False Karamat of Imam Abu Hanifa

 

False Karamat of Imam Abu Hanifa Rahmatullahi Alaihi – ইমামে আজম আবু হানিফা (রহঃ) কি সত্যিই এশার অযু দিয়ে ফজরের নামায পড়ে সুন্নাহ বিরোধী কাজ করতেন?

—————————————————–

প্রথমেই দেখি ‘না ঘুমিয়ে সারা রাত ইবাদত করে কাটানো’ রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর সুন্নাহ ও আদর্শ বিরোধী আমল ছিল কি না। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন যে,

جَاءَ ثَلَاثَةُ رَهْطٍ إِلَى بُيُوتِ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْأَلُونَ عَنْ عِبَادَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا أُخْبِرُوا كَأَنَّهُمْ تَقَالُّوهَا فَقَالُوا وَأَيْنَ نَحْنُ مِنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ قَالَ أَحَدُهُمْ أَمَّا أَنَا فَإِنِّي أُصَلِّي اللَّيْلَ أَبَدًا وَقَالَ آخَرُ أَنَا أَصُومُ الدَّهْرَ وَلَا أُفْطِرُ وَقَالَ آخَرُ أَنَا أَعْتَزِلُ النِّسَاءَ فَلَا أَتَزَوَّجُ أَبَدًا فَجَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْهِمْ فَقَالَ أَنْتُمْ الَّذِينَ قُلْتُمْ كَذَا وَكَذَا أَمَا وَاللَّهِ إِنِّي لَأَخْشَاكُمْ لِلَّهِ وَأَتْقَاكُمْ لَهُ لَكِنِّي أَصُومُ وَأُفْطِرُ وَأُصَلِّي وَأَرْقُدُ وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي. (‏‏‏متفق عليه‏‏‏)‏‏
তিন ব্যক্তি নবী (ﷺ) এর স্ত্রীদের বাসায় এলেন। তাঁরা নবী (ﷺ) এর ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। অতঃপর যখন তাঁদেরকে এর সংবাদ দেওয়া হল তখন তাঁরা যেন তা অল্প মনে করলেন এবং বললেন, ‘আমাদের সঙ্গে নবী (ﷺ) এর তুলনা কোথায়? তাঁর তো আগের ও পরের সমস্ত গোনাহ মোচন করে দেওয়া হয়েছে। (সেহেতু আমাদের তাঁর চেয়ে বেশী ইবাদত করা প্রয়োজন)।’ সুতরাং তাঁদের মধ্যে একজন বললেন, ‘আমি সারা জীবন রাতভর নামায পড়ব।’ দ্বিতীয়জন বললেন, ‘আমি সারা জীবন রোযা রাখব, কখনো রোযা ছাড়ব না।’ তৃতীয়জন বললেন, ‘আমি নারী থেকে দূরে থাকব, জীবনভর বিয়েই করব না।’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁদের নিকট এলেন এবং বললেন, ‘‘তোমরা এই এই কথা বলেছ? শোনো! আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের চেয়ে বেশী আল্লাহকে ভয় করি, তার ভয় অন্তরে তোমাদের চেয়ে বেশী রাখি। কিন্তু আমি (নফল) রোযা রাখি এবং রোযা ছেড়েও দেই, (রাতে) নামায পড়ি এবং নিদ্রাও যাই। আর নারীদের বিয়েও করি। (এটাই আমার সুন্নাহ)। সুতরাং যে আমার সুন্নাহ হতে মুখ ফিরিয়ে নিবে, সে আমার দলভুক্ত নয়”। (সহীহ বুখারী হাঃ ৫০৬৩, সহীহ মুসলিম হাঃ ১৪০১, সুনান নাসায়ী হাঃ ৩২১৭, মুসনাদে আহমাদ হাঃ ১৩১২২, ১৩০১৬, ১৩৬৩১)

সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, ঘুম হারাম করে সারা রাত ইবাদতে কাটানো রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আদর্শ ও সুন্নাহ বিরোধী আমল। যে ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে এমন আমল করবে, সে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর দলভুক্ত হতে পারবে না। এবার দেখি, ইমামে আজম আবু হানিফা (রাহঃ) এমন সুন্নাহ বিরোধী আমল করেছেন কি না!

খতীবে বাগদাদী (রহ.) সনদ সহকারে এ বর্ণনাটি তার কিতাবে উল্লেখ করেছেন। বর্ণনাটি নিম্নরূপ:

«أَخْبَرَنَا علي بن المحسن المعدل، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو بكر أَحْمَد بن مُحَمَّد بن يَعْقُوب الكاغدي، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو مُحَمَّد عبد الله بن مُحَمَّد بن يَعْقُوب بن الحارث الحارثي البخاري ببخارى، قَالَ: حَدَّثَنَا أَحْمَد بن الحسين البلخي، قَالَ: حَدَّثَنَا حماد بن قريش، قال: سمعت أسد بن عمرو، يقول: صلى أَبُو حنيفة فيما حفظ عليه صلاة الفجر بوضوء صلاة العشاء أربعين سنة، فكان عامة الليل يقرأ جميع القرآن في ركعة واحدة، وكان يسمع بكاؤه بالليل حتى يرحمه جيرانه، وحفظ عليه أنه ختم القرآن في الموضع الذي توفي فيه سبعة آلاف مرة»
আবু মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মদ বিন ইয়াকুব ইবনুল হারিস আল হারেসী আল বুখারী বলেন, আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন, আহমদ বিন হুসাইন আল বালখী। তিনি বলেন, আমাদেরর নিকট বর্ণনা করেছেন হাম্মাদ বিন কুরাইশ। তিনি বলেন, আমি আসাদ বিন আমর এর নিকট শুনেছি। তিনি বলেছেন,

“আবু হানিফা এর ব্যাপারে যতটুকু (ইতিহাস) সংরক্ষিত হয়েছে তাতে তিনি চল্লিশ বছর যাবত ইশার সালাতের অজু দ্বারা ফজরের সালাত আদায় করেছেন আর তিনি অধিকাংশ রাতে এক রাকআত সালাতে সম্পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াত করতেন! রাতে তার কান্নার আওয়াজ শোনা যেত। ফলে তার প্রতিবেশীরা তার উপর দয়া করতেন। আরও সংরক্ষিত হয়েছে যে, তিনি যে স্থানে মারা গেছেন সে স্থানে ৭,০০০ (সাত হাজার) বার কুরআন খতম করেছেন!” (তারীখে বাগদাদ ১৫/৪৮৪; মানাকিবুল ইমাম আবি হানিফা পৃঃ ২৩)

এ বর্ণনার সনদে عبد الله بن مُحَمَّد بن يَعْقُوب আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মদ বিন ইয়াকুব নামে একজন রাবী আছে। যাকে ইমাম হাকীম, ইবনুল জাওযী, আহমদ সুলাইমানী, খতীব বাগদাদী সহ অনেক ইমাম হাদীস বানানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। শায়েখ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ.) তারীখে বাগদাদে উল্লেখিত এই বর্ণনাটিকে ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর নামে বানোয়াট ও মিথ্যাচার হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন,

« وهذا موضوع ؛ آفته عبد الله بن محمد بن يعقوب – وهو الحارثي -؛ قال أبو سعيد الرواس: ”يتهم بوضع الحديث”.

“এ বর্ণনাটি মাওযু বা বানোয়াট। এর আপদ (একজন বর্ণনাকারী) হলো আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মদ বিন ইয়াকুব। তার ব্যাপারে আবু সাঈদ রাওয়াস বলেন, এ ব্যক্তি হাদীস তৈরির অভিযোগে অভিযুক্ত। (সিলসিলা যাঈফা ওয়াল মাওযুআহ, হাঃ ৩৫০০)

এছাড়াও এ বর্ণনাটির সনদে أَحْمَد بن الحسين আহমদ বিন হুসাইন ও حماد بن قريش হাম্মাদ বিন কুরাইশ নামক দুজন মাজহুল বর্ণনাকারী রয়েছেন। উল্লেখিত বর্ণনাটির ব্যাপারে মানাকিবুল ইমাম আবী হানিফা গ্রন্থের টীকাকার বিশিষ্ট মুহাক্কিক আল্লামা শায়েখ যাহিদ হাসান আলকাউসারী টীকায় বলেন,

في سند هذا الخبر أحمد بن الحسين البلخي و حماد بن قريش ، هما من المجاهيل ، فلا يثبت خبرهما ، بل في الخبر نفسه ما يكذبه .
এই বর্ণনাটির সনদে আহমদ বিন হুসাইন ও হাম্মাদ বিন কুরাইশ নামক দুজন মাজহুল বর্ণনাকারী রয়েছেন। সুতরাং তাদের বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয় বরং স্বয়ং ঘটনার মধ্যেই আপত্তিকর বিষয় রয়েছে রয়েছে। (শায়েখ যাহিদ হাসান আল কাউসারী, মানাকিবুল ইমাম আবি হানিফা পৃঃ ২৩, টীকা নং ২)

শায়েখ নাসিরুদ্দীন আলবানী তার সিফাতু সালাতিন্নাবী (নবী ﷺ এর সালাত এর বিবরণ)-এর মূল গ্রন্থে সবসময় সারারাত ব্যাপী ইবাদত করা নবী (ﷺ) এর সুন্নাহ ও আদর্শ পরিপন্থী হওয়ার ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর নামে প্রচলিত উক্ত ঘটনাকে ‘মিথ্যাচার’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন,

« ولا تغتر بما روي عن أبي حنيفة رحمه الله أنه مكث أربعين سنة يصلي الصبح بوضوء العشاء ؛فإنه مما لا أصل [له] عنه »
“আর আবু হানিফা (রহ.)-এর ব্যাপারে ইশার অযুতে ফজরের নামায পড়ার বর্ণনা শুনে ধোঁকা খাবেন না। কারণ তার কোনো ভিত্তি নাই। (সিফাতু সালাতিন্নাবী ২/৫৩১ মাকতাবুল মাআরিফ থেকে প্রকাশিত)

আল্লামা ফিরোজাবাদী বলেন,

“ هذا من جملة الأكاذيب الواضحة التي لا يليق نسبتها إلى الإمام ، فما في هذا فضيلة تُذكر، وكان الأولى بمثل هذا الإمام أن يأتي بالأفضل، ولا شك أن تجديد الطهارة لكل صلاة أفضل وأتم وأكمل . هذا إن صح أنه سهر طوال الليل أربعين سنة متوالية ! وهذا أمر بالمحال أشبه، وهو من خرافات بعض المتعصبين الجهال قالوه في أبي حنيفة وغيره ، وكل ذلك مكذوب.»
“এটি এমন সব স্পষ্ট মিথ্যাচারের অন্তর্ভুক্ত যেগুলো ইমামের দিকে সম্বন্ধ করা শোভনীয় নয়। কারণ এতে উল্লেখ করার মতো কোনও ফজিলত নেই। এ সব ক্ষেত্রে সম্মানিত ইমাম সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ আমলটি করবেন- এটি তার জন্য সর্বাধিক সমীচীন। আর এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, প্রত্যেক নামাযের জন্য পবিত্রতা নবায়ন করা উত্তম এবং অধিকতর পরিপূর্ণ। যদি সঠিকও হয় যে, তিনি টানা চল্লিশ বছর সারারাত জাগ্রত থেকেছেন তাহলে এটা প্রায় অসম্ভব। এটা কতিপয় অজ্ঞ ও গোঁড়া লোকের বানোয়াট কল্পকাহিনীর মধ্যে একটি, যারা এটি আবু হানিফা এবং অন্যান্যদের সম্পর্কে বলেছে। এগুলো সর্বৈব মিথ্যা”। (আর রাদ্দু আলাল মুতারিয ১/৪৪)

❑ এ কথা স্বতঃসিদ্ধ যে, আবু হানিফা (রাহঃ) একজন নির্ভরযোগ্য ফকিহ ও মাজহাবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইমাম ছিলেন। তার জ্ঞান, ফিকাহ এবং ইবাদত-বন্দেগী ও পরহেজগারিতা ইত্যাদির ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নাই। কিন্তু তার নামে মিথ্যা গল্পকাহিনী বর্ণনা করে তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধির চেষ্টা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। এতে তার সম্মানহানি হয়। কারণ আমরা দেখলাম যে, সারারাত ইবাদত করা রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর সুন্নাহ পরিপন্থী। আল্লাহর নবী (ﷺ) দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ইবাদত গুজার হওয়ার পরও তিনি রাতের কিয়দংশ ঘুমাতেন এবং বাকি রাত তাহাজ্জুদের সালাত ও ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাতেন। কিন্তু তার একনিষ্ঠ অনুসারী এবং একজন অনুসরণীয় ইমাম হয়ে কিভাবে তাঁর বিপরীত কাজ করতে পারেন?

সুতরাং ইমাম আবু হানিফা (রাহঃ) এর মত একজন মহামতি ইমাম রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর সুন্নাহ ও আদর্শকে উপেক্ষা করতেন, এ কথা যেমন বিশ্বাসযোগ্য নয়, তেমনি সে আমল সহীহ সনদে প্রমাণিতও নয়। অতএব যারা প্রচার করে যে, ইমাম আবু হানিফা (রাহঃ) ৪০ বছর ধরে এশার অযু দিয়ে ফজর নামায আদায় করেছেন, তারা মূলত ইমাম আবু হানিফা (রাহঃ) কে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর আদর্শ ও সুন্নাহ বিরোধী এবং বিদয়াতি ইমাম হিসাবে সাব্যস্ত করতে চায়। মহান আল্লাহ তা’য়ালা ইমাম আবু হানিফা (রাহঃ) কে সকল ধরনের ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা অপবাদ থেকে হেফাজত করুন এবং আমাদেরকে প্রিয় নবী (ﷺ) এর সুন্নাহ ও আদর্শকে বুকে ধারণ করে সব ধরণের সুন্নাহ পরিপন্থী ও ভ্রান্তি পূর্ণ কথা ও কাজ থেকে রক্ষা করুন। (আমিন)