পুরুষ ও মহিলাদের হাত, পা এবং বুকের লোম কাঁটা কি জায়েয?

প্রশ্নঃ পুরুষ ও মহিলাদের হাত, পা এবং বুকের লোম কাঁটা কি জায়েয?

 

উত্তর দিয়েছেন ডঃ মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ

 

উত্তরঃ এ বিষয়ে শাইখ মুহাম্মাদ সালেহ আল উসাইমীন (রহ.) তার ফাতাওয়ার ১১তম খন্ডে বাবু ‘আদাবিল ফিতরাহ এর মধ্যে উল্লেখ করেছেন যে, মানুষের বা পুরুষদের শরীরের পশম বা লোম তিন প্রকারের হয়ে থাকে। যেমনঃ-

 

১. যে প্রকারের পশম বা লোমের ব্যাপারে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা ছেড়ে দেয়ার জন্য সরাসরি নির্দেশ বা বক্তব্য দিয়েছেন। যেমন পুরুষের জন্য দাড়ি এবং নারীদের মাথার চুল ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা নির্দেশ দিয়েছেন।

 

২. যেসমস্ত পশমের ব্যাপারে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা দলিলের মাধ্যমে স্পষ্ট করে উল্লেখ করে দিয়েছেন যে এগুলো অবশ্যই কাটতে হবে বা ছোট করতে হবে। যেমন, বগলের পশম, নাভির নিচের পশম ইত্যাদি।

 

৩. যে প্রকারের পশম বা লোমের ব্যাপারে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা চুপ রয়েছেন অর্থাৎ কোনো সুস্পষ্ট বিধান দেননি। যেখানে সুস্পষ্ট বিধান আসে নি সেসমস্ত ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

 

وَمَا سَكَتَ عَنهُ فَهُوَ عَفْوٌ ، فَاقبَلُوا مِنَ اللهِ عَافِيَتَه ( وَمَا كَانَ رَبُّك نَسِيَّا )

 

“যে সমস্ত ব্যাপারে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা হালাল অথবা হারামের নির্দেশনা বা বক্তব্য দেন নি তাহলে সেটি ক্ষমা। সুতরাং তোমরা আল্লাহ তা’আলার ক্ষমাকে গ্রহণ করো।” (আপনার রব এ ব্যাপারে বিস্মৃত নন।) (মুসনাদ আহমাদ ২/৪০৬, দারাকুৎনী ২/১৩৭) শাইখ আলবানী (রহ.) হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।

 

কারণ আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন শরিয়তের বিধান তো দূরের কথা বান্দাদের কোনো ব্যাপারেও গাফিল নন। তাই একথা সুস্পষ্ট যে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা জেনেই এ ব্যাপারে চুপ ছিলেন; কোনো বিধান দেননি।

 

পুরুষ ও নারীর হাত, পা এবং বুকের লোমের ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা কুরআন এবং হাদিসে আসেনি।

 

তাই শাইখ মুহাম্মাদ সালেহ আল উসাইমীন (রহ.) বলেন যদি হাত, পায়ের পশম বা লোম এত বেশি হয় যে দেখতে বিশ্রী দেখা যায় তাহলে সেক্ষেত্রে জায়েয আছে তিনি সেটিকে কাটতে পারবেন। আর যদি নরমাল বা সাধারণ হয়ে থাকে তাহলে উত্তম হচ্ছে যে অবস্থায় লোমগুলো আছে সে অবস্থায় ছেড়ে দেয়া।

 

কারণ, আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা যদিও এখানে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেননি তারপরেও স্বাভাবিক অবস্থা হচ্ছে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার দেয়া ফিতরতের মধ্যে বা আল্লাহ্‌ তা’আলার সৃষ্টির মধ্যে কোনোরকম পরিবর্তন না করা। তাই উত্তম হচ্ছে এটি এ অবস্থায় ছেড়ে দেয়া। কিন্তু যেটা স্বাভাবিকের অতিরিক্ত বা মনে হচ্ছে যেন এটি সৌন্দর্যের পরিপন্থী সেক্ষেত্রে জায়েয রয়েছে এটিকে ছোট করা। তাই যদি কেউ হাত-পায়ের অথবা বুকের পশম কাটেন তার জন্য এটি হারাম বা নিষিদ্ধ নয়। তবে উত্তম হচ্ছে যে অবস্থায় রয়েছে সেভাবেই রেখে দেয়া। যেহেতু আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন এটাকেই তার জন্য পছন্দ করেছেন। সুতরাং আপনি যদি এ পছন্দটি মেনে নেন তাহলে এটি আপনার জন্য সবচেয়ে উত্তম।

 

কিন্তু যেহেতু এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো নস বা দলিল কুরআন ও হাদিসে আসেনি তাই যদি কেউ এগুলো কাটেন তাহলে তার জন্য এটি নাজায়েয নয়, এটি নিষিদ্ধ বা হারাম নয়। জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।

Related posts

আত্মসম্মান, আত্মমর্যাদা কক্ষনো বিসর্জন দিবেন না / Self-Esteem-Self-Esteem

by IDCAdmin
5 years ago

The Concept of Competition and Award in Islam -ইসলামে প্রতিযোগিতা এবং পুরস্কারের ধারণা

by IDCAdmin
2 years ago

স্ত্রীর প্রতি তুষ্টির বে-নযীর দৃষ্টান্ত / The-Example-Of-Wifes-Nazi

by IDCAdmin
5 years ago
Exit mobile version