবচেয়ে বড় কথা লজ্জা পাবেনা। আসলে বাবা মা’কে যেয়ে নিজের বিয়ের কথা বলা বেশ লজ্জাদায়কই। যে করেই হোক এই লজ্জা কাটিয়ে উঠতে হবে। শুরুর ধাপটাই কঠিন। একবার লজ্জা কাটিয়ে শুধু বিয়ে শব্দটা  বলতে পারলে দেখবে বাকী আলোচনা খুব  সহজেই আগাবে। ঢালু জায়গায়  স্থির বলকে একটু ধাক্কা দিলেই বল গড়িয়ে অনেকদূর চলে যায়।   যদি নিজের বিয়ের কথা বাসার কাউকে বলতে না পারো, তাহলে খালা,ফুপি,মামা,দুলাভাই (মেয়েদের জন্য ভাবী), নানা,নানী,দাদা দাদীর হেল্প নিতে পারো।  পারিবারিক বন্ধু, পাড়াতো চাচা,বড়ভাই এদেরও সাহায্য নিতে পারো। যদি কারো কাছেই মুখ ফুটে নিজের বিয়ের কথা বলতে না পারো তাহলে মেসেজ দিয়ে বলতে পারো। অনেকেরই বাবা মার সামনে বিয়ের কথা বলতে গেলে হাত পা কাপাকাপি শুরু হয়ে যায়। গুছিয়ে কথা বলতে পারেনা, তাদের জন্য মেসেজিং (চিঠি টাইপ কিছু হতে পারে) খুব ভালো অপশন। মনের কথা সুন্দরভাবে পৌঁছানো যায় বাবা মার কাছে। আবারো বলি, লজ্জা করবেনা।লজ্জা করে আল্টিমেটলি কোন লাভ নেই। দেরি হয়ে যাবে শুভ কাজে। বিয়ের কথা তো একসময় বলতেই হবে বাসায়, বিয়ে তো  করতেই হবে, নাকি?   অধিকাংশ মানুষই একটা ভুল করে বসে। বাবা মা বা অন্য কোনো আপনজনকে বিয়ের কথা   বলতে গিয়েও বলেনা । আজ শেয়ার  করবো, কাল শেয়ার  করবো এভাবেই একদিন কাটিয়ে দেয়, দুই দিন কাটিয়ে দেয়। তারপর এক সপ্তাহ, তারপর কয়েক মাস, তারপর  বছর। তুমি যদি এভাবেই আজ বলবো কাল বলবো করতে থাকো তবে আর বলা হবে না, শুধু সময় বাড়তে থাকবে। তাই একটা সুন্দর দিন ঠিক করো,আল্লাহ্‌র নাম নাও। আর  ওইদিনই বাবা-মায়ের সাথে সব শেয়ার  করো।   বাসায় বিয়ের কথা বলার পরেই অবধারিতভাবে তোমার দিকে AK-47 এর  বুলেটের বেগে যে প্রশ্নগুলো ধেয়ে আসবে তার সম্মুখভাগেই থাকবে সেই চিরন্তন প্রশ্ন- বিয়ে করে বউকে খাওয়াবি কী? দেখ, রিযিকের মালিক আল্লাহ এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।  বিয়ে করলে যে আল্লাহ রিযিকে বারাকাহ দেন, সন্দেহ নেই এই ব্যাপারেও। কিন্তু বাবা মা আত্মীয়স্বজনের বিয়ে করে বউকে খাওয়াবি কি প্রশ্নের উত্তরে যদি  তুমি  কুরআনের আয়াত আর উমার (রাঃ) এর উক্তি শুনিয়ে দাও   ‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস দাসীদের বিবাহ দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী।’ {সূরা আন-নূর, আয়াত : ৩২} উমর ইবন খাত্তাব রাদিআল্লাহু আনহুমা বলতেন, ওই ব্যক্তির ব্যাপার বিস্ময়কর যে বিয়ের মধ্যে প্রাচুর্য খোঁজে না। কারণ স্বয়ং আল্লাহ বলেছেন, ‘তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন।’   তুমি যদি বল- রিযিকের মালিক আল্লাহ, আল্লাহই ব্যবস্থা করে দিবেন তাহলে তাদের রাজি করাতে বেগ পেতে হবে। আমাদের সমাজের বেশিরভাগ বাবা মার ঈমানই এখনো সেই পর্যায়ে পৌঁছায়নি।  কংক্রিট একটা প্ল্যান অফ একশন তাদের সামনে উপস্থাপন করতে হবে তোমাকে। মেয়েরা সাধারণত তাদের বাবা, বা ভাইয়ের বিশেষ আদরের হয়। মেয়েরা আল্লাহর তরফ থেকে এক বিশেষ মূল্যবান উপহার। দুনিয়ার দুঃখ,কষ্ট থেকে সযত্নে আগলিয়ে রাখেন তারা, যেন এতোটুকু কষ্ট তাদের মেয়ে তাদের বোন না পায়, যেন কোনো ক্লেদ কোনো গ্লানি তাদের স্পর্শ না করে। রাজা হতে না পারুক নিজে, কিন্তু প্রত্যেক বাবার কাছেই তার মেয়ে একজন রাজকন্যা। রাজকন্যাকে তারা কীভাবে কোনো বেকার ছেলের হাতে তুলে দিবেন? চাল নেই চুলো নেই এমন ছেলের হাতে তুলে দিলে তাদের রাজকন্যা কেমন থাকবে এই দুশ্চিন্তায় উদ্বিগ্ন হওয়া তাদের জন্য কী খুব অস্বাভাবিক কিছু? বিশেষ করে আল্লাহ্‌কে ভুলে যাওয়া চরম ভোগবাদী এই সমাজে ? তুমি আমার কথা শুনে অভিমানে গাল ফুলিয়ে বলতে পারো রাসূলুল্লাহর (সাঃ) যুগে কি এমন হয়নি? কপর্দক, কুৎসিত ছেলের সঙ্গে কি অভিজাত সুন্দরী মেয়ের বিয়ে দেওয়া হয়নি? হয়েছে ভাই। হয়েছে। এতোদূরে যেতে হবেনা, উসমানি খিলাফাতের আমলেও খিলাফাহর পক্ষ থেকেই বেকার যুবকদের বিয়ে দেওয়া হতো। আমাদের দাদা,বাবাদের আমলেও তো বেকার ছেলেদের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিতে এখনকার অভিভাবকদের মতো কেউ অনাগ্রহ পোষণ করতো না। কিন্তু ভাই দেখ, সমাজ পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে এখন।  ভোগবাদিতা জেঁকে বসেছে, আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল, পুত পবিত্রতা, শালীনতাবোধ, আল্লাহর আইন সবকিছুকেই জাদুঘরে পাঠিয়ে ইসলামকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে, মিডিয়া প্রোপাগ্যান্ডার মাধ্যমে   পাশ্চাত্যের  আবর্জনায় মুসলিমদের মস্তিষ্ক ভরে গিয়েছে (এগুলো নিয়ে পরে একসময় বিস্তারিত আলোচনা হবে ইনশা আল্লাহ)। সমাজ আর আগের মতো নেই। আগেকার বাবারা নিজ উদ্যোগেই তাদের বেকার যুবকদের  বিয়ে দিয়ে দিতেন, ছেলের বউকে খাওয়ানোর দায়িত্ব ছেলের ওপর এভাবে চাপিয়ে দিতেন না, আগেকার মেয়ের বাবারাও ছেলেদের ওপর এতোটা জুলুম করতেননা, শুধু চাকুরী থাকলেই হবেনা, সরকারি চাকুরী হতে হবে, বিসিএস ক্যাডার,পুলিশ হলে আরো ভালো, ঢাকায় ফ্ল্যাট থাকতে হবে, গাড়ি থাকতে হবে এইসব অদ্ভূত অদ্ভূত শর্তজুড়ে দিয়ে বিয়েকে জটিল করে ফেলতেন না। ছেলের এখন চাকুরী নেই,ছেলে এখন পড়াশোনা করছে তো কী হয়েছে, একদিন নিশ্চয়ই চাকুরী হবে, আর মেয়ে তো আমার না খেয়ে থাকবেনা, মারা যাবেনা, বেয়ায় সাহেব দেখে রাখবেন। ( শ্বশুরবাড়িতে নারী নির্যাতন নিয়ে কিছু কথা আছে। সেগুলো নিয়েও পরে বিস্তারিত আলোচনার ইচ্ছে আছে ইনশা আল্লাহ) তুমি নিজের বাবা মা, এবং মেয়েদের বাবা মার দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তোলা বন্ধ করে বরং দেখ কেন বিয়ে কঠিন হয়ে গেল। কীভাবে বিয়েটাকে সহজ করা যায়। যখন তাওহীদ, ঈমানভিত্তিক সমাজ ছিল, যখন আল ওয়ালা ওয়াল বারাহর ওপর আমল জারি ছিল, যখন খিলাফাহ ছিল, যখন মুসলিমদের একজন নেতা ছিলেন, যখন মুসলিমরা পাশ্চাত্যের মিডিয়া প্রোপাগ্যান্ডার প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিলোনা বা পাশ্চাত্য ঠিক সুবিধে করে উঠতে পারেনি মুসলিমদের সাথে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে, যখন মানুষের বানানো তন্ত্র মন্ত্রের মাদকে মুসলমান বেহুঁশ হয়ে পড়েনি  তখন বিয়ে সহজ ছিল। ভাই, তুমি গভীরভাবে ভাবো, চিন্তা করো, এগুলো নিয়ে পড়াশোনা করো। কেন তোমার বুকে আজ বর্ষার হাহাকার? কেন অদেখা তার মুখে শ্রাবণের অন্ধকার? কেন তোমাদের মাঝে এই মানুষের দেয়াল ? মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। ‘বিয়ে করে বউকে খাওয়াবি কি’ এই প্রশ্নের একটা কনক্রিট  উত্তর তোমাকে দিতে হবে। সেই সাথে দেন মোহরানার টাকা কোথায় পাবে, কোত্থুকে বিয়ের খরচ জোগাড় করবে সেগুলোর উত্তরও তোমার জানা লাগবে।   একারণেই আমরা বলি, তুমি ফেইসবুকে সারাদিন হাহুতাশ না করে টাকা রোজগারের হালাল কোন উপায় খুজে বের করার চেষ্টা কর। ‘বিয়ে করতে হবে’ এটুকু তোমার উদ্দেশ্য। এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য কী করা যেতে পারে, গন্তব্য পৌছুতে হলে কী করতে হবে তার প্ল্যান শুরু কর। একটু চোখকান খোলা রাখলেই দেখবে ছোটোখাটো ব্যবসা করার অনেক রাস্তা আছে । আর বেকারের কলিজার টুকরা, অন্ধের যষ্ঠী ‘টিউশনি’ তো আছেই। ব্যবসা করো, টিউশনি করো। বিয়ের জন্য টাকা জমাও।  আমার সাথে দুইজন ছেলে পড়তো। ভার্সিটির চার বছরে তারা টিউশনি করে ব্যাংকে প্রায় লাখ পাঁচেক টাকা জমিয়েছিল। ভাই দেখ, বাচ্চা পোলাপান বিয়ের উপযুক্ত নয়। এদের একমাত্র কাজ মায়ের আঁচল ধরে কোনো কিছুর জন্য জিদ ধরা। ‘আমি বিয়া করমু, আমার বউ আইনা দাও তোমরা’ বাসার লোকদের কাছে এই যদি হয় তোমার এপ্রোচ, তাহলে আমি বলব, তুমি বিয়ের চিন্তা মাথা থেকে দূর করে দাও। বাজার থেকে ফিডার কিনে এনে ফিডার খাও। বউ কি মেলায় কিনতে পাওয়া কোনো খেলনা, যে বাবা মার কাছে জিদ ধরবা আর তা তোমাকে এনে দিবেন? নিজের বউয়ের সব খরচ বাবার কাছ থেকে নিতে তোমার লজ্জা করা উচিত, তোমার পৌরুষে আঘাত লাগা উচিত। আল্লাহ্‌র ওয়াদা যে কোনো যুবক যদি নিজের চরিত্র রক্ষার জন্য বিয়ে করতে চাই তাহলে তিনি তাঁকে অবশ্যই সাহায্য করবেন। তুমি টাকা রোযগারের আন্তরিক করো, চেষ্টা কর, দেখবে আল্লাহ কীভাবে তোমার রিযিকে বারাকাহ ঢেলে দেন , কীভাবে সবকিছু সহজ করে দেন। আল্লাহ্‌র ওয়াদা সত্য। কিন্তু তোমাকে তো চেষ্টা করতে হবে। তুমি যদি বাসার মানুষদের সাথে এভাবে শুধু জিদ ধরে থাকো তাহলে ব্যাপক সম্ভাবনা আছে যে তুমি বিয়ে করতে পারবানা। তারা তোমার কথা তারা হেসে উড়িয়ে দিবে, তোমার সাথে রাগারাগি করবে, তোমাকে নিয়ে কৌতুক করবে। ভাববে  এটা বোধহয় পিচ্চি ছেলের নতুন কোনো শখের আবদার। কিছুদিন পরে আবার ভুলে যাবে। যেই সমাজে চাকুরী বা ব্যবসা আছে এমন ছেলেদেরও বিয়ে করা কঠিন হয়ে গিয়েছে, কণ্যার বাপদের মন কিছুতেই গলছে না,  সেই সমাজে  তোমার মতো একজন বেকার,ছাত্রের হাতে কোন ভরসায় একজন বাবা তার মেয়েকে তুলে দিবেন? শুধু আবদার ধরলেই তো হবেনা,জিদ করলেই তো হবেনা, বাস্তবতাও বুঝতে হবে। ধরো তুমি বিয়ের জন্য টাকা জমাতে লাগলে, টিউশনি, ব্যবসা শুরু করলে তাহলে কী হবে? এক.  বিয়ের ফান্ডে টাকা জমবে। পরে এটি বেশ কাজে লাগবে। বিয়ের পর বউয়ের খরচ দিতে পারবে। দুই. তোমার বাবা মা যখন দেখবে যে তুমি এভাবে কষ্ট করছো, সপ্তাহে দুইদিন রোযা রাখছো তখন তাঁরা বুঝতে পারবেন যে না তুমি আসলেই বিয়ে নিয়ে সিরিয়াস। তুমি বিয়ে করতে চাও, অন্তর থেকেই চাও। বাবা-মা, বড় ভাই-বোনদের কাছে তাদের সন্তান, তাদের ভাই কখনো বড় হয়না, সেই গোলগাল নাদুস নুদুস পিচ্চিই থাকে । তোমার এই টিউশনি করা,ব্যসসা করা দেখে তাদের ভুল ভাংবে। তুমি আর সেই পিচ্চিটি নও, তুমি বড় হয়েছো, ম্যাচিউরড হয়েছো সেটা তাঁরা উপলব্ধি করবেন। দেখবে, তারা তোমার বিয়ের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠবেন। সবাই না হলে এক দুইজন অন্ততপক্ষে হবেন। এতেই তোমার বিয়ের কাজ অনেকটাই এগিয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ।   তিন. মেয়ের ফ্যামিলি কিছুটা হলেও তোমার ওপর ভরসা পাবেন। তাঁরাও বুঝতে পারবেন যে তুমি দায়িত্ব নেওয়া শিখেছো, তাদের মেয়ের দায়িত্ব তুমি নিতে পারবে। তোমার সঙ্গে বিয়ে দিলে তাদের মেয়ে অন্তত জলে ভেসে যাবেনা। চলবে ইনশা আল্লাহ ========================================================================= তুমি এক দূরতর দ্বীপ (পঞ্চম কিস্তি) বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম। . সারাদিন বিয়ে বিয়ে করে, বউ নিয়ে ফ্যান্টাসিতে ভুগে পড়াশোনার কথা একেবারে ভুলে যেয়োনা। তার মানে আবার এই না যে সারাদিন ক্যারিয়ার ক্যারিয়ার করবে। মুসলিম কখনো দুনিয়াবি ক্যারিয়ার কেন্দ্রিক হতে পারেনা। দেখ ভাই, ধরো আমি যদি তোমার মা, বোনকে তুলে গালি দিলাম। এখন তুমি কী করবে? আমাকে ‘সাইজ’ করতে গেলে উলটা সাইজ হয়ে যাবে, তোমার পড়াশোনার ক্ষতি হবে এই ভেবে কী তুমি চুপ করে থাকবে? . নিশ্চয়ই থাকবেনা, তাইতো? . এখন দেখো আল্লাহ আমাদের, আমাদের মা বাবার চাইতেও বেশি ভালোবাসেন। আমাদের এতো এতো পাপের পরেও আমাদের আলো বাতাস দিয়ে যাচ্ছেন, অক্সিজেন দিয়ে যাচ্ছেন, আমাদের নিয়ামতের সাগরে ডুবিয়ে রেখেছেন। এখন এই আল্লাহর আইন প্রতিনিয়ত তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হচ্ছে। কাবার চাইতেও আল্লাহর কাছে একজন মুসলিমের রক্ত প্রিয়। আজ সেই মুসলিমদের রক্ত ঝরছে সারাবিশ্বজুড়ে, মুসাহাফ ছিড়ে টয়লেটে ফ্ল্যাশ করে দেওয়া হচ্ছে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করা হচ্ছে সেই সময় কীভাবে একজন মুসলিম দিনরাত ক্যারিয়ার চিন্তায় বিভোর হয়ে থাকতে পারে? বলো ভাই ? . আল্লাহর প্রতি, রাসূলের প্রতি আমাদের ভালোবাসা কী শুধুই লোক দেখানো? শুধুই মিথ্যে দাবী ? . পড়াশোনার অবশ্যই দরকার আছে ভাই। তবে একটু চিন্তা করা দরকার পড়াশোনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে। . এই যে আমরা ফিরিঙ্গিদের দেশ থেকে এতো এতো পিএইচডি নিচ্ছি, এতো জ্ঞান বিজ্ঞান, এতো ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার, বিসিএস ক্যাডার আমাদের, এতো এতো গোল্ডেন এ+ … তারপরেও দেশে কেনো দুর্নীতির মহাউৎসব, কোটি কোটি টাকা লুট, হাজার হাজার টাকা দিয়ে বালিশ কেনা? ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা বৃদ্ধাশ্রম, খুন, ধর্ষণের মহামারি? ছয় সাত বছরের বাচ্চারাও ধর্ষণের হাত থেকে রক্ষা পায়না? মাদকে টাল যুবসমাজ? . খেয়াল করলে দেখা যায় সব বড় বড় চুরি,বাটপারি, কেলেঙ্কারি, বাবা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর মতো জানোয়ারের কাজে এগিয়ে শিক্ষিতরাই।

শিক্ষার উদ্দেশ্যতো ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ। প্রাণী থেকে মানুষ হওয়া। আমরা কেন জানি শিক্ষিত হয়ে উল্টো মানুষ থেকে প্রাণী হয়ে যাই! আলমারী ভর্তি সার্টিফিকেট অর্জন করে শুয়োর,কুকুর কিংবা তার চাইতেও নিচু স্তরে কেন নেমে যায় সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ? . ২৪ ঘন্টার মধ্যে অন্তত ১ ঘন্টা পড়াশোনা করো। দেখবে আল্লাহ্‌ (সুবঃ) এই এক ঘন্টার পড়াতেই বারাকাহ দিয়ে দিবেন। রেগুলার পড়াশোনা কর। আল্লাহ্‌র কাছে আমলের পরিমাণ কম হলেও, নিয়মিত করা হয় এমন আমল প্রিয়। আল্লাহ্‌র কাছে দু’আ কর- ইয়া আল্লাহ্‌! আমার এই ১ ঘন্টার পড়াতেই বারাকাহ দিয়ে দাও। আমার হালাল রিযিকের জন্য যথেষ্ট করে দাও। আমার বিয়ের ব্যবস্থা করে দাও’। বাবা মার চোখে পড়ে এমন জায়গায় বসে পড়বা। নিশ্চিত করবা তুমি যে রেগুলার পড়াশোনা কর এটা বাবা মা দেখছেন। উনারা খুশি হবেন। বিয়ের জন্য রাজি করাতে সুবিধা হবে তোমার। . সারাদিন কিন্তু তুমি, আমি দ্বীনের খেদমত করিনা, খেয়াল করলে দেখবে ২৪ টা ঘন্টার বেশির ভাগই আমরা পার করে দেই আলসেমি, ফেইসবুক,মেসেঞ্জার, ইউটিউবে পড়ে থেকে, বিয়ে নিয়ে ফ্যান্টাসি, আড্ডাবাজি আর অনর্থক কাজে। . না দ্বীনের কাজ হয় না দুনিয়ার। ২৪ ঘন্টার মধ্যে মাত্র এক ঘন্টা পড়াশোনা করতে পারবোনা আমরা? রেসাল্ট খারাপ হলে, সেমিস্টার বা বছর ড্রপ হলে জীবনে অনেক জটিলতা সৃষ্টি হবে। এরকম অবস্থায় বেশিরভাগ পোলাপানই হতাশায় মুষড়ে পড়ে। পাললিক মৃত্তিকার মতো ঝুরজুরে হয়ে পড়বে ঈমানী জজবা। . আরেকটা কথা, যদি ছাত্রজীবনে বিয়ে করতে না’ই পারো মানে বাবা মা কোনোমতেই রাজি না হয়, তাহলে এইটা অন্ততপক্ষে বলে রাখো যে পড়াশোনা শেষ হলেই সঙ্গে সঙ্গে যেন বিয়ে দেয়। চাকুরী করতে হবে,বাড়ি করতে হবে এরকম শর্ত যেন দিয়ে না রাখে। শেষবর্ষে এসেই মেয়ে দেখা শুরু করে দিতে বলো। অনেক সময় মেয়ে দেখতেই অনেক সময় চলে যায়। . এখন মনে কর পড়াশোনা শেষ হয়ে গিয়েছে, বেকার চাকুরী পাচ্ছোনা, বিয়েও হচ্ছেনা । তখন কি করবে? . সেই একই প্রসেস। চাকুরীর জন্যে বসে থাকবনা। টিউশনি করাবো, ব্যবসা করবো। বাবা মাকে বোঝাবো। . এখানেই আমাদের অনেক শিক্ষিত ভাইয়েরা ধরা খেয়ে যান। ছোটোবেলা থেকেই আমাদের মন মগজে একদম খোদাই করে দেওয়া হয় যে, কলম পিষে বড়লোক হতে হবে। লেখাপড়া করে যে ঘাড়িঘোড়া চড়ে সে। ভাইয়েরা পড়াশোনা শেষে চাকুরী না পেলে বেকার বসে থাকবে বছরের পর বছর, তবু ব্যবসা করতে চাইবে না। এতো এলার্জি ব্যবসার প্রতি-ব্যবসায় যদি করা লাগে তাহলে এতো পড়াশোনা করলাম কেন। তাহলে এতো পড়াশোনা করলাম কেন। তাও আবার শুধু চাকুরী পেলে হবেনা, সরকারি চাকুরী। পিওনের চাকুরী হোক, সমস্যা নেই তাও সরকারী চাকুরী লাগবে। জমি-জমা বিক্রী করে লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে হোক তবু সরকারি চাকুরী লাগবে। . কোটি কোটি বেকারের এই দেশে সরকারি চাকুরী পাওয়াতো আর মুখের কিছু না। আদা জল খেয়ে সবাই সরকারি চাকুরীর পড়া পড়ে, তোতাপাখির মতো সাধারণ জ্ঞান নামের ফালতু জিনিস মুখস্ত করে, কবি সাহিত্যিকদের জন্মদিন,মৃত্যুদিন মুখস্ত করে , বছরের পর বছর চলে যায়, মাথার চুল পরে চান্দু হয়ে যায়, চাকুরী আর হয়না। শরীর তো আর বসে থাকেনা। শরীরের ক্ষুধা ঠিকই লাগে। ভালো ছেলেগুলো সবর করে। নিজেকে পবিত্র রাখার চেষ্টা করে। বাকিরা পর্ণ হস্তমৈথুন বা লিটনের ফ্ল্যাটে ক্ষুধা মেটায়। হতাশার গহীনে গভীরে ডুবে যায়। কেউ মেয়ে বিয়ে দেয়না দেখে এমন ভাষায় মেয়ের বাপ ভাইদের গালি দেই যে তা শুনলে ওদের চৌদ্দগুষ্ঠি কবর ছেড়ে উঠে আসবে। . ভাই দেখ, এরকম একটা চিন্তা আমাদের অনেকের মাথাতেই আসে যে এটা তো পুরোপুরি সমাজের দোষ, সমাজই তো এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করেছে যেখানে চাকুরি (বিশেষ করে সরকারি) ছাড়া টিকে থাকা কষ্টকর। সমাজের মানুষজনই তো ঠিক করে দিয়েছে বিয়ের উপযুক্ত হবার জন্য, এস্টাব্লিশড হবার জন্য আমার সরকারি চাকুরী লাগবে। এখানে তো দোষ পুরোপুরি সমাজের। আমাদের কোনো দোষই নেই ! ঠিক? . ভুল! . ভাই তুমি দেখতো, যাদের চাকুরী নেই, যারা ব্যবসা করে, যারা কৃষিকাজ করে,মুরগীর খামার দেই, মাছ চাষ করে তাদের কি বিয়ে হয়না? হয়। তাদেরকে কে মেয়ে দেয়? তুমি, আমি সরকারি চাকুরি না করলেও কি তারা তোমাকে আমাকে মেয়ে দেবেনা? যেই লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে, নেতার পেছনে ঘুরে ঘুরে আমি চাকুরী পাবার চেষ্টা করছি, সেই টাকা দিয়ে ব্যবসা করলে হতোনা? আল্লাহর জমিন অনেক প্রশস্ত। তাঁর ওপর ভরসা করে মেহনত করলে, ঠিকই রিযিকের সুন্দর ব্যবস্থা হয়ে যেত ইনশা আল্লাহ। ফুসকাওয়ালা,হালিমওয়ালারা ব্যবসা করে ঢাকা শহরে বাড়ি করে ফেলে আর তুমি আমি আছো চাকুরী (সরকারী চাকুরী) নিয়ে! ভাই দোষ একা সমাজের না। আমরাও দোষী। আমরা ভাব ধরেই বসে আছি। আমাদের অহংকারী মন চিন্তা করে, এতো উচ্চশিক্ষিত হয়ে আমি কেন ঐ চাষাভূষাদের কাজ করব? এসব আমার দ্বারা হবেনা। আমার একটা সম্মান আছেনা ! আমার বাবা ওমুক আমার চাচা তমুক! আমি সম্ভ্রান্ত বংশের ছেলে আর আমি কিনা না আমার দ্বারা এসব হবেনা! . এই আত্মসম্মানই খেলো আমাদের! ধামড়া ছেলে হয়েও বাবার কাছে হাতখরচের টাকা নিতে আমাদের আত্মসম্মানে লাগেনা! বছরের পর বছর বেকার জীবন কাটাই, কিছু করার মুরোদ হয়নি আমাদের – এখন আমাদের আত্মসম্মান কোথায় থাকে? আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশী যখন খোঁচা মেরে কথা বলে, বাবা মা’র মাথা হেঁট হয়ে যায় তখনই বা কোথায় থাকে আমাদের আত্মসম্মান? সরকারি চাকুরি আমরা শুধু এই জন্যেই চাইনা যে এর ফলে মেয়ের বাপদের মন গলবে, আমাদের হাতে মেয়ে তুলে দিবে। আমরা এজন্যে চাই যে সমাজের লোকদের সাথে যেন ভাব মারতে পারি, আমার হাতে অনেক ক্ষমতা থাকে, আমি পুলিশ, আমি বিসিএস ক্যাডার … আহ! ভাবই আলাদা! ইয়ো ম্যান,আই এম দ্যা বস…! সমাজের আর দশজন মানুষের মতো নই আমি, আমি আলাদা, অন্যরকম আভিজাত্যের অধিকারী। সরকারি চাকুরী ছাড়াও বিয়ে করা যায়।বাংলাদেশের অধিকাংশ লোকই সরকারি চাকুরী ছাড়া বিয়ে করে।(এখানে মেয়ের বাপদেরও দোষ আছে। এগুলো নিয়ে পরে আমরা একটা সিরিজ করব ইনশা আল্লাহ।) . দেখ ভাই, দোষ অনেকেরই আছে। কিন্তু দোষ ধরার সময় আগে নিজেরটাই ধরা উচিত। নিজেদের দোষ খুজে বের করব, ঠিক হব নিজেরা, তারপর এই সমাজ, এই পৃথিবীকে বদলে দেব ইনশা আল্লাহ, তাইতো? . বিয়ে একটি ইবাদাত। নামায, রোযা, হাজ্জ যাকাতের মতোই একটি ইবাদত এটি। ছাত্রাবস্থায় বেকার অবস্থাতেই বিয়ে করা যায়। মেয়েও পাওয়া যায়। চোখ কপালে তুইলোনা আমার এই কথা শুনে। . মেয়ের বাপেরা তোমার হাতে মেয়ে তুলে দেয়না দেখে তুমি তাঁদের বকাঝকা করো, সমাজকে কষে গালি দিয়ে মনের সুখ খোঁজো। সাহাবীদের উদাহরণ টানো। কতো সহজেই তাঁদের বিয়ে হয়ে যেত, অভিজাত, রূপবতী মহিলারা নিঃস্ব, পথের ফকির সাহাবীদের বিয়ে করতেন। জ্বী,এগুলো সবই সত্যি। ঐ যুগ আর এ যুগের আকাশ পাতাল তফাত। কেন তফাত সেটিও আমরা আলোচনা করেছি। কীভাবে অবস্থা পরিবর্তন করতে হবে সেটা নিয়েও কথা বলেছি। তুমি সেগুলো না করে শুধু ঘ্যানঘ্যানে সুরে এই ভাঙ্গা রেকর্ড বাজিও না প্লিজ। অনেক পুরুষ সাহাবীতো বিধবা, বয়সে বড়, অসুন্দর নারীদেরও বিয়ে করেছেন। তুমি একটু খুঁজে দেখ, আশেপাশে অনেক অল্পবয়স্কা বিধবা, ডিভোর্সড মেয়েদের পাবে। তুমি তাঁদের বিয়ে করে নাও। এতীমখানায় যাও। অনেক মেয়ে পাবে। তাদের বিয়ে করো। তোমার আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে খুঁজে দেখ– মেয়ে পাবে। আশেপাশের পরিচিতদের মধ্যে খোজাখুজি করলেও তুমি মেয়ে পাবে। বেকার অবস্থায়, ছাত্রাবস্থাতেই তোমার সঙ্গে বিয়ে দিবে। তুমি তাদের বিয়ে করে নাও। . দেখ ভাই আমরা কী করি, আমরা সমাজের স্ট্যাটাসকে প্রাণভরে গালি দেই। গালি দিয়ে আবার সমাজের সেই স্ট্যাটাসকেই আঁকড়ে ধরি। আমরা দশ বারোটা ফিল্টার বসাই। অমুক এলাকার মেয়ে লাগবে, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার লাগবে, ফ্যামিলি মিলতে হবে, সোশ্যাল স্ট্যাটাস মিলতে হবে ইত্যা ইত্যাদি। প্লাস সুন্দর, ফর্সা এসব তো আছেই। এই ফিল্টার সবগুলা রেখে আমরা কীভাবে আশা করি যে আমাদেরকে সমাজের বর্তমান অবস্থায় ‘প্রতিষ্ঠিত’ হবার আগে বিয়ে দেয়া হবে? এই বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে ভাই। সমাজ পরিবর্তনের জন্য কোন পদক্ষেপ নিজে না নিয়ে আমরা কীভাবে এটা আশা করবো যে সমাজবাস্তবতা এমনি এমনি বদলে যাবে? একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখব পৃথিবী বদলে গিয়েছে? আমরা বিয়ে করতে চাই, তারমানে মোটামুটি আমাদের একটা ম্যাচুইরিটি এসেছে। এসব তো বোঝার কথা আমাদের! . ভাই, নিজের কাছে একটু সৎ হলে দেখব, আসলে দিনশেষে ইসলাম ব্যবহার করে আমরা সুবিধা নিতে চাই। অভিজাত সুন্দরী মহিলারা গরীব সাহাবীদের বিয়ে করেছেন এটা আমরা ফোকাস করি, চাই যে সমাজ এটার ওপর আমল করুক। কিন্তু অনেক পুরুষ সাহাবা যে সহায় সম্বলহীনা নারীদের বিয়ে করতেন সেটার ওপর আমরা আমল করতে চাইনা। আমরা চাই মেয়ের বাপেরা স্যাক্রিফাইস করে, মেয়ের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তায় ফেলে আমাদের সাথে যেন বিয়ে দেয়, কিন্তু আমরা চাইনা সাহাবীদের মতো স্যাক্রিফাইস করতে– নিজের কমফোরট জোন থেকে বের হয়ে বিধবা, ডিভোর্সড, এতীমখানার কোনো মেয়ে বা কম অবস্থা সম্পন্ন ফ্যামিলির কোনো মেয়েকে বিয়ে করতে। ‘বিয়ে তো জীবনে একবারই হয়, সমাজে আমার ফ্যামিলির একটা স্ট্যাটাস আছেনা, আমি কেন এরকম মেয়েদের বিয়ে করতে যাব’-এরকমভাবে চিন্তা ভাবনা করি তোমরা। ওয়েল, মেয়েদের বাপ ভাইদেরও তো সমাজে একটা স্ট্যাটাস আছে, তারা কেন আমাদের মতো ছাত্র/ বেকার ছেলের হাতে মেয়েকে তুলে দিবে? তাদের মেয়ের বিয়েও তো একবারই হবে? আমরা জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবো এমন গ্যারান্টি কি কোথাও আছে? আমাদের চাইতে সামাজিক অবস্থান একটু নিচুতে এমন ঘরে বিয়ে করতে আমাদের অস্বস্তি লাগলে, কেন মেয়ের বাপ/ভাইদের বেকার/ছাত্র পাত্রের হাতে মেয়ে তুলে দিতে অস্বস্তি লাগবেনা ? . এখানে কেউ হয়তো বলবে যে নারী সৌন্দর্য, বংশ, অর্থের দিকে ফোকাস করা তো জায়েজ, হাদিসে আছে। হ্যাঁ এটা সত্য। কিন্তু যখন বিয়ে করাটা আমাদের দ্বীন বাঁচানোর জন্য দরকার, গুনাহ থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য দরকার, এবং যখন আমরা জানি যে এই সমাজে বিয়ে কঠিন তখন আদৌ এই অজুহাত কি দেওয়া যায়? এই সবকিছুই আমরা হয়তো পাব, মেয়ে রূপকথা পাতা থেকে উঠে আসা ডানাকাটা পরীর মতো হবে, আমরা যে এলাকার চাই সে এলাকারই হবে, ফ্যামিলির স্ট্যাটাসও মিলবে কিন্তু সে ক্ষেত্রে বিয়ে করতে ৩০/৩৫ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগবে। তাহলে অপেক্ষা করতে থাকো, মেনে নাও, আর কানের কাছে সারাদিন ঘ্যানঘান করা বাদ দাও। . ভাই আমরা কেন এটা নিপাতনে সিদ্ধ ধরে নিছি যে শুধু মেয়েপক্ষই স্যাক্রিফাইস করবে? কেন আমি স্যাক্রিফাইস করবোনা? কেন তুমি করবেনা? কিছু মনে করোনা ভাই, এটা কিন্তু একধরণের ভন্ডামি। চলবে ইনশা আল্লাহ…

=========================================================================  

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন!

 

আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে  জানতে  লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।

আইডিসি  মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আপনি আইডিসি  মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।