মুহররম, একটি মহান বরকতময় মাস / Muharram-A-Blessed-Month

 

Muharram-A-Blessed-Month

 

মুহররম, একটি মহান বরকতময় মাস / Muharram-A-Blessed-Month

 মুহররম, একটি মহান বরকতময় মাস। হিজরী সনের প্রথম মাস। এটি ‘আশহুরে হুরুম’ তথা হারামকৃত মাস চতুষ্টয়ের অন্যতম। আশহুরে হুরুম সম্পর্কে আমাদের রব মহান আল্লাহ বলেনঃ-

 

اِنَّ عِدَّة الشُّہُوۡرِ عِنۡدَ اللّٰہِ اثۡنَا عَشَرَ شَہۡرًا فِیۡ کِتٰبِ اللّٰہِ یَوۡمَ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ مِنۡہَاۤ اَرۡبَعَۃٌ حُرُمٌ ؕ ذٰلِکَ الدِّیۡنُ الۡقَیِّمُ ۬ۙ فَلَا تَظۡلِمُوۡا فِیۡہِنَّ اَنۡفُسَکُمۡ وَ قَاتِلُوا الۡمُشۡرِکِیۡنَ کَآفَّۃً کَمَا یُقَاتِلُوۡنَکُمۡ کَآفَّۃً ؕ وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰہَ مَعَ الۡمُتَّقِیۡنَ ﴿۳۶﴾

 

 নিশ্চয়ই মাসসমূহের গণনা আল্লাহর কাছে বার মাস আল্লাহর কিতাবে, (সেদিন থেকে) যেদিন তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্য থেকে চারটি সম্মানিত, এটাই প্রতিষ্ঠিত দ্বীন। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহে নিজেদের উপর কোন যুলুম করো না, আর তোমরা সকলে মুশরিকদের সাথে লড়াই কর যেমনিভাবে তারা সকলে তোমাদের সাথে লড়াই করে, আর জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন। [সূরাহ আত-তাওবাহ: আয়াত: ৩৬]

 

 প্রিয়নবী মুহাম্মদূর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ- حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَهَّابِ، حَدَّثَنَا أَيُّوبُ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ سِيرِينَ، عَنِ ابْنِ أَبِي بَكْرَةَ، عَنْ أَبِي بَكْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ الزَّمَانُ قَدِ اسْتَدَارَ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ، السَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا، مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ، ثَلاَثَةٌ مُتَوَالِيَاتٌ ذُو الْقَعْدَةِ وَذُو الْحِجَّةِ وَالْمُحَرَّمُ، وَرَجَبُ مُضَرَ الَّذِي بَيْنَ جُمَادَى وَشَعْبَانَ ‏”‏‏.‏

 

 আল্লাহ যেদিন আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, সেদিন হতে সময় যেভাবে আবর্তিত হচ্ছিল আজও তা সেভাবে আবর্তিত হচ্ছে। বছর হলো বারোটি মাসের সমষ্টি। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। যুল-কা’দাহ, যূল-হিজ্জাহ ও মুহাররাম। তিনটি মাস পরস্পর রয়েছে। আর একটি মাস হলো রজব-ই-মুযারা। [ সহীহ বুখারী: ৩১৯৭]  মুহররমকে মুহররম বলে অভিহিত করা হয়েছে কারণ এটি অতি সম্মানিত। মহান আল্লাহ এ মাসের মর্যাদা সম্পর্কে বলেন- “তোমরা এতে নিজেদের উপর কোনো জুলুম করো না” অর্থাৎ, এই সম্মানিত মাসসমূহে তোমরা কোনো অন্যায় করো না। কারণ এ সময়ে সংঘটিত অন্যায় ও অপরাধের পাপ অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি মারাত্মক।

 

 মুহররম মাসের নফল সিয়ামের ফজিলত: আবু হুরায়রাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ- أَخْبَرَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ، عَنْ أَبِي بِشْرٍ، عَنْ حُمَيْدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ هُوَ ابْنُ عَوْفٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ شَهْرِ رَمَضَانَ شَهْرُ اللَّهِ الْمُحَرَّمُ، وَأَفْضَلُ الصَّلَاةِ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ صَلَاةُ اللَّيْلِ»

 

 “রমযান মাসের পর সর্বোত্তম সাওম হল মুহররম মাসের সাওম (আশুরার সাওম) এবং ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হল রাত্রের সালাত।” [সুনানে আন-নাসায়ী: ১৬১৩]  উল্লেখ্য যে, প্রিয়নবী মুহাম্মদূর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রমাদান ব্যতীত আর কোনো মাসে পূর্ণ মাস সওম রাখেননি-এটি প্রমাণিত। তাই উপরিউক্ত হাদিসে এমাসে বেশি পরিমাণে সিয়াম রাখার ব্যাপারে উৎসাহ দেয়া হয়েছে বলে ধরা হবে।  শা’বান মাসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-অধিক সওম রেখেছেন বলে একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। হতে পারে মুহররম মাসের ফজিলত সম্বন্ধে তাঁকে একেবারে জীবনের শেষ পর্যায়ে অবহিত করা হয়েছে আর তিনি তা বাস্তবায়ন করে যাবার সময় পাননি। [ইমাম নববী, শারহু সহীহ মুসলিম ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য ]  আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লা স্থান ও কাল ভেদে যাকে ইচ্ছা মর্যাদা দিয়ে থাকেন, আল্লামাহ ইজ্জ বিন আব্দুস সালাম [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, স্থান ও কালের একের উপর অপরের মর্যাদা দান দুই প্রকার: এক. পার্থিব। দুই. দ্বীনী, যা আল্লাহর দয়া ও করুণার উপর নির্ভরশীল।  তিনি সেসব স্থান বা কালে ইবাদত সম্পন্ন কারীদের সাওয়াব বৃদ্ধি করে দিয়ে তাদের উপর করুণা করেন। যেমন, অন্যান্য মাসের রোজার তুলনায় রমাদান মাসের সওমের মর্যাদা অনুরূপ আশূরার দিন। এগুলোর মর্যাদা আল্লাহর দান ও ইহসানের উপর নির্ভরশীল। [কাওয়ায়েদুল আহকাম: ১/৩৮]  আশূরার ইতিহাস:

 

 আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, يَعْقُوْبُ بْنُ إِبْرَاهِيْمَ حَدَّثَنَا رَوْحٌ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ حَدَّثَنَا أَبُوْ بِشْرٍ عَنْ سَعِيْدِ بْنِ جُبَيْرٍ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ لَمَّا قَدِمَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الْمَدِيْنَةَ وَالْيَهُوْدُ تَصُوْمُ يَوْمَ عَاشُوْرَاءَ فَسَأَلَهُمْ فَقَالُوْا هَذَا الْيَوْمُ الَّذِيْ ظَهَرَ فِيْهِ مُوْسَى عَلَى فِرْعَوْنَ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم نَحْنُ أَوْلَى بِمُوْسَى مِنْهُمْ فَصُوْمُوْهُ.

 

 রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মদিনায় আগমন করে দেখতে পেলেন ইয়াহুদীরা আশূরার দিন সওম পালন করছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের কাছে সওমের কারণ জানতে চাইলেন। তাঁরা বলল, এটি একটি ভাল দিন। এদিনে মুসা [আলাইহিস সালাম] ফির’আউনের উপর বিজয় লাভ করেছিলেন। তাই মুসা [আলাইহিস সালাম] রোজা পালন করেছেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, মূসাকে অনুসরণের ব্যাপারে আমি তোমাদের চেয়ে অধিক হক্বদার। অত:পর তিনি সিয়াম রেখেছেন এবং সিয়াম রাখার নির্দেশ (মুসলিমদেরকে) দিয়েছেন।” [সহীহ বুখারী: ১৮৬৫] সহীহ বুখারীর অন্য বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর সাহাবীদের নির্দেশ দিয়ে বললেন, মুসা (আলাইহিস সালাম)কে অনুসরণের ক্ষেত্রে তোমরা তাদের (ইয়াহুদী) চেয়ে অধিক হক্বদার। সুতরাং তোমরা সিয়াম রাখ।”  আশূরার সিয়াম পূর্ব হতেই প্রসিদ্ধ ছিল, এমনকি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নবুয়্যাত প্রাপ্তির পূর্বে জাহেলী যুগেও আরব সমাজে তার প্রচলন ছিল। একটি বিশুদ্ধ হাদিসে আম্মাজান আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, যেখানে তিনি বলেছেন, “জাহেলী যুগের লোকেরা আশূরাতে সিয়াম রাখত।”

 

 ইমাম কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ কুরাইশরা আশূরার সিয়াম প্রসঙ্গে সম্ভবত বিগত শরীয়াত যেমন ইবরাহীম [আলাইহিস সালাম] এর উপর নির্ভর করত। যেহেতু হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মদিনায় হিজরত করার পূর্বেই মক্কাতে আশূরার সিয়াম রাখতেন। হিজরতের পর দেখতে পেলেন মদিনার ইয়াহুদীরা এদিনকে উদযাপন করছে। তিনি কারণ সম্বন্ধে তাদের জিজ্ঞেস করলে তারা উপরোল্লেখিত উত্তর দিল। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সাহাবাদেরকে ঈদ-উৎসব উদযাপন প্রসঙ্গে ইয়াহুদীদের বিরোধিতা করার নির্দেশ দিলেন। যেমন আবু মুসা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন, আশূরার দিনকে ইয়াহুদীরা ঈদ হিসাবে গ্রহণ করেছিল। সহীহ মুসলিমের রেওয়ায়াতে এসেছে, ‘খায়বর অধিবাসীরা (ইয়াহুদীরা) আশূরার দিনকে ঈদ হিসাবে গ্রহণ করেছিল। তারা এদিন নিজ স্ত্রীদেরকে নিজস্ব অলঙ্কারাদি ও ব্যাজ পরিধান করাত।’  রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সাহাবাদেরকে এদিনে সিয়াম রাখার নির্দেশ দানের আপাত কারণ হচ্ছে, ইয়াহুদীদের বিরোধিতা করা। যেদিন তারা ঈদ উদযাপন করে ইফতার করবে সেদিন মুসলমানগণ সওম রাখবে। কারণ ঈদের দিন সওম রাখা হয় না। [সার-সংক্ষেপ, ফাতহুল বারী, শারহুল বুখারী, ইমাম ইবন হাজার আসকালানী (রাহঃ)]  আশূরার সিয়ামের ফজিলত:

 

 আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে সওম রাখার জন্য এত অধিক আগ্রহী হতে দেখিনি, যতটা দেখেছি এই আশুরার দিন এবং এই মাস অর্থাৎ রমজান মাসের সওমের প্রতি।” [সহীহ বুখারী: ১৮৬৭]  আবূ কাত্বাদাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, প্রিয়নবী মুহাম্মদূর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ-

 

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، وَأَحْمَدُ بْنُ عَبْدَةَ الضَّبِّيُّ، قَالاَ حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ، عَنْ غَيْلاَنَ بْنِ جَرِيرٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَعْبَدٍ الزِّمَّانِيِّ، عَنْ أَبِي قَتَادَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏”‏صِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ إِنِّي أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ”‏.‏ وَفِي الْبَابِ عَنْ عَلِيٍّ وَمُحَمَّدِ بْنِ صَيْفِيٍّ وَسَلَمَةَ بْنِ الأَكْوَعِ وَهِنْدِ بْنِ أَسْمَاءَ وَابْنِ عَبَّاسٍ وَالرُّبَيِّعِ بِنْتِ مُعَوِّذِ بْنِ عَفْرَاءَ وَعَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَلَمَةَ الْخُزَاعِيِّ عَنْ عَمِّهِ وَعَبْدِ اللَّهِ بْنِ الزُّبَيْرِ ذَكَرُوا عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ حَثَّ عَلَى صِيَامِ يَوْمِ عَاشُورَاءَ.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى لاَ نَعْلَمُ فِي شَيْءٍ مِنَ الرِّوَايَاتِ أَنَّهُ قَالَ ‏”‏صِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ كَفَّارَةُ سَنَةٍ”‏.‏ إِلاَّ فِي حَدِيثِ أَبِي قَتَادَةَ ‏.‏ وَبِحَدِيثِ أَبِي قَتَادَةَ يَقُولُ أَحْمَدُ وَإِسْحَاقُ.‏

 

 “আল্লাহ্‌ তা’আলার নিকট আমি আশা পোষণ করি যে, তিনি আশূরার রোযার মাধ্যমে পূর্ববর্তী এক বছরের (গুনাহ্‌) ক্ষমা করে দিবেন।” [তিরমিজী: ৭৫২] এটি আমাদের প্রতি মহান আল্লাহর অপার করুণা। তিনি একটি মাত্র দিনের সিয়ামের মাধ্যমে পূর্ণ এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেন। সত্যই মহান আল্লাহ পরমদাতা।  বছরের কোন দিনটি আশূরার দিন:  ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, তাসুআ, আশূরা দু’টি মদ্দযুক্ত নাম। অভিধানের গ্রন্থাবলীতে এটিই প্রসিদ্ধ। আমাদের সাথীরা বলেছেন, আশূরা হচ্ছে মুহররম মাসের দশম দিন। আর তাসুআ সে মাসের নবম দিন। জমহুর উলামারাও তাই বলেছেন। হাদিসের আপাতরূপ ও শব্দের প্রায়োগিক ও ব্যবহারিক চাহিদাও তাই। ভাষাবিদদের নিকট এটিই প্রসিদ্ধ। [আল-মজমূ দ্রষ্টব্য] এটি একটি ইসলামী নাম, জাহেলী যুগে পরিচিত ছিল না। [কাশ্শাফুল কান্না’ ২য় খন্ড, সওমুল মুহররম]  ইবনু খুদামাহ [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আশূরা মুহররম মাসের দশম দিন। এটি সাঈদ ইবনুল মুসায়্যাব ও ইমাম হাসান বাসরী (রাহিমাহুল্লাহ)র মত। কারণ আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, “রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আশূরা-মুহররমের দশম দিনে সিয়াম রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।” [তিরমিযী]  আশূরার সাথে তাসুআর সিয়ামও মুস্তাহাব: আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত,

 

حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ دَاوُدَ الْمَهْرِيُّ، حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي يَحْيَى بْنُ أَيُّوبَ، أَنَّ إِسْمَاعِيلَ بْنَ أُمَيَّةَ الْقُرَشِيَّ، حَدَّثَهُ أَنَّهُ، سَمِعَ أَبَا غَطَفَانَ، يَقُولُ سَمِعْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَبَّاسٍ، يَقُولُ حِينَ صَامَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَأَمَرَنَا بِصِيَامِهِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّهُ يَوْمٌ تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى ‏.‏ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ صُمْنَا يَوْمَ التَّاسِعِ ‏”‏ ‏.‏ فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ حَتَّى تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم.‏

 

 ‘‘যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজে আশূরার রোজা রাখলেন এবং (আমাদেরকেও) রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন, তখন লোকেরা বললো, হে আল্লাহর রাসূল! ইয়াহুদী ও খৃষ্টানরা এ দিনটিকে সম্মান করে। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, আগামী বছর এলে আমরা নবম দিনও সওম পালন করবো (ইনশাআল্লাহ)। কিন্ত আগামী বছর না আসতেই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইনতিকাল করেন। [সুনানে আবু দাউদ: ২৪৪৫]  ইমাম শাফেয়ী ও তাঁর সাথীবৃন্দ, ইমাম আহমাদ, ইমাম ইসহাক [রাহিমাহুমুল্লাহ] প্রমুখ বলেছেন, আশূরার সিয়ামের ক্ষেত্রে দশম ও নবম উভয় দিনের সিয়ামই মুস্তাহাব। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দশ তারিখ সওম রেখেছেন এবং নয় তারিখ সিয়াম রাখার নিয়ত করেছেন। এরই উপর ভিত্তি করে বলা যায়, আশূরার সওমের কয়েকটি স্তর রয়েছে: সর্বনিম্ন হচ্ছে কেবল দশ তারিখের সিয়াম রাখা। এরচেয়ে উচ্চ পর্যায় হচ্ছে তার সাথে নয় তারিখের সিয়াম রাখা। এমনিভাবে মুহররম মাসে সিয়ামের সংখ্যা যত বেশি হবে মর্যাদা ও ফজিলতও ততই বাড়তে থাকবে।  তাসুআর সিয়াম মুস্তাহাব হবার হিক্বমাত: ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, তাসুআ তথা মুহররমের নয় তারিখ সিয়াম (রোযা) মুস্তাহাব হবার হিক্বমাত ও উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে প্রাজ্ঞ উলামায়ে কেরাম বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন।

 

 এক. এর উদ্দেশ্য হল, ইয়াহুদীদের বিরোধিতা করা। কারণ তারা কেবল একটি অর্থাৎ দশ তারিখ রোযা রাখত।  দুই. আশূরার দিনে কেবলমাত্র একটি রোজা পালনের অবস্থার উত্তরণ ঘটিয়ে তার সাথে অন্য একটি রোজার মাধ্যমে সংযোগ সৃষ্টি করা। যেমনি করে এককভাবে জুমুআর দিন রোজা রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। এটি আল্লামাহ খাত্ত্বাবী ও অন্যান্যদের মত।  তিন. দশ তারিখের রোজার ক্ষেত্রে চন্দ্র গণনায় ত্রুটি হয়ে ভুলে পতিত হবার আশংকা থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে। হতে পারে গণনায় নয় তারিখ কিন্তু বাস্তবে তা দশ তারিখ।  এরমধ্যে সর্বাধিক শক্তিশালী তাৎপর্য হচ্ছে, আহলে কিতাবের বিরোধিতা করা। শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বহু হাদিসে আহলে কিতাবদের সাদৃশ্য অবলম্বন করতে নিষেধ করেছেন। যেমন আশুরা প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে অবশ্যই নয় তারিখ রোজা রাখব।” [আল-ফতোয়াল ক্বুবরা, খন্ড: ৬]  ইমাম ইবন হাজার আসকালানী (রাহিমাহুল্লাহ) ‘আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে অবশ্যই নয় তারিখ রোজা রাখব’ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন,

 

“রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নয় তারিখে রোযা রাখার সংকল্প ব্যক্ত করার উদ্দেশ্য কিন্তু এই নয় যে, তিনি কেবল নয় তারিখে রোযা রাখার সংকল্প করেছেন বরং তাঁর উদ্দেশ্য হচ্ছে, দশ তারিখের রোযার সাথে নয় তারিখের রোজাকে সংযুক্ত করা। এটা সাবধানতা বশত: কিংবা ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানদের বিরোধিতার জন্য।” এটিই অগ্রাধিকার প্রাপ্ত মত এবং সহীহ মুসলিমের কতিপয় বর্ণনা এদিকেই ইংগিত করে। [ফাতহুল বারী: ৪/২৪৫]  আশূরায় উদযাপিত কিছু বিদ’আত: আশূরার দিন লোকেরা সুরমা লাগানো, গোসল করা, মেহেদি লাগানো, অতিরঞ্জিত মুসাফাহা করা, খিচুড়ি রান্না করা, আনন্দ উৎসবসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদির আয়োজন করে থাকে, এ সম্বন্ধে শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ)কে প্রশ্ন করা হল, এর কোনো ভিত্তি আছে কি না?  জবাবে তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) বললেন, এসব অনুষ্ঠানাদি উদযাপন প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে সহীহ কোনো হাদিস বর্ণিত হয়নি এবং সাহাবাদের থেকেও না। চার ইমামসহ নির্ভরযোগ্য কোনো আলিমও এসব কাজকে সমর্থন করেননি। কোনো মুহাদ্দিস এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও সাহাবাদের থেকে কোনো সহীহ কিংবা দ্বইফ হাদিসও বর্ণনা করেননি। তাবেঈনদের থেকেও কোনো আছার পাওয়া যায়নি।  পরবর্তী যুগে কেউ কেউ কিছু বানোয়াট ও জাল হাদিস বর্ণনা করেছে যেমন- ‘যে ব্যক্তি আশূরার দিন সুরমা লাগাবে সে ব্যক্তি সে বছর থেকে চক্ষুপ্রদাহ রোগে আক্রান্ত হবে না’।

 

 

‘ যে ব্যক্তি আশূরার দিন গোসল করবে সে সেই বছর থেকে আর রোগাক্রান্ত হবে না।” এরূপ অনেক হাদিস। এরই ধারাবাহিকতায় তারা একটি মওজু হাদিস বর্ণনা করেছে। যা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রতি মিথ্যারোপ ব্যতীত আর কিছুই নয়। হাদিসটি হচ্ছে, “যে ব্যক্তি আশুরার দিন নিজ পরিবারের উপর উদার হাতে খরচ করবে আল্লাহ তাআলা সারা বছরের জন্য তাকে সচ্ছলতা দান করবেন।” এ ধরণের সবগুলো বর্ণনা মিথ্যা ও জাল।  অত:পর ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ ( রাহিমাহুল্লাহ) উল্লেখ করেছেন যার সার সংক্ষেপ হচ্ছে “এ উম্মতের অগ্রজদের উপর যখন সর্বপ্রথম ফিতনা আপতিত হল ও হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু আনহু’র) শাহাদাত সংঘঠিত হল। এর কারণে বিভিন্ন দলের লোকেরা জালেম ও যাহিলদের দলে রাপান্তরিত হল। হয়ত মুনাফিক বেদ্বীন নয়ত বিভ্রান্ত বিপথগামী। তাঁর বন্ধুত্ব ও আহলে বাইতের বন্ধুত্ব প্রকাশ করতে লাগল।

 

 আশূরার দিনকে রোল-বিল, কান্নাকাটি ও শোক দিবস হিসাবে গ্রহণ করল। তাতে তারা বুক ও চেহারা চাপড়ানো, আস্তিন ছেড়াসহ জাহেলী যুগের বিভিন্ন প্রথা প্রকাশ করতে লাগল। বিভিন্ন শোকগাঁথা যার অধিকাংশই বানোয়াট ও মিথ্যায় পরিপূর্ণ ও গীত আবৃত্তি করতে লাগল। এর ভেতর সত্যের কিছুই নেই আছে শুধু স্বজনপ্রীতি ও মনোকষ্টের নবায়ন। মুসলমানদের পরস্পরে যুদ্ধ ও দুশমনি সৃষ্টির পায়তাঁরা। পূর্ববর্তী পূন্যাত্মা সাহাবীদের গালমন্দ করার উপাদান।  মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাদের অনিষ্ট ও ক্ষতির পরিসংখ্যান কেউ লিখে শেষ করতে পারবে না। তাদের মোকাবেলা করেছে হয়ত আহলে বাইত ও হোসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর ব্যাপারে বাড়াবাড়িতে লিপ্ত নাসেবী সম্প্রদায় অথবা একদল যাহিল সম্প্রদায়। যারা ফ্যাসাদের মোকাবেলা করেছে ফ্যাসাদ দিয়ে, মিথ্যার মোকাবেলা করেছে মিথ্যার মাধ্যমে, খারাপের জবাব দিয়েছে খারাপ দিয়ে এবং বিদ’আতের জবাব দিয়েছে বিদ’আতের মাধ্যমে।”  ইমাম ইবনুল হাজ্জ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আশূরার বিদ’আতের আরো একটি হচ্ছে, তাতে যাকাত আদায় করা, বিলম্বিত কিংবা অগ্রীম। মুরগি জবাইর জন্য একে নির্ধারণ করা। নারীদের মেহেদি ব্যবহার করা। [আল-মাদখাল, ১ম খন্ড, ইয়াওমু আশূরা]

 

 পরিশেষে দো’আ করি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লা আশূরাসহ যাবতীয় কর্মে আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আদর্শের পূর্ণ অনুবর্তনের তাওফীক্ব দান করুন। আমীন ইয়া রাব্বাল আলামিন।  কৃতজ্ঞতা স্বীকার: [উক্ত নিবন্ধ রচনায় আশূরার ফযিলত নিয়ে লিখিত আলিমদের বইপত্রের সাহারা নেয়া হয়েছে]।  

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন!

 

আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে  জানতে  লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।

আইডিসি  মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আপনি আইডিসি  মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।

 

Islami Dawah Center Cover photo

 

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টারকে সচল রাখতে সাহায্য করুন!

 

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার ১টি অলাভজনক দাওয়াহ প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠানের ইসলামিক ব্লগটি বর্তমানে ২০,০০০+ মানুষ প্রতিমাসে পড়ে, দিন দিন আরো অনেক বেশি বেড়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।

বর্তমানে মাদরাসা এবং ব্লগ প্রজেক্টের বিভিন্ন খাতে (ওয়েবসাইট হোস্টিং, CDN,কনটেন্ট রাইটিং, প্রুফ রিডিং, ব্লগ পোস্টিং, ডিজাইন এবং মার্কেটিং) মাসে গড়ে ৫০,০০০+ টাকা খরচ হয়, যা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। সেকারনে, এই বিশাল ধর্মীয় কাজকে সামনে এগিয়ে নিতে সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে আপনাদের দোয়া এবং আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন, এমন কিছু ভাই ও বোন ( ৩১৩ জন ) দরকার, যারা আইডিসিকে নির্দিষ্ট অংকের সাহায্য করবেন, তাহলে এই পথ চলা অনেক সহজ হয়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।

যারা এককালিন, মাসিক অথবা বাৎসরিক সাহায্য করবেন, তারা আইডিসির মুল টিমের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন, ইংশাআল্লাহ।

আইডিসির ঠিকানাঃ খঃ ৬৫/৫, শাহজাদপুর, গুলশান, ঢাকা -১২১২, মোবাইলঃ +88 01609 820 094, +88 01716 988 953 ( নগদ/বিকাশ পার্সোনাল )

ইমেলঃ info@islamidawahcenter.com, info@idcmadrasah.com, ওয়েব: www.islamidawahcenter.com, www.idcmadrasah.com সার্বিক তত্ত্বাবধানেঃ হাঃ মুফতি মাহবুব ওসমানী ( এম. এ. ইন ইংলিশ, ফার্স্ট ক্লাস )