বর্তমান সময়—ফিতনার সময়

আমরা এমন এক যুগে বাস করছি, যেখানে গুনাহ করা সহজ এবং ইবাদতের পথে থাকা কঠিন। কেউ কেউ নিজের গুনাহর জন্য নিজেকে ‘হারামী’ বা চরম গুনাহগার মনে করে, ফলে হেদায়াতের আশাও ছেড়ে দেয়। কিন্তু রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং কুরআন আমাদের শিখিয়েছে—আল্লাহর রহমত গুনাহর থেকেও অনেক বড়।

তাই, আপনি যত বড় গুনাহগারই হোন না কেন, নিচের এই ১০টি আমল যদি জীবনে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন, ইনশাআল্লাহ আল্লাহ আপনাকে হেফাজতে রাখবেন।


১. তাওহিদের উপর থাকা ও তাগুত বর্জন করা

🔹 প্রথম ও প্রধান শর্ত—আল্লাহ ছাড়া কারো হুকুমকে চূড়ান্ত না মানা। যেসব দল বা আদর্শ আল্লাহর শরীয়তের বাইরে চলে, তাদের থেকে নিজেকে আলাদা করুন। রাজনীতির নামে কুফর ও তাগুতি আইনের সমর্থন ইমান নষ্ট করে দিতে পারে।

📖 কুরআন:

فَمَن يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِن بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىٰ لَا انفِصَامَ لَهَا ۗ
“তাগুতকে প্রত্যাখ্যান করে যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, সে এমন এক মজবুত হাতল আঁকড়ে ধরে, যা ভাঙার নয়।”
📚 সূরা আল-বাকারা (২:২৫৬)


২. হালাল রিযিক ও ইনকাম নিশ্চিত করা

🔹 হালাল ইনকাম না হলে ইবাদত কবুল হয় না, দোয়া কবুল হয় না।

📖 হাদীস:

إِنَّ اللَّهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا
“নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র জিনিস ছাড়া কবুল করেন না।”
📚 সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১০১৫


৩. অন্যের হক আদায় করা

🔹 মানুষের হক নষ্ট করলে আল্লাহ মাফ করবেন না, যতক্ষণ না সেই ব্যক্তি ক্ষমা করেন।

📖 হাদীস:

مَنْ كَانَتْ عِندَهُ مَظْلِمَةٌ لِأَخِيهِ، مِنْ عِرْضِهِ، أَوْ مِنْ شَيْءٍ، فَلْيَتَحَلَّلْهُ مِنْهُ الْيَوْمَ، قَبْلَ أَنْ لَا يَكُونَ دِينَارٌ وَلَا دِرْهَمٌ
“যার ভাইয়ের উপর জুলুম করার কিছু আছে, সে যেন আজই তার থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয়, কিয়ামতের দিনে কোনো দিনার-দিরহাম থাকবে না।”
📚 সহীহ বুখারী, হাদীস: ২৪৪৯


৪. তওবা ও ইস্তিগফারের উপর থাকা

🔹 গুনাহ যতই হোক, বারবার তওবা করুন। বারংবার গুনাহ হলেও তওবা ছেড়ে দেবেন না।

📖 কুরআন:

قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَىٰ أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا ۚ
“হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করেন।”
📚 সূরা আয-জুমার (৩৯:৫৩)


৫. মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়া

🔹 আল্লাহর সাথে সাথে যার প্রতি অন্যায় করেছেন, তাঁর কাছেও ক্ষমা চাইতে হবে।

🔸 এমন কারো সাথে খারাপ আচরণ হয়ে থাকলে, তাঁকে খুঁজে বের করে ক্ষমা চেয়ে নিন। সম্ভব না হলে তাঁর জন্য দোআ ও সদাকাহ দিন।


৬. সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা

🔹 নিজে গুনাহগার হলেও অন্যকে ভালো কাজে উৎসাহ দিন, খারাপ কাজে বাধা দিন।

📖 কুরআন:

كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ
“তোমরা শ্রেষ্ঠ জাতি, মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে—তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখো।”
📚 সূরা আলে ইমরান (৩:১১০)


৭. সাদাকাহ ও দান করা

🔹 সাদাকাহ দিলে গুনাহ কমে, ফিতনা দূর হয়, রিজিক বৃদ্ধি পায়।

📖 হাদীস:

صَدَقَةُ السِّرِّ تُطْفِئُ غَضَبَ الرَّبِّ
“গোপনে দান করলে আল্লাহর রাগ নেভে।”
📚 আল-মুস্তাদরাক, হাদীস: ৭৫৮


৮. গুনাহকে গোপন রাখা

🔹 গুনাহ করে তা মানুষকে না জানানো ইসলামের শিক্ষা। অন্যথায় তা গীবত, ফিতনা ও নতুন গুনাহ ডেকে আনবে।

📖 হাদীস:

كُلُّ أُمَّتِي مُعَافًى إِلَّا الْمُجَاهِرِينَ
“আমার উম্মতের সকলেরই গুনাহ ক্ষমা করা হবে, তবে যারা গুনাহ প্রকাশ করে তারা ব্যতীত।”
📚 সহীহ বুখারী, হাদীস: ৬০৬৯


৯. আল্লাহর উপর সুধারণা রাখা

🔹 আপনার যত বড় গুনাহই থাক, আল্লাহর রহমতের প্রতি আশা রাখুন। এটি ঈমানের অংশ।

📖 হাদীস কুদসী:

أَنَا عِندَ ظَنِّ عَبْدِي بِي، فَلْيَظُنَّ بِي مَا شَاءَ
“আমি আমার বান্দার ধারণা অনুযায়ী তার সাথে আচরণ করি। সে আমার সম্পর্কে যা ধারণা করবে, আমি তাই হবো।”
📚 সহীহ বুখারী, হাদীস: ৭৫০৫


🔟 আল্লাহকে সর্বদা স্মরণে রাখা (Taqwa & Allah-Consciousness)

🔹 যা কিছুই করেন, আল্লাহ আপনাকে দেখছেন—এই অনুভূতি মনে রাখুন।

📖 কুরআন:

إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষণকারী।”
📚 সূরা আন-নিসা (৪:১)


🔚 উপসংহার

শেষ জামানায় আমরা গুনাহ থেকে ১০০% বাঁচতে পারি না—এটা বাস্তবতা। তবে উপরের ১০টি আমলে অটল থাকার চেষ্টা যদি করে যাই, আল্লাহর সাহায্য, ক্ষমা ও দয়া আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে ইনশাআল্লাহ। মনে রাখবেন—

وَرَحْمَتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ
“আমার রহমত সমস্ত কিছুকে আচ্ছাদিত করেছে।”
📚 সূরা আল-আ’রাফ (৭:১৫৬)