Is it Possible to Perform Fasting and Eid on the Same Day? একই দিনে রোজা ও ঈদ করা কি সম্ভব?

 

সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে সারা বিশ্বে একই তারিখে রোযা, ঈদ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে কিছু ইসলামী চিন্তাবিদ মত প্রকাশ করেছেন। আমাদের দেশে ও কিছু ওলামায়ে কেরাম এর স্বপক্ষে মত প্রকাশ করেছেন এবং কোন কোন পীর সাহেবের অনুসারীরা তা পালনও করেছেন, চলতি ২০১৪ সালেও পালন করেছেন। এর পক্ষে-বিপক্ষে মত প্রকাশ করে ইদানীং পত্র-পত্রিকায় লেখা ছাপা হয়েছে। পক্ষে-বিপক্ষে লেখালেখি হলে দলিল প্রমাণগুলো সকলের গোচরে আসার সুযোগ হয় এবং চিন্তা ও গবেষণার পথ উন্মুক্ত হয়, ফলে অধিকতর সঠিক কোনটি তা বুঝা সহজ হয়। উভয় মতের সমর্থকদের কিছু দলিল অভিন্ন কিন্তু ব্যাখ্যা ভিন্ন। আমি অতি সংক্ষেপে প্রথমে এর পক্ষে লোকদের দু-একটি দলিল ও যুক্তি তুলে ধরছি। যারা একই তারিখে সারা বিশ্বে রোযা ও ঈদ পালনের পক্ষে বলেন তাদের দলিল- তোমাদের মধ্যে যে এ মাস পাবে সে যেন রোযা রাখে (সূরা-বাকারা, আয়াত-১৮৫)।

 

নবীজি (সা.) বলেছেন, তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখবে এবং চাঁদ দেখে রোযা ভঙ্গ করবে (বুখারী)। উল্লেখিত সাধারণ আদেশ বাক্যে ব্যাপকতা বুঝায় সুতরাং ভিন্ন ভিন্ন তারিখে কেন রোযা ঈদ হবে? পৃথিবীর এক দেশে খালি চোখে চাঁদ দেখা গেলে অত্যাধুনিক দূরবীণ যন্ত্র দিয়ে অন্য দেশ থেকেও দেখা সম্ভব। খালি চোখে দেখার শর্ত কেন করা হবে। দৃষ্টিশক্তি কমে গেলে খালি চোখে যারা দেখেন না চশমা দিয়ে দেখলে তা কি অগ্রহণযোগ্য হয়? মহররমের ১০ তারিখে কিয়ামত হবে। যদি চাঁদের তারিখের ভিন্নতা হয় তবে তা সৌদি আরবের ১০ তারিখ না বাংলাদেশের ১০ তারিখ? দেশ ভাগ হওয়ার আগে করাচির চাঁদ দেখায় এদেশে ঈদ হতো। এখন অনেক সময় একই তারিখে হয় না। দেশ ভাগের সাথে কি শরীয়তও ভাগ হয়ে গেছে? টেলিভিশনে যখন আরাফাতের হজ অনুষ্ঠান দেখা যায় তখনও আমাদের আরাফাতের তারিখ না হওয়ায় রোযা রাখি না ফলে ফজিলত বঞ্চিত হচ্ছি ইত্যাদি।

 

আমি আমার গবেষণা অনুযায়ী যতটুকু বুঝতে পেরেছি তাতে আমার দৃষ্টিতে সারা বিশ্বে একই তারিখে রোযা ঈদ পালন করা যুক্তি সংগত নয়। আমি অতি সংক্ষেপে দলিল প্রমাণ ও যুক্তির আলোকে তা বর্ণনা করছি-

 

আল্লাহ বলেন, তোমাদের মধ্যে যে এ মাস পাবে সে যেন রোযা রাখে এ আয়াতে এবং হাদীসে বর্ণিত- তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ, চাঁদ দেখে রোযা ভঙ্গ কর। উল্লেখিত হাদীসে এক এলাকায় চাঁদ দেখা গেলে সারা পৃথিবীর লোককে রোযা রাখার কথা বলা হয়নি বরং যে এলাকায় চাঁদ দেখা যাবে সে এলাকার লোকজনের রোযা রাখার কথা বলা হয়েছে।

 

যেমন আল্লাহ বলেছেন- অতঃপর তোমরা রোযাকে রাত্রি পর্যন্ত তথা সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত পূর্ণ কর (সূরা-বাকারা, আয়াত-১৮৭)।কিন্তু এ দলিল দ্বারা পৃথিবীর যে কোন এলাকায় সূর্য ডুবলেই কি অন্যান্য এলাকার লোকের ইফতার করা বুঝাবে? সূর্য হেলে পড়লে তোমরা জোহর নামায আদায় কর (সূরা-বনী ইসরাঈল, আয়াত-৭৮)।

 

এ আয়াতের নির্দেশে ও কি এক এলাকার সূর্য হেলে পড়ায় বিশ্বের সারা এলাকায় জোহর নামায আদায় করা যাবে? সূর্য অস্ত যাওয়া বা সূর্য হেলে পড়া বিশ্বের এক দেশ থেকে খালি চোখে দেখা গেলে অন্য দেশ থেকে শক্তিশালী দূরবীণ দিয়ে তাও দেখা সম্ভব। অথচ ক্ষুদ্র এ বাংলাদেশে ও বিভিন্ন অঞ্চলে নামায, ইফতারি ইত্যাদির সময়ের পার্থক্য রয়েছে।

 

এমনকি দুবাইতে সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিং ‘বুর্জ খলিফা’ যাতে এক বিল্ডিংয়ে আন্ডার গ্রাউন্ড স্তর, মাধ্যম স্তর ও উঁচু স্তর এ তিন স্তরে নামায ও ইফতারের তিনটি আলাদা সময়। আন্ডার গ্রাউন্ড স্তরে যখন লোক ইফতার করছে উপরের স্তরের লোক তখন সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখছে। সেখানে এক স্তরের সূর্যাস্ত অন্য স্তরের জন্য গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। তাহলে এক দেশের চাঁদ দেখা অন্য দেশের জন্য কিভাবে গ্রহণযোগ্য হবে?

 

ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র থেকে বা যন্ত্র দিয়ে চাঁদ দেখা হলে অমাবস্যার রাতেও পূর্ণ চন্দ্র দেখা সম্ভব। কেননা চাঁদ পূর্ণ অবস্থায় সবসময় বিদ্যমান থাকে পৃথিবীর ছায়া চাঁদের উপর পড়ে এবং তা আস্তে আস্তে সরে আসে বিধায় আমরা খালি চোখে একদিনের চাঁদ দুই দিনের চাঁদ এভাবে দেখি।

 

বাংলাদেশে যখন জোহরের সময় আমেরিকায় তখন মধ্যরাত তারা ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র থেকে বা শক্তিশালী দূরবীণ দিয়ে বাংলাদেশের হেলে পড়া সূর্য দেখতে পেলে মধ্যরাতেই কি জোহর আদায় করবে?

 

ইসলামী আইনের উসুল বা মূলনীতি হলো- কোন কাজের আদেশ করলে তা বার বার হওয়া বুঝায় না। সে হিসেবে নামাযের নির্দেশ দেয়া হয়েছে নামায আদায় করলেই চলত। কিন্তু যেহেতু এ আদেশগুলোকে সূর্য ও চন্দ্রের সাথে সম্পর্কিত করে দেয়া হয়েছে। তাই বারবার করতে হচ্ছে, যে দেশে যখনই সূর্য ডুববে সে দেশে তখনই (মাগরীব) আদায় করতে হবে। যখনই সূর্য হেলবে তখনই (জোহর) নামায আদায় করতে হবে। শীতকালে সাড়ে পাঁচটায় সূর্য ডুবলে মাগরীবের নামায আদায় করতে হবে, গ্রীষ্মকালে সাতটায় সূর্য ডুবলে সাতটায় মাগরীবের নামায আদায় করতে হবে।

 

আর আমরা যখন জুম’আর নামায আদায় করি তখন আমেরিকার লোক মধ্যরাতের ঘুমে অচেতন। সারা বিশ্বে একই সাথে জুম’আর নামায আদায় হয় না। তেমনি আমাদের দেশে যখন রমজানের চাঁদ দেখা যাবে আমরা সাওম পালন করব। আমেরিকায় যখন চাঁদ দেখা যাবে তারা সাওম পালন করবে এটাই স্বাভাবিক। মেরু এলাকায় ছয় মাস রাত্রি, ছয় মাস দিন।

 

উসুল অনুযায়ী তাদের ছয় মাসে যখন সূর্য ডুববে তখন মাগরীব, যখন সূর্য হেলবে তখন জোহর অর্থ্যাৎ ছয় মাসেই পাঁচ ওয়াক্ত নামায বা রোযা হওয়া এটাই মূলনীতি। কিন্তু ফিকহ বিদগণ ধর্মীয় রীতিতে অভ্যস্ত রাখার জন্য পার্শ্ববর্তী যেখানে চব্বিশ ঘণ্টার দিন-রাত্রি সে হিসাব অনুমান করে নামায-রোযা ফায়সালা দিয়েছে। তাদের মাজুর ধরে নিয়েই তা করা হয়েছে।

 

কেউ যদি মাগরীবের পূর্ব মুহূর্তে দ্রুতগামী আকাশ যানে উঠে সূর্যাস্তের দিকে কোন দেশে যেতে থাকে দু’চার ঘণ্টা উড়ার পর যদি কোন দেশে নামার পর কিছু সময় অতিবাহিত হলে ইফতারের সময় হয় তখন ইফতার করবে। যদিও যেখান থেকে আকাশ যানে উঠেছিল সেখানে তখন এশার সময়। ঠিক এমনিভাবে কেউ যদি আমাদের দেশে ২৮টি রোযা রেখে রাতে বিমানে উঠে অন্যদেশে গিয়ে দেখে সেখানে ঈদ। সে তাদের সাথে ঈদ পালন করবে। যেহেতু চন্দ্র মাস ২৮ দিনে হয় না। তাই একটি রোযা পরে কাযা করে নিবে। এভাবে ত্রিশ দিন পূর্ণ করে এসে একদিন বেশি পেলে সে ঐদিন রোযা রাখবে অতিরিক্ত রোযা নফল হবে। এটাকে মেরু প্রদেশের হুকুমের মতো ওজর হিসেবে ধরা হবে। এটার উপরই ফতোয়া।

 

যদি চন্দ্র উদয়ের পার্থক্য ধরা হয় তবে শবে কদর ইত্যাদি দিবসের পার্থক্য হয়ে যায়, সারা বিশ্বে একই সাথে শবে কদর না হলে তার ফজিলত কিভাবে পাওয়া যাবে? দশই মহররম কিয়ামত হলে কোন দেশের হিসেবে হবে। এ প্রসঙ্গে দুটি হাদীস উল্লেখ করছি- নবী (সা.) বলেন, ‘রাতের ও দিনের ফেরেশতারা পালাক্রমে তোমাদের নিকট আসে। উভয় দল ফজর ও আসর নামাযে একত্রিত হয় তারা আল্লাহর নিকট যাওয়ার পর বান্দাকে নামাযে পেয়েছেন বলে ঘোষণা দেন (মুসলিম)। এখন এটাকি বাংলাদেশের ফজর ও আসর নাকি আমেরিকার, নাকি সৌদি আরবের? তাদের মত অনুযায়ী ফেরেশতাদের এভাবে বলা দরকার ছিল সৌদি আরবের মানুষকে ফজরের নামাযে বাংলাদেশের মানুষকে সকালের নাস্তায় জাপানের লোকদের দুপুরের খাওয়া অবস্থায় পেয়েছি।

 

নবীজি (সা.) বলেন- ‘আল্লাহ প্রত্যেক রাত্রির শেষাংশে পৃথিবীর আকাশে এসে ঘোষণা করেন, কেউ কি ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছ, আমি ক্ষমা করে দিব। কেউ কি রিজিক প্রার্থনাকারী আছ, আমি রিজিক বাড়িয়ে দিব। কেউ কি বিপদগ্রস্ত আছ, আমি বিপদমুক্ত করে দিব। এভাবে ফজরের সময় পর্যন্ত প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কবুল করার ঘোষণা দিতে থাকেন (মুসলিম)। যখন বাংলাদেশের প্রথম আকাশে এ ঘোষণা দেন তখন আমেরিকার আকাশে সূর্য। তাই তারা এ ঘোষণা থেকে বঞ্চিত হয়ে যান বিষয়টা কি এরকম?

 

মোটেও নয়, এটাই আল্লাহর অসীম কুদরত। যিনি সময়ের পার্থক্যের ফলেও যখন যে দেশের শেষ রাত সে দেশের জন্যে এ ঘোষণা দিতে ও ফজিলত প্রদানে সক্ষম। তাছাড়া কিয়ামত মহররমের দশ তারিখে শুরু হবে। সেদিন সূর্য পশ্চিমে উঠবে। প্রথম শিংঙ্গা ফু-এর থেকে সময় হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের, সুতরাং তখনকার দিন-তারিখ হিসাব মিলানোর সুযোগ রইল না। এসবই আল্লাহর কুদরতের খেলা।

 

ধরা যাক একটি বড় ওয়াল, এক ফুট উচ্চতা থেকে একটি টর্চ লাইটের আলো এর উপর ফেলা হলে ওয়ালটির এক/দুই ফুট জায়গা আলোকিত হবে এবং টর্চটিকে ওয়ালটি প্রদক্ষিণ করতে গেলে কিছু সময় ব্যয় হবে। কিন্তু যদি বেশ কিছু দূর থেকে ওয়ালটির চাইতে বড় কোন লাইটের আলো ওয়ালটিতে ফেলা হয় তাহলে তা প্রদক্ষিণ করা লাগবে না এমনিতে পুরো ওয়ালটি আলোকিত হয়ে যাবে।

 

চাঁদ পৃথিবী থেকে পঞ্চাশ গুণ ছোট এবং নিকটতম উপগ্রহ। অপরদিকে সূর্য পৃথিবী থেকে তের লক্ষ গুণ বড় এবং নয় কোটি মাইল দূরে। তাই সৌর সময়ের পার্থক্য দশ-এগার ঘণ্টা হলেও চাঁদের সময়ের পার্থক্য দুই-তিন দিন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। ফলে খ্রিস্টানদের বড় দিন সৌরবর্ষ হিসেবে পালন করার কারণে (পৃথিবীর সর্বত্র এক সাথে দিন না হওয়ায়) বড় দিন পালনে সময়ের পার্থক্য হলেও তারিখের পার্থক্য হয় না। কিন্তু মুসলমানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান চন্দ্র বর্ষ হিসেবে করায় দুই-তিন দিন পার্থক্য হওয়া স্বাভাবিক।

 

নবীজি (সা.) বলেছেন- ‘যদি চাঁদ তোমাদের নিকট মেঘাচ্ছন্ন থাকে তবে শাবান মাস ত্রিশ দিন পূর্ণ করবে (বুখারী, মুসলিম)।
এখানে স্বাভাবিকভাবে বুঝা যায়, পৃথিবীর সর্বত্র একত্রে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে এ কথা বলা বিবেকসম্পন্ন নয়। এ কারণে ইমাম তিরমিজি অধ্যায়ের শিরোনাম দিয়েছেন- ‘প্রত্যেক দেশবাসীর স্ব-স্ব দেশের আকাশে নতুন চাঁদ দেখা প্রযোজ্য’।

 

ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম নাসাঈ অনুরূপ শিরোনামে অধ্যায় রচনা করেছেন। কুরাইব (রা.) বর্ণিত হাদিসে দেখা যায় তিনি মুয়াবিয়া (রা.)-এর নিকট সিরিয়া গমন করেন। সিরিয়ায় জুম’আ রজনীতে রমজানের চাঁদ দেখা গেল। রমজানের শেষের দিকে মদিনায় ফিরে এলে ইবনু আব্বাস (রা.) তাকে চাঁদ দেখা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, সিরিয়ায় শুক্রবার রাতে চাঁদ দেখা গেছে, আমি নিজে দেখেছি লোকেরাও তা দেখেছে এবং সে অনুযায়ী রোযা রেখেছে। ইবনু আব্বাস বললেন, আমরা শনিবার রাতে চাঁদ দেখেছি সে হিসেবে রোযা রেখেছি। সুতরাং আমরা ত্রিশ পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বা শাওয়ালের চাঁদ দেখা পর্যন্ত সিয়াম পালন করব। কোরাইব (রা.) বললেন- মুয়াবিয়া (রা.)-এর চাঁদ দেখা ও সিয়াম পালন কি আপনার জন্য যথেষ্ট নয়? ইবনু আব্বাস (রা.) বললেন- না, এভাবেই রাসূল (সা.) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন (মুসলিম, তিরমিজি, আবু দাউদ)।

 

সিরিয়া মদিনা থেকে সাতশ’ মাইল দূরে সেখানে শুক্রবারে রোযা শুরু হলো, মদিনায় একদিন পর শনিবার থেকে শুরু হলো, এ সংবাদ বিশ্বস্ত সূত্রে জানার পরও ইবনু আব্বাস (রা.) কাউকে একদিনের রোযা কাযা করতে বলেননি এবং সিরিয়ার চাঁদ দেখার অনুসরণ করেননি।

 

সাহাবায়ে কেরাম (রা.) ইসলাম প্রচারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। তারা সে দেশের চাঁদ দেখাকেই অনুসরণ করেছেন। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য মদিনার চাঁদ দেখার সংবাদ সংগ্রহ সম্ভব হয়নি বা সংগ্রহের কোন চেষ্টা করেছেন এমন বর্ণনা পাওয়া যায় না। তাহলে চাঁদ দেখার সময়ের ভিন্নতার কারণে কি ঐ সাহাবাদের সাওম হয়নি?

 

যদি বিশ্বের এক দেশের চাঁদ দেখার অনুসরণ করা হয় তখন দেখা যাবে, যে দেশে প্রথম চাঁদ দেখা গিয়েছে তাদের সন্ধ্যা বেলা কিন্তু বিশ্বের সবদেশে একসাথে দিন-রাত্রি না থাকার ফলে তখন কোন দেশে রাত তিনটা, কোন দেশে সুবহে সাদিকের পূর্ব মুহূর্ত, কারো ফজর, কারো দুপুর ফলে তারা কিভাবে তারাবী পড়বে, সেহরী খাবে? রাত জেগে চাঁদ দেখার সংবাদ সংগ্রহের জন্য বসে থাকতে হবে। এ এক হ-য-ব-র-ল অবস্থা ও সাধ্যাতীত বোঝা চাপানো হবে। অথচ আল্লাহ কারো উপর সাধ্যাতীত বোঝা চাপান না (সূরা-বাকারা, আয়াত-২৮৬)।

 

রমজানের চাঁদ যদি কখনো দিনে দেখা যায় এ প্রসঙ্গে ওমর (রা.) উৎবাহ বিন ফরকাদাকে পত্র লিখে বলেন- দিনের প্রথম অংশে চাঁদ দেখা গেলে তা গত দিনের চাঁদ সুতরাং সেদিন সাওম রাখবে না। দিনের অর্ধাংশের পর চাঁদ দেখা গেলে তা ঐ দিনের চাঁদ তোমরা সে হিসেবে সাওম পালন করবে (মুসান্নাফে ইবনু শায়বা)। এ পত্র মর্মে এক দেশের আকাশের চাঁদ দেখা অন্যদেশে সাব্যস্ত হয় না।

 

চলতি বছর (২০১৪ইং) সনে ২৮ জুন প্রথম রমজানের চাঁদ দেখা গেল লেবানন ও আমেরিকাসহ কয়েকটি দেশে। ২৯ তারিখে রমজান শুরু হলো মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। ৩০ তারিখ শুরু হলো বাংলাদেশসহ কয়েকটি রাষ্ট্রে। এখন যারা সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে রোযা ও ঈদ পালন করেন তারা কি বলবেন লেবানন ও আমেরিকার লোক স্বচক্ষে চাঁদ দেখার পরও সৌদি আরবের চাঁদ দেখার জন্য অপেক্ষা করবে? আর যারা বলেন বিশ্বের এক দেশের চাঁদ দেখা দ্বারা সারা বিশ্বে রোযা ফরজ হয় তারা লেবানন ও আমেরিকার চাঁদ দেখার দিন থেকে রোযা শুরু না করে কোন যুক্তিতে সৌদি আরবের চাঁদ দেখার জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকবেন।

 

চলতি বছর আমেরিকায় দুই দিন আগে চাঁদ দেখা যাওয়ায় আমি আগ্রহ ভরে এবার তিন দিন পর আমাদের দেশের উদিত নতুন চাঁদ দেখলাম। এ চাঁদ আমার কাছে এক দিনের চাঁদই মনে হয়েছে, কিছুতে দুই বা তিন দিনের চাঁদ মনে হয়নি। তখন ভাবলাম অবশ্যই এ মাস ঊনত্রিশ বা ত্রিশ দিনে পূর্ণ হবে যদি আমরা আমেরিকার চাঁদ দেখা দ্বারা রোযা শুরু করতাম তবে ত্রিশ বা ঊনত্রিশ পূর্ণ হওয়ার আগেই আমাদের সাওম শেষ হতো। পরবর্তী মাসের চাঁদ উদয়ের সাথে তা হতো সাংঘর্ষিক।

 

সৌদি আরব বিশ্বের মধ্যখানে হওয়ায় তার পশ্চিমের দেশগুলোতে একদিন আগে এবং পূর্বের দেশগুলোতে তাদের একদিন পর চাঁদের উদয় হওয়া স্বাভাবিক। রাশিয়া ভাগ হওয়ার আগে তা ছিল বিশাল দেশ। সেখানকার পূর্বাঞ্চলের চাঁদ দেখা পশ্চিম অঞ্চলের জন্য যথেষ্ট হতো কি?

 

আসলে আমাদের ভুল এখানে। চাঁদ দেখা দেশের সাথে নয় অঞ্চলের সাথে। মুসলিম বিজ্ঞানীরা গভীর ও সূক্ষ্মভাবে গবেষণা করে চাঁদ দেখার অঞ্চল বা এলাকা ভাগ করতে পরিপূর্ণ সক্ষম হলে এ প্রশ্ন করার সুযোগ থাকত না যে- দেশ ভাগের সাথে শরীয়তও ভাগ হয়ে গেছে।

 

যেমন সূর্যের সাথে সম্পর্কিত হওয়ায় ইফতারের সময় এলাকা ভিত্তিক মোটামুটি নির্ভুলভাবে ভাগ করা সম্ভব হয়েছে (দেশ ভিত্তিক নয়)। তেমনি যেহেতু চাঁদের উদয় থেকে সারা বিশ্বে চাঁদ দেখার সময়ে সর্বোচ্চ তিনদিন পার্থক্য হয়, তাই মুসলিম বিজ্ঞানীরা এই বিষয়টি আরও নিখুঁতভাবে গবেষণা করতে পারে যে, বিশ্বের যে দেশে প্রথম চাঁদ দেখা গিয়েছে তার এলাকা কতটুকু। পরবর্তী দিন কতটুকু এলাকা, এর পরবর্তী দিন বাকি কতটুকু এলাকা এ চাঁদ দেখার আওতাধীন। তাহলে আর বিতর্ক থাকবে না।

 

FAQ

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল করে ঈদ উদযাপনের বিষয়ে ঢাকার কদমতলী থেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানতে চেয়েছেন। অনুলিখনে ছিলেন জহুরা সুলতানা।

 

প্রশ্ন : আমাদের দেশের অনেক এলাকার মানুষ সৌদি আরবের সঙ্গে মিল করে দুটি ঈদ উদযাপন করে থাকেন। এটা কি শরিয়তসম্মত?

 

উত্তর : তাদের এ কাজটি শুদ্ধ নয়। কারণ, ঈদের ঘোষণা না এলে ঈদ পালন করা জায়েজ না। একটি সামষ্টিক বিষয় এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে। রাসূল (সা.) হাদিসের মধ্যে বলেছেন, ‘যেদিন মানুষ রোজা শুরু করবে, সেদিন থেকে রোজা পালন করা হবে আর ইফতার বা ঈদ, যেদিন মানুষ ইফতার বা ঈদ পালন করবে সেদিন।’ সুতরাং এটি সামষ্টিক ঘোষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং এ বিষয়ে ঘোষণা দেবেন সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান।

 

এটি শুদ্ধ না হওয়ার পেছনে আরো একটি বিষয় হচ্ছে, কেন সৌদি আরবের সঙ্গে ঈদ পালন করা হবে? আদৌ কি আমাদের কোনো ইবাদত সৌদি আরবের সঙ্গে পালন করার কথা বলা হয়েছে? সৌদি আরব ও বাংলাদেশে কি একই সময় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হয়? চাঁদ কি একই সময় উদয় হয় ও অস্ত যায়?

 

এই ধারণা শুদ্ধ নয় যে, কোনো ইবাদত আমরা সৌদি আরবের সঙ্গে করব। কারণ, সৌদি আরবের সঙ্গে কোনো ইবাদত করার নির্দেশনা আমাদের দেওয়াই হয়নি। সৌদি আরব না থাকলে কি আমরা কোনো ইবাদত করব না? সুতরাং এ কাজটি মোটেও শুদ্ধ নয়।

 

কেউ বলতে পারেন যে, সৌদি আরবের সঙ্গে ঈদ পালন করছি। কারণ, তারা আগে চাঁদ দেখেছে। এটি সহিহ নয়। যদি তাই হয়, তাহলে সৌদি আরবের আগে যারা চাঁদ দেখেছে, তাদের সঙ্গে ঈদ পালন করা উচিত। সুতরাং এখানে বড় ধরনের ভুল এবং বিভ্রাট রয়েছে।

 

তৃতীয়ত, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের যেমন ভৌগোলিক কোনো মিল নেই, তেমনি চান্দ্রিক বর্ষ অথবা সৌরবর্ষ কোনোটির সঙ্গেই মিল নেই। তাই কোনোভাবেই একে একদিনে মেলানো যাবে না। একদিন আগে ও পরের হিসাবে ধরতে হবে। এটি ভৌগোলিক বাস্তবতা।

 

এ প্রসঙ্গে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘চাঁদ না দেখা পর্যন্ত তোমরা সিয়াম (রোজা) পালন করবে না, অনুরূপভাবে যতক্ষণ পর্যন্ত নতুন চাঁদ না দেখবে, তোমরা ঈদ পালন করবে না।’ তাই কোনো ব্যক্তি যদি চাঁদ দেখে রোজা রাখে এবং ঈদ পালন করে, তাহলে চোখ বন্ধ করে সে সুন্নাহ অনুসরণ করেছে। আর যদি কোনো ব্যক্তি সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা ও ঈদ পালন করে, তাহলে সে চাঁদ না দেখে তা পালন করছে। এটি সম্পূর্ণ ভুল।

IDC Partner

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন।

 

আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে বিস্তারিত জানতে  লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।

আইডিসি  মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আপনি আইডিসি  মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।

Islami Dawah Center Cover photo

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টারকে সচল রাখতে সাহায্য করুন!

 

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার ১টি অলাভজনক দাওয়াহ প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠানের ইসলামিক ব্লগটি বর্তমানে ২০,০০০+ মানুষ প্রতিমাসে পড়ে, দিন দিন আরো অনেক বেশি বেড়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।

বর্তমানে মাদরাসা এবং ব্লগ প্রজেক্টের বিভিন্ন খাতে (ওয়েবসাইট হোস্টিং, CDN,কনটেন্ট রাইটিং, প্রুফ রিডিং, ব্লগ পোস্টিং, ডিজাইন এবং মার্কেটিং) মাসে গড়ে ৫০,০০০+ টাকা খরচ হয়, যা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। সেকারনে, এই বিশাল ধর্মীয় কাজকে সামনে এগিয়ে নিতে সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে আপনাদের দোয়া এবং আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন, এমন কিছু ভাই ও বোন ( ৩১৩ জন ) দরকার, যারা আইডিসিকে নির্দিষ্ট অংকের সাহায্য করবেন, তাহলে এই পথ চলা অনেক সহজ হয়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ। যারা এককালিন, মাসিক অথবা বাৎসরিক সাহায্য করবেন, তারা আইডিসির মুল টিমের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন, ইংশাআল্লাহ।

 

আইডিসির ঠিকানাঃ খঃ ৬৫/৫, শাহজাদপুর, গুলশান, ঢাকা -১২১২, মোবাইলঃ +88 01609 820 094, +88 01716 988 953 (নগদ/বিকাশ পার্সোনাল) ইমেলঃ info@islamidawahcenter.com, info@idcmadrasah.com, ওয়েব: www.islamidawahcenter.com, www.idcmadrasah.com সার্বিক তত্ত্বাবধানেঃ হাঃ মুফতি মাহবুব ওসমানী ( এম. এ. ইন ইংলিশ)