ভূমিকা
আধুনিক যুগে যখন বৈবাহিক জীবনের চ্যালেঞ্জ প্রতিনিয়ত বাড়ছে, তখন এক “নেককার স্ত্রী” হওয়া কেবল সৌন্দর্যের পরিচায়ক নয়, বরং একজন মুমিন নারীর জান্নাতের পথে প্রধান ধাপ। ইসলামের আলোকে একজন নেককার স্ত্রীর গুণাবলি কী হওয়া উচিত, এ নিয়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ গুরুত্বপূর্ণ হাদীসের মাধ্যমে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
মূল হাদীস
সুনানে নাসায়ী শরীফে ও মুসনাদে আহমদে বর্ণিত একটি সহীহ হাদীসে মহানবী ﷺ নেককার স্ত্রীর চারটি গুণ ব্যাখ্যা করেছেন:
হাদীস:
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ:
“إِذَا صَلَّتِ الْمَرْأَةُ خَمْسَهَا، وَصَامَتْ شَهْرَهَا، وَأَطَاعَتْ زَوْجَهَا، وَحَفِظَتْ فَرْجَهَا، قِيلَ لَهَا: ادْخُلِي الْجَنَّةَ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ شِئْتِ.”
📚 – سُنَنُ النَّسَائِي، حَدِيثُ: ٣٢٣١
📚 – المُسْنَد للإِمَامِ أَحْمَد، حَدِيثُ: ٧٤٢١
অনুবাদ:
আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
“যখন কোনো নারী পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, রমযানের রোযা রাখে, স্বামীর আনুগত্য করে এবং নিজের সতীত্ব হেফাজত করে— তখন তাকে বলা হয়: তুমি জান্নাতের যে দরজা দিয়ে খুশি সেখান দিয়ে প্রবেশ করো।”
এই হাদীসের আলোকে নেককার স্ত্রীর চারটি গুণাবলি:
১. স্বামীর বৈধ আদেশ মান্য করা
نَبِيّ ﷺ বলেছেন যে, একজন নেককার স্ত্রী তাঁর স্বামীর বৈধ (শরিয়তসম্মত) নির্দেশ মেনে চলে।
➡️ কুরআনে এসেছে:
فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِّلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللَّهُ ۚ
“সৎকার্যশীল নারীরা হয় আনুগত্যশীলা, আর গোপনে হেফাজতকারী, যেমন আল্লাহ হেফাজত করেন।”
📖 সূরা আন-নিসা (৪:৩৪)
২. স্বামী তাকালে মুখে প্রশান্তি ফুটে ওঠা
হাদীসে এসেছে, নেককার স্ত্রী এমন হয় যে, স্বামী যখন তাকায় তখন স্ত্রী এমন ভঙ্গিমায় তাকায় বা আচরণ করে— যা দেখে স্বামীর মন খুশি হয়ে যায়।
➡️ এটি ইসলামের গৃহস্থালি জীবনে শান্তি ও ভালোবাসা ছড়িয়ে দেয়।
وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً ۚ
“আর তাঁর নিদর্শনাবলীর একটি এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে জীবনসঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের মাধ্যমে প্রশান্তি লাভ করো এবং তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।”
📖 সূরা রূম (৩০:২১)
৩. স্বামীর শপথ রক্ষা করা
যখন স্বামী কোনো বিষয়ে শপথ করে বসে— তখন স্ত্রী সেই কাজ থেকে বিরত থাকে, যাতে স্বামীর কসম ভঙ্গ না হয়।
এটি একটি দুর্লভ চরিত্রের পরিচায়ক।
➡️ এই ধরনের স্ত্রীর আচরণ স্বামীকে দুনিয়া ও আখিরাতে রক্ষা করতে পারে।
৪. স্বামীর অনুপস্থিতে সততা ও হেফাজত
নেককার স্ত্রী এমন, যে স্বামীর অনুপস্থিতে নিজের ইজ্জত ও স্বামীর সম্পদের হেফাজত করে।
➡️ রাসূল ﷺ বলেন:
“خَيْرُ النِّسَاءِ الَّتِي تَسُرُّهُ إِذَا نَظَرَ، وَتُطِيعُهُ إِذَا أَمَرَ، وَلَا تُخَالِفُهُ فِي نَفْسِهَا وَلَا مَالِهِ بِمَا يَكْرَهُ.”
“সেরা নারী সেই, যার দিকে স্বামী তাকালে খুশি হয়, সে তার নির্দেশ মানে এবং নিজের ও সম্পদের বিষয়ে স্বামীর অপছন্দনীয় কিছু করে না।”
📚 – মুসনাদে আহমদ, হাদীস: ١٨٦٣٢
একজন সত্যিকারের ভাগ্যবান নারী
আজকের সমাজে অনেক নারী আছেন যারা বিবাহিত জীবনের পূর্বেই নিজেকে এমন স্ত্রীর মানসিকতা গঠনে নিয়োজিত রাখেন।
তাঁরা জানেন, একটি ভালো পরিবার গঠনের মূলে আছে একজন নেককার স্ত্রী, যার মাধ্যমে আল্লাহর নেয়ামতের বারিধারা নেমে আসে ঘরে।
উপসংহার
নবীজি ﷺ আমাদেরকে জীবনসঙ্গী নির্বাচনে পরহেযগারি ও দ্বীনের গুণাবলিকে সর্বাগ্রে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
একজন নেককার স্ত্রী যেন স্বামীর জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেয়— এমন নারীরা যদি গড়ে ওঠে, তবে পরিবার, সমাজ ও উম্মাহ উভয়ই আলোকিত হবে।
লিখেছেন:মাহবুব ওসমানী – প্রকাশনা: Islamidawahcenter.com
Mahbub Osmane — একজন ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক এবং IslamiDawahCenter.com এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি কুরআন ও সহীহ হাদীসভিত্তিক বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।To learn more, comment below or message us on wa.me/+966549485900 or wa.me/+8801716988953 or call us at +44-73801-27019. Email at hi@islamidawahcenter.com
আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন।
ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।
আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে বিস্তারিত জানতে লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।
আইডিসি মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।
কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।