Rape-কেন ধর্ষনের মত পাপ কাজ সমাজে সংঘটিত হয়?
Rape-কেন ধর্ষনের মত পাপ কাজ সমাজে সংঘটিত হয়?
৬ বছরের শিশু, আপাদমস্তক বোরখাবৃতা কিংবা ৬০ বছরের বৃদ্ধারা ধর্ষিত হওয়ার ১৩৮ বছরের পুরানো মেডিকেলীয় ব্যাখ্যা
অবিশ্বাস্য ব্যাপার হলেও সত্য ১৩৮ বছর আগে রাশিয়ান বিজ্ঞানী পাভলভ এই ব্যাখ্যাটা দিয়ে গেছেন। বিজ্ঞানী পাভলভের এই কনসেপ্ট প্রত্যেক ডাক্তারকে তাঁর মেডিকেল লাইফের সেকেন্ড ইয়ারে পড়তে হয়।
সহজভাবে বলার চেষ্টা করি – নন মেডিকেলদের জন্য দেখি বলতে পারি কিনা।
বিজ্ঞানী পাভলভ একদল কুকুরকে ল্যাবে বেঁধে রেখে দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা নিরিক্ষা করেছিলেন। তিনি প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে তাদের খাবার দিতেন। কুকুরের সামনে থাকত খাবারের বাটি এবং আয়না।
সেখানে পাভলভ কুকুরের আচরণ পর্যবেক্ষণ করতেন। প্রতিদিন ঠিক একই সময়গুলিতে কুকুর গুলিকে খাবার দেওয়া হত। পাভলভের সাথে থাকতেন তাঁর ল্যাব সহকারী। খাবার গ্রহণের সময় কুকুরের কী পরিমাণ লালা ঝরত সেটি একটি কন্টেইনারে মাপা হত।
ব্রেইনের স্বাভাবিক রিফ্লেক্স হল খাবার গ্রহণের সময় লালা ঝরা।
কিন্তু পাভলভ দেখলেন যে – খাবার গ্রহণ নয়, খাবার দেখেও এবার কুকুরের লালা ঝরতে শুরু করেছে। পাভলভ খাবার দেখে কুকুরের কী পরিমাণ লালা ঝরত সেটি ও কন্টেইনারে মাপার ব্যবস্থা করলেন।
বেশ কিছু দিন যাওয়ার পর পাভলভ দেখলেন তিনি ল্যাবে ঢুকলেই কুকুরের লালা বের হচ্ছে।
সাথে খাবার থাক আর না থাক।
পাভলভ এবার নিজে ল্যাবে না গিয়ে খাবার বিহীন অবস্থায় তাঁর ল্যাব সহকারীকে ল্যাবে পাঠালেন। ল্যাব সহকারী অবাক হয়ে দেখলেন তাকে দেখে ও (ল্যাব সহকারী) দেখেও কুকুরের লালা ঝরছে।
পাভলভ এবার ভিন্ন কিছু করলেন।
তিনি কুকুরকে খাবার দেওয়ার সাথে সাথে একই সময়ে একটি ঘণ্টি বাজাতে থাকলেন।
খাবার দেওয়া হচ্ছে এবং ঘন্টি বাজানো হচ্ছে।
এরপর পাভলভ এবং সহকারী একদিন খাবার ছাড়াই ল্যাবে আসলেন এবং ঘন্টি বাজাতে শুরু করলেন।
দেখলেন খাবার না দেওয়া সত্ত্বেও কুকুরগুলোর একই পরিমাণ লালা ক্ষরণ হচ্ছে।
পাভলভ সিদ্ধান্তে আসলেন – খাবারের প্যাকেট, ল্যাব এসিস্টেন্ট, ঘন্টির শব্দ – এগুলি সব নিউট্রাল স্টিমুলেশন। এগুলির সাথে লালা ক্ষরণের সম্পর্ক নেই।
কিন্তু কুকুর তার লার্নিং বিহেভিয়ারে খাবারের সাথে খাবারের প্যাকেট, পাভলভ, ল্যাব সহকারী বা ঘণ্টার শব্দকে কো রিলেট করে ফেলেছে। এবং খাবারের সাথে যা যা ঘটে সব কিছুকেই লালা ক্ষরণের উপাদান হিসেবে তার ব্রেইন ডিটেক্ট করছে।
ব্রেইনের এই লার্নিং মেথডকে তিনি “কন্ডিশনিং” এবং ‘কন্ডিশান্ড রিফ্লেক্স’ বলেছেন।
অর্থাৎ ব্রেইন এমন একটি স্টিমুলেশনের প্রতি সাড়া দিচ্ছে, যেটিতে ব্রেইনের আদৌ রেস্পন্স করা উচিত না, কিন্তু করার কারন হচ্ছে ব্রেইন এই স্টিমুলেশনকে আরেকটি স্টিমুলেশানের সাথে সম্পৃক্ত করে ফেলেছে।
৬ বছরের মেয়ে, বোরখাবৃতা মেয়ে কিংবা ৬০ বছরের বৃদ্ধা স্বাভাবিকভাবে যৌনানুভুতি সৃষ্টি করে না। কিন্তু লার্নিং মেথডের কন্ডিশানিং এর কারনে একজন ধর্ষকের ব্রেইনে এটি মারাত্মক উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে।
কীভাবে এই কন্ডিশানিং হচ্ছে?
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেলথের ডিরেক্টর ডঃ আলিয়াস বলেছেন, মানুষের পার্সোনালাটি লার্নিং হয় তিনটা প্রধান ফ্যাক্টর দ্বারা শিক্ষা, সঙ্গ এবং পরিবেশ।
আসুন আমরা দেখি শিক্ষা সঙ্গ এবং পরিবেশ থেকে আমরা মেয়েদের ব্যাপারে কি প্রি কনসেপ্সহান পাচ্ছি?
:
:
:
:
:
ক্লাস এইটে “নিজেকে জানো” বইতে ইয়াং পুলাপাইনকে কী শিখাচ্ছেন?
- “পরস্পরের সম্মতিতে যৌন অনুভূতি প্রকাশ দৌষণীয় নয়।
ক্লাস নাইনে “হাজার বছর ধরে” উপন্যাসে ইয়াং পুলাপাইনকে কি শিখিয়েছেন?
- হাজবেন্ডকে ফাঁকি দিয়ে অন্যের সাথে সহীহ পরকীয়ার কলা কৌশল।
তের চৌদ্দ বছর বয়সে একটা ছেলে যখন হাজার বছর ধরে উপন্যাস পড়ে এবং সেখানে টুনি মন্তুর প্রেমকাহিনী পড়তে পড়তে সে অবচেতনভাবে ছেলেটি নিজেকে মন্তু আর মেয়েকে টুনি ভাবে এবং এই ভাবনা নিউরোলজিক্যাল দৃষ্টিকোণ থেকে শুধু স্বাভাবিকই নয়, বরং না ভাবাটাই অস্বাভাবিক।
ক্লাস ইলেভেনে “পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসে ইয়াং পুলাপাইন কী শিখিয়েছেন?
- ওয়াইফকে ফাঁকি দিয়ে শালীর সাথে সহীহ পরকীয়ার কলা কৌশল।
কুবের কপিলার সম্পর্ক পোড়ার পর, আপনি আপনার শালীকে কী চোখে দেখেন? বাংলা সাহিত্যের গল্প, নাটক, উপন্যাস, কবিতায় নারীকে কী হিসেবে চিত্রিত করেছেন কবি সাহিত্যিকেরা? এই গল্প/সাহিত্য আপনার মস্তিষ্কে কী ধরণের চিত্রকল্প তৈরি করে?
ক্লাস ইলেভেনে শকুন্তলা নিবন্ধে ইয়াং পুলাপাইনকে কি শিখিয়েছেন?
“শকুন্তলার অধরে নবপল্লবশোভার সম্পূর্ণ আবির্ভাব; বাহুযুগল কোমল বিটপের বিচিত্র শোভায় বিভূষিত; আর, নব যৌবন, বিকশিত কুসুমরাশির ন্যায়, সর্বাঙ্গ ব্যাপিয়া রহিয়াছে”। গাছের বাকলপড়া শকুন্তলার বর্ণনা আপনার মনের মধ্যে কী ধরণের ছবি উপস্থাপন করে?
- শকুন্তলার নগ্ন দেহের রগরগে বর্ণনা।
শকুন্তলার দেহের বর্ণনার এই লাইনগুলো আপনার কল্পনার চিত্রনাট্যে কী ধরণের ছবি তুলে ধরে?
সাহিত্যগুলোতে নারীকে কী রূপে উপস্থাপন করছেন?
- ভোগ বিলাসের সামগ্রী।
বিজ্ঞাপনে নারীকে কী হিসেবে উপস্থাপন করছেন?
- ভোগ পণ্য।
নাটক, টেলিফিল্ম, ছায়াছবিতে নারীকে কীভাবে উপস্থাপন করছেন?
- ভোগপণ্য, কামনার প্রতিমা।
ছায়ানট, শিল্পকলা একাডেমি, চারুকলা, ললিতকলায় নারীকে কীভাবে উপস্থাপন করছেন?
- ভোগপণ্য, কামনার প্রতিমা।
মিডিয়ায় নারীকে কীভাবে উপস্থাপন করছেন?
- ভোগপণ্য, কামনার প্রতিমা।
এইডসের বিজ্ঞাপনে কী শেখাচ্ছেন?
- বাঁচতে হলে জানতে হবে (মানামানির দরকার নেই, জানলেই হবে। ফার্স্ট ওয়ার্ল্ডে তো এইডসের জ্ঞান নেই বললেই চলে, তাই তাদের মধ্যে এত এত এইডস!)
একজন মিথ্যাবাদী, প্রতারক, উচ্চাভিলাষী, অল্প শিক্ষিত, চরিত্রহীন, পতিতা কোয়ালিটির মেয়েকে দেশের সেরা মেয়ে করার নষ্ট প্রতিযোগিতা নিয়ে অন লাইন অফ লাইন মিডিয়ার গুষ্টি উদ্ধার আর তার পেছনে পতিতার খদ্দের দেশের তামাম বিখ্যাত সব কর্পোরেট হাউজের ছুটে চলার মাধ্যমে কী শেখাচ্ছেন জেনারেশন নেক্সটকে? (মিস বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান নিয়ে কামড়াকামড়ি)
আমাদের সাহিত্য, নাটক, শিল্পকলা, বিজ্ঞাপন, সংস্কৃতি একটা ছেলের মনে একটা মেয়ে সম্পর্কে কি ধরণের ইমেজ দিচ্ছে? এই একটা বিশেষ ছাঁচেই ছেলেদের cognition গড়ে উঠছে, এটাই ব্রেইনের স্মৃতিভান্ডারে জমা হচ্ছে। আসলে ব্রেইনের প্রি কনসেপশানে বা স্মৃতি ভান্ডারে নারী মানেই এমন একটি সত্ত্বা যাকে দিয়ে দেহের এবং মনের ক্ষুধা মেটানো যায়।
এরপর যখন বলেন, নারীকে সম্মান করতে হবে, মায়ের/বোনের দৃষ্টিতে তাকাতে হবে, সেটা অনেকের ব্রেইন মেনে নেয় না। কারন পরিবেশ থেকে নারী সম্পর্কে ব্রেইনে একটা কনসেপ্টই এস্টাব্লিশ হয়েছে – ভোগ্যপণ্য!
এই প্রি কনসেপশান থেকেই ৬ বছর, ৬০ বছরের নারী কিংবা বোরখাবৃতা, যেই হোক ধর্ষণেচ্ছা থেকে কেউই রেহায় পাচ্ছে না।
:
:
:
:
:
মেডিকেলীয় টার্মে প্রত্যেক রোগের তিনটি ডায়মেনশান আছে – Agent (রোগের কারন), Host (যার মধ্যে রোগের কারন বা জীবাণু আক্রমণ করে) এবং Environment (যে পরিবেশে রোগ হয়)
উদাহরণ স্বরূপ টাইফয়েড রোগের
এজেন্ট হচ্ছে সালমনেলা ব্যাকোটেরিয়া
হোস্ট – টাইফয়েড রোগী যিনি ব্যাক্টেরিয়া আক্রান্ত পানি/খাবার ভক্ষণ করেছেন
আর পরিবেশ হচ্ছে – দূষিত পানি/খাবার
আবার সড়ক দুর্ঘটনার জন্য
এজেন্ট – অদক্ষ/মাদকাসক্ত ড্রাইভার
হোস্ট – ফিটনেস হীন গাড়ি আর
এনভাইরনমেন্ট – আঁকাবাঁকা রাস্তা, রঙ পার্কিং, অস্পষ্ট রোড সাইন
এই এজেন্ট, হোস্ট এবং পরিবেশের মিথস্ক্রিয়ায় রোগ হয়।
ধর্ষণ একটি নৈতিক রোগ যার
এজেন্ট – বিকৃতকাম নৈতিকতা বিবর্জিত পুরুষ
হোস্ট – নারী আর
পরিবেশ – যৌন সুড়সুড়িময় পরিবেশ যেটির কথা আগেই উল্লেখ করেছি।
এখন মেডিকেলীয় পদ্ধতিতে টাইফয়েড নিয়ন্ত্রণের জন্য
এন্টিবায়োটিক খেতে হবে (সালমনেলা ব্যাক্টেরিয়াকে মেরে ফেলার জন্য তথা এজেন্ট কন্ট্রোল করার জন্য)
দূষিত খাবার/পানি খাওয়া যাবে না (হোস্ট কন্ট্রোল) এবং
পানি দূষণ ও খাবার দূষণ বন্ধ করতে হবে (এনভাইরনমেন্ট কন্ট্রোল)
তেমনি সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধে
ড্রাইভারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্থি প্রদান, তাদের মধ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণ (এজেন্ট কন্ট্রোল)
ফিটনেস বিহীন গাড়ির রুট পারমিট বাতিল (হোস্ট কন্ট্রোল)
আঁকাবাঁকা রাস্তা, রঙ পার্কিং, অস্পষ্ট রোড সাইন বন্ধ করতে হবে (এনভাইরনমেন্ট কন্ট্রোল)
তেমনি ধর্ষণ বন্ধের জন্য
দৃষ্টান্তমূলক উন্নত শাস্থি (সৌদি আরবের মত), পুরুষদের মধ্যে নৈতিক শিক্ষা জাগ্রত করা – এজেন্ট কন্ট্রোল
নারীদের সভ্যভাবে চলতে উদ্ভুদ্ধ করণ (হোস্ট কন্ট্রোল)
এবং নাটক, গান, গল্প সাহিত্য, বিজ্ঞাপনে নারীকে পণ্য রূপে উপস্থাপন বন্ধ করতে হবে (এনভাইরনমেন্ট কন্ট্রোল)
আমার আছে এন্টিবায়োটিক, আমি ইচ্ছামত বিশুদ্ধ দূষিত সব খাব, কিন্তু টাইফয়েড হবে না – এটা হয় না
তেমনি নৈতিকতাবোধ জাগ্রত না করে, নারীদের সভ্যভাবে চলতে না বলে, পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ না করে, শুধু পুরুষদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে ধর্ষণ বন্ধ হবে না।
কারন আইনের দৌড় খুব সীমিত। সন্তান মাকে হত্যা করছে, মা সন্তানকে হত্যা করছে, স্বামী স্ত্রীকে হত্যা করছে, স্ত্রী স্বামীকে হত্যা করছে – আইন এখানে কী ই বা করবে? পাহারা দিয়ে, আইন করে অন্যায় বন্ধ করা যায় না যদি মূল্যবোধ জাগ্রত না হয়। ধর্ষণে প্রথম স্থান (রেফারেন্স কমেন্টে) অধিকার করে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের এই শিক্ষা ই দিচ্ছে।
…………………………………………………………………….
ডা. মো ইলিয়াস
রেসিডেন্ট, নিউরোলজি
আরও পড়ুন…
Salam-সঠিক ভাবে সালাম দেওয়া ও নেওয়ার নিয়ম ও পদ্ধতি
সালাম ইসলামের সৌন্দর্যময় একটি দিক। সালাম আদান প্রদানের ফলে শত্রু থেকে সখ্যে পরিণত হয়। দুই ব্যাক্তির মাঝে ভালবাসা ফয়দা হয়। চেনা পরিচিতদের মাঝে ভালবাসা বৃদ্ধি পায়। অচেনা মানুষকে আপন করে নেওয়া যায়। এই মনোহর রূপমাধুরী শুধুমাত্র ইসলামেই রয়েছে। যা অন্য কোন ধর্মে নেই।
জনৈক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করলেন— ইসলামে কোন্ জিনিসটি উত্তম? তিনি বললেন, তুমি খাদ্য খাওয়াবে ও চেনা অচেনা সকলকে সালাম দিবে। সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ১২
“সালাম” মানেই শান্তি কামনা করা। আমি খুব অবাক হয় মাদ্রাসার ছাত্রদের দেখে! তাদের মাঝে রয়েছে সালামের প্রচার-প্রসার। ছোট-বড় সবাইকে সালাম দেয়। ছোট-বড় কোন ভেদাভেদ নেই। অধুনা আমাদের সমাজে এর বড়ই অভাব।
আমি বড় বলে ছোটরা আমাকে সালাম দিবে। আমি বড়, আমি কেন ছোটদের সালাম দেব? আর একটু নাম করা ব্যাক্তিত্ব হলে তো কথায় নেই। না দিলে পিছনে গিয়ে শেকায়ত করে— অমুকের ছেলে বড় বিয়াদব। আমি পাশ দিয়ে আসতেছি দেখা সত্বেও সালাম দেয়নি।
রাসূল সা. এরকম ভেদাভেদ করতেন না। রাসূল (ﷺ) ছোট-বড় সবাইকে সালাম দিতেন। আমরাও এই অভ্যাসকে নিজেদের মাঝে ফিট্ করে নেওয়ার প্রয়াস চালাব-ইন শা আল্লাহ!
সালাম মানেই শান্তি। কোন মুসলমান ভাইকে দেখামাত্র বললাম, “আসসালামু আলাইকুম।” অর্থ হলো, “আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।” সালামের উত্তরে বলল, “ওয়ালাইকুমুস সালাম”। অর্থ হলো, “আপনার উপরেও শান্তি বর্ষিত হোক।” এভাবে পরিচিত অপরিচিত সবার জন্য শান্তি কামনা করা একমাত্র ইসলামেই রয়েছে।
যে আগে সালাম দেয়, সে অহংকার মুক্ত হয়। কারণ, অহংকার ব্যাক্তিরা আগে সালাম দিতে লজ্জাবোধ করে। বরং তাঁরা অন্যের সালামের প্রতি মুখাপেক্ষী। আমি একজন নামকরা ব্যাক্তি। আমি কীভাবে দিনমজুরকে সালাম দিব? অহংকারীরা সর্বসাধারণ জনগণকে তুচ্ছ মনে করে। কিন্তু, ইসলাম এই ভেদাভেদকে দূরীভূত করতেই সালামকে প্রাধান্য দিয়েছে। হাদীসে আছে—
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন—মানুষের মধ্যে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক উত্তম ঐ ব্যক্তি, যে আগে সালাম দেয়। সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫১৯৭
আল্লাহ তাআলা এরশাদ ফরমান—
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যখন তোমাদের সালাম দেওয়া হবে, তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম সালাম দেবে অথবা জবাবে তাই দেবে।’ সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ৮৬
তবে অধুনা আমাদের সমাজে কিছু কুসংস্কার এখনো রয়ে গেছে। যখন কোন মুসলমান ভাইয়ের সাথে দেখা হয়, সালাম দিয়ে মুসাফাহা করত। কিন্তু, এখন বলে হাত নাড়িয়ে হাই (hi)। অথচ তাঁর মাঝে কোন বরকত নেই। না আছে নেকি, না আছে বরকত!
আরেকটি কুসংস্কার হলো— মাথা নিছু করে পা ধরে সালাম করা। যেটি সম্পূর্ণ শরীয়তবহির্ভূত কাজ। একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করা সম্পূর্ণ হারাম। পা ধরে সালাম বিধর্মীদের সংস্কার, যেটি আঁকড়ে ধরছে মুসলমানরা।
ইসলামের মনোহারিত্ব নিয়ে লিখতে গেলে অনেক লিখা। তন্মধ্যে সালাম হলো ইসলামের সৌন্দর্যময় একটি দিক। সালাম নিয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে উপস্থাপন করলাম।
সালামের সঠিক ও সুন্নতি পদ্ধতি কি?

সালামের সঠিক ও সুন্নতি পদ্ধতি:
সম্মানিত ভাই ও বোনেরা, সালাম দেওয়া সুন্নত এবং উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। আমাদের অনেকেরই সালাম দিতে গিয়ে বা সালামের উত্তর দিতে গিয়ে অজান্তেই ভুল হয়ে যায়। যেমনঃ আমরা প্রতিদিন অনেককেই এভাবে সালাম দিতে শুনি যে, স্লামালাইকুম, আস সালামালাইকুম, সেলামালাইকুম, ইত্যাদি। আবার উত্তর দেয়ার সময়ও শোনা যায় ভুল শব্দের ব্যবহার।
যেমন, অলাইকুম সালাম, অলাইকুম আস-সালাম ইত্যাদি। সালাম একটি দুআ। ইসলামের শেআর ও প্রতিক পর্যায়ের একটি আমল। এর সহীহ উচ্চারণের প্রতি গুরুত্ব দেয়া জরুরি। কমপক্ষে এতটুকু বিশুদ্ধ উচ্চারণ অবশ্যই জরুরি, যার দ্বারা অর্থ ঠিক থাকে।
সালাম এর সঠিক উচ্চারণ হলো, السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি, ওয়া বার-কাতুহ্। وَعَلَيْكُمُ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ ‘ওয়া আলাইকুমুস-সালাম, ওয়া রহমাতুল্লাহি, ওয়া বার-কাতুহ্।
আরবী দেখে এর সহীহ উচ্চারণ শিখে নেয়া উচিত অন্যথায় কন্ঠ বাদ পড়ে যায়- ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম’-এর স্থলে ‘অলাইকুম আস সালাম’ হয়ে যায়, যা স্পষ্ট ভুল। ইসলামে সালামের গুরুত্ব অপরিসীম। সালাম শান্তির প্রতীক। সালামে রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। সালাম এভাবে দিতে হয়, ‘আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।’ সালাম মুসলমানদের পরস্পরে ভালোবাসা, হৃদ্যতা সৃষ্টি করে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা ইমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আর ইমানদার হতে পারবে না পরস্পরে ভালোবাসা না হলে। তোমাদের কি এমন একটি বিষয়ের কথা বলব, যা করলে তোমাদের পরস্পরে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রসার ঘটাও।’ (মুসলিম : ৫৪)
এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করলেন, ইসলামের কোন কাজ সবচেয়ে ভালো? রাসুল (সা.) বললেন, ‘খাবার খাওয়ানো এবং পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়া।’ (বোখারি : ১২)
সালামের প্রতিটি বাক্যে দশ নেকি। সালামে মোট তিনটি বাক্য আছে। সুতরাং যে পূর্ণ সালাম দেবে তার ত্রিশটি নেকি অর্জন হবে। একবার এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলল, ‘আস্সালামু আলাইকুম’, রাসুল তার উত্তর দিলেন, তারপর সে বসল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘দশ নেকি।’ অতঃপর অন্য এক ব্যক্তি এলো। সে বলল, ‘আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।’
রাসুল (সা.) উত্তর দিলেন। পরে ওই ব্যক্তি বসে পড়ল। রাসুল (সা.) বললেন, ‘বিশ নেকি।’ অতঃপর অন্য একজন এলো। সে বলল, ‘আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু।’ রাসুল (সা.) উত্তর দিলেন। সেও বসে পড়ল। রাসুল (সা.) বললেন, ‘ত্রিশ নেকি।’
(তিরমিজি : ২৬৮৯) সালামের বিধান ও তার পদ্ধতি : প্রথমে সালাম দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত, উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। যদি সালামের দ্বারা কোনো দলকে উদ্দেশ্য করা হয়, তাহলে তার উত্তর দেওয়া ওয়াজিবে কেফায়া।
অর্থাৎ একজন উত্তর দিলে সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে, তবে সবারই উত্তর দেওয়া উত্তম। উত্তর দেওয়ার সময় সালামের চেয়ে বাড়িয়ে উত্তর দেওয়া সুন্নাত। যেমন কেউ ‘আস্সালামু আলাইকুম’ বললে উত্তরে ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলবে।
কেউ ‘আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বললে উত্তরে ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু’ বলবে। চিঠি বা মেসেজ ইত্যাদির শুরুতে সালাম দেওয়া সুন্নাত। এর মৌখিক বা লিখিত উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। (তিরমিজি ২/১০১)
সালামের আদবসমূহ : মানুষের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রসার ঘটানো প্রয়োজন, যাতে তা মুসলমানদের প্রতীকে পরিণত হয়। বিশেষ কোনো দলকে সালাম দেওয়া বা শুধু বড়দের দেওয়া কিংবা ছোটদের না দেওয়া উচিত নয়।
অনুরূপভাবে অপরিচিতকে বাদ দিয়ে শুধু পরিচিতকে সালাম দেওয়াও কাম্য নয়। (বুখারি : ১২) উত্তম হলো- ছোট বড়কে প্রথমে সালাম দেবে। পথচারী উপবিষ্টকে সালাম দেবে। আরোহণকারী পথচারীকে সালাম দেবে। কম লোক বেশি লোককে সালাম দেবে।
(বুখারি : ৬২৩১) উচ্চ স্বরে সালাম দেওয়া ও উত্তর দেওয়া সুন্নাত। কেননা সালাম উচ্চারণ করতে হয়। হাত বা মাথার ইশারা ইত্যাদি সালাম বলে বিবেচিত হবে না।
হ্যাঁ, দূরে হলে বা উত্তর শুনতে কোনো কিছু বাধা হলে মুখে উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে হাত বা মাথার ইশারায় উত্তর দেওয়ার কথা জানিয়ে দেবে। কাছে হলে সালামে হাত ওঠানো অপ্রয়োজনীয় ও সুন্নাতের খেলাফ। (তিরমিজি ২/৯৯)
সুন্নাত হলো দুজন আলাদা হওয়ার পর পুনরায় সাক্ষাৎ হলে আবার সালাম দেওয়া। সাহাবায়ে কেরাম যখন হাঁটতেন, তখন তাঁদের সামনে কোনো গাছ অথবা স্তূপ পড়ত, তাঁরা ডানে-বাঁয়ে আলাদা হয়ে যেতেন। অতঃপর আবার সাক্ষাৎ হলে একে অন্যকে সালাম দিতেন।
সালাম শুধু মুমিনদের অভিবাদন, কাফেরদের সালাম দেওয়া বৈধ নয়। হ্যাঁ, যদি এমন জায়গায় উপস্থিত হয় যেখানে কাফের-মুসলমান একত্রে থাকে, সেখানে সালাম দেওয়ার সময় মুসলমানের নিয়ত করবে। (সুনানে আবি দাউদ : ৫২০৫)
যদি কোনো অমুসলিম সালাম দেয় তাহলে তার জবাবে ‘আস্সালামু আলা মানিত্তাবাআল হুদা’ বলবে। (মুসনাদে আহমাদ : ২৪৩০৪) কিংবা ‘ওয়ালাইকা’ বা ওয়ালাইকুম’ বলবে। অমুসলিমদের বিশেষ প্রয়োজনে সালাম ছাড়া অন্য কোনোভাবে অভিবাদন জানানো বৈধ। যেমন শুভ সকাল বা শুভ রাত্রি ইত্যাদি।
তবে এমন বাক্য ব্যবহার করা যাবে না, যা অন্য ধর্মের জন্য নির্ধারিত। অন্যের মাধ্যমে কারো কাছে সালাম পৌঁছানোও সুন্নাত। যার কাছে সালাম পৌঁছানো হবে উত্তর দেওয়া তার দায়িত্ব। (তিরমিজি ২/৯৯) মাহরাম (যাদের দেখা বৈধ) নারীদের বা স্ত্রীদেরও সালাম দেওয়া সুন্নাত।
আর ফেতনা থেকে নিরাপদ হলে পরনারীদেরও সালাম দেওয়া জায়েজ। অনুরূপ নারীরাও পরপুরুষদের ফেতনার আশঙ্কা না হলে সালাম দিতে পারবে। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬৯) কাউকে ঝুঁকে সালাম দেওয়া জায়েজ নেই। (তিরমিজি : ২৭২৮)
যেসব অবস্থায় সালাম দেওয়া মাকরুহ : যে ব্যক্তি সালামের উত্তর দিতে অক্ষম তাকে সালাম দেওয়া মাকরুহ। যথা : নামাজ, আজান-ইকামত, জিকির, তিলাওয়াত, ধর্মীয় জ্ঞানচর্চা, খানাপিনা ও ইস্তিঞ্জারত ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া, গুনাহের কাজে লিপ্ত ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া, স্ত্রী সহবাস ইত্যাদি অবস্থায় সালাম দেওয়া মাকরুহ। (রদ্দুল মুহতার ১/৪১৪) লেখক : ফতোয়া গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার
কিছু কিছু ক্ষেত্র সালাম দেয়া যাবে না
১. আযানরত, ইকামতরত কিংবা খুদবা পড়া অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।
২. যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে খেল-তামাশায় মগ্ন তাকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।
৩. বার্থ রুম এ থাকা অবস্থায় সালাম দেওয়া উচিত নয়।
৪. অমুসলিমকে সালাম দেওয়া উচিত নয়। তাই আমরা আমাদের সমাজে, পরিবারে, অফিসে সালামের প্রচলন করব। সেই সাথে আমরা ইসলামকে মেনে চলব। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
অমুসলিমকে সালাম দেওয়ার বিধান কী? এবং তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা কি জায়েজ?
অমুসলিমকে ‘সালাম’ দেওয়া বৈধ নয়। কোনো প্রয়োজনে দিতে হলে ‘আসসালামু আল মানিত্তাবাআল হুদা’ বলবে। আর অমুসলিমরা সালাম দিলে তদুত্তরে শুধু ‘ওয়া আলাইকুম’ বলবে। বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে মুসলিমদের ওপর অমুসলিমদের প্রাধান্য দেওয়া নিন্দনীয়।
তবে তাদের সঙ্গে যাবতীয় লেনদেন, সদাচরণ ও সাধারণ সম্পর্ক রাখা বৈধ। (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৫১, সুরা আল ইমরান, আয়াত : ১১৮, আল বাহরুর রায়েক : ৮/৩৭৪, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া : ১৯/৫৪৫, ফাতাওয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত : ১২/১০৩)
সালাম আদান-প্রদানে যে ১২ ভুল করা উচিত নয়
১. অশুদ্ধ উচ্চারণে সালাম দেওয়া: এটি মারাত্মক ভুল কাজ। আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ হচ্ছে পূর্ণ সালাম। শুধু আসসালামু আলাইকুম বললেও চলবে। তবে উচ্চারণে ভুল করা যাবে না।
২. ছোটদের প্রতি বড়দের সালাম না দেওয়া: এটিও ভুল প্রচলন। বড় বা বয়স্ক মানুষ ছোটদের সালাম দিতে কোনো বাধা নেই। যেমন- শিক্ষক ছাত্রদের এবং বাবা-মা সন্তানদের সালাম দেবেন। আগে সালামকারী বেশি সওয়াব ও মর্যাদার অধিকারী হয়ে থাকেন।
৩. অপরিচিত কাউকে সালাম না দেওয়া: পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়ার নির্দেশ এসেছে। তাই পরিচিত ও মুখ চিনে সালাম দেওয়া গর্হিত ও নিন্দিত কাজ।
৪. সালাম দেওয়ার সময় মাথা ও বুক ঝুঁকে নিচু করা: সালাম দেওয়ার সময় মাথা ও বুক ঝুঁকে নিচু হয়ে সালাম দেওয়া নিষেধ। অনেকে পদস্থ বা বড় কোনো ব্যক্তিকে সালাম দেওয়ার সময় এমন করে থাকে। হাদিসে এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এ থেকে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়।
৫. সালামের উত্তর দিয়ে আবার সালাম: আপনাকে কেউ সালাম দিল, আপনি উত্তর দেওয়ার পর ওই সালামকারীকে আবার সালাম দিলেন। অনেকে এ কাজটি অজ্ঞতাবশত করে থাকেন। উত্তম হলো, কারো সালামের অপেক্ষা না করে নিজেই আগে সালাম দেওয়া। কিন্তু কেউ আগে সালাম দিয়ে ফেললে তার সালামের উত্তর দেওয়াই নিয়ম। তাকে আবার সালাম দিতে হবে না।
৬. সালামের উত্তর না দিয়ে আবার সালাম: সালাম পাওয়ার পর উত্তর দেওয়াই বিধান। কিন্তু অনেকে সালাম দেওয়ার পর উত্তর না দিয়ে সালামদাতাকে আবার সালাম দেয়। এমনটি ঠিক নয়। দুজনের একজন সালাম দেবেন, অপরজন সালামের উত্তর দেবেন এটাই বিধান।
৭. সালাম দেওয়ার পর সালাম দিয়েছি বলা: কাউকে সালাম দেওয়ার পর সালাম না শুনলে বা উত্তর না-দিলে আমরা বলি, ‘আপনাকে সালাম দিয়েছি’। এভাবে বলা ঠিক নয়। তাকে আবার পূর্ণ সালাম দেওয়াই নিয়ম।
৮. কতক্ষণ বসার পর সালাম দেওয়া: সাক্ষাতের শুরুতেই সালাম দেওয়া সুন্নত। কতক্ষণ বসার পর সালাম করা অনুচিত।
৯. সালাম পাঠানোর পদ্ধতি: কারো কাছে সালাম পাঠানোর দরকার হলে আমরা বলি, অমুককে গিয়ে আমার সালাম দেবেন/বলবেন। এভাবে বলা ঠিক নয়। নিয়ম হল এভাবে বলা, অমুককে আমার পক্ষ থেকে আসসালামু আলাইকুম… বলবেন। তেমনি, সালাম পৌঁছানোর পরও ‘অমুকে আপনাকে সালাম দিয়েছেন’ এ রকম না বলে বলা উচিত, অমুক আপনাকে আসসালামু আলাইকুম… বলেছেন।
এক্ষেত্রে সালামের উত্তরদাতাও কেবল প্রেরককে উত্তর দেবেন না। বরং প্রেরক ও বাহক উভয়কে দোয়ায় শরিক করবেন। তিনি এভাবে উত্তর দেবেন, ওয়া আলাইকা ওয়া আলাইহিস সালাম।
১০. ফোনে বা সাক্ষাতে সালামের আগে হ্যালো বা অন্যকিছু বলা: ফোন বা মোবাইল ফোনে সালাম দেওয়ার আগে হ্যালো বা অন্য কোনো কথা বলা ঠিক নয়। আগে সালাম দিয়ে তারপর অন্য কথা বলবেন। হ্যালো বলার দরকার হলে সালাম দেওয়ার পর বলবেন। ফোন ছাড়া সাক্ষাতের বেলায়ও কথাবার্তার আগেই সালাম দেওয়াই সুন্নত। কেননা রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কথাবার্তা বলার আগে সালাম দিতে হয়। (তিরমিযি, হাদিস নং- ২৬৯৯)
১১. অনুষ্ঠান শেষে বা বিয়ের আকদ হওয়ার পর সালাম: অনেক জায়গায় দেখা গেছে, কোনো অনুষ্ঠান- বিশেষত দোয়া বা এ ধরনের কোনো মজলিস শেষ হওয়ার পর সালাম দেন অনেকে। এছাড়া বিয়ের আকদ হওয়ার পর বর উপস্থিত সবাইকে সালাম দেন।
বর সালাম না দিতে চাইলে বা ভুলে গেলে অন্যরা তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সালাম দাও। না দিলে খারাপ এবং বেয়াদবি মনে করা হয়। এসব কুসংস্কার ও ভুল প্রচলন। সালাম হবে সাক্ষাতের সময়। সুতরাং কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়ার পর কারো সঙ্গে দেখা হলে তাকে সালাম করবেন। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষে সালামের প্রথা বর্জন করা উচিত।
১২. বক্তব্যে প্রথমেই সালাম দেওয়া: সাক্ষাতের শুরুতেই সালাম দিয়ে কথাবার্তা শুরু হবে- এটিই ইসলামের নিয়ম। কিন্তু আজকাল বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যায়, বক্তা বিভিন্ন কথা বলার পর সালাম দেন।
যেমন তিনি বলেন, মঞ্চে উপবিষ্ট মান্যবর সভাপতি, অতিথিরা… সবাইকে আমার সালাম আসসালামু আলাইকুম। এভাবে সালাম বলা ইসলামী রীতির পরিপন্থি। শ্রোতা ও দর্শকদের মুখোমুখি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সালাম দেওয়া নিয়ম।-প্রিয়.কম লিখেছেন: মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেমী, সম্পাদনা: সোহেলুর রহমান
অনেকেই সালাম দেওয়ার সময় দেখি কপালে হাত ঠেকান। এটা করা কি ঠিক?
উত্তর : সালাম দেওয়ার সময় হাত উঠানো বা কপালে ঠেকানো নিতান্তই অর্থহীন ব্যাপার। মুখে ‘আসসালামু আলাইকুম’ স্পষ্ট করে বলাই সালাম।
হাত উঠানো বা কপালে ঠেকানো দেশিয় রীতি, সুন্নত বা শরীয়তের বিধান নয়। এসব রীতি যথাসম্ভব বর্জনীয়। উত্তর দিয়েছেন : আল্লামা মুফতি উবায়দুর রহমান খান নদভী, সূত্র : জামেউল ফাতাওয়া, ইসলামী ফিক্হ ও ফাতওয়া বিশ্বকোষ। প্রশ্ন পাঠাতে নিচের ইমেইল ব্যবহার করুন। info@IslamiDawahCenter.com
আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন!
আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে জানতে লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।
আইডিসি মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
আপনি আইডিসি মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.
আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।
কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।
ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।
Related Posts
Leave a Reply Cancel reply
Categories
- advices
- Ahle Hadis
- Allah
- Amal
- Arabic Communication
- Arabic Grammar
- Arif Azad
- Bangladesh
- Biography
- Child care
- Country
- Death
- Dowry
- Dua
- Education
- Eid
- Family
- Fasting
- Fatwa
- Gazwatul Hind
- Hadith
- Hajj
- Halal or Haram
- Humble
- Husband & Wife
- IDCM
- Iman
- Interest
- Islamic Books
- Islamic Days
- Islamic Economi
- Islamic Education
- Islamic FAQ
- Islamic Future
- Islamic History
- Islamic Lectures
- Islamic Life
- Islamic Politics
- Islamic Rules
- islamic song
- islamic story
- Jihad
- Jinn
- let's learn arabic
- Magic
- Marriage
- Mosque
- Motivation
- Muhammad SM
- Muslims
- News
- Parenting
- Patriotism
- Pending
- Personal Development
- Poet
- Pornography
- Press Release
- Prophets
- Quran
- Quran and Science
- Quran Interpretation
- Qurbani
- Relations
- Rizq
- Ruqyah
- Sacrifice
- Sadaqah
- Safety
- Sahaba
- Salah
- Salat
- Sex
- Sin
- Tajweed
- Taqwa
- Tasawwuf
- Tawba
- Tawhid
- Veil
- Weed
- Zakat
Recent Posts
- ব্যাংকে রাখা ফিক্সড ডিপোজিটের উপর কি প্রতি বছর যাকাত আবশ্যক? – Zakat on Fixed Deposit – সমিতির টাকার ওপর জাকাত আসবে কি? March 25, 2023
- Symptoms of Bad and Good Death – খারাপ এবং ভালো মৃত্যুর আলামত সমূহ March 20, 2023
- Taweez in Islam – ইসলামে তাবিজ জায়েজ হলেও কেন তাবিজ থেকে দূরে থাকা উত্তম? March 20, 2023
- Dua to be rich – ধনী হওয়ার দোয়া/আমল- আজ থেকেই শুরু হোক ধনী হওয়ার পথচলা March 7, 2023
- Islam has never encouraged polygamy – ইসলাম একাধিক বিয়েকে কখনো উৎসাহিত করে নি! January 9, 2023