The Method of Propagating Islam – ইসলাম প্রচারের পদ্ধতি

The Method of Propagating Islam - ইসলাম প্রচারের পদ্ধতি

The Method of Propagating Islam – ইসলাম প্রচারের পদ্ধতি

 

ইসলাম প্রচারের ৭২টি হৃদয়গ্রাহী পদ্ধতি

▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬
সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য যিনি দ্বীনের পথে দাওয়াত দান কারীর সর্বোত্তম প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন:

وَمَنْ أحْسَنُ قَوْلاً مِمَّنْ دَعاَ إلىَ اللهِ وَعَمِلَ صاَلِحاً وَقاَلَ إنَّنِيْ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ

“ঐ ব্যক্তির চেয়ে আর কার কথা উত্তম হতে পারে যে আল্লাহর পথে আহবান করে এবং সৎ আমল করে। আর বলে নিশ্চয় আমি মুসলিমদের অন্তর্গত।” (সূরা ফুছ্ছিলাত: ৩৩) দরূদ ও সালাম অবতীর্ণ হোক আমাদের সর্বোত্তম আদর্শ ও প্রিয় নবী ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর যিনি এরশাদ করেছেন: ‘যে ব্যক্তি সৎপথে আহবান করে, সে তার অনুসরণকারীর অনুরূপ সওয়াব পাবে।’ (মুসলিম)

অত:পর নিশ্চয় মুসলিম ব্যক্তি একথা ভাল করেই জানে যে, আল্লাহ তাকে দ্বীন দ্বারা সম্মানিত করেছেন এবং তা আমানত হিসেবে তাকে প্রদান করেছেন। নিশ্চয় তিনি তাকে সেই দ্বীন ও আমানত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন

(وَإنَّهُ لَذِكْرٌ لَكَ وَلِقَوْمِكَ، وَسَوْفَ تُسْأَلُوْنَ)

নিশ্চয় এই কুরআন আপনার ও আপনার কওমের লোকদের জন্য উপদেশ স্বরূপ। অচিরেই সে সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসিত হতে হবে।” (সূরা যুখরুফ: ৪৪)

একজন মুসলিম ব্যক্তি অত্যন্ত খুশী হয় যখন সে এই আমানতটি আদায় করত: অন্যদের আল্লাহর পথে হেদায়েতের মাধ্যম হয়।

(قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا، هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُوْنَ)

“বলুন! আল্লাহর অনুগ্রহ ও তার রহমতে তারা আনন্দ করুক। ইহাই তাদের জন্য (সম্পদ) জমা করার চেয়ে উত্তম।” (সূরা ইউনুস: ৫৮)

বর্তমান কালে আল্লাহ প্রদত্ত অনুগ্রহের অন্যতম হল: দাওয়াতের মাধ্যম, উপকরণ ও পথের বিভিন্নতা। যাতে করে প্রত্যেকেই তাতে অংশগ্রহণ করতে পারে এবং তার মর্যাদা ও মহান সওয়াব অর্জন করতে পারে। দাওয়াত প্রদানকারী লক্ষ্য করবে কোন উপকরণটি মাদঊর (দাওয়াত কৃত ব্যক্তি) জন্য উপযুক্ত হবে- সেই সাথে ভিন্ন ভিন্ন ও নতুন নতুন উপকরণের খেয়াল রাখবে। যেমনটি নূহ (আ:) এবং অন্যান্য নবীদের পদ্ধতি ছিল। দাঈর উচিত, যাদেরকে সে দাওয়াত দিবে তাদের স্তর ও তাদের অবস্থান সমূহের খিয়াল রাখবে। যাতে করে দাওয়াত সবাইকে শামিল করে। যাদেরকে দাওয়াত দেয়া হয় তারা মূলত: পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, চাকর-বাকর, সেবক-সেবিকা, ভ্রমণকারী, প্রতিবেশী ও সাথী প্রভৃতি। কিছু স্থান রয়েছে যা দাওয়াতের ক্ষেত্র হিসাবে গণ্য করা যায়। যেমন: মসজিদ, ঈদগাহ, মাদরাসা, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, জেলখানা, পার্ক, সমুদ্র সৈকত, বিভিন্ন বৈঠক, খেলার মাঠ, পিকনিক স্পট, হজ্জের তাঁবু, হোটেল, আবাসিক এলাকা, বিমান বন্দর, বিবাহ অনুষ্ঠান কেন্দ্র (কমিউনিটি সেন্টার), বাজার, সেলুন, যানবাহনের বিভিন্ন আধুনিক মাধ্যম। পাসপোর্ট অফিস, লেবার কোর্ট, দূতাবাস, বাণিজ্যিক কেন্দ্র সমূহ… ইত্যাদি। আর দাওয়াতী মাধ্যম যেহেতু ইজতেহাদী বিষয় কাজেই উচিত হবে অপর ব্যক্তির অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হওয়া। নিজে থেকে নতুন কিছু তৈরি করা এবং এ মাধ্যমকে আরও উন্নত করা। সাধ্যানুযায়ী প্রত্যেকের দাওয়াতী কাজ করা উচিত। আল্লাহ আমাদেরকে ও আপনাকে সঠিক পথের হেদায়েত দানকারী বানিয়ে দিন। (আমীন)

দাওয়াতের ৭২টি পদ্ধতি:

❑ পরিবারের মাঝে দাওয়াত:

1. পারিবারিক লাইব্রেরী: (লক্ষ্য রাখতে হবে যেন পরিবারের সকল সদস্যের উপযোগী বই-ম্যাগাজিন, ক্যাসেট তাতে থাকে।)

2. পারিবারিক দেয়ালিকা প্রকাশ: এতে বিভিন্ন ধরণের দাওয়াতী প্রবন্ধ, বিজ্ঞাপন থাকবে। তাতে নতুনত্ব থাকবে এবং পরিবারের সকল সদস্য তাতে শরীক হবে।

3. পারিবারিক দরসের ব্যবস্থা: (এটা নির্দিষ্ট কোন কিতাব থেকে পাঠ দান হতে পারে বা কোন ক্যাসেট শ্রবণ বা কুরআন বা হাদীছ থেকে কিছু মুখস্থ করার মাধ্যমে হতে পারে।)

4. পারিবারিক প্রতিযোগিতা: (পুরস্কার হিসেবে বোর্ডে বিজয়ীর নাম লিখবে অথবা ছোটখাটো পুরস্কার নির্ধারণ করবে)

5. পারিবারিক পত্রিকা: (যদিও তা কোন ম্যাগাজিন বা পত্রিকা হতে বাছাই করা প্রবন্ধও হয়না কেন। এসব লিখনিতে পরিবারের সদস্যরা শরীক হবে।)

6. পরিবারের সামনে সৎ আমল প্রকাশ করা: (যেমন: নামায, কুরআন তিলাওয়াত, ছদকা প্রভৃতি তাদেরকে দেখিয়ে করা যাতে করে তারা আপনার অনুসরণ করতে পারে এবং শিখতে পারে।)

❑ মসজিদে দাওয়াত:

7. মসজিদের পক্ষ থেকে ইসলামী দেয়ালিকা প্রকাশ করার ব্যবস্থা করা।

8. এছাড়াও মসজিদ ভিত্তিক বিভিন্ন দাওয়াতী তৎপরতায় অংশ গ্রহন করা। যেমন: মসজিদ ভিত্তিক লাইব্রেরী, মসজিদ ভিত্তিক কুরআন হিফযের হালকা ইত্যাদি তৈরী করা।

9. ইসলামী বা সাধারণ উপকারী বই-পুস্তক, ক্যাসেট ধার দেয়া বা দাতা মহল থেকে নিয়ে এসে অথবা ক্রয় করে এনে মসজিদে রাখা। (কুরআন সেলফে অন্যান্য বই-পুস্তক রাখা যেতে পারে বিশেষ করে কুরআনের তাফসীর বা তার অনুবাদ রাখা যেতে পারে।

9. বিভিন্ন ইসলামিক আলোচনা সভা, ওয়াজ মাহফিল, দরস প্রভৃতির বিজ্ঞপ্তি মসজিদে মসজিদে পৌঁছিয়ে দেয়া বা প্রচার কার্যে অংশ গ্রহন করা।

10. কোন বক্তা বা আলোচককে মসজিদে দরস বা আলোচনার জন্য দাওয়াত করা।

11. এলাকার মসজিদ কমিটিকে সাথে নিয়ে সমাজ ভিত্তিক দাওয়াতী ও সামাজিক উন্নয়ন মূলক বিভিন্ন তৎপরতায় অংশ গ্রহন করা।

❑ স্কুল/মাদরাসায় দাওয়াত:

12. স্কুল/মাদরাসার দেয়ালিকা বা দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ করার উদ্যোগ গ্রহন করা এবং বাইরের ইসলামী আলোচনা, দরস প্রভৃতির বিজ্ঞাপন ওখানে প্রকাশ করা।

13. ছাত্রদের মাঝে ইসলামী বা সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান করা।

14. ছাত্রদের প্রশ্ন বা অভিযোগ সমূহ একত্র করে বিশেষজ্ঞদের নিকট উপস্থাপন করা।

❑ অন্যান্য দাওয়াতী মাধ্যম সমূহ:

15. সময়োপযোগী দাওয়াতী বক্তব্য বা বাণী সম্বলিত বিভিন্ন বোর্ড স্থাপন করা বা দেয়ালে লকটানোর ব্যবস্থা করা।

16. অভিনন্দন কার্ড, ঈদ কার্ড, বিভিন্ন বৈধ দৃশ্য সম্বলিত কার্ড পত্র যোগে পাঠানোর ব্যবস্থা করা। (যাতে বিভিন্ন ধরণের দৃশ্য এবং সময়োপযোগী ভাল ভাল কথা থাকবে)

17. দাওয়াতী এলবাম তৈরী করা। যাতে থাকবে বিভিন্ন ধরণের হৃদয়গ্রাহী ছবি, প্রকৃতিক দৃশ্য এবং গঠনমূলক ও দিক নির্দেশনা মূলক কথা থাকবে।

18. বিবাহের দাওয়াত কার্ড বিতরণ করার সময় কার্ডটি ছোট-খাট একটি ভাল বইয়ের কভার হিসাবে ব্যবহার করা।

19. যে ব্যক্তিকে দাওয়াত দেয়া উদ্দেশ্য তাকে (যোগ্যতা অনুযায়ী) দাওয়াতী বিষয়ে লেখা কোন প্রবন্ধ বা বই ভাষা গত সম্পাদনা করার জন্য দেয়া এবং তাকে সেটা ছাপানো বা ফটোকপি করে বিতরণের দায়িত্ব দেয়া।

20. মোবাইল ফোন, ইমেইল প্রভৃতির মাধ্যমে (দীনী কোন অনুষ্ঠানের কথা বা ইসলামী আলোচনা প্রভৃতির কথা স্মরণ করিয়ে ) এবং দাওয়াতী চিঠি- পত্র দেয়া।

21. ইন্টারনেটের মাধ্যমে দাওয়াতী কথা বলা। ইন্টারনেট প্রোগ্রামের মাধ্যমে দাওয়াহ বিষয়ক চ্যাটিং বা কথোপকথনে শরীক হওয়া।

22. দাওয়াতী কার্ড বা স্টিকার বিতরণ করা: যেমন সফর ও বাহনে উঠার দুয়া, বিভিন্ন সময়ের যিকর-আযকার। প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা। (এর অন্যতম হল: কিবলা নির্দেশক স্টিকার বিভিন্ন হোটেল প্রভৃতিতে লাগানো। উহা সেখানে অবস্থানরত ব্যক্তিকে নামাযের কথা স্মরণ করাবে।

23. নামাযের ক্যালেন্ডার বের করা।

24. দাওয়াতী কর্মসূচী ও পাঠ্যসূচী সম্বলিত ডায়েরী ও খাতা প্রভৃতি দাওয়াতী কাজে ব্যবহার করা।

25. দাওয়াতী বিষয় সম্বলিত পকেট কার্ড তরী কর। (উহা বিক্রেতার নিকট রাখা যেতে পারে। যাতে করে সে তা ক্রেতাকে বিনামূলে উপহার দিতে পারে।

26. কয়েকটি পকেট কার্ড সম্বলিত দাওয়াতী ব্যাগ তৈরী করে তা বিতরণ করা। তাতে বিষয় ভিত্তিক বিভিন্ন বই-পুস্তক ও লিফলেট রাখা যায়।

27. কোন ব্যক্তিকে কোন ইসলামী পত্রিকার (নিজ অর্থে বা গ্রহকের নিকট অর্থ নিয়ে) গ্রাহক বানিয়ে দেয়া।

28. প্রয়োজনাতিরিক্ত ম্যাগাজিন, ইসলামী বই প্রভৃতি সংগ্রহ করে তা বিতরণ করা বা কারো নিকট পাঠানো।

29. খারাপ ক্যাসেট, খারাপ ম্যাগাজিন, মানুষের কাছ থেকে.. সেলুন প্রভৃতি থেকে উদ্ধার করে তার পরিবর্তে ভালমানের বক্তৃতার ক্যাসেট, ইসলামী ম্যাগাজিন দ্বারা পরিবর্তন করা।

30. দাওয়াতী চয়নিকা। কিছু বই, ক্যাসেট, ঘটনা বা প্রেক্ষাপট উপযোগী যেমন: হাজী, মুসাফির, আগন্তুক, অসুস্থ, ডাক্তার, বন্দী, নারী, শিশু, বর- কনে, ঈদ প্রভৃতিকে কেন্দ্র করে বই/ক্যাসেট প্রস্তুত করা।

31. বিদ্যুৎ, টেলিফোন, পানি প্রভৃতির বিলের সাথে দাওয়াতী প্রচারণা নির্দেশনা প্রকাশ করা।

32. ক্যালেন্ডার, পঞ্জিকা, ব্যবসায়িক প্লাস্টিক ব্যাগ, চাবির রিং, কলম প্রভৃতির মধ্যে দাওয়াতী বাক্য লিখা। এগুলো মানুষ খুব বেশী ব্যবহার করে থাকে। এক্ষেত্রে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে এগুলো করা যায়। তাদেরকে উপযুক্ত বাক্য সমূহ যথাসময়ে সরবরাহ করতে হবে।

33. শ্রেণী ভিত্তিক মানুষের জন্য দাওয়াতী পত্র তৈরি করা। (যেমন মসজিদের প্রতিবেশী, ডাক্তার, শিক্ষক, ছাত্র, সাংবাদিক, পিতা-মাতা, স্বামী বা স্ত্রী, চাকুরীজীবী, ব্যবসায়িক, জেলের আসামী, মুসাফির … )

34. সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা বা নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর বা নির্দিষ্ট লোকদের জন্য প্রতিযোগিতার জন্য বই, ক্যাসেট প্রস্তুত করা বা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। তা বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত হতে পারে। আর এর পুরস্কার দাওয়া সেন্টারে বা দাওয়াতী কোন অনুষ্ঠানে বিতরণ করতে হবে।

35. নিম্ন লিখিত বিষয় সমূহের উপর বই বা ক্যাসেট বা অনুষ্ঠান তৈরি করা: (যেমন- অমুসলিমদের ইসলাম গ্রহনের কাহিনী, বা পাপাচারে লিপ্ত ব্যক্তির তওবার কাহিনীর উপর ভিত্তি করে, কবিতাগুচ্ছ, সাহিত্য, মনিষী চরিত, ভ্রমণ কাহিনী.. দুনিয়াবি বিষয়েও হতে পারে: যেমন- অফিস পরিচালনা, যোগাযোগ, সৃষ্টি জগত, মানুষের শরীর বিষয়ক- যাতে করে যারা সাধারণত: দীনী বই পড়তে চায় না এগুলোর মাধ্যমে তাদের কাছে পৌঁছা সম্ভব হবে।

36. বিভিন্ন দাওয়াহ সেন্টারের সাথে যোগাযোগ রাখা, তাদের অফিস পরিদর্শন করা, তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করা, অন্যদেরকে তাদের পরিচয় ঠিকানা প্রদান করা।

37. দাঈর বা দাওয়া সেন্টারের কর্মকাণ্ডের উপর তাদের প্রশংসা করা। যাতে কারে তাদের ব্যাপারে মাদঊর আগ্রহ সৃষ্টি হয়, তারা সেখানে অংশ গ্রহণ করে।

38. দুআর মাধ্যমেও দাওয়াতী কাজ করা সম্ভব। যেমন বলবে, ‘আল্লাহর কাছে দুয়া করি তোমাকে তিনি জাহান্নাম থেকে দূরে রাখুন। তিনি আমাদেরকে জান্নাতের মাঝে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে অবস্থানের তাওফীক দিন। অথবা ছাত্রের জন্য দুআ করবে: দুআ করি আল্লাহ্‌ তোমাকে দুনিয়া ও আখেরাতের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করুন।

39. কোন সফরে দাওয়াতের জন্য টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে বের হওয়া। এটি একটি সুযোগ তাকে সংশোধন করার হেদায়েত করার। এ ক্ষেত্রে দীর্ঘ সফর খুবই উপকারী হয়ে থাকে।

40. ছালাতে উদাসীন ব্যক্তির সাথে আযানের মূহুর্তে দেখা করতে যাওয়া এবং তাকে সাথে করে মসজিদে নিয়ে আসা।

41. ইসলামী আলোচনা সভায় বা দরসে লোকজনকে সাথে করে নিয়ে আসা।

42. মাসিক খুতবা সমূহকে লিখিত আকারে প্রস্তুত করা। তারপর বিভিন্ন খতীবদের নিকট তা বিতরণ করা, যাতে করে তা থেকে উপকার লাভ করতে পারে।

43. মসজিদের ইমাম ও খতীবদের পরস্পরের মাঝে দাওয়াতী প্রোগ্রাম বিনিময়। যেমন দিন-ক্ষণ নির্ধারণ করে এক ইমাম অন্য ইমামের মসজিদ নির্ধারণ করবে। ছালাত শেষ করেই কিছুক্ষণ ওয়াজ-নছীহত করবে। অথবা খতীবগণ মসজিদ পরিবর্তন করে একজনের স্থানে আরেকজন খুতবা প্রদান করতে পারে। এতে বিষয় বস্তু প্রস্তুত করার জন্য দাঈ বা খতীবগণকে বেশী বেগ পেতে হবে না। কেননা শুধু স্থান পরিবর্তন করে একই বিষয়ের উপর সে আলোচনা করা সুযোগ পাচ্ছে।

44. নামায শেষে মুছল্লীদের জন্য ইসলামী কিতাব পাঠের প্রোগ্রাম। এক্ষেত্রে ফতোয়া প্রভৃতি উপকারী কিতাব সমূহ সাথে রাখবে এবং বিভিন্ন কিতাবের জন্য নির্দিষ্ট দিন নির্ধারণ করে তার দরস দিবে। এ প্রোগ্রাম খুবই সংক্ষিপ্ত হবে। ৭ থেকে ১০ বা ১২ মিনিটের মধ্যে শেষ করতে হবে। যাতে করে মানুষের মাঝে ক্লান্তি না আসে আর ইলমের প্রসারও সংক্ষিপ্ত সময়ে হতে পারে।

45. সাধারণ পরিবহণ সমূহের মাধ্যমে দাওয়াতী কাজ। পরিবহণের ড্রাইভার কন্টাক্টর হেলারদেরকে প্রয়োজনীয় বই, ক্যাসেট, লিফলেট, উপযুক্ত দাওয়াতী উপহার সমূহ যথা সময়ে সরবরাহ করতে হবে। এধরণের সহযোগিতা কারী পরিবহণ শ্রমিক/মালিকদেরকে কৃতজ্ঞতা সার্টিফিকেটও প্রদান করা যেতে পারে।

46. রাস্তার ধারে দাওয়াতী বোর্ড স্থাপন।

47. শহরের বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞাপনের জন্য নির্ধারণ কৃত চল চিত্র স্ক্রিন (টিভি পর্দা) ব্যবহার করা এবং সেখানে আকর্ষণীয় পদ্ধতিতে দাওয়াতী কাজের আঞ্জাম দেয়া।

48. ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী বিক্রয়ের দোকান সমূহকে ব্যবহার করার চেষ্টা করা। যাতে করে তাদের মাধ্যমে দাওয়াতী বিষয় সমূহ প্রর্দশন করা সম্ভব হয়।

49. দাওয়াতী টেলিফোন। যেমন অফিসের টেলিফোন সেটে কোন দাওয়াতী বিষয় রেকর্ড করে রাখা। উক্ত নম্বরে কেউ টেলিফোন করলেই সে তা শুনতে পাবে। অথবা অপেক্ষা করার জন্য যে সময়টুকু ব্যয় হবে তা কাজে লাগানোর জন্য সেক্ষেত্রেও কিছু দাওয়াতী বিষয় রেকর্ড করে রাখা যেতে পারে বা কোন ইসলামী রেডিও সেন্টারের সাথে ফোনের সংযোগ রাখা যেতে পারে। অথবা কোন আলোচনা ও দরস টেলিফোনের মাধ্যমে অফিসে প্রচার করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। অথবা প্রশ্ন, ফতোয়া, পরামর্শ.. প্রভৃতি জিজ্ঞাসা করার জন্য টেলিফোন ব্যবহার করা যেতে পারে।

50. সাধারণ ডাক বা ইমেইলের মাধ্যমে দাওয়াতী কাজ করা। এর উদ্দেশ্য হবে কোন মুসলিমকে নছীহত করা বা কোন নওমুসলিমকে শিক্ষা প্রদান করা বা কোন অমুসলিমকে ইসলামের দাওয়াত দেয়া। (তাদের সাথে সাধারণ পরিচিতির মাধ্যমে বা প্রচার মাধ্যমের দ্বারা তাদের ঠিকানা সংগ্রহ করা যেতে পারে।) আপনার আশেপাশে যারা দূর এলাকা থেকে এসেছে তাদের মাধ্যমে প্রথমে শুরু করবেন। সেই প্রবাসীর চিঠির সাথে একটি দাওয়াতী চিঠিও দিয়ে দিবেন।

51. বর্তমানে মোবাইলের যুগে মোবাইলের মাধ্যমে সামান্য অর্থ খরচ করে দাওয়তী কাজ করা যায়। কোন বিষয়ে সুন্দর একটি এসএমএস একজন মানুষের বন্ধ দরজাকে খুলে দিতে পারে।

52. আরবী ভাষা শিক্ষা দান প্রোগ্রাম। বিভিন্ন কোর্স অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বা ক্যাসেট, বই, লিফলেট ইত্যাদি মাধ্যমে এ কাজ করা যেতে পারে। এ সমস্ত মাধ্যমে দাওয়াতী জন্য টার্গেটকৃত ব্যক্তির প্রয়োজনীয় বিষয় সমূহ সংশ্লিষ্ট করা। যেমন ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং বা ব্যবসা.. প্রভৃতি সংক্রান্ত শব্দ সমূহ।

53. বিভিন্ন ইসলামী কোর্স। (যেমন, দাওয়াতের পদ্ধতি, বক্তৃতা প্রশিক্ষণ, ইমামতী প্রশিক্ষণ, সন্তান লালন-পালন পদ্ধতি… ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে কোর্সের আয়োজন করা।

54. উন্মুক্ত দাওয়াতী দিবস। সেখানে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে। এতে নারীদেরকেও শামিল করা যেতে পারে।

55. মাসিক দাওয়াতী বিষয় বস্তু। তা নির্দিষ্ট করে লিফলেট বা বাণী হিসেবে ছাপিয়ে মসজিদ, মাদরাসা ও স্কুল সমূহে.. বিতরণ করা হবে বা লটকিয়ে দেয়া হবে। যাতে করে বিষয়টি মাসব্যাপী মানুষের আলোচনা-পর্যালোচনার কেন্দ্র বিন্দু হতে পারে।

56. এলাকায় অনুষ্ঠিত সুনির্দিষ্ট দরস সমূহের একটি তালিকা প্রস্তুত করা। তাতে দরসের বিষয় বস্তু, সময়, স্থান ও আলোচকের নাম উল্লেখ থাকবে থাকবে।

57. ওলামায়ে কেরাম, দাঈ, দাওয়াতী বা ইসলামী সেন্টার সমূহ, শরঈ বিষয়ে পরামর্শ দাতা ব্যক্তি প্রভৃতির তালিকা প্রকাশ করা।

58. দীনী সাময়িক পত্রিকা সমূহ, ইসলামী রেকর্ডিং সেন্টার সমূহ, ইন্টারনেটের ভাল ওয়েব সাইট সমূহ.. প্রভৃতির তালিকা প্রকাশ করা।

59. দাওয়াতী কাজের উদ্দেশ্যে ‘পর্যটন ইনডেক্স’ তৈরী। (এতে থাকবে বিভিন্ন শহর বা দেশের প্রসিদ্ধ দাওয়া সেন্টার, লাইব্রেরী, ইসলামী রেকর্ডিং সেন্টার, বড় বড় জামে মসজিদ, সেখানকার প্রসিদ্ধ আলেমদের ঠিকানা… এবং ভ্রমণ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নির্দেশনা।)

60. লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করে জন সাধারণের পড়ার জন্য উন্মুক্ত করা।

61. ইসলামী বই, ক্যাসেট, সিডি ইত্যাদি প্রদর্শনীর আয়োজন করা।

62. ইসলামী বই-পুস্তক ও নিদর্শন সমূহের উপর প্রদর্শনীর আয়োজন করা এবং বিভিন্ন ইসলামী মেলা-প্রদর্শনী সমূহে অংশ গ্রহন করা।

63. দাওয়াতী উপকরণ সমূহের জন্য প্রদর্শণীর আয়োজন করা। সেখানে ছাত্র-ছাত্রীগণ উপকৃত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের মতামত ও পরামর্শের মাধ্যমে সে প্রদর্শণীর মানোন্নয়ন করা।

64. দাওয়াতী কাজের উদ্দেশ্যে ইসলামী সাংস্কৃতিক তাঁবু প্রতিষ্ঠা করা।

65. দাওয়াতী কাজের উদ্দেশ্যে কোন দর্শনীয় স্থানে শিক্ষা সফরের আয়োজন করা।

66. রমাযান মাসে দাওয়াতী ইফতার মাহফিল।

67. হজ্জ-ওমরা প্রশিক্ষণ কোর্স।

68. দাওয়াতী গাড়ি। গাড়ির বিভিন্ন সাইডে প্রয়োজনীয় দাওয়াতী কথা লিখা থাকবে। গাড়িতে প্রয়োজনীয় দাওয়াতী সরঞ্জামাদি থাকবে। ব্যাপক লোক সমাগমের স্থানে গাড়ি গিয়ে পরিবেশ অনুযায়ী ক্যাসেট বা ভিডিও চালাবে, মানুষকে বই, ক্যাসেট, লিফলেট ইত্যাদি বিনামূল্যে বিতরণ করবে বা বিক্রয় করবে।

69. সাধারণ বা ইলেকট্রনিক বোর্ড তৈরি করা। তারপর শহরের উল্লেখযোগ্য স্থানে তা স্থাপন করে বিভিন্ন উপকারী বাণী, দাওয়াতী ঘোষণা বা সংবাদ সমূহ প্রচার করা।

70. দাওয়াহ অফিসের পক্ষ থেকে ক্রীড়া টিম প্রস্তুত করা। (সেখানে বিভিন্ন দাওয়াতী অনুষ্ঠান বা বই/ ক্যাসেট/ লিফলেট ব্যবস্থা রাখা)

71. ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থাপনা বা ফ্রি প্রিসকেপশনের ব্যবস্থা করা। সেই সাথে দাওয়াতী কাজ করা।

72. নারীদের জন্য নির্দিষ্ট কোর্স সমূহে দাওয়াতী প্রোগ্রাম বা উপকরণ সমূহ শামিল করা। যেমন- রান্না শিক্ষা, সন্তান লালন-পালন, সুখী দাম্পত্য জীবন, পারিবারিক অর্থনীতি, চাকরানীদের দীনী শিক্ষা দান, বিবাহের পূর্বে সংসার জীবনের প্রশিক্ষণ, শিশুরোগ সম্পর্কে জ্ঞান দান, পারিবারিক নিরাপত্তা ও ফাস্ট এইড প্রশিক্ষণ.. প্রভৃতি।

আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের প্রত্যেককে আল্লাহর দ্বীনের প্রচারক হিসেবে কবুল করে নেন এবং দ্বীনের উপর মর্যাদা ও সাহসের সাথে পথ চলার তাওফীক দান করেন। আমীন।

আহবান!

প্রিয় বন্ধু, উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো ছাড়া যদি আপনার নিকট আরও নতুন কোন আইডিয়া থাকে দয়া করে মন্তব্যের ঘরে লিখে শেয়ার করুন। হয়ত আপনার এই একটি আইডিয়া ইসলাম প্রচারের দরজাকে উন্মুক্ত করে দিতে পারে যা হবে আপনার জন্য সাদাকায়ে জারিয়া ইনশাআল্লাহ। আরেকটি অনুরোধ, উল্লেখিত পদ্ধতিগুলোর মধ্যে কোন পদ্ধতিগুলো বেশী কার্যকরী মনে হয়েছে সে ব্যাপারে মতামত প্রকাশ করবেন। জাযাকাল্লাহু খাইরান।
———–
“আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক”
ইসলাম প্রচারের ৭২টি হৃদয়গ্রাহী পদ্ধতি
অনুবাদ: শাইখ মুহা: আবদুল্লাহ আল কাফী ও শাইখ আখতরুল আমান বিন আব্দুস সালাম (হাফিযাহুমাল্লাহ)

সম্পাদনায়: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়া এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সঊদী আরব।
পো: বক্স নং ১৫৮০, জুবাইল- ৩১৯৫১ সৌদী আরব।

 

ইসলাম প্রচারে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার

 

বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আগমনের মূল উদ্দেশ্য ছিল মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কর্তৃক প্রেরিত দ্বিনের প্রচার ও প্রসার। নবী করিম (সা.)-এর যুগ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত যুগে যুগে ইসলামের মনীষীরা এই গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে ধর্ম প্রচারে গণমাধ্যম ও প্রযুক্তির মাধ্যমে দাওয়াত মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।

ফেসবুক : আধুনিক যোগাযোগ ও গণমাধ্যমের একটি বিষয় হলো ফেসবুক। এর মাধ্যমে বিভিন্ন সময় প্রয়োজনীয় কথাবার্তা ও বার্তা আদান-প্রদান করা হয়। নতুন প্রজন্মের অন্যতম আকর্ষণ এই ফেসবুক। বর্তমানে এটি অত্যধিক জনপ্রিয় একটি প্রযুক্তি, যা উন্নত যোগাযোগ মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। মুসলমানরা যদি এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ভূমিকা রাখতে পারে, তাহলে এটি ইসলাম প্রচারে নতুন দিগন্তের সূচনা ঘটাবে।

মেইল : নবী করিম (সা.)-এর যুগে দূরদেশে দাওয়াত প্রচারের মাধ্যম ছিল দূতের মাধ্যমে চিঠি প্রেরণ। এরপর পোস্ট অফিসের মাধ্যমে চিঠির দ্বারা বিভিন্নভাবে মুসলমানরা দূরদেশে ইসলামের দাওয়াত প্রচার করেছেন। বর্তমানে আধুনিক যুগে আমরা আরো একটি প্রযুক্তি সচরাচর ব্যবহার করে থাকি, সেটি হলো মেইল। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে একজন ব্যক্তি মুহূর্তের মধ্যে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে ইসলামের দাওয়াত সহজেই পৌঁছে দিতে পারেন।

ইলেকট্রনিক মিডিয়া : আধুনিক প্রযুক্তির আরেকটি দিগন্ত হলো স্যাটেলাইট চ্যানেল। এর মাধ্যমে একজন দাঈ সারা বিশ্বের মানুষের মধ্যে ইসলামী দাওয়াত প্রচার ও প্রসারে ভূমিকা রাখতে পারেন।

ইউটিউবে আপলোড : একবিংশ শতাব্দীর প্রযুক্তির আরেকটি উল্লেখযোগ্য মাধ্যম হলো ইউটিউব। দাওয়াত প্রচার ও প্রসারে আধুনিক প্রযুক্তি সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে। ইন্টারনেটে বিভিন্ন ভিডিও আপলোড ও ডাউনলোড করার উল্লেখযোগ্য একটি ওয়েবসাইট হলো ইউটিউব, যেখানে একজন ব্যক্তি যেকোনো অডিও ও ভিডিও আপলোড করতে পারে। এ বিষয়টিকে আমরা সবাই ইচ্ছা করলে ভালো ভালো কাজে ব্যবহার করতে পারি। কাজেই এটিও ইসলাম প্রচারের উল্লেখযোগ্য একটি মাধ্যম।

ইসলামিক প্রগ্রাম সম্প্রচার : ইসলাম প্রচারের আরেকটি উল্লেখযোগ্য মাধ্যম হলো বিভিন্ন প্রগ্রামের অডিও ও ভিডিও ধারণ করে তা বিভিন্ন গণমাধ্যমের দ্বারা সম্প্রচার করা।

ব্লগ : যোগাযোগ মাধ্যমের একটি বৃহৎ মাধ্যম হলো ইন্টারনেট। এই ইন্টারনেটের মাধ্যমে বর্তমানে বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি বিভিন্ন নামে ব্লগ তৈরি করেন। আর সেখানে তাঁরা নিজস্ব মতামত ও নানা লেখা পোস্ট করে থাকেন। আধুনিক কালে দেখা যায়, অনেক ইসলামী চিন্তাবিদ ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন নামে ব্লগ পরিচালনা করে থাকেন, যেখানে তাঁরা ইসলামপন্থী ও যুবসমাজকে ধ্বংসের পথ থেকে হিদায়াতের পথে আহ্বানের জন্য বিভিন্ন লেখা পোস্ট করেন। এটি নিশ্চয়ই একটি প্রশংসনীয় কাজ।

পত্রিকা ও সাময়িকী : বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের দৈনিক, পাক্ষিক, দ্বিপাক্ষিক ও মাসিক পত্রিকার মাধ্যমে ইসলামী দাওয়াতের বিভিন্ন কলাম প্রকাশের মাধ্যমে দাওয়াতের ক্ষেত্রে বড় ধরনের বিপ্লব সাধন করা সম্ভব, যা অন্য কোনো মাধ্যমে সহজে সম্ভব হয়ে ওঠে না। কেননা পত্রপত্রিকা একেবারে নিম্নশিক্ষিত থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পর্যন্ত সর্বস্তরের লোক পড়ে থাকেন। কাজেই সেখানে যদি সত্যের দাওয়াত সম্পর্কিত কোনো লেখা প্রকাশ করা হয় তাহলে সেটি দাওয়াতের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে, যা সংঘাতময় বর্তমান সময়ে অনেক শূন্যতা পূরণ করতে পারে।

মোবাইলের মেমোরি কার্ডের মাধ্যমে : আধুনিক যুগে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে মোবাইল অন্যতম। এটি বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় একটি প্রযুক্তি, যা বিশ্বের প্রতিটি ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা এটি ব্যবহার করে কোরআন তিলাওয়াত, বিভিন্ন ইসলামী গান, ওয়াজ, বক্তব্য ও সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের চিত্র ধারণ করে তা জনসমক্ষে প্রচার করতে পারি।

পরিশেষে বলা যায়, ধর্ম প্রচার মহান আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত নবীদের একমাত্র মিশন। তাই বর্তমানে ইসলাম প্রচারে গণমাধ্যম ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে আরো বেশি উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, ঢাকা।

 

ইসলামি দাওয়াতি কাজের সুন্নতি পদ্ধতি

ইসলাম মানে শান্তি। শান্তির পথে আহ্বান হলো দাওয়াত। দাওয়াতের পদ্ধতিতে রয়েছে বিশেষ সুন্নাত, যা অনুসরণ করলে শান্তির আহ্বান সফল হবে, সমাজের সর্বস্তরে ইসলাম প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। আল্লাহ তাআলা যেমন শরিয়তের বিধান দিয়েছেন, তেমনি তা বাস্তবায়নের জন্য বিশেষ সুন্নত পদ্ধতিও দিয়েছেন। কোরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যা এর আগে অবতীর্ণ কিতাবের সমর্থক ও সংরক্ষণকারী। সুতরাং আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুসারে তুমি তাদের ফয়সালা নিষ্পত্তি করো এবং যে সত্য তোমার নিকট এসেছে, তা পরিত্যাগ করে ওদের খেয়ালখুশির অনুসরণ কোরো না। তোমাদের প্রত্যেকের জন্য শরিয়ত ও স্পষ্ট পথপদ্ধতি নির্ধারণ করেছি। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তোমাদের এক জাতি করতে পারতেন, কিন্তু তিনি তোমাদের যা দিয়েছেন, তা দ্বারা তিনি তোমাদের পরীক্ষা করতে চান। তাই তোমরা সৎকর্মে প্রতিযোগিতা করো। আল্লাহর দিকেই তোমাদের সকলের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর তোমরা যে বিষয়ে মতভেদ করছিলে সে সম্বন্ধে তিনি তোমাদের অবহিত করবেন।’ (সুরা-৫ মায়িদা, আয়াত: ৪৮)।

ইসলাম আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত একমাত্র পরিপূর্ণ জীবনবিধান। প্রথম মানব ও প্রথম নবী হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে যা সুসম্পন্ন হয়েছে আখেরি নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মাদ (সা.)–এর মাধ্যমে। সব নবী–রাসুলই দাওয়াত, তালিম ও তাবলিগের কাজ করেছেন। সরলভাবে বলতে গেলে পুরোটাই দাওয়াতি কাজ। যেহেতু নতুন কোনো নবী ও রাসুল আর আসবেন না, তাই কিয়ামত পর্যন্ত এই কাজ নবীর উম্মতদেরই করে যেতে হবে।

 

বিশ্বব্যাপী ইসলামের প্রচার–প্রসার হয়েছে দাওয়াতি কাজ ও উত্তম আদর্শের মাধ্যমে। এর জন্য দরকার উম্মতের প্রতি দরদ, স্নেহ, মায়া, মমতা ও ভালোবাসা। কোরআন–সুন্নাহর আলোকে দ্বীনি দাওয়াত, তালিম ও তাবলিগের কাজে সুফল বা সফলতার জন্য চারটি বিষয় অতীব জরুরি। যথা মহব্বত, আজমত, হেকমত ও খেদমত। অর্থাৎ দাওয়াত, তালিম ও তাবলিগের ক্ষেত্রে প্রথমত ভালোবাসা ও দরদ থাকতে হবে; দ্বিতীয়ত সম্মানবোধ থাকতে হবে, তথা বিনয়–নম্রতাসহকারে দাওয়াত, তালিম ও তাবলিগের কাজ করতে হবে; তৃতীয়ত কৌশলী হতে হবে এবং স্থান–কাল–পাত্র বুঝে দাওয়াত, তালিম ও তাবলিগ পেশ করতে হবে; চতুর্থত দাওয়াত, তালিম ও তাবলিগের জন্য খেদমত বা সেবার পথ অবলম্বন করতে হবে। সর্বোপরি দাওয়াত, তালিম ও তাবলিগের কাজে সব সময় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ ও লালন করতে হবে, কখনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া মনে স্থান দেওয়া যাবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আহ্বান করো তোমাদের রবের পথে, হিকমাহ এবং সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে।’ (সুরা-১৬ নাহল, আয়াত: ১২৫)।

বিশ্বসভ্যতার রক্ষক মুমিন ও বিশ্বের শান্তিকামী মুসলিম হিসেবে দাওয়াত, তালিম ও তাবলিগের কাজে মননে, চিন্তায় ও কর্মে আমাদের উদার হতে হবে। সারা বিশ্বকে একই পরিবার ভাবতে হবে। পুরো মানবজাতি একই পরিবারের সদস্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের আবির্ভাব ঘটানো হয়েছে; তোমরা সৎ কাজের আদেশ করবে, অসৎ কাজে নিষেধ করবে এবং আল্লাহকে বিশ্বাস করবে।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ১১০)।

 

কাউকে হেয় জ্ঞান করা যাবে না, কাউকে প্রতিপক্ষ ভাবা যাবে না। কারও প্রতি হিংসা–বিদ্বেষকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না এবং কাউকে অশ্রদ্ধা করা বা অসম্মান করা সমীচীন হবে না। আল্লাহ তাআলা বললেন, ‘তুমি এমন উত্তমভাবে মন্দের মোকাবিলা করবে, যাতে তোমার সঙ্গে যার শত্রুতা রয়েছে, সে–ও প্রাণের বন্ধু হয়ে যাবে।’ (সুরা-৪১ হা–মিম সিজদাহ, আয়াত: ৩৪)।

ইসলামি দাওয়াতি কাজে নিজের জ্ঞান, গরিমা, যোগ্যতা ও সামর্থ্যের ওপর আত্মতৃপ্ত হওয়া যাবে না। সর্বদা আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে হবে। দাওয়াত, তালিম ও তাবলিগের উদ্দিষ্টদের জন্য দোয়া করতে হবে এবং নিজের ভুলত্রুটি অযোগ্যতা, অদক্ষতা ও অপারগতার জন্য আল্লাহর কাছে শরমিন্দা থাকতে হবে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআন মজিদে বলেছেন, ‘মহাকালের শপথ! মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু তারা নয়, যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পর একে অন্যকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্য ধারণের পরামর্শ প্রদান করে।’ (সুরা-১০৩ আসর, আয়াত: ১-৩)।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

 

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন।

 

আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে বিস্তারিত জানতে  লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।

আইডিসি  মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আপনি আইডিসি  মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টারকে সচল রাখতে সাহায্য করুন!

 

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার ১টি অলাভজনক দাওয়াহ প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠানের ইসলামিক ব্লগটি বর্তমানে ২০,০০০+ মানুষ প্রতিমাসে পড়ে, দিন দিন আরো অনেক বেশি বেড়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।

বর্তমানে মাদরাসা এবং ব্লগ প্রজেক্টের বিভিন্ন খাতে (ওয়েবসাইট হোস্টিং, CDN,কনটেন্ট রাইটিং, প্রুফ রিডিং, ব্লগ পোস্টিং, ডিজাইন এবং মার্কেটিং) মাসে গড়ে ৫০,০০০+ টাকা খরচ হয়, যা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। সেকারনে, এই বিশাল ধর্মীয় কাজকে সামনে এগিয়ে নিতে সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে আপনাদের দোয়া এবং আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন, এমন কিছু ভাই ও বোন ( ৩১৩ জন ) দরকার, যারা আইডিসিকে নির্দিষ্ট অংকের সাহায্য করবেন, তাহলে এই পথ চলা অনেক সহজ হয়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ। যারা এককালিন, মাসিক অথবা বাৎসরিক সাহায্য করবেন, তারা আইডিসির মুল টিমের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন, ইংশাআল্লাহ।

আইডিসির ঠিকানাঃ খঃ ৬৫/৫, শাহজাদপুর, গুলশান, ঢাকা -১২১২, মোবাইলঃ +88 01609 820 094, +88 01716 988 953 (নগদ/বিকাশ পার্সোনাল) ইমেলঃ info@islamidawahcenter.com, info@idcmadrasah.com, ওয়েব: www.islamidawahcenter.com, www.idcmadrasah.com সার্বিক তত্ত্বাবধানেঃ হাঃ মুফতি মাহবুব ওসমানী ( এম. এ. ইন ইংলিশ )

 

Related posts

24 Para 14 Page | 24 পারার ১৪শ পেইজ – নূরানী হাফেজী কোরআন শরীফ

by IDCAdmin
3 years ago

16 Para 20 Page | ১৬ পারার ২০শ পেইজ – নূরানী হাফেজী কোরআন শরীফ

by IDCAdmin
3 years ago

Para 28 – ২৮ পারা। আল কোরআনের ৫৮ থেকে ৬৬ নং সূরা

by IDCAdmin
3 years ago
Exit mobile version