অল্প বয়সে বিয়ে করা কেন জরুরি – কুরআন ও হাদীসের আলোকে

Why is it important to get married at a young age?

ভূমিকা

সমাজে একটি প্রচলিত ভুল ধারণা হলো, শিক্ষা ও ক্যারিয়ার নিশ্চিত না করে বিয়ে করাকে অবিবেচনাপ্রসূত ভাবা হয়। অথচ, ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা হিসেবে বিয়েকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং সামাজিক ও শারীরিক সুস্থতার অন্যতম প্রধান উপায় হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বর্তমান সমাজে বিবাহ বিলম্বিত করার যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, তা পারিবারিক বন্ধন, নৈতিকতা এবং সামাজিক ভারসাম্যকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে।

এ প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করবো, কেন অল্প বয়সে বিয়ে করা জরুরি—তা কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে এবং বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে বিশ্লেষণ করা হবে।


১. মন-মানসিকতা ও মানিয়ে নেওয়ার সহজতা

মানুষের মন তরুণ বয়সে অত্যন্ত নমনীয় ও অভিযোজনযোগ্য থাকে। তাই অল্প বয়সে বৈবাহিক জীবন শুরু করলে দুজনের মাঝে মানসিক সংযোগ গভীর হয়।

যেমনটি আমরা দেখি, যারা ছোট বয়সে বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা শুরু করে, তারা সে সংস্কৃতির সাথে সহজে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। আর যারা বয়স্ক হয়ে বিদেশ যায়, তারা মন-মানসিকতা পরিবর্তনে পিছিয়ে থাকে।

বিয়ের ক্ষেত্রেও একই বাস্তবতা প্রযোজ্য। কম বয়সে বিয়ে হলে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ, নির্ভেজাল ও খোলামেলা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অথচ বয়স বাড়লে মন বেশি কঠিন ও আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে।


২. পরিবারের সঙ্গে মিল ও সংযুক্তি

বয়সে বড় হয়ে বিয়ে করলে স্ত্রী বা স্বামী তার সঙ্গী এবং শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের সাথে সম্পূর্ণ মানিয়ে নিতে পারেন না। মেয়েরা তখন শুধুই সামাজিকতা রক্ষা করতে কিছুটা সময় শ্বশুরবাড়িতে থাকে, এবং সুযোগ পেলেই পিত্রালয়ে ফিরে যায়।

ইসলাম পরিপার্শ্বিকতা ও পারিবারিক সৌহার্দ্যকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। তাই একে অপরের সঙ্গে মানিয়ে চলা, পারিবারিক বন্ধনে অংশগ্রহণ করা—সবকিছুতেই মনোযোগী হওয়া গুরুত্বপূর্ণ।


৩. বিয়ে একটি শারীরিক ও সামাজিক চাহিদা

ইসলাম বিয়েকে শুধু মানসিক বা সামাজিক চাহিদা হিসেবে দেখেনি, বরং একে শারীরিক পবিত্রতা রক্ষার উপায় হিসেবে নির্দেশ করেছে।

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:

«يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ، مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ»
“হে যুবসমাজ! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিয়ে করে, কারণ এটি দৃষ্টিকে নিচু রাখে এবং যৌনাঙ্গকে পবিত্র রাখে।”
📚 সহীহ বুখারী, হাদীস: ৫০৬৬

এই হাদীস থেকেই বোঝা যায়, যৌবনের সময়েই বিয়ের আদর্শ সময়, যাতে মন, দেহ ও ইমান সুরক্ষিত থাকে।


৪. যৌবনের আবেগ ও বিশুদ্ধ ভালোবাসার মূল্য

ষোড়শ থেকে আঠারো বছর বয়সের প্রেম-ভালোবাসা হয় সর্বোচ্চ আবেগপূর্ণ এবং হৃদয়গ্রাহী। এই বয়সে বিয়ে হলে ভালোবাসা হয় স্বতঃস্ফূর্ত, হৃদয়স্পর্শী ও টিকে থাকার মতো। অথচ বয়স বেড়ে গেলে ভালোবাসা আবেগহীন, যৌক্তিক এবং অতীত স্মৃতিতে গড়া হয়।

বিয়েতে বিশুদ্ধ ভালোবাসার বিষয়টি মহান আল্লাহ কুরআনে উল্লেখ করেছেন:

﴿وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً﴾
“আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকেই সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও। তিনি তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।”
📖 সূরা রূম (৩০:২১)


৫. বিলম্বিত বিয়ের পরিণতি – সামাজিক অবক্ষয়

বর্তমানে যে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক, অশ্লীলতা, পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্তি ও সমকামিতা ছড়িয়ে পড়েছে, এর একটি মূল কারণ হল যৌবনে বিবাহ না হওয়া।

তরুণরা যখন বৈধভাবে বিয়ের মাধ্যমে তাদের শারীরিক ও মানসিক চাহিদা পূরণ করতে পারে না, তখন তারা অবৈধ পথে হাঁটে। এতে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ—সবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।


৬. সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নেয়ার ক্ষতি

আপনি যদি বিয়ের আদর্শ সময়টায় বিয়ে না করে পিছিয়ে যান, তখন হয়তো চাকরি পাবেন না, ব্যবসা শুরু করতে সাহস পাবেন না, পরিবার গড়ার সময় পার হয়ে যাবে। যেমন: আর্মিতে নির্দিষ্ট বয়সের পরে কাউকে নেয় না, বিশ্ববিদ্যালয়েও নির্দিষ্ট বয়সের পরে ভর্তি নেয় না—তেমনি বিয়েরও একটি আদর্শ সময় আছে, যা অতিক্রম করে গেলে তার অনেক মধুরতা হারিয়ে যায়।


৭. অল্প বয়সে অল্পতেই খুশি হওয়ার মানসিকতা

অল্প বয়সে মানুষ অল্পতেই খুশি থাকে। স্ত্রীকে দুইটা কাঁচের চুড়ি দিলেই সে হাসিমুখে তা গ্রহণ করে। কিন্তু বয়স বাড়লে মানসিক চাহিদাও বাড়ে। তখন সেই ছোট ছোট আনন্দের স্থান দখল করে বড় বড় আকাঙ্ক্ষা, যা সম্পর্কের সরলতাকে কঠিন করে তোলে।


উপসংহার

ইসলাম আমাদের এমন এক সময়েই বিয়ে করতে উৎসাহিত করেছে, যখন তা সবচেয়ে উপকারী হয়—যৌবনে। বর্তমান সমাজে দেরিতে বিয়ের সংস্কৃতি যে ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলছে তা এখনই বুঝে ফিরতে হবে ইসলামের প্রকৃত নির্দেশনার দিকে।

সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে ইহকাল ও পরকাল—দুটোই সুখময় হয়। অতএব, নিজের সন্তানদের যৌবনের সময়েই বিয়ে দেওয়ার চিন্তা করুন, তাদের ক্যারিয়ারের পাশাপাশি একটি পবিত্র ও নিরাপদ পারিবারিক জীবন গড়ার সুযোগ দিন।


لَكَ أَن تَتَزَوَّجَ فِي شَبَابِكَ خَيْرٌ لَكَ مِنَ التَّعَثُّرِ فِي الكِبَرِ
“তোমার যুবক বয়সে বিয়ে করা তোমার জন্য উত্তম, বৃদ্ধ বয়সে তিক্ত অভিজ্ঞতার চেয়ে।”


লিখেছেন:মাহবুব ওসমানী – প্রকাশনা: Islamidawahcenter.com


Mahbub Osmane — একজন ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক এবং IslamiDawahCenter.com এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি কুরআন ও সহীহ হাদীসভিত্তিক বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 

To learn more, comment below or message us on wa.me/+966549485900 or  wa.me/+8801716988953 or call us at +44-73801-27019. Email at hi@islamidawahcenter.com

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।

আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে বিস্তারিত জানতে  লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।

আইডিসি  মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।

Related posts

Halal marriage brings blessed fortune – হালাল বিয়ে সৌভাগ্য নিয়ে আসে

by IDCAdmin
3 years ago

How to promote peace in the world?

by MasudDemra
6 months ago

Dealing with Conflicts in Marriage

by MasudDemra
6 months ago
Exit mobile version