Veiling is obligatory as like prayer

✍️ লিখেছেনঃ মাহবুব ওসমানী 📖 ইসলামি দাওয়াহ সেন্টার | https://islamidawahcenter.com


ভূমিকা

আমাদের সমাজে আজ একটি বিস্ময়কর বৈপরীত্য দেখা যায় — অনেক নারী নিয়মিত নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, দান-সদকা করে; কিন্তু পর্দা (হিজাব) করে না কিংবা হালকাভাবে নেয়। অথচ পর্দা যেমন নামাজের মতোই ফরজ, বরং এটি মুসলিম নারী-পুরুষ উভয়ের ঈমান রক্ষার অপরিহার্য অংশ।

কিন্তু প্রশ্ন হলো —
❓ কেন অনেক নারী নামাজ পড়ে কিন্তু পর্দা করে না?
❓ কেন আল্লাহর এই ফরজ বিধানকে এত হালকাভাবে নেওয়া হয়?

চলুন বিষয়টি কুরআন ও হাদীসের আলোকে এবং সামাজিক বাস্তবতার বিশ্লেষণসহ বুঝে নেই।


পর্দা কুরআনের ফরজ বিধান

পর্দার নির্দেশ আল্লাহ তাআলা নিজে কুরআনে স্পষ্টভাবে দিয়েছেন:

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ ۚ ذَٰلِكَ أَدْنَىٰ أَنْ يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا
“হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদের চেনা যাবে এবং কষ্ট দেওয়া হবে না। আর আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”
(সূরা আল-আহযাব, ৩৩:৫৯)

আল্লাহ তাআলা আরেক স্থানে বলেছেন:

وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ
“আর মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে, লজ্জাস্থান রক্ষা করে এবং তাদের সৌন্দর্য্য প্রকাশ না করে, যা স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ পায় তা ছাড়া; আর তারা যেন নিজেদের ওড়না বক্ষদেশের উপর টেনে দেয়।”
(সূরা আন-নূর, ২৪:৩১)

➡️ অর্থাৎ চুল ঢেকে ফেলা নয়, বরং সম্পূর্ণ দেহ, সৌন্দর্য্য ও সাজসজ্জা আড়াল করাই পর্দার মূল উদ্দেশ্য।


পর্দার গুরুত্ব সম্পর্কে হাদীস

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:

الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ، فَإِذَا خَرَجَتْ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ
“নারী হলো ‘আওরাহ’ (আবৃত রাখার বিষয়)। যখনই সে বাইরে যায়, শয়তান তাকে (পুরুষদের কাছে) সুন্দর করে উপস্থাপন করে।”
— (তিরমিযি, হাদীস: ১১৭৩)

অন্য হাদীসে তিনি বলেছেন:

خَيْرُ نِسَائِكُمُ الَّتِي تَسُرُّكَ إِذَا نَظَرْتَ، وَتُطِيعُكَ إِذَا أَمَرْتَ، وَلَا تُخَالِفُكَ فِي نَفْسِهَا وَلَا فِي مَالِكَ بِمَا تَكْرَهُ
“তোমাদের শ্রেষ্ঠ নারী সেই, যে তোমাকে আনন্দ দেয় যখন তুমি তার দিকে তাকাও, তোমার আদেশ মান্য করে, এবং তোমার অনিচ্ছার বিরুদ্ধে নিজে বা তোমার সম্পদ বিষয়ে কিছুই করে না।”
— (মুসনাদ আহমাদ, হাদীস: ৭৪২১)

এগুলো প্রমাণ করে যে ইসলাম নারীকে তার সৌন্দর্য্যের সংরক্ষণ ও মর্যাদা রক্ষার জন্য পর্দার বিধান দিয়েছে — কোনোভাবেই দমন করার জন্য নয়।


কেন নারীরা পর্দা করে না — বাস্তব ৫টি কারণ


১. সৌন্দর্য্য প্রদর্শনের প্রবণতা

অনেক নারী নিজের সৌন্দর্য্য প্রকাশ করতে ভালোবাসে, চায় সবাই প্রশংসা করুক। অথচ পর্দা এসেছে সেই সৌন্দর্য্য আড়াল করার জন্য।
আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا
“তারা যেন তাদের সৌন্দর্য্য প্রকাশ না করে, যা স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ পায় তা ছাড়া।”
(সূরা আন-নূর, ২৪:৩১)

অতএব, যারা নিজেদের সৌন্দর্য্য প্রকাশ করে তারা কেবল নিজেরাই গুনাহে লিপ্ত হয় না, বরং অন্যদেরও চোখের জিনায় লিপ্ত হওয়ার কারণ হয়।
রাসূল ﷺ বলেছেন:

العَيْنَانِ تَزْنِيَانِ وَزِنَاهُمَا النَّظَرُ
“চোখও ব্যভিচার করে, আর তার ব্যভিচার হলো তাকানো।”
— (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ২৬৫৭)


২. পর্দা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাব

অনেকেই ভাবে পর্দা শুধু বয়স্ক বা গ্রামীণ নারীদের জন্য! অথচ যৌবনের সময়ই পর্দা করা সবচেয়ে বেশি জরুরি।
যুবতী নারীরা সবচেয়ে সুন্দর হয় — তাই পরপুরুষের আকর্ষণ থেকে বাঁচাতে ইসলামে পর্দা ফরজ করা হয়েছে।

অনেকে আবার ভাবে মাথায় শুধু স্কার্ফ নিলেই পর্দা সম্পন্ন হয়ে যায়!
কিন্তু বাস্তবে, চুল, মুখ, গলা, বক্ষ, বাহু, পা — সবই আওরাহ, যা পরপুরুষের সামনে প্রকাশ করা হারাম।

রাসূল ﷺ বলেছেন:

صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا… نِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ… لَا يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلَا يَجِدْنَ رِيحَهَا
“জাহান্নামের দুটি শ্রেণির মানুষ আমি এখনো দেখিনি… একদল নারী যারা পোশাক পরেও উলঙ্গ থাকবে… তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, এমনকি জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।”
— (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ২১২৮)


৩. আল্লাহভীতির অভাব

যার মধ্যে আল্লাহর ভয় নেই, তার কাছে পর্দা তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না।
কিন্তু আল্লাহ তাআলা সতর্ক করেছেন:

وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَىٰ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا
“ব্যভিচারের নিকটেও যেও না। নিশ্চয়ই তা অশ্লীল কাজ এবং খুবই নিকৃষ্ট পথ।”
(সূরা আল-ইসরা, ১৭:৩২)

যে নারী বেপর্দা হয়ে বের হয়, সে কেবল ব্যভিচারের দ্বার খুলে দেয়। আর যিনি আল্লাহকে ভয় করেন, তিনি জানেন—
আল্লাহ যেমন غَفُورٌ رَحِيمٌ, তেমনি তিনি شَدِيدُ الْعِقَابِ (ভীষণ কঠোর শাস্তিদাতা)।


৪. পারিবারিক অবহেলা

আমাদের অনেক পরিবারে মা, বোন, চাচী বা দাদিরা পর্দা করে না — সন্তানরাও সেটাকেই “স্বাভাবিক” মনে করে বড় হয়।
আবার পরিবারের পুরুষরা (বাবা, ভাই, স্বামী) নারীদের পর্দার বিষয়ে কঠোর না হলে তারা বেপর্দা জীবনকেই সহজ মনে করে।

রাসূল ﷺ বলেছেন:

كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ
“তোমাদের প্রত্যেকেই অভিভাবক এবং প্রত্যেকে তার দায়িত্বাধীনদের ব্যাপারে জবাবদিহি করবে।”
— (সহীহ বুখারী, হাদীস: ৮৯৩)

অতএব, পরিবারের পুরুষ সদস্যদের উচিত — পরিবারের নারীদের ফরজ বিধান পালনে সহায়তা করা ও পর্দার প্রতি উৎসাহিত করা।


৫. শয়তানের ধোঁকা

শয়তান আমাদের মনে নানা অজুহাত দেয় — “গরম লাগে”, “মাথাব্যথা হয়”, “মানুষ কী বলবে” ইত্যাদি।
কিন্তু পর্দা সুন্নাহ নয়, এটি ফরজ!
যত কষ্টই হোক, ফরজ আদায় করতে হয়। প্রথমে কঠিন লাগলেও নিয়মিত চর্চায় সহজ হয়ে যায় ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوهُ عَدُوًّا
“নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের শত্রু, সুতরাং তোমরাও তাকে শত্রু মনে করো।”
(সূরা ফাতির, ৩৫:৬)


সঠিক পর্দা কেমন হওয়া উচিত

ইসলামি পর্দা মানে হলো —

  • ঢিলেঢালা পোশাক, যাতে শরীরের গঠন বোঝা না যায়।
  • ঘন কাপড়, যাতে ত্বকের রঙ প্রকাশ না পায়।
  • মুখ, চুল, গলা ও সৌন্দর্যের অংশ ঢাকা রাখা।
  • সাজসজ্জা, সুগন্ধি, মেকআপ, মেহেদি — এসব পরপুরুষের সামনে না করা।

শুধু মাথায় স্কার্ফ নয় — বরং পুরো শরীরকে আড়াল করাই হলো প্রকৃত হিজাব।


উপসংহার: পর্দা মানে বন্দিত্ব নয়, বরং সম্মান

পর্দা কোনো শৃঙ্খল নয় — বরং এটি নারীর মর্যাদা, সুরক্ষা ও আধ্যাত্মিক স্বাধীনতার প্রতীক।
যে নারী পর্দা করে, সে নিজের ঈমান রক্ষা করে, সমাজকে গুনাহ থেকে বাঁচায় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে।

وَمَن يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَخْشَ اللَّهَ وَيَتَّقْهِ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْفَائِزُونَ
“যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে ও তাকওয়া অবলম্বন করে — তারাই সফলকাম।”
(সূরা আন-নূর, ২৪:৫২)


শেষ কথা

দুনিয়ার গরম, অসুবিধা, মানুষের সমালোচনা — এসব অস্থায়ী।
কিন্তু জাহান্নামের আগুন চিরস্থায়ী!
আজ সামান্য কষ্ট সহ্য করে আল্লাহর ফরজ বিধান মেনে চললে, কাল জান্নাতে তার ফল পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।

اللَّهُمَّ اجْعَلْنَا مِنَ الْمُتَحَجِّبَاتِ الْمُطِيعَاتِ، وَارْزُقْنَا الْخَشْيَةَ وَالتَّقْوَى فِي السِّرِّ وَالْعَلَنِ
“হে আল্লাহ! আমাদের সেই নারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন যারা হিজাবধারী ও অনুগত; আমাদের অন্তরে ও প্রকাশ্যে তাকওয়া ও আল্লাহভীতি দান করুন।”


🕊️ লিখেছেনঃ মাহবুব ওসমানী 📖 ইসলামিক দাওয়াহ সেন্টার | https://islamidawahcenter.com


আপনি