নারী–পুরুষের মধ্যে ২৫টি পার্থক্য
নারী–পুরুষের মধ্যে ২৫টি পার্থক্য — তাই চাইলেও সমান অধিকার হতে পারবে না; যার যার অবস্থানে সেই শ্রেষ্ঠ
25 differences between men and women
লিখেছেন: মাহবুব ওসমানী
ইসলাম প্রতিটি সৃষ্টি তার স্বভাবগত প্রকৃতি অনুযায়ী গঠন করেছে। নারী-পুরুষ উভয়ই আল্লাহর সৃষ্টি, কিন্তু দু’জনকে একই রকম দায়িত্ব ও ক্ষমতার অধিকারী করেননি। কারণ প্রকৃতি, শারীরবৃত্ত, মানসিকতা, আবেগ, দায়িত্ব—সবই আলাদা। তাই ইসলামে নারী ও পুরুষ সমান নয়—বরং পরিপূরক।
আল্লাহ বলেন—
﴿ وَلَا تَتَمَنَّوْا مَا فَضَّلَ اللَّهُ بِهِ بَعْضَكُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ ﴾
“তোমরা কামনা করো না যা আল্লাহ তোমাদের কারো উপর কারো জন্য শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন।”
— সূরা আন-নিসা 4:32
ইসলামের দৃষ্টিতে নারী–পুরুষ কেন এক নয়?
১) সৃষ্টির উদ্দেশ্যের পার্থক্য
আল্লাহ আদম (আ.)-কে প্রতিনিধি (খলীফা) হিসেবে সৃষ্টি করেছেন, এবং তার জন্য হাওয়া (আ.)-কে করেছেন শান্তির উৎস।
﴿ يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا ﴾
“তিনি তোমাদেরকে এক প্রাণ থেকে সৃষ্টি করেছেন, এবং সেখান থেকে তার যুগল (স্ত্রী) সৃষ্টি করেছেন।”
— সূরা আন-নিসা 4:1
ইমাম ইবনু কাসীর (রহ.) বলেন—
হাওয়া (আ.) আদম (আ.)-এর অঙ্গ থেকে সৃষ্টি হওয়া—এটি নারী-পুরুষের স্বাভাবিক সম্পর্কের প্রমাণ; একজন অপরজনের পরিপূরক।
২৫টি প্রধান পার্থক্য
নীচে সংক্ষিপ্তভাবে ২৫টি মূল পার্থক্য তুলে ধরা হলো—যা কুরআন-সুন্নাহ ও বাস্তবতার ভিত্তিতে প্রমাণিত।
১) শারীরিক শক্তির পার্থক্য
﴿ وَالذَّكَرُ لَيْسَ كَالْأُنثَىٰ ﴾
“পুরুষ নারীসম নয়।”
— আলে-ইমরান 3:36
পুরুষের হরমোন, পেশী, স্ট্যামিনা স্বাভাবিকভাবেই বেশি। নারীর দেহ মাতৃত্ব উপযোগী।
২) নেতৃত্বক্ষমতার ভিন্নতা
﴿ الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ ﴾
“পুরুষ নারীর অভিভাবক ও কর্তৃত্বশীল।”
— সূরা আন-নিসা 4:34
ইমাম তাবারি বলেন—
এখানে ‘قَوَّام’ মানে দায়িত্ব ও নেতৃত্ব যার ওপর ন্যস্ত।
৩) উপার্জনের দায়িত্ব পুরুষের
হাদিস—
« كَفَى بِالْمَرْءِ إِثْمًا أَنْ يُضَيِّعَ مَنْ يَعُولُ »
“যার দায়িত্বে যাদের ভরণ-পোষণ, তাদের অবহেলা করা—এটি মানুষের জন্য যথেষ্ট গুনাহ।”
— সুনান আবু দাউদ, 1692
৪) গৃহপরিচর্যা ও মাতৃত্ব নারীর শ্রেষ্ঠ দায়িত্ব
নবী ﷺ বলেন—
« وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ فِي بَيْتِ زَوْجِهَا »
“স্ত্রী তার স্বামীর ঘরে অভিভাবক।”
— সহিহ বুখারি, 893
৫) আবেগ-মনস্তত্ত্বের পার্থক্য
নারীর আবেগ শক্তিশালী—এটি সন্তানের লালন-পালনে দয়া ও কোমলতার ভূমিকা রাখে।
« إِنَّ النِّسَاءَ خُلِقْنَ مِنْ ضِلَعٍ »
“নারীকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।”
— বুখারি, 3331
ইমাম নববী বলেন—
এখানে কোমল স্বভাবের ইঙ্গিত।
৬) জিহাদের দায়িত্ব পুরুষের
« لَمْ يُكْتَبْ عَلَى النِّسَاءِ الْجِهَادُ »
“নারীদের ওপর জিহাদ ফরজ করা হয়নি।”
— নাসাঈ, 3102
৭) তালাক অধিকারের ভিন্নতা
তালাকের মূল অধিকার পুরুষের—কারণ তিনি পরিবারকে আর্থিকভাবে বহন করেন।
ইমাম কুরতুবী বলেন—
তালাকের দায়িত্ব যার ওপর খরচ—তার ওপরই অর্পিত।
৮) সাক্ষ্যের পার্থক্য
﴿ فَرَجُلٌ وَامْرَأَتَانِ ﴾
“একজন পুরুষ ও দুইজন নারী।”
— সূরা বাকারা 2:282
কারণ অর্থনৈতিক বিষয়ে আবেগপ্রবণতা নারীর স্বভাব।
৯) উত্তরাধিকার পার্থক্য
পুরুষের ভাগ বেশি—কারণ দায়িত্বও বেশি।
১০) ইমামতি করতে পারে পুরুষ
নারীরা জামাত পরিচালনা করতে পারে না—এটি ইজমা।
১১) নবুওয়াত শুধুমাত্র পুরুষের
ইবনু হাজার বলেন—
‘নারীর মাঝে কোনো নবী ছিল না’—এ বিষয়ে বিদ্বানদের ঐক্যমত্য।
১২) বাইরে কাজের অনুমতি পুরুষের জন্য বিস্তৃত
নারীর জন্য নিরাপত্তা ও পর্দা অগ্রাধিকার।
১৩) মাসিক, গর্ভধারণ ও প্রসব—নারীর বিশেষ বৈশিষ্ট্য
যা তার ইবাদতের ক্ষেত্রে কিছু ছাড় এনে দিয়েছে।
﴿ وَلَا تَقْرَبُوهُنَّ حَتَّىٰ يَطْهُرْنَ ﴾
— সূরা বাকারা 2:222
১৪) পুরুষের আকাঙ্ক্ষা (শাহওয়াহ) বেশি
হাদিস—
« ما تركتُ بعدي فتنةً أضرَّ على الرِّجالِ من النساءِ »
“আমার পরে পুরুষদের জন্য নারীর চেয়ে বেশি ক্ষতিকর ফিতনা আর নেই।”
— বুখারি, 5096
১৫) হিজাবের বিধান নারীর জন্য কঠোর
﴿ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ﴾
— সূরা আন-নূর 24:31
১৬) যুদ্ধ, রাজনীতি ও প্রশাসনে দায়িত্বের পার্থক্য
ইমাম আবু বকর জাসসাস বলেন—
নারীরা রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বে উপযুক্ত নন—এটি শরীয়তসিদ্ধ।
১৭) স্বামী-স্ত্রীর আজ্ঞাপালন
« لَوْ كُنْتُ آمِرًا أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لِأَحَدٍ لَأَمَرْتُ الْمَرْأَةَ أَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا »
— তিরমিজি, 1159
১৮) নারীর মৃত্যুতে সন্তানের ওপর গভীর প্রভাব
হাদিস—
« الجنة تحت أقدام الأمهات »
“মায়ের পায়ের নিচে জান্নাত।”
— নাসাঈ (মাওকুফ)
১৯) পুরুষের ঘরের মাথা হওয়া
— আন-নিসা: 34
২০) নারীর কাজ—সংরক্ষণ, শান্তি, প্রশান্তি
﴿ لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا ﴾
— আর-রূম 30:21
২১) শারীরিক কাঠামো ভিন্ন
পুরুষ শক্তির প্রতীক—নারী সৌন্দর্যের।
২২) দায়িত্ববোধে পার্থক্য
পুরুষের ওপর নফকা, মহর, আবাস, নিরাপত্তা—সব ফরজ।
২৩) পারিবারিক সিস্টেম চালানোর যোগ্যতায় পার্থক্য
ইমাম মালিক বলেন—
ঘরের কাজ নারীর প্রাকৃতিক দায়িত্ব।
২৪) দাওয়াহ ও খুতবা—পুরুষের কাজ
মসজিদে নেতৃত্ব দিতে পারে পুরুষ।
২৫) আল্লাহর বিধান—সৃষ্টির প্রকৃতি অনুযায়ী
﴿ أَلَا يَعْلَمُ مَنْ خَلَقَ ﴾
“যিনি সৃষ্টি করেছেন—তিনি কি জানেন না?”
— সূরা আল-মুলক 67:14
নারী-পুরুষ সমান নয়—কিন্তু শ্রেষ্ঠ যার যার অবস্থানে
ইসলাম কখনো বলে না—নারী ছোট বা কম। বরং বলে—
﴿ إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ ﴾
— হুজরাত 49:13
অর্থাৎ মুমিন হিসেবে যে বেশি তাকওয়াবান—সে-ই আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠ, সে নারী হোক বা পুরুষ।
সংক্ষেপ
নারী-পুরুষ ভিন্ন—কিন্তু প্রতিযোগী নয়।
তারা একে অপরের প্রয়োজন, পরিপূরক, সহযোগী।
সমান অধিকার নয়—বরং ন্যায়সঙ্গত অধিকারই ইসলামের শিক্ষা।
