ভূমিকা:


khilafah – খিলাফাহ (خِلَافَةٌ) হলো এমন একটি ইসলামী শাসনব্যবস্থা যেখানে কুরআন ও হাদিসের আলোকে সমাজ পরিচালিত হয়। এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর সাহাবায়ে কিরাম কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রকৃত মডেল। বর্তমান সময়ে মুসলিম উম্মাহর অন্যতম আলোচিত এবং কাঙ্ক্ষিত বিষয় হলো খিলাফাহ রাষ্ট্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা। এই প্রবন্ধে কোরআন, হাদীস ও ইসলামী ফিকহের আলোকে খিলাফাহর গুরুত্ব, বৈশিষ্ট্য ও কাঠামো বিশ্লেষণ করা হলো।


খিলাফাহ সম্পর্কে কোরআনের দৃষ্টিভঙ্গি

আল্লাহ তা‘আলা মুসলমানদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব তথা খিলাফাহ দানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন:

১. আল্লাহর খিলাফত প্রদানের প্রতিশ্রুতি:
وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ مِنكُمْ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِى ٱلْأَرْضِ كَمَا ٱسْتَخْلَفَ ٱلَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ…
– سورة النور، ٥٥
উচ্চারণ: Waʿada Allāhu alladhīna āmanū minkum wa ʿamilū aṣ-ṣāliḥāti layastakhlifannahum fī al-arḍi kamā istakhlafa alladhīna min qablihim…
অর্থ: “আল্লাহ তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করে, তাদেরকে পৃথিবীতে খিলাফতের সুযোগ দেবেন, যেমন করে তাদের পূর্ববর্তীদেরকে খিলাফতের সুযোগ দিয়েছিলেন…”
(সূরা নূর, ২৪:৫৫)


২. মানবজাতিকে খলিফা বানানো:
إِنِّي جَاعِلٌۭ فِى ٱلْأَرْضِ خَلِيفَةًۭ…
– سورة البقرة، ٣٠
উচ্চারণ: Innī jāʿilun fī al-arḍi khalīfah…
অর্থ: “আমি অবশ্যই পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধিকে (খলিফা) নিযুক্ত করতে যাচ্ছি।”
(সূরা বাকারা, ২:৩০)


খিলাফাহ সম্পর্কে সহীহ হাদীসসমূহ

১. নবুয়ত ও খিলাফাহের ধারাবাহিকতা:
تَكُونُ ٱلنُّبُوَّةُ فِيكُمْ مَا شَاءَ ٱللَّهُ أَنْ تَكُونَ، ثُمَّ يَرْفَعُهَا ٱللَّهُ إِذَا شَاءَ أَنْ يَرْفَعَهَا، ثُمَّ تَكُونُ خِلَافَةً عَلَىٰ مِنْهَاجِ ٱلنُّبُوَّةِ…
– رواه أحمد (رقم: ٢٢৮৯)
উচ্চারণ: Takūnu an-nubuwwatu fīkum mā shāʾa Allāhu an takūn, thumma yarfaʿuhā Allāhu idhā shāʾa an yarfaʿahā, thumma takūnu khilāfatan ʿalā minhāj an-nubuwwah…
অর্থ: “তোমাদের মধ্যে নবুয়ত থাকবে যতদিন আল্লাহ চান, তারপর তা উঠিয়ে নেবেন। এরপর খিলাফাহ হবে নবুয়তের পথ অনুসারে…”
(মুসনাদ আহমাদ: ২২৮৯)


২. চার খলিফার খিলাফত:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ ٱلْخُلَفَاءِ ٱلرَّاشِدِينَ ٱلْمَهْدِيِّينَ…
– رواه أبو داود (٤٦০٧), الترمذي (٢٦٧৬)
উচ্চারণ: ʿAlaykum bisunnatī wa sunnati al-khulafāʾi ar-rāshidīn al-mahdiyyīn…
অর্থ: “তোমরা অবশ্যই আমার সুন্নাহ এবং আমার সৎপথপ্রাপ্ত খলিফাগণের সুন্নাহ মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো।”
(আবু দাউদ: ৪৬০৭, তিরমিযী: ২৬৭৬)


খিলাফাহ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য ও কাঠামো

১. কুরআন ও সুন্নাহই হবে সর্বোচ্চ আইন:
খিলাফাহ রাষ্ট্রে সংবিধান, বিচারব্যবস্থা ও নীতিনির্ধারণ হবে কুরআন ও হাদীসের আলোকে।

২. খলিফা জনগণের প্রতিনিধি:
খলিফা জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হবেন এবং তার দায়িত্ব হবে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা ও শরীয়াহ বাস্তবায়ন।

৩. শূরা (পরামর্শমূলক) ব্যবস্থা:
وَأَمْرُهُمْ شُورَىٰ بَيْنَهُمْ…
– سورة الشورى، ٣٨
উচ্চারণ: Wa amruhum shūrā baynahum…
অর্থ: “তাদের কাজ পরস্পরের পরামর্শের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়।”
(সূরা আশ-শূরা, ৪২:৩৮)

৪. জাযিয়া ও জাকাত আদায় ও বিতরণ:
খিলাফাহ রাষ্ট্রে জাকাত, জিযিয়া ও অন্যান্য শরঈ অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বাস্তবায়ন থাকবে।

৫. ইসলামী সেনাবাহিনী ও জিহাদের নীতি:
রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, ইসলাম ও মুসলমানদের রক্ষায় জিহাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।


খিলাফাহ রাষ্ট্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা

বর্তমান মুসলিম উম্মাহ বিভক্ত, দুর্বল ও উপনিবেশিক মানসিকতায় গ্রস্ত। একমাত্র খিলাফাহ রাষ্ট্রই পারে মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ করে তাদেরকে ইসলামের ছায়াতলে আনতে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেখানো পথেই এই রাষ্ট্র গঠন সম্ভব।


উপসংহার

খিলাফাহ একটি কেবল রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক ধারণা নয়; বরং তা ইসলামী সভ্যতার মেরুদণ্ড। এর মাধ্যমে কুরআন-সুন্নাহর বিধান সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়। অতএব, প্রতিটি মুসলমানের উচিত খিলাফাহ রাষ্ট্র গঠনের জন্য দোয়া করা, সচেতনতা সৃষ্টি করা ও শরঈ পথে প্রচেষ্টা চালানো।


রাইটার এবং পাবলিশার: মাহবুব ওসমানী, সোর্স: কুরআনুল কারীম, সহীহ হাদীস, ইসলামী ফিকহ কিতাবসমূহ, ওয়েবসাইট: https://islamidawahcenter.com

✍️ লিখেছেন:মাহবুব ওসমানী


মাহবুব ওসমানী — একজন ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক এবং IslamiDawahCenter.com এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি কুরআন ও সহীহ হাদীসভিত্তিক বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 

To learn more, comment below or message us on wa.me/+966549485900 or  wa.me/+8801716988953 or call us at +44-73801-27019. Email at hi@islamidawahcenter.com

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন।