শব ই বরাত আসলেই এক শ্রেণীর লোক প্রবল বিক্রমে ঝাপিয়ে পড়েন, বিদাত বিদাত আর্তচিৎকার করতে,করতে, কত তথ্য, কত তত্ত্ব যে তারা জাহির করেন, তাদের হাব ভাব হব্বি তম্বি শুনে মনে হবে মার মার, কাট কাট রবে তারা কথিত তথাকথিত বিদাতিদের সহিত তারা ধর্ম যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছেন।
.
মেরে কেটে রক্তের দরিয়া বহিয়ে তারা আমাদেরকে নতুন করে তাদের ভার্সন মুসলিম বানাতে।
.
খুঁজ নিয়ে দেখুন এক প্রজন্ম আগে তাদের বাবা তাদের দাদা শব ই বরাত পালন করতেন, খুঁজ নিয়ে দেখুন তাদের বাবা পীর দাদা পীর, তাদের উস্তাদ তাদের দাদা উস্তাদ সবাই শব ই বরাত পালন করে গেছেন।
.
এই প্রশ্নে জবাবে তারা আল কোরানের সুরা বাকারার ১৭০ নং আয়াত থেকে রেফারেন্স দেয়। “তাদের যখন বলা হয়, আল্লাহ যে বিধান নাযিল করেছেন তা মেনে চলো, জবাবে তারা বলে, আমাদের বাপ-দাদাদের যে পথের অনুসারী পেয়েছি আমরা তো সে পথে চলবো।”
.
এই আয়াত ধরিয়ে তারা সহজ সরল মুসলিমদেরকে বিভ্রান্ত করে ফেলে।
এই আয়াত আজ থেকে ১৪ শত ৫০ বছর পূর্বে মক্কার কাফির পিতা মাতার প্রেক্ষাপটে আল্লাহ তালা নাজিল করেছিলেন। যার অর্থ হচ্ছে তোমাদের কাফির পিতা মাতার পথ অনুসরণ করতে পারবেনা, তোমরা আল্লাহর বিধান অনুসর করতে হবে।
.
আমার প্রশ্ন, এক প্রজন্ম আগে আমাদের পিতা মাতা, পীর দাদা পীর, উস্তাদ দাদা উস্তাদ তারা কি কাফির ছিলেন?
.
না। আমি দৃঢ়তার সহিত বলবো আমাদের বাবা মা, পীর দাদা পীর, উস্তাদ দাদা উস্তাদ অবশ্য ইমানদার মুমিন মুসলিম ছিলেন। তাদের ইমান আমল ইলিম আমাদের চেয়েও শ্রেয় ছিলো। তাই সুরা বাকারার ১৭০ নং আয়াত দিয়ে আমাদের বাপ দাদাকে বিচার করা যাবেনা।
.
১ সহি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত ১৫ ই শাবানের বাস্তবতা আছে।
২ সহি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে শাবান মাসে বেশি বেশি এবাদত বন্দেগী করা যায়।
৩ হাদিসের পরিভাষায় জইফ বা দূর্বল হাদিস দ্বারা নফল এবাদ বন্দেগী করা হারাম নয়।
৪ হাদিসে নাই থাকুক, বিশেষ দিনে গরীব মানুষদের কিছু ভালো খাবার খাওয়ালে তাতে পূন্য ছাড়া গুণাহ নেই।
.
বড় ঈদে পশু কোরবানি মূল উসুল কি? মুল উসুল গরীব মিসকিন যারা সারা বছরে গোস্ত কিনে খেতে পারেনা,তাদেরকে বছরের একদিন ভালো কিছু খাবারের ব্যবস্থা করা নয় কি?
.
ঈদ উপলক্ষ্যে আল্লাহ তালা নির্দেশ দিয়েছেন যে হাত পাতে আর যে হাত পাতেনা উভয়কে কোরবানি গোস্ত দিতে, কারণ সেটা তাদের হক।
তাহলে আল্লাহর সুন্নাহ আমরা কেন বছরের অন্যান্য দিন অনুসরন করে গরীব মিসকিনদেরকে খাওয়াতে পারবোনা?
.
অবশ্য যারা সারা বছর নামাজ আদায় করেনা, রোজা আদায় করেনা, হারাম কামাই করে, তারা তাদের গুণাহ মাফের জন্য শব ই বরাত কে উপলক্ষ্য বানায়, তাহলে তা হবে অন্যায়।
.
যদি কেউ নামাজ আদায় করেন রোজা আদায় করেন, জাকাত আদায় করেন, ইসলাম বিরুদ্ধ কিছু করেন না, সব সময় কিছু কিছু নফল এবাদত করেন, সে রকম ব্যক্তি যদি শব ই বরাতের রাতে অতিরিক্ত এবাদত বন্দেগী করেন তাহলে তা কেন বিদাত হবে?
.
আমরা যদি ইসলামি শরিয়াহর উৎপত্তি আর বিকাশের ইতিহাসে গভীর মনোযোগ দিয়ে পাঠ করি তাহলে দেখতে পাবো যে ,
রাসুল সাঃ জামানায় উম্মাহ যখন যে সমস্যার কবলে পড়েছিল, তার সমাধানের জন্য তারা রাসুল সাঃ এর কাছে এসেছেন, রাসুল সাঃ তাদের সমস্যার সমাধান দিয়েছেন। রাসুল সাঃ এর কাছে সমাধান না থাকলে, তিনি আল্লাহর ওহির অপেক্ষা করতেন, ওহির মাধ্যমে সমাধান করতেন ।
রাসুল সাঃ জীবিত থাকতেই অসিয়ত করে গিয়েছেন যে, উনার পরে যেন মুসলিম উম্মাহর সমস্যার সমাধান করে আল কোরান আর রাসুল সাঃ সুন্নাহ থেকে।
.
কিন্তু আমরা জানি যে রাসুল সাঃ ওফাতের পর মুসলিম সাম্রাজ্যের বিস্তারের সাথে সাথে অনেক ধরনের নতুন নতুন সমস্যা খলিফাদের সামনে এসেছিলো, খলিফারা কখনো নিজের প্রজ্ঞা খাটিয়ে সমাধান দিয়েছেন, কিংবা মজলিসের বিজ্ঞ ব্যক্তিদের পরামর্শে সমাধান দিয়েছেন।
খলিফাদের পরবর্তী সময়ে সাহাবীকেরামগণ, প্রথমে কোরানে সমাধান আছে কিনা চেক করতেন, কোরানে না পেলে রাসুল সাঃ সুন্নাহয় আছে কিনা চেক করতেন, সেখানে না পেলে খলিফাদের সুন্নাহয় আছে কিনা চেক করতেন, সেখানে না পেলে তারা কিয়াসের মাধ্যমে ইজমার মাধ্যমে নতুন সমস্যার সমাধান করেছিলেন। যুগের সমস্যা সমাদানের এই ধারা তাবে তাবেঈন পর্যন্ত বহাল ছিলো। এই সময় পর্যন্ত সময়কালকে খায়রুল কুরুন বলা হয়।
.
এই তিন প্রজন্মের পর মুসলিম উম্মাহ কোন ওহি পেলেন যে, সে ওহির ফলে ইজত্তেহাদের দরজা বন্ধ করে দেয়া হলো?
.
আমার প্রশ্ন প্রথম তিন প্রজন্ম যদি ইজত্তেহাদের অধিকার লাভ করে থাকেন তাহলে পরবর্তী সেই দরজা কেন বন্ধ করা হবে?
.
৯৯ বছরের আইন দিয়ে কি কিয়ামত পর্যন্ত ইসলামী বিশ্বকে পরিচালিত করা যাবে?
.
এই তত্ত্ব কি অবৈজ্ঞানিক অডায়নামিক সংকীর্ণ নয়?
ইসলাম যদি আন্তর্জাতিক জীবন ব্যবস্থা হয়, তাহলে তাকে অবশ্যি ডায়নামিক, সর্বজনীন হতে হবে। তাকে পৃথিবী সকল ভালো জিনিস এডপ্ট করার ক্ষমতা থাকতে হবে।
.
মুসলিম সম্রাজ্যগুলোর সফলতার ইতিহাস পড়ে দেখুন। এই সফলতার সিড়ি ছিলো ভালো সবকিছু এডপ্ট করার ক্ষমতা।
এই যে জন্মবার্ষিকী, বা শব ই বরাত, চল্লিশা রাসুল সাঃ জামানায় ছিলো না, ছিলো না খলিফাদের আমলে, ছিলো না বলেই কি পরবর্তী সময়ে ভালো কিছু এডপ্ট করা যাবেনা?
.
এক সাথে অনেক মানুষকে খাওয়ানো কি গুনাহর কাজ?
এক সাথে জিকির আজকার করা গুণাহ?
এক সাথে বসে রাসুল সাঃ শানে কথা শুনা গুণাহ?
এক সাথে বসে রাসুল সাঃ শানে নাত শুনা গুনাহ?
এক সাথে বসে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করা গুণাহ?
এক সাথে বসে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করা গুণাহ?
.
আপনারা যদি নামাজ রোজা হজ জাকাতের মধ্যে ইসলামকে আটকে রাখতে চান তাহলে ইসলাম শুধু মাত্র উপাসনা সাক্ষেপ ধর্ম হয়ে থাকতে তাতে উম্মাহর সব ধরনের মানুষের আত্মার খোরাকি থাকবেনা।
.
মানুষ শুধু খাদ্য খায়না, তাদের সাংস্কৃতিক খাদ্যেরও দরকার আছে, তার মনকে সতেজ রাখার দরকার আছে।
.
এই যে আমাদের দেশের শবে বরাত, ইদে মিলাদুন নবী, চল্লিশা, ইত্যাদি যতটুকু না ইবাদত বন্দেগি তার চেয়েও বেশি মানুষের মনের খোরাক লাভের বাহন।
.
কোথাও কিছু শূন্য থাকবেনা। সাংস্কৃতিক শূন্যতা থাকবেনা, ভালো কিছু না পেলে মানুষ মন্দ টাকে গ্রহণ করবে।
.
আরব মুসলিমদের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য আর পাক ভারত উপমহাদেশের মুসলিমদের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য এক নয়। এক পাল্লায় তোলে সমান করা যাবেনা।
.
এখন সিদ্ধান্ত আপনাদের মিলাদ, শবে বরাত গ্রহণ করবেন না বৈশাখী, আম তলা জাম তলা বসন্ত উৎসব, ভ্যালেন্টাইন্স ডে,থার্টি-ফাস্ট নাইট নিউ ইয়ার ইভেন্ট, মংগল শোভাযাত্রা গ্রহণ করবেন।
লোম বাছাই করতে গিয়ে কম্বল বরবাদ করবেন না।
ধন্যবাদ।
.
লেখা ক্রেডিট শ্রদ্ধেয় Munim Siddiqui ভাইয়া।
আসসালামুয়ালাইকুম ও রাহমাতুল্লাহি ও বারাকাতুহ!
আগামী ২১ এপ্রিল রোজ রবিবার (২১.০৪.১৯) আই ডি সি মডেল মাদ্রাসায় পবিত্র লাইলাতুল বারাআত অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সকল ভাইদেরকে এই বরকতময় রাতে উপস্থিত থাকার জন্য আনুরোধ করা যাচ্ছে ।
নিম্নে অনুষ্ঠান সূচি দেয়া হলঃ
১। বাদ আসর খতমে শিফা।
২। বাদ মাগরিব হতে ৮ঃ৩০ পর্যন্ত হালকায়ে জিকির ও খতমে খাযেগান।
৩। রাত ৯ঃ১৫ থেকে ১০ঃ০০ টা পর্যন্ত আলোচনা মাহফিল।
৪। রাত ১০ টায় সালাতুল এশা এবং ১১টায় তাবারুক বিতরন।
৫। রাত ১১ টা হতে সালাতু লাইলাতুল বারাআত, সালাতুল হাজত, সালাতুত তাসবিহ, ও সালাতুত তাহাজ্জুত ২ঃ৪৫ পর্যন্ত।
তারপর দোয়া মুনাজাত ও পরিশেষে সেহরি, আল্লাহ্ আমাদের এই প্রচেষ্টা কে কবুল করুন, আমিন।
আইডিসি মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
আপনি আইডিসি মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.
আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।
কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।
ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।
ইসলামী দাওয়াহ সেন্টারকে সচল রাখতে সাহায্য করুন!
ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার ১টি অলাভজনক দাওয়াহ প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠানের ইসলামিক ব্লগটি বর্তমানে ২০,০০০+ মানুষ প্রতিমাসে পড়ে, দিন দিন আরো অনেক বেশি বেড়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।
বর্তমানে মাদরাসা এবং ব্লগ প্রজেক্টের বিভিন্ন খাতে (ওয়েবসাইট হোস্টিং, CDN,কনটেন্ট রাইটিং, প্রুফ রিডিং, ব্লগ পোস্টিং, ডিজাইন এবং মার্কেটিং) মাসে গড়ে ৫০,০০০+ টাকা খরচ হয়, যা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। সেকারনে, এই বিশাল ধর্মীয় কাজকে সামনে এগিয়ে নিতে সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে আপনাদের দোয়া এবং আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন, এমন কিছু ভাই ও বোন ( ৩১৩ জন ) দরকার, যারা আইডিসিকে নির্দিষ্ট অংকের সাহায্য করবেন, তাহলে এই পথ চলা অনেক সহজ হয়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।
যারা এককালিন, মাসিক অথবা বাৎসরিক সাহায্য করবেন, তারা আইডিসির মুল টিমের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন, ইংশাআল্লাহ।