যৌন সমস্যার জন্য রুকইয়াহ: ইসলামিক দৃষ্টিকোণ ও প্রতিকার

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার

Ruqyah of Sexual Problem

আমাদের সমাজে কিছু এমন সমস্যা রয়েছে যা নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা করা কিছুটা সংবেদনশীল। কিন্তু সমাধানের জন্য আলোচনা অপরিহার্য। আজ আমরা দুটি এমন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করব যা শয়তানের প্রভাব বা জাদুর কারণে হতে পারে এবং এর রুকইয়াহভিত্তিক প্রতিকার জানব। সমস্যাগুলো হলো: ১. ইস্তিহাযা বা অনিয়মিত স্রাবের যাদু এবং ২. স্ত্রীসহবাসে অক্ষম করার যাদু।

১. ইস্তিহাযা বা অনিয়মিত স্রাবের যাদু

ইস্তিহাযা বলতে স্বাভাবিক মাসিক চক্রের বাইরে রক্তপাতকে বোঝায়। সাধারণত মাসিকের মেয়াদ সর্বনিম্ন ৩ দিন থেকে সর্বোচ্চ ১০ দিন হয়ে থাকে। যদি কোনো নারীর এর ব্যতিক্রম হয়, যেমন- রক্তপাত সব সময়ই চলতে থাকে অথবা মাসে ২০-২৫ দিন ধরে চলতে থাকে, তবে এটি হায়েয নয় বরং ইস্তিহাযা। এটি কোনো শারীরিক অসুস্থতাও হতে পারে, তবে অনেক ক্ষেত্রেই এটি শয়তানের প্রভাব বা জাদুর কারণে ঘটে।

হাদিসের প্রমাণ: এক মহিলা সাহাবিয়ার ইস্তিহাযার সমস্যা ছিল। এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: «هَذَا مِنَ الشَّيْطَانِ» “এটা তো শয়তানের আঘাতের জন্য হয়েছে।” (সুনানে তিরমিযী, হাদিস: ১২৮; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২৯৪)

ইস্তিহাযার জন্য রুকইয়াহ: সাধারণত ইস্তিহাযা মেডিকেল কারণে না হলে শয়তানের রক্তের মাঝে দৌড়াদৌড়ি করে আঘাতের কারণে অথবা জাদুর কারণে হতে পারে।

২. সহবাসে অক্ষম করার যাদু

এই সমস্যাটি স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জন্যই হতে পারে এবং এর প্রভাব বিভিন্ন রকম হতে পারে:
১. ইন্টারকোর্সের সময় দুজনের কেউ অনুভূতিহীন হয়ে যাওয়া।
২. একজন অন্য কোনোভাবে বাধা দেওয়া, যার ওপর নিজেরই নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
৩. ইন্টারকোর্সের সময় জরায়ু থেকে রক্ত বের হওয়া।
৪. স্বামীর ক্ষেত্রে এমন হতে পারে যে, অন্য সময় স্বাভাবিক থাকে, কিন্তু স্ত্রীর সাথে মিলনের সময় ইরেকশন হয় না।

লক্ষ্যণীয়: এই জাদুর কারণে অনেক সময় পুরুষের স্বাভাবিক যৌনক্ষমতাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই প্রয়োজনে রুকইয়ার পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সহবাসে অক্ষম করার জাদুর জন্য রুকইয়াহ:

১. জ্বিনের মাধ্যমে যাদুর কারণ নির্ণয়: যেহেতু এই যাদু অনেক সময় জ্বিনের সাহায্যে করা হয়, তাই রুকইয়া করতে গিয়ে রোগীর ওপর জ্বিন চলে আসলে জিজ্ঞেস করে নিতে হবে যে যাদুর জিনিসগুলো কোথায় আছে। এরপর জ্বিনকে যথাযথ পদ্ধতিতে বিদায় করতে হবে।

২. পানি দিয়ে গোসল ও পান: সূরা ফাতিহা একবার, সূরা আলাম নাশরাহ (সূরা ইনশিরাহ) একবার, সূরা আ’রাফের আয়াত ১১৭-১২২ তিনবার, সূরা ইউনুসের আয়াত ৮১-৮২ তিনবার, সূরা ত্বহার আয়াত ৬৯ তিনবার, সূরা ফালাক সাতবার এবং সূরা নাস সাতবার পড়ে পানিতে ফুঁ দিতে হবে। এরপর এই পানি এক সপ্তাহ পান করতে হবে এবং এটা মিশিয়ে গোসল করতে হবে। ইনশাআল্লাহ সুস্থ হয়ে যাবে।
* সূরা ফাতিহা: * ﴿بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ﴾ * ﴿الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ﴾ * ﴿الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ﴾ * ﴿مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ﴾ * ﴿إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَعْتَسِينُ﴾ * ﴿اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ﴾ * ﴿صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ﴾
* সূরা আলাম নাশরাহ (ইনশিরাহ): * ﴿أَلَمْ نَشْرَحْ لَكَ صَدْرَكَ﴾ * ﴿وَوَضَعْنَا عَنكَ وِزْرَكَ﴾ * ﴿الَّذِي أَنقَضَ ظَهْرَكَ﴾ * ﴿وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ﴾ * ﴿فَإِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا﴾ * ﴿إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا﴾ * ﴿فَإِذَا فَرَغْتَ فَانصَبْ﴾ * ﴿وَإِلَىٰ رَبِّكَ فَارْغَبْ﴾
* সূরা ফালাক (৭ বার): * ﴿قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ﴾ * ﴿مِن شَرِّ مَا خَلَقَ﴾ * ﴿وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ﴾ * ﴿وَمِن شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ﴾ * ﴿وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ﴾
* সূরা নাস (৭ বার): * ﴿قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ﴾ * ﴿مَلِكِ النَّاسِ﴾ * ﴿إِلَٰهِ النَّاسِ﴾ * ﴿مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ﴾ * ﴿الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ﴾ * ﴿مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ﴾

৩. বরই পাতার গোসল: যদি জাদুর কারণে কারো যৌন সক্ষমতা নষ্ট হয়, তবে এর চিকিৎসায় সাতটি তাজা সবুজ বরইয়ের পাতা পাটায় পিষতে হবে। এরপর বালতিতে পানি নিয়ে সেখানে ওইটা গুলাতে হবে। এরপর এই আয়াতগুলো পড়ে বারবার ফুঁ দিতে হবে: আয়াতুল কুরসি সাতবার, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস তিনবার করে। এরপর ওই পানি থেকে সামান্য পান করতে হবে এবং বাকিটা দিয়ে গোসল করতে হবে। এই পানির সাথে অন্য পানি মেশানো যাবে না এবং পানি গরমও করা যাবে না। ইনশাআল্লাহ প্রথম গোসলেই যাদু নষ্ট হয়ে যাবে। তবুও পরামর্শ থাকবে যে, তিনদিন এই নিয়মে গোসল করুন। বরই পাতা না পেলে কর্পূরের পাতা অথবা নিম পাতা ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে বরইয়ের পাতাই অধিক পছন্দনীয়। (লক্ষ্যণীয়: এই পদ্ধতির গোসল অন্যান্য জাদুর চিকিৎসাতেও খুব কার্যকরী।)

উপসংহার: ইসলামী রুকইয়াহ শরয়ী পদ্ধতিতে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি কার্যকর উপায়। তবে, শারীরিক সমস্যা মনে হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াও আবশ্যক। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকল প্রকার ক্ষতি ও শয়তানের প্রভাব থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

✍️ লিখেছেন:মাহবুব ওসমানী


মাহবুব ওসমানী — একজন ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক এবং IslamiDawahCenter.com এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি কুরআন ও সহীহ হাদীসভিত্তিক বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 

To learn more, comment below or message us on wa.me/+966549485900 or  wa.me/+8801716988953 or call us at +44-73801-27019. Email at hi@islamidawahcenter.com

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন।

Related posts

মুখতাসার রুকইয়াহ শারইয়্যাহ / Ruqyah-Shariyah !

by IDCAdmin
6 years ago

Ruqyah-For-Baby / বাচ্চাদের অসুস্থতার জন্য ইসলামিক চিকিৎসা তথা রুকইয়াহ বা ঝাড়ফুঁক

by IDCAdmin
6 years ago

Jinn Satan – শয়তান জ্বীন এবং রুক্বিয়াঃ কুরআন এবং হাদীসের আলোকে আলোচনা

by IDCAdmin
4 years ago
Exit mobile version