Treatment of Evil Eye | বদনজরের ইসলামিক চিকিৎসা তথা রুকইয়াহ!

Treatment of Evil Eye | বদনজরের ইসলামিক চিকিৎসা তথা রুকইয়াহ!

বদনজর বিষয়ে ইসলামী আক্বিদা

 

মানুষ সামাজিক জীব, এজন্য আমাদের দৈনন্দিনের হাসি-কান্না সুখ-দুঃখ সবার সাথে ভাগাভাগি করে আমরা বেচে থাকি। মানুষ একে অপরের কল্যাণকামী হবে এটাই স্বাভাবিক.. তবে সবসময় তা হয় না!! এই সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশের পেছনে কিছু নিরব ফিৎনা চলে। যেমনঃ হিংসা, নজর, যাদু ইত্যাদি। এসব সর্বকালেই কমবেশি ছিলো, তবে সময়ের এই ক্রান্তিকালে প্রতিটি ফিতনা যেমন মরণকামড় বসাচ্ছে তেমনি এই ফিৎনাগুলোও মহামারির রুপ নিয়েছে।

 

আমরা ‘বদনজর’ দ্বারা আমাদের আলোচনা শুরু করতে পারি!

 

এখানে প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে “বদনজর, যাদু, আসর” এসবের অস্তিত্ব অনেকে বিশ্বাসই করতে চায়না। কেউ বিজ্ঞানের দোহাই দেয়, আবার কেউ এসব স্রেফ কুসংস্কার মনে করে উড়িয়ে দেন। যারা ইসলামে বিশ্বাস করেননা, বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে এসব অস্বীকার করেন তারা আমাদের অডিয়েন্স না। আমাদের মুখ্য হচ্ছে ঈমানদার ভাই এবং বোনেরা; যারা এব্যাপারে সন্দিহান। অতএব আমরা আজ কোরআন-হাদিস থেকে ‘বদনজর’ সম্পর্কে বিশুদ্ধ ইসলামী আক্বিদা জানবো।

১। সহীহ বুখারী ও মুসলিমের হাদীসে আছে, আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “বদনজর সত্য!”

২। সহীহ মুসলিম এবং মুসনাদে আহমাদের হাদিসে আছে, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “বদনজর সত্য, ভাগ্যের চেয়েও আগে বেড়ে যায় এমন কিছু যদি থাকতো, তাহলে অবশ্যই সেটা হতো বদনজর! যদি তোমাদের বদনজরের জন্য গোসল করতে বলা হয় তবে গোসল করে নিও..”

৩। মুসনাদে আবু দাউদে আছে জাবের রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “আল্লাহর ফায়সালা ও তাক্বদিরের পর, আমার উম্মতের সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হবে বদনজরের কারণে!”

৪। আরেকটি হাদীস আছে ইবনে মাজাহ শরীফে, আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমরা বদনজর থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও, কেননা বদনজর সত্য!”

৫। আরেকটি হাদীস রয়েছে মুসনাদে শিহাবে, হাদিসটির সনদ হাসান। জাবের রা. এবং আবু যর গিফারী রা. বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “বদনজর মানুষকে কবর পর্যন্ত আর উটকে রান্নার পাতিল পর্যন্ত পৌঁছে দেয়!”

৬। মুসনাদে আহমাদ, মু’জামে তাবারানীতে হাসান সনদের অপর একটি হাদিস আছে এরকম
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “বদনজর মানুষকে উঁচু থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়!”

রাসূল সা. থেকে বিশুদ্ধ সনদে এমন অনেক বর্ণনা পাওয়া যায়, যা প্রমাণ করে বদনজর সত্য, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবুও এরপর আমরা কোরআনুল কারীমের কিছু আয়াত লক্ষ্য করি..

১। …”ইয়াকুব আ. বললেনঃ হে আমার সন্তানেরা! (শহরে প্রবেশের সময়) তোমরা সবাই একই দরজা দিয়ে প্রবেশ করো না, বরং পৃথক পৃথক দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। আল্লাহর কোন বিধান থেকে আমি তোমাদেরকে রক্ষা করতে পারি না, নির্দেশ আল্লাহরই চলে। তাঁরই উপর আমি ভরসা করি, আর ভরসাকারীদের তাঁর উপরেই ভরসা করা উচিত ।” (সুরা ইউসুফ আয়াত ৬৭)

ইবনে আব্বাস রা. ইমাম মুজাহিদ রহ. কাতাদাহ রহ. সহ সকল মুফাসসিররাই এই আয়াত প্রসঙ্গে বলেন,
“ইয়াকুব আ. সন্তানদের ব্যাপারে বদনজরের আশংকা করেছিলেন, যে উনার সন্তানদের দেখে লোকদের বদনজর লাগতে পারে.. (হয়তোবা তাঁরা স্বাস্থ্যবান বা সুন্দর চেহারার অধিকারী ছিলো) এজন্য সন্তানদের শহরে প্রবেশের সময় আলাদা আলাদাভাবে প্রবেশ করতে বলেছেন। পাশাপাশি এটাও উল্লেখ করে দিয়েছেন ‘এসব (বদনজর) তো আসলে আল্লাহর তৈরি সিস্টেম, এখানে আমার কিছু করার নাই.. আল্লাহর ওপর ভরসা ছাড়া!”
(বিস্তারিত জানতে তাফসীরে ইবনে কাসির অথবা বয়ানুল কোরআনে আয়াতের প্রাসঙ্গিক আলোচনা দেখা যেতে পারে..)

 

সুরা কাহফ, আয়াত ৩৯) 18)39 وَلَوْلَا إِذْ دَخَلْتَ جَنَّتَكَ قُلْتَ مَا شَاء اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ إِن تُرَنِ أَنَا أَقَلَّ مِنكَ مَالًا وَوَلَدًا

যদি তুমি আমাকে ধনে ও সন্তানে তোমার চাইতে কম দেখ, তবে যখন তুমি তোমার বাগানে প্রবেশ করলে, তখন একথা কেন বললে না; আল্লাহ যা চান, তাই হয়। আল্লাহর দেয়া ব্যতীত কোন শক্তি নেই।

”Why didst thou not, as thou wentest into thy garden, say: ‘(Allah)’s will (be done)! There is no power but with Allah.’ If thou dost see me less than thee in wealth and sons,

২। “তবে যখন তুমি তোমার বাগানে প্রবেশ করলে, তখন কেন “মা-শা-আল্লাহ, লা-কুউয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” বললে না?” (সুরা কাহফ, আয়াত ৩৯)

এই আয়াতকে আলেমরা একথার প্রমাণ হিসেবে পেশ করেন যে, কোনো কিছু দেখে মুগ্ধ হলে সাথেসাথে মাশা-আল্লাহ, সুবহানাল্লাহ অথবা আলহামদুলিল্লাহ্‌ এসব বলতে হয়। যদি আলোচ্য আয়াতে উল্লেখিত ব্যক্তি নিজের বাগান দেখে মুগ্ধ হয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতো, আল্লাহকে স্মরণ করতো তাহলে ওর বাগান হয়তো নষ্ট হতো না।
এব্যাপারে বায়হাকী শরিফের হাদিস উল্লেখযোগ্য, আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন- “কোনো পছন্দনীয় বস্তু দেখার পর যদি কেউ বলে,
مَا شَاء اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّه
ِ (আল্লাহ যা চেয়েছে তেমন হয়েছে, আল্লাহ ছাড়া কারো ক্ষমতা নেই) তাহলে কোনো (বদনজর ইত্যাদি) বস্তু সেটার ক্ষতি করতে পারবে না।”

তবে আলোচ্য আয়াত থেকে এটাও প্রমাণ হয় যে, নিজের নজর নিজেকেই লাগতে পারে, নিজের সম্পদে বা নিজ সন্তানদেরও লাগতে পারে। (বিস্তারিত জানতে দুররে মানসুর অথবা ইবনে কাসির দেখা যেতে পারে)

৩। “..কাফেররা যখন কোরআন শুনে, তখন তারা (এমন ভাবে তাকায় যে মনে হয়) তাদের দৃষ্টি দ্বারা যেন আপনাকে আছাড় দিয়ে ফেলে দিবে এবং তারা বলেঃ ও তো একজন পাগল!!” (সুরা কলাম, আয়াত ৫১)

এ আয়াত প্রসঙ্গে মুফাসসিররা বলেন, এক লোক বদজরের কারণে প্রসিদ্ধ ছিলো, (মানে আমাদের ভাষায় লোকটার নজর খারাপ ছিলো) তো মক্কার কাফিররা ওই লোকটাকে কোত্থেকে নিয়ে এসেছিলো, রাসূল সা. যখন কোরআন পড়তে বসতেন, তখন ওই লোকটা চেষ্টা করতো নজর দিতে!! শেষে যখন কাজ হতো না, তখন বলতো ধুর! এতো পাগল (নাউযুবিল্লাহ) এজন্য এর কিছু হচ্ছেনা..!! (বিস্তারিত জানতে তাফসীরে মাযহারি বা মা’রিফুল কোরআনের পুর্ণাঙ্গ এডিশনটা দেখা যেতে পারে)

তো, এথেকে বুঝা যায় অনেক লোকের নজর খুব বেশি লাগে, আবার অনেকে এমন আছে যারা একটুতেই নজর আক্রান্ত হয়। ইনশাআল্লাহ এবিষয়ে সামনে হাদিস আসবে..।

আরেকটা বিষয় হচ্ছে, সাধারণত নজর তো ইচ্ছাকৃত লাগেনা, কোনো কিছু দেখে খুব মুগ্ধ হলে, তখন যিকির না করলে লাগে। কিন্তু ব্ল্যাক ম্যাজিকের কিছু রিচ্যুয়াল আছে, যা দ্বারা যাদুকর ইচ্ছাকৃত ভাবে কাউকে নজর দিতে পারে। হতে পারে ওই লোকটা এরকম কিছু জানতো।
(আল্লাহই ভালো জানেন)

সব মিলিয়ে আসা করছি বদনজর বিষয়ক বিশ্বাসে কারো কোনো অস্পষ্টতা নেই। এটা যদিও কোনো মৌলিক আকিদা না, যা ঈমানের সাথে সম্পর্ক রাখে। তবুও এরকম কোরআন হাদিস ইজমা দ্বারা প্রমাণিত একটা বিষয় অস্বীকার করলে ঈমান ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাতো নিশ্চিত..। যাহোক.. আগামীতে আস্তে আস্তে আমরা এবিষয়ে আরো অনেক কিছু জানবো.. ইনশাআল্লাহ

 

বদনজর থেকে বাঁচার উপায় ও কিছু ঘটনা

 

গত পর্বে আমরা বদনজর বিষয়ে সালাফের মতামত এবং বদনজর লাগার কিছু লক্ষণ জেনেছি। আজ বদনজর থেকে বাঁচার উপায় এবং এসম্পর্কিত কিছু সত্য ঘটনা জানবো।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নিজের প্রয়োজন পূরণ হওয়া পর্যন্ত সেটা গোপন রাখার মাধ্যমে সাহায্য লাভ করো! কেননা, প্রতিটা নিয়ামত লাভকারীর সাথেই হিংসুক থাকে!” (তাবারানী)

এটা নজর এবং হিংসা থেকে বাচার একটা টিপস। নিয়ামত গোপন রাখার মানে হচ্ছে অন্য কারো সামনে অহেতুক নিজের, নিজের সম্পদের, প্রশংসা না করা, সন্তানের প্রশংসা না করা, মেয়েরা নিজ স্বামীর প্রশংসা অন্যদের সামনে না করা, ছেলেরা নিজ স্ত্রীর প্রশংসা অন্যদের সামনে না করা। নিজের প্রজেক্টের প্রপার্টির ব্যাবসার গোপন আলোচনা অন্যদের সামনে প্রকাশ না করা। অনেকে অহেতুক অন্যদের সামনে গল্প করেন, অমুক প্রজেক্টে এতো লাভ হলো, অমুক চালানে এতো টাকার বিক্রি হলো।

মোটকথা: অহেতুক অন্যের সামনে নিজের কোনো নিয়ামতের আলোচনা না করাই উত্তম। প্রসঙ্গক্রমে করলেও কথার মাঝে যিকর করা। যেমনঃ ‘আলহামদুলিল্লাহ্‌, এবছর ব্যাবসায় কোনো লস যায়নি।’ “আল্লাহর রহমতে আমার ছেলে বেশ ভালো রেজাল্ট করেছে!” “মা-শা-আল্লাহ ভাবি! আপনি তো কাপড়ে অনেক ভালো ফুল তুলতে পারেন!!” ইত্যাদি ইত্যাদি.

শুধু খারাপ মানুষের নজর লাগে এমন কিন্তু না। ভালো মানুষের নজরও লাগতে পারে। বদনজর লাগার আসল কারণ হচ্ছে, আমরা যখন কোনো বস্তুর বা ব্যাক্তির প্রশংসা করি তখন এর মাঝে আল্লাহকে স্মরণ করি না। মা-শা-আল্লাহ, বারাকাল্লাহ বলি না। কোন কিছু দেখলে আমরা ওয়াও, অসাম! বাপরে! কি দেখাইলো মাইরি! হেব্বি হইছে! এক্কেরে ফাডালাইছে-এসব বলি। অথচ আমাদের উচিত ছিলো মা-শা-আল্লাহ, বারাকাল্লাহ, বলা।

সূরা কাহাফে এক ঘটনায় আল্লাহ্‌ বলেন: “যখন তুমি তোমার বাগানে প্রবেশ করলে, তখন ‘মা-শা-আল্লাহ; লা-কুও্ওয়াতা ইল্লা-বিল্লাহ’ (সব আল্লাহর ইচ্ছাতে হয়েছে, আল্লাহ ছাড়া কারো ক্ষমতা নেই) কেন বললে না?” (১৮:৩৯)

এখন অন্য কেউ যদি আপনার কিছুর প্রশংসা করে, তাহলে উনি যিকর না করলে আপনার উচিত হবে যিকর করা। উদাহরণ স্বরুপ কেউ বললো- ভাবি আপনার ছেলেটা তো অনেক কিউট! আপনি বলুন- আলহামদুলিল্লাহ্‌… মনে মনে বলুন- আল্লাহর কাছে বদনজর থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আপনি অন্যের প্রশংসা করতে গিয়ে কথার মাঝে যিকর করুক। “মাশা-আল্লাহ! আপনার রান্না অনেক সুন্দর।”
আর অধিক পরিমাণে সালামের প্রচলন করুন, ইনশাআল্লাহ হিংসা দূর হয়ে যাবে।

সর্বোপরি আল্লাহর কাছে দু’আ করুন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমরা বদনজর থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও, কেননা বদনজর সত্য!”

নজর থেকে বাচার একটা দুয়া, রাসুল সা. এটা পড়ে হাসান এবং হুসাইন রা.কে ফুঁ দিয়ে দিতেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই একই দু’আ আমাদের জাতির পিতা ইবরাহীম আ.-ও ইসমাইল আ. এবং ইসহাক আ. এর জন্য পড়তেন। দুয়াটি হচ্ছে-

 

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ

উচ্চারণঃ আ’উযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মাহ। মিং-কুল্লি শাইত্বনিও ওয়াহা-ম্মাহ। ওয়ামিং-কুল্লি ‘আইনিল্লা-ম্মাহ।

অর্থঃ আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমার দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টির অনিষ্ট হতে পানাহ চাচ্ছি।

এই হাদিসটি আছে- বুখারি, তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাযাহ, মুসতাদরাকে হাকেম, তাবারানী, মাজমাউয যাওয়ায়েদ, মুসনাদে আহমাদ, মুসনাদে বাযযার, মুসান্নাফ, মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাকে.

 

এই দু’আ সকাল-সন্ধ্যায় কয়েকবার পড়ে বাচ্চাদের ফুঁ দিয়ে দিবেন, নিজের জন্যও পড়বেন। ইনশাআল্লাহ তাবিজ-কবচ টোটকা ইত্যাদির কোনো দরকার হবেনা। আল্লাহই হিফাজত করবে।

বদনজর বিষয়ে অনেকগুলো ঘটনা আগেরবার (প্রথম সিরিজে) বলা হয়েছে, সেসব আর উল্লেখ না করি.. আমি আগের পোস্টগুলোর লিংক কমেন্টে দিয়ে দিচ্ছি। তবে সাহল ইবনে হুনাইফ রা. এর ঘটনা; যা মুয়াত্তা মালেক, মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাযাহ এবং নাসাঈ শরিফে আছে! সেটা এটা এখানে না বললেই নয়.

“সাহল ইবনে হুনাইফ রাযি. কোথাও গোসলের জন্য জামা খুলেছিলেন। উনি বেশ সুঠাম দেহের অধিকারী ছিলেন। বদরী সাহাবী আমির ইবনে রবী’আ রাযি. তাঁকে দেখতে পেয়ে বললেন, এতো সুন্দর মানুষ আমি জীবনে দেখিনি। এমনকি এত সুন্দর কোন যুবতীকেও দেখিনি। আমির রাযি. কথাটা বলার পরপরই সাহাল রাযি. সেখানে বেহুশ হয় পড়ে গেলেন। তাঁর গায়ে জ্বর চলে আসলো। মারাত্মক জ্বরে ছটফট করতে লাগলেন হযরত সাহাল রাযি.।

অন্য সাহাবিরা রাসূল সা. কে জানালেন, সংবাদ পেয়ে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অবস্থা দেখতে আসলেন। সাহল রাযি. কে হঠাৎ করে এমনটা হবার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি ঘটনাটা খুলে বললেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন: “তোমরা কেন তোমাদের ভাইকে নজর দিয়ে হত্যা করছো?” আমির ইবনে রবী’আকে ডেকে বললেন: “তুমি যখন তাকে দেখলে, তখন আরো বরকতের দু’আ কেন করলেনা? বারাকাল্লাহ কেন বললে না?” (অর্থাৎ দুয়া করলে নজর লাগতো না)
এরপর প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন আমির রাযি. কে বললেন: অজু কর! আমির রাযি. অজু করলেন। অতঃপর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর নির্দেশে অযুর পানি সাহল এর গায়ে ঢেলে দিলেন। আল্লাহর রহমতে কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেন।”

এটা বিশুদ্ধ সনদে নাসাঈ এবং ইবনে মাজাহতে বর্ণিত প্রসিদ্ধ একটি ঘটনা, যা থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। আমরা বুঝতে পারি, ভালো মানুষের নজরও লাগতে পারেরে, এখানে আমির ইবনে রবিয়া রা. তো বদরি সাহাবি, বদরী সাহাবিদের আগের পরের সব গুনাহ মাফ!! এরকম মানুষের নজর লেগেছে, সেখানে অন্যরা কোন ছার..

আরেকটা হাদিস, উম্মুল মুমিনিন হাফসা রা. কোনো সাহাবির বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন, ফিরে এসে রাসুল সা.কে ওদের হালহাকিকত শোনালেন। বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ওই সাহাবির সন্তানরা প্রায় সময় অসুস্থ হয়ে থাকে.. রাসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আসলে বদনজর তাদের দিকে খুব দ্রুত কাজ করে!” আসমা রা. এর ব্যাপারেও এরকম ঘটনা পাওয়া যায়.. (হাদিসগুলো মুসলিম শরিফে আছে)

আমার বাড়ির একটা গল্প বলি, এবার ছুটিতে গিয়ে আম্মুকে আমার বদনজর নিয়ে লেখা আগের প্রবন্ধগুলো দেখালাম। সেখানে “বদনজর মানুষকে কবর পর্যন্ত আর উটকে রান্নার পাতিল পর্যন্ত পৌঁছে দেয়!” হাদিসটা দেখিয়ে আমি হাসতে হাসতে বললাম ‘হাদিসটা মজাদার না’?!!

আম্মু দেখি মন খারাপ করে বলছে- কয়েকদিন আগে আমার একটা মুরগী মরে গেছে! জিগাইলাম কিভাবে?

আম্মু বলছে- “সন্ধ্যায় সব মুরগিকে খাওয়ার দিয়ে আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি, তখন ওই মুরগিটার দিকে তাকায়া বললাম ইশ! এরকম আর একটা মুরগিও হলোনা.. একটা মুরগিও এরকম বড়সড় না, আর এর মতো একটাও ডিম দেয় না, তারপর সব মুরগি কুটিরে উঠেছে, ওই বড়সড় মুরগিটাও উঠেছে। পরদিন সকালে দেখি ওই মুরগিটা আর বের হয়না! পরে কুটিরের ভিতরে তাকায়া দেখি মুরগিটা এক কোণায় মরে পড়ে আছে, একদম ভালো মুরগি, কোনো অসুখ ছিল না, আমার ওই কথাগুলা বলার সময় কি নজর লাগছিল? ”আমি বললাম.. “হ্যা”

 

Islami Dawah Center Cover photo

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টারকে সচল রাখতে সাহায্য করুন!

 

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার ১টি অলাভজনক দাওয়াহ প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠানের ইসলামিক ব্লগটি বর্তমানে ২০,০০০+ মানুষ প্রতিমাসে পড়ে, দিন দিন আরো অনেক বেশি বেড়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।

বর্তমানে মাদরাসা এবং ব্লগ প্রজেক্টের বিভিন্ন খাতে (ওয়েবসাইট হোস্টিং, CDN,কনটেন্ট রাইটিং, প্রুফ রিডিং, ব্লগ পোস্টিং, ডিজাইন এবং মার্কেটিং) মাসে গড়ে ৫০,০০০+ টাকা খরচ হয়, যা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। সেকারনে, এই বিশাল ধর্মীয় কাজকে সামনে এগিয়ে নিতে সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে আপনাদের দোয়া এবং আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন, এমন কিছু ভাই ও বোন ( ৩১৩ জন ) দরকার, যারা আইডিসিকে নির্দিষ্ট অংকের সাহায্য করবেন, তাহলে এই পথ চলা অনেক সহজ হয়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।

যারা এককালিন, মাসিক অথবা বাৎসরিক সাহায্য করবেন, তারা আইডিসির মুল টিমের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন, ইংশাআল্লাহ।

আইডিসির ঠিকানাঃ খঃ ৬৫/৫, শাহজাদপুর, গুলশান, ঢাকা -১২১২, মোবাইলঃ +88 01609 820 094, +88 01716 988 953 ( নগদ/বিকাশ পার্সোনাল )

ইমেলঃ info@islamidawahcenter.com, info@idcmadrasah.com, ওয়েব: www.islamidawahcenter.com, www.idcmadrasah.com সার্বিক তত্ত্বাবধানেঃ হাঃ মুফতি মাহবুব ওসমানী ( এম. এ. ইন ইংলিশ, ফার্স্ট ক্লাস )

বদনজরের ব্যাপারে লিখেছেনঃ উম্মে আব্দুল্লাহ 

 

সন্ধ্যার কিছু সময় আগে বসে বসে রুকিয়া শুনছি এমন সময় এক আত্মীয়া হুড়মুড় করে রুমে আসলেন। এসেই বলেন মেয়ে খাচ্ছেনা কি করি বলোতো। এরপর নিজেই বলা শুরু করলেন এত নজর লাগে ওর!! ফর্সাও না, মোটাও না তাহলে এত নজর লাগে কেন? উনার মত অনেক আপু এই ব্যাপারটা নিয়ে বেশ চিন্তিত। অনেকেই এই ব্যাপারটা নিয়ে ইনবক্স করছেন। তাই মনে হলো এই ব্যাপারটা নিয়ে কিছু বলা দরকার। আগেও বলেছি নজর লাগা শুধু খারাপ নজরকে বুঝায় না।

এমনিতেই অবস্থার পরিবর্তন হলে যেমন-একটু স্বাস্থ্য ভালো হলো বা একটু খেলে অনেকেই বলেন বাহ! পিচ্চি তো ভালোই খাচ্ছে বা স্বাস্থ্যটা একটু ভালো হইছে। ব্যাস! নজর লাগার জন্য একথাগুলোই যথেষ্ট। কারন এতে আল্লাহ তা’আলার নাম নিয়ে প্রশংসা করা হয়নি। তাই আমাদের উচিত এ ব্যাপারগুলো নিয়ে সচেতন থাকা। তবে সবসময় যে নজর লাগার কারনে এমন হয় তা কিন্তু না। তাই বাচ্চা কেন কাঁদে সেই কারনটা খুঁজে বের করে সমাধান করা জরুরী। এরপরেও যদি বাচ্চা কাঁদে তাহলে বদনজরের চিকিৎসা করতে পারেন। আর এইবার বেশি শীতের কারনে বড়দেরই অবস্থা খারাপ সেখানে ছোটরা একটু সমস্যা করতেই পারে।

তাই এই ব্যাপারটা একটু বেশিই গুরুত্ব দিবেন।

আর সকাল সন্ধ্যায় তিন কুল পড়ে শরীর মুছে দিবেন। আর নজর লাগা বুঝতে পারলে বদনজরের চিকিৎসা করাবেন। এখন অনেকেই প্রশ্ন করেন, আপু ও তো পিচ্চি। ওকে কিভাবে গোসল করাই?

উত্তর: ছোটদের গোসল না করালেও চলে।

এক্ষেত্রে নিম্নক্ত আয়াত বাচ্চার মাথায় হাত রেখে পড়বেনঃ

بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ يُؤْذِيكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ اللَّهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ

বিসমিল্লাহি আরকিক মিন কুল্লি শাইয়িই ইউ’যীক। মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও ‘আইনি হাসিদ। আল্লাহু ইয়াশফিক। বিসমিল্লাহিল্লাহি আরকিক।

অথবা,

بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ

বিসমিল্লাহি ইউবরিকা ওয়ামিন কুল্লি দা-ইন ইয়াশফিক। ওয়ামিন শাররি হাসিদিন ইযা হাসাদ। ওয়া শাররি কুল্লি যী”আঈন। এতে নজর কেটে যাবে ইনশাআল্লাহ।

আর যাদের গোসল করানো সম্ভব তাদের গোসল করাবেন। রুকইয়ার গোসলের পদ্ধতি হচ্ছে-

“একটা বালতিতে পানি নিবেন, তারপর ওই পানিতে দুইহাত ডুবিয়ে নিচের জিনিশগুলো সব ৭বার করে পড়বেন (যদি টয়লেট আর গোসলখানা একসাথে হয় তখন এসব অবশ্যই বাহিরে এনে পড়তে হবে) – “দরুদ শরিফ, ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, চারকুল (কাফিরুন, ইখলাস, ফালাক্ব, নাস) প্রত্যেকটা ৭বার, শেষে আবার দরুদ শরিফ” – এসব ৭বার করে পড়ার পর হাত উঠাবেন, এবং এই পানি দিয়ে গোসল করবেন।

প্রথমে এই পানি দিয়ে গোসল করলেন পরে অন্য পানি দিয়ে ভালোমতো করলেন, সমস্যা নেই। যার সমস্যা সে যদি পড়তে না পারে, তাহলে অন্য কেউ এসব পড়ে পানিতে ফু দিয়ে দিবে। আরও ভালো হবে, যদি প্রথমে কিছুক্ষণ রুকইয়াহ শুনে এরপর গোসল করতে যান। তবে এটা আবশ্যক না।

সমস্যা বেশি হলে এরকম ৩ সপ্তাহ করতে পারেন। সমস্যা কম হলে কখনো একদিনেও ভালো হয়ে যায়। তবে ভালো হওয়ার পরেও ২-৩দিন করা উচিত।
আর পারলে বদনজরের রুকিয়া শুনাতে পারেন। প্রশ্ন আসতে পারে কোন সমস্যা হবেনা তো?

উত্তর: আমাদের পিচ্চি কান্নাকাটি করলে রুকিয়া প্লে করে দেই। এরপর আলহামদুলিল্লাহ ও শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

একবারের ঘটনা বলি, ওর শরীরে একবার চর্মরোগের মত হয়েছিলো। দেখতে যে কেমন লাগছিলো। আর কষ্টও পাচ্ছিলো ও অনেক। আমরা ভাবলাম এলার্জি মনে হয়। এরপর কত ডাক্তার দেখালাম ওষুধ খাওয়ালাম কিছুতেই কমেনা। এরপর ওকে নজরের গোসল করালাম সাথে সকাল,সন্ধ্যায় তিন কুল পড়ে ঝাড়া শুরু করলাম। এরপর কিছুদিনের মধ্যে আল্লাহ তা’আলার অশেষ রহমতে ও সুস্থ্য হয়ে উঠলো। (আলহামদুলিল্লাহ)

অনেকে শুনি মরিচ, পানপাতা এইসব দিয়ে নজর কাটায়। দয়া করে এইগুলো পরিহার করুন। কুর’আন, সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরুন। আর দুনিয়া ও আখিরাতকে সুন্দর করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার (রুকইয়াহ) হাদিয়া।

ঢাকার মধ্যে রুকইয়ার হাদিয়া প্রতি রোগী প্রথমবার ৫০০০ টাকা, ২য়/তয় বার ৪০০০ টাকা, আর ঢাকার বাহিরে হলে প্রথমবার ১০,০০০ টাকা, ২য়/৩য়  বার  ৮০০০ টাকা । বি. দ্রঃ খুব বেশি দূরত্ব, অসুস্থতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং বড় বেশি কঠিন রোগীর ক্ষেত্রে হাদিয়া আলোচনা সাপেক্ষে কম বেশি হতে পারে। এই ইসলামিক চিকিৎসা পদ্ধতি দিয়ে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে, কোরআন হাদিসের চিকিৎসা সমাজে কায়েম করানো, আল্লাহ্‌ আমাদের সবাইকে দীন-ইসলামের খাদেম হিসাবে কবুল করুন, আমীন, সুম্মা আমীন।

 

রুকইয়ার শরঈ বিধান ও বদনজরের চিকিৎসা

 

গত তিন পর্বে আশা করছি বদনজর বিষয়ে আপনাদের কোনো অস্পষ্টতা নেই। এরপরেও যদি থাকে তাহলে কমেন্টে সুওয়াল করতে পারেন। ইনশাআল্লাহ উত্তর দেয়া হবে।

এপর্বের শুরুতে রুকইয়াহ বা ঝাড়ফুঁক বিষয়ে ইসলামের বিধানটা ক্লিয়ার করি, এরপর বদনজর আক্রান্তের চিকিৎসা বলা হবে। তবে অনেকগুলো অপশন দেখে কনফিউশনে ভুগলে বলবো [ঘ:পঞ্চম পদ্ধতি] ফলো করুন।
জ্বিন বা যাদুর মত নজরের চিকিৎসায় বিশেষ কোনো ঝামেলা নাই, এটা বেশ সহজ, অতএব আল্লাহর নামে পড়তে থাকুন।

আচ্ছা রুকইয়াহ বা ঝাড়ফুঁকের ক্ষেত্রে উলামাদের মতামতের সারকথা হচ্ছে- যদি ঝাড়ফুঁকে শিরকি কিছু না থাকে তাহলে সেটা বৈধ হবে। এক্ষেত্রে সতর্কতাবশত কোরআন এর আয়াত অথবা দু’আয়ে মাসুর (যা হাদিস বা আসারে সাহাবায় আছে) এসব দ্বারা করা উত্তম।

দলিল হিসেবে একটি হাদিস উল্লেখ করি, হাদিসটি মুসলিম শরিফের।

“আওফ ইবনু মালিক আশজাঈ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা জাহেলী যুগে বিভিন্ন মন্ত্র দিয়ে ঝাড়-ফুঁক করতাম। তাই আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আরয করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এব্যাপারে আপনার কি অভিমত? তিনি বললেন, তোমাদের মন্ত্রগুলো আমার কাছে পেশ করতে থাকবে, যদি তাতে শিরক না থাকে তাহলে কোনো সমস্যা নেই।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ইফাঃ ৫৫৪৪, ইসলাম ওয়েব ২২০০)

এটা হলো ঝাড়ফুঁকের ক্ষেত্রে মৌলিকভাবে ইসলামের বিধান, যে রাসুল সা. জাহেলি যুগের মন্ত্র দিয়েও ঝাড়ফুঁকের অনুমতি দিয়েছেন যদি তাতে শিরক না থাকে। উপরন্তু আমাদের আলোচ্য বিষয় তথা বদনজর এর জন্য ঝাড়ফুঁক করার ব্যাপারে বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী সহ প্রায় হাদীসের কিতাবেই একাধিক হাদিস আছে। অনেক কিতাবে যেমন সহীহ মুসলিমে স্বতন্ত্র একটি অধ্যায়-ই আছে বদনজরের জন্য রুকয়া করা নিয়ে। আমরা শুধু একটা হাদিস দেখে নেই-

“আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বদ নযর এর জন্য রুকইয়াহ (ঝাড়-ফুঁক) করার হুকুম করতেন।” (সহীহ মুসলিম, ৫৫৩২, ৫৫৩৩, ৫৫৩৪)

এবার বদনজরে চিকিৎসা জেনে নিন।

 

প্রথম পদ্ধতিঃ যদি জানা যায় কার নজর লেগেছে তাহলে আমির ইবনে রাবি’আ এবং সাহল ইবনে হুনাইফ রা. এর হাদিস এর ব্যাপারটা অনুসরণ করলেই হবে। অর্থাৎ যার নজর লেগেছে তাকে অযু করতে বলবে, অযুর পানিগুলো একটা পাত্রে জমা করবে এরপর আক্রান্ত ব্যাক্তির গায়ে ঢেলে দিবে। নোটঃ এই পদ্ধতি সকলের জন্য।

সুওয়ালঃ কুলি করার পানিও কি জমা করবে?
উত্তরঃ যদিওবা এক হাদিসে আছে কুলির কথা, তবে না নিলেও সমস্যা নেই। এমনকি অধিকাংশের ক্ষেত্রে শুধু হাতমুখ ধোয়া পানি নিয়ে অপরজন হাত মুখ ধুলেই বদনজর নষ্ট হয়ে যায়।

দ্বিতীয় পদ্ধতিঃ রোগীর মাথায় হাত রেখে এই দুয়া গুলো পড়বে, পড়া শেষে রোগীর গায়ে ফুঁ দিবে.. এরকম কয়েকবার করবে। নোটঃ বাচ্চাদের জন্য এই পদ্ধতি ফলো করা যেতে পারে।

১.
أُعِيْذُكُمْ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّةِ ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ

উ”ঈযুকুম বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মাহ। মিং কুল্লি শাইত্বা-নিও- ওয়াহা-ম্মাহ। ওয়ামিং কুল্লি “আঈনিল্লা-ম্মাহ।

২.
بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللَّهُ يَشْفِيكَ، بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ

বিসমিল্লা-হি আরকীক। মিং কুল্লি শাইয়িই ইউ’যীক। মিং শাররি কুল্লি নাফসিন আও “আইনি হাসিদ। আল্লা-হু ইয়াশফীক। বিসমিল্লা-হি আরকীক।

৩.
بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ، وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ، وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ

বিসমিল্লা-হি ইউবরীক। ওয়ামিং কুল্লি দা-ঈই ইয়াশফীক। ওয়ামিং শাররি হাসিদিন ইযা- হাসাদ। ওয়া শাররি কুল্লি যী “আঈন ।

৪.
اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبْ الْبَاسَ، اشْفِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا

আল্লা-হুম্মা রাব্বান না-স। আযহিবিল বা’স । ইশফি ওয়াআংতাশ শা-ফী। লা-শিফাআ ইল্লা-শিফাউক। শিফাআল লা-ইউগা-দিরু সাক্বামা-।

 

উপরের দোয়াগুলোর ছবি

এরপর চাইলে সাথে ৩ বার অথবা ৭ বার করে করে সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুুুরসি, ইখলাস, ফালাক, নাস পড়বেন এরপর সেখানে ফুঁ দিবেন।

সমস্যা বেশি হলে উল্লেখিত পদ্ধতিতে রুকইয়া করা শেষে, আরেকবার এগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে খাবেন এবং গোসল করবেন। সমস্যা ভালো হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন করবেন এই দুটো কাজ করা উচিত। এছাড়া কোন অঙ্গে ব্যাথা থাকলে এসব দোয়া-কালাম পড়ে তেলে ফুঁ দিয়ে প্রতিদিন মালিশ করতে পারেন।

বদনজর আক্রান্ত কারো কারো ওপর রুকইয়া করতে চাইলে এই পদ্ধতিটা অনুসরণ করা উচিত। অনুরূপভাবে ছোট বাচ্চাদের বিবিধ সমস্যা / রোগবালাইয়ের জন্য রুকইয়া করতে চাইলেও এটা অনুসরণ করা যায়।

আর হ্যাঁ! উল্লেখিত সবগুলো দোয়া রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হাদিস থেকে নেয়া।

তৃতীয় পদ্ধতিঃ যদি কোনো গাছ, গৃহপালিত পশু, দোকান অথবা বাড়িতে নজর লাগে তাহলে উপরের সুরা এবং তার ওপরের দু’আগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিবেন, এরপর ওই পানিটা (গাছে/ঘরে/পশুর গায়ে) ছিটিয়ে দিবেন।

 

 

বদনজরের জন্য সেলফ রুকইয়া –

 

যদি না জানা যায় আপনাকে কার নজর লেগেছে, অথবা অনেক দিনের সমস্যা হয়, কিংবা যদি অনেকজনের নজর লাগে, তাহলে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত। আমার পরিচিতদের সমস্যা হলে আমি এভাবে রুকইয়া করতে সাজেস্ট করি। আর বদনজরের জন্য নিজে নিজে রুকইয়া করতে চাইলে এই পদ্ধতিই সাজেসটেড।

নিয়ম হচ্ছে-

1. রুকইয়া শারইয়্যার আয়াতগুলো সমস্যা ভালো হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন তিলাওয়াত করবেন অথবা শুনবেন, সরাসরি শোনা সম্ভব না হলে অডিও রেকর্ড শুনবেন। এভাবে প্রতিদিন কমপক্ষে ১/২বার পুরো রুকইয়া শুনুন, আরও বেশি শুনলে বেশি ফায়দা।

অডিও শুনতে চাইলে সাজেস্ট করব প্রথমটি অর্থাৎ “বদনজর (Evil Eye)” এরটা শুনুন। এটাই রিকোমেনডেড। এছাড়া সা’দ আল গামিদীর আধাঘণ্টার রুকয়াটাও শুনতে পারেন। (ডাউনলোড লিংক – ruqyahbd.org/download)
যদি আপনার কোনো সমস্যা থাকে তাহলে আপনি ফিজিক্যালি এর প্রভাব টের পাবেন। যেমনঃ প্রচণ্ড ঘুম আসবে, মাথাব্যথা করতে পারে, হাত-পা কামড়াতে পারে, শরীর ঘামতে পারে, বেশি বেশি প্রসাব হতে পারে ইত্যাদি ইত্যাদি।

তবে এরপরেও শুনতে থাকবেন, ঘুম আসলে চেষ্টা করবেন জেগে থাকতে। আর সমস্যা সমাধান হলেই ভালো ফিল করতে লাগবেন.. ইনশাআল্লাহ! দুশ্চিন্তার কারণ নাই…
আর কয়েকবার মনোযোগ দিয়ে শোনার পরেও যদি কোনোই ইফেক্ট না বুঝতে পারেন, তাহলে আলহামদুলিল্লাহ্‌ আপনার কোনো সমস্যা নাই। আপনার যদি কোন প্রবলেম থাকে, তাহলে ভালোভাবে রুকইয়াহ শুনলে অবশ্যই এর প্রভাব টের পাবেন।

2. আর সম্ভব হলে প্রতিদিন, নইলে একদিন পরপর রুকইয়ার গোসল করবেন। একদম সুস্থ হওয়া পর্যন্ত।
রুকইয়ার গোসলের পদ্ধতি হচ্ছে-

একটা বালতিতে পানি নিবেন, তারপর ওই পানিতে দুইহাত ডুবিয়ে নিচের জিনিশগুলো পড়বেন (যদি টয়লেট আর গোসলখানা একসাথে হয় তখন এসব অবশ্যই বাহিরে এনে পড়তে হবে) –

“কোন দরুদ শরিফ ৭বার, ফাতিহা ৭বার, আয়াতুল কুরসি ৭বার, তিনকুল (ইখলাস, ফালাক্ব, নাস) প্রত্যেকটা ৭বার, শেষে আবার দরুদ শরিফ ৭বার”

পড়ার পর হাত উঠাবেন, এবং পানি দিয়ে গোসল করবেন। (এগুলা পড়ে পানিতে ফু দিবেন না.. এমনিই গোসল করবেন)

প্রথমে এই পানি দিয়ে গোসল করলেন পরে অন্য পানি দিয়ে ভালোমতো করলেন, সমস্যা নাই। যার সমস্যা সে যদি পড়তে না পারে, তাহলে অন্যজন পানিতে হাত রেখে পড়ে দিবে, এরপর গোসল করবেন।

আবশ্যক নয়; তবে উত্তম হচ্ছে, প্রথমে রুকইয়াহ শুনে এরপর গোসল করতে যাবেন।

মোটকথা, প্রতিদিন রুকইয়া শুনবেন এবং উপরের নিয়ম অনুযায়ী রুকইয়ার গোসল করবেন। সমস্যা অনুযায়ী ৩-৭ থেকে দিন লাগতে পারে। সমস্যা বেশি মনে হলে ২১দিন করতে পারেন। সমস্যা ভালো হয়ে রুকইয়া শুনলে আর কিছুই ফিল করবেন না, তবে সমস্যা ভালো হওয়ার পরেও ২-৩দিন রুকইয়া করা উচিত।

 

বদনজর থেকে বাঁচার জন্য কি করবো?

 

আগের পর্বে বিস্তারিত বলা হয়েছে। প্রয়োজনে দেখে নিন, সংক্ষেপে কিছু টিপস হচ্ছে-

১। সব কথার আল্লাহর মাঝে আল্লাহর জিকির করবে, উদাহরণ আগের পর্বে দেয়া হয়েছে।

২। হাদিসে বর্ণিত সকাল সন্ধ্যার দোয়াগুলো পড়বে, বিশেষতঃ “বিসমিল্লাহিল্লাযি….” এটা আর তিন ক্বুল তিনবার।

৩। মেয়ে হলে অবশ্যই পর্দার অভ্যাস করবে।

৪। আর বাচ্চাদের ক্ষেত্রে উচিত হলো, মাঝেমধ্যেই সুরা ফালাক নাস পড়ে বাচ্চাদেরকে ফুঁ দিবেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনটা করেছেন।

৫। এই দু’আ সকাল-সন্ধ্যায় কয়েকবার পড়ে বাচ্চাদের ফুঁ দিয়ে দিবেন, নিজের জন্যও পড়বেন (পিকচার বানিয়ে কমেন্টে দিলাম) –

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ

আল্লাহ আমাদেরকে সকলপ্রকার অনিষ্ঠ থেকে হিফাজত করুন। আমীন।

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন

 

আইডিসি ইংলিশ মিডিয়াম মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আপনি আইডিসি ইংলিশ মিডিয়াম মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন। 

 

কোরবানির গরু এবং বদনজর

কিছুদিন  আগে কিছু ভাই-ব্রাদার গল্প করছিল- গত বছর এক লোক নাকি অনেক বড় একটা গরু বাজারে বিক্রি করতে এনেছিল, নিজেরা এলাকাতেই কয়েক লাখ টাকা দাম হয়েছিল, পরে আরও অধিক মূল্য পাওয়ার আশায় সে ঢাকায় আসছিল। কিন্তু রাস্তার মধ্যে হটাতই তার গরু মারা যায়, শোক সইতে না পেরে বেচারার নিজেও হার্ট অ্যাটাক করেছিল। (সম্ভবত ঘটনাটা এরকমই)

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ঘটনার পেছনে কারণ কি ছিল বলে আপনার মনে হয়?

আমার মনে হয়েছে এটা বদনজরের জন্য হয়েছে। গরুটা অনেক বড়, অনেক স্বাস্থ্যবান অথবা এত দামি গরু!! ইত্যাদি নিয়ে মানুষ যখন অনেক বেশী কথা বলেছে, অনেকে বড় বড় দৃষ্টিতে তাকিয়েছে, রাস্তা দিয়ে আনতে আনতে আরও বহু লোকের সাথে গল্প করেছে। ফলে সে এবং তার গরু খুব সহজেই বদনজর আক্রান্ত হয়েছে।

জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং আবু যর গিফারী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “বদনজর মানুষকে কবর পর্যন্ত আর উটকে রান্নার পাতিল পর্যন্ত পৌঁছে দেয়!” (মুসনাদে শিহাব যুহরি, হাদিস ৯৯০, সনদ হাসান)

আচ্ছা! এরকম পরিস্থিতিতে আমাদের কি করা উচিত?

– প্রতিদিনের মাসনুন আমল ঠিকভাবে আদায় করা। নামাজ-কালাম ঠিকমত পড়া, দোয়া করা ইত্যাদি। আর এরকম মৌসুমে গবাদি পশুরও নজর লাগার আশংকা থাকে, তাই প্রতিদিন তাদেরও দোয়া অথবা সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস পড়ে ফুঁ দিয়ে দেয়া অথবা মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে পড়া। যদি গৃহপালিত পশুর নজর লেগেই যায়, তাহলে কি করবেন? তখন রুকইয়াহ করতে পারেন। এবিষয়ে পূর্বেই আলোচনা হয়েছে।

 

বদনজর এবং প্রচলিত কুসংস্কার!

ছোট বাচ্চাদের বদনজর থেকে বাঁচানোর জন্য অনেকেই কালো টিপ ব্যবহার করেন। এতে নাকি বাচ্চার নজর লাগে না। অনেকে আবার আঙ্গুল কামড়ে দেন! আবার নজর লাগলে তা কাটানোর জন্য উল্টাপাল্টা কাজ করেন। কেউ কেউ হিন্দুয়ানী প্রথায় টাকা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নজর কাটান। কেউবা মরিচ, পানপাতার দিয়ে। আর অদ্ভুত হলেও সত্য যে, এগুলোতে কাজ হয়। কারন এতে থাকে শয়তানের সাহায্য এবং সূক্ষ্ম ধোঁকা।।

 

এখন প্রশ্ন আসতে পারে আচ্ছা এইগুলো নাকি ভুলভাল পদ্ধতি, তাহলে ওইসব করার পরে বাচ্চার সমস্যা দূর হয় কিভাবে??

আগেই বলেছি এতে শয়তানের সূক্ষ্ম ধোঁকা ও সাহায্য থাকে। শয়তান আপনার ঈমান নিয়ে খেলার চেষ্টা করছে। আপনাকে ধোঁকা দিচ্ছে…
আপনাকে দিয়ে ভুল কাজ করাতে চাচ্ছে। শয়তান নিজেই সমস্যা সৃষ্টি করছে। আর আপনি যখন তার পছন্দের কাজ করছেন তখন সে আর সমস্যা করছেনা। ফলে আপনি ভাবছেন কাজ যেহেতু হচ্ছে, তাহলে এটাই ঠিক! আর এইভাবেই চলছে মরিচ, পানপাতা আর শয়তানের খেলা। এইবার বুঝলেন তো আপনি যাকে সমাধান ভাবছেন সেইটাই আসলে সমস্যা…

তাই শয়তানের ধোঁকায় না পড়ে কুর’আন সুন্নাহ মেনে চিকিৎসা করুন। শিফার পাশাপাশি সওয়াবও মিলবে ইনশাআল্লাহ।

এবার একটা হাদিস জানা যাক—
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ মন্ত্রপাঠ, তাবিজ/কবচ ও বশ করা শিরক। একথা শুনে (উনার স্ত্রী) যয়নব রা. বলেন: তুমি এ কি বলছ, আল্লাহর শপথ! আমার চোখে ব্যথা হলে আমি একজন ইয়াহূদীর কাছে যেতাম, সে মন্ত্র পাঠের পর আমার চোখে ফু দিলে ব্যথার উপশম হতো। তখন আবদুল্লাহ রা. বলেন, এতো শয়তানের অপকর্ম ছিল, সে নিজেই চোখে ব্যথা দিত, আর যখন ঐ ইয়াহূদী যখন তাতে ফু দিত, তখন সে বিরত থাকতো। তোমার জন্য তা-ই পাঠ করা উচিত ছিল, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করতেন। আর তা হলো:
أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا
হে মানুষের রব! যন্ত্রণা দূর করে দিন, আরোগ্য দান করুন, আপনিই আরোগ্যদাতা, আপনার দেয়া আরোগ্য ব্যতীত কোন আরোগ্য নেই, (এমন আরোগ্য দিন) যার পরে আর কোন রোগ বাকী থাকে না।
[আবু দাউদ:৩৮৪৩]

আবারো মনে করিয়ে দেই, আপনি যে কাজগুলো চিকিৎসা, ঝাড়ফুঁক কিংবা আমল হিসেবে করছেন তার কিন্তু কোন ভিত্তিই নেই। এইটা একধরনের ধোঁকা। যদি থাকতো তাহলে তো কুর’আন, হাদীসের কোথাও না কোথাও তো লিখা থাকতো।
নাহলে কোন গ্রহণযোগ্য বুজুর্গ অন্তত এসব করতে বলতেন। কিন্তু না সেইটাও কেউ বলেন নি।
সুতরাং বোঝা যাচ্ছে এইটাও সমাজে প্রচলিত কুসংস্কারের একটি।।
তাই এইগুলো বাদ দিয়ে নজর লাগলে নিমোক্ত দুয়াগুলো বাচ্চার মাথায় হাত রেখে পড়বেন, আর পড়া শেষ হলে ফুঁ দিবেন—

أُعِيْذُكُمْ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّةِ ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
উঈযুকুম বিকালিমাতিল্লাহিত্তাম্মাহ । মিন কুল্লি শাইতানিন ওয়া হাম্মাহ । ওয়ামিন কুল্লি আঈনিন লাম্মাহ ।

بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ يُؤْذِيكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ اللَّهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ
বিসমিল্লাহি আরকিক মিন কুল্লি শাইয়িন ইউ’যিক, ওয়া মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আউ ‘আঈনি হাসিদিন আল্লাহু ইয়াশফিক । বিসমিল্লাহিল্লাহি আরকিক ।

بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ

বিসমিল্লাহি ইউবরিকা ওয়ামিন কুল্লি দা-ইন ইয়াশফিক ওয়ামিন শাররি হাসিদিন ইযা হাসাদা ওয়া শাররি কুল্লি যী ‘আঈন ।

اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبِ الْبَاسَ، اشْفِهِ وَأَنْتَ الشَّافِي، لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا
আল্লাহুম্মা রাব্বান নাস আযহিবিল বা’স । ইশফিহি ওয়া আনতাশ শাফি । লা শিফাআ ইল্লা শিফাউক। শিফাআন লা ইউগাদিরু সাকামা ।

আর অবশ্যই প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় নিম্নোক্ত দুয়াটি বেশ কয়েকবার পড়ে ফুঁ দিবেন____

أُعِيْذُكُمْ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّةِ ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
উঈযুকুম বিকালিমাতিল্লাহিত্তাম্মাহ । মিন কুল্লি শাইতানিন ওয়া হাম্মাহ । ওয়ামিন কুল্লি আঈনিন লাম্মাহ ।

সাথে তিনকুলও পড়ে নিবেন। আর যাদের বাচ্চার এই ধরনের সমস্যা বেশি হয় উনারা চাইলে তেল, পানি পড়ে অই পানি দিয়ে গোসল করাতে পারেন, আর তেল ব্যবহার করতে পারেন সাত দিন।।
এতে বেশ ফায়দা হবে ইনশাআল্লাহ আর নিয়মিত মাসনুন আমলগুলো সবসময়ই চালিয়ে যাবেন।

রব্বুল আ’লামীন আমাদের বাচ্চাদেরকে সকল খারাবি থেকে হেফাজত করুন, আর আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন। জানার ও মানার তৌফিক দিন। (আমীন)

 

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার (রুকইয়াহ) হাদিয়া।

ঢাকার মধ্যে রুকইয়ার হাদিয়া প্রতি রোগী প্রথমবার ৫০০০ টাকা, ২য়/তয় বার ৪০০০ টাকা, আর ঢাকার বাহিরে হলে প্রথমবার ১০,০০০ টাকা, ২য়/৩য়  বার  ৮০০০ টাকা । বি. দ্রঃ খুব বেশি দূরত্ব, অসুস্থতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং বড় বেশি কঠিন রোগীর ক্ষেত্রে হাদিয়া আলোচনা সাপেক্ষে কম বেশি হতে পারে। এই ইসলামিক চিকিৎসা পদ্ধতি দিয়ে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে, কোরআন হাদিসের চিকিৎসা সমাজে কায়েম করানো, আল্লাহ্‌ আমাদের সবাইকে দীন-ইসলামের খাদেম হিসাবে কবুল করুন, আমীন, সুম্মা আমীন।

 

 

Islami Dawah Center Cover photo

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টারকে সচল রাখতে সাহায্য করুন!

 

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার ১টি অলাভজনক দাওয়াহ প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠানের ইসলামিক ব্লগটি বর্তমানে ২০,০০০+ মানুষ প্রতিমাসে পড়ে, দিন দিন আরো অনেক বেশি বেড়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।

বর্তমানে মাদরাসা এবং ব্লগ প্রজেক্টের বিভিন্ন খাতে (ওয়েবসাইট হোস্টিং, CDN,কনটেন্ট রাইটিং, প্রুফ রিডিং, ব্লগ পোস্টিং, ডিজাইন এবং মার্কেটিং) মাসে গড়ে ৫০,০০০+ টাকা খরচ হয়, যা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। সেকারনে, এই বিশাল ধর্মীয় কাজকে সামনে এগিয়ে নিতে সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে আপনাদের দোয়া এবং আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন, এমন কিছু ভাই ও বোন ( ৩১৩ জন ) দরকার, যারা আইডিসিকে নির্দিষ্ট অংকের সাহায্য করবেন, তাহলে এই পথ চলা অনেক সহজ হয়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।

যারা এককালিন, মাসিক অথবা বাৎসরিক সাহায্য করবেন, তারা আইডিসির মুল টিমের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন, ইংশাআল্লাহ।

আইডিসির ঠিকানাঃ খঃ ৬৫/৫, শাহজাদপুর, গুলশান, ঢাকা -১২১২, মোবাইলঃ +88 01609 820 094, +88 01716 988 953 ( নগদ/বিকাশ পার্সোনাল )

ইমেলঃ info@islamidawahcenter.com, info@idcmadrasah.com, ওয়েব: www.islamidawahcenter.com, www.idcmadrasah.com সার্বিক তত্ত্বাবধানেঃ হাঃ মুফতি মাহবুব ওসমানী ( এম. এ. ইন ইংলিশ, ফার্স্ট ক্লাস )

has been added to the cart. View Cart