Ruqyah for patient of jinn – জিনের রোগীর জন্য রুকিয়াহ – জ্বিন ও মানুষের সম্পর্ক: ইসলামী আক্বিদা ও প্রতিকার

আল্লাহ তা’আলা জ্বিন ও মানুষ উভয় সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের মধ্যে এক বিশেষ সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের বর্ণনা অনুযায়ী, জ্বিনরা মানুষের ক্ষতি করতে পারে, বিভিন্নভাবে কষ্ট দিতে পারে, অসুস্থ করে দিতে পারে, এমনকি সম্পূর্ণ পাগলও বানিয়ে দিতে পারে। ইসলামী আক্বিদার সারকথা হলো, জ্বিনদের দ্বারা মানুষের ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বিদ্যমান এবং এর প্রতিকারও ইসলামে বর্ণিত আছে।


হাদীসের আলোকে জ্বিনের ক্ষতি করার দৃষ্টান্ত

নবী করীম (সাঃ)-এর যুগেই জ্বিনের দ্বারা মানুষ আক্রান্ত হওয়ার একাধিক ঘটনা পাওয়া যায়, যা এ বিষয়ে ইসলামী আক্বীদার সত্যতা প্রমাণ করে।

ঘটনা ১: আবু ইয়া’লা ইবনে মুররা (রাঃ) থেকে বর্ণিত

“…আমরা পথিমধ্যে এক মহিলাকে দেখতে পেলাম, তার সাথে একটা শিশু ছিলো। মহিলা রাসূল (সাঃ)-এর কাছে এসে বললো: ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমার ছেলেটা খুব বিপদে আছে, আমরাও একে নিয়ে বিপদে আছি! দৈনিক কয়েকবার একে জ্বিনে ধরে..!!’ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‘বাচ্চাটাকে এদিকে নিয়ে আসো।’ এরপর রাসুল (সাঃ) বাচ্চাটার মুখ হা করে ধরে, “اُخْرُجْ عَدُوَّ اللّٰهِ، أَنَا رَسُولُ اللّٰهِ!” (হে আল্লাহর দুষমন বের হ! আমি আল্লাহর রাসুল) বলে ওর মুখে ফু দিলেন, এরকম তিনবার করলেন। এরপর মহিলাকে বললেন, ‘আচ্ছা একে নিয়ে যাও, ফেরার পথে যখন আমরা এদিক দিয়ে যাবো, তখন আরেকবার দেখা করো।’ অতঃপর আমরা সফর থেকে ফেরার সময় ওই মহিলাকে আবার পেলাম, রাসুল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন- ‘তোমার ছেলের কী অবস্থা?’ মহিলা বললো, ‘যে আল্লাহ আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন তার শপথ! সেদিনের পর থেকে আমার ছেলে খুব ভালো আছে, কোনো সমস্যা হয়নি।’ মহিলার সাথে তিনটা ভেড়া ছিল, সেগুলো রাসুল (সাঃ)-কে দিতে চাইলো। রাসুল (সাঃ) কোনো সাহাবাকে বললেন, ‘একটা নাও.. বাকিগুলো ফিরিয়ে দাও…'” (হায়সামি রহ. বলেন, ইমাম আহমাদ রহ. দুটি সহিহ সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন – মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯/৪ দ্রঃ। এছাড়াও শব্দের সামান্য কম বেশিসহ এই হাদিসটা অনেক প্রসিদ্ধ হাদিসের কিতাবে এসেছে, যেমন- তাবারানী, দারিমী, আবু দাউদ। মুসতাদরাকে হাকেমে এটাকে সহিহ বলা হয়েছে, এবং ইমাম যাহাবি সমর্থন করেছেন – ২/৬১৭ দ্রঃ)।

ঘটনা ২: জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত

গাযওয়ায়ে যাতুর রিকা অভিযানে আমরা রাসূল (সাঃ)-এর সাথে ছিলাম, এক মহিলা তার বাচ্চাকে নিয়ে এসে বললো: “ইয়া রাসূলাল্লাহ শয়তান এর ওপর ভর করেছে।” রাসুল (সাঃ) বাচ্চাটাকে একদম কাছে নিয়ে আসলেন, এরপর “اُخْرُجْ عَدُوَّ اللّٰهِ، أَنَا رَسُولُ اللّٰهِ!” বলে ছেলেটার মুখে তিনবার ফু দিলেন, তারপর বললেন, “যাও এর আর কোনো সমস্যা নাই।” (মুজামুল আওসাত, মাজমাউয যাওয়ায়েদ)।

ঘটনা ৩: ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত

এক মহিলা তার বাচ্চাকে নিয়ে এসে বললো: “ইয়া রাসূলাল্লাহ সকাল বিকেলে একে পাগলামী ধরে, আমাদের জীবন অতিষ্ঠ করে ফেলছে।” রাসুল (সাঃ) বুকে হাত বুলালেন (আরেক ঘটনায় আছে বাচ্চাটার পিঠে তিনটা থাপ্পড় দিলেন) আর বললেন: “اُخْرُجْ عَدُوَّ اللّٰهِ، أَنَا رَسُولُ اللّٰهِ!” পরে ছেলেটা বমি করলো, বমির সাথে কুকুরের বাচ্চার মত কিছু একটা বের হয়ে দৌড় দিলো। (সেটা জিন ছিলো..) [এর সনদ হাসান] এই দুটি ঘটনা মুসনাদে আহমাদ, দারিমী, তাবারানী, দালায়েলুন নাবুওয়াহ এসব হাদিসগ্রন্থে পাওয়া যাবে। হাদিসগুলোর তাহকিক এখানে দেখুন – http://fatwa.islamweb.net/fatwa/index.php


কুরআনের আয়াত থেকে জ্বিনের আসর

পবিত্র কুরআনেও জ্বিনের আসর ও এর প্রভাবে মানুষের অসুস্থ হওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

সূরা বাক্বারা, আয়াত ২৭৫:

الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ

অর্থ: “যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে এমনভাবে দন্ডায়মান হবে, যেন তাদেরকে শয়তান আসর করে পাগল বানিয়ে দিয়েছে।” (সূরা বাক্বারা, আয়াত ২৭৫)।

এই আয়াত থেকে অন্তত দুইটি বিষয় বুঝা যায়- এক. খারাপ জিন মানুষকে আসর করতে পারে.. দুই. জিনের আসরের কারনে মানুষ অসুস্থ এমনকি পাগল হয়ে যেতে পারে। (মারিফুল কোরআন (পূর্ণাঙ্গ এডিশন) ১ম খন্ড ৬১১পৃ. দ্রষ্টব্য)। ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন- মানুষকে জ্বিন আসর করতে পারে, এটা যারা অস্বীকার করে তাদের ভ্রান্তির বিরুদ্ধে এই আয়াতটি দলিল। (তাফসিরে কুরতুবি এই আয়াতের তাফসির দ্রষ্টব্য)।

রাসূল (সাঃ)-এর জামানার একটা ঘটনা (আবু দাউদ শরিফে) আছে, একজন জ্বিনের আসরে পাগল হয়ে গিয়েছিলো, ভালো হচ্ছিলো না। তাকে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হতো। একজন সাহাবী সূরা ফাতিহা পড়ে কয়েকদিন রুকইয়া করলে সে সুস্থ হয়ে যায়, পরে ওই সাহাবী রাসূল (সাঃ)-এর কাছে এসে ঘটনা শোনায়। তখন কোরআন দ্বারা ঝাড়ফুঁক করার কারণে রাসূল (সাঃ) সাহাবীর প্রশংসা করেন।


সালাফে সালেহীনদের থেকে জ্বিনের চিকিৎসা বিষয়ক ঘটনা

ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত:

একজন মৃগীরুগীকে আক্রান্ত অবস্থায় দেখে ইবনে মাসউদ (রাঃ) তার কানের কাছে গিয়ে সূরা মুমিনুনের “اَفَحَسِبۡتُمۡ اَنَّمَا خَلَقۡنٰكُمۡ عَبَثًا وَّاَنَّكُمۡ اِلَيۡنَا لَا تُرۡجَعُوۡنَ” আয়াত থেকে সূরার শেষ পর্যন্ত পড়েন, আর সে সাথে সাথে সুস্থ হয়ে যায়। তখন রাসূল (সাঃ) ইবনে মাসউদ (রাঃ)-কে ডেকে বললেন- “তুমি ওর কানের কাছে গিয়ে পড়লে?” ইবনে মাসউদ (রাঃ) আয়াতটি বললেন। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, “কোনো যোগ্য ব্যাক্তি যদি পাহাড়ের ওপরে এটা (সূরা মুমিনুনের এই আয়াত/আয়াতগুলো) পড়ে, তাহলে পাহাড়ও সরে যাবে!” (তিরমিযী, হাকেম। এই হাদিসের সনদে একজন যয়ীফ রাবী আছে ইবনে লাহি’আ, অন্যরা সিকাহ)।

ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-এর ঘটনা:

ইবনে তাইমিয়া (রহ.) এর অনেকগুলো ঘটনা আছে, যেখানে উনি “اَفَحَسِبۡتُمۡ اَنَّمَا” আয়াতটি পড়ে জ্বিন তাড়িয়েছেন। একবার এক ঘাড়ত্যাড়া জ্বিনকে উনি এই আয়াত পড়ছেন আর পিটাইছেন!!

ইবনে আবিদ দুনিয়া (রহ.)-এর ‘আল-হাওয়াতিফ’ গ্রন্থ থেকে:

  • এক শিয়া হজ্ব করতে গিয়েছিলো, সে যখনই কোনো গুরুত্বপূর্ণ আমল করতে যাচ্ছিলো তখনই মৃগীরোগে আক্রান্ত হচ্ছিলো। (উলামাদের মতে, মৃগীরোগ জ্বিনের আসরের কারনে হয়) হুসাইন বিন আব্দুর রহমান (রহ.) মিনায় ওই লোকটাকে পেয়ে জ্বিনকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “তুমি যদি ইহুদি হও তবে মুসা (আঃ)-এর দোহাই, যদি খৃষ্টান হও তবে ঈসা (আঃ)-এর দোহাই, আর মুসলমান হলে তোমাকে মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর দোহাই দিয়ে বলছি তুমি চলে যাও।” তখন জ্বিন কথা বলে উঠলো, “আমি ইহুদিও না, খ্রিষ্টানও না.. বরং মুসলমান! আমি এই হতভাগাকে দেখেছি সে আবু বাকর (রাঃ) এবং ওমর (রাঃ)-কে গালিগালাজ করে। এজন্য আমি তাকে হজ্জ করতে দেইনি।”
  • আরেকটি ঘটনা আছে, এক মুতাযিলাকে জ্বিন ধরেছিলো। সবাই ভিড় করে দেখছিলো, সাঈদ ইবনে ইয়াইয়া (রহ.) তার কাছে গিয়ে বললেন, “তুমি এর ওপর কেন আক্রমণ করেছ? আল্লাহ কি তোমাকে এই অধিকার দিয়েছে? না তুমিই বাড়াবাড়ি করছো?” তখন লোকটার মুখ দিয়ে জ্বিন বলে উঠলো, “আপনি আমাকে ছেড়ে দিন, আমি একে খতম করে ফেলবো। সে বলছে কোরআন মাখলুক..!” (এটা মুতাযিলা ফিরকার একটা আকিদা)।

ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহ.)-এর ঘটনা:

ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহ.)-এর সময়ে বাদশাহর মেয়েকে জ্বিন ধরেছিলো। তখন ইমাম আহমাদের কাছে এক মন্ত্রী এসে ঘটনা জানালো। ইমাম আহমাদ (রহ.) একটি জুতা বের করে অযু করলেন, এরপর বললেন- জ্বিনকে গিয়ে বলো “তুমি কি এই মেয়েকে ছেড়ে যাবে? নাকি ইমাম আহমাদের হাতে জুতার বাড়ি খাবে?” মন্ত্রী গিয়ে কথাগুলো জ্বিনকে বললো, জ্বিন বললো: “আমি চলে যাবো.. ইমাম আহমাদ যদি বাগদাদ থেকে চলে যেতে বলেন তাও চলে যাবো! ইমাম আহমাদ আল্লাহর অনুগত বান্দা। যে আল্লাহর অনুগত হয়, সব সৃষ্টি তার অনুগত হয়ে যায়।” এরপর জ্বিন চলে গেলো।

কিন্তু ইমাম আহমাদ (রহ.)-এর ইন্তিকালের পর আবার এসে ভর করলো, এবার বাদশাহ একজনকে ইমাম আহমাদ (রহ.)-এর ছাত্র আবু বাকর মারূযী (রহ.) এর কাছে পাঠালো, উনি একটা জুতা নিয়ে মেয়েটার কাছে আসলো.. জ্বিনটা বললো, “এবার আর আমি যাচ্ছিনা! ইমাম আহমাদ আল্লাহর আনুগত্য করতো, তাই তার কথা শুনে চলে গেছিলাম, তোমাদের কথা তো আমি শুনবো না..!!”

ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-এর আরেকটি ঘটনা:

উনি এক মেয়ে রুগীর ওপর সূরা মুমিনুনের ওই (১১৫নং) আয়াতটা পড়েন, তখন জ্বিন কথা বলে ওঠে।

اَفَحَسِبۡتُمۡ اَنَّمَا خَلَقۡنٰكُمۡ عَبَثًا وَّاَنَّكُمۡ اِلَيۡنَا لَا تُرۡجَعُوۡنَ‏

অর্থ: “(২৩:১১৫) Did you imagine that We created you without any purpose, and that you will not be brought back to Us?”

ইবনে তাইমিয়া (রহ.)- “তুমি ওকে ধরছো কেন?” জ্বিন– “আমি ওকে পছন্দ করি..”

  • “সেতো তোমাকে পছন্দ করে না!” — “আমি ওকে নিয়ে হজ্বে যাবো..”
  • “সেতো তোমার সাথে হজ্বে যেতে চায় না!” জ্বিনটা ঘাড়ত্যাড়া ছিলো, ইবনে তাইমিয়া (রহ.) আচ্ছাতাকে পিটানি দিলেন, তখন জ্বিন বললো- “আপনি বলছেন তো? আপনার কথা মেনে আমি চলে যাচ্ছি!” ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বললেন- “থাম থাম! আমার কথা না বরং আল্লাহর এবং রাসুলের কথা (মুমিনকে কষ্ট দেয়া হারাম) মেনে চলে যা!” এবার জ্বিন চলে গেল, আর কখনো আসেনি।

জ্বিন কেন মানুষের ক্ষতি করে?

জ্বিন মানুষের ক্ষতি করার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে:

১. জ্বিনকে কষ্ট দেওয়া: যদি কোনোভাবে কোনো জ্বিনকে কষ্ট দেওয়া হয়, আঘাত করা হয়।

২. গরম পানি ফেলা বা প্রস্রাব করা: যদি কোনো জ্বিনের ওপর গরম পানি ফেলা হয় অথবা কোনো জ্বিনের গায়ে প্রস্রাব করা হয়।

৩. অহেতুক কষ্ট দেওয়া: বিশেষ কোনো কারণ ছাড়াই অহেতুক কষ্ট দেওয়ার জন্য আসর করতে পারে, যেমন অনেক মানুষ অহেতুক জিনদের কষ্ট দেয়।

৪. পছন্দ করা: কোনো জ্বিন হয়তো কাউকে পছন্দ করে, এজন্য আসর করতে পারে।

৫. পূর্ব শত্রুতা: আগের কোনো শত্রুতার জেরে আসর করতে পারে, বা ক্ষতি করতে পারে।

৬. প্রতিশোধ নেওয়া: যদি তাদের কাউকে ইচ্ছাকৃত বা ভুলক্রমে মেরে ফেলা হয়, এজন্য বদলা নিতে ক্ষতি করতে পারে।

এখানে জেনে রাখা উচিত, মানুষকে বিনাদোষে কষ্ট দেওয়া যেমন হারাম, তেমন জ্বিনদের কষ্ট দেওয়াও হারাম। ইচ্ছাকৃতভাবে বিনাদোষে জ্বিনকে হত্যা করলেও কিসাস লাযিম হয়। তবে অনিচ্ছাকৃতভাবে আঘাত করলে বা হত্যা করলে কিসাস (বদলা) নেওয়া বৈধ হবে না।

রাসূল (সাঃ) একটি সহজ উসুল (মূলনীতি) বর্ণনা করেছেন, কোনো ক্ষতিকর প্রাণী যেমন সাপ দেখলে তিনবার বলতে হবে, “তুমি জ্বিন হলে এখান থেকে চলে যাও।” এরপর মারলে কিসাস নেওয়া যাবে না। একজন মুহাদ্দিসের ঘটনা প্রসিদ্ধ আছে, যিনি একটা সাপকে হত্যা করেছিলেন, সেটি আসলে জ্বিন ছিলো। তখন জ্বিনেরা উনাকে জ্বিনদের আদালতে নিয়ে যায়। উনি হাদিসটি শুনিয়ে বলেন, আমি তো তিনবার চলে যেতে বলেছিলাম। সেখানে একজন জ্বিন সাহাবী ছিলো, তিনি বলেন- এটা আমিও রাসূল (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি। এরপর জ্বিনেরা উক্ত মুহাদ্দিসকে নিজ বাড়িতে ফেরত দিয়ে যায়।


জ্বিন দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার প্রকারভেদ

জ্বিন দ্বারা মানুষ কয়েকভাবে আক্রান্ত হতে পারে:

১. পুরো শরীর আক্রান্ত হওয়া: যাকে স্বাভাবিকভাবে আমরা “অমুককে জিনে ধরেছে” বলি। এক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের শরীরের ওপর থেকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হারায়, জ্বিন তার মুখ দিয়ে কথা বলে, সব অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করে। তাকে আঘাত করলে জ্বিন ব্যথা পায়।

২. শরীরের কোনো অঙ্গ আক্রান্ত হওয়া: যেমন হাত, পা অথবা মাথা আক্রান্ত হওয়া। এটা কয়েকভাবে হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, জ্বিন হাতে বা পায়ে ঢুকে থাকে যেখানে সবসময় ব্যথা করে, অথবা একদম অচল হয়ে যায়। কিংবা ব্রেইনে ঢুকে থাকে, যার ফলে মাঝেমধ্যে উল্টাপাল্টা আচরণ করে, কেউ এক পর্যায়ে সম্পূর্ণ পাগল হয়ে যায়। এক্ষেত্রে যেমন এক অঙ্গ আক্রান্ত হতে পারে, তেমন একাধিক অঙ্গও হতে পারে। একটা জ্বিন যেমন শরীরে ঢুকে থাকতে পারে, একটা মানুষের শরীরে একাধিক জ্বিনও থাকতে পারে। বাস্তবতা বুঝতে সহজভাবে ভাবুন, “শয়তান মানুষের রগের ভেতর দিয়ে চলাচল করে” (তারাও জ্বিন) এটা তো সাফ হাদিস তাই না?

একজন মিসরীয় শায়খের ঘটনা, উনার কাছে একজন রুগী আসলো, যার এক পা একদম অচল হয়েছিলো "ডাক্তাররা কোনো সমস্যা খুঁজে পাচ্ছিলো না" (point to be noted) তো শায়খ যখন উনার মাথায় হাত রেখে রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়লেন, তখন রুগীর মুখ দিয়ে জ্বিন কথা বলে উঠলো, সে মুসলমান ছিলো.. তাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে চলে যেতে রাজি করানোর সময় জানা গেলো, এই শরীরে আরো দুইটা জ্বিন আছে যারা খ্রিষ্টান! তো এরকমও ঘটতে পারে।

৩. স্বল্প সময়ের জন্য আক্রমণ করা: জ্বিন যেমন শরীরের মাঝে ঢুকে দীর্ঘসময় থাকতে পারে, তেমনি কোনো ক্ষতি করে তখনই বের হয়ে যেতে পারে। তবে মাঝেমাঝে ঢুকে আবার চলে যায়, আবার ঢুকে আবার যায়.. এমন ঘটনা খুব কম। কারণ ‘কোনো মানুষের শরীরে ঢোকা’ কাজটা জ্বিনের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য একটা বিষয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হয়তো কোনো একটা ক্ষতি করে (যেমন জ্বর বানিয়ে দিয়ে) তখনই চলে যায়, যেটাকে জিনের বাতাস লাগছে বলে। অথবা একবার শরীরে ঢুকে, চিকিৎসা করানোর আগে যেতে চায়না.. (এটাকে জিনে ধরেছে বলে) এখানে বলে রাখা ভালো… ‘তৃতীয়প্রকার’ তথা স্বল্প সময়ের জন্য জ্বিন আক্রমণ করার মাঝে “বোবা ধরা”কেও গণ্য করেছেন অনেক অভিজ্ঞ আলেম। (তবে আমার কেন যেন মনে হয় এটা হুদাই শারীরিক সমস্যা, জিন-ভুত কিছু না)। আর হ্যাঁ! উপরে যে পয়েন্ট গেলো.. অতিপ্রাকৃতিক সমস্যাগুলোর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এমন হয়.. “কোনো ব্যথা বা রোগ আছে; অথচ মেডিকেল টেস্টে কিছু ধরা পড়ছে না!” এটা অহরহ দেখা যাচ্ছে.. বাস্তবে এটা জ্বিন এবং বদনজর; উভয় ক্ষেত্রেই একটা মেজর সাইন! (বড় আলামত)।


জ্বিনের স্পর্শে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ

জ্বিনের স্পর্শে আক্রান্ত হওয়ার কিছু সাধারণ লক্ষণ নিচে দেওয়া হলো:

ঘুম সংক্রান্ত লক্ষণ সমূহ:

১. নিদ্রাহীনতা: যার জন্য সারারাত শুধু বিশ্রাম নেয়াই হয়, ঘুম হয় না।

২. উদ্বিগ্নতা: যেজন্য রাতে বার বার ঘুম ভেঙে যাওয়া।

৩. বোবা ধরা: ঘুমের সময় কেউ চেপে ধরেছে, নড়াচড়া করতে পারছে না। প্রায়ই এমন হওয়া।

৪. ঘুমের মাঝে চিৎকার করা, গোঙানো, হাসি-কান্না করা: প্রায়শই এমন হওয়া।

৫. ঘুমন্ত অবস্থায় হাটাহাটি করা (Sleepwalking):

৬. স্বপ্নে কোনো প্রাণিকে আক্রমণ করতে বা ধাওয়া করতে দেখা: বিশেষতঃ কুকুর, বিড়াল, ইঁদুর, উট, সিংহ, শিয়াল, সাপ। * ফ্যাক্ট: যদি স্বপ্নে সবসময় দুইটা বা তিনটা প্রাণী আক্রমণ করতে আসছে দেখে, তাহলে বুঝতে হবে সাথে দুইটা বা তিনটা জ্বিন আছে।

৭. স্বপ্নে নিজেকে অনেক উঁচু কোনো যায়গা থেকে পড়ে যেতে দেখা:

৮. কোনো গোরস্থান বা পরিত্যক্ত যায়গা, অথবা কোনো মরুভূমির সড়কে হাটাচলা করতে দেখা:

৯. বিশেষ আকৃতির মানুষ দেখা: যেমন: অনেক লম্বা, খুবই খাটো, খুব কালো কুচকুচে।

১০. জ্বিন-ভুত দেখা:

ঘুম ব্যতীত অন্য সময়ের লক্ষণ:

১. দীর্ঘ মাথাব্যথা: (চোখ, কান, দাঁত ইত্যাদি সমস্যার কারণে নয়, এমনিই)।

২. ইবাদত বিমুখতা: নামাজ, তিলাওয়াত, যিকির আযকারে আগ্রহ উঠে যাওয়া। মোটকথা, দিনদিন আল্লাহর থেকে দূরে সরে যাওয়া।

৩. মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকা: কিছুতেই মন না বসা।

৪. ব্যাপক অলসতা: সবসময় অবসন্নতা ঘিরে রাখা।

৫. মৃগীরোগ:

৬. শরীরের কোনো অঙ্গে ব্যথা কিংবা বিকল হয়ে যাওয়া: ডাক্তাররা যেখানে সমস্যা খুঁজে পেতে বা চিকিৎসা করতে অপারগ হচ্ছে।


কোন কোন অবস্থায় জ্বিন মানুষের শরীরে ঢুকতে পারে

খারাপ জ্বিন সর্বাবস্থায় আপনার ওপর আক্রমণ করতে পারে না। শয়তানের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। সবসময় আপনাকে বশ করতে পারে না। তবে আক্রান্ত হয়ে গেলে হইছে কাম…।

খবিস জ্বিন ৪ অবস্থায় মানুষের ভেতর ঢুকতে পারে।

১. খুব ভীত অবস্থায় থাকলে:

২. খুব রাগান্বিত অবস্থায় থাকলে:

৩. খুব উদাসীন অবস্থায় থাকলে:

৪. কুপ্রবৃত্তির গোলামী করা অবস্থায়: (মানে যখন কোনো খারাপ কাজ করছে এই অবস্থায়)।


বাড়ি থেকে জ্বিন তাড়ানোর পদ্ধতি

কোনো বাড়িতে জ্বিনের উৎপাত থাকলে তাড়ানোর জন্য বেশ কয়েকটি বৈধ পদ্ধতি রয়েছে:

প্রথম পদ্ধতি:

আপনি আরো দুজন লোক সাথে নিয়ে ওই বাড়িতে যাবেন, তারপর জোরে জোরে কয়েকবার বলবেন:

أُنَاشِدُكُمْ بِالْعَهْدِ الَّذِيْ أَخَذَهُ عَلَيْكُمْ سُلَيْمَانَ أَنْ تَرْحَلُوْا وَتَخْرُجُوْا مِنْ بَيْتِنَا أُنَاشِدُكُمُ اللّٰهُ أَنْ تَخْرُجُوْا وَلَا تُؤْذُوْا أحَدًا

অর্থাৎ: “আমি তোমাদের সেই ওয়াদার জন্য আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি, যে ওয়াদা সুলাইমান (আঃ) তোমাদের থেকে নিয়েছেন। আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, তোমরা বের হয়ে যাও এবং কারো ক্ষতি করো না।”

পরপর তিনদিন এরকম করবেন, আরবিও বলবেন, বাংলাও বলবেন। ইনশাআল্লাহ! জ্বিনেরা বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। এরপরেও যদি কোনো সমস্যা টের পান, তাহলে দ্বিতীয় পদ্ধতি অনুসরণ করুন।

দ্বিতীয় পদ্ধতি:

একটা বড় পাত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি নিন, এরপর পানির কাছে মুখ নিয়ে নিচের দু’আটি পড়ুন:

بِسْمِ اللّٰهِ ، اَمْسِيْنَا بِا للّٰهِ الَّذِيْ لَيْسَ مِنْهُ شَيْءٌ مُمْتَنِعٌ ، وَبِعِزَّةِ اللّٰهِ الَّتِيْ لَا تُرَامُ وَلَا تُضَامُ، وَبِسُلْطَانِ اللّٰهِ الْمُنِيْعِ نَحْتَجِبُ، وَبِأَسْمَائِهِ الْحُسْنٰى كُلِّهَا عَائِذٌ مِّنَ الْأَبَالِسَةِ ، وَمِنْ شَرِّ شَيَاطِيِنِ الْإِنْسِ وَالْجِنِّ ، وَمِنْ شَرِّ كُلَّ مُعْلِنٌ اَوْ مُسِرٌّ ، وَمِنْ شَرِّ مَا يَخْرُجُ بِاللَّيْلِ وَيَكْمُنُ بِالنَّهَارِ ، ويَكْمُنُ بِاللَّيْلِ و يَخْرُجُ بِالنَّهَارِ ، وَمِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ وَذَرَأَ وَبَرَأَ ، وَمِنْ شَرِّ اِبْلِيْسِ وَجُنُوْدِهِ ، وَمِنْ شَرِّ دَابَّةٍ اَنْتَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهَا إِنَّ رَبِّيْ عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ ، اَعُوْ بِمَا اسْتَعَاذَ بِهٖ مُوْسٰى ، وَعِيْسٰى ، وَاِبْرَاهِيْمَ الَّذِيْ وَفّٰى ، وَمِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ وَذَرَأَ وَبَرَأَ ، وَمِنْ شَرِّ اِبْلِيْسِ وَجُنُوْدِهِ ، وَمِنْ شَرِّ مَا يَبْغٰي …

এরপর আউযুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ সহ (২৩ পারায়) সূরা সাফফাতের প্রথম ১০ আয়াত পড়ুন:

أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ – بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ وَالصَّافَّاتِ صَفًّا (1) فَالزَّاجِرَاتِ زَجْرًا (2) فَالتَّالِيَاتِ ذِكْرًا (3) إِنَّ إِلَٰهَكُمْ لَوَاحِدٌ (4) رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَرَبُّ الْمَشَارِقِ (5) إِنَّا زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِزِينَةٍ الْكَوَاكِبِ (6) وَحِفْظًا مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ مَارِدٍ (7) لَا يَسَّمَّعُونَ إِلَى الْمَلَإِ الْأَعْلَىٰ وَيُقْذَفُونَ مِنْ كُلِّ جَانِبٍ (8) دُحُورًا وَلَهُمْ عَذَابٌ وَاصِبٌ (9) إِلَّا مَنْ خَطِفَ الْخَطْفَةَ فَأَتْبَعَهُ شِهَابٌ ثَاقِبٌ (10)

সব পড়ে পানিতে ফুঁ দিবেন। এবং ওই পানি পুরো বাড়ীতে ছিটিয়ে দিবেন। ইনশাআল্লাহ আর কোনো সমস্যা থাকবে না। বাড়িতে দুষ্ট জ্বিন থাকলে চলে যাবে। (উপরিউক্ত পদ্ধতি ইবনুল কায়্যিম (রহ.) উনার ﺍﻟﻮﺍﺑﻞ ﺍﻟﺼﻴﺐ ﻓﻲ ﺍﻟﻜﻠﻢ ﺍﻟﻄﻴﺐ কিতাবে বর্ণনা করেছেন, বিন বায (রহ.) থেকেও এই আলোচনা পাওয়া যায়। আমার মনে হয়, উপরের পদ্ধতি অনুসরণ করে পানি ছিটানোর পর একবার আযান দেওয়া উত্তম…)

তৃতীয় (সুন্নাহসম্মত) পদ্ধতি:

এই পদ্ধতিটি গত ২রা মার্চ মুন্সিগঞ্জের মাহফিলে সাইয়্যেদ আসজাদ মাদানী (দা.বা.) বয়ান করেছেন। কোনো বাড়িতে জ্বিনের উৎপাত থাকলে সেই বাড়িতে পরপর তিনদিন সূরা বাক্বারা তিলাওয়াত করতে হবে। আর নতুন বাড়ি করার পর যদি পরপর তিনদিন সূরা বাক্বারা তিলাওয়াত করা হয়, তাহলে আগে থেকে কোনো জ্বিন বা অন্য ক্ষতিকর মাখলুক থাকলে চলে যাবে। এর সমর্থনে হাদীসও আছে।

বাড়িতে জ্বিন থেকে বাঁচার জন্য কিছু বিষয়:

১. বাড়িতে ইসলামী পরিবেশ চালু রাখার চেষ্টা করা, বিশেষতঃ কোনো প্রাণীর ভাস্কর্য বা ছবি যেন ঘরে টাঙানো না থাকে। রাসূল (সাঃ) বলেছেন যে ঘরে কুকুর বা জীবজন্তুর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। ২. নফল – সুন্নাত নামাজ সম্ভব হলে ঘরে পড়বেন। আহলিয়া থাকলে বলবেন, যে ঘরে সবসময় নামাজ পড়া হয়, সেটা বাদে অন্যান্য ঘরেও যেন মাঝেমাঝে পড়ে। ৩. সম্ভব হলে প্রতিমাসে ১-২বার সূরা বাক্বারা পড়া। ৪. বিসমিল্লাহ বলে বাড়িতে প্রবেশ করা, বিসমিল্লাহ বলে দরজা – জানালা বন্ধ করা। ৫. টয়লেটের দরজা বন্ধ রাখা। আল্লাহ আমাদের হিফাজত করুক… আ-মীন।

Increase Your Business with Expert Digital Solutions!

Get Unlimited Facebook Ad Credit, Guaranteed SEO Rankings, & Professional Web Development – all under one roof at MahbubOsmane.com!

 14+ Years of Experience – Guaranteed SEO Rankings 800+ Satisfied Clients – Unlimited Facebook Ad Credit Proven Results, Maximum ROI – Professional Web Development

Contact us ( +8801716988953 WhatsApp ) today and take your business to the next level!  Visit: MahbubOsmane.com


জ্বিনে ধরা রোগীর চিকিৎসা পদ্ধতি (রুকইয়াহ শারিয়্যাহ)

জ্বিনে ধরা রোগীর চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে অনেকগুলো ব্যাপার থাকে, যেসব চিকিৎসককে খেয়াল রাখতে হয়।

প্রথম স্টেপ- চিকিৎসার প্রস্তুতি:

১. ঘরের পরিবেশ: ঘর টাঙানো বা সাজিয়ে রাখা কোনো জীবের ছবি এবং ভাস্কর্য থাকলে সরিয়ে ফেলতে হবে। যেন রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে। কোনো মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট থাকলে সরিয়ে ফেলতে হবে।

২. তাবিজ পরিহার: রোগীর সাথে কোনো তাবিজ থাকলে খুলে ফেলতে হবে। তাবিজ আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুলের প্রতিবন্ধক।

৩. অনৈসলামিক অবস্থা পরিহার: সেখানে উপস্থিত কেউ যেন অনৈসলামিক অবস্থায় না থাকে, সেটা খেয়াল রাখতে হবে। যেমন: কোনো পুরুষ স্বর্ণ পরে আছে, অথবা কোনো মহিলা বেপর্দা হয়ে আছে।

৪. ইসলামী দর্শন ব্যাখ্যা: রুগী এবং তার পরিবারকে এ বিষয়ে ইসলামী দর্শন সংক্ষেপে বলবেন, যেমন: “এই চিকিৎসায় আমার কোনো ক্ষমতা নাই, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তা’আলার। আল্লাহ তা’আলা কোরআন এর মাঝে শিফা (আরোগ্য) রেখেছেন, আর রাসূল (সাঃ) কোরআন দ্বারা চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন এজন্য আমরা রুকইয়াহ শারিয়্যাহ পারফর্ম করবো।” আর শিরকি ঝাড়ফুঁক বিষয়েও সতর্ক করবেন।

৫. লক্ষণ যাচাই: রুগী যদি শরীরের একাংশে আক্রান্ত হয় তাহলে নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রশ্ন করুন। সে স্বপ্নে কোনো প্রাণী দেখে কি না, দেখলে কয়টা প্রাণী দেখে, একই প্রাণী বারবার দেখে কি না। স্বপ্নে কোনো প্রাণী ধাওয়া করে কি না। বোবায় ধরে কি না। মোটকথা, জ্বিন আক্রান্তের যে লক্ষণগুলো (ঘুম সংক্রান্ত ও ঘুম ব্যতীত) বর্ণনা করা হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে প্রশ্ন করুন। যাতে ব্যাপারটা নিশ্চিত হওয়া যায়। যদি স্বপ্নে সে সবসময় দুইটা প্রাণীকে.. যেমন: দুইটা সাপকে ধাওয়া করতে দেখে, তাহলে বুঝতে হবে দুইটা জ্বিন আছে। যদি কোনো বিশেষ আকৃতির কোনো মানুষকে ক্রুশ পরিহিত অবস্থায় দেখে, তাহলে বুঝতে হবে খ্রিষ্টান জ্বিন। এসব প্রশ্ন করে অবস্থা সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা নিয়ে শুরু করবেন।

৬. পর্দার বিধান: রুগী মহিলা হলে রুগীকে সম্পূর্ণ পর্দাবৃত অবস্থায় থাকতে হবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় যদি কোনো মাহরাম পুরুষ রুকইয়াহ করে, তাহলে অতিরিক্ত ঝামেলা হবে না। সেখানে রুগীর কোনো মাহরাম যেন অবশ্যই উপস্থিত থাকে, যেমন: বাবা, ভাই অথবা স্বামী থাকতে পারে। এছাড়া সেখানে অন্য গাইরে মাহরাম কেউ যেন না থাকে। পর্দার বিধান যেন লঙ্ঘন না হয়, এব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।

৭. চিকিৎসকের প্রস্তুতি: চিকিৎসা করার পূর্বে ওযু করে নেওয়া উচিত। সম্ভব হলে দু’রাকাত সালাতুল হাজত পড়ে নিন। নইলে অন্তত: ইস্তিগফার -দরুদ পড়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে চিকিৎসা শুরু করুন।

দ্বিতীয় স্টেপ: চিকিৎসা (রুকইয়াহ)

রোগীর মাথায় হাত রেখে, উচ্চ আওয়াজে রুকইয়ার আয়াতগুলো তিলাওয়াত করুন। তবে যেহেতু সেখানে সিহর/যাদু বিষয়ক আয়াতও আছে তাই জ্বিনের ক্ষেত্রে সবগুলো আয়াত তিলাওয়াতের দরকার নেই।

জ্বিনের চিকিৎসার জন্য যেসব আয়াত পড়া যথেষ্ট:

১. সূরা আল-ফাতিহা

২. সূরা বাকারা ১-৫: الۤمۤ (1) ذَٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيهِ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ (2) الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ (3) وَالَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِن قَبْلِكَ وَبِالْآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ (4) أُولَٰئِكَ عَلَىٰ هُدًى مِّن رَّبِّهِمْ ۖ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ (5)

৩. সূরা বাকারা ১৬৩-১৬৪: وَإِلَٰهُكُمْ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ ۖ لَّا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَٰنُ الرَّحِيمُ (163) إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَالْفُلْكِ الَّتِي تَجْرِي فِي الْبَحْرِ بِمَا يَنفَعُ النَّاسَ وَمَا أَنزَلَ اللَّهُ مِنَ السَّمَاءِ مِن مَّاءٍ فَأَحْيَا بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَبَثَّ فِيهَا مِن كُلِّ دَابَّةٍ ۖ وَتَصْرِيفِ الرِّيَاحِ وَالسَّحَابِ الْمُسَخَّرِ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَعْقِلُونَ (164)

৪. সূরা বাকারা ২৫৫-২৫৭: اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ ۚ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ ۚ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ ۚ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ ۖ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا ۚ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ (255) لَا إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ ۖ قَد تَّبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّ ۚ فَمَن يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِن بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىٰ لَا انفِصَامَ لَهَا ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ (256) اللَّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا يُخْرِجُهُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ ۖ وَالَّذِينَ كَفَرُوا أَوْلِيَاؤُهُمُ الطَّاغُوتُ يُخْرِجُونَهُم مِّنَ النُّورِ إِلَى الظُّلُمَاتِ ۗ أُولَٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ (257)

৫. সূরা বাকারা ২৮৫-২৮৬: آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْهِ مِن رَّبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ ۚ كُلٌّ آمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّن رُّسُلِهِ ۚ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا ۖ غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ (285) لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا ۚ لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ ۗ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِن نَّسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا ۚ رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِنَا ۚ رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ ۖ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا ۚ أَنتَ مَوْلَانَا فَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ (286)

৬. সূরা আলে-ইমরান ১৮-১৯: شَهِدَ اللَّهُ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ وَالْمَلَائِكَةُ وَأُولُو الْعِلْمِ قَائِمًا بِالْقِسْطِ ۚ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ (18) إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ ۗ وَمَا اخْتَلَفَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ إِلَّا مِن بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْعِلْمُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ ۗ وَمَن يَكْفُرْ بِآيَاتِ اللَّهِ فَإِنَّ اللَّهَ سَرِيعُ الْحِسَابِ (19)

৭. সূরা আ’রাফ ৫৪-৫৬: إِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُهُ حَثِيثًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَاتٍ بِأَمْرِهِ ۗ أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ ۗ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ (54) ادْعُوا رَبَّكُمْ تَضَرُّعًا وَخُفْيَةً ۚ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ (55) وَلَا تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ بَعْدَ إِصْلَاحِهَا وَادْعُوهُ خَوْفًا وَطَمَعًا ۚ إِنَّ رَحْمَتَ اللَّهِ قَرِيبٌ مِّنَ الْمُحْسِنِينَ (56)

৮. সূরা মুমিনুন ১১৫-১১৮: أَفَحَسِبْتُمْ أَنَّمَا خَلَقْنَاكُمْ عَبَثًا وَأَنَّكُمْ إِلَيْنَا لَا تُرْجَعُونَ (115) فَتَعَالَى اللَّهُ الْمَلِكُ الْحَقُّ ۖ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ (116) وَمَن يَدْعُ مَعَ اللَّهِ إِلَٰهًا آخَرَ لَا بُرْهَانَ لَهُ بِهِ فَإِنَّمَا حِسَابُهُ عِندَ رَبِّهِ ۚ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الْكَافِرُونَ (117) وَقُل رَّبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ (118)

৯. সূরা সফফাত ১-১০: وَالصَّافَّاتِ صَفًّا (1) فَالزَّاجِرَاتِ زَجْرًا (2) فَالتَّالِيَاتِ ذِكْرًا (3) إِنَّ إِلَٰهَكُمْ لَوَاحِدٌ (4) رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَرَبُّ الْمَشَارِقِ (5) إِنَّا زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِزِينَةٍ الْكَوَاكِبِ (6) وَحِفْظًا مِّن كُلِّ شَيْطَانٍ مَّارِدٍ (7) لَّا يَسَّمَّعُونَ إِلَى الْمَلَإِ الْأَعْلَىٰ وَيُقْذَفُونَ مِن كُلِّ جَانِبٍ (8) دُحُورًا ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ وَاصِبٌ (9) إِلَّا مَنْ خَطِفَ الْخَطْفَةَ فَأَتْبَعَهُ شِهَابٌ ثَاقِبٌ (10)

১০. সূরা আহকাফ ২৯-৩২: وَإِذْ صَرَفْنَا إِلَيْكَ نَفَرًا مِّنَ الْجِنِّ يَسْتَمِعُونَ الْقُرْآنَ فَلَمَّا حَضَرُوهُ قَالُوا أَنصِتُوا ۖ فَلَمَّا قُضِيَ وَلَّوْا إِلَىٰ قَوْمِهِم مُّنذِرِينَ (29) قَالُوا يَا قَوْمَنَا إِنَّا سَمِعْنَا كِتَابًا أُنزِلَ مِن بَعْدِ مُوسَىٰ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ يَهْدِي إِلَى الْحَقِّ وَإِلَىٰ طَرِيقٍ مُّسْتَقِيمٍ (30) يَا قَوْمَنَا أَجِيبُوا دَاعِيَ اللَّهِ وَآمِنُوا بِهِ يَغْفِرْ لَكُم مِّن ذُنُوبِكُمْ وَيُجِرْكُم مِّنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ (31) وَمَن لَّا يُجِبْ دَاعِيَ اللَّهِ فَلَيْسَ بِمُعْجِزٍ فِي الْأَرْضِ وَلَيْسَ لَهُ مِن دُونِهِ أَوْلِيَاءُ ۚ أُولَٰئِكَ فِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ (32)

১১. সূরা আর-রহমান ৩৩-৩৬: يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ إِنِ اسْتَطَعْتُمْ أَن تَنفُذُوا مِنْ أَقْطَارِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ فَانفُذُوا ۚ لَا تَنفُذُونَ إِلَّا بِسُلْطَانٍ (33) فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (34) يُرْسَلُ عَلَيْكُمَا شُوَاظٌ مِّن نَّارٍ وَنُحَاسٌ فَلَا تَنتَصِرَانِ (35) فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (36)

১২. সূরা হাশর ২১-২৪: لَوْ أَنزَلْنَا هَٰذَا الْقُرْآنَ عَلَىٰ جَبَلٍ لَّرَأَيْتَهُ خَاشِعًا مُّتَصَدِّعًا مِّنْ خَشْيَةِ اللَّهِ ۚ وَتِلْكَ الْأَمْثَالُ نَضْرِبُهَا لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ (21) هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ ۖ هُوَ الرَّحْمَٰنُ الرَّحِيمُ (22) هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ ۚ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ (23) هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ ۖ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ ۚ يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ (24)

১৩. সূরা জ্বিন ১-৯: قُلْ أُوحِيَ إِلَيَّ أَنَّهُ اسْتَمَعَ نَفَرٌ مِّنَ الْجِنِّ فَقَالُوا إِنَّا سَمِعْنَا قُرْآنًا عَجَبًا (1) يَهْدِي إِلَى الرُّشْدِ فَآمَنَّا بِهِ ۖ وَلَن نُّشْرِكَ بِرَبِّنَا أَحَدًا (2) وَأَنَّهُ تَعَالَىٰ جَدُّ رَبِّنَا مَا اتَّخَذَ صَاحِبَةً وَلَا وَلَدًا (3) وَأَنَّهُ كَانَ يَقُولُ سَفِيهُنَا عَلَى اللَّهِ شَطَطًا (4) وَأَنَّا ظَنَنَّا أَن لَّن تَقُولَ الْإِنسُ وَالْجِنُّ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا (5) وَأَنَّهُ كَانَ رِجَالٌ مِّنَ الْإِنسِ يَعُوذُونَ بِرِجَالٍ مِّنَ الْجِنِّ فَزَادُوهُمْ رَهَقًا (6) وَأَنَّهُمْ ظَنُّوا كَمَا ظَنَنتُمْ أَن لَّن يَبْعَثَ اللَّهُ أَحَدًا (7) وَأَنَّا لَمَسْنَا السَّمَاءَ فَوَجَدْنَاهَا مُلِئَتْ حَرَسًا شَدِيدًا وَشُهُبًا (8) وَأَنَّا كُنَّا نَقْعُدُ مِنْهَا مَقَاعِدَ لِلسَّمْعِ ۖ فَمَن يَسْتَمِعِ الْآنَ يَجِدْ لَهُ شِهَابًا رَّصَدًا (9)

১৪. সূরা ইখলাস: قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ (1) اللَّهُ الصَّمَدُ (2) لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ (3) وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ (4)

১৫. সূরা ফালাক: قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ (1) مِن شَرِّ مَا خَلَقَ (2) وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ (3) وَمِن شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ (4) وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ (5)

১৬. সূরা নাস: قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ (1) مَلِكِ النَّاسِ (2) إِلَٰهِ النَّاسِ (3) مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ (4) الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ (5) مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ (6)

পুরুষ হলে মাথায় হাত রেখে পড়বেন, গাইরে মাহরাম মহিলা হলে এমনিই জোর আওয়াজে পড়বেন। গাইরে মাহরামকে স্পর্শ করা হারাম। সম্পূর্ণ জিনে ধরা রুগীর ক্ষেত্রে সাধারণত শুয়ে থাকে, তখন রুগীর দুই হাত বুকের ওপর চেপে ধরে, অথবা মাথা চেপে ধরে কোরআন পড়তে পারেন। আর বেশ ছটফট করলে অন্য কাউকে ধরতে বলুন, আর একপার্শে বসে তিলাওয়াত করুন। মোটকথা, রুগীকে ধরে রেখে আয়াতগুলো তিলাওয়াত করবেন, তাহলে ইফেক্ট বেশি হবে। নাহলে অন্তত রুগীর কাছে বসে জোর আওয়াজে পড়বেন। এই রুকইয়ার প্রভাবে হয়তো শরীর থেকে জ্বিন চলে যাবে, অথবা শরীরে লুকিয়ে থাকলে কথা বলে উঠবে। যদি কোনো অঙ্গে লুকিয়ে থাকে, তখনও এটা সহ্য করতে পারবে না, জেগে উঠবে। তবে তিলাওয়াত করার সময় আপনি নিয়াত করবেন “যেন শরীর থেকে জ্বিন চলে যায়”। কেননা, রাসূল (সাঃ) বলেছেন- “শত্রুর সাথে সাক্ষাতের আশা করো না।” (বুখারী)। এজন্য জ্বিন বিদায় হওয়ার নিয়াত রাখবেন।

জ্বিন উপস্থিতির লক্ষণ এবং প্রশ্ন:

এগুলো পড়ার পর রোগীর মাঝে কিছু লক্ষণ খেয়াল করুন:

১. হাত দিয়ে চোখ মুখ ঢাকতে চেষ্টা করছে কিনা।

২. অথবা যদি খুব জোরে কেঁপে ওঠে।

৩. অথবা যদি চিৎকার দিয়ে ওঠে।

৪. কিংবা যদি ওর নাম ঠিকানা বলতে শুরু করে!! এসব দেখলে বুঝবেন, জ্বিন আছে ভেতরে। কথা বলবে কিছুক্ষণের ভেতরেই। আপনি ভীত হবেন না, মনে মনে আল্লাহর কাছে দু’আ করুন।

এরপর জ্বিনকে বেসিক কিছু প্রশ্ন করুন-

১. নাম কি? ধর্ম কি?

২. কেন এর ওপর আসর করেছ?

৩. তোমার সাথে এখানে কি আর কেউ আছে?

৪. কোনো যাদুকরের জন্য কাজ করো নাকি?

৫. শরীরের কোন অঙ্গে ঢুকে ছিলে? এসব কথা শুনে মোটামুটি বুঝতে পারবেন অবস্থা, এরপর আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে বুঝিয়ে সমঝিয়ে শরীর থেকে বিদায় করা।

জ্বিন যদি মুসলমান হয়:

তাহলে তাকে তারগিব-তারহিব এর মাধ্যমে বুঝাতে চেষ্টা করুন। মানে আখিরাতের আযাবের কথা বলে সতর্ক করুন, জান্নাতের পুরষ্কার মনে করিয়ে দিন। যে কোনো মুসলমানকে কষ্ট দিতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। (সূরা আহযাব ৫৮)। কাউকে অহেতুক কষ্ট দেওয়া উচিত না। চলে গেলে আল্লাহ প্রতিদান দিবেন। আসর করার কারণ বুঝে উপদেশ দিতে পারেন। যেমন, যদি বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে আসর করে (যেমন: পরি আসর করেছে পছন্দ করে তাই) এরকম ক্ষেত্রে বুঝাতে চেষ্টা করুন যে, এটা জায়েজ হচ্ছে না। ইসলাম এটার অনুমতি দেয় না। যদি কোনো কারণ ছাড়া হুদাই আসর করে, তাহলে বুঝান যে এটা উচিত হচ্ছে না। এতো তোমাকে কক্ষনো কষ্ট দেয়নি, তোমার কোনো ক্ষতি করেনি, তুমি কেন একে কষ্ট দিবে। বুঝিয়ে যাওয়ার জন্য রাজি করান। যদি ভুলে কিছু করার জন্য (যেমন, জ্বিনের গায়ে গরম পানি ফেলেছে, প্রসাব করেছে) এরকম কিছু হলে বুঝান। সে তোমাকে দেখতে পায়নি, অনিচ্ছাকৃতভাবে করেছে এটা। দেখতে পেলে কখনই এমন করতো না। তোমার উচিত হবে একে ছেড়ে দেওয়া।

চলে যাওয়ার ব্যাপারে রাজি হলে, নিচের কথাগুলো ওয়াদা করান- “আমি আল্লাহর নাম শপথ করছি, এখন এই শরীর থেকে চলে যাবো। আর কখনো আসবো না। পরবর্তীতে আর কোনো মুসলমানের ওপর আসর করবো না। এই ওয়াদা ভঙ্গ করলে আমার ওপর আল্লাহর লানত। আমি যা বললাম এব্যাপারে আল্লাহ সাক্ষী।” এরপর জিজ্ঞেস করুন কোন দিক দিয়ে বের হবে, সে বলতে পারে চোখ, পেট, বুক অথবা মাথার দিক দিয়ে বের হবে, কিন্তু আপনি তাঁকে মুখ, নাক, কান, হাত অথবা পা দিয়ে বের হতে বলুন। জ্বিন চলে যাওয়ার পর, আবার রুগীর ওপর রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়ে যাচাই করুন, আসলেই গেছে কি না। কারণ, জ্বিনেরা খুব বেশি মিথ্যা বলে।

জ্বিন যদি অমুসলিম হয়:

জ্বিন অমুসলিম হলে, প্রথমে তাকে ইসলামের সৌন্দর্য বর্ণনা করুন, ইসলাম গ্রহণ করার প্রস্তাব রাখুন। জেনে রাখা ভালো, অধিকাংশ ক্ষেত্রে জ্বিনেরা সহজেই ইসলাম গ্রহণ করে নেয়। যদি কোনোভাবে ইসলাম কবুল করাতে পারেন, তাহলে আল্লাহ আপনাকে অনেক প্রতিদান দিবেন। যদি ইসলাম কবুল করে, তাহলে আলহামদুলিল্লাহ! এরপর ভালোভাবে বুঝান যে, রুগীর কষ্ট হচ্ছে, কোনো ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেওয়া উচিত না। উপরের পয়েন্টটাই ফলো করুন। আর আল্লাহ না করুক, ইসলাম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বাধ্য করা যাবে না। তাঁকে ভবিষ্যতে এব্যাপারে আরো ভেবে দেখতে পরামর্শ দিবেন। এরপর শরীর থেকে চলে যেতে আদেশ করুন, বলুন রুগীর কষ্ট হচ্ছে। এটা ঠিক না। চলে গেলে তো আলহামদুলিল্লাহ! ওয়াদা নিয়ে ছেড়ে দিন।

আপোষে না যেতে চাইলে:

যদি ভালো কথায় না শোনে এবার জোর করে তাড়াতে হবে। তবে এখানে লক্ষণীয় হচ্ছে, এ ব্যাপারে পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলে মারতে যাবেন না। বিশেষতঃ রুগী বাচ্চা হলে চেষ্টা করবেন যেন ভালোয় ভালো বিদায় করাতে। অনেক জ্বিন আছে, মারার আগেই বের হয়ে যায়, মারা শেষে আবার আসে! অর্থাৎ মাইর পুরোটা রুগীর গায়ে লাগে। এজন্য এ ব্যাপারে সাবধান! তো আপনি প্রথমে তাঁকে সতর্ক করুন, যে চলে যাও নয়তো তোমাকে কোরআন আয়াত দিয়ে শাস্তি দেওয়া হবে, আর আখিরাতেও তুমি জাহান্নামে যাবে।

যদি না শোনে এবার থার্ড ডিগ্রীতে চলুন- আয়াতুল কুরসি, সূরা ইয়াসিন, সাফফাত, দুখান, সূরা জ্বিন, হাশরের শেষ ৩ আয়াত, সূরা হুমাযাহ, সূরা আ’লা এসব এবং এরকম আরো যেসব আয়াতে জাহান্নাম, শয়তান অথবা অন্যান্য আযাবের কথা আছে এসব পড়ুন, আর ফু দিন। পড়ার সময় মাথায় হাত রেখে পড়লে বেশি ভালো। এসব আয়াতের কারণে জ্বিন কষ্ট পাবে, এবং চলে যাবে, ইনশাআল্লাহ! বিরল কিছু ক্ষেত্রে জ্বিন যেতে চায়না, সেক্ষেত্রে উপরের আয়াতগুলো পড়ে আঘাত করা যেতে পারে, তবে পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলে এদিকে যাওয়া ঠিক হবে না। খেয়াল রাখবেন, মানুষকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেওয়া যেমন হারাম, জ্বিনকে অহেতুক কষ্ট দেওয়া বা হত্যা করাও সমান পাপ। অতএব, কোন প্রকার জুলুম যেন না হয় সতর্ক থাকবেন, নয়তো পরে আপনি বিপদে পড়লে কিছু করার থাকবে না।

সংক্ষেপে এই হচ্ছে জ্বিন তাড়ানোর পদ্ধতি। মূল কথা হচ্ছে, আপনি উত্তেজিত না হয়ে, যদি ভালোয় ভালো রাজি করতে পারেন, ইসলাহি কথা বলে, সতর্ক করে, কিংবা পাম-পট্টি দিয়ে.. তাহলে আশা করা যায় ব্যাপারটা খুব সহজেই সমাধা করতে পারবেন।


রুকইয়ার চিকিৎসকের গুণাবলী

কোনো জ্বিনে ধরা রোগীর চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে অনেকগুলো ব্যাপার থাকে, যেসব চিকিৎসককে খেয়াল রাখতে হয়। যিনি চিকিৎসা করবেন তার কি কি গুণ থাকা উচিত:

১. বিশুদ্ধ আকিদা: শিরক-বিদআতমুক্ত পরিচ্ছন্ন ইসলামী আক্বীদার অনুসারী হওয়া।

২. মৌলিক ইবাদাতে যত্নবান: নামাজ-কালাম, মাহরাম-গাইরে মাহরাম এসব বিষয়ে যত্নবান হওয়া। হালাল-হারামের ব্যাপারে যত্নবান হওয়া, হারাম থেকে বেঁচে থাকা।

৩. আত্মিকভাবে দৃঢ়: অধিক পরিমাণে জিকির-আজকার, রোজা, তাহাজ্জুদ ইত্যাদির মাধ্যমে আত্মিকভাবে দৃঢ় হওয়া।

৪. কুরআনের উপর দৃঢ় বিশ্বাস: আল্লাহর কালাম যে জ্বিন-শয়তানের ওপর প্রভাব ফেলতে সক্ষম, এব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস (ইয়াক্বীন) রাখা।

৫. জ্বিন জাতি সম্পর্কে অবগত: জ্বিন জাতির অবস্থা তথা: প্রকারভেদ, জাতপাত, কাজকর্ম, সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, কিভাবে মানুষের ওপর আসর করে, কিভাবে কিভাবে বের হয়… ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত থাকা।

৬. জ্বিনদের ধোঁকাবাজি সম্পর্কে সতর্ক: জ্বিনদের মাঝে মিথ্যা বলার প্রবণতা খুবই বেশি! এজন্য জ্বিনদের স্বভাব, ধোঁকাবাজি, কূটকৌশলের ব্যাপারে সতর্ক থাকা। (যেমন: ইবনে তাইমিয়া (রহ.) এর ঘটনায়… জ্বিন বলেছিল আপনার কথা মেনে চলে যাচ্ছি। ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বললেন, না! তুমি আল্লাহ এবং রাসুল (সাঃ)-এর আনুগত্য করে চলে যাও। এখানে উনি এই কথা না বললে সম্ভাবনা ছিল, হয়তো উনার মৃত্যুর পর আবার জ্বিন ফিরে আসতো। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলের ঘটনায় যেমনটা আমরা দেখেছি!)

৭. রাসূল (সাঃ)-এর শিখিয়ে দেওয়া দু’আ সম্পর্কে যত্নশীল: ঘরে – মসজিদে ঢোকার দোয়া, বের হওয়ার দোয়া, কুকুর ডাকতে শুনলে দোয়া (আ’উযুবিল্লাহ পড়তে হয়) কাক ডাকতে শুনলে দোয়া, টয়লেটে ঢোকার-বের হবার দোয়া, এসবের ব্যাপারে যত্নশীল হওয়া। এজন্য বিশুদ্ধ এবং নির্ভরযোগ্য কোনো গ্রন্থের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।

৮. নিজের ব্যাপারে সতর্ক থাকা: কারণ, আপনি নিজেই দুর্বল হলে অন্যের ওপর ভর করা শয়তানকে শায়েস্তা করবেন কিভাবে? এজন্য খারাপ জ্বিন-শয়তান থেকে বাঁচার জন্য যা যা করণীয় আছে, সেসব গুরুত্ব সহকারে করা।

৯. কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী পন্থা পরিহার: জ্বিন ছাড়াতে গিয়ে কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী অবৈধ কোনো পন্থার অনুসরণ না করা। সম্পূর্ণ আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল (ভরসা) রাখা। যে, আল্লাহ অবশ্যই এই বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন। সমস্যার সমাধান করবেন।

১০. বিবাহিত পুরুষ হওয়া (ঐচ্ছিক): চিকিৎসক ব্যক্তি বিবাহিত পুরুষ হওয়া উচিত। আবশ্যক নয়, তবে রিকমেন্ডেড। আর হ্যাঁ! সমস্যা সমাধানে চিকিৎসককে অবশ্যই আন্তরিক হতে হবে, মনে রাখবেন এটাও একটা রোগ। ফিজিক্যাল না হলেও, স্পিরিচুয়াল। যাহোক, এই বিষয়গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। আল্লাহ আমাদের হিফাজত করুক…।


জ্বিন বিষয়ক বইয়ের তালিকা

কেউ যদি এই বিষয়ে পড়াশোনা করতে চায় তাহলে তার জন্য সাজেস্টেড কিছু বই এর নাম:

১. ইমাম সুয়ুতি (রহ.)-এর لقط المرجان في احكام الجان (আরবির চেয়ে বাংলা জ্বিন জাতির ইতিহাস বেশি ভালো)

২. ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-এর রিসালাতুল জ্বিন

৩. ইমাম নববী (রহ.) এর শরাহ সাথে রেখে মুসলিম শরিফের “কিতাবুত ত্বীব / চিকিৎসা অধ্যায়” দেখা যায়

৪. বুখারীর “বাদাউল খলক/ সৃষ্টির সূচনা” অধ্যায় দেখতে পারেন, সাথে ফাতহুল বারি রাখলে আরো ভালো

৫. ইবনে কাসির (রহ.) উনার তাফসীরে কিছু আলোচনা করেছেন এ বিষয়ে

৬. আ-কাম আল মারজান ফি গারাইবিল জান, লেখক: বদরুদ্দিন শিবলী হানাফী (রহ.)

৭. তালবীসে ইবলিস, লেখক: ইবনুল জাওযি (রহ.)

৮. ওয়াকায়াতুল ইনসান মিনাল জিন্নি ওয়াশ শাইত্বন, লেখক: শাইখ ওয়াহিদ বিন আব্দুস সালাম

৯. ইগাসাতুল লাহফান মিন মাসাইদিশ শাইত্বন, লেখক: ইবনুল কায়্যিম (রহ.)

১০. আলামুল জিন (এই নামে ৩জন লেখকের আলাদা আলাদা বই আছে)


জ্বিনের স্পর্শ থেকে মুক্তির শরিয়তসম্মত পদ্ধতি: বিস্তারিত আলোচনা ও গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা

জ্বিনের স্পর্শ বা জাদুর প্রভাব, যা সমাজে সিহর বা বানের নামে পরিচিত, এটি একটি গুরুতর সমস্যা যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে। এই ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ইসলাম শরিয়তসম্মত রুহানি চিকিৎসার উপর জোর দেয়। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে জ্বিন আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসার পদ্ধতি, এর সম্মুখীন হতে পারে এমন পরিস্থিতি এবং চিকিৎসা-পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শগুলো এখানে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।


রুকইয়াহ: জ্বিন তাড়ানোর শরিয়তসম্মত পদ্ধতি

রুকইয়াহ হল কোরআনের আয়াত ও সহিহ হাদিসের দোয়া দ্বারা চিকিৎসা করা। এটি জ্বিনের প্রভাব দূর করতে অত্যন্ত কার্যকর একটি পদ্ধতি।

১. প্রাথমিক রুকইয়াহ ও পর্যবেক্ষণ: রুকইয়াহ করার পর যদি রোগীর মাথা ঘোরা, দম বন্ধ হয়ে আসা, ঝটকা দিয়ে কেঁপে ওঠা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায় কিন্তু জ্বিন কথা না বলে, তাহলে তিনবার রুকইয়াহ করে দেখতে হবে। এরপর রোগীকে প্রতিদিন সূরা বাকারা, সূরা ইয়াসিন, সূরা দুখান, সূরা জ্বিন তিলাওয়াত করতে বা শুনতে বলতে হবে, অন্তত এক মাস। এরপর ফলাফল জানাতে বলুন।

২. জ্বিনের চিৎকার-চেঁচামেচি: রুকইয়াহ করার সময় জ্বিন অনেক সময় চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করতে পারে। এক্ষেত্রে ভয় না পেয়ে শান্ত থাকতে হবে এবং সূরা নিসার ৭৬ নং আয়াতসূরা আহযাবের ৬৮ নং আয়াত তিলাওয়াত করে ফুঁ দিতে হবে। এতে জ্বিন আঘাতপ্রাপ্ত হবে এবং আশা করা যায় থামবে।

সূরা নিসা, আয়াত ৭৬: الَّذِينَ آمَنُواْ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللّهِ وَالَّذِينَ كَفَرُواْ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ الطَّاغُوتِ فَقَاتِلُواْ أَوْلِيَاء الشَّيْطَانِ إِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيفًا

সূরা আহযাব, আয়াত ৬৮: رَبَّنَا آتِهِمْ ضِعْفَيْنِ مِنَ الْعَذَابِ وَالْعَنْهُمْ لَعْنًا كَبِيرًا

৩. ঘাড়ত্যাড়া জ্বিনের মোকাবেলা: কখনো কখনো অত্যন্ত খারাপ ও ঘাড়ত্যাড়া জ্বিনের মুখোমুখি হতে পারেন। এক্ষেত্রে প্রথমে তাকে সাবধান করতে হবে যে, সে যদি না যায় তাহলে কোরআনের আয়াত দ্বারা তাকে জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। যদি কথা না শোনে, তাহলে কিছু পানি নিয়ে তাতে সূরা ইয়াসিন, সূরা সফফাত, সূরা দুখান, সূরা জ্বিন পড়ে রোগীর ওপর ফুঁ দিতে হবে এবং পানি রোগীকে পান করাতে হবে। বারবার আয়াতুল কুরসি পড়েও রুকইয়াহ করা যেতে পারে। এতে জ্বিন খুব কষ্ট পায়। এরপর তাকে চলে যেতে নির্দেশ দিতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, জ্বিন যেতে না চাইলে সূরা আহযাব সহ্য করতে না পেরে মারা গেছে। অনেক আলেমের মতে, খারাপ জ্বিনের ক্ষেত্রে সূরা বাকারার রুকইয়াহ বেশি প্রসিদ্ধ।

৪. বাচ্চাদের রুকইয়াহ: বাচ্চাদের রুকইয়ার ক্ষেত্রে সর্বদা তাদের স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে রুকইয়ার আগে তাদের সাথে কিছু সময় কাটাতে হবে, যেন তারা আপনাকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারে। বিশেষ দ্রষ্টব্য: রুকইয়ার সময় কখনোই বাচ্চাদের প্রহার করবেন না। ইবনে তাইমিয়া (রহ.) সহ অনেক আলেম অত্যাচারী জ্বিনকে হত্যা করা জায়েজ ফতওয়া দিয়েছেন।

৫. রাগ নিয়ন্ত্রণ ও অহংকার পরিহার: জ্বিন আপনাকে রাগাতে বা গালিগালাজ করতে চেষ্টা করতে পারে। তখন ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং রাগান্বিত হওয়া যাবে না। জ্বিন হয়তো আপনার প্রশংসা করে বলবে যে, আপনি অনেক ভালো মানুষ বা বুজুর্গ। এসব শুনে অহংকারী হওয়া যাবে না। বরং বলতে হবে, “আমি আল্লাহর একজন সাধারণ বান্দা, তুই আল্লাহর বিধান মেনে এখান থেকে চলে যা!”

৬. জ্বিনের ধর্ম জানতে: যদি জ্বিনের ধর্ম জানতে চান, তাহলে রোগীর ওপর সূরা মায়েদার ৭২ নং আয়াত এবং সূরা তাওবার ৩০ নং আয়াত পড়ুন।

সূরা মায়েদা, আয়াত ৭২: لَقَدْ كَفَرَ الَّذِينَ قَالُواْ إِنَّ اللّهَ هُوَ الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ وَقَالَ الْمَسِيحُ يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ اعْبُدُواْ اللّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمْ إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِاللّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللّهُ عَلَيهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ

সূরা তাওবা, আয়াত ৩০: وَقَالَتِ الْيَهُودُ عُزَيْرٌ ابْنُ اللّهِ وَقَالَتْ النَّصَارَى الْمَسِيحُ ابْنُ اللّهِ ذَلِكَ قَوْلُهُم بِأَفْوَاهِهِمْ يُضَاهِؤُونَ قَوْلَ الَّذِينَ كَفَرُواْ مِن قَبْلُ قَاتَلَهُمُ اللّهُ أَنَّى يُؤْفَكُونَ

৭. জ্বিন চলে যেতে অস্বীকৃতি: কখনো জ্বিন চলে যেতে রাজি হয় কিন্তু বের হতে পারে না। এক্ষেত্রে তাকে সহায়তা করা উচিত। তখন রোগীর কানে আযান দিতে হবে, এরপর সূরা ইয়াসিন পুরোটা পড়তে হবে, তারপর আবার আযান দিতে হবে। ইনশাআল্লাহ সে চলে যাবে।

৮. জ্বিনের শর্ত: জ্বিন কখনো কিছু শর্ত দিতে পারে। যদি সেই শর্ত ইসলাম সমর্থিত হয়, যেমন: নামাজ-কালাম পড়া, পর্দা করা ইত্যাদি, তাহলে বলুন, “আল্লাহর বিধান হিসেবে মানতে রাজি আছি।” কিন্তু যদি শরিয়ত পরিপন্থী কিছু হয়, তাহলে তা মানবেন না; বরং তাকে শাস্তি দিন এসব বলার জন্য।

৯. জ্বিনের পলায়ন: জ্বিন যখন চলে যাওয়ার ওয়াদা করার সময় পালিয়ে যায়, তখন বারবার সূরা আর-রাহমানের ৩৩ থেকে ৩৬ নং আয়াত পড়তে হবে।

সূরা আর-রাহমান, আয়াত ৩৩-৩৬: يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ إِنِ اسْتَطَعْتُمْ أَن تَنفُذُوا مِنْ أَقْطَارِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ فَانفُذُوا لَا تَنفُذُونَ إِلَّا بِسُلْطَانٍ (33) فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (34) يُرْسَلُ عَلَيْكُمَا شُوَاظٌ مِّن نَّارٍ وَنُحَاسٌ فَلَا تَنتَصِرَانِ (35) فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (36)

১০. জ্বিনের উপস্থিতি নির্ণয়: অনেক সময় জ্বিন বোঝাবে যে সে রোগীকে ছেড়ে চলে গেছে, অথচ সে এখনো শরীরে আছে। এমনকি রোগীর মতো করেই কথা বলতে পারে। এই অবস্থায় যদি রোগীর মাথায় হাত রাখা হয়, তাহলে অস্বাভাবিক কাঁপুনি বোঝা যাবে। এছাড়াও ডাক্তাররা যেখানে পালস রেট চেক করেন, যেমন: হাত, শাহরগ ইত্যাদি স্থানে হাত রাখলে অস্বাভাবিক পালস রেট বোঝা যাবে। তখন আবার রুকইয়াহ করলে দেখবেন জ্বিন কথা বলতে শুরু করেছে।

১১. যাদুর প্রভাব: রুকইয়ার সময় যদি রোগী কোনো কারণ ছাড়াই কাঁদতে শুরু করে এবং বলে যে সে কান্না নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, তাহলে সম্ভবত তাকে যাদু করা হয়েছে। এবার সূরা আ’রাফের ১১৭-১২২ নং আয়াত, সূরা ইউনুসের ৮১-৮২ নং আয়াত এবং সূরা ত্ব-হা এর ৬৯ নং আয়াত পড়ে ফুঁ দিন।

সূরা আ’রাফ, আয়াত ১১৭-১২২: وَأَوْحَيْنَا إِلَى مُوسَى أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ (117) فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُواْ يَعْمَلُونَ (118) فَغُلِبُواْ هُنَالِكَ وَانقَلَبُواْ صَاغِرِينَ (119) وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِينَ (120) قَالُواْ آمَنَّا بِرِبِّ الْعَالَمِينَ (121) رَبِّ مُوسَى وَهَارُونَ (122)

সূরা ইউনুস, আয়াত ৮১-৮২: فَلَمَّا أَلْقَواْ قَالَ مُوسَى مَا جِئْتُم بِهِ السِّحْرُ إِنَّ اللّهَ سَيُبْطِلُهُ إِنَّ اللّهَ لاَ يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ (81) وَيُحِقُّ اللّهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ (82)

সূরা ত্ব-হা, আয়াত ৬৯: وَأَلْقِ مَا فِي يَمِينِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوا إِنَّمَا صَنَعُوا كَيْدُ سَاحِرٍ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتَى (69)

এই আয়াতগুলো কয়েকবার পড়ে ফুঁ দিন। যদি দেখেন কান্না বাড়ছে বা শরীরের কোথাও ব্যথা অনুভব করছে, তাহলে বুঝতে হবে সত্যিই যাদু করা হয়েছে। এমতাবস্থায় যাদুর জন্য রুকইয়াহ করতে হবে।


জ্বিন মারার বা পুড়িয়ে ফেলার নিয়ম

যদি কারো ওপর জ্বিনের আছর হয়, তার কানে ৭ বার আযান দিতে হবে। এরপর তার কানে সূরা ফাতিহা, সূরা নাস, সূরা ফালাক, আয়াতুল কুরসি, সূরা তারিক, সূরা হাশরের শেষ ৩ আয়াত, সূরা সফফাত ১ বার এবং সূরা জ্বিন ৭ বার পাঠ করে ফুঁ দিলে মানুষ যেমন আগুন থেকে পালিয়ে যায়, জ্বিনও তেমনি পালিয়ে যাবে অথবা পুড়ে যাবে।


চিকিৎসা পরবর্তী পরামর্শ

চিকিৎসা শেষে আক্রান্ত ব্যক্তিকে কিছু বিষয় মেনে চলতে বলতে হবে:

১. সর্বদা জামাতে নামাজ পড়া।

২. গানবাজনা, মুভি ইত্যাদি থেকে বেঁচে থাকা।

৩. ওযু করে এবং আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমাতে যাওয়া।

৪. কয়েক দিন পরপর বাসায় সূরা বাকারা তিলাওয়াত করা, বা অন্য কাউকে দিয়ে করানো। সম্ভব হলে সপ্তাহে একবার।

৫. সকালে সূরা ইয়াসিন এবং রাতে সূরা মুলক পড়া।

৬. “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা-শারীকালাহ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হ্‌ামদ, ওয়াহুওয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর” ফজরের পর ১০০ বার পড়া।

৭. রাতে একা একা না ঘুমানো।

৮. জ্বিনের ক্ষতি থেকে বাঁচতে যেসকল আমলের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো শিখিয়ে দিন।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: জ্বিনের সমস্যার ক্ষেত্রে শুধু রুকইয়াহ শুনলে, হয়তো প্রথমে সমস্যা কিছু কমবে কিন্তু সাধারণত পুরোপুরি ভালো হয় না। অনেকের ক্ষেত্রে সমস্যা আরও বাড়ে। এজন্য জ্বিনের রুকইয়ায় সেলফ রুকইয়াহ করতে নিরুৎসাহিত করা হয়। তাই জ্বিনের সমস্যার ক্ষেত্রে প্রথমে সরাসরি রুকইয়াহ করা উচিত, পরে অবস্থা বিবেচনা করে রুকইয়াহ শোনা যেতে পারে।


যাদুর বেসিক রুকইয়াহ

যাদু সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা ভবিষ্যতে করা হবে, তবে সাধারণ চিকিৎসা হিসেবে এক বোতল পানি নিয়ে সূরা আ’রাফ ১১৭-১২২, সূরা ইউনুস ৮১-৮২, সূরা ত্ব-হা ৬৯ আয়াতগুলো পড়ে ফুঁ দিতে হবে। এক সপ্তাহ সকাল-বিকাল এই পানি পান করতে হবে এবং গোসলের পানিতে মিশিয়ে গোসল করতে হবে। আর এক মাস প্রতিদিন কমপক্ষে ১-২ ঘণ্টা রুকইয়াহ শুনতে হবে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক সময় যেন তিন কুল (সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস) এর রুকইয়াহ শোনা হয়। রুকইয়ার পানি শেষ হয়ে গেলে শুদ্ধভাবে কোরআন পড়তে পারে এমন কেউ আয়াতগুলো পড়ে আবার নতুন পানিতে ফুঁ দিলেই হবে, এক্ষেত্রে পরহেজগার কেউ হলে আরও ভালো।

খেয়াল রাখার বিষয়: রুকইয়াহ করার সময় প্রথম কিছুদিন সমস্যা বাড়তে পারে, এতে ঘাবড়ে গিয়ে বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। পরে আস্তে আস্তে কমে আসবে। উপরের পদ্ধতিগুলো ধৈর্য ধরে অনুসরণ করুন, পাশাপাশি সকাল-সন্ধ্যার অন্যান্য সুন্নাত আমলগুলোও করতে থাকুন। আল্লাহ চাহেন তো, সিহরের সমস্যাগুলো একদম ভালো হয়ে যাবে।


জ্বিনের আছরের কিছু ঘটনা (শায়খ ওয়াহিদ বিন আব্দুস সালামের অভিজ্ঞতা থেকে)

১. বাথরুমে পড়ার কারণে আছর: এক মহিলাকে জ্বিন ধরেছিলো। রুকইয়াহ করার পর জ্বিন কথা বললো, কারণ মহিলা বাথরুমে তার ওপর পড়ে গিয়েছিল। সূরা সাফফাতের প্রথম থেকে পড়ার পর জ্বিন কষ্ট পেয়ে কাঁদতে লাগলো এবং চলে যাওয়ার ওয়াদা করলো। কিন্তু পরে আবার অস্বীকার করলে সূরা জ্বিন পড়ার পর সালাম জানিয়ে চলে গেল।

২. খ্রিষ্টান জ্বিনের ইসলাম গ্রহণ: একজন অসুস্থ মহিলার ওপর রুকইয়াহ করার পর জ্বিন কথা বললো। সে নিজেকে ‘মুহাম্মদ’ নামের মুসলমান জ্বিন হিসেবে পরিচয় দিল। পরে আরেক জ্বিন ‘সুবহি’ নামে নিজেকে খ্রিষ্টান বলে পরিচয় দিল এবং তার বয়স ১৮ বছর। সে ছিল একজন জাদুকরের সহকারী। তাকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিলে সে কবুল করে। সে অনুতপ্ত হয়ে জানতে চাইলো যে আল্লাহ তাকে মাফ করবেন কিনা, কারণ সে অনেককে কষ্ট দিয়েছে। শায়খ তাকে তাওবা করতে বললেন এবং নামাজ, অজু শেখার জন্য মুসলিম জ্বিনদের সাথে মেলামেশার পরামর্শ দিলেন। সে ওয়াদা করলো যে আর যাদুর কাজ করবে না এবং ইসলাম গ্রহণ করলো।

৩. পরীর ইসলাম গ্রহণ ও দুর্বলতা: এক মহিলার হাতে প্রচণ্ড ব্যথা ছিলো। রুকইয়ার পর এক পরী কথা বললো যার নাম ‘জাইনাব বিন আব্দুল উজুদ’ এবং সে মুসলমান। সে জানালো যে সূরা ইয়াসিন, সফফাত, দুখান, সূরা জ্বিন ও সূরা বাকারা পড়লে জ্বিন কষ্ট পায়। মহিলা শায়খের পরামর্শ মেনে চলার কারণে পরী খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিলো, বিশেষত কোরআন পড়লে তার খুব কষ্ট হতো। বিসমিল্লাহ বলে খাবার শুরু করার কারণে সে মহিলার সাথে খেতে পারতো না। পরী শয়তান ও জ্বিনের পার্থক্য বর্ণনা করে এবং মুখ দিয়ে বেরিয়ে যায়।

৪. জ্বিনের মায়ের ইসলাম গ্রহণ: একজন অল্পবয়সী মেয়েকে জ্বিন ধরেছিলো। রুকইয়ার আগে মেয়েটির বাসা থেকে ছবি সরাতে এবং হিজাব পরাতে বলা হলো। রুকইয়াহ শুরু করার আগেই এক মহিলা জ্বিন (পরী) কথা বললো। তার নাম নাজওয়া এবং সে মুসলমান। তার মা ফাতিমাও একজন জ্বিন, যার বয়স ৪০ বছর। শায়খ জ্বিনের মাকে আল্লাহর আযাবের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে চলে যেতে বললেন। সে ৪ জন মানুষকে আছর করেছিলো। শায়খ তাকে পাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে এবং তাওবা করে নফল নামাজ পড়ার নিয়ম শিখিয়ে দিলেন। এরপর সে ওয়াদা করে চলে গেল। নাজওয়াও বিয়ে করে ইবাদত করার পরামর্শ নিয়ে ওয়াদা করে চলে গেল।

৫. লোহিত সাগরের জ্বিন: একজন লোককে একটি মেয়ে জ্বিন বিরক্ত করতো। সে নিজেকে ‘স্টেথিরিয়স’ নামের এক বিশেষ প্রজাতির জ্বিন বলে পরিচয় দিল যারা পানিতে থাকে। সে লোহিত সাগরে বাস করতো। জ্বিনটি আছর করেছিলো কারণ লোকটি ২০ বছর বয়সে তাকে অহেতুক মেরেছিল। তবে পরে তাকে পছন্দ হয়ে যাওয়ায় সে তার সাথে থাকতো। শায়খের দাওয়াত পেয়ে সে ইসলাম গ্রহণ করে এবং চলে যায়।

৬. রুকইয়াহ বিরোধী জ্বিন: এক হাইস্কুল শিক্ষক শায়খের একটি প্রোগ্রাম থেকে ফিরছিলেন। পথে এক ছেলেকে দেখতে পেলেন যে বেলকনি থেকে লাফ দিতে চাচ্ছিলো। তাকে জ্বিন ধরেছিলো। জ্বিনটি শায়খ ওয়াহিদকে ঘৃণা করতো কারণ তিনি কোরআন দিয়ে জ্বিনের চিকিৎসা করেন এবং মানুষকেও শেখান। জ্বিনটি স্বীকার করলো যে শায়খের লেকচারের সময় ১৫ জন জ্বিন উপস্থিত ছিলো। এরপর সে কালিমা পড়ে ইসলাম গ্রহণ করলো এবং নিয়মিত মসজিদে এসে ইসলাম সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করলো।

৭. পাদ্রী জ্বিনের ইসলাম গ্রহণ: এক অসুস্থ মহিলার স্বামী তাকে শায়খের কাছে নিয়ে আসে। রুকইয়াহ করার পর এক ভারি কণ্ঠস্বর কথা বললো। সে নিজেকে ‘ইয়ুহান্না’ নামের খ্রিষ্টান জ্বিন বলে পরিচয় দিল এবং জানালো যে সে এই মুসলিম মহিলার ওপর প্রতিশোধ নিতে এসেছে কারণ তার ছেলে মুসলমান হয়ে গেছে। জ্বিনটি খ্রিষ্টান জ্বিনদের চার্চের পাদ্রী ছিলো। শায়খ তাকে ইসলাম সম্পর্কে বোঝালেন এবং জ্বিন কোরআন শুনতে চাইলো। শায়খ সূরা মায়েদার ৮২-৮৫ আয়াত পাঠ করে শোনালেন। আয়াতগুলো শুনে জ্বিন কাঁদতে লাগলো এবং বললো, “কোরআন সত্য! আপনি সত্য বলছেন…” দীর্ঘ আলোচনার পর সেই পাদ্রী জ্বিনটিও মুসলমান হয়ে গেল। আলহামদুলিল্লাহ! এরপর সে তার ছেলেকে ডেকে নিয়ে চলে গেল।

রাত্রিতে জ্বিনের সমস্যা এবং লাভার জিন: শরিয়তসম্মত প্রতিকার ও গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা

জ্বিন বা শয়তানের উপদ্রব মানুষের জীবনে নানাভাবে অশান্তি নিয়ে আসে। এর মধ্যে রাতের বেলায় শারীরিক বা যৌন নির্যাতন এবং ‘লাভার জিন’ বা প্রেমিক জ্বিনের আছর অন্যতম। এই সমস্যাগুলো আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক ও বিব্রতকর হতে পারে। অনেকেই লোকলজ্জার ভয়ে এসব বিষয় প্রকাশ করতে পারেন না। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে এই সমস্যাগুলোর কারণ, লক্ষণ এবং শরিয়তসম্মত প্রতিকার নিয়ে এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।


রাত্রিতে জ্বিনের সমস্যা: লক্ষণ ও প্রতিকার

অনেক সময় জ্বিন বা জ্বিন দ্বারা প্রভাবিত যাদুর কারণে রাতে ঘুমের মধ্যে অথবা বিছানায় গা ছোঁয়ানোর পরেই মানুষ শারীরিকভাবে, বিশেষত যৌনভাবে, আক্রান্ত হতে পারে। পুরুষদের তুলনায় মহিলা রোগীদের মধ্যে এই ধরনের সমস্যা বেশি দেখা গেলেও পুরুষদের ক্ষেত্রেও এটি বিরল নয়।

লক্ষণসমূহ:

  • ঘুমের সময় অনুভব করা যে পাশে বা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কেউ শুয়ে আছে অথবা স্পর্শ করছে।
  • স্বপ্নে ধস্তাধস্তি করা, একপর্যায়ে শক্তি হারিয়ে ফেলা এবং চারপাশ অন্ধকার হয়ে যাওয়া।
  • ঘুম ভাঙার পর শরীরে ব্যথা-যন্ত্রণা অনুভূত হওয়া, যেমনটা বাস্তবে কোনো মানুষ নির্যাতন করলে হতো।
  • সকালে ঘুম থেকে উঠে মাতালের মতো অনুভব করা এবং বিভিন্ন অঙ্গে ব্যথা অনুভব করা।

এই ধরনের আক্রমণের শিকার রোগীরা মানসিক ও শারীরিকভাবে অত্যন্ত ভেঙে পড়েন। তাই তাদের প্রতি পরিবারের সদস্যদের মানসিক সমর্থন অত্যন্ত জরুরি। মনে রাখতে হবে, স্বপ্ন বা ঘুমের মাঝে এমন অভিজ্ঞতা মানেই এই নয় যে, ব্যক্তি সত্যিই যৌনকর্মে লিপ্ত হয়েছে। এটি একটি আধ্যাত্মিক আক্রমণ। মিথ্যা তিরস্কার বা নেতিবাচক ধারণা রোগীর জীবনকে আরও কঠিন করে তুলতে পারে। সঠিক রুকইয়াহ ও আল্লাহর অনুগ্রহে দ্রুত এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

প্রতিকার ও গুরুত্বপূর্ণ আমলসমূহ:

১. ঘরের পবিত্রতা: প্রথমেই ঘর থেকে সকল প্রকার আল্লাহর অবাধ্যতার সরঞ্জাম যেমন: টেলিভিশন, রেডিও, টেপরেকর্ডার, ছবি, পুতুল, মূর্তি (শোপিস) ইত্যাদি সরিয়ে ফেলুন। যদি পুরো বাসা ঠিক করা সম্ভব না হয়, তাহলে অন্তত নিজের ব্যক্তিগত ঘরকে এসব থেকে পবিত্র করুন।

২. সালাত ও দোয়ার নিয়মিততা: সালাত ও দোয়ায় কোনো প্রকার অবহেলা করবেন না। বিশেষ করে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা ও ঘুমের আগের মাসনুন আমলগুলো অবশ্যই করবেন। মেয়েদের পিরিয়ডের সময়েও এসব আমল বাদ দেওয়া যাবে না। নামাজ পড়া না গেলেও নামাজের সময় হলে সেই ওয়াক্তের যিকর-আযকারগুলো কয়েক মিনিট সময় নিয়ে আদায় করে ফেলুন।

৩. শত্রুর উপর জয়ী হওয়ার দোয়া: যখন এই ধরনের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে, যেমন রাতে ঘুমানোর আগে, রাতে হুট করে ঘুম ভেঙে গেলে অথবা শয়তান যখন আক্রমণ করবে, তখন শত্রুর উপর জয়ী হওয়ার জন্য যেসব দোয়া আছে, সেগুলো বারবার পড়ুন।

**হাদিসে বর্ণিত একটি দোয়া (মুসলিম শরিফ):**
**اللَّهُمَّ مُنْزِلَ الْكِتَابِ ، سَرِيعَ الْحِسَابِ ، مُجْرِيَ السَّحَابِ ، هَازِمَ الأَحْزَابِ ، اهْزِمْهُمْ وَزَلْزِلْهُمْ**
(হে আল্লাহ! কিতাব অবতীর্ণকারী, দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী, মেঘমালা পরিচালনাকারী, শত্রুবাহিনীকে পরাস্তকারী! তুমি তাদেরকে পরাজিত করো এবং কাঁপিয়ে দাও।)

৪. রুকইয়ার গোসল ও ওযু: ঘুমানোর আগে সম্ভব হলে রুকইয়ার গোসল করে নিন। এটি উপকারী হবে ইনশাআল্লাহ। সম্ভব না হলে অন্তত ওযু করে নিন। এক্ষেত্রে ওযুর পানিতে কিছু আয়াত পড়ে ফুঁ দিলে আরও ভালো, যেমন আয়াতুল কুরসি এবং তিন কুল (সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস) পড়তে পারেন।

৫. রুকইয়ার তেল ব্যবহার: রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়ে অলিভ অয়েলে ফুঁ দিয়ে রাতে ঘুমের আগে সারা গায়ে মালিশ করুন (৭ দিনের ডিটক্স রুকইয়ার মতো)।

৬. রুকইয়াহ যিনা শোনা: প্রতিদিন ঘুমের আগে অথবা অন্তত সন্ধ্যার পর কোনো সময়ে “রুকইয়াহ যিনা” শুনুন। এটি অনেক উপকারী হবে ইনশাআল্লাহ।

৭. তাহাজ্জুদের সালাত: শয়তান যখনই এমন করবে, আপনার উচিত হবে সাথে সাথে নামাজের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা। শয়তান কখনই চাইবে না আপনি সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করেন। রাতে ঘুম ভাঙলেই আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করুন, তখন শয়তান আর আপনাকে ঘুমের মধ্যে বিরক্ত করতে চাইবে না, বরং চাইবে যেন আপনি তাহাজ্জুদ আদায় না করে ঘুমিয়ে থাকেন।

৮. একা না ঘুমানো ও বিবাহ: রাতে একা একা না ঘুমানো ভালো। অনেকের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, যদি সাথে কেউ থাকে, তাহলে এই ধরনের ঘটনা কম ঘটে। আর আপনি যদি অবিবাহিত হন, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব বিয়ে করে ফেলা উচিত।

৯. অভিজ্ঞ রাকীর সাহায্য: সমস্যা জটিল হলে অভিজ্ঞ কারও সাহায্য নিন এবং নিয়মিত কোনো রুকইয়ার রুটিন অনুসরণ করুন। ৭ দিনের ডিটক্স রুকইয়াহ করে আপডেট জানান। এই অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে যতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়, সবগুলো পালন করুন। ইনশাআল্লাহ শত্রু শীঘ্রই পরাজিত হবে।


লাভার জিন বা প্রেমিক জ্বিন: বিস্তারিত আলোচনা

জ্বিন আল্লাহর এক সৃষ্টি। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

  • “তিনি জিনকে সৃষ্টি করেছেন ধোঁয়াবিহীন অগ্নিশিখা থেকে।” (সূরা আর-রাহমান, ১৫) خَلَقَ الْإِنسَانَ مِن صَلْصَالٍ كَالْفَخَّارِ (14) وَخَلَقَ الْجَانَّ مِن مَّارِجٍ مِّن نَّارٍ (15)
  • “এর পূর্বে উত্তপ্ত আগুন থেকে জিনকে সৃষ্টি করেছি।” (সূরা হিজর, ২৭) وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ مِن صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُونٍ (26) وَالْجَانَّ خَلَقْنَاهُ مِن قَبْلُ مِن نَّارِ السَّمُومِ (27)

আশিক জিন বা প্রেমিক জ্বিন হলো সেই জিন, যারা আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করে কুৎসিত ও আপত্তিকর উপায়ে তাকে ব্যবহার করে থাকে। এটি এক প্রকার জুলুম, এবং এ থেকে নিস্তার পেতে শরিয়তসম্মত পদ্ধতিতে রুকইয়াহ করা উচিত। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেছেন: “জিন যৌন ইচ্ছা পূরণ করার জন্য, খারাপ ইচ্ছা অথবা ভালোবাসা থেকে মানুষকে দখল করার চেষ্টা করে। এটা ফাহেশা (অশ্লীল) ও নিষিদ্ধ আচরণ, এমনকি যদি সেটা দুইজনের সম্মতিতে হয় তবুও। আর যদি জিন সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় এই কাজ করে, তাহলে এটা জুলুম।”

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন: “সেদিন তিনি তাদের সবাইকে একত্রিত করবেন, বলবেন, হে জিন সম্প্রদায়, তোমরা তো অনেক মানুষকেই গোমরাহ করেছো, মানুষের মধ্যে থেকে তাদের বন্ধুরা বলবে, হে আমাদের মালিক, আমরা একে অপরের দ্বারা দুনিয়ার জীবনে লাভ করেছিলাম, আর এভাবেই আমরা চূড়ান্ত সময়ে এসে হাজির হয়েছি, যা তুমি আমাদের জন্য নির্দিষ্ট করে রেখেছিলে; তিনি (আল্লাহ তায়ালা) বলবেন, তোমাদের ঠিকানা হচ্ছে জাহান্নাম, সেখানে তোমরা চিরকাল থাকবে। অবশ্য আল্লাহ তায়ালা যা কিছু চাইবেন (তা আলাদা); তোমার মালিক অবশ্যই প্রজ্ঞাময়, সম্যক অবহিত।” (সূরা আনআম, ১২৮) وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ جَمِيعًا يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ قَدِ اسْتَكْثَرْتُم مِّنَ الإِنسِ وَقَالَ أَوْلِيَآؤُهُم مِّنَ الإِنسِ رَبَّنَا اسْتَمْتَعَ بَعْضُنَا بِبَعْضٍ وَبَلَغْنَا أَجَلَنَا الَّذِي أَجَّلْتَ لَنَا قَالَ النَّارُ مَثْوَاكُمْ خَالِدِينَ فِيهَا إِلاَّ مَا شَاء اللّهُ إِنَّ رَبَّكَ حَكِيمٌ عَلِيمٌ (128)

লাভার জিনের প্রকারভেদ:

১. দেহপ্রেমী জিন: যারা ব্যক্তির দেহকে ভালোবাসে এবং দেহের প্রতি মোহাবিষ্ট হয়ে পড়ে। এরা মনে করে দেহের ওপর তাদের সবরকম অধিকার আছে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির দেহকে ভোগের বস্তু মনে করে। বিবাহিত হলে দাম্পত্য জীবনে জটিলতা সৃষ্টি করে তালাক পর্যন্ত নিয়ে যায়। অবিবাহিতদের বিয়েতে জটিলতা তৈরি করে।

২. নির্দিষ্ট অঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট জিন: যারা ব্যক্তির দেহের কোনো নির্দিষ্ট অঙ্গের (যেমন: চোখ, হাত, মুখ, চুল) প্রতি মুগ্ধ হয়ে পড়ে। এর কারণে নানান শারীরিক অসুস্থতা, বৈবাহিক জীবনে অশান্তি এবং অবিবাহিতদের বিয়েতে ঝামেলা সৃষ্টি হয়।

৩. বিকৃত রুচির জিন: এই প্রকারের জিন অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং এরা অশ্লীল কাজে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ব্যবহার করে। মানসিক ও শারীরিকভাবে অনেক টর্চার করে। কখনো পরিচিত বা অপরিচিত মানুষের রূপে এসে ধর্ষণ করে, যা স্বপ্নে বা জাগ্রত অবস্থায়ও হতে পারে। এরা সমকামিতা বা পশুর সাথে শারীরিক সম্পর্কেও জড়াতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে।

৪. পশুত্ব স্বভাবের জিন: জিনদের মধ্যেও কিছু জন্তু-জানোয়ার আছে যারা অন্যান্য প্রাণীদের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে চায়। এই উদ্দেশ্যে তারা আক্রান্ত ব্যক্তিকে ব্যবহার করে বিভিন্ন জন্তু-জানোয়ারের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে।

৫. পর্যটকারী জিন: এই প্রকারের জিন প্রতি রাতে আসে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য। সে ব্যক্তির শরীরে বসবাস করে না, বরং নিজের ইচ্ছামতো আসে এবং চলে যায়।

৬. অনিয়মিত আগমনকারী জিন: কিছু জিন অনেক দিন পরপর আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে আসে এবং শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। মাঝখানের সময়ে তারা নিজেদের পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ায় অথবা অন্য মানুষের সাথে কুকর্মে লিপ্ত থাকে।

৭. আকর্ষণ অনুভবকারী জিন: এই প্রকারের জিন আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে না, কিন্তু ব্যক্তির প্রতি এক ধরনের আকর্ষণ অনুভব করে। তারা আক্রান্ত ব্যক্তিকে দূর থেকে দেখে উপভোগ করার চেষ্টা করে এবং একসময় ব্যক্তিকে পজেস করার চেষ্টা করতে পারে।

৮. পেডোফাইল জিন: এই জিন বাচ্চাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাদেরকে সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করে এবং তাদের দেহে বসবাস শুরু করে।

অনেক সময় এই জিনগুলো দীর্ঘকাল ধরে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে বসবাস করে তাকে এমনভাবে প্রভাবিত করে যে, জিন ও মানুষের আচরণ আলাদা করা কঠিন হয়ে যায়। এরা আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে জীবনের শেষ পর্যন্ত থাকতে চায়, এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তি মারা গেলে অন্য ব্যক্তির ওপর আছর করে। ভয়ংকর বিষয় হলো, অনেক সময় আক্রান্ত ব্যক্তি এই শয়তান জিনকে ভালোবেসে ফেলে এবং পরিত্রাণ চায় না।


লাভার জিন আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণসমূহ

লাভার জিন আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সাধারণত যেসব লক্ষণ দেখা যায়:

  • দুঃখে নিজের প্রতি বিতশ্রদ্ধ হয়ে যাওয়া এবং নিজেকে সমাজ থেকে আলাদা মনে করা।
  • একা একা থাকতে ভালো লাগা, কোলাহল এবং সামাজিক মেলামেশা অপছন্দ হওয়া।
  • শারীরিকভাবে সুন্দর বা আকর্ষণীয় হওয়া সত্ত্বেও বিপরীত লিঙ্গের কারো প্রতি কোনো আকর্ষণ বা অনুভূতি না থাকা।
  • বিয়ের প্রস্তাব আসার পর প্রস্তাবদাতাকে শারীরিক বা চারিত্রিক দিক দিয়ে অযোগ্য মনে করে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া।
  • চর্মরোগ এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যা দেখা দেওয়া যা আক্রান্ত ব্যক্তির কষ্ট আরও বাড়িয়ে দেয়।
  • আক্রান্ত ব্যক্তি নিজে বুঝতে পারে যে তাকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে বা ধর্ষণ করা হচ্ছে, অথচ কিছুই করতে পারছে না।
  • হঠাৎ করে ব্যক্তির স্বভাব-চরিত্রে পরিবর্তন আসা, বিশেষ করে হারাম কাজের দিকে বেশি ঝুঁকে যাওয়া (যেমন: জুয়া, মদপান, ধূমপান, যিনা)।
  • পুরুষের মেয়েদের মতো সাজগোজ করা, তাদের মতো পোশাক পরা, লিঙ্গ পরিবর্তনে আগ্রহী হওয়া।
  • লাভার জিন সাধারণত বাচ্চাদের অপছন্দ করে, বিশেষ করে আক্রান্ত ব্যক্তির আত্মীয় বা পরিচিত বাচ্চাদের।
  • স্বামী-স্ত্রীর স্বাভাবিক সম্পর্কে বাধা দেওয়া, তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটানো।
  • অবিবাহিতদের বিয়েতে নানান জটিলতা তৈরি করা।
  • ব্যক্তিকে হতাশ ও একাকী করার মাধ্যমে নানান হারাম কাজে লিপ্ত করা।
  • ধীরে ধীরে ঈমানহারা করতে থাকা, যেমন: মহিলাদের ক্ষেত্রে হঠাৎ হিজাব ছেড়ে দেওয়া, পুরুষের ক্ষেত্রে দাড়ি শেভ করা।
  • গাইরে মাহরাম (যাদের সাথে বিয়ের সম্পর্ক জায়েজ) পুরুষ ও মহিলাদের সাথে কথা বলার অভ্যাস তৈরি করার মাধ্যমে ধীরে ধীরে লজ্জা উঠিয়ে দেওয়া।
  • যাদুকর জিনদের সাহায্য নিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে যাদু করা এবং অবস্থা আরও জটিল করে তোলার চেষ্টা করা।
  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে ব্যক্তির অবস্থা খারাপ করে দিয়ে তাকে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে অভ্যস্ত করে তোলা।
  • আক্রান্ত ব্যক্তির এমন সব জটিল অসুখ হওয়া যা মেডিকেল সায়েন্স ব্যাখ্যা করতে পারে না বা যার কোনো সমাধান নেই, অথবা এমন সব অসুখ যা ব্যক্তিকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায় (যেমন: ক্যান্সার)।
  • শরীরের বিভিন্ন জায়গাতে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাওয়া, গোপনাঙ্গ ফুলে ওঠা, লজ্জাস্থানের চারপাশে ব্যথা করা এবং অস্বস্তি হওয়া যা ওষুধে ভালো হয় না।
  • সারাদিন অথবা দিনের বেশিরভাগ সময়ে উত্তেজিত থাকা এবং লিঙ্গ থেকে যৌন উত্তেজক পদার্থ নির্গত হওয়া, যা মাস্টারবেশন বা যিনায় শেষ হয়।
  • নিজের কুরুচিপূর্ণ বা অশ্লীল ছবি অপরিচিত মানুষকে পাঠাতে উসকে দেওয়া।
  • বিবাহিত মহিলাদের স্বামীর সাথে শারীরিক সম্পর্কের সময় প্রশান্তি পেতে বাধা দেওয়া বা অনুভূতিহীন করে দেওয়া। পুরুষের ক্ষেত্রে স্ত্রীকে প্রশান্তি দেওয়া বা সন্তুষ্ট করা থেকে বিরত রাখা। কখনো শারীরিক সম্পর্কের সময় স্বামী বা স্ত্রীকে পুরোপুরি আছর করে নিজে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়া।
  • এনাল সেক্স বা পায়ুকামে লিপ্ত করানো।
  • অপ্রয়োজনীয় ‘শো অফ’ করে পুরুষ/মহিলাদের নিজের দিকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করা বা বদনজরে আক্রান্ত করা।
  • আক্রান্ত ব্যক্তিকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা এবং মৃত্যুর পরে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে আক্রমণ করা।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: জ্বিন চিহ্নিত করার আগে আক্রান্ত ব্যক্তির স্বভাব-চরিত্রের দিকে নজর দেওয়া উচিত। সে বয়ঃসন্ধিকালে আছে কিনা, পর্ন দেখে কিনা, শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের তীব্র ইচ্ছা আছে কিনা, ছোটবেলায় যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিল কিনা – এসব বিষয় খতিয়ে দেখতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে যে এগুলো ব্যক্তির চরিত্রগত সমস্যা নাকি জিন আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ।


লাভার জিনের চিকিৎসা

এই ধরনের জিন অত্যন্ত খারাপভাবে সমাজে অনৈতিক কাজ ও পাপাচার বৃদ্ধির মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করে। এরকম জিন দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তি চিহ্নিত করতে পারলে তার উচিত সমস্ত গুনাহের জন্য তাওবা করা, খালিস দিলে সবকিছুর জন্য মাফ চাওয়া এবং যাবতীয় খারাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা।

চিকিৎসা পদ্ধতি ও করণীয়:

১. আল্লাহর নৈকট্য লাভ: প্রতিনিয়ত আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করুন। প্রতিদিন কোরআন তিলাওয়াত করুন, সওয়াবের কাজ করুন, রোজা রাখুন, আল্লাহর জিকিরে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন এবং কথা বলার সময় জিহ্বাকে সংযত রাখুন। প্রতিনিয়ত আল্লাহর সাহায্য চান এবং বেশি বেশি তাওবা-ইস্তেগফার করুন।

২. রুকইয়াহ ও সেলফ রুকইয়াহ: কিছুদিন পরপরই সরাসরি রুকইয়াহ করান এবং অভিজ্ঞ রাকীর নির্দেশনায় নিজে নিজে প্রতিদিন সেলফ রুকইয়াহ করুন। নিয়মিত রুকইয়াহতে দৃঢ় থাকুন। রুকইয়ার আয়াত পড়া কালিজিরা তেল, অলিভ অয়েল, মধু ও পানি ব্যবহার করুন এবং ডিটক্স করুন।

৩. রুকইয়ার গোসল ও অডিও: রুকইয়ার গোসল করুন এবং রুকইয়ার অডিও শুনুন। এক্ষেত্রে সিহরের অডিও, আয়াতুল হারকের অডিও, রুকইয়াহ যিনার অডিও শোনা যেতে পারে। জিন সিরিজে আলোচিত রুকইয়াহ পরবর্তী নির্দেশনাগুলো খেয়াল রাখুন।

৪. কোরআন তিলাওয়াত: সূরা বাকারা, সূরা নূর, সূরা ইউসুফ তিলাওয়াত করুন। তিলাওয়াত করতে না পারলে অডিও শুনুন।

৫. জ্বিনের দুর্বলতা কাজে লাগানো: সম্ভব হলে জ্বিনের দুর্বলতা এবং তার অপছন্দের কাজগুলো খুঁজে বের করুন এবং সেই অপছন্দের কাজগুলো করুন (যদি শরিয়াহতে বাধা না থাকে)।

৬. বাসার পরিবেশ: বাসা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন এবং রুকইয়ার আয়াত পড়া পানি পুরো বাসায় ছিটিয়ে দিন বা স্প্রে করুন। বাসায় নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত করুন বা কোরআন তিলাওয়াতের অডিও প্লে করুন। হারাম কোনো কিছু যেন বাসায় না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন, যেমন: যেকোনো মূর্তি, ঝুলানো ছবি, বাসায় কুকুর রাখা, গান-বাজনা হওয়া এবং টিভিতে অশ্লীল অনুষ্ঠান দেখা।

৭. হিজামা ও সুন্নাত খাবার: কিছু নির্দিষ্ট সময় পরপর হিজামা করান। জমজমের পানি ও খেজুর খান।

৮. দাম্পত্য সম্পর্ক: বিবাহিতদের জন্য চিকিৎসার মূল বিষয় হলো স্বামী-স্ত্রীর ভূমিকা। একে অন্যের প্রতি রাগান্বিত না হয়ে বেশি বেশি ভালোবাসা এবং একে অন্যকে যত্ন নেওয়া ও আনন্দিত রাখার চেষ্টা করুন। সর্বোপরি বাসায় ভালোবাসাময় একটি পরিবেশ সৃষ্টি করুন এবং পরস্পরের দূরত্ব যথাসম্ভব কমিয়ে আনুন। স্ত্রী তার স্বামীর প্রতি আরও বেশি অনুগত হোন এবং আল্লাহর জন্য স্বামীকে সর্বাত্মক খুশি রাখার চেষ্টা করুন। স্বামীর উচিত স্ত্রীর প্রতি আরও বেশি ভালোবাসা দেখানো, স্ত্রীকে বোঝার চেষ্টা করা, স্ত্রীর প্রতি আরও মনোযোগী হওয়া এবং স্ত্রীকে খুশি রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করা।

৯. শয়তান অপছন্দ করে এমন আচরণ: পরিবারের বাচ্চাদের জড়িয়ে ধরুন, চুমু খান। স্বামীর সাথে শারীরিক সম্পর্কের সময় বৃদ্ধি করার চেষ্টা করুন এবং সে সময় পূর্ণ মনোযোগ দিন ও ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছান। এসব আচরণ শয়তান জিনরা অপছন্দ করে।

১০. আক্রান্ত স্থানে রুকইয়াহ: শরীরের কোথায় জিন আছে সেটা খুঁজে বের করে রুকইয়ার আয়াত পড়ে সেখানে ফুঁ দিন এবং হালকাভাবে থুথু ছিটিয়ে দিন। রুকইয়ার তেল ও পানিও আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করা যায়।

১১. জ্বিনকে পাত্তা না দেওয়া: যতই ভয় দেখাক, ঝামেলা করুক, বা বিভিন্ন কথা বলে একজনের প্রতি আরেকজনকে বিষিয়ে তোলার চেষ্টা করুক, জ্বিনকে কোনো প্রকার পাত্তা দেবেন না। এই জিনরা চায় আমরা তাদের গুরুত্ব দেই। তারা নিজেদেরকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে ভালোবাসে, এজন্য বিভিন্ন মিথ্যা কিচ্ছা-কাহিনী বর্ণনা করে।

১২. হতাশা পরিহার ও ব্যস্ত থাকা: হতাশ হবেন না। একা একা না থেকে সবসময়ই কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত থাকুন। পারতপক্ষে একা না ঘুমানো।

১৩. দৃষ্টি ও লজ্জাস্থানের হিফাজত: কারো দিকে বেশি প্রশংসার দৃষ্টিতে তাকাবেন না। আয়না দেখার সময় অবশ্যই দোয়া পড়ুন। কাপড় বদলানোর আগে বিসমিল্লাহ বলুন।

১৪. আয়নার ব্যবহার: বেশি বেশি আয়না দেখার অভ্যাস থাকলে রুকইয়ার পানি আয়নাতে ছিটিয়ে দেওয়া উচিত এবং আয়না সবসময় ঢেকে রাখা উচিত।

১৫. দোয়া: সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো দোয়া করা। দোয়া মুমিনের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। দিনের অধিকাংশ সময় দোয়া করুন। দোয়ার জন্য আলাদা সময় বের করে নিন। দুই হাত তুলে রবের নিকট দোয়া করুন, যেন আল্লাহ এই সমস্যা পুরোপুরি ভালো করে দেন এবং আপনাকে আল্লাহর উপর ভরসা করে ধৈর্য ধরার তৌফিক দেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন: “নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। আর নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে।” (সূরা ইনশিরাহ, ৫-৬) فَإِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا (5) إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا (6)

মনে রাখবেন, সমস্যার সমাধান আল্লাহর হাতেই। ধৈর্য ও ইমানের সাথে চিকিৎসা চালিয়ে গেলে ইনশাআল্লাহ মুক্তি মিলবে।

এই দীর্ঘ আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয় যে, জ্বিন ও যাদুর প্রভাব থেকে মুক্তির জন্য কোরআন ও সুন্নাহ নির্দেশিত রুকইয়াহ একটি শক্তিশালী মাধ্যম। এর সফল প্রয়োগের জন্য ধৈর্য, আল্লাহর উপর ভরসা, এবং যথাযথ শরয়ী জ্ঞান অপরিহার্য।

সবশেষে বলে রাখা ভালো, এই জ্বিন সিরিজ লিখতে গিয়ে Abdullah Al Mahmud ভাই আবু নাদের (লন্ডনের একজন রাকী) মৌলিকভাবে দুটি বইয়ের সহায়তা নিয়েছেন: প্রথমত: ইমাম সুয়ুতির لقط المرجان في احكام الجان এটা মদীনা পাবলিকেশন্স থেকে জ্বিন জাতির ইতিহাস নামে অনূদিত হয়েছে। আর অপরটি হচ্ছে মিসরের শাইখ ওয়াহিদ এর লিখা وقاية الانسان من الجن والشيطان এটার অনুবাদ হয়নি। চিকিৎসার পদ্ধতিগুলো সাধারণত শেষোক্ত বই থেকে নেওয়া। আর হাদীসের ক্ষেত্রে ইসলাম ওয়েব / জাওয়ামিউল কালিম থেকে আরবী কিতাবের সহায়তা নেওয়া হয়েছে।

আমাদের সকলের উচিত কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে জ্বিনদের বিষয়ে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা এবং তাদের ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় আমল করা। আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকল বিপদাপদ থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

✍️ মুল লিখেছেন: আবু নাদের (লন্ডনের একজন রাকী) অনুবাদকঃ Abdullah Al Mahmud, এই পোস্টটি এডিট করেছেনঃ মাহবুব ওসমানী


মাহবুব ওসমানী — একজন ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক এবং IslamiDawahCenter.com এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি কুরআন ও সহীহ হাদীসভিত্তিক বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 

To learn more, comment below or message us on wa.me/+966549485900 or  wa.me/+8801716988953 or call us at +44-73801-27019. Email at hi@islamidawahcenter.com

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন।