The key to sincere guidance and wisdom
The key to sincere guidance and wisdom – আন্তরিক হিদায়াত ও হেকমতের চাবিকাঠি: ইমাম শাফিঈ (রহ.)-এর চমৎকার উপদেশ
ইসলামের প্রথিতযশা ইমাম, ইমাম আশ-শাফিঈ (রহ.) এক যুগান্তকারী পরামর্শ দিয়ে গেছেন যেটি হেদায়াতপ্রাপ্তি ও অন্তরের পরিশুদ্ধির ক্ষেত্রে এক অমূল্য রত্ন। তিনি বলেন:
“যে ব্যক্তি চায় আল্লাহ তা’আলা তার অন্তর খুলে দিন এবং হেকমত দান করুন, সে যেন চারটি বিষয় মেনে চলে—
১। নির্জনতার অভ্যাস করো।
২। কম খাওয়ার অভ্যাস গড়ো।
৩। মূর্খদের সাথে উঠাবসা থেকে বিরত থাকো।
৪। এমন আলেমদের থেকেও দূরে থাকো যাদের মধ্যে ইনসাফ নেই, আদব নেই।”
(মানাকিবুশ শাফিঈ ২/১৭২)
১। নির্জনতার অভ্যাস
নির্জনতা বা খলওয়াত আত্মার পরিশুদ্ধি এবং আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপনের অন্যতম মাধ্যম। কুরআনে আল্লাহ বলেন:
“আর তোমার পালনকর্তার নাম স্মরণ করো নিজের মনে বিনয় ও ভয়ে, উচ্চ স্বরে নয়, প্রভাত ও সন্ধ্যায়, এবং গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।”
(সূরা আল-আ‘রাফ, ৭:২০৫)
রাসূলুল্লাহ ﷺ নির্জনতার গুরুত্ব উপলব্ধি করে হেরা গুহায় ধ্যানে মগ্ন হতেন। তাঁর নবুয়তের সূচনা হয় নির্জনতা থেকেই।
২। কম খাওয়ার অভ্যাস
পেট পূর্ণ খাওয়া আত্মাকে অলস ও গাফিল করে তোলে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
“মানুষের জন্য কয়েক লোকমাই যথেষ্ট, যা তার পিঠ সোজা রাখতে পারে। আর যদি কেউ বেশি খেতেই চায়, তবে এক-তৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানির জন্য, এবং এক-তৃতীয়াংশ নিঃশ্বাসের জন্য।”
(তিরমিযি: ২৩৮০)
কম খাওয়া আত্মাকে প্রশান্ত রাখে, ইবাদতে মনোযোগ বাড়ায়।
৩। মূর্খদের সাথে উঠাবসা থেকে বিরত থাকা
জাহেল বা মূর্খদের সংস্পর্শে থাকলে অন্তরে সন্দেহ, বিভ্রান্তি এবং অহংকার প্রবেশ করে। আল্লাহ বলেন:
“তুমি ক্ষমার নীতি অবলম্বন কর, ভাল কাজের আদেশ দাও এবং মূর্খদেরকে উপেক্ষা কর।”
(সূরা আল-আ‘রাফ, ৭:১৯৯)
সালেহ ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এবং জ্ঞানীদের সঙ্গ অন্তরকে আলোকিত করে।
৪। অন্যায়কারী ‘আলেম’ থেকে দূরে থাকা
জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও যদি কারো মধ্যে ইনসাফ ও আদব না থাকে, তবে সে হিদায়াতের নয়, বিভ্রান্তির কারণ হতে পারে। রাসূল ﷺ বলেন:
“আল্লাহ তোমাদের মধ্যে থেকে জ্ঞান উঠিয়ে নেবেন না; বরং আলেমদের উঠিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে জ্ঞান উঠিয়ে নেবেন। এমনকি যখন কোন আলেম অবশিষ্ট থাকবে না, তখন মানুষ মূর্খদেরকে নেতা বানাবে, তারা ফতোয়া দিবে জ্ঞানের বাইরে গিয়ে এবং নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে, অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করবে।”
(বুখারি: ১০০, মুসলিম: ২৬৭৩)
তাই একজন মুসলমানের দায়িত্ব হচ্ছে সঠিক ও আমলদার আলেমদের সংস্পর্শে থাকা এবং ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গির মানুষদের থেকে বেঁচে থাকা।
উপসংহার
ইমাম শাফিঈ (রহ.)-এর এই উপদেশ শুধু তার যুগে নয়, আজকের এই বিভ্রান্তির যুগেও সমানভাবে প্রযোজ্য। হেকমত বা প্রজ্ঞা আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ, যা অন্তরের খোলামেলা অবস্থায়ই প্রবেশ করে। তাই অন্তর খুলতে চাইলে আমাদের এই চারটি মূলনীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেকমতের চাবিকাঠি দান করুন, অন্তর পরিশুদ্ধ করুন, সঠিক জ্ঞানের পথে পরিচালিত করুন।
আলহামদুলিল্লাহ।