Cryptocurrency Digital Assets and Islamic Perspectives

(মুফতি ইউসুফ সুলতান সাহেবের বক্তব্য ও ইসলামি বিশ্লেষণ)

✍️ লিখেছেনঃ মাহবুব ওসমানী 📅 প্রকাশকালঃ অক্টোবর ২০২৫ 🌐 Islamidawahcenter.com


ভূমিকা

সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আলেম ও ইসলামি অর্থনীতিবিদ মুফতি ইউসুফ সুলতান সাহেব এক ভিডিও আলোচনায় ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency) তথা বিটকয়েন (Bitcoin) হালাল না হারাম — এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

আমি যেহেতু গত ৫-৬ বছর ধরে এই রিলেভেন্ট ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত, তাই উনার বক্তব্য শুনে বুঝতে পেরেছি — উনার অনেক কথাই ইন্ডাস্ট্রির বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ।

বাংলাদেশি আলেমদের মধ্যে এটিই প্রথম ভিডিও, যেখানে কোনো আলেমকে আধুনিক অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও ব্লকচেইন ইকোসিস্টেম বুঝে এত পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা দিতে দেখলাম।

যদিও কিছু মানুষ উনার বক্তব্য না বুঝে মন্তব্য করেছেন, কিন্তু গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় — তিনি সব ক্রিপ্টো কয়েনকে কারেন্সি (মুদ্রা) বলেননি; বরং তিনি পার্থক্য টেনেছেন তিনটি ভাগে:
1️⃣ কারেন্সি (Currency)
2️⃣ ডিজিটাল অ্যাসেট (Digital Asset)
3️⃣ টোকেনাইজেশন (Tokenization)

এবং তিনি উল্লেখ করেছেন,
যেভাবে স্টক মার্কেটে (Stock Market) হালাল ও হারাম দুই ধরনের কোম্পানি রয়েছে, ঠিক তেমনি ক্রিপ্টো ও ডিজিটাল টোকেন জগতেও হালাল ও হারাম — দুই পার্টই বিদ্যমান

এই রকম বস্তুনিষ্ঠ, বাস্তবতা-ভিত্তিক আলোচনা যদি অন্য আলেম-উলামারাও করতেন, তাহলে হয়তো অনেক সাধারণ মুসলমানের বিভ্রান্তি দূর হয়ে যেত।


ইসলামী অর্থনীতির মূল নীতিমালা

ইসলামে সম্পদ ও লেনদেনের বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল। কুরআন ও হাদীসে বিভিন্ন নীতিমালা দেওয়া হয়েছে, যার উপর ভিত্তি করেই কোনো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হালাল বা হারাম হয়।

১️⃣ রিবা (সুদ) – সম্পূর্ণ হারাম

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

﴿وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا﴾
“আল্লাহ্‌ ক্রয়-বিক্রয়কে বৈধ করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন।”
সূরা আল-বাকারা ২:২৭৫

রিবার মূল সমস্যা হলো — এক পক্ষের নিশ্চয়িত লাভ ও অপর পক্ষের শোষণ। আধুনিক ক্রিপ্টো লেনদেনে যদি কেউ “গ্যারান্টিড প্রফিট” দাবি করে, তবে তা রিবার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।


২️⃣ মাইসির (জুয়া বা স্পেকুলেশন) – নিষিদ্ধ

হাদীসে এসেছে:

«مَنْ أَخَذَهُ عِنْدَ الظَّنِّ فَقَدْ أَخَذَ مَيْسِرًا»
“যে অনুমানের ভিত্তিতে কিছু গ্রহণ করে, সে জুয়ার মতো কাজ করেছে।”
সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৩৭৭

যদি কোনো কয়েন বা টোকেন শুধুমাত্র অনুমাননির্ভর বা ভাগ্যভিত্তিক হয়, যেখানে প্রকৃত মালিকানা নেই — তা মাইসির (জুয়া) এর মতো নিষিদ্ধ হবে।


৩️⃣ গরার (অনিশ্চয়তা বা ঝুঁকি) – নিষিদ্ধ

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:

«نَهَى رَسُولُ اللَّهِ ﷺ عَنْ بَيْعِ الْغَرَرِ»
“রাসূলুল্লাহ ﷺ অনিশ্চিত লেনদেন নিষিদ্ধ করেছেন।”
সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫১৩

যে সব টোকেন বা কয়েনের প্রকৃত মালিকানা, ভ্যালু বা ট্রেডিং স্বচ্ছ নয় — সেগুলো গরার এর মধ্যে পড়ে এবং তা নিষিদ্ধ।


৪️⃣ মাল (সম্পদ) – ইসলামী সংজ্ঞা

কোনো কিছু বৈধ “মাল” হতে হলে সেটি মানুষের জন্য প্রকৃত উপযোগী, ব্যবহারের উপযোগী ও দখলযোগ্য হতে হয়।

যদি কোনো ডিজিটাল অ্যাসেট উপযোগী, স্থানান্তরযোগ্য, এবং সমাজে স্বীকৃত (ʿurf) হয়, তবে সেটিকে ইসলামী অর্থনীতিতে “মাল” হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।


ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ডিজিটাল অ্যাসেট: ইসলামী বিশ্লেষণ

সব ক্রিপ্টো এক নয়

মুফতি ইউসুফ সুলতান সাহেব যথার্থই বলেছেন — সব ক্রিপ্টোকে এক কাতারে ফেলা ঠিক নয়। কিছু ক্রিপ্টো মুদ্রা জাতীয় (যেমন Bitcoin), কিছু প্রকৃত ডিজিটাল অ্যাসেট (যেমন Ethereum-based Utility Token), আবার কিছু রিয়েল অ্যাসেট-ব্যাকড টোকেন (যেমন Gold-backed Token)


হালাল দিক

যদি কোনো টোকেন বা ক্রিপ্টো প্রকৃত সম্পদ দ্বারা ব্যাকড হয়, বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়, রিবা ও গরার থেকে মুক্ত থাকে, স্বচ্ছ ও নিরীক্ষাযোগ্য হয় — তবে সেটি শর্তসাপেক্ষে হালাল হতে পারে।


হারাম দিক

যদি কোনো কয়েন স্পেকুলেশন, জুয়া, রিবা, অনিশ্চয়তা, বা মিথ্যা প্রমিজের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়, তাহলে তা হারাম বা সন্দেহজনক (مُشْتَبِه)


ইসলামের দৃষ্টিতে লেনদেনের স্বচ্ছতা

কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُم بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ إِلَّا أَنْ تَكُونَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِنْكُمْ﴾
“হে মুমিনগণ! তোমরা পরস্পরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না, তবে পারস্পরিক সম্মত বাণিজ্যের মাধ্যমে তা বৈধ।”
সূরা আন-নিসা ৪:২৯

এই আয়াতটি স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে — লেনদেনে স্বচ্ছতা, পারস্পরিক সম্মতি ও বাস্তব সম্পত্তির আদান-প্রদান থাকতে হবে।


উপসংহার

মুফতি ইউসুফ সুলতান সাহেবের এই আলোচনাটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত যুগোপযোগী। তিনি বাস্তব অর্থনৈতিক পরিবর্তন ও প্রযুক্তিগত রূপান্তরকে ইসলামী ফিকহের কাঠামোর মধ্যেই ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন।

তিনি যেমন বলেছেন —

সব ক্রিপ্টো কয়েন কারেন্সি নয়,
বরং কিছু কারেন্সি, কিছু ডিজিটাল অ্যাসেট, আর কিছু টোকেনাইজড সম্পদ।

এবং স্টক মার্কেটের মতো এখানেও হালাল ও হারাম দুই দিকই বিদ্যমান।

এভাবে যদি আমাদের আলেম সমাজ আধুনিক অর্থনীতি ও টেকনোলজির বাস্তবতার আলোকে দিকনির্দেশনা দেন, তবে মুসলিম উম্মাহর অর্থনৈতিক বিভ্রান্তি অনেকাংশে দূর হবে, ইনশাআল্লাহ।


দো‘আ

اللَّهُمَّ أَرِنَا الْحَقَّ حَقًّا وَارْزُقْنَا اتِّبَاعَهُ، وَأَرِنَا الْبَاطِلَ بَاطِلًا وَارْزُقْنَا اجْتِنَابَهُ
“হে আল্লাহ! আমাদেরকে সত্যকে সত্য হিসেবে দেখাও এবং তা অনুসরণ করার তাওফিক দাও, মিথ্যাকে মিথ্যা হিসেবে দেখাও এবং তা থেকে বাঁচার তাওফিক দাও।”
দু’আ রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণিত (মুসনাদ আহমাদ)


সূত্রসমূহ:

  • القرآن الكريم – সূরা আল-বাকারা ২:২৭৫, সূরা আন-নিসা ৪:২৯
  • صحيح مسلم – হাদীস নং ১৫১৩
  • سنن أبي داود – হাদীস নং ৩৩৭৭
  • মুফতি ইউসুফ সুলতান – ক্রিপ্টোকারেন্সি বিষয়ে ভিডিও বক্তব্য (২০২৫)




লিখেছেন: মাহবুব ওসমানী – প্রকাশনা: Islamidawahcenter.com

Mahbub Osmane — একজন ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক এবং IslamiDawahCenter.com এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি কুরআন ও সহীহ হাদীসভিত্তিক বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 

To learn more, comment below or message us on wa.me/+966549485900 or  wa.me/+8801716988953 or call us at +44-73801-27019. Email at hi@islamidawahcenter.com

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।

আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে বিস্তারিত জানতে  লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।

আইডিসি  মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।