“সঠিক ব্যক্তি — সঠিক সময় — সঠিক দায়িত্ব” — নবী ﷺ এর সুশৃঙ্খল নেতৃত্বময় ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট
Nabis Disciplined Leadership Talent management
ইতিহাসে সফল কোনও প্রকল্প—চাই সে সামাজিক হোক, রাজনৈতিক হোক বা সামরিক হোক—তাতে একমাত্র পরিকল্পনা বা সম্পদের কথা নয়, বরং সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয় কারুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, কোনো মানুষকে কখনো দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, এবং তার শক্তি কোথায় প্রয়োগ করা হয়েছে। আমাদের প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট-ছকে আজ আমরা এক অনন্য মডেল অনুসরণ করতে পারি — আর তা হলো আমাদের নবী মুহাম্মদ ﷺ-এর নেতৃত্বের ব্যবস্থাপনা ও দায়িত্ববণ্টন। তিনি তাঁর সাহাবীদের মধ্য থেকে যেসব মানুষকে সঠিক জায়গায়, সঠিক সময়, সঠিক দায়িত্বে নিয়োগ দিয়েছেন, তা আজও ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও নেতৃত্বের ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। নিচে চারটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ দেওয়া হলো।
১. খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.)



6
- ইসলাম গ্রহণ করার আগে উহূদ যুদ্ধের সময় মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়েছেন। Wikipedia+2Yaqeen Institute for Islamic Research+2
- কিন্তু মুসলিম হয়ে আসার পর নবী ﷺ তিনি দেখলেন তাঁর মধ্যে একটি বিশেষ প্রতিভা (core strength) রয়েছে — যুদ্ধকৌশল, সাহস, দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা। Yaqeen Institute for Islamic Research+1
- ফলস্বরূপ, নবী ﷺ তাঁকে সেনাপতি হিসেবে নিয়োগ দিলেন, তাঁর ক্ষমতা কাজে লাগালেন — “সাইফুল্লাহ” (আল্লাহর তরবারি) উপাধিও দেওয়া হয়।
- ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ হলো মুতার যুদ্ধ (Muʿtah)-এ যেখানে মাত্র কয়েক সহযোদ্ধার মধ্যেই তিনি নেতৃত্ব তুলে ধরেন। Translated Prophetic Hadiths+1
- লেসন:
- অতীতের পারফরম্যান্স (যেমন খালিদ আগে কঠিন যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন) ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা (যেমন তাঁর নেতৃত্বগুণ) দুই আলাদা ভেবে দেখুন।
- জীবনের মূল শক্তি (core strength) খুঁজে বের করুন এবং কাউকে সেই জায়গায় বসান।
- ভালো চরিত্রের মানুষকে দেখুন সঙ্গে রাইট স্কিলও আছে কিনা — দুইয়ের সমন্বয় গুরুত্বপূর্ণ।
২. আবু বকর সিদ্দিক (রা.)



6
- আবু বকর (রা.) ছিলেন অত্যন্ত বিচক্ষণ, ধৈর্যশীল, রাজনৈতিকভাবে সুদক্ষ এবং আবেগীয়ভাবে স্থিতিশীল।
- নবী ﷺ তাঁকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন সবচেয়ে সংবেদনশীল নিগোসিয়েশন, যেমন হিজরতের সময় সংগী হিসেবে নেওয়া হয় — একটি বড় ভরসার পরিচায়ক।
- মৃত্যুর পর খলিফার দায়িত্বে রাখা হয় কারণ তখন স্থিতিশীলতা (Stability) প্রয়োজন ছিল।
- হাদিসে এসেছে: “أَرْحَمُ أُمَّتِي بِأُمَّتِي أَبُو بَكْرٍ…”
“The most merciful of my Ummah towards my Ummah is Abu Bakr…” Sunnah - লেসন:
- কারই যা মেজাজ (temperament), সেরকম পরিবেশে Deploy করুন।
- নেতৃত্ব মানে শুধু স্কিল নয়, চরিত্রও।
- দৈনন্দিন কাজেই কার আবেগ ও ধৈর্য রয়েছে, তা বিবেচনায় নিন।
৩. উমর ইবনে খাত্তাব (রা.)



6
- উমর (রা.) ছিলেন বিচার ও প্রশাসনের প্রতি কঠোর, সিদ্ধান্তে দৃঢ়, সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গা সম্পন্ন।
- নবী ﷺ তাঁকে সেইসব ক্ষেত্র দিতেন যেখানে নির্ধারিত সিদ্ধান্ত ও বিচার ও প্রশাসন অতীব জরুরি ছিল।
- তিনি সংবেদনশীল কূটনৈতিক মিশনে পাঠানো হতেন না, কারণ তার শক্ত ব্যক্তিত্ব কখনো কখনো সংঘর্ষ সৃষ্টি করতে পারত।
- হাদিসে এসেছে: “… وَأَشَدُّهُمْ تَزْبِيْطاً لِدِيْنِ اللَّهِ عُمَرُ…”
“…and the one who adheres most sternly to the religion of Allah is ‘Umar…” Sunnah - লেসন:
- শক্ত ব্যক্তিত্বের মানুষকে রাইট সময়ে নিয়ে আসুন।
- যে জায়গায় তাঁর দুর্বলতা থাকতে পারে (যেমন সংবেদনশীল কূটনীতি), সেখান থেকে এড়িয়ে চলুন।
- ডিসিপ্লিন ও নির্ধারিত সিদ্ধান্ত প্রয়োজনীয় হলে এমন লিডার ব্যবহার করুন।
৪. উসামা ইবনে যাযেদ (রা.)



5
- বয়স মাত্র ১৮ বছর। অনেক বেশি অভিজ্ঞ সাহাবীরা থাকা সত্ত্বেও নবী ﷺ তাঁকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে নেতৃত্ব দিলেন।
- কারণ ছিলেন তার বাবা জায়েদ (রা.) – এক সুপরিচিত কমান্ডার এবং নবী ﷺ দেখলেন সেই গুণ তার মধ্যেও আছে।
- লেসন:
- বয়স বা সিনিয়রিটি নয়, ক্ষমতা ও সক্ষমতা (capability) বিবেচনায় নিন।
- তরুণ প্রতিভাকে নেতৃত্বের সুযোগ দিন।
- সম্ভাবনাময় যাকে দেখেন, দায়িত্ব দিন — সঠিক গাইডেন্স ও মনিটরিং সহ।
৫. মুয়ায ইবনে জাবাল (রা.)



5
- মুয়ায (রা.) ছিলেন কোরআন ও ফিকহে সংক্ষিপ্ত, বিশেষজ্ঞ (specialist)।
- নবী ﷺ তাঁকে ইয়েমেনে গভর্নর হিসেবে পাঠালেন যেখানে ছিল জটিল আইনগত মন্ত্রণালয় ও বিচারবিভাগ। যুদ্ধক্ষেত্রে নয়, বরং আইনি ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সক্রিয় ছিলেন।
- লেসন:
- বিশেষজ্ঞদের (specialists) তাঁদের নিজ ডোমেইনে রাখুন।
- সাধারণ দায়িত্ব নয়, যেখানে দক্ষতা সবচেয়ে বেশি লাগবে সেই ভূমিকা দিন।
- “মাস্টার অব অল” নয়, বরং “মাস্টার অফ হিজ ডোমেইন” চিন্তা করুন।
নবী ﷺ এর দায়িত্ববণ্টনের পদ্ধতি ও আমাদের গ্রহণযোগ্য শিক্ষা
- হুট হুট কাউকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। নবী ﷺ প্রথমে পর্যবেক্ষণ করতেন — কে কোন পরিস্থিতিতে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন।
- বড় দায়িত্বের আগে ছোট দায়িত্ব দিয়ে পারফরম্যান্স দেখতেন। যদি দেখতেন কেউ ফিট নয়, দ্রুত পরিবর্তন করতেন।
- ব্যক্তিগত অনুভূতির (personal feelings) উপরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি — বরং তাঁদের শক্তিপ্রায়োজনীয় স্কিল ও ঈমানকে কাজে লাগিয়েছেন।
- দুর্বলতাকে ঠিক করার জায়গায়, শক্তিকে কাজে লাগানোর উপরে জোর দিয়েছেন।
- মাত্র দশ বছরেই এক শক্তিশালী উম্মা তৈরি করেছিলেন যা আজও ১৪০০ বছরের পর টিকে আছে। কারণ শুধুই ভালো মানুষ দিয়ে নয়, সঠিক মানুষকে সঠিক জায়গায় বসিয়ে গঠন করেছেন।
আমাদের আজকের কর্পোরেট/প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট জন্য মূল শিক্ষা
- একটি টিম গঠন করার সময় — past performance দেখার পাশাপাশি future potential বিবেচনায় নিন।
- প্রতিটি সদস্যের কোর স্ট্রেন্থ কি, তা খুঁজে বের করুন এবং সেখানেই দায়িত্ব দিন।
- প্রতিটি মানুষকে তার ক্ষমতা ও চরিত্র অনুযায়ী কাজে বসান। স্কিল থাকলে চরিত্র আছে কিনা খতিয়ে দেখুন।
- বয়স বা সিনিয়রিটি শুধু সংখ্যার বিষয়; প্রকৃত ক্যাপাবিলিটি আছে কিনা, সেটা দেখুন।
- বিশেষ কাজে বিশেষজ্ঞ ব্যবহার করুন — সাধারণ দায়িত্বে নয় যেখানে দক্ষতা সবচেয়ে বেশী দরকার।
- দায়িত্ব দেওয়া যন্ত্রণা নয়, বরং রাইট মানুষকে রাইট জায়গায় বসিয়ে কাজ করার আনন্দ ও সফলতা আনায়।
উপসংহার
নবী ﷺ এর নেতৃত্ব ও তাঁর সাহাবীদের দায়িত্ববণ্টনের এই চার্ট আমাদের শেখায় যে— সফল দল গড়তে হলে শুধু “ভালো লোক” যথেষ্ট নয়; বরং রাইট লোককে রাইট টাইমে রাইট প্লেসে বসানো অত্যাবশ্যক। আজকের প্রতিযোগিতাপূর্ণ কর্পোরেট বা প্রজেক্ট পরিবেশেও এই নীতি অবিকল প্রযোজ্য। তাই আসুন আমরা আমাদের টিম-ম্যানেজমেন্টে, প্রজেক্ট রোল বণ্টনে ও নেতৃত্ব নির্ধারণে এই সুশৃঙ্খল পদ্ধতি অনুসরণ করি।
লিখেছেন: মাহবুব ওসমানী – প্রকাশনা: Islamidawahcenter.com
Mahbub Osmane — একজন ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক এবং IslamiDawahCenter.com এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি কুরআন ও সহীহ হাদীসভিত্তিক বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
To learn more, comment below or message us on wa.me/+966549485900 or wa.me/+8801716988953 or call us at +44-73801-27019. Email at hi@islamidawahcenter.com
আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন।
ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।
আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে বিস্তারিত জানতে লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।
আইডিসি মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।
কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে
