শিশুদের ইসলামিক চিকিৎসা: রুকইয়াহ ও ঝাড়ফুঁক
Ruqyah of Children – শিশুদের ইসলামিক চিকিৎসা: রুকইয়াহ ও ঝাড়ফুঁক
শিশুদের শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় উদ্বিগ্ন বাবা-মায়েদের জন্য ইসলামিক চিকিৎসা পদ্ধতি রুকইয়াহ বা ঝাড়ফুঁক একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে। এর মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভের পাশাপাশি বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার আশা করা যায়।
বাচ্চা কারা এবং তাদের সাধারণ সমস্যাসমূহ
জন্মের পর থেকে যারা এখনো বালেগ হয়নি, তারাই মূলত বাচ্চা। শিশুদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা যায়। এর মধ্যে কিছু সমস্যা বেশ প্রচলিত, যেমন:
১. খাওয়া-দাওয়া করতে না চাওয়া।
২. অতিরিক্ত রাগ ও জিদ।
৩. কথা না শোনা, বেয়াদবি করা।
৪. পড়াশোনায় অনীহা।
৫. টিভি, কার্টুন, মোবাইল, গেম নিয়ে সারাদিন পড়ে থাকা।
৬. বয়সের তুলনায় কথা বলতে না পারা।
৭. বয়সের তুলনায় কম বোঝা।
৮. খাওয়া-দাওয়া ঠিক থাকার পরও স্বাস্থ্য খারাপ।
৯. বেশি কথা বলা কিন্তু কখন কী বলতে হবে বুঝতে না পারা।
১০. মারামারি করা।
১১. বড় হওয়ার পরও ঘুমের মধ্যে বিছানা নষ্ট করা (বিছানায় প্রস্রাব করা)।
১২. দুধের বাচ্চা মায়ের বুকের দুধ খেতে না চাওয়া, ঠেলে সরিয়ে দেওয়া, কান্নাকাটি করা।
১৩. রাতে ঘুমের মধ্যে ছটফট করা, চিৎকার দিয়ে জেগে উঠে কাঁদতে থাকা।
১৪. অকারণে ভয় পাওয়া, কিছু একটা দেখে সেদিকে ইশারা করা ও তাকিয়ে থাকা।
১৫. সময় সময় চেহারার রঙ পরিবর্তন হয়ে যাওয়া, চেনা না যাওয়া।
১৬. রেগে গেলে শরীরে অস্বাভাবিক শক্তি চলে আসা যা বয়সের সাথে মানানসই নয়।
১৭. অটিজমে আক্রান্ত হওয়া।
১৮. ক্যান্সার বা অন্যান্য কঠিন রোগ।
প্রথম ৭টি সমস্যা বেশিরভাগ বাচ্চার ক্ষেত্রেই দেখা যায় এবং এগুলোর জন্য অভিভাবকদের বিশেষ মনোযোগ প্রয়োজন। বাচ্চাদের সাথে অধিক সময় কাটানো, তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা, যুক্তিসঙ্গত চাহিদা পূরণ করা এবং অযৌক্তিক জিদে হার না মানা জরুরি। খাবারে বৈচিত্র্য আনা, পুষ্টিকর বিকল্প খাবার দেওয়া এবং বাইরের খাবার ঘরে তৈরি করে দেওয়ার মতো বিষয়গুলোও বিবেচনা করা যেতে পারে।
তবে, এই সমস্যাগুলো যদি হঠাৎ করে দেখা দেয় অথবা পরবর্তী সমস্যাগুলো (৮-১৮) কোনো বাচ্চার ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়, তাহলে নজরের রুকইয়াহ করা উচিত। ইনশাআল্লাহ এতে উপকার পাওয়া যাবে।
রুকইয়াহর পূর্বে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
রুকইয়াহ শুরু করার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখা অত্যন্ত জরুরি:
আক্বিকা
অনেক অভিভাবক বাচ্চার জন্মের পর আক্বিকা দিতে দেরি করেন, যা মোটেও ঠিক নয়। গর্ভাবস্থার জটিলতার জন্য যেমন প্রস্তুতি নেওয়া হয়, বাচ্চার আক্বিকার জন্যও সেভাবে প্রস্তুতি থাকা উচিত। এটি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি মাধ্যম। কেউ কেউ আক্বিকাকে সন্তানের দীর্ঘায়ু ও সুস্থতার জন্য সহায়কও বলেছেন। হাদিসের ভাবার্থ অনুযায়ী, শিশুর সুরক্ষার জন্য আকিকার গুরুত্ব রয়েছে।
মায়ের সমস্যা
বিশেষত ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, মায়ের সমস্যা বাচ্চাকে প্রভাবিত করে। যেমন, বুকের দুধ খাওয়া বাচ্চার স্বাস্থ্য অনেক সময় মায়ের খাদ্যাভ্যাসের ওপর নির্ভর করে। মায়ের পেটে সমস্যা হলে বাচ্চারও হতে পারে। একইভাবে, মায়ের যদি বদনজর, জ্বিন বা যাদু সংক্রান্ত সমস্যা থাকে, তাহলে তা বাচ্চাকে প্রভাবিত করতে পারে। কাজেই বাচ্চার রুকইয়াহ করার পাশাপাশি অভিভাবকদের নিজেদের সমস্যার ব্যাপারেও চিন্তা-ভাবনা করা উচিত।
কৃমি
বাচ্চার স্বাস্থ্য না বাড়ার অন্যতম কারণ কৃমি। ডাক্তারের পরামর্শে সময় মতো মা এবং বাচ্চা দুজনেরই কৃমির ওষুধ সেবন করা উচিত।
তাবিজ
অনেক গর্ভবতী মা ইচ্ছায় হোক বা চাপে পড়ে হোক গর্ভাবস্থায় তাবিজ ব্যবহার করে থাকেন। তাদেরকে বলা হয় এই তাবিজ বাচ্চার যেন কোনো ক্ষতি না হয় তার জন্য। এটি অনেকটা এই বিশ্বাসের নামান্তর যে, আল্লাহ তায়ালা বাচ্চার জন্য যথেষ্ট নন (নাউযুবিল্লাহ)। জন্মের আগেই বাচ্চার পেছনে শয়তান লাগানোর একটি বড় ষড়যন্ত্র এই তাবিজ। দেখা যায়, একজন মা কোনো ধরনের প্যারানরমাল সমস্যায় আক্রান্ত ছিলেন না, কিন্তু এসব কুফরি/শিরকি তাবিজের প্রভাবে তিনি এবং তার সন্তান নানা ধরনের জটিলতায় আক্রান্ত হচ্ছেন। কাজেই রুকইয়াহ করার আগে তাবিজ অবশ্যই নষ্ট করে ফেলতে হবে।
যাদুর জিনিস বা তাবিজ নষ্ট করার নিয়ম
সন্দেহজনক কিছু বা কোনো তাবিজ যদি পাওয়া যায়, তাহলে তা নষ্ট করার জন্য একটি পাত্রে পানি নিন। তারপর সেই পানিতে নিম্নের আয়াতগুলো পড়ে ফুঁ দিন:
- সূরা আ’রাফ ১১৭-১২২ নং আয়াত: (১) وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ ۖ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ (২) فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ (৩) فَغُلِبُوا هُنَالِكَ وَانْقَلَبُوا صَاغِرِينَ (৪) وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِينَ (৫) قَالُوا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِينَ (৬) رَبِّ مُوسَىٰ وَهَارُونَ (৭) قَالَ فِرْعَوْنُ آمَنتُم بِهِ قَبْلَ أَنْ آذَنَ لَكُمْ ۖ إِنَّ هَٰذَا لَمَكْرٌ مَّكَرْتُمُوهُ فِي الْمَدِينَةِ لِتُخْرِجُوا مِنْهَا أَهْلَهَا ۖ فَسَوْفَ تَعْلَمُونَ (৮) لَأُقَطِّعَنَّ أَيْدِيَكُمْ وَأَرْجُلَكُم مِّنْ خِلَافٍ ثُمَّ لَأُصَلِّبَنَّكُمْ أَجْمَعِينَ (৯) قَالُوا إِنَّا إِلَىٰ رَبِّنَا مُنقَلِبُونَ (১০) وَمَا تَنقِمُ مِنَّا إِلَّا أَنْ آمَنَّا بِآيَاتِ رَبِّنَا لَمَّا جَاءَتْنَا ۚ رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَتَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ
- সূরা ইউনুস ৮১-৮২ নং আয়াত: (১) فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَىٰ مَا جِئْتُم بِهِ السِّحْرُ ۖ إِنَّ اللَّهَ سَيُبْطِلُهُ ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ (২) وَيُحِقُّ اللَّهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ
- সূরা ত্বাহা ৬৯ নং আয়াত: وَأَلْقِ مَا فِي يَمِينِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوا ۖ إِنَّمَا صَنَعُوا كَيْدُ سَاحِرٍ ۖ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتَىٰ
- সূরা ফালাক্ব ৩ বার: بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ مِن شَرِّ مَا خَلَقَ وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ وَمِن شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ
- সূরা নাস ৩ বার: بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ مَلِكِ النَّاسِ إِلَٰهِ النَّاسِ مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ
করণীয়:
১. তাবিজ, পুতুল, কাগজ, জাদুকরের দেওয়া যেকোনো কিছু উপরের আয়াতগুলো পড়া পানিতে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখবেন। কাগজে লেখা থাকলে তা ঘষে মুছে ফেলার চেষ্টা করবেন। লেখা মোছার পর ছিঁড়ে অনেকগুলো টুকরো করবেন। তারপর শুকিয়ে পুড়িয়ে ফেলবেন। পোড়ানোর সময় নিঃশ্বাসের সাথে সেটার ধোঁয়া নেওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
২. তাবিজ খালি হাতে না ধরে গ্লাভস ব্যবহার করতে পারেন। তাবিজ ধরার পূর্বে এবং নষ্ট করার পুরোটা সময়ে ফালাক, নাস পড়বেন।
৩. তামা বা অন্য ধাতুর তাবিজ বা আংটিতে খোদাই করা লেখা থাকলে লেখাটা ঘষে মুছে ফেলবেন। ঘষে মুছতে না পারলে পুড়িয়ে হলেও লেখাটা মুছে ফেলা জরুরি। নিজে করতে না পারলে কোনো স্বর্ণকারের কাছে গিয়ে লেখাটা মুছে ফেলবেন।
৪. তাবিজে গিট দেওয়া থাকলে সাবধানে প্রতিটা গিট খুলবেন। কোনো পুতুল, মূর্তি, পাখি, মাছ ইত্যাদি পাওয়া গেলে সাবধানে খেয়াল করবেন এদের গায়ে কোনো পিন আছে কিনা। থাকলে প্রতিটা পিন খুলবেন। পিনগুলোও পানিতে ডুবিয়ে রাখবেন। জীবন্ত কিছু যেমন- পাখি পাওয়া গেলে তার ডানার নিচে এবং শরীরের প্রতিটা জায়গায় খুঁজে দেখবেন কোনো তাবিজ, পিন বা সন্দেহজনক কিছু আছে কিনা। থাকলে এগুলো সাবধানে খুলে নিয়ে পাখিকে তাবিজ নষ্টের পানি দিয়ে ভিজিয়ে ছেড়ে দিবেন। তাবিজের ভেতরে কাগজ ছাড়াও অন্যকিছু থাকতে পারে। তাবিজ খুলতে গেলে অনেক সময় খোলস ভেঙে বের করা লাগতে পারে। যাই থাকুক, ভাঙা টুকরোসহ সবটুকুই পানিতে ঢালবেন। একইভাবে জাদুকরের দেওয়া তেলপড়া, পানিপড়া ইত্যাদি জিনিসপত্র পানিতে ঢালবেন।
৫. ব্যবহৃত পানি ফেলার জন্য এবং তাবিজ পোড়ানোর জন্য, সাধারণত মানুষের যাতায়াত হয় না এমন কোনো জায়গা ঠিক করে নিন।
৬. কোনো জায়গায় তাবিজ রাখা আছে সন্দেহ হলে সেখানে পরপর তিনদিন তাবিজ নষ্টের পানিটা ছিটিয়ে দিন। কারো বাসার দেয়ালে, ফ্লোরে অথবা যেকোনো স্থানে তাবিজ আঁকা অথবা খোদাই করা থাকলে লেখাটা ঘষে মুছতে হবে। তারপর তাবিজ নষ্টের পানিটা ওখানে ছিটিয়ে দিতে হবে। অনেক সময় বাসা বানানোর সময় প্রতি কোণায় তাবিজ রেখে দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে এসব কোণায় তাবিজ নষ্টের পানিটা ছিটিয়ে দিবেন পরপর তিনদিন। আর দোয়া করবেন যেন আল্লাহ তাবিজ নষ্ট করে দেন।
৭. জ্যোতিষীর দেওয়া কোনো বিশেষ আংটি থাকলে তাবিজ নষ্টের পানিতে ডুবিয়ে রাখবেন। কিছুক্ষণ রেখে পাথরটা ভেঙে তারপর ফেলে দিবেন। জ্যোতিষীরা বিশ্বাস করে পাথরের ক্ষমতা আছে। তাই কোনোমতেই এই পাথর রেখে দেওয়া যাবে না।
৮. আপনি তাবিজ ব্যবহার করলে উপরোক্ত নিয়ম অনুযায়ী তাবিজ নষ্ট করবেন। তারপর তাবিজ ব্যবহার করার জন্য তাওবা করবেন।
ছবি
বাচ্চাদের ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার না করাই নিরাপদ। মূলত অহেতুক কোনো ছবি শেয়ার/তোলা থেকে বিরত থাকাই সাবধানতা।
বাচ্চাদের রুকইয়াহ করার পদ্ধতি
প্রথম ধাপ: ঘরের লোকদের নজরের জন্য
বাচ্চাদের রুকইয়াহ করার জন্য প্রথমে যে কাজটা করবেন তা হলো ঘরের সবার অযুর ব্যবহার করা পানি একটি পাত্রে জমা করবেন। তারপর গোসলের আগে সেই পানি বাচ্চার গায়ে ঢেলে দিবেন। এরপর ইচ্ছামতো যেভাবে গোসল করানোর করবেন। বাচ্চাদের অনেক সময় ঘরের লোকদেরই নজর লাগে। তাই এই ব্যবস্থা। আর যদি জানা থাকে বা অনুমান করতে পারে বাচ্চার ওপর কার নজর লেগেছে, তাহলে শুধু তার অযুর পানি নিবেন। এই পদ্ধতি একবার করাই যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ।
দ্বিতীয় ধাপ: আম রুকইয়াহ
প্রথম ধাপ পার করার পরও যদি তেমন উন্নতি চোখে না পড়ে তাহলে এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন। বাবুর মাথায় হাত রেখে এই দু’আগুলো পড়বেন এবং মাঝে মাঝে বাবুর গায়ে ফুঁ দিবেন, এভাবে কয়েকবার করবেন। বাবু যদি নিজেই পড়তে পারে তাহলে নিজের মাথায় বা বুকে হাত রেখেই পড়বে। অথবা পড়ার পর দু’হাতের তালুতে ফুঁ দিয়ে পুরো শরীরে হাত বুলিয়ে নিলেও হবে।
১. أُعِيْذُكُمْ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّةِ ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ (উ”ঈযুকুম বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মাহ। মিং কুল্লি শাইত্বা-নিও- ওয়াহা-ম্মাহ। ওয়ামিং কুল্লি “আঈনিল্লা-ম্মাহ।) রেফারেন্স: (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী)
২. بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللَّهُ يَشْفِيكَ، بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ (বিসমিল্লা-হি আরকীক। মিং কুল্লি শাইয়িই ইউ’যীক। মিং শাররি কুল্লি নাফসিন আও “আইনি হাসিদ। আল্লা-হু ইয়াশফীক। বিসমিল্লা-হি আরকীক।) রেফারেন্স: (মুসলিম, তিরমিযী)
৩. بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ، وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ، وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ (বিসমিল্লা-হি ইউবরীক। ওয়ামিং কুল্লি দা-ঈই ইয়াশফীক। ওয়ামিং শাররি হাসিদিন ইযা- হাসাদ। ওয়া শাররি কুল্লি যী “আঈন।) রেফারেন্স: (মুসলিম, তিরমিযী)
৪. اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبْ الْبَاسَ، اشْفِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا (আল্লা-হুম্মা রাব্বান না-স। আযহিবিল বা’স। ইশফি ওয়াআংতাশ শা-ফী। লা-শিফাআ ইল্লা-শিফাউক। শিফাআল লা-ইউগা-দিরু সাক্বামা-।) রেফারেন্স: (বুখারী, মুসলিম)
এরপর সূরা ফাতিহা এবং আয়াতুল কুরসি ১ বার। এবং সূরা ইখলাস, ফালাক, নাস ৩ বার পড়বেন এরপর বাবুকে ফুঁ দিবেন। চাইলে সূরা ফালাক নাস অনেকবার পুনরাবৃত্তি করতে পারেন। এটা আম রুকইয়াহ। সবধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি উপকারী।
তৃতীয় ধাপ: রুকইয়ার পানি ও তেল ব্যবহার
সমস্যা বেশি হলে উল্লেখিত পদ্ধতিতে রুকইয়া করা শেষে, এগুলো আরেকবার পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে প্রতিদিন কয়েকবার বাবুকে খাওয়াবেন এবং বালতির পানিতে ফু দিয়ে সেই পানি দিয়ে গোসল করাবেন। তবে বাথরুমে বসে এসব দু’আ/আয়াত পড়বেন না। বালতি বাইরে নিয়ে এসে পড়বেন। সমস্যা ভালো হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন করবেন এই দুটো কাজ। এছাড়া কোনো অঙ্গে ব্যথা থাকলে এসব দু’আ-কালাম পড়ে তেলে ফুঁ দিয়ে প্রতিদিন মালিশ করতে পারেন। উল্লেখিত সবগুলো দু’আ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হাদিস থেকে নেওয়া।
রুকইয়াহর ইফেক্ট
বাবুর রুকইয়াহ করলে অনেক সময় সাথে সাথে টয়লেট হতে পারে, বমি হতে পারে। এমন হলে ইনশাআল্লাহ দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে। আবার অনেক সময় জ্বর, সর্দি ইত্যাদি হতে পারে। মোট কথা রুকইয়াহ করার পর যদি কোনো অবস্থার অবনতি হয় তাহলে বুঝতে হবে রুকইয়াহ কাজ করা শুরু করেছে। তখন আরও ধৈর্যের সাথে যত্ন নিয়ে রুকইয়াহ চালিয়ে যেতে হবে পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। এভাবে কমপক্ষে ৭ দিন করা উচিত (দ্বিতীয় ও তৃতীয় নিয়মের রুকইয়ার ক্ষেত্রে)।
নোট:
১. যদি বুঝতে না পারেন বদনজরের সমস্যা কিনা তবুও বদনজরের রুকইয়াহ করতে পারেন। এর কোনো ক্ষতি নেই। যদি নজর সংক্রান্ত কোনো সমস্যা থাকে তাহলে ইনশাআল্লাহ চলে যাবে। আর যদি না থাকে তাহলে তো নেই-ই। এর কোনো সাইড ইফেক্ট নেই। ২. অন্যান্য রোগের জন্যও এই নিয়মে রুকইয়া করতে পারেন, ইনশাআল্লাহ উপকারী হবে। ৩. ডাক্তারি সমস্যার জন্য অবশ্যই এর পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
বয়স হয়ে যাওয়ার পরেও যারা বিছানা নষ্ট করে (বিছানায় প্রস্রাব করে)
তাদের ক্ষেত্রে পরামর্শ হলো, রাতে বিছানায় যাওয়ার কমপক্ষে এক ঘন্টা আগে রাতের খাবার শেষ করবেন। এরপর বিছানায় যাওয়ার আগে টয়লেট সেরে অজু করাবেন। এরপর ঘুমের আগের আমলগুলো করাবেন। যারা নিজেরা পড়তে পারে না তাদেরকে অন্য কেউ পড়ে ফুঁ দিবে। একইভাবে সকালে ও সন্ধ্যায় উল্লেখিত দু’আগুলো পড়ে ফুঁ দিবে। ইনশাআল্লাহ ধীরে ধীরে সমস্যা চলে যাবে।
মাসনুন আমল (সুন্নাহসম্মত আমল)
জাদু আক্রান্ত ব্যক্তিরা তো বটেই, তাদের সাথে আমাদের সবারই জাদু এবং জ্বিন-শয়তানের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর শিখিয়ে দেওয়া আমলগুলো যত্নসহকারে করা উচিত। এগুলোকে মাসনুন আমল অর্থাৎ সুন্নাহসম্মত আমল বলে। এসবের অসাধারণ সব উপকারিতার পাশাপাশি বড় যে লাভ রয়েছে, তা হচ্ছে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল বাড়ে। সব সুন্নাতই গুরুত্বপূর্ণ, আর সারাদিনের; বিশেষত সকাল-সন্ধ্যার ফজিলতপূর্ণ অনেক দু’আ ও যিকর হাদিসে আছে।
সকাল-সন্ধ্যার আমল
১. أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ (আ’উযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মা-তি, মিং-শাররি মা-খলাক্ব।) সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার পড়া। বিষ, যাদু এবং অন্যান্য ক্ষতি থেকে বাঁচতে। রেফারেন্স: (জামে তিরমিযী, হাদিস নং ৩৫৫৯)
২. بِسْمِ اللهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ العَلِيمُ (বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা-ইয়াদ্বুররু মা‘আসমিহী, শাইউং ফিলআরদ্বী ওয়ালা- ফিসসামা-ই, ওয়াহুওয়াস সামি’উল ‘আলীম।) সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার পড়া। সব ধরনের ক্ষতি এবং বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকতে। রেফারেন্স: (জামে তিরমিযী, হাদিস নং ৩৩৩৫)
৩. حَسْبِيَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ، عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ (সূরা তাওবাহ ১২৯ নং আয়াতের অংশ) যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় সাতবার এটি পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবেন। রেফারেন্স: (সুনানে আবি দাউদ)
৪. সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস: প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে পড়া। সব ধরনের অনিষ্ট থেকে হিফাজতের জন্য এটা রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর শিখানো আমল। রেফারেন্স: (সুনানে আবি দাউদ)
৫. لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ ، وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ ، لَهُ الْمُلْكُ ، وَلَهُ الْحَمْدُ ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা-শারীকালাহ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হ্ামদ, ওয়াহুওয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর।) প্রতিদিন সকালে ১০০বার পড়া। এর অনেক বেশি ফজিলত, এবং জ্বিন-শয়তানের ক্ষতি থেকে বাঁচতে এটা পরীক্ষিত আমল। (একশতবার না পারলে, অন্তত ফজর ও আসরের পর ১০বার করে পড়া।) রেফারেন্স: (বুখারী, মুসলিম, হাদিস নং ৪৮৫৭; আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)
Increase Your Business with Expert Digital Solutions!
Get Unlimited Facebook Ad Credit, Guaranteed SEO Rankings, & Professional Web Development – all under one roof at MahbubOsmane.com!
14+ Years of Experience – Guaranteed SEO Rankings 800+ Satisfied Clients – Unlimited Facebook Ad Credit Proven Results, Maximum ROI – Professional Web Development
Contact us ( +8801716988953 WhatsApp ) today and take your business to the next level! Visit: MahbubOsmane.com
অন্যান্য সময়ের আমল
১. সম্ভব হলে মদিনার আজওয়া খেজুরের ব্যবস্থা করা, না হয় যে কোনো আজওয়া খেজুরেও হবে। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি সাতটি আজওয়া খেজুর সকাল বেলায় আহার করবে সেদিন তাকে কোনো বিষ ও যাদু ক্ষতি করতে পারবে না। রেফারেন্স: (বুখারী)
ঘুমের আগের আমল
ক. অজু করে ঘুমানো, তাহলে ফিরিশতারা হিফাজতের জন্য দু’আ করতে থাকে। ডান কাত হয়ে ঘুমানো। এমনিতেও সর্বদা অজু অবস্থায় থাকা সুন্নাত। রেফারেন্স: (মু’জামুল আওসাত; সনদ হাসান-জায়্যিদ)
খ. শোয়ার পূর্বে কোনো কাপড় বা ঝাড়ু দিয়ে বিছানা ঝেড়ে নেওয়া। রেফারেন্স: (মুসলিম)
গ. আয়াতুল কুরসি পড়া। রেফারেন্স: (বুখারী) সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া। রেফারেন্স: (বুখারী)
ঘ. সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস পড়ে হাতের তালুতে ফুঁ দেওয়া, এরপর পুরো শরীরে হাত বুলিয়ে নেওয়া। রেফারেন্স: (বুখারী)
টয়লেটে ঢোকার পূর্বে দু’আ পড়া
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ (আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা, মিনাল খুবসি ওয়াল খবা-ইছ।) অর্থ: হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি খারাপ জ্বিন ও খারাপ পরী থেকে। রেফারেন্স: (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৩৭৫)
বিয়ের প্রথম রাতে স্ত্রীর কাছে গিয়ে পড়া
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ রেফারেন্স: (সুনানে আবি দাউদ ২২৪৩ এবং ইবনে মাযাহ ১৯০৮ দ্রষ্টব্য)
স্ত্রী সহবাসের পূর্বে দু’আ পড়া
بِسْمِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ، وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا (বিসমিল্লাহি আল্লা-হুম্মা জান্নিবনাশ শাইত্বা-না, ওয়া জান্নিবিশ্-শাইত্বানা মা-রযাকতানা।) রেফারেন্স: (বুখারী, হাদিস নং ৪৮৭০)
দৈনিক একবার হলেও মসজিদে প্রবেশের দু’আ পড়া
أَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ مِنْ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: মসজিদে প্রবেশের সময় কেউ এটা পড়লে শয়তান বলে, এই ব্যক্তি আজ সারাদিনের জন্য আমার থেকে রক্ষা পেয়ে গেল। রেফারেন্স: (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস নং ৩৯৩)
৭. বিসমিল্লাহ বলে দরজা-জানালা লাগানো। খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলা।
অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের জন্য বিশেষ রুকইয়াহ
অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের জন্য আল-আশফিয়া (The Collection of Cures) নামক ৭ দিনের একটি ডিটক্স প্রোগ্রাম অত্যন্ত ফলপ্রসূ। এটি শাইখ আদিল বিন তাহির মুকবিল হাফিযাহুল্লাহুর দেওয়া প্রেসক্রিপশন, যা জাদু, জ্বিন, বদনজর এবং অন্যান্য কঠিন শারীরিক ব্যাধির চিকিৎসাতে কার্যকর।
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
১. পানি: সাড়ে তিন থেকে চার লিটার। * জমজমের পানি হলে সবচেয়ে ভালো। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, এর মাঝে শিফা আছে। * নইলে বৃষ্টির পানি – আল্লাহ তা’আলা এটাকে বরকতময় বলেছেন। * এসব না পেলে সাধারণ পানি – রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাধারণ পানিও রুকইয়ার জন্য ব্যবহার করেছেন। (জমজম বা বৃষ্টির পানি অল্প থাকলে বরকতের জন্য সাধারণ পানির সাথে মিক্স করা যেতে পারে)
২. অলিভ অয়েল: কোরআনুল কারিমে যাইতুনের তেলকে বরকতময় বলা হয়েছে। ১০০ মিলি. হলে যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ। * সবচেয়ে ভালো হয় মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশের এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল হলে। * নইলে এমনি সাধারণ ভালো কোনো অলিভ অয়েল।
৩. মধু: ২৫০ গ্রাম। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, মধুর মাঝে মানুষের জন্য শিফা রয়েছে। * যথাসম্ভব পিওর মধু।
৪. কালোজিরা: ৫০ গ্রাম। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, কালোজিরা মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের শিফা। * ভালো মানের কালোজিরা, ব্যবহারের আগে সম্ভব হলে ময়লা ঝেড়ে ফেলা।
৫. তিলাওয়াতের জন্য কোরআন শরিফ: আল্লাহ তা’আলা বলেছেন- বিশ্বাসীদের জন্য কোরআনের মাঝে শিফা এবং রহমত রয়েছে।
প্রস্তুত প্রণালী ও ব্যবহার:
উপকরণগুলো হাতের কাছে রেখে নিম্নের আয়াতগুলো পড়ুন এবং সেগুলোতে ফুঁ দিন:
১. সূরা ফাতিহা – ৭বার
২. আয়াতুল কুরসি – ৭বার
৩. সূরা ইখলাস, ফালাক, নাস – সব তিনবার করে।
৪. সূরা বাক্বারা সম্পূর্ণ। (এক বসাতেই পুরোটা পড়ে শেষ করতে হবে এমন না, একবারে যতটুকু পারবেন পড়বেন, ফুঁ দিবেন। এরপর কোনো কাজ থাকলে সেটা শেষ করে এসে বাকিটা পড়বেন, প্রয়োজনে দুই-তিন দিনে প্রস্তুত করবেন, এরপর কোর্স শুরু করবেন। সমস্যা নাই।)
এসব পড়ুন আর মাঝে মাঝে পানি, অলিভ অয়েল, মধু ও কালোজিরায় ফুঁ দিন।
ব্যবহার পদ্ধতি:
১. প্রথম ৩ দিন: ঘুমের আগে মাথা থেকে পায়ের তালু পর্যন্ত, পুরো শরীরে রুকইয়া করা অলিভ অয়েল মাখবেন। ২. পরের ৪ দিন: একই রুটিন তবে ঘুমের আগে শরীরের যেসব জায়গায় ব্যথা আছে, শুধু সে জায়গাগুলোতে রুকইয়া করা অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন। ৩. প্রতিদিন: * আধা গ্লাস রুকইয়ার পানিতে এক চা চামচ মধু দিন। এর সাথে সাতটা কালোজিরা মিশিয়ে এটাকে গুলিয়ে খেয়ে ফেলুন। এটাকে শরবত না, বরং ঔষধ মনে করে খাবেন। * ঘুম থেকে উঠে সাবান দিয়ে ভালোভাবে গোসল করবেন, এবং গোসলের পানিতে এক গ্লাস রুকইয়ার পানি মিশিয়ে নিবেন। শীতকালে হালকা গরম পানি ব্যবহার করতে পারেন, কোনো সমস্যা নেই। * সকালে গোসলের পর আবার আধা গ্লাস রুকইয়ার পানিতে, ১ চামচ মধু এবং ৭টা কালোজিরা গুলিয়ে খেয়ে নিন।
এই কয়দিনে কী ঘটতে পারে?
১. প্রথম দিন হয়তো তেমন কিছুই অনুভব করবেন না। তবে কারো কারো প্রথম দিন থেকেই ইফেক্ট শুরু হয়। ২. দ্বিতীয় এবং তৃতীয়দিন সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। হয়তো অসুস্থ হয়ে পড়বেন, প্রচণ্ড দুর্বল লাগবে। অথবা পুরো শরীর বা বিভিন্ন অঙ্গ ব্যথা হয়ে থাকবে। ভারি ব্যায়াম করলে যেমন ব্যথা হয়, সেরকম হতে পারে। ৩. চতুর্থ দিন থেকে সমস্যা কমতে শুরু হবে ইনশাআল্লাহ, এবং ৭দিনের প্রোগ্রাম শেষ হতে হতে আল্লাহ চাহেন তো আপনি একদম ফ্রেশ হয়ে যাবেন। ৪. যদি (আল্লাহ না করুক) ৭ দিন পরেও আপনার যথেষ্ট উন্নতি দেখা না যায়, তাহলে আপনার উচিত হবে অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ নিয়ে লাগাতার কয়েক মাস “সর্বজনীন পূর্ণ রুকইয়াহ প্রোগ্রাম” অনুসরণ করা। ৫. আপনার উচিত হবে এই কয়দিন নিজের গুনাহ থেকে ক্ষমা চেয়ে ইস্তেগফার করতে থাকা। প্রতিদিনের মাসনুন আমলগুলো করা। আর বেশি বেশি দু’আ করা, যেন সপ্তাহ শেষে আপনি একদম সুস্থ হয়ে যান। ৬. এই কয়দিন চাইলে যেকোনো কারির রুকইয়াহ শুনতে পারেন। নিজে তিলাওয়াত করলে আরও ভালো, সম্ভব হলে রুকইয়ার নিয়াতে প্রতিদিন সূরা বাক্বারা তিলাওয়াত করুন / মনোযোগ দিয়ে শুনুন। ইনশাআল্লাহ অনেক উপকার হবে। ৭. এই রুটিন ফলো করার সময় একটি ডায়েরি বা নোটবুক রাখুন, খুব সংক্ষেপে আপনার অবস্থা নোট করুন। যেন প্রোগ্রাম শেষে সেটা আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।
পাশাপাশি ডাউনলোড পেইজের বিভিন্ন কারীদের সাধারণ রুকইয়াহ (১১ থেকে ২১ পর্যন্ত) থেকে যেকোনো একটা শোনাতে পারেন। একই সাথে সূরা আর-রাহমান শোনাবেন। যদি আপনি নিজে তেলাওয়াত করে শোনাতে পারেন তাহলে আরও ভাল। নাহলে অডিও ডাউনলোড করে নিন।
ডিটক্স শেষ হলে সাধারণ অসুস্থতার রুকইয়াহ করবেন। এর নিয়ম উপরের ২ এবং ৩নং পদ্ধতির মতোই। এভাবে রুকইয়াহ চালিয়ে যেতে থাকবেন। আল্লাহ চাইলে উপকার পাবেন।
শারীরিক অসুস্থতার জন্য রুকইয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি
১. এগুলো সরাসরি পড়ে রোগীকে ফুঁ দেওয়া, বিশেষত আক্রান্ত স্থানে ফুঁ দেওয়া।
২. রোগীর মাথায় হাত রেখে পড়া, অথবা ব্যথার জায়গায় হাত রেখে পড়া।
৩. এসব পড়ার পর কালোজিরার তেল বা অলিভ অয়েলের ওপর ফুঁ দিয়ে ব্যবহার করতে পারেন, মালিশ করতে পারেন।
৪. পুষ্টিকর কোনো খাদ্য, কালোজিরা, মধু, পানি, ভিটামিন অথবা ডাক্তারের দেওয়া ঔষধে এগুলো পড়ে ফুঁ দিয়ে খেতে পারেন।
৫. আর এর পাশাপাশি রুকইয়া শুনতে চাইলে “শাইখ হুযাইফি” রুকইয়া এবং সা’দ আল গামিদির আধাঘণ্টার রুকইয়া শুনতে পারেন। এসবের মাঝে অনেক অনেক দু’আ, আয়াতে শিফা আছে।
৬. আর রুকইয়ার গোসলও বিভিন্ন অসুখের জন্য খুব উপকারী। (গোসলের পানিতে হাত রেখে সাতবার করে দরুদ শরিফ, সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ইখলাস, ফালাক, নাস পড়া। সেই পানি দিয়ে গোসল করা।)
ডাক্তারের চিকিৎসা নেওয়ার পাশাপাশি পরপর কয়েকদিন উপরোক্ত এক বা একাধিক রুকইয়ার টিপস অনুসরণ করা। এর সাথে আল্লাহর কাছে তাহাজ্জুদ এবং নফল নামাজ পড়ে বেশি বেশি দু’আ করা। সাদাকা করা। মানসিক সমস্যার জন্য সূরা ইয়াসিন, সফফাত, দুখান, জ্বিন, তিনকুল – এসব তিলাওয়াত করা খুব উপকারী। এসব হয়তো তিলাওয়াত করেছেন আগেও, কিন্তু এমনি তিলাওয়াত করা আর রুকইয়াহ বা চিকিৎসার নিয়াতে তিলাওয়াত করার মাঝে পূর্ব-পশ্চিম ফারাক। তো, রোগীর ওপর এসব তিলাওয়াত করা। সমস্যা নিজের হলে, নিজে তিলাওয়াত করলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। পাশাপাশি রুকইয়ার গোসল করা যেতে পারে। নিদ্রাহীনতার চিকিৎসাতে এই সূরাগুলোর রুকইয়া আলহামদুলিল্লাহ খুব বেশি উপকারী। তিলাওয়াত করার দুর্বল বিকল্প হিসেবে শোনা যেতে পারে।
ক্যান্সার বা অন্য যে কোনো কঠিন রোগ থেকে আশ্রয় চেয়ে দু’আ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই দু’আ করতেন: اَللَّھُمَّ اِنِّیْ اَعُوْذُبِکَ مِنَ الْبَرَصِ وَالْجُنُوْنِ وَالْجُذَامِ وَسَیِّءِ الْاَسْقَامِ (আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা মিনাল বারাসি ওয়াল জুনুনি ওয়াল জুযা-মি ওয়া সায়্যিইল আসক্বা-ম।) অর্থ: হে আল্লাহ অবশ্যই আমি তোমার নিকট ধবল, উন্মাদ, কুষ্ঠরোগ এবং সকল প্রকার মারাত্মক ব্যাধি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। রেফারেন্স: (আবু দাউদ ২/৯৩, সহীহ তিরমিযী ৩/১৮৪; সহিহ নাসাঈ ৩/১১১৬)
সর্বশেষে একটি জরুরি কথা হলো, আপনি রুকইয়াহ করেন বা না করেন, আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দু’আ করবেন নিজের সন্তানের জন্য। নিজের কৃত পাপের জন্য তওবা ইস্তেগফার করবেন। সাধ্যমত দান-সদকা করবেন। ঘরে ইসলামিক পরিবেশ কায়েম করবেন আর নামাজ ও পর্দার দিকে বিশেষ মনোযোগ দিবেন। ইনশাআল্লাহ অনেক বিপদ-আপদ, রোগবালাই থেকে বেঁচে যাবেন। আল্লাহ আমাদের এসবের প্রতি যত্নবান হবার তাওফিক দেন। আমিন।
✍️ লিখেছেন:মাহবুব ওসমানী
মাহবুব ওসমানী — একজন ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক এবং IslamiDawahCenter.com এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি কুরআন ও সহীহ হাদীসভিত্তিক বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।To learn more, comment below or message us on wa.me/+966549485900 or wa.me/+8801716988953 or call us at +44-73801-27019. Email at hi@islamidawahcenter.com
আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন।
- আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে বিস্তারিত জানতে লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।
- আইডিসি মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।
- কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।
- ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।