Debt forgiveness is not a way for martyrs – শহীদের জন্যও ঋণ ক্ষমার উপায় নয়: নবীজির (সা.) চোখে কঠিন ধমকি!

লিখেছেন: ইসলামি দাওয়াহ সেন্টার রিপোর্টার

ইসলামে ঋণের ব্যাপারে গুরুত্ব কতখানি, তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি ঘটনাপ্রবাহ থেকেই বোঝা যায়। সাহাবী হযরত মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ (রাঃ) থেকে বর্ণিত একটি ঘটনা মুসলমানদেরকে ঋণের ব্যাপারে গভীরভাবে চিন্তাশীল করে তোলে।

ঘটনাটি কী ছিল?

হযরত মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ (রাঃ) বর্ণনা করেন:

“একদিন আমরা মসজিদের সেই স্থানে বসে ছিলাম যেখানে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সঙ্গে ছিলেন। তিনি হঠাৎ আকাশের দিকে তাকালেন, কিছু দেখলেন, তারপর দৃষ্টি নিচু করে নিজের হাত কপালে রাখলেন এবং বললেন:
‘সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! কত কঠিন ধমকি নাজিল হয়েছে!’
ঐ দিন এবং রাত পর্যন্ত আমরা সবাই নীরব ছিলাম, কিন্তু এই নীরবতা আমাদের ভালো লাগেনি।”

পরদিন সকালে সাহাবী প্রশ্ন করলেন:
“ইয়া রাসূলাল্লাহ! সেই কঠিন ধমকি কী ছিল?”

রাসূলুল্লাহ (সা.) জবাব দিলেন:

“ঋণের ব্যাপারে কঠিন ধমকি এসেছে। সেই সত্তার কসম, যার হাতে মোহাম্মদের প্রাণ! যদি কোনো ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়, তারপর তাকে জীবিত করা হয়, আবার শহীদ হয়, আবার জীবিত করা হয়—তবুও যদি তার ঋণ থাকে, তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না সেই ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া হয়।”
(সূত্র: নাসাঈ, মুয়াসসাসাতুর রিসালাহ, হাদিস নং ২৪৫৭; সহীহ হিসেবে সংকলিত)

কোরআনের দৃষ্টিতে ঋণ

আল-কুরআনে ঋণের ব্যাপারে স্পষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা রয়েছে। যেমন:

“হে মুমিনগণ! তোমরা যখন একে অপরের সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোনো ঋণ লেনদেন করো, তা লিখে রাখো…”
(সূত্র: সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৮২)

এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা ঋণ লেনদেনকে লিখিত রূপে সংরক্ষণ করার নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে ভুল-বোঝাবুঝি না হয় এবং ঋণ যথাযথভাবে আদায় হয়।

কেন ঋণ এত ভয়াবহ?

ইসলাম ঋণের ব্যাপারে এতটা কঠোর হওয়ার পেছনে রয়েছে সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা। ঋণগ্রহীতা যদি ঋণ পরিশোধে গাফিল থাকে, তবে তা দুনিয়াবি অধিকার হরণ করা হয় এবং পরকালে এর জবাবদিহিতা অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

গুরুত্বপূর্ণ হাদিসসমূহ ঋণের ব্যাপারে

১. “শহীদের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়, তবে ঋণ নয়।”
(মুসলিম, হাদিস নং ১৮৮৬)

২. “ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যদি ফেরত দেওয়ার নিয়ত রাখে, আল্লাহ তার সাহায্য করবেন। আর যদি প্রতারণার নিয়ত করে, তবে আল্লাহ তার ধ্বংস করবেন।”
(বুখারি, হাদিস নং ২৩৮৭)

করণীয়

  • নিজের সামর্থ্যের বাইরে ঋণ নেয়া থেকে বিরত থাকা।

  • প্রয়োজনীয় ঋণ গ্রহণ করলে তা যথাসময়ে শোধ করার প্রচেষ্টা করা।

  • মৃত্যুর আগে নিজের ঋণসমূহ লিখিত রেখে যাওয়া যেন উত্তরাধিকারীরা তা শোধ করতে পারে।

  • সমাজে দানশীল ও বিত্তবানদের উচিৎ ঋণগ্রস্ত মুসলিমদের সহায়তা করা।


উপসংহার

ঋণ এমন একটি বিষয় যা একজন ঈমানদারকে শহীদ হওয়ার পরও জান্নাতে প্রবেশে বাধা দিতে পারে। তাই প্রতিটি মুসলমানের উচিত এ বিষয়ে সতর্ক থাকা, এবং নিজের জীবনকে ঋণমুক্ত ও পবিত্র রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করা।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ঋণ থেকে মুক্ত থাকার এবং হক আদায়ে সচেষ্ট থাকার তাওফিক দিন। আমীন।