In the meeting with Rasul (S) – নবিজির (সাঃ) সাক্ষাতে!

 

নবিজি (সাঃ) এর চেহারা মুবারক!

কাতাদাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “আল্লাহ এমন কোন নবীকে পাঠান নি যার সুন্দর চেহারাও কণ্ঠস্বর ছিল না।” ইসলামের আগে এবং পরে রাসূল (ﷺ) এর মত সুন্দর কিছু বা কাউকে তাঁর সমসাময়িক লোকরা কখনো দেখেনি। সুন্দর বাহ্যিক চেহারার কিছু লোক খারাপ চরিত্রের অধিকারী হয়, কিন্তু রাসূল (ﷺ) তাঁর অভূতপূর্ব সুন্দর চেহারা নিয়েও ততোধিক অনুপম চরিত্রের জন্য আল্লাহর কাছে প্রশংসিত হয়েছেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রা:) বলেন, لو لم تكن في ايات مبينه كانت بداته بالخبر – রাসূল (ﷺ) এর উপস্থিতি ছাড়া যদি আর কিছু না থাকতো – যদি তিনি কিছু তিলয়াত নাও করতেন, কিছু নাও বলতেন, শুধুমাত্র তাঁর দিকে তাকিয়েই আপনি বুঝতে পারতেন তাঁর মধ্যে রয়েছে এক পবিত্র দৈব সৌন্দর্য। আর যে কারণে শুধু তাঁর দিকে তাকিয়ে এত লোক ইসলাম গ্রহন করেছিল। আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা:) ছিলেন রাসূল (ﷺ) এর আবির্ভাবের আগে মদিনার রাবাই। তিনি যখন
রাসূল (ﷺ) কে দেখতে গিয়েছিলেন, কিছু বলার আগেই তিনি বলেছিলেন, তাঁর চেহারার দিকে তাকিয়েই আমি বুঝলাম ليس بوجه كاذب – এ মিথ্যাবাদীর চেহারা হতে পারে না।
শামাঈল এ রাসূল (ﷺ) এর দৈহিক বর্ণনা এসেছে মাথা থেকে পা পর্যন্ত। তাঁর প্রসঙ্গে প্রায়শই যে বর্ণনাটি দেওয়া হয় তা হল, তিনি ছিলেন চাঁদের চেয়েও সুন্দর। كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَخْمًا مُفَخَّمًا، يَتَلَأْلَأُ وَجْهُهُ تَلَأْلُؤَ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ – রাসূল (ﷺ) এর ছিল এক বিস্ময়কর চেহারা। অন্ধকার রাতের পূর্নিমার চেয়েও তাঁর চেহারা ছিল আরো বেশি দীপ্তিময় ও সুন্দর‌। চিন্তা করে দেখুন, কতটা বিস্ময়কর, ভয়ঙ্কর সুন্দর অনুপ্রেরণাময় মরুভূমির পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে। এক বর্ণনায় আনাস ইবনে মালিক বলেন,”আমি আসলেই তুলনা করে দেখতে চেয়েছি, একবার আমি পূর্ণিমার চাঁদ দেখলাম, আরেকবার রাসূল (ﷺ) এর চেহারা দিকে তাকালাম – এবং নিজেকে জিজ্ঞেস করলাম, কে বেশি দীপ্তিময়? আমি এই উপলব্ধিতে উপনীত হলাম যে রাসূল (ﷺ) এর চেহারাই বেশি দীপ্তিময় ও সৌন্দর্যমন্ডিত, এমনকি মরুভূমির পূর্ণিমার চাইতেও।” পূর্ণিমার চাঁদ শুধু সুন্দরই নয়, এতটাই চিত্তাকর্ষক যে এই চাঁদের দিকে তাকালে আর অন্য কিছুর দিকে তখন তাকাতে ইচ্ছা করে না। রাসূল (ﷺ) এর অন্য সবকিছুর মতো, তাঁর চেহারাও ছিল সামঞ্জস্যপূর্ণ। স্মরণ করুন, যখন আল্লাহ আজ্জা ওজাল বর্ণনা করছেন – জিব্রাইল (আ:) আসলেন মারিয়াম (আ:) এর কাছে, একজন নিখুঁত প্রতিসম মানুষের আকৃতিতে – بشرا سويا ঠিক তেমনি রাসূল (ﷺ) এর সবকিছুই ছিল নিখুঁত।
তিনি খুব বেশি লম্বা বা খাটো ছিলেন না। তাঁর গায়ের রং খুব বেশি হালকা বা গাঢ় ছিল না। তিনি উজ্জ্বল গায়ের রঙের অধিকারী ছিলেন, কিন্তু তা ধবধবে সাদা ছিল না। তাঁর মুখমন্ডল খুব বেশি গোলাকার বা পাতলা ছিল না, কিন্তু গোলাকৃতির কাছাকাছি ছিল। আমি চাই আপনি একবার চিন্তা করুন, আপনি তার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন, প্রথম যে কাজটি আপনি করবেন তা হলো তাঁর চোখের সাথে সংযোগ স্থাপন। উম্মা বাদ (রা:) বলেন, “তাঁর চোখ ছিল নিখুঁত বৈসাদৃশ্য মন্ডিত – চোখের কালো অংশ ছিল অত্যধিক কালো, আবার সাদা অংশও ছিল অত্যধিক সাদা।” তার চোখের পাপড়ি এতটাই বড় ছিল যে, মনে হত যেন প্রকৃতিগত ভাবে আইলাইনার দেওয়া, যা সবসময় ভিজে থাকত তাঁর চোখের পানিতে। তাঁর ছিল বড় বাঁকানো জোড়া ভুরু, কিন্তু মাঝখানের সুন্দর জায়গা টুকুতে আলোর দীপ্তি খেলে যেত। তাঁর কপাল ছিল প্রকট এবং সুস্পষ্ট, এবং সেখানে একটি রগ তখনই লক্ষনীয় হতো যখন তিনি মর্মাহত হতেন। তাঁর নাক ভোতাও ছিল না আবার খুব খারাও ছিল না। তাঁর ছিল খুব সুন্দর ক্রমনিম্ন আনত নাক। এক বর্ণনায় এসেছে, তার নাকের ডগায় ক্ষীণ আলোর ঝলক খেলে যেত এবং তা এমন ভাবে প্রজ্বলিত হত যেন দূর থেকে আরো বেশি আলোকিত মনে হতো। তাঁর কাছে আসলে বুঝা যেত আসলে তা নাকের অগ্রভাগের দীপ্তি, যা দূর থেকে এতটা প্রকট মনে হতো। মুখ খুললেই তাঁর দাঁত দেখা যেত, এবং তা ছিল নিখুঁত। দিনে পাঁচবার তিনি মিসওয়াক করতেন। তাঁর দাঁতকে তুলনা করা হয়েছে শিলা বৃষ্টির সাথে। তার দাঁত গুলো একসাথে গুচ্ছকৃত ছিলনা। দাঁতগুলো এমনভাবে সাজানো ছিল যে মনে হতো প্রতিটি দাঁতের মাঝখানে রয়েছে সূক্ষ্ম রেখা। তাঁর মুখ ছিল প্রশস্ত এবং তাঁর বক্তৃতাও ছিল নিখুঁত। তাঁর কথা ছিল ঝরঝরে, প্রতিটি কথা পরিষ্কার ভাবে শোনা ও বোঝা যেত। তিনি ছিলেন সুললিত কন্ঠের অধিকারী, আর তাঁর প্রতিটি কথার ছিল প্রাকৃতিক প্রতিধ্বনি। অন্য সবকিছুর মত তাঁর চুলও ছিল মাঝামাঝি, খুব বেশি সোজা বা কোঁকড়ানো ছিল না, বরং তা ছিল ঢেউ খেলানো। রাসূল (ﷺ) কখনো তা কানের লতি পর্যন্ত, কখনো ঘাড় পর্যন্ত রাখতেন। এবং অবশ্যই হজ্জ ও উমরায় তিনি মাথা কামিয়ে ফেলতেন। তাঁর ছিল ঘন পরিপূর্ণ দাড়ি। তিনি তাঁর চুল ও দাড়ি আচড়ে রাখতেন। তাঁর চুল দাড়ি ছিল সম্পূর্ণ কাল। সাহাবারা ১৪ থেকে ২০ টি সাদা চুল ও দাড়ি গণনা করেছিলেন তাঁর মৃত্যুর সময়। মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল ৬৩ বছর, অথচ সামান্য কয়েকটি চুল ও দাড়ি সাদা হয়েছিল। যখন তিনি তেল ব্যবহার করতেন, তখন সেই সাদা চুল দাড়ি আর দেখা যেত না। আর যখন তা দৃশ্যমান হতো তা ঠিক ঠোঁটের নিচে এবং জুলফিতে। তাঁর ছিল উন্নত দীর্ঘ গ্রীবা ঠিক যেন হরিণের মতো, আরো ছিল প্রশস্ত ঘাড় এবং শক্তিশালী বাহু এবং প্রশস্ত বক্ষ। এমনকি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কখনোই তার পেট তার বক্ষকে ছাড়িয়ে যায় নি। তিনি তাঁর ওজন ও শারীরিক সুস্থতা সুসামঞ্জস্য ভাবে বজায় রেখেছিলেন। রাসূল (ﷺ) খুব বেশি রোমশ ছিলেন না। মাথার চুল ও দাড়ি ছাড়া খুব বেশি পশম তাঁর গায়ে ছিল না। তার বুকে কিছু লোম ছিল, এবং সেই রেখাটি নাভি পর্যন্ত নেমে গিয়েছিল।
এবার আসি তাঁর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ প্রসঙ্গে। তাঁর দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছিল সুঠাম। বড় হাড়, এবং বড় হাত পা এর অধিকারী ছিলেন তিনি। তাঁর পায়ের মাংসপেশি ছিল গোলাকার এবং মজবুত। তাঁর গোড়ালির প্রায় কোন ওজনই ছিল না। তাঁর শরীরের নিচের অংশ এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, তিনি ঘোড়া বা উটের পিঠে লাফিয়ে উঠতে পারতেন কোন রকমের জিন (saddle) ছাড়াই। আল হাসান (রা:) এর সাদৃশ্যকে রাসূল (ﷺ) এর সাথে তুলনা করা হয়েছে তাঁর শরীরের উপরের অংশের অর্থাৎ সৌন্দর্যের কারণে। আল হুসাইন (রা:) এর সাদৃশ্যকে রাসূল (ﷺ) এর সাথে তুলনা করা হয়েছে তাঁর শরীরের নিচের অংশের সাথে, তাঁর শক্তির কারণে। তাঁর নানার মত তিনিও ছিলেন একজন যোদ্ধা।
আনাস ইবনে মালিক (রা:) বলেন, “তাঁর হাত-পা ছিল রেশমের চেয়েও মসৃণ, তাঁর হাত পা থেকে পানি গড়িয়ে পড়ত।” তার গায়ে ছিল সুন্দর গন্ধ, এমনকি তাঁর ঘামের গন্ধও ছিল সুন্দর। তাঁর সাথে একবার হাত মিলালে, তাঁর হাতের সুগন্ধি আপনি নিজের হাতে ধরে রাখতে চাইবেন দিনের পর দিন। তাঁর ছিল সবচেয়ে সুন্দর নিঃশ্বাস। দূরে থেকে এক নজর দেখলে তাঁর চেহারা আপনাকে তাড়িত করবে, আবার কাছে আসলে তাঁর সৌন্দর্য আপনাকে এমন ভাবে অভিভূত করবে যে, আপনি বেশিক্ষণ তাঁর দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে পারবেন না। আল বারাহ (রা:) বলেন, “আল্লাহর শপথ! এক রাতে আমি বের হয়েছিলাম, আমি তাঁকে লাল পোশাকে দেখতে পেলাম, তিনি ইয়েমেনের লাল হল্লা পরিহিত ছিলেন। বিশেষ কোনো ঘটনায় তিনি তাঁর এই প্রিয় পোশাকটি পরতেন। সেই রাতে আমি রাসূল (ﷺ) এর চেয়ে সুন্দর কোন দৃশ্য আমার জীবনে দেখিনি।” আবু হুরাইরা (রা:): বলেন, ” আমি যখন রাসূল (ﷺ) কে দেখি, তিনি এতটাই নিখুঁত ছিলেন যেন রুপার ছাঁচে গড়া।”
সবচেয়ে বিখ্যাত ছিল তাঁর হাসি। তিনি সবসময় হাসতেন। সুবহানাল্লাহ! সুখে দুঃখে সব সময় তাঁর মুখে হাসি লেগেই থাকত। কাব ইবনে মালিক (রা:) বলেন, “যখন তিনি খুশি হতেন তাঁর মুখমন্ডল আরো বেশি দীপ্তিময় হত।” আমি চাই আপনারা এক মুহূর্ত চিন্তা করে দেখুন, রাসূল (ﷺ) কেমন করে এত হাসতেন, যখন তাকে বর্ণনা করা হয়েছে متواصل الاحزان – যিনি সর্বদা শোকের মধ্যে থাকতেন, دائما الفكره – যিনি সবসময় গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকতেন, ليس له راحه – যার কোন বিশ্রাম ছিল না, যিনি সব সময় ব্যস্ত থাকতেন। তাঁর এই চরিত্রের কথা আল্লাহ কুরআনে বলেন, “কিছু লোককে দেখে মনে হবে, তাদের জীবনে যেন কিছুই ঘটছে না, কারণ যেভাবে তাঁরা নিজেদের বহন করেন।” হাসি হচ্ছে সাদাকা – দানশীলতা। তাঁর সময়কালে তার উম্মার জন্য তাঁর মতো এতো বেশি কেউ হাসেনি, একই সাথে তাঁর উম্মার জন্য কেউ তাঁর মত এতটা কাঁদেনি। মানুষের মনে আনন্দ বয়ে আনার জন্য দিনের বেলা তিনি হাসতেন, এই ছিল তার বদান্যতা। আর রাতের বেলায় তিনি কাঁদতেন, কেউ তাঁর মতো এতটা কাঁদেনি যেভাবে তিনি কাঁদতেন তাঁর রবের কাছে, তাঁর উম্মার আনন্দ ও স্বস্তির জন্য।
“আপনার সম্পত্তি থেকে সবাইকে আপনি যথেষ্ট পরিমাণে দিতে সক্ষম হবেন না, কিন্তু আপনি তাদের সমৃদ্ধ করতে পারেন আপনার প্রফুল্ল চেহারা ও সুন্দর আচরণের মাধ্যমে।”[রাসূল (ﷺ)]
|| তাঁর চেহারা মুবারক ||
মূল: ওমর সুলাইমান
অনুবাদ: ফাহমিনা হাসানাত

নবিজি (সাঃ) এর বরকতময় আচরণ!

 

পবিত্র কুরআন অনেক জায়গায় চরিত্রের কথা আলোকপাত গিয়ে দেহের ভাষার প্রতি জোর দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ যখন ‘ইবাদুর রহমান’ – অর্থাৎ পরম করুনাময়ের দাসের কথা উল্লেখ করেন, কোন বর্ণনা তখন প্রথম আসে?
وَعِبَادُ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى ٱلْأَرْضِ هَوْنًا
রহমান-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে। [২৫:৬৩]
যখন লুকমান আল হাকিম তার ছেলেকে উপদেশ দিয়েছিলেন, তিনি তাঁকে বলেছিলেন কিভাবে গলার স্বর নিচু রাখতে হয়, কিভাবে হাঁটতে হয়, চলাফেরা করতে হয়। আল্লাহ সুবহানা তা’য়ালা আমাদের বলেছেন কিভাবে আমাদের বাবা মার সাথে ব্যবহার করতে হবে। তাঁদের সাথে আমরা যেন ‘উফ’ শব্দটিও ব্যাবহার না করি, কখনো যেন তাঁদের প্রতি বিমুখ না হই। [১৭:২৩] রাসূলের (ﷺ) হাদীসেও একই কথা এসেছে, “মানুষ যেন তার চোখ দিয়ে বিশ্বাস ঘাতকতা না করে, চোখ বা চেহারার অভিব্যক্তি দিয়ে পিছন থেকে মানুষ যেন কাউকে উপহাস না করে, বা প্রতারণা না করে।” আপনি যখন রাসূলের (ﷺ) ব্যবহার লক্ষ করবেন, দেখবেন তাঁর দেহের ভাষাও ছিল একজন নবীর মত।
প্রথমত আপনি হয়তো এতে অভ্যস্ত নন যে, এত সুন্দর একজন মানুষ কিভাবে এত লাজুক হয়। ইসলামের খুলুক – ইসলামের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হল বিনয়। রাসূল (ﷺ) ছিলেন অত্যন্ত লাজুক প্রকৃতির লোক, যদিও তিনি ছিলেন সর্বোচ্চ নিপুন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য গুলো কেমন ছিল? তাঁর আচরণই বা কেমন ছিল? আগেই বলেছি, তাঁর হাসি ছিল অবিরাম। তিনি নিজে হাসতেন, অন্যদেরও হাসাতেন। তাঁর হাসি ছিল মহিমান্বিত ও লাজুক। তিনি যখন হাসতেন আকর্ণ বিস্তৃত হাসতেন, এমনকি তখন তাঁর পিছনের দাঁতও দেখা যেত। তাঁর হাসি থেকেও তাঁর সম্বন্ধে আমরা কিছুটা জানতে পারি। তিনি কখন হাসতেন? যখন অন্যরা হাসতো তিনিও হাসতেন। যখন আল্লাহ তাঁকে সুসংবাদ দিতেন তখন তিনি আকর্ণ হাসতেন। আলী ইবনে আবী তালিব (রা:) বলেন, “রাসূল (ﷺ) খুব বেশি হাসতেন তাঁর ইবাদতের পরে।” যখন তিনি আল্লাহর করুনার বর্ণনা দিতেন, তখনও তিনি হাসতেন। বিখ্যাত সেই লোকটির বর্ণনা যে কিনা সবার শেষে জান্নাতে প্রবেশ করবে, সেই বর্ণনা দিতে গিয়ে রাসূল (ﷺ) হেসেছিলেন। লোকটি ভেবেছিল আল্লাহ তাকে উপহাস করছেন, আল্লাহর উদারতা ও কৃপাকে সে হৃদয়াঙ্গম করতে পারেনি। রাসূল (ﷺ) হেসেছিলেন, কারণ আল্লাহ ঐ লোকটির দিকে তাকিয়ে হাসবেন, আর লোকটি বলবে, “হে আল্লাহ! আপনি কি আমাকে উপহাস করছেন? আপনি তো বিশ্ব জাহানের প্রভু!” [সহি মুসলিম: ১৮৭] তাঁর এই হাসি কেউ শুনতে পেত না, কিন্তু অবশ্যই তা ছিল মুচকি হাসি থেকে স্বতন্ত্র। এই হাসি এতটাই বিস্তৃত ছিল যে তাঁর পিছনের দাঁত পর্যন্ত দেখা যেত।
এছাড়াও তিনি সুপরিচিত ছিলেন তাঁর নিরবতার জন্য। যখন একজন ব্যক্তি একই সাথে বুদ্ধিমান, শক্তিশালী, সুন্দর – এত সব গুণাবলীর অধিকারী হয়, তখন স্বভাবতই সে কিন্তু যেকোন জনসমাবেশে বা যেকোনো আলোচনায় আধিপত্য বিস্তার করতে চায়। তিনিই আল্লাহর রাসূল, তিনি সুপরিচিত তাঁর নিরবতার জন্য। তিনি সব সময় গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকতেন, তাঁর দিকে তাকালেই বুঝা যেত তিনি গভীর ভাবে কোন কিছু অনুভব করছেন বা প্রত্যক্ষ করছেন। জনসমাবেশে লোক জনের সাথে তিনি তখনই কথা বলতেন, যখন তা প্রযোজ্য ছিল। তিনি সুপরিচিত ছিলেন তাঁর সুন্দর যুক্তি ও সঙ্গতির কারণে। তাঁর বক্তব্য ছিল ঝরঝরে, তিনি ধীরে সুস্থে কথা বলতেন। [সুনানে তিরমিজি : ৩৬৩৯] তিনি তাঁর কথার পুনরাবৃত্তি করতেন, যাতে আপনি তা বুঝতে পারেন এবং স্মরণ করতে পারেন। [শামায়েলে তিরমিজি : ২২২] এত সুন্দর হওয়া সত্বেও, তিনি সব সময় নিচের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। কারো দিকে তাকিয়ে থাকলে তিনি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেন না, এক পলকের জন্য দেখতেন তারপর আবার দৃষ্টি নামিয়ে নিতেন। আর তিনি তা করতেন তাঁর বদান্যতা থেকে। কিন্তু আপনি যদি তাঁর চোখে চোখ স্থাপন করেন, এবং তা উপভোগ করেন, তিনি তা বজায় রাখবেন। তাঁর চোখের দিকে তাকাতে আপনি যদি ভয় পান, তিনি দৃষ্টি ফিরিয়ে নিবেন। তাঁর সৌন্দর্য এতটাই আকর্ষণীয় ছিল যে, আমর ইবনে আস (রা:) বলেন, “তাঁর বর্ণনা দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়, ঠিক তাঁর সামনে দাঁড়িয়েও আমি তাঁর দিকে তাকাতে পারিনি, কারণ তার উপস্থিতি ছিল এতটাই ভয়ংকর সুন্দর। তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধা এত বেশি ছিল যে, আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকতে পারতাম না।”
মানুষের কথায় মনোযোগ দেওয়ার ব্যাপারে তিনি ছিলেন অসাধারণ। আপনি যখন তাঁর সাথে কথা বলবেন, তিনি শুধু তাঁর মাথাই আপনার দিকে ঝুঁকাবেন না, সমস্ত শরীর আপনার দিকে ঝুঁকিয়ে দিবেন, যাতে আপনি বুঝতে পারেন তিনি একমাত্র আপনার কথাই শুনছেন। আপনি যদি চান কানে কানে তিনি আপনার কথা শুনুক, তিনি তাঁর কান পেতে দিবেন এবং আপনার সমস্ত কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা সরাবেন না। [মাওলানা নোমান আহমদ রহ., আমাদের নবীজীর (সা.) দৈনন্দিন জীবন, পৃষ্ঠা-৫৯] হাত মেলানোর সময়ও তিনি তাঁর হাত নিজ থেকে সরিয়ে নিবেন না, যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনি আপনার হাত নিজ থেকে সরিয়ে নেন, আপনাকে এটা বোঝানোর জন্য যে কথা বলার সময় আপনি একান্ত ভাবেই তাঁর। এ ব্যাপারে আমার খুব প্রিয় একটি বর্ণনা আছে, যা আমাদের আজকাল সেল ফোন ব্যবহারের গুরুতর পরিণতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। রাসূলের (ﷺ) হাতে তাঁর একটি প্রিয় আংটি ছিল। রুপার সেই আংটিতে আবিসিনিয়ার একটি রুবি পাথর খচিত ছিল। একবার কারো সাথে কথোপকথনের মাঝে সেই আংটির দিকে তিনি কয়েক বার তাকিয়ে ছিলেন। তিনি খুব হতাশ হয়েছিলেন নিজের প্রতি, ঐ আংটির কারণে তাঁর সঙ্গীর কথার মাঝখানে মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হওয়ার জন্য। তখন তিনি তাঁর হাত থেকে আংটি খুলে একপাশে রেখে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “আমি কয়েক বার আংটির দিকে তাকিয়ে ছিলাম, যা আপনার প্রতি আমার মনোযোগ বিনষ্ট করেছে, তাই আমি তা খুলে ফেললাম।”
তিনি যদি আপনাকে ইশারা করেন কখনোই আংগুল দিয়ে করবেন না, কারণ আংগুল উত্তোলন করাতে আপনার মনে হতে পারে তিনি আপনাকে দোষারোপ করছেন। তিনি তাঁর পুরো হাত দিয়ে ইশারা করবেন, যাতে আপনার এমন মনে না হয় যে, তিনি তাঁর আঙ্গুল নির্দেশ করে আপনাকে দোষারোপ করছেন। যখন বিস্ময়ে অভিভূত হাওয়ার মতো কোন কথা কেউ বলতো, রাসূল (ﷺ) তখন তার উরুতে চাপড় মেরে বলতেন, ‘সুবহানাল্লাহ!’ তিনি যখন হাঁটতেন, অবশ্যই কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে হাঁটতেন। আলী (রা:) বলেন, “রাসূল (ﷺ) এমন ভাবে হাঁটতেন, যেনো মনে হতো তিনি ঢালু দিয়ে নেমে যাচ্ছেন।” [শামায়েলে তিরমিজি : ১১৭; আশ শামায়েল আল মুহাম্মাদিয়া: ১২৩] আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, “তাঁর হাঁটার গতির সাথে তাল মিলিয়ে আপনি হাঁটতে পারবেন না। কারন তিনি এমনভাবে হাঁটতেন যেন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে যাচ্ছেন।” [শামায়েল আল মুহাম্মাদিয়া: ১২২] তাঁর হাঁটায় অহংকার প্রকাশ পেতনা, আবার অলসতাও প্রকাশ করত না। কিন্তু তিনি সবসময় জোরে হাঁটতেন। এ থেকে বোঝা যায় তিনি সবসময় অনুপ্রণোদিত এবং উৎপাদনশীল ছিলেন। এমন কি তাঁর বসার মাঝেও ছিল নম্রতা, ইচ্ছাকৃত সেই নম্রতা। আল্লাহ রাসূল (ﷺ) এর কাছে একজন ফেরেশতা পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তিনি কি ‘নাবিয়ান মালিকা’ – একজন নবী যিনি রাজার মতো জীবনযাপন করতে চান, নাকি ‘নাবিয়ান আবদা’ – একজন নবী, যিনি দাসের মত জীবন যাপন করতে চান? রাসূল (ﷺ) ‘নাবিয়ান আবদা’ বেছে নিয়েছিলেন, একজন বিনীত দাসের মতো জীবনযাপন করতে চেয়েছেন। এজন্য খাওয়ার সময় তিনি এমন ভাবে বসতেন যেন এক বিনীত দাস, একজন অহংকারী, বা ধনী লোক, বা রাজার মত হেলান দিয়ে বসতেন না। তাঁর সামগ্রিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তাঁর চরিত্রে দান করেছিল নম্রতা, শালীনতা, লাজুকতা এবং আল্লাহর প্রতি চরম ঋজুতা এবং মানুষের প্রতি পরম আন্তরিকতা।
“উত্তম চরিত্রের অধিকারী হন, এবং দীর্ঘ সময় নীরবতা পালন করুন। যার হাতে মুহাম্মদের আত্মা, সেই আল্লাহর কাছে এই দুটি কাজের চেয়ে অত্যাধিক প্রিয় আর কিছুই নেই।” [রাসুল (ﷺ)]
||তাঁর বরকতময় আচরণ||
মূল: ড: ওমর সুলাইমান
অনুবাদ: ফাহমিনা হাসানাত

নবিজি (সাঃ) এর জবানে খুতবাহ!

ব্যক্তিগত ভাবে রাসূলকে (ﷺ) জানতে হলে, প্রথমত তাঁর খুতবাহ – শুক্রবারের প্রার্থনা দিয়ে শুরু করতে হয়। আমি চাই আপনারা কল্পনা করুন শুক্রবারে মসজিদে দিকে যাচ্ছেন, এবং প্রত্যাশা করছেন রাসূল (ﷺ) আসবেন খুতবাহ দিতে। তখন আপনার মনের অবস্থা কেমন? আপনি কতটা উদ্বেলিত তাঁর কথা শোনার জন্য? রাসূল (ﷺ) যখন খুতবাহ দিবেন তখন আপনি তাঁর দিকে কিভাবে তাকাবেন?
রাসূল (ﷺ) আমাদের বলেছেন জুম্মাকে বিশেষ দিন হিসেবে বিবেচনা করতে। إِنَّ هَذَا يَوْمُ عِيدٍ جَعَلَهُ اللَّهُ لِلْمُسْلِمِينَ – “এই দিনটিকে আল্লাহ মুসলিমদের জন্য ঈদ হিসাবে দিয়েছেন, একে বিশেষভাবে বিবেচনা কর।” হাদীসে এসেছে, “এই দিনে অবশ্যই গোসল করবে, গায়ে সুগন্ধি মাখবে, মিসওয়াক করবে।”[সুনানে ইবনে মাজাহ ১০৯৮] রাসূল (ﷺ) নিজেও তা মেনে চলতেন। তিনি যখন জুম্মার নামাজে আসতেন, গোসল করে সাতেজ হয়ে আসতেন। তিনি তাঁর সবচেয়ে ভালো সুগন্ধি গায়ে মাখতেন এবং নিশ্চিত হতেন তা যেন তাঁর শরীরের প্রতিটি অঙ্গকে স্পর্শ করে। তাঁর টাটকা সিওয়াক ছিল যা দিয়ে তিনি মিসওয়াক করে আসতেন। তাঁর সবচেয়ে ভালো পোশাক তিনি দুটি উপলক্ষে পড়তেন – বিশেষ কোনো প্রতিনিধিকে বরণ করার সময় এবং জুম্মার খুতবা দেওয়ার সময়। ওমর ইবনে খাত্তাব (রা:) একবার একটি রেশমের লম্বা অঙরাখা বিক্রি হতে দেখে ভাবলেন, এটি রাসূলকে (ﷺ) খুব মানাবে। জুম্মার খুতবায় এবং বিশেষ কোন প্রতিনিধিকে বরণ করার সময় তিনি তা পড়তে পারবেন। তিনি রেশমের ঐ অঙরাখাটি ক্রয় করলেন এবং রাসূলের (ﷺ) জন্য নিয়ে আসলেন। রাসূল (ﷺ) তাঁকে ধন্যবাদ দিয়ে বললেন, “রেশমের কাপড় মুসলমানদের জন্য নিষিদ্ধ।”[সহি বুখারী: ৫৮৩২] ওমর (রা:) বলেন, “আমি তখন ওই পোশাকটি আমার এক ভাইকে দিলাম যে তখনও মুসলিম হয়নি।” রাসূল (ﷺ) বলেন, “যদি কারও সামর্থ্য থাকে দৈনন্দিন ব্যবহৃত পোশাক ছাড়া অন্য কোন পোশাক কেনার, তাহলে সে যেন জুম্মার জন্য একটি পোশাক কিনে।”
রাসূল (ﷺ) যখন জুম্মার নামাজে আসতেন, মিম্বারে বসে সবাইকে সালাম দিতেন, তাঁর সাথে থাকত একটি লাঠি। বিলাল (রা:) উঠে দাঁড়িয়ে আযান দিতেন। চিন্তা করুন আপনি সেই সময় মসজিদে বসে আছেন। তখন মানুষকে দেওয়ালের ধার ঘেঁষে বসতে দেখা যেত না, যা এখন দেখা যায়। খুতবায় যোগ দিন, وَادْنُوا مِنَ الْإِمَامِ – যতটা সম্ভব ইমামের কাছাকাছি বসুন। “কারণ এভাবে জান্নাতে প্রবেশের সময়ও সে পেছনে থেকে যাবে, যদিও সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”[সুনান আবু দাউদ:১১০৮ ] রাসূল (ﷺ) মিম্বারে বসে আছেন, আর লোকজন তাঁর চারপাশে ভিড় করে আছে। তাই বলে আপনি লোকজনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে না, তাহলে রাসূল (ﷺ) আপনাকে আপনার জায়গায় বসতে বলবেন। রাসূল (ﷺ) একবার খুতবা শুরু করার পর এক লোক আসলো। সে লোকজন মারিয়ে রাসূলের (ﷺ) কাছাকাছি আসার চেষ্টা করছিল। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন, “আপনি যেখানে আছেন সেখানেই বসুন, কারণ আপনি অন্য লোকদের অসুবিধা সৃষ্টি করছেন এবং আপনি দেরিতে এসেছেন।” যখন তিনি খুতবাহ দিতে দাঁড়াতেন, উল্লেখযোগ্য বিষয় গুলোর মধ্যে একটি হলো, তিনি মসজিদে প্রত্যেকের প্রতি দৃষ্টি রাখতেন। মসজিদের ভিতরে কারো প্রতি, বা কোন কিছুর প্রতি তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতেন না, এমনকি যারা প্রবেশ করছে তাদের প্রতিও না। আবু কাঈস (রা:) বলেন, “আমি যখন মসজিদে প্রবেশ করলাম, তখন রাসূল (ﷺ) খুতবাহ দিচ্ছিলেন। আমি রোদে দাঁড়িয়ে তাঁর খুতবাহ শুনছিলাম। রাসূল (ﷺ) আমাকে ইশারা দিয়ে নির্দিষ্ট ছায়া যুক্ত স্থানে বসতে বললেন।” সুলাইক আল গাতাফানির গল্প আমরা জানি, যাকে রাসূল (ﷺ) দাঁড়িয়ে দু রাকাত নামাজ আদায় করতে বলেছিলেন। কিছু কিছু বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (ﷺ) চাচ্ছিলেন সবাই দেখুক তিনি কতটা দরিদ্র, যাতে চাওয়ার আগেই সবাই তাঁকে কিছু দান করে। পুরো মসজিদ ঘরের উপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ ছিল। দাঁড়িয়ে থেকে তিনি সবকিছু পর্যালোচনা করতেন।
খুব সুন্দর একটি দৃশ্য! রাসূল (ﷺ) খুতবাহ দিচ্ছেন, আর হাসান (রা:) এবং হুসাইন (রা:) তাঁর দিকে এগিয়ে আসছে। খুব সুন্দর হৃদয়গ্রাহী বর্ণনা এ ব্যাপারে এসেছে। রাসূল (ﷺ) মিম্বারে দাঁড়িয়ে খুতবাহ দিচ্ছেন, আর দুটি শিশু তাঁর দিকে এগিয়ে আসছে, খুব সুন্দর দুটি শিশু! তারা লাল জামা পরেছে, আর দৌড়ে আসার সময় বারবার তাদের জামায় হোঁচট খাচ্ছে। দুটি বাচ্চা ইমামের দিকে এগিয়ে আসছে, আপনি নিশ্চয় কল্পনা করতে পারেন, মসজিদের সবাই তখন তাদের দিকে কতটা ভালোবাসা নিয়ে তাকাচ্ছিল। রাসূল (ﷺ) খুতবার মাঝখানে থেমে গেলেন, মিম্বার থেকে নিচে নেমে আসলেন। হাসান (রা:) এবং হুসাইনকে (রা:) তিনি কোলে তুলে নিলেন। তিনি বললেন, إِنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ – “তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো কেবল পরীক্ষা স্বরূপ।”[৬৪:১৫] তিনি আরো বললেন, “আমি নিজেকে প্রতিহত করতে পারিনি।” তিনি সপ্রশংস দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকালেন, এবং তাদের জন্য দু’আ করলেন। তিনি আবার মিম্বারের বসলেন হাসান (রা:) এবং হুসাইনকে (রা:) কোলে নিয়ে।
কেমন ছিল রাসূলের (ﷺ) খুতবা? তিনি বসে আছেন, মসজিদ ঘরের সমস্ত নিয়ন্ত্রণ তাঁর আছে। আপনি বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছেন, কারণ তিনি তাঁর সবচেয়ে ভালো পোশাকে সুসজ্জিত। রাসূল (ﷺ) খুতবায় সবসময় জীবন মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দিতেন। একটি বর্ণনায় এসেছে হারিস ইবনে নু’মানের কন্যা উম হিশাম বলেন, “আমি জুম্মার নামাজে অংশগ্রহণ করে সূরা কাহাফ তাঁর মুখ থেকে শুনে মুখস্ত করেছি।” তিনি প্রতি জুম্মায় সূরা কাহাফ নিয়ে আলোচনা করতেন। আমরা জানি এই সূরা জীবন-মৃত্যু প্রসঙ্গে। এভাবে মিম্বারের দাঁড়ানো অবস্থায় জুম্মার দিনে রাসূলের (ﷺ) মুখ থেকে শুনে শুনে তিনি সূরা কাহাফ মুখস্ত করেছিলেন। সাহাবারা এমন ভাবে তাঁর পাশে বসে তাদের অন্তরকে তৈরি করে রাখতেন, যেনো জীবন মৃত্যুর স্মরণকে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত। তাঁরা এমনভাবে বসতেন যেন তাদের মাথার উপর পাখি বসে আছে, অর্থাৎ তারা স্থির হয়ে বসে খুব মনোযোগ দিয়ে রাসূলের (ﷺ) কথা শুনতেন। তিনি জীবন মৃত্যু নিয়ে আলোচনা করতেন, তাঁর বক্তব্য বোঝানোর জন্য প্রায়শই তিনি হাতের ব্যবহার করতেন। তাঁর কথা ছিল ঝরঝরে, এক কথা তিনি তিনবার পুনরাবৃত্তি করতেন।[শামায়েলে তিরমিজি : ২২২] তাঁর চোখের অভিব্যক্তি এবং তাঁর কণ্ঠস্বর তাঁর বক্তব্যের সাথে মিলে যেত। আনন্দের উদ্রেককারী কোন কথা যখন তিনি বলতেন, তখন তাঁর চোখ ও গলার স্বরে তা প্রকাশ পেত। দুঃখ এবং রাগের উদ্রেককারী কথাও তাঁর চোখ এবং গলার স্বরে বোঝা যেত। বিশেষ কিছু বোঝাতে তিনি তাঁর হাত ব্যবহার করতেন। যখন বিশ্বাসিদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা বলতেন, তিনি তাঁর দুই হাত একত্রিত করে মুষ্টিবদ্ধ করতেন। যখন তিনি জিহ্বার ব্যবহারের ব্যাপারে সতর্ক করতেন, তখন তিনি আঙ্গুল মুখের দিকে নির্দেশ করতেন। যখন তিনি জান্নাতের দরজা খোলার কথা বলতেন, তখন তিনি হাত দিয়ে দরজা খোলার ভঙ্গি করতেন। তিনি প্রায়ই উপরে হাত ইশারা করে জান্নাতের কথা বলতেন, যেন তিনি যা বলছেন আপনি তা বুঝতে পারেন।
তাঁর কথায় তিনি রূপক ও উপমা ব্যবহার করতেন। তাঁর বাকপটুতা ও কথার গভীরতাকে সমুদ্রের গভীরতা সাথে তুলনা করা হয়েছে। আপনি একজন বাগ্মীর বক্তৃতা শুনছেন, একবার চিন্তা করে দেখুন। তাঁর বক্তব্য ইতিহাসে সর্বাধিক লিপিবদ্ধ হয়েছে, অথচ তাঁর বক্তৃতার জন্য তিনি কখনোই প্রস্তুতি গ্রহণ করেননি। তাঁর কত হাজার হাজার মুখের কথার সাথে আমরা পরিচিত। তাঁর কথা গুলো সারিবদ্ধ ভাবে অপেক্ষমান ছিল না, কারণ তিনি তাঁর বক্তব্য আগের থেকে প্রস্তুত করে রাখেন নি। তিনি তাঁর অন্তর থেকে কথা বলতেন এবং মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিতেন, আর সাহাবারা তাঁকে জানতেন ও বুঝতেন, যে কারণে তা আরও কার্যকরী হত। আপনি মসজিদে বসে তাঁর কথা শুনছেন, তিনি জীবন-মৃত্যুর বাস্তবতা ব্যাখ্যা করছেন, পরকালের কথা বলছেন। এখনকার দিনে যদি সাউন্ড সিস্টেম বন্ধ হয়ে যায়, তার এক রকম অর্থ বা ব্যাখ্যা আছে। রাসূল (ﷺ) এ সময় একবার সাউন্ড সিস্টেম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন এক কারণে। আসমা (রা:) বলেন, “একবার খুতবায় মহিলারা রাসূলের (ﷺ) কথা শুনতে পাননি। প্রথম দিকের সারিতে পুরুষ সাহাবারা রাসূলের (ﷺ) কথা শুনে এত কাঁদছিলেন, যে আমরা পেছনের সারির মহিলারা তাঁর খুতবা শুনতে পাইনি। আমরা এতটাই আগ্রহী ছিলাম রাসূল (ﷺ) কি বলেছেন তা শোনার জন্য, ফিরার পথে আমরা পুরুষদের থামিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, রাসূল (ﷺ) এমন কি বলেছেন যে আপনারা এভাবে কাঁদলেন?” সেদিন খুতবায় রাসূল (ﷺ) কবরের আজাবের কথা বলেছিলেন।
“যে শুক্রবারে গোসল করে আগেভাগে মসজিদে যায়, ইমামের কাছাকাছি বসে, এবং মনোযোগ দিয়ে খুতবাহ শোনে, সে এক বছর রোজা রাখার এবং তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সওয়াব পাবে তার প্রতি পদক্ষেপের বিনিময়ে।”[রাসূল (ﷺ): সুনান আবি দাউদ, তিরমিজি]
||তাঁর জবানে খুতবাহ||
মূল: ড: ওমর সুলাইমান
অনুবাদ: ফাহমিনা হাসানাত

নবিজি (সাঃ) এর ইমামতি!

 

ইমাম হাসান বসরি রহিমুল্লাহ বলেন, সালাত হলো বিশ্বাসীদের মি’রাজ – আরোহন বা ঊর্ধ্ব গমন। আপনি যখন নামাজ পড়েন তখন সরাসরি আল্লাহ সুবহানা তা’য়ালা সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেন। আপনি এমনভাবে আরোহন করছেন ঠিক যেভাবে রাসূল (ﷺ) জান্নাতে আরোহণ করেছিলেন নামাজের নির্দেশ পাওয়ার সময় আল ইসরা ওয়াল মি’রাজের রাতে। কাজেই নামাজ খুবই অন্তরঙ্গ ও শক্তিশালী একটা মাধ্যম আল্লাহ সাথে সংযোগ স্থাপন করার ক্ষেত্রে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সব সময় আমরা মসজিদে নামাজ পড়তে পারছিনা। সুললিত কন্ঠের ইমামের পিছনে দাঁড়িয়ে জামাতে নামাজ পড়ার অভিজ্ঞতাই আলাদা। তাহলে চিন্তা করে দেখুন, প্রতিটি সালাত তখন রাসূলের (ﷺ) পিছনে দাঁড়িয়ে পড়ার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল, যিনি নিজেই নামাজের নির্দেশ পেয়েছিলেন।
রাসূল (ﷺ) নামাজের ইমামতি করতে আসতেন মসজিদে। তাঁর কুরআন তিলওয়াতের ছিল এক অনন্য এবং অনবদ্য পদ্ধতি। অবশ্যই তিনি সেই ব্যক্তি যার উপর কুরআন নাজিল হয়েছিল। রাসূল (ﷺ) নামাজের প্রতিটি অবস্থানের ব্যাপারে যত্নশীল ছিলেন। প্রতিটি রাকাতই ছিল তাঁর জন্য বিশেষ। চিন্তা করে দেখুন, তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে নামাজের প্রতিটি গতিবিধি আপনি নিখুঁত ভাবে আয়ত্ত করছেন। কেমন ছিল তাঁর তিলওয়াত? তাঁর ছিল এক অনন্য কণ্ঠস্বর। মনে আছে, কাতাদা রহিমুল্লাহ বলেছিলেন, حسن الوجه حسن الصوت – “প্রত্যেক নবীর সুন্দর চেহারাও কণ্ঠস্বর ছিল।” যখন রাসূল (ﷺ) তিলওয়াত করতেন, প্রতি আয়াতের শেষে তিনি থামতেন। [মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৬/৩০২] তিনি তিলওয়াত করতেন ঝরঝরে ও পরিষ্কার ভাবে। যেমন ভাবে তিনি ধীরে সুস্থে কথা বলতেন এবং যথাযথ ভাবে বক্তৃতা দিতেন, ঠিক তেমনি ছিল তাঁর তিলওয়াত। তাঁর তিলওয়াত ছিল ধীর এবং প্রতিটি আয়াত তিনি পৃথক ভাবে তিলাওয়াত করতেন। তাঁর কণ্ঠে ছিল প্রাকৃতিক মাধুর্যতা। তাঁর কণ্ঠস্বর খুব উঁচু ছিল না, কিন্তু এমন ছিল যে আপনি তা শুনতে পেতেন। আপনি যদি তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়েন, বা তিনি নামাজ পড়ার সময় তাঁর বাড়ির আশেপাশে থাকেন, উঠোন থেকে আপনি তাঁর তিলওয়াত শুনতে পাবেন।
কুরআন তিলওয়তের সময় তিনি প্রায়শই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়তেন। তিলওয়াতের সময় তিনি যেভাবে কাঁদতেন তাও ছিল অনন্য। কুরআন তিলওয়াতের সময় তাঁর কান্নাকে তুলনা করা হয়েছে বুকের ভিতর ঘন শ্বাস প্রশ্বাসের শনশন শব্দের সাথে, ঠিক যেমন ফুটন্ত কেতলি থেকে শোনা যায়। তাঁর আকর্ণ বিস্তৃত হাসি যেমন শোনা যেত না, কিন্তু অবশ্যই তা ছিল মুচকি হাসি থেকে পৃথক, তেমনি তাঁর কান্নাও ছিল মহিমান্বিত। তা খুব প্রবল বা জারে শোনা যেত না, কিন্তু আন্তরিক এবং অকপট সে কান্না উঠে আসতো বুকের গভীর থেকে। কান্নার শব্দ শোনা না গেলেও, তাঁর দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝরে পড়ত অবিরাম। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) একটি বিখ্যাত ঘটনার কথা উল্লেখ করেন, রাসূল (ﷺ) তাঁকে একবার কুরআন তিলওয়াত করে শোনাতে বললেন।‌ তিনি তখন বলেন, “হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে কুরআন তিলওয়াত করে শোনাতে বলছেন, যা কিনা আপনার উপর নাযিল হয়েছে?” রাসূল (ﷺ) তখন বললেন “আমি অন্যের মুখে তিলওয়াত শুনতে পছন্দ করি।” আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) বলেন, “আমি সুরা আন নিসা তিলওয়াত করলাম, তারপর একটি নির্দিষ্ট আয়াতে এসে পৌঁছালাম” –
فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِن كُلِّ أُمَّةٍۭ بِشَهِيدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَىٰ هَٰٓؤُلَآءِ شَهِيدًا
অতএব কেমন হবে যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব, এবং আপনাকে [রাসূলকে (ﷺ)] উপস্থিত করব তাদের উপর সাক্ষীরূপে?[৪:৪১]
এ আয়াত শোনার পরে রাসূল (ﷺ) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) এর হাঁটুতে হাত রেখে বলেছিলেন, “যথেষ্ট হয়েছে!” মাসউদ (রা:) বলেন, “তখন আমি তাকিয়ে দেখলাম রাসূল (ﷺ) এর চোখ দিয়ে ঝর্ণাধারার মত অঝোর-ধারায় পানি উপচে পড়ছে, কিন্তু তিনি তা খেয়াল করেন নি, কারণ রাসূল (ﷺ) উচ্চস্বরে
কাঁদছিলেন না, কিন্তু অন্তরের খুব গভীর থেকে উঠে আসছিল অকপট সেই কান্না। [বুখারি, হাদিস : ৫০৫০; মুসলিম, হাদিস : ১৯০৩] আন্তরিক সে কান্না তাঁর দুচোখকে সবসময় অশ্রুসিক্ত করে রাখত।”
রাসূল (ﷺ) অবশ্যই নামাজে আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করতেন, হোক তা ফরজ অথবা নফল নামাজ। নিজের সালাতে মগ্ন হয়ে কখনোই তিনি তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা সাহাবাদের কথা ভুলে যেতেন না। তিনি তাঁর ফরজ নামাজকে দীর্ঘায়িত করে অন্যের অসুবিধার সৃষ্টি করেননি। কেউ নামাজকে এতটা ভালোবাসেনি, যেভাবে রাসূল (ﷺ) নামাজকে ভালবেসেছিলেন। তিনি বলতেন, “ফরজ নামাজের ইমামতি করার সময় তা সংক্ষিপ্ত করুন, কারণ পিছনে বৃদ্ধ, অসুস্থ, এবং মহিলারা আসেন বাচ্চা সহ, আরও এমন অনেকে আছেন যাদের বেচাকেনার কাজ চালিয়ে যেতে হয়।” তিনি যখন ফরজ নামাজের ইমামতি করতেন তা তিনি দীর্ঘায়িত করতে না। এমনকি নামাজের সময় যদি বাচ্চাদের কান্নাও শুনতেন, নামাজের পর তিনি বাচ্চাদের বাবা-মাকে কখনো তিরস্কার করতেন না, বরং এক্ষেত্রে তিনি তাড়াতাড়ি নামাজ শেষ করতেন। কারণ তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন নামাজে বাচ্চাদের বাবা-মা, দাদা দাদি ও নানা নানির অভিজ্ঞতাকে। এমন সময় ছিল যখন হাসান (রা:) এবং হুসাইন (রা:) – বিশেষ করে হাসান (রা:) এসে তাঁর উপর ঝাপিয়ে পড়তো। হ্যাঁ, ফরজ নামাজেই! বিশেষ করে তিনি যখন সিজদা দিতেন, হাসানকে (রা:) পিঠে নিয়ে তিনি অপেক্ষা করতেন যাতে সে ব্যথা না পায়। উমামা (রা:) শিশুকালে তাঁর কাছে এসেছিলেন। রাসূল (ﷺ) উমামাকে (রা:) কোলে নিয়ে নামাজ পড়তেন, এবং সিজদা দেওয়ার সময় তাকে নামিয়ে রাখতেন। তাঁর ফরজ নামাজ ছিল অভূতপূর্ব সুন্দর এবং
অনুকরণীয়। তাঁর আন্তরিকতা ছিল অকপট, তাঁর তিলওয়াত ছিল সুমধুর।
কেমন ছিল তাঁর নফল নামাজ? এখন রমজান মাস, আমরা অধীর আগ্রহ নিয়ে সালাতুল তারাবি পড়ছি, এবং আল্লাহর দরবারে এর গ্রহণযোগ্যতার জন্য আমরা কতটাই না প্রত্যাশী। রমজান মাসের প্রথম কয়েক রাতে রাসূল (ﷺ) যখন তারাবির নামাজে ইমামতি করতেন, সাহাবাদের সমাগমে মসজিদ এতটাই পরিপূর্ণ হয়ে যেত যে তিল ধারণের জায়গা থাকত না। সাহাবারা সারা রাত ধরে তাঁর তিলওয়াত শুনতে চাইতেন, তাঁর সাথে নামাজ পড়তে চাইতেন। তখন তিনি মসজিদে যাওয়া বন্ধ করলেন, কারণ তিনি চাননি তারাবি সবার জন্য ফরজ হয়ে যাক। যাইদ ইবনে সাবিত (রা:) এ ব্যাপারে এক আকর্ষণীয় বর্ণনা দিয়েছেন। রাসূল (ﷺ) মসজিদে একটি জায়গা নির্দিষ্ট করেছিলেন, প্রতি রাতে তিনি সেই নির্দিষ্ট জায়গায় নামাজ পড়তেন। সাহাবারা তাঁর কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়ে অন্যদের ডেকে আনল, এবং তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া শুরু করল। যে রাতে তিনি মসজিদে যেতেন না, সাহাবারা তখন কি করত? তিনি বলেন, সাহাবারা তখন তাঁর বাসার সামনে গিয়ে কাশাকাশি করত, ডাকাডাকি করত, গলার স্বর কিছুটা উঁচু করত, এমনকি ছোট ছোট পাথর তাঁর ঘরের দরজায় নিক্ষেপ করতো, এই প্রত্যাশায় যে রাসূল (ﷺ) তা শুনতে পেয়ে নামাজের নেতৃত্ব দিতে আসবেন। এক রাতে রাসূল (ﷺ) হতাশ হয়ে বললেন, “‘আইয়ুহান্নাস – হে মানুষ! তোমরা এমন শুরু করেছ যে, আমার মনে হচ্ছিল এ বুঝি তোমাদের জন্য ফরজ হয়ে গেছে। তোমরা তোমাদের বাসায় নামাজ পড়ো, কারন বাসায় নামাজ পড়াই উত্তম, ‘আল মাকতুবা’ – ফরজ নামাজ ব্যতীত।”
আপনি যদি রাসূলের (ﷺ) পিছনে দাঁড়িয়ে নফল নামাজ পড়ার আশীর্বাদ পান, তবে আপনি অনুতপ্ত হবেন। ইবনে মাসউদ (রা:) যিনি অনেক সুরা রাসূল (ﷺ) এর মুখ থেকে শুনে মুখস্থ করেছেন, তিনি বলেন, “একবার আমি তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে নফল নামাজ পড়ছিলাম, তাঁকে নামাজ পড়তে দেখে। তখন আমি খুব খারাপ কিছু করতে চাইলাম।” সবাই জিজ্ঞেস করলো সেটা কি? তিনি বললেন, “আমি নামাজ ছেড়ে চলে যেতে চাইলাম। তিনি সিজদায় থাকা অবস্থায় আমি পালিয়ে গেলাম কারণ তাঁর সিজদা ছিল অনেক বেশি দীর্ঘ।” হুজাইফা ইবনে আল ইয়ামান (রা:) এই প্রসঙ্গে এক বিখ্যাত ঘটনার উল্লেখ করেন, “একবার রাসূল (ﷺ) কিয়াম অর্থাৎ রাতের সালাত আদায় করছিলেন। আমি তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে গেলাম। প্রথম রাকাতে তিনি সুরা বাকারা পড়া শুরু করলেন, আমি ভাবলাম তিনি হয়তো একশ আয়াত পড়ে থেমে যাবেন, কিন্তু তিনি পড়তেই থাকলেন, আমি ভাবলাম হয়তো তিনি দুইশ আয়াতে থামবেন। কিন্তু না, তিনি তিলওয়াত চালিয়েই যেতে থাকলেন। তখন আমি ভাবলাম তিনি সুরা বাকারা শেষ করে হয়তো থামবেন। সুরা বাকারা শেষ করে তিনি সুরা আন নিসা তিলওয়াত করা শুরু করলেন। আবার আমি ভাবলাম, তিনি একশ আয়াতে থামবেন। সুরা নিসা শেষ করে তিনি সুরা আল-ই-ইমরান পড়া শুরু করলেন। এরপর তিনি রুকুতে গেলেন, তাঁর রুকুও ছিল দাঁড়িয়ে থাকার সমান। তাঁর প্রতিটি সিজদা ছিল তাঁর রুকু ও দাঁড়িয়ে থাকার সমান। দ্বিতীয় রাকাতে তিনি সুরা আল-মায়িদা, আল আনাম – এভাবে দীর্ঘ সব সুরা তিলওয়াত করতেই থাকলেন। [মুসলিম, হাদিস : ৭৭২] উম্মে সালামা (রা:) বলেন, “একবার রাসূল (ﷺ) সাতটি সবচেয়ে দীর্ঘ সুরা এক রাকাতে পড়েছিলেন।” কাজেই ফরজ নামাজ আপনি যেন উপভোগ করেন সেজন্য তিনি তা সংক্ষিপ্ত করেছেন। কিন্তু আপনি যদি তাঁর পিছনে কিয়াম আদায় করেন, তিনি তখন আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপনে মগ্ন, দীর্ঘ সময় ধরে তিনি তা আদায় করছেন, নিজের তিলাওয়াতকে তিনি উপভোগ করছেন। তাঁর সুললিত কন্ঠের সেই তিলওয়াত শোনার জন্য আমরা কতটাই না প্রত্যাশী।
“প্রতিটি নামাজ এমন ভাবে আদায় করুন যেন এটাই আপনার জীবনের শেষ নামাজ। আজ এমন কিছু বলবেন না, যার জন্য কাল আপনাকে অনুশোচনা করতে হয়, এবং অন্যের অধীনে যা আছে তার জন্য আপনার আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করুন।” [রাসূল (ﷺ)]
||নবিজির ইমামতি||
মূল: ড: ওমর সুলাইমান
অনুবাদ: ফাহমিনা হাসানাত

নবিজি (সাঃ) এর জমায়েত!

আপনি জুম্মার নামাজের সমাবেশে রাসূলকে (ﷺ) দেখেছেন, তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে নামাজও পড়েছেন। এখন আপনি তাঁর জমায়েতে উপস্থিত থাকতে চান, এবং তাঁকে পর্যবেক্ষণ করতে চান।
সাহাবারা তাঁর সাথে সকালের সময়টা কাটাতে ভালোবাসতেন, বিশেষ করে যুবকরা। ফজরের নামাজে তিনি সাহাবাদের ইমামতি করতেন। মসজিদে বসে রাসূল (ﷺ) ফজরের পরে আল্লাহকে স্মরণ করতেন সালাতুত দুহা অর্থাৎ সূর্যোদয় পর্যন্ত। কখনো তিনি সূর্যোদয়ের পরে, আবার কখনো আরো বেশি কিছুক্ষণ সময় পর্যন্ত আল্লাহকে স্মরণ করতেন। সারা রাতের ইবাদতের পরে, এমনকি সকালের সব ইবাদত ও আল্লাহকে স্মরণের পরেও, সূর্য উঠার পরে তিনি শুধু দুই রাকাত নামায পড়তেন না, ২, ৪, ৬….. রাকাত কখনো আরো বেশি পড়তেন। রাতের কোন নামাজ যদি কখনো বাদ থাকতো, তবে তিনি তা আদায় করতেন সূর্যোদয় ও জোহরের নামাজের মাঝামাঝি সময়ে। সাহাবারাও তাঁর সাথে মসজিদে বসে আল্লাহকে স্মরণ করতেন, এবং রাসূল (ﷺ) সালাতুত দুহা শেষ না করা পর্যন্ত তাঁরা অপেক্ষা করতেন। তিনি যুবকদের এতটাই ঘনিষ্ঠ ছিলেন যে মসজিদে যখনই তাদের একত্রিত দেখতেন, তাদের সাথে গিয়ে বসতেন। সুবহানাল্লাহ! আলী ইবনে আবি তালিব (রা:) দৃশ্যটি বর্ণনা করেছেন এভাবে -“রাসূল (ﷺ) নামাজ শেষ করে জমায়েতে অংশ নিতেন, তিনি জমায়াতের শেষে বসতেন, সামনে গিয়ে বসতেন না। জমায়াতে যেখানেই জায়গা পেতেন সেখানেই বসে পড়তেন, এবং সবাইকে তা করতে উৎসাহিত করতেন।” [আশ শামাঈল আল মুহাম্মাদিয়া ৩৩৫]
মজলিসে তিনি সবাইকে সমান প্রাধান্য দিতেন যেন সবাই সম্মানিত বোধ করে, এবং কেউ যেন মনে না করে অন্য কেউ তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। [আশ শামাঈল আল মুহাম্মাদিয়া ৩৩৫] তিনি সবার দিকে তাকাতেন, জমায়েতে সবার প্রতি দৃষ্টি বিনিময় করতেন। আনাস ইবনে মালিক (রা:) তখন যুবক ছিলেন। তিনি বলেন, রাসূলের (ﷺ) মতো আর কাউকে আমরা এতটা ভালবাসিনি। তাঁকে দেখলে আমরা উঠে দাঁড়াতাম না, কারণ তিনি তা অপছন্দ করতেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি এতটাই বিনয়ী ছিলেন যে, তাঁর উপস্থিতিতে জামায়াতে কেউ উঠে দাঁড়াতে চাইলে তিনি ইশারা দিয়ে তাদের বসতে বলতেন, এবং একেবারে সামনে গিয়ে না বসে যেখানে জায়গা পেতে সেখানেই বসে পড়তেন।
এখন যে ব্যাপারটা বলবো তা জানলে মানুষ হয়তো কিছুটা ধাক্কা খাবে। আবু ইবনু হাতিম আততাই বলেন, “আমি রাসূলের (ﷺ) কাছে আসলাম ইসলাম সম্বন্ধে জানতে, তিনি আমাকে বসতে বললেন। তিনি একটি বালিশ আনালেন এবং তা আমাদের মাঝে রাখলেন। তিনি তাঁর কনুই বালিশে ভর দিয়ে বসলেন, এবং আমাকেও তা করতে বললেন। তখনই আমি বুঝে গেলাম, তিনি কোন রাজা বাদশা নন, বিশ্বের প্রচলিত রাজা এবং রাষ্ট্রপ্রধানদের চেয়ে তিনি ভিন্ন।” আলী (রা:) বলেন, “কেউ তাঁর কাছে কিছু চাইলে তিনি তাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিতেন না, নিদেনপক্ষে কিছু সান্তনা বাণী হলেও দিতেন।” [আশ শামাঈল আল মুহাম্মাদিয়া ৩৩৫] জাবেরকে (রা:) জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আপনি কি কখনো রাসূলের (ﷺ) জমায়াতে উপস্থিত ছিলেন? হ্যাঁ, আমরা জানি ফজরের নামাজের পরে রাসূল (ﷺ) মসজিদে বসতেন, আল্লাহকে স্মরণ করতেন, তারপর তিনি তাঁর সাহাবাদের সাথে যোগ দিতেন। অনুমান করুন তো, জাবের (রা:) কি বলেছিলেন? তিনি বলেছিলেন, “সাহাবারা তখন জাহিলিয়া – অন্ধকার যুগের কথা স্মরণ করতেন, কবিতা আবৃত্তি করতেন এবং হাসতেন। রাসূলও (ﷺ) তাদের সাথে হাসতেন।” রাসূল (ﷺ) নিরবে মসজিদে বসে থাকতেন এবং জিকির করতেন। অবশ্যই আমরা জানি, যে কোনো সমাবেশে তিনি ইস্তিগফার করতেন কমপক্ষে ৭০ বার। তিনি বসে আছেন, হাসছেন, সবার দিকে তাকাচ্ছেন, কারো কথোপকথন কেড়ে নিচ্ছেন না।
উমাইয়া ইবনে আবি সালত নামে এক ব্যক্তি একবার একশ লাইনের একটি কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন, রাসূল (ﷺ) তাকে বাঁধা দেননি। রাসূল (ﷺ) এবং তাঁর সাহাবাদের কথা আমরা যেভাবে জানি, এ বিষয়টা হয়তো কিছুটা বিস্ময়ের উদ্রেক করবে। এমনকি সিরিন রহিমুল্লাহ তা’আলাকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়, “সাহাবারা কি আনন্দ করতেন, রসিকতা করতেন, হাসাহাসির মতো মানবিক কোন মুহূর্ত কি তারা উপভোগ করতেন?” তিনি বলেন, “সাহাবারাও তো মানুষ, এমনকি ওমরও (রা:) রসিকতা করতেন, তিনি কবিতাও লিখতেন।” কাজেই জমায়াত গুলোতে শুধু হালকাত বা আল্লাহর স্মরণই হত না, যদিও রাসূল (ﷺ) কোন জমায়েত আল্লাহর স্মরণ ব্যতিরেকে করেননি। পাপপূর্ণ কোন জমায়াত তিনি করেনি। এই ধরনের কোনো জমায়েত তিনি অনুমোদন করেনি এবং নিজেও অংশগ্রহণ করেননি। কিছু যুবক বর্ণনা করেছেন, তারা তাদের জমায়াতে রাসূলের (ﷺ) অংশ গ্রহণকে ভালোবাসতেন। যাইদ ইবনে সাবিত (রা:) বলেন, “আমরা রাসূলের (ﷺ) সাথে ছিলাম, আমরা যখন দুনিয়াবী কথা বলতাম, রাসূলও (ﷺ) দুনিয়াবী কথা বলতেন, আমরা যখন আখিরাত নিয়ে কথা বলতাম, তিনিও আখিরাত নিয়ে কথা বলতেন, আমরা যখন খাবার নিয়ে কথা বলতাম, তিনিও খাবার নিয়ে কথা বলতেন।” দুনিয়াবী কথা বললেও অবশ্যই রাসূল (ﷺ) উপকারী কথাই বলতেন, তিনি খাদ্যের ব্যাপারেও কথা বলতেন। এমন নয় যে তিনি বলতেন, সবচেয়ে ভালো রেস্টুরেন্ট কোথায়, বা ছাগলটি কোথা থেকে ক্রয় করবে? এমনকি খাবারের ব্যাপারেও তিনি হিতকর কথাই বলতেন, যেমন কোন খাবারগুলো খাওয়া উচিত, মাঝে মাঝে তিনি তাঁর প্রিয় খাবারের তালিকাও উল্লেখ করতেন।
যুবকদের জমায়াতকে কেন্দ্র করে একটি বিখ্যাত হাদীস আছে। ইবনে মাসউদ (রা:) বলেন, “আমরা কিছু যুবক মসজিদে বসে আলোচনা করছিলাম কিভাবে বিয়ে করা যায়। হ্যাঁ, যুবকরা শুধু আখিরাত নয় বিয়ের ব্যাপারেও আলোচনা করতেন। তখন রাসূল (ﷺ) বলেন,
“‏ يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَنْكِحْ فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لاَ فَلْيَصُمْ فَإِنَّ الصَّوْمَ لَهُ وِجَاءٌ ‏”‏ ‏
“হে যুবকরা! তোমাদের মধ্যে যাদের সামর্থ্য আছে তারা বিয়ে করো। তোমরা তোমাদের দৃষ্টিকে অবনত কর এবং সতীত্ব রক্ষা করো, এবং যাদের সামর্থ্য নেই তারা যেন রোজা রাখে কারণ তা তাদের জন্য বর্ম হিসেবে কাজ করবে।”[সুনান আন নাসাঈ: ৩২০৯]
রাসূল (ﷺ) সাহাবাদের উৎসাহিত করতেন কেউ আগের রাতে কোন স্বপ্ন দেখে থাকলে তা বলার জন্য, অবশ্যই ভালো কোন স্বপ্ন। খারাপ স্বপ্ন দেখলে তিনি তা বলতে নিষেধ করতেন, এবং আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে বলতেন যাতে কোনো ক্ষতি না হয়। আপনি আপনার স্বপ্ন রাসূলকে (ﷺ) বলছেন, কারণ আপনি তাঁর সাথে কথোপকথন চালিয়ে যেতে চান। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা:) বলেন, তিনি দু’আ করেছিলেন, “হে আল্লাহ! আপনি যদি আমার মধ্যে ভালো কিছু দেখেন তাহলে আমাকে ভালো কোন স্বপ্ন দেখান যা আমি রাসূলকে (ﷺ) বলতে পারি।” কিন্তু ওমর (রা:) এমন এক স্বপ্ন দেখেছিলেন যা তাঁকে কিছুটা ভীত করেছিল। তারপরও রাসূল (ﷺ) তা ব্যাখ্যা করেছিলেন তাঁর বোন হাফসার (রা:) মাধ্যমে।
রাসূল (ﷺ) জমায়েতে বসে আছেন, আপনি তাঁর সাথে কথা বলতে আগ্রহী এবং সহজেই তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম কারণ তিনি অধিগম্য। তিনি সবার মত মাটিতে বসতেন, এবং বিশেষ এক ভঙ্গিতে বসতেন। তিনি কারো কথোপকথনে ব্যাঘাত ঘটাতেন না। সবাই তাঁর উপস্থিতি সম্পর্কে সচেতন, সবাই তাঁর কাছ থেকে শুনতে চায়। তিনি সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করতেন ফজর নামাজের শেষে জমায়েতে। রাসূল (ﷺ) মসজিদে শুয়ে আছেন, গদিতে হেলান দিয়ে বসে আছেন – এমন দৃশ্যও আপনি দেখতে পাবেন। আপনি দেখছেন তাঁকে তাঁর সর্বোচ্চ মানবিক রূপে, যদিও তিনি সবচেয়ে আশীর্বাদ প্রাপ্ত ব্যক্তি।
অনুমান করুন তো, কারা বাদ পড়ছে জমায়াতে? হ্যাঁ, মহিলারা। আবু সাঈদ (রা:) বলেন, “একবার মহিলারা এসে রাসূলকে (ﷺ) বললেন, আপনি সবসময় পুরুষ সাহাবাদের সাথে থাকেন, কিন্তু আমরা তো সেই সুবিধা পাচ্ছি না, আমরাও চাই আপনার কাছ থেকে উপকৃত হতে।” রাসূল (ﷺ) তখন মহিলাদের নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট জায়গায় জমায়েত হতে বলেন। সপ্তাহের এক বিশেষ দিনে তিনি তাদের কাছে যেতেন, তাদের উপদেশ দিতেন, জ্ঞান বিতরণ করতেন। সুবহানাল্লাহ! মহিলাদের সাথে প্রথম হালাকায় তিনি বলেছিলেন, “আপনাদের মধ্যে যারা তিনটি সন্তান হারিয়েছেন, বিচার দিবসে তারা আপনাদের জন্য বর্ম হিসেবে কাজ করবে।” তখন মহিলারা জিজ্ঞেস করেছিল, “যদি কেউ দুটি সন্তান হারায়?” তিনি বলেছিলেন, “হ্যাঁ, দুটি সন্তানও” এভাবে বিভিন্ন জমায়েতে উপস্থিত থেকে তিনি সাহাবাদের বলতেন কিসে তারা উপকৃত হবে, কি শিক্ষা তারা গ্রহণ করবে। যখন তিনি তাঁর উম্মার সাথে জমায়েতে উপস্থিত হতেন, তিনি তাদের বৃহত্তর দর্শন ও দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলতেন, এবং পুরস্কারের আশ্বাস দিতেন।
‘কোনো সম্প্রদায় যদি আল্লাহর কোনো ঘরে একত্রিত হয়ে কুরআন তেলাওয়াত করে এবং তা পরস্পরে শেখে তবে তাদের উপর প্রশান্তি নাজিল হয়; আল্লাহর রহমত তাদেরকে আচ্ছাদিত করে এবং ফেরেশতারা তাদেরকে ঘিরে রাখে। আর আল্লাহ তা’আলা তাঁর কাছের ফেরেশতাদের সামনে তাদের কথা আলোচনা করেন।’ [রাসুল (ﷺ): মুসলিম]
||তাঁর জমায়েত||
মূল: ড: ওমর সুলাইমান
অনুবাদ: ফাহমিনা হাসানাত

খন্দকে নবিজি (সাঃ) এর সাথে!

সাইয়েদুল কাওম খা-দিমুহুম – سيد القوم خادمهم এর মূল ধারণা হলো জনগণের নেতা হবে একজন দাস। রাসূল (ﷺ) যখন মদীনায় আসলেন, সাহাবারা জানতেন না তাঁর কাছে কি প্রত্যাশা করবেন। কারণ দাস-নেতৃত্বের এই ধারণাটি ছিল তাদের কাছে অপরিচিত। এমনকি এখনও আপনি খুব কম নেতাকেই দেখবেন, যিনি জনগণের দাস। যদি দেখেও থাকেন, তা গণসংযোগের কারণে বা অন্য কোন কারণে। রাসূলকে (ﷺ) প্রতিনিয়তই তাদের বলতে হতো, “এতটা করবেন না।” দাস-নেতার এই প্রথার মধ্যে দিয়ে তিনি সাহাবাদের এবং আমাদের জন্য রেখে গেছেন এক অনন্য শিক্ষা। সাহাবারা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর নবী এবং আড়ম্বরপূর্ণ ঐ সব নেতাদের মধ্যে বৈপরীত্য উপলব্ধি করতে পেরেছিল।
রাসূল (ﷺ) প্রথম থেকেই দাস-নেতার এই প্রথাটি চালু করেছিলেন। তিনি যখন মদিনার কুবায় আসলেন, সাহাবারা তাঁকে ঘাড়ে তুলে নিতে চাইল, সর্বোত্তম সৌজন্য দেখালো ঠিক যেমনটা দেখানো উচিত। তারা প্রত্যাশা করেছিলো, রাসূল (ﷺ) তাদের সেবা গ্রহণ করবেন এবং বসে বসে নেতৃত্ব দিবেন। কিন্তু রাসূল (ﷺ) যখন মদীনায় আসলেন, তারা বুঝতে পারলো তিনি কতটা নম্র ও শান্ত, এমনকি তারা রাসূলকে (ﷺ) আবু বাকর (রা:) থেকে পৃথক করতে পারল না। উপরন্তু, যখন ইসলামের প্রথম মসজিদ – মসজিদুল কুবার নির্মাণ কাজ শুরু হলো, রাসূল (ﷺ) নিজেও সাহাবাদের সাথে নির্মাণ কাজে হাত দিলেন। সাহাবারা যখন মসজিদুন নাওয়াবি – রাসূলের (ﷺ) মসজিদ নির্মাণ শুরু করলো, রাসূল (ﷺ) তখন নিজ হাতে ইট বহন করে আনতেন। শুধু একটি বা দুটি ইট বহন করেই তিনি ক্ষান্ত হননি, অন্য সবার মতো তিনিও মসজিদ নির্মাণে কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন, এবং সাহাবাদের জন্য দু’আ করেছিলেন, اللهم إن الأجر أجر الآخرة – “হে আল্লাহ! আপনি তাদের পরকালের পুরস্কারের সুসংবাদ দিন”, فارحم الأنصار والمهاجره – “আনসার – যারা মদিনায় আছে, এবং মুহাজিরীন – যারা মক্কা থেকে স্থানান্তরিত হয়ে এসেছে, তাদের প্রতি আপনি দয়া করুন।”
মদিনার সমাজে এই দাস-নেতার প্রথাটি তিনি একদম শুরু থেকেই চালু করেছিলেন। যদি আপনি ঐ সময়ে তাঁর সমাজে বাস করেন, তাহলে দেখবেন প্রতি বছরই কোনো না কোনো যুদ্ধ বা কষ্ট লেগেই আছে। বিশ্রামের সময় রাসূল (ﷺ) পাননি। মদিনা তখন সমস্ত সৌন্দর্য ও প্রশান্তি নিয়ে আক্রমণ আর হুমকির সম্মুখীন। রাসূলের (ﷺ) সাথে থেকে হত্যাকান্ডের হুমকি এবং যুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যে বেঁচে থাকার অভিজ্ঞতা তখন কেমন ছিল? এ ব্যাপারে আমরা শুধুই পড়েছি, এখন আমি চাই আপনারা ব্যাপারটা একটু কল্পনা করে দেখুন। আপনি যদি ঐ সময়ে তাঁর সমাজে বাস করেন, তাহলে রাসূলের (ﷺ) সাথে কেমন করে সেই সময় পার করেছেন? প্রতি বছরই মদীনাবাসীকে এসব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হতো, অথচ রাসূল (ﷺ) কখনোই তাঁর সাহাবাদের থেকে কম কষ্ট করেননি।
খন্দক বা পরিখা দিয়ে শুরু করা যাক। তাদের নেতা প্রকৃতপক্ষেই খন্দকের ভিতরে। খন্দকের যুদ্ধে রাসূল (ﷺ) একাই দশ জনের সমান খনন করেছিলেন। আবু তালহা (রা:) বর্ণনা করেন, “আমরা রাসূলকে (ﷺ) ক্ষুধার তাড়নায় আমাদের পেটে বেঁধে রাখা পাথর দেখিয়েছিলাম, তিনি তখন জামা তুলে দেখিয়েছিলেন তাঁর পেটে দুইটি পাথর বাঁধা।” তিনি সবার চেয়ে কম খেতেন, যদিও তিনি ছিলেন সবার নেতা। হত্যাকাণ্ড এবং মদীনাকে শেষ করে ফেলার হুমকির মধ্যে দিয়েও রাসূল (ﷺ) সাহাবাদের সাথে থেকে পরিখা খনন করেছেন। রাসূলের (ﷺ) বাহ্যিক রূপ তখন কেমন হয়েছিল? আল বারাহর (রা:) এই বর্ণনাটিই সম্ভবত আমার সবচেয়ে প্রিয়, তিনি বলেছেন, “রাসূল (ﷺ)
ঐদিন খন্দক থেকে উঠে আসছিলেন, আমার মনে আছে তাঁর সারা গায়ে ময়লা, তাঁর আশীর্বাদপ্রাপ্ত ত্বকের প্রতিটি অঙ্গে তখন ময়লা।” রাসূল (ﷺ) সব সময় সাহাবাদের সাথে ছিলেন, তাদের সাথে থেকে খনন করেছেন, সংগ্রাম করেছেন, তাদের চেয়েও বেশি কষ্ট ভোগ করেছেন। যুবকদের দিকে তাকিয়ে তিনি আরো একবার দোয়া করেছিলেন,
لا عيش إلا عيش الآخرة . فاغفر للأنصار والمهاجرة
“হে আল্লাহ! পরকালের জীবন ব্যতীত অন্য কোন জীবন নেই, কাজেই আপনি মুহাজিরীন ও আনসারদের ক্ষমা করে দিন। [সহি বুখারী ৩৭৯৭] তিনি সাহাবাদের সাথে গান গাচ্ছেন, সুর মেলাচ্ছেন এবং তাদের জন্য দু’আ করছেন। কেমন ছিল তাঁর সাথে যুদ্ধে যাওয়ার অভিজ্ঞতা? যুদ্ধের আগের রাতে আপনি দেখবেন তিনি সারারাত নামাজ পড়ছেন, যুদ্ধে জয় লাভের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাচ্ছেন। রাসূলের (ﷺ) দুটি ধাতব ধর্ম ছিল যা তিনি যুদ্ধের সময় পরিধান করতেন, আর ছিল একটি কালো পাগরী। এছাড়াও রুপালি রঙের একটি ধাতব ও হেলমেট ছিল, যা তিনি মাঝে মাঝে পরিধান করতেন। আর ছিল একটি তরবারি যার হাতলটি রুপার তৈরি। যুদ্ধের আগে তিনি সাহাবাদের কাছে আসতেন, এমন না যে তিনি পিছনে দাঁড়িয়ে তাদের সামনে এগিয়ে দিতেন। তিনি তাদের সাথে কথা বলতেন, যাতে সাহাবারা উপলব্ধি করেন তিনিও আছেন তাদের সাথে। তিনি তাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিতেন, এবং কিছু নীতিও স্মরণ করিয়ে দিতেন যেমন – বাচ্চাদের, মহিলাদের, বৃদ্ধদের, এবং যারা অসুস্থ তাদের হত্যা না করতে, বিশ্বাসঘাতকতা না করতে, কারো দেহ বিকৃত না করতে, গাছ না কাটতে, কোন উপাসক বা তাদের উপাসনা স্থলের কোনো ক্ষতি না করতে। এভাবে তিনি যুদ্ধের আগে সাহাবাদের এই নীতি গুলো স্মরণ করিয়ে দিতেন। তিনি বলতেন জিব্রাইল (আ:) এবং অন্যান্য ফেরেশতারাও প্রস্তুত হয়ে আছেন।
শুরু হয়ে গেল যুদ্ধ! আপনি দেখবেন রাসূলকে (ﷺ) সাহসিকতার সাথে সবার চেয়ে এগিয়ে। আমি চাই রাসূলের (ﷺ) সাহসিকতা আপনারা একবার চিন্তা করে দেখুন। আমরা সবাই জানি আলী ইবনে আবী তালিব (রা:) সুপরিচিত ছিলেন তাঁর অবিশ্বাস্য সাহস ও শক্তির জন্য। তিনি বলতেন, “লড়াই যখন তীব্রতর হত, এবং দুই দল মুখোমুখি হত, আমরা রাসূলের (ﷺ) কাছে আশ্রয় নিতাম। কেউ শত্রু পক্ষের এতটা কাছে কাছে যেত না যতটা তিনি যেতেন”[মুসনাদ আহমেদ ১৩৪৭] রাসূল (ﷺ) কখনোই যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করেন নি। ওহুদ এবং আরো অনেক যুদ্ধে আহত হয়েছিলেন এবং তারপরও যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছিলেন। হুনাইনের যুদ্ধে তিনি সেই ছয় জনের একজন যারা যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করেননি। তিনি পিছু হটে যাননি, যদিও তিনি খচ্চরের পিঠে ছিলেন। তিনি সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, এবং বলছিলেন, أنا النبي لا كذب أنا ابن عبد المطلب – “নিঃসন্দেহে আমি একজন নবী এবং আব্দুল মুত্তালিবের সন্তান।” তিনি দায়িত্ব নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন, সবচেয়ে বেশি লড়াই করছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি নিজ হাতে কাউকে হত্যা করতেন না, কেবল শত্রুদের নিরস্ত্র করতেন। তিনি শুধু একজনকেই হত্যা করেছিলেন। ওহুদের যুদ্ধে উবাই ইবনে খালাফকে তিনি হত্যা করেছিলেন, কারণ
ক্ষতি করার জন্য সে তাঁর দিকে এগিয়ে আসছিল। তখন তিনি তাকে লক্ষ্য করে একটি বর্ষা নিক্ষেপ করলেন, যা উবাই ইবনে খালাফকে আঘাত করে ও মেরে ফেলে। এছাড়া সাধারণত যুদ্ধে তিনি কাউকে হত্যা করতেন না।
প্রচন্ড সাহসিকতা ও শক্তি থাকা সত্বেও রাসূল (ﷺ) কাউকে বা কোনো কিছুকে হাত দিয়ে আঘাত করেনি, একমাত্র আল্লাহর পথে যুদ্ধ করা ছাড়া। তিনি কখনোই কোনো দাস বা মহিলাকে আঘাত করেনি। রাসূল (ﷺ) ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু, যদিও যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অসীম সাহসী। আমরা জানি, তিনি কখনও যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করতেন না। যুদ্ধের পর তিনি সবার খবর নিতেন, সবাইকে পরীক্ষা করতেন, এবং সবার সংখ্যা গণনা করতেন। তিনি মৃতদের জানাজা পড়তেন এবং তাদের জন্য দু’য়া করতেন এবং তাদের পরিবারকে সান্ত্বনা দিতেন। তাঁর সাহসিকতা সম্পর্কে খুব সুন্দর একটি বর্ণনা আছে, “এক রাতে মদিনাবাসী ঘরে বসে শুনতে পেল বাইরে শব্দ হচ্ছে। তারা ভাবলো মদিনাকে আক্রমণ করা হয়েছে। ঘরে বসে তারা ভাবছে তাদের আক্রমণ করা হয়েছে। তাই তারা তাড়াতাড়ি একত্রিত হয়ে সেনা বাহিনী গঠন করা শুরু করলো, যাতে তারা পাল্টা আক্রমণ করতে পারে। তারা বাইরে এসে তরবারি একত্রিত করে যখন ঘোড়ায় আরোহন করল, তখন তারা দেখল রাসূল (ﷺ) জিন ছাড়া ঘোড়ায় আরোহণ করে মদীনার উপকণ্ঠ থেকে ফিরে আসছেন। গলায় ঝুলছিল তাঁর তরবারি। তিনি বলেছিলেন, لا تخاف – “ভয় পেয়ো না, এমন কিছু নয়, আমি পরীক্ষা করেছি।” ইনিই হলেন রাসুলুল্লাহ (ﷺ)! আপনি তখন মদিনায় এবং আপনি ভীত। এই সেই ব্যক্তি, যিনি নেতা হিসাবে সামনে এগিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করছেন যে আপনি সর্বদা সুরক্ষিত। এমনকি আপনার সবচেয়ে কঠিন সময়ে, তিনি নিজের উদাহরণ দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এবং মানুষের সৃষ্টির জন্য তিনিই সবচেয়ে বেশি কষ্ট সহ্য করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
“তোমরা প্রত্যেকে মেষপালক এবং সবাই তার পালের প্রতি দায়বদ্ধ।”
[রাসূল (ﷺ) : সহি বুখারী : ৭১৩৮, সহিঃ মুসলিম : ১৮২৯]
||খন্দকে তাঁর সাথে||
মূল: ড: ওমর সুলাইমান
অনুবাদ: ফাহমিনা হাসানাত

নবিজি (সাঃ) এর সাথে উদযাপন!

যে কোন উৎসবের উদযাপন হওয়া উচিত সাধারণ ও ব্যাপক। সুবহানাল্লাহ! এখনকার দিনে ঠিক এর বিপরীত দেখা যায়, এখন উদযাপন গুলো হয় বেহিসেবী ও একচেটিয়া। রাসূলের (ﷺ) জীবদ্দশায় উদযাপন যেমন ছিল, এখন যেনো ঠিক তার বিপরীত।
আমরা দেখেছি রাসূল (ﷺ) কষ্টের সময় গুলো কি ভাবে অতিবাহিত করেছেন – খন্দকে, যুদ্ধে এবং মানুষের পাশে থেকে সেবা বিতরনে। রোজার মাসে তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল তাও আমরা জেনেছি। এখন আমি তাঁর ভোজ এবং উৎসব উদযাপন কেমন ছিল সে ব্যাপারে আলোচনা করতে চাই। প্রথমে ঈদ দিয়ে শুরু করি, যদিও আমরা এখনো রোজার আমেজেই আছি। তাঁর ঈদ উদযাপন থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি তিনি সমাজ এবং সম্প্রদায়ের অনুভূতিকে কিভাবে উপস্থাপন করতেন সে ব্যাপারে। প্রথমত, ঈদের দিন তিনি আসতেন ইয়েমেন থেকে আনা সুন্দর লাল ডোরা কাটা একটি পোশাক পড়ে। আপনি তাঁর দিকে তাকিয়ে আছেন এবং দেখছেন কি সুন্দরই না তাঁকে লাগছে, যখন তিনি সবার সাথে কথা বলছেন। তিনি সবাইকে ঈদের নামাজে আসতে উদ্বুদ্ধ করতেন এবং ঈদের মুসাল্লায় নিয়ে আসতেন – পুরুষ, মহিলা, শিশু কিশোর, বৃদ্ধ সবাইকে। ঈদের দিন তিনি প্রত্যেককে স্বতন্ত্র ভাবে অভিবাদন জানাতেন। ঐদিন তাঁর খুতবাও ছিল স্বতন্ত্র। ঈদের খুতবা দেওয়ার সময় তিনি জনগণের কাছাকাছি চলে যেতেন, সাহাবাদের মাঝে হাঁটতেন, আল্লাহর কথা স্মরণ করতেন।
অনেক সময় ঈদের দিন আমরা আল্লাহর ইবাদত না করে গাফিলতি করি। রাসূল (ﷺ) ঈদের খুতবার শেষে তিন বার বলতেন, تصدقة تصدقة تصدقة – “দান করুন, দান করুন, এবং দান করুন।” রাসূলের (ﷺ) সময়কালে ঈদ ছিল দান-খয়রাত করার একটা সুযোগ। এমন নয় যে, অকৃতজ্ঞ হওয়ার জন্য ঐ বিশেষ দিনেই কেবল আপনি কৃতজ্ঞতার অনুশীলন করবেন। ঈদের দিনে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করুন, নিশ্চিত করুন আপনার দানকে, যেন সবাই ঈদ উদযাপন করতে পারে। এজন্য যাকাতুল ফিতর ও ঈদুল ফিতরের প্রচলন করা হয়। শুধু যাদের সামর্থ্য আছে তারা নয়, সবাই যেনো সেদিন ভোজ করতে পারে। ঈদুল আযহার দিন কুরবানী করা হয় যেনো সবাই মিলে খেতে পারে। রাসূল (ﷺ) সবাইকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিতেন, উদার হতে বলতেন, এবং অবশ্যই তিনি এই দিনে সবাইকে উদযাপন করার অনুমতি দিতেন।
কখনো কখনো রাসূলের (ﷺ) পাশে থেকে, সীমা জানাটা একটা কঠিন ব্যাপার ছিল, যতক্ষণ না পর্যন্ত তিনি সীমারেখা টেনে দিতেন। রাসূলের (ﷺ) উপস্থিতিতে দুটি ছোট মেয়ে যুদ্ধের উপর পুরনো গান গাইছিল। আবু বাকর (রা:) ধমক দিয়ে মেয়ে দুটোকে থামিয়ে দিলেন, কিন্তু রাসূল (ﷺ) বাঁধা দিয়ে বললেন, “আজকে সবার ঈদ, সবার ভোজ – আজ তো আমাদের উদযাপনের দিন। এদের গাইতে দিন, এদের গানের মধ্যে তো আমি আপত্তিকর কিছু দেখছিনা।”
আয়েশা (রা:) বিশেষ ভাবে বর্ণনা করেছেন রাসূলের (ﷺ) সাথে উদযাপিত ঈদকে। তিনি বলেন, “রাসূল (ﷺ) শুয়ে আছেন, আবু বাকর (রা:) তখন মাত্র চলে গেছেন। আমি রাসূলকে (ﷺ) জিজ্ঞেস করলাম, আমরা কি ঈদ উদযাপন উপলক্ষে মসজিদে আবিসিনিয়ানদের নাচ দেখতে যেতে পারি?” আবিসিনিয়ানরা বর্ম ও‌ বর্ষা নিয়ে নাচ করত। যুদ্ধ ও উদযাপন উপলক্ষে তারা বিশেষ নৃত্যের আয়োজন করত, শালীনতা বজায় রেখে, এতে হারাম কিছু ছিল না। বিশেষ করে ঈদের দিন তারা মসজিদে এ ধরনের উৎসবের আয়োজন করত। আয়েশা (রা:) তাই জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আমরা কি দেখতে যেতে পারি?” রাসূল (ﷺ) বললেন, “চলো যাই।” আয়েশা (রা:) বলেন, “রাসূল (ﷺ) সামনে বসলেন, আমি তাঁর পেছনে, আমার চিবুক তাঁর ঘাড়ে, আমার গাল তাঁর গালে স্পর্শ করে আমি বসলাম। আমরা আবিসিনিয়ানদের নাচ দেখছিলাম। তারা উৎসব করতে থাকলো, আমি তাঁর ঘাড়ে চিবুক রেখে, গালে গাল লাগিয়ে তা দেখতে থাকলাম।” এক পর্যায়ে রাসূল (ﷺ) বললেন, “حسبك – তোমার জন্য কি যথেষ্ট হয়েছে?” আয়েশা (রা:) বললেন, “না, আমি আরো দেখতে চাই”, তিনি দেখতে চেয়েছিলেন রাসূল (ﷺ) তাঁর ব্যাপারে কতটা ধৈর্যশীল এবং তাঁকে উদযাপন উপভোগ করতে দেন কিনা। এরপর আয়েশা (রা:) যখন ক্লান্ত হয়ে পড়লেন, রাসূল (ﷺ) আবারো জিজ্ঞেস করলেন, “এবার হয়েছে?” তিনি আবারও বললেন, না। রাসূল (ﷺ) বললেন, “ঠিক আছে।” অবশেষে এক সময় তিনি রাসূলকে (ﷺ) বললেন, “এখন যথেষ্ট হয়েছে।” ঈদের উৎসব দেখা শেষ হলে রাসূল (ﷺ) আয়েশাকে (রা:) বাসায় নিয়ে আসলেন। এভাবে তিনি উৎসবের উদযাপনকে অনুমোদন করেছেন।
আমরা জানি, ঈদের নামাজে রাসূল (ﷺ) এক পথে যেতেন এবং ভিন্ন পথে ফিরে আসতেন। স্বতন্ত্র ভাবে তাযকিয়ার কারনেও তিনি তা করতেন, যেন আধ্যাত্মিক ভাবে এই পর্যায়ে জীবনের নতুন একটি পথ বেছে নেওয়া। এ ব্যাপারে উলামারা বলেন, ঈদের নামাজে রাসূলের (ﷺ) ভিন্ন পথে যাওয়া-আসার একটি প্রজ্ঞা হল, এভাবে তিনি সবাইকে সালাম দিতে পারতেন। আপনি যে পথেই থাকেন না কেন, রাসূল (ﷺ) আপনাকে সালাম দিবেন। এছাড়া ঐদিন সবার মুখোমুখি হয়ে তিনি অভাবীদের চিনে নিতেন। ঐদিন ছিল রাসূলের (ﷺ) জন্য দান করার দিন, উদারতার দিন। কাজেই ঈদের দিন তিনি বেরিয়ে পড়তেন, সবাইকে অভিবাদন জানাতেন, পরিষেবা দিতেন। সবার সাথে থেকে তিনিও ঈদ উদযাপন করতেন। ঈদের দিন মদিনার সর্বত্রই আপনি তাঁকে দেখতে পাবেন।
তখনকার বিয়ের অনুষ্ঠান গুলো কেমন ছিল? রাসূল (ﷺ) বিয়েতে মানুষকে ভোজ করানোর ব্যাপারে উৎসাহিত করতেন, কিন্তু সেই ভোজ অসংযত বা বেহিসাবি ছিলনা। কখনো তা ছিলো রুটি মাংস, কখনো শুধু রুটি, কখনো বা খেজুর, দুধ, ঘি কিংবা মাখন। কখনো বিয়ের খাবার ছিল রাসূলের (ﷺ) অতি প্রিয় ‘হাইস’ – দুধ, ঘি, এবং খেজুরের কাই দিয়ে তৈরি, কখনো বা শুধুই বার্লি (যব)। যা থাকতো রাসূল (ﷺ) সবার সাথে তাই খেতেন। কিছু কিছু ভোজের আয়োজন তিনি করতেন পটলাকের মতো করে। সবাই তাদের বাসা থেকে যা আছে তাই নিয়ে আসতো। সাফিয়ার (রা:) সাথে তাঁর বিয়েতেও যার যা আছে সবাই নিয়ে এসেছিল, এবং একসাথে খেয়েছিল। কালো চামড়ার মাদুর বিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সবাই সেখানে বসে একসাথে খেয়েছিল। সেদিন খাবার এসেছিল মদিনার বিভিন্ন জায়গা থেকে।
রাসূল (ﷺ) বলেন, খুব মনোযোগ দিয়ে শুনুন, “সবচেয়ে খারাপ হলো সেই ভোজ যেখানে শুধু ধনীরা আমন্ত্রিত, গরিবরা নয়।”[সহি বুখারী: ৫১৭৭, খন্ড:৬৭, হাদিস: ১১২] আপনি যদি আপনার উৎসবে বারাকাহ চান, গরিবদের কখনোই বাদ দিবেন না, এবং তা অমিতব্যয়ী এবং ক্ষুদ্র পরিসরে করবেন না। মনে রাখবেন উৎসবের উদযাপন হবে সাধারণ ও ব্যাপক – এটাই রাসূলের (ﷺ) নীতি। সম্ভব হলে তিনি সব বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেন, কোন ব্যক্তি বিশেষ বা গোষ্ঠীর বিয়েতেই শুধু নয়। গরিব কেউ বিয়ে করলে, তিনি সবাইকে উৎসাহিত করতেন বিয়ের খরচে সাহায্য করার ব্যাপারে। এমনকি তিনি নিজেও মাহার দিয়ে তাদের বিয়েতে সাহায্য করতেন। আলী (রা:) যখন তাঁর কন্যা ফাতিমাকে (রা:) বিয়ে করেন, রাসূলের (ﷺ) পরিবারের সবাই তাতে অংশগ্রহণ করেন। মদিনার লোকজন যে যা পারে তাই প্রস্তুত করে নিয়ে আসে, বিভিন্ন জায়গা থেকে খাদ্য তৈরি করা হয়। রাসূল (ﷺ) নিজেই আলীর (রা:) ঘর সাজিয়ে দিয়েছিলেন। যে কোনো উদযাপনে রাসূল (ﷺ) কেবল নিজের বারাকার চেতনাকেই নিয়ে আসতেন না, দৃষ্টান্ত পরিবর্তন করে যে কোনো উদযাপনকে তিনি সামাজিক উদযাপনে রূপ দিতেন। রাসূলের (ﷺ) সমাজের বা সম্প্রদায়ের কেউ সে উদযাপন থেকে বঞ্চিত হত না। সুবহানাল্লাহ!
“আপনার সম্পত্তি থেকে সবাইকে আপনি যথেষ্ট পরিমাণে দিতে সক্ষম হবেন না, কিন্তু আপনি তাদের সমৃদ্ধ করতে পারেন আপনার প্রফুল্ল চেহারা ও সুন্দর আচরণের মাধ্যমে।”[রাসূল (ﷺ)]
||তাঁর সাথে উদযাপন||
মূল: ড: ওমর সুলাইমান
অনুবাদ: ফাহমিনা হাসানাত

শিশুদের সাথে নবিজি (সাঃ)!

আপনি যদি আপনার শৈশবের স্মৃতিতে ফিরে যান, আপনার মামা, খালা, চাচা, ফুপু – যারা আপনার সাথে সাদয় ব্যবহার করেছেন, কৌতুকপূর্ণ আচরণ করেছেন, রসিকতা করেছেন, যাদের সাথে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন, তাদের কথাই আপনি সবার আগে স্মরণ করবেন। বাচ্চারা দয়া ও প্রত্যাখ্যান সহজেই বুঝতে পারে। এজন্য রাসূল (ﷺ) খুব জোর দিয়ে বলেছেন, ليس منا من لم يرحم صغيرنا ويوقر كبيرنا – “যেই ব্যক্তি আমাদের ছোটদের প্রতি দয়া করে না, এবং আমাদের বড়দের সম্মান করে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” [আত তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২৬৫৪]
আনাস ইবনে মালিক (রা:) বলেন, “শিশুদের প্রতি রাসূলের (ﷺ) চেয়ে বেশি দয়াবান আমি আর কাউকে দেখিনি।” আপনি যদি আপনার বাচ্চাদের তাঁর কাছে নিয়ে আসেন, তিনি তাদের এড়িয়ে যাবেন না। তিনি শিশুদের সাথে খেলতেন, কথা বলতেন, যা প্রতিটি বাচ্চাকে মসজিদের সাথে সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করেছিল। শিশুরা যদি মসজিদে কোন সদয় ব্যক্তি অথবা মিষ্টি স্বভাবের ইমাম দেখে, অবশ্যই তারা মসজিদে যেতে চাইবে। আর রাসূল (ﷺ) যদি আপনার ইমাম হন, তাহলে তো কথাই নেই। আপনার সন্তানরা মসজিদে যেতে চাইবে রাসূলের (ﷺ) সাথে দেখা করার জন্য, কারণ তারা জানে রাসূল (ﷺ) তাদের সাথে কথা বলবেন, হয়তো কিছু উপহার দিবেন, তাদের সাথে খেলবেন, কৌতুক করবেন। তাঁর এরূপ ব্যবহার ছিল সংস্কৃতির একটি অংশ যা তিনি তাঁর সম্প্রদায়ের জন্য স্থাপন করেছিলেন। আনাস (রা:) বলেন, “তিনি আমাদের সাথে এমন ভাবে মিশে যেতেন‌ যে একবার তিনি আমার ছোট ভাইকে জিজ্ঞেস করলেন,”يا أبا عمير، ما فعل النُّغير؟ আবু উমায়ের নামে আমার একটি ছোট ভাই ছিল, তার একটি النُّغير – পাখি ছিল। যতবারই তার সাথে দেখা হতো রাসূল (ﷺ) আমার ভাইকে তার পোষা পাখির কথা জিজ্ঞাস করতেন। তিনি শিশুদের কাছে যাচ্ছেন, তাদের সাথে কথা বলছেন, তাদের আগ্রহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছেন, খেলাধুলা বা অন্য যা কিছু তারা করছে তাতে কতটা অগ্রসর হল তা জানতে চাইছেন। তিনি তাঁর সম্প্রদায়ের শিশুদের সাথে এরকম সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কই গড়ে তুলেছিলেন। অবশ্যই বড় হয়ে এই শিশুরাই উম্মতের আলেম হয়, কারন তারা খুব ছোট বয়সেই সাহাবা হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল, এবং বড় সাহাবীদের কাছ থেকে যা শিক্ষা নেওয়ার তা নিয়েছিল এবং পরবর্তী প্রজন্মের – তাবেঈনদের কাছে তা সঞ্চারিত করেছিল।
এই সংস্কৃতির শুরুটা হলো কিভাবে? আপনার যদি সন্তান থাকে এবং আপনি যদি মদিনার অধিবাসী হন, আপনি আপনার নবজাতককে রাসূলের (ﷺ) কাছে নিয়ে আসবেন, আপনি চাইবেন রাসূল (ﷺ) আপনার সন্তানের নাম রাখুক। আপনি চান রাসূল (ﷺ) আপনার সন্তানকে কোলে নিয়ে দুআ করুক, আপনার সন্তানের তাহনিক করুক – খেজুর নিয়ে আপনার সন্তানের মুখে ঘষে দিক। আপনিও প্রত্যাশা করছেন, রাসূলও (ﷺ) বাধ্য ছিলেন। আনাস (রা:) বলেন, “আবু তালহার ছেলে আব্দুল্লাহ যখন জন্মগ্রহণ করে, রাসূল (ﷺ) তাকে কোলে নিয়ে, প্রথমে খেজুর তাঁর নিজের মুখে দিলেন তারপর আব্দুল্লাহর মুখে ঘষে দিলেন। আব্দুল্লাহ সে খেজুর পছন্দ করেছিল।” তাই রাসূল (ﷺ) বলেন, حب الانصار التمر – “আনসাররা এরকমই, তারা খেজুর ভালোবাসে।” রাসূল (ﷺ) তার নাম রাখলেন আব্দুল্লাহ। তাঁর চারপাশে যেসব বাচ্চারা ছিল, তিনি তাদের নাম রেখেছিলেন।
তিনি যখন আবিসিনিয়ান শিশুদের দেখতেন, তিনি তাদের ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করতেন। তাদের ভাষায় কথা বলতে গিয়ে তিনি কথার মাঝে হোঁচট খেতেন। ইচ্ছা করেই তিনি তা করতেন, আবিসিনিয়ান বাচ্চাগুলোকে হাসানোর জন্য। শিশুরা তাঁর হাত ধরে তাঁকে এটা-ওটা দেখাতো। তিনিও তাদের সাথে খেলতেন। তারা সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত তিনি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতেন না। এ ব্যাপারে খুব সুন্দর একটি বর্ণনা এসেছে। মদিনার লোকরা রাসূলের (ﷺ) জন্য অনেক সময় ফলমূল নিয়ে আসতো। তখন তো আর ক্যান্ডি ছিল না, মিষ্টি বলতে ঐ ফল-মূলই। আর বাচ্চারা ফল খেতেই ভালোবাসতো। যখনই মদিনার লোকরা নতুন ফল তুলতো, রাসূলের (ﷺ) জন্য একটি নিয়ে আসতো। যখনই তিনি ফলমূল পেতেন, ফল প্রদানকারী লোকের জন্য ও মদিনার ফলমূলের জন্য তিনি দুআ করতেন। তারপর সবচেয়ে ছোট শিশুটিকে ডেকে তিনি ফলটি দিয়ে দিতেন। এভাবে তিনি ক্যান্ডির মতো করে তাঁর উম্মতের শিশুদের জন্য ফল বিতরণ করতেন। এটা ছিল তার অভ্যাস। যদিও মদিনার লোকরা চাইতো তিনি সেই মিষ্টি ফলটি খান।
তাঁর নিজের সন্তানদের প্রতি তাঁর আচরণ কেমন ছিল? সে ছিল তাকিয়ে দেখার মত এক দৃশ্য! তাঁর নাতি নাতনির কথা বলছি। হাসান (রা:) ও হুসাইনের (রা:) সাথে তাঁর সম্পর্ক ছিল খুবই সুন্দর। তাদের কোলে নিয়ে তিনি শুধু আল্লাহর কাছে সাক্ষ্য দিতেন না যে তিনি তাদের কতটা ভালবাসেন, বরং তিনি উচ্চস্বরে বলতেন, “হে আল্লাহ! আপনি তাদের ভালবাসুন যারা এদের ভালোবাসে।” তিনি তাদের কোলে নিয়ে চুমু খেতেন। ফাতিমা (রা:) বলেন, রাসূল (ﷺ) যখন তাদের দেখতে আসতেন, এসেই বলতেন, “ছোটটি কোথায়?” তিনি হাসানের (রা:) কথা বলতেন, তাকে নিয়ে আসতে বলতেন। আল হাসান, আল হুসাইন, উসাবা ইবনে যাইদ, যাইনাব, ও উমামা – সব নাতি-নাতনিদের তিনি তাঁর চাদরের তলায় নিতেন। তাদের জড়িয়ে ধরে তিনি তাদের জন্য দুআ করতেন। এই দৃশ্যটি মদিনার সংস্কৃতিকে ধীরে ধীরে বদলে দিয়েছিল। একবার এক লোক দেখলো, রাসূল (ﷺ) হাসান (রা:) ও হুসাইনকে (রা:) কোলে নিয়ে উপরে ছুড়ে দিচ্ছেন, চুমু খাচ্ছেন, জড়িয়ে ধরছেন। লোকটি মনে মনে ভাবল, “আমারও তো দশটি সন্তান আছে, কই আমি তো কখনো তাদের চুমু খাইনি, কারণ আমি ভেবেছি এ অস্বাভাবিক। আমি তো একজন পুরুষ, আমার তো বাচ্চাদের চুমু খাওয়ার কথা নয়।” রাসূল (ﷺ) বলেন, “ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে আমি কি করতে পারি, যার কোন দয়া নেই। যারা দয়া দেখায় না, তাদের প্রতিও দয়া দেখানো হবে না।” [সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৬৫১; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৫২১৯] তিনি বলেন এটা রহমা অর্থাৎ দয়ার একটি অংশ যা আমরা বাচ্চাদের দেখাতে পারি।
রাসূল (ﷺ) বিশেষ ভাবে মনোযোগ দিতেন এতিমদের প্রতি, যারা ভালোবাসা বঞ্চিত। এতিম অনাথ শিশু, যারা বাবা-মার ভালোবাসা পায়নি, তাদের জন্য তিনি সাধ্যাতীত করতেন। কারণ তিনি নিজেও ছিলেন এতিম, বাবা-মার ভালোবাসা বঞ্চিত। তিনি বলতেন, “মুসলিমদের মধ্যে ঐ বাড়িই সর্বোত্তম, যে বাড়িতে এতিম আছে এবং তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা হয়। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট ঐ বাড়ি, যে বাড়িতে এতিম আছে অথচ তার সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয়। [ইবনে মাজাহ: ৩৬৭৯] ঠিক যেভাবে তিনি বলতেন ভোজ হওয়া উচিত ব্যাপক, “সবচেয়ে খারাপ হলো ঐ ভোজ, যেখানে গরিবরা আমন্ত্রিত নয়।”, তেমনি একই ভাবে তিনি বলতেন, “সবচেয়ে নিকৃষ্ট ঐ বাড়ি যে বাড়িতে এতিম আছে অথচ তার সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয়।” তিনি এতিমদের ব্যাপারে আবেগপূর্ণ ও সংবেদনশীল হতে বলেছেন। আবেগের সাথে এতিমদের কাছে টানতে বলেছেন, যেন তারা আবেগময় সম্পর্কটা অনুভব করতে পারে।
একবার রাসূল (ﷺ) আবু দারদাহকে (রা:) বলেন, “আপনি কি আপনার অন্তরকে নরম করতে চান, আপনি কি চান আপনার জীবনের চাহিদাগুলো সরবরাহ হোক?”
أَرَدْتَ تَلْيِينَ قَلْبِكَ فَأَطْعِمْ الْمِسْكِينَ وَامْسَحْ رَأْسَ الْيَتِيمِ
“আপনি আপনার অন্তরকে নরম করতে চাইলে, আপনি নিজে যা খান এতিমদেরও তা খেতে দিন, তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিন।”[মুসনাদ আহমেদ: ৭৫২২] রাসূল (ﷺ) আরও বলেছিলেন, “আল্লাহর শপথ! এতে অবশ্যই আপনার অন্তর নরম হবে, এবং তা আপনার মনবাসনাকে পূর্ণ করবে।” এতিমদের সাক্ষাৎ পেলে তিনি তাদের নিজের বাড়িতে নিয়ে আসতেন, তাদের সাথে হাঁটতেন। তিনি যে শুধু তাদের সাথে খেলতেন তা নয়, যে কোন ব্যাপারে তিনি তাদের জন্য সুপারিশ করতেন। তাঁর উম্মতের মধ্যে সামগ্রিকভাবে শিশুদের প্রতি তিনি বিশেষ মনোযোগী ও যত্নশীল ছিলেন, এবং আরো বেশি মনোযোগী ছিলেন ঐ সমস্ত এতিম শিশুদের প্রতি যারা ছিল ভালোবাসা ও সুবিধা বঞ্চিত।
“রাসুল (ﷺ) যখন আনসারদের সাথে সাক্ষাৎ করতে যেতেন তখন তাদের শিশুদের সালাম দিতেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন এবং তাদের জন্য দুআ করতেন।
[আনাস ইবনে মালিক (রা:) -সুনানে কুবরা নাসাঈ, হাদীস ৮২৯১; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৪৫১]
||শিশুদের সাথে নবিজি||
মূল: ড: ওমর সুলাইমান
অনুবাদ: ফাহমিনা হাসানাত

নবিজি (সাঃ) যখন মেহমান!h

এ পর্যন্ত আপনি রাসূলকে (ﷺ) দূর থেকে দেখেছেন। আপনি জুম্মার নামাজে তাঁকে প্রত্যক্ষ করেছেন, তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়েছেন, তাঁকে যুদ্ধে দেখেছেন, দুঃসময়ে দেখেছেন, আরো দেখেছেন উদযাপনে – ভোজে, ঈদে, এবং ছোটখাটো কিছু সমাবেশে। এখন আপনি তাঁকে আপনার বাড়িতে আমন্ত্রণ জানাতে চান। তাহলে কোন বিষয় গুলো আপনার জানা উচিত যদি আপনি তাঁকে গিয়ে বলতে চান, “ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি কি আমার বাসায় আমন্ত্রিত হয়ে আসবেন?”
প্রথমত রাসূল (ﷺ) বলেন, “আমি যে কোনো কারো আমন্ত্রণই গ্রহণ করব, এমনকি যদি তারা আমাকে কেবল ভেড়ার পায়াও খেতে দেয়।” কাজেই তাঁকে খুব বেশি কিছু পরিবেশনের জন্য আপনাকে উদ্বিগ্ন হতে হবে না, সেটা কোন ব্যাপার না। আপনি যাই পরিবেশন করুন না কেন, আমন্ত্রণ জানালে তিনি আপনার বাড়িতে আমন্ত্রিত হয়ে আসবেন। তিনি কেবল মাত্র বিশেষ শ্রেণীর লোকদের আমন্ত্রণই গ্রহণ করতেন না। আনাস (রা:) বলেন, “রাসূল (ﷺ) অসুস্থ লোকদের দেখতে যেতেন, জানাযায় যোগ দিতেন, গাধার পিঠে আরোহন করতেন, এবং সবার আমন্ত্রণ গ্রহণ করতেন, এমনকি আমন্ত্রণকারী যদি ক্রীতদাসও হয়।” সুবহানাল্লাহ! চিন্তা করে দেখুন, সমাজের একজন ক্রীতদাস রাসূলকে (ﷺ) আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন, এবং তিনি তা সাদরে গ্রহণ করছেন। আনাস (রা:) বলেন, “এই ছিল রাসূলের (ﷺ) স্বভাব, তিনি এমনই ছিলেন।” অসুস্থদের দেখতে গেলেও, তিনি কখনো চিন্তা করেননি সে সমাজের কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি কিনা। সবার জানাযায় তিনি অংশ নিতেন, এমনকি সবচেয়ে নীচ এবং অবনমিত প্রাণীর উপর আরোহন করতেও তিনি দ্বিধা বোধ করতেন না। আমন্ত্রণ রক্ষার ক্ষেত্রেও আমন্ত্রণকারী যতই দীন-দরিদ্র হোক না কেন, তিনি তা গ্রহণ করতেন।
আপনি বাসায় এসে জানালেন, “আজ রাতে রাসূল (ﷺ) আমাদের সাথে খাবেন।” এখন তাঁকে আমরা কি পরিবেশন করবো? আমরা জানি খাবার ব্যাপারে তিনি অসংযত বা বেহিসাবী নয়, কিন্তু আমরা এমন কিছু পরিবেশন করতে চাই যা তিনি পছন্দ করেন। তিনি ঠান্ডা মিষ্টি পানীয় পছন্দ করতেন, লাবান – দইয়ের শরবত তাঁর প্রিয়, এছাড়া তিনি ঠান্ডা পানি মধু দিয়ে খেতে পছন্দ করতেন। তখনকার আবহাওয়া ছিল উত্তপ্ত মরুভূমির আবহাওয়া, এবং তাঁর পছন্দের খাবারেও তা প্রতিফলিত হতো। তাঁর পছন্দ ছিল সাদামাটা। যে কোনো ধরনের রুটি এবং তাতে যে কোন কিছু লাগিয়ে খেতে তিনি পছন্দ করতেন। সাধারণ রুটি কোনো কিছুতে চুবিয়ে খেয়ে তিনি সন্তুষ্ট হতেন। আপনার কাছে যদি শুধু মধু থাকে, তবে তাই পরিবেশন করুন, কারণ রাসূল (ﷺ) তা পছন্দ করেন। যদি আপনার কাছে ‘হাইস’ – খেজুরের কাই থাকে তাহলে তো কথাই নেই, কারণ এটা তাঁর প্রিয় খাবার। আপনার কাছে যদি শুধু তেল বা ঘি থাকে তাতেও কোন অসুবিধা নেই, কারণ রাসূল (ﷺ) তাও পছন্দ করেন। সুবহানাল্লাহ! এমনকি সিরকার ব্যাপারেও তিনি বলতেন, “সিরকা কতই না উত্তম সালন।” [মুসলিম : ২০৫১] যদি আপনার কাছে শুধু সিরকা থাকে, তবে তাই পরিবেশন করুন, রাসূল (ﷺ) তাতেই রুটি চুবিয়ে খাবেন।
রাসূল (ﷺ) ভেড়ার ঘাড়ের মাংস পছন্দ করতেন, আর যে কারণে আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত ঐ বিখ্যাত হাদীসটি এসেছে, যেখানে তিনি ভেড়ার সব মাংস বিলিয়ে দিয়েছিলেন শুধু ঘাড়ের অংশ ছাড়া, এবং রাসূলকে (ﷺ) বলেছিলেন, “এই অংশটুকু আমি আপনার জন্য সংরক্ষণ করেছি ।” তখন রাসূল (ﷺ) নির্লিপ্ত ভাবে উত্তর দিয়েছিলেন, “সবই রয়ে গেলো, শুধু ঘাড়ের অংশ ছাড়া।” [তিরমিজি, খন্ড: ৪, বই: ১১, হাদিস: ২৪৭০] অর্থাৎ তিনি বলতে চেয়েছেন, ভেড়ার সমস্ত অংশের اخر – অর্থাৎ পুরস্কার আমরা পেলাম শুধু ঘাড়ের অংশ ছাড়া। তিনি নিজে যা পছন্দ করতেন, তাই দান করতে ভালোবাসতেন। আপনি যখন তাঁকে খাদ্য পরিবেশন করবেন, তিনি খাবারের সমালোচনাও করবেন না, আবার বেশি প্রশংসাও করবেন না। তাঁর সহজাত আদব আখলাক ও ব্যবহার থেকেই তিনি তা করতেন। উলামারা বলেন, এর পিছনে প্রজ্ঞা হলো, তিনি যদি বিশেষ কোনো খাবারের বেশি প্রশংসা করেন, তাহলে অন্য খাবারের ব্যাপারে বেশি প্রশংসা না করলে, আপনি হয়তো ভাবতে পারেন কিছু ভুল হয়েছে। তিনি সবসময়ই কৃতজ্ঞ ছিলেন, কখনো খাওয়া নষ্ট করেনি, খাবারের সমালোচনা করেননি। [বুখারি, হাদিস নং : ৫১৯৮; ইবনে মাজাহ, হাদিস নং : ৩৩৮২] এমন একটিও বর্ণনা পাওয়া যাবে না যেখানে তিনি খাবারের সমালোচনা করেছেন। কিন্তু একই সাথে খাবার পরিবেশনের জন্য তিনি আপনাকে বলবেন, جزاكم الله خيرا – ধন্যবাদ দিবেন। তিনি এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, যাতে খাবারের ব্যাপারে আপনি বেশি প্রশংসা প্রত্যাশা না করেন। কিন্তু তিনি কোন খাবার পছন্দ করলে, তা স্পষ্ট বোঝা যেত।
রাসূলের (ﷺ) এক পার্শিয়ান প্রতিবেশী ছিল, যিনি খুব ভালো স্যুপ বা সুরুয়া রান্না করতেন। মাঝেমধ্যে তিনি তা রাসূলকে (ﷺ) দিতেন, এবং তিনি তা খেতে ভালোবাসতেন। যেহেতু ঐ প্রতিবেশী তাঁর এই পছন্দের কথা জানতেন, তাই তিনি প্রায় রাসূলের (ﷺ) কাছে এসে বলতেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার বাসায় আসুন এবং আমার সাথে সুরুয়া খান।” রাসূলের (ﷺ) সাথে তখন আয়েশা (রা:) ছিলেন, তাই তিনি বললেন, “আমার স্ত্রীও কি আসতে পারে?” প্রতিবেশী বলল, “না”, সুবহানাল্লাহ! পরের দিনও ঐ প্রতিবেশী এসে, রাসূলকে (ﷺ) সুরুয়া খাওয়ার আমন্ত্রণ জানালো, আবারো তিনি বললেন, “আমার স্ত্রীও কি আসতে পারে?” প্রতিবেশী আবারও বললো, “না”, তখন রাসূল (ﷺ) বললেন, “ঠিক আছে, তাহলে আমিও আপনার বাসায় যেতে চাইনা।” তৃতীয় বারের মতো ঐ প্রতিবেশী যখন রাসূলকে (ﷺ) আমন্ত্রণ জানালো, তিনি আবারও বললেন, “আমি কি আমার স্ত্রী সহ আসতে পারি?” তখন সেই প্রতিবেশি রাজি হল, এবং রাসূল (ﷺ) বললেন, “ঠিক আছে, তাহলে আমরা আসছি।” ইমাম আন নাওয়াউই এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন, “রাসূল (ﷺ) আয়েশাকে (রা:) বাদ দিয়ে বিশেষ কোন খাবার খেতে পছন্দ করতেন না।” এ ছিল এক অনন্য উপায় তাঁর পরিবারের প্রতি বিবেচনা ও সহানুভূতি দেখানোর ব্যাপারে। আর এই ব্যাপারে সমাজ তখনও ততটা অভ্যস্ত হয়নি। আপনি এই প্রত্যাশাও করতে পারেন রাসূল (ﷺ) নিমন্ত্রনে আসার সময় আহলে সুফফা – মসজিদে বসবাসকারী দরিদ্রদের, এতিমদের বা ক্ষুধার্তদের সাথে করে নিয়ে আসবেন। তিনি তাঁর বিড়ালটিকেও সাথে নিয়ে যেতেন, তাঁর বিড়াল আজ বিস্মৃতপ্রায়।
আমন্ত্রণের ব্যাপারে খুব সুন্দর একটা বর্ণনা এসেছে। তিনি যদি আপনার বাসায় আসেন, আপনি কি চাইবেন না তিনি আপনার জন্য দুআ করুন? তিনি আপনার বাসায় খাবার খাচ্ছেন, আপনার সাথে কথা বলছেন, আপনার সাথে নতুন এক স্তরের সম্পর্ক গড়ে তুলছেন, কারণ তিনি আপনার বাসায় আমন্ত্রিত। এখন আপনি তাঁর দুআ চান, আপনি আরো চান তিনি আপনার বাসায় প্রার্থনা করুন, নামাজ পড়ুন। কতটা গর্বিত হয়ে আপনি সবাইকে বলবেন, রাসূল (ﷺ) আমার বাসায় নামাজ পড়েছেন। রাসূল (ﷺ) তা জানতেন, তাঁর প্রকৃতিগত সুন্দর স্বভাবের কারণে। তাই তিনি নিমন্ত্রণকারীর বাসায় নামাজ পড়তেন, প্রার্থনা করতেন যাতে তাঁরা গভীর সম্পর্কটা অনুভব করতে পারে। অবশ্যই পরবর্তীতে তারা ঐ জায়গাটিকে মুসল্লা হিসেবে ব্যবহার করবে এবং ভালবাসবে। আনাস (রা:) বলেন,
انا يتيمه في بيتنا خلف النبي صلى الله عليه وسلم وام سليم اخلفنا
“একবার রাসূল (ﷺ) আমার বাসায় আমন্ত্রিত হয়ে আসলেন, আমি রাসূলের (ﷺ) পিছনে দাঁড়িয়ে নামাজ পরলাম, আমার পাশে ছিল এক এতিম, এবং আমার পিছনে উম্মে সুলাইম।” উম্মে সুলাইম হলেন আনাসের (রা:) মা। তিনি আরো বলেন, “আমার দাদী মুলাইকা রাসূলকে (ﷺ) একবার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, এবং তিনি চেয়েছিলেন রাসূল (ﷺ) তার খাবার থেকে খাক, রাসূল (ﷺ) বাধ্য হয়ে তাই
খেয়েছিলেন।” এরপর রাসূল (ﷺ) বললেন, “আসুন সবাই একসাথে নামাজ পড়ি”, আনাস (রা:) বলেন,”আমি হাসিইর – আমাদের একমাত্র পুরাতন ও জরাজীর্ণ চাদরটি নিয়ে আসলাম। আমরা দু’রাকাত নামাজ পড়লাম, এরপর তিনি চলে গেলেন।”
রাসূল (ﷺ) শুধু অতিথি হয়েই আপনার বাসায় আসবেন না, এবং আপনার সাথে সুন্দর ও গভীর সম্পর্কই শুধু তিনি গড়ে তুলবেন না, বরং তিনি নিশ্চিত করবেন, যেন তিনি আপনার বাড়িতে আশীর্বাদ করেন, দুআ করেন। এই কারণে তিনি দুআ করবেন যেন সব সময় আপনি তাঁর সাথে সেই গভীর সম্পর্কটা অনুভব করেন, তিনি সশরীরে আপনার বাসায় উপস্থিত থাকা অবস্থায়, এমনকি তাঁর অনুপস্থিতিতে ও।
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। যে আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন মেহমানের সম্মান করে, যে আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৮৩]
||নবিজি যখন মেহমান||
মূল: ড: ওমর সুলাইমান
অনুবাদ: ফাহমিনা হাসানাত