Life Insurance

 Life Insurance – ইসলামের দৃষ্টিতে জীবন বিমা

 

জীবন বীমা দেশের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অর্থগুলোকে পুঞ্জিভূত করে সামাজিকভাবে মানুষের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক কাঠামোকে শক্তিশালী করে থাকে। যে প্রতিষ্ঠানটি দেশের মানুষের জন্য এ ধরনের একটি সেবার নিশ্চয়তা দেয়, সেখানে কতিপয় মুসলমান ব্যক্তি জীবন বীমাকে ইসলাম বিরোধী বা নাজায়েজ বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। তারা এর পিছনে যে ধরনের যুক্তি উপস্থাপন করেন তা মূলত ইসলাম ও জীবন বীমা সম্পর্কে না জেনে এরকম একটি মনগড়া গোড়ামী যুক্তির অবতারণা করে থাকেন মাত্র। আমার বক্তব্য ঐ সকল ব্যক্তির এহেন তথাকথিত যুক্তিকেই ইসলাম বিরোধী বলাই শ্রেয়। যা হোক জীবন বীমা যে ইসলাম বিরোধী নয় এবং তা যে ইসলামেরই সৃষ্টি তা নিম্নলিখিত আলোচনার মাধ্যমে বুঝানোর চেষ্টা করা হলো।

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (স.) তার অনুসারীদেরকে বারংবার দুঃসময়ের জন্য সঞ্চয়ের সুপরামর্শ ও নির্দেশ দিতেন। ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার ‘বায়তুলমালের’ প্রতিষ্ঠা ও প্রয়োগ আমরা দেখতে পাই যা তদানিন্তন ইসলামী সমাজে একটি দুঃসময়ের সঞ্চয় হিসাবে খুবই খ্যাতি অর্জন করেছিল।

 

১) তদানিন্তন আরব বণিকরা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দুর্গম পাহাড় পর্বত বেষ্টিত পথে ব্যবসা বাণিজ্য করতে যেতো। কেননা ব্যবসা বাণিজ্য ছিল তাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উপায়। জীবন ও জীবিকার তাগিদে তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সে সমস্ত দুর্গম পথ পাড়ি দিত। ফলে দুর্ঘটনায় অনেক বণিক মারা যেতো। এদের অনেকেই থাকতো পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি। ফলে তাদের মৃত্যুতে ঐ পরিবারটি একেবারে নিঃস্ব হয়ে যেতো। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য আরব বণিক ও সমাজের বৃত্তশালী ব্যক্তিরা একটি তহবিল অর্থাৎ ‘বায়তুলমালের’ প্রতিষ্ঠা করেন। এ তহবিল বৃদ্ধির জন্য তারা তাদের আয়ের একটি অংশ ঐ তহবিলে জমা রাখতো। যদি তাদের কেউ মারা যেতো তখন মৃত ব্যক্তির পরিবারকে ঐ ‘বায়তুলমাল’ থেকে সাহায্য করা হতো। আজকের জীবন বীমা তারই একটি আধুনিক বিজ্ঞান সম্মত ব্যবস্থা। অথচ মুসলমানরা জীবন বীমাকে ইসলাম বিরোধী বলে আখ্যায়িত করছেন।

২) আরবদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র বাহন ছিল উট। দুর্গম পথ পাড়ি দিতে অনেক উটও মারা যেতো। আর কোন বণিকের উট না থাকলে তার পক্ষে ব্যবসা করা সম্ভব ছিল না। তখন সাহাবীরা মহানবী (সা.) এর কাছে যেয়ে এ অবস্থার জন্য পানাহ চাইলেন। মহানবী (সা.) তাদেরকে উপদেশ দিলেন তোমাদের যাদের উট আছে তারা সবাই মিলে একটি সংঘ গঠন কর এবং সেখানে প্রতিমাসে কিছু অর্থ সঞ্চয় কর। এরপর যাদের উট মারা যাবে-তাদেরকে ঐ সংঘ থেকে অর্থ নিয়ে উট কিনে দেওয়া যাবে। সাহাবীরা মহানবী (দঃ) এর নির্দেশ মত ‘উট মালিক সংঘ’ (Camel Owner Association) গঠন করেন। এরপর কারো উট মারা গেলে উক্ত সংঘ থেকে অর্থ নিয়ে তাকে উট কিনে দেয়া হতো।

জীবন বীমা যদিও একজন মানুষের অভাব পূরণ করে দিতে পারে না তবুও তার পরিবারকে বেঁচে থাকার অর্থ সংস্থান করে দিতে পারে। এটা যে কত বড় উপকার তা শুধু ভুক্তভোগিরাই জানে। পৃথিবীতে এমন কোন ব্যবস্থা আছে যা কোন মৃত ব্যক্তির পরিবারের জন্য এককালীন অর্থনৈতিক সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসে? এ মহত্ব তো ইসলামেরই শিক্ষা। তবু জীবন বীমাকে কেন ইসলাম বিরোধী বলে অভিহিত করা হয়? তা শুধুমাত্র ইসলাম ও জীবন বীমা বিষয়ে অজ্ঞতার পরিচয় নয় কি?

৩) কিছু মুসলমানকে বলতে শুনা যায় যে আল্লাহ দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন, আল্লাহ মানুষের মৃত্যুর পর তার পরিবারকে হেফাজত করবেন। মুসলমান হিসাবে আল্লাহকে বিশ্বাস করা ঈমানের একটি বড় অঙ্গ। কিন্তু আল্লাহ কোন মুসলমানকে তার পরিবারবর্গের হেফাজতের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নিষেধ করেননি।

রসুলে করিম (স.) এর বক্তবে এ কথার জবাব রয়েছে- আল্লাহর উপর ভরসা তোমাদের অবশ্যই রাখতে হবে, কেননা আসল দাতা তো তিনি। কিন্তু সে ভরসা হতে হবে পক্ষীকুলের মত। পক্ষীকুল পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর উপর ভরসা রাখে কিন্তু তারা বাসায় বসে থাকে না। বরং খাদ্যের সন্ধানে তারা প্রত্যহ ভোরে নীড় ছেড়ে বের হয়ে পড়ে। খাদ্য সংগ্রহ করে নিজে খেয়ে বাচ্চার জন্য পযাপ্ত খাদ্য নিয়ে ফিরে আসে আপন ঠিকানায়।

তেমনি তোমাদের ও আল্লাহর উপর ভরসা করে নিস্ক্রিয় হয়ে ঘরে বসে থাকলে চলবে না, তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর উপর ভরসার সঠিক অর্থ তা নয় বরং ভরসা সহকারে রুজি রোজরাগে সন্ধানে বের হতে হবে। সেজন্য তোমাদের মন, মগজ ও দেহের পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করতে হবে; বাস্তব কোন পন্থা অবলম্বন করতে হবে।

বিখ্যাত সাহাবী হযরত আমর ইবনে উমাইয়া জমরী (রা.) রসুল (সঃ) কে জিঞ্জাসা করলেন: হে রসুল (স.) আমি যে উটটিতে সওয়ার হয়ে আপনার দরবারে উপস্থিত হয়েছি সে উট ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করবো, না উটটি বেধে রাখবো? নবী করিম (সা.) উত্তর দিলেন, আগে উটটিকে রশি দিয়ে বাঁধ এবং সেই সাথে আল্লাহর উপর ভরসা কর। আমরা আল্লাহ উপর বিশ্বাস করি। কিন্তু তাই বলে ঘরের দরজা খোলা রেখে রাত্রে ঘুমাতে আল্লাহ বলেননি, কিংবা সম্পদ অরক্ষিত অবস্থায় ফেলে রাখার উপদেশ আল্লাহ দেননি। এ জন্য ঘরের দরজা বন্ধ ও গুদামের তালা চাবির ব্যবস্থা করার জন্য আল্লাহ আমাদের বুদ্ধি দিয়েছেন। তাই জীবন বীমা তো মানুষের উপকারে জন্য বুদ্ধিদীপ্ত একটি পন্থা।

৪) সৌদী আরব থেকে প্রকাশিত পত্রিকা ‘আরব নিউজ’ এর (১২ই মার্চ ১৯৯০সাল) “ইসলাম ইন পারসপেকটিভ” এর সম্পাদক বিশিষ্ট ইসলাম বিশেষজ্ঞ জনাব আদীল সালাহী জীবন বীমাকে ইসলামের দৃষ্টিতে জায়েজ বলে স্বীকৃতি প্রদান করেন। জীবন বীমা সম্পর্কে সেপ্টেম্বর ১৯৮৮ সালে একজন পাঠকের উত্তরে তিনি এই বক্তব্য প্রকাশ করেন। জীবন বীমা সম্পর্কে আর একজন পাঠকের উত্তরে ১০ আগস্ট ১৯৯০ সনে, জনাব আদিল সালাহী পুনরায় জীবন বীমাকে জায়েজ বলে পুনর্ব্যক্ত করেন।

৫) ইসলাম গবেষণা ভিত্তিক ধর্ম, এজতেহাদের মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান ইসলাম দিয়েছে। এ এজতেহাদের মাধ্যমে বীমা ও ইসলাম সম্মত হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। ইসলাম সঞ্চয় করতে, খাওয়া পরায় হিসাবী ও মিতব্যয়ী হওয়া জন্য উপদেশ দিয়েছে। আল্লাহর সৃষ্ট জীব পিঁপড়ারও জীবনে সঞ্চয়ের অভ্যাস লক্ষ্য করা যায়। ফলে মানুষের জন্য জীবন বীমা, সঞ্চয় অভ্যাস গড়ে তোলার একটি চমৎকার পন্থা। জনৈক ইসলাম বিশেষজ্ঞ কোরআন ও হাদীসের বাণী বিশ্লেষণ করে মন্তব্য করেন যে সঞ্চয় হল পরিজনের জন্য ব্যয়, উত্তরাকারীর জন্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, আপৎকালের জন্য সংস্থানের ব্যবস্থা এবং এব্যবস্থায় “জীবন বীমা হচ্ছে ইসলামের নির্দেশ ও উপদেশ সঙ্গে সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ”।

৬) কাজেই জীবন বীমা ইসলাম বিরোধী নয় বরং তা পৃথিবীর এবং সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের মধ্যে যারা এতিম, বিধবা, বৃদ্ধ এবং জ্বরাগ্রস্থ তাদেরকে অর্থনৈতিক পরিচর্যা করার একটি মহৎ প্রতিষ্ঠান। এ মহৎ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষের সেবা করার জন্য মুসলিম ও অমুসলিম বিশ্বে বেশ কয়েকটি বীমা কোম্পানী জীবন বীমা ব্যবসা করছে। যার একটি তালিকা নিম্নে দেওয়া হলো:

১। ইসলামিক বীমা কোম্পানী (সুদান), ১৯৭৯

২। ইসলামিক আরব বীমা কো. (সৌদি আরব), ১৯৭৯

৩। ইসলামিক আরব বীমা কো. (ইউএই), ১৯৮০

৪। দার আল মল আল আসলামী (জেনেভা), ১৯৮১

৫। ইসলামী তাকাফুল এবং রি তাকাফুল (বাহামা), ১৯৮৩

৬। ইসলামী তাকাফুল কোম্পানী (লুক্সেমবার্গ), ১৯৮৩

৭। আল বারাকা বীমা কোম্পানী (সুদান), ১৯৮৪

৮। ইসলামী বীমা এবং পুনর্বীমা কোম্পানী (বাহরাইন), ১৯৮৫

৯। শরিফাত তাকাফুল (মালয়েশিয়া), ১৯৮৫.

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন।

 

আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে বিস্তারিত জানতে  লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।

আইডিসি  মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আপনি আইডিসি  মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।

Islami Dawah Center Cover photo

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টারকে সচল রাখতে সাহায্য করুন!

 

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার ১টি অলাভজনক দাওয়াহ প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠানের ইসলামিক ব্লগটি বর্তমানে ২০,০০০+ মানুষ প্রতিমাসে পড়ে, দিন দিন আরো অনেক বেশি বেড়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।

বর্তমানে মাদরাসা এবং ব্লগ প্রজেক্টের বিভিন্ন খাতে (ওয়েবসাইট হোস্টিং, CDN,কনটেন্ট রাইটিং, প্রুফ রিডিং, ব্লগ পোস্টিং, ডিজাইন এবং মার্কেটিং) মাসে গড়ে ৫০,০০০+ টাকা খরচ হয়, যা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। সেকারনে, এই বিশাল ধর্মীয় কাজকে সামনে এগিয়ে নিতে সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে আপনাদের দোয়া এবং আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন, এমন কিছু ভাই ও বোন ( ৩১৩ জন ) দরকার, যারা আইডিসিকে নির্দিষ্ট অংকের সাহায্য করবেন, তাহলে এই পথ চলা অনেক সহজ হয়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।

যারা এককালিন, মাসিক অথবা বাৎসরিক সাহায্য করবেন, তারা আইডিসির মুল টিমের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন, ইংশাআল্লাহ।

আইডিসির ঠিকানাঃ খঃ ৬৫/৫, শাহজাদপুর, গুলশান, ঢাকা -১২১২, মোবাইলঃ +88 01609 820 094, +88 01716 988 953 ( নগদ/বিকাশ পার্সোনাল )

ইমেলঃ info@islamidawahcenter.com, info@idcmadrasah.com, ওয়েব: www.islamidawahcenter.com, www.idcmadrasah.com সার্বিক তত্ত্বাবধানেঃ হাঃ মুফতি মাহবুব ওসমানী ( এম. এ. ইন ইংলিশ )

 

 

IDC Partner