Dajjal


ভূমিকা

দাজ্জাল, এক ভয়াবহ ফিতনার নাম। ইমাম মাহদী ও ঈসা (আঃ) আগমনের পূর্বে এই মহাফিতনা পৃথিবীতে আবির্ভূত হবে, যার ফিতনা এতটাই ভয়ংকর যে প্রত্যেক নবী তাঁর উম্মতকে এ থেকে সতর্ক করেছেন। আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ ﷺ দাজ্জালের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে বহু হাদীস দ্বারা সতর্ক করেছেন।


দাজ্জাল সম্পর্কে কুরআনের আয়াত

যদিও “দাজ্জাল” নামটি কুরআনে সরাসরি উল্লেখ নেই, তবে কিছু আয়াত এমন রয়েছে যেগুলো আলামত হিসেবে ব্যাখ্যায় দাজ্জালের আবির্ভাবের প্রেক্ষিতে মুফাসসিরগণ উল্লেখ করেছেন।

সূরা আল-আন’আম – ১৫৮

قُـلْ إِنَّمَا الْآيَاتُ عِندَ اللَّهِ ۖ وَمَا يُشْعِرُكُمْ أَنَّهَا إِذَا جَاءَتْ لَا يُؤْمِنُونَ
“বলুন, নিদর্শনসমূহ তো আল্লাহরই এখতিয়ারে, আর কে তোমাদের বুঝাবে যে সেগুলো এসে গেলে তারা ঈমান আনবে?”
সূরা আল-আন’আম (৬:১৫৮)

মুফাসসিরগণ বলেন, এই আয়াত “আখেরি নিদর্শনসমূহ” এর আলোচনার অন্তর্ভুক্ত। দাজ্জালও অন্যতম নিদর্শন।

সূরা আল-কাহফ – ৯ থেকে ২৬

“আসহাবে কাহফ” ও তাদের গল্পের পেছনে দাজ্জালের সময়কাল বা দীর্ঘ সময় ঘুমিয়ে থাকা ইত্যাদি প্রসঙ্গেও তাফসীরে দাজ্জালের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করা হয়েছে।


সহীহ হাদীসে দাজ্জালের বিস্তারিত বিবরণ

নবী ﷺ বহু হাদীসে দাজ্জালের অবয়ব, ক্ষমতা, ফিতনা, এবং ঈসা (আঃ) কর্তৃক তাকে হত্যা করা ইত্যাদি বর্ণনা করেছেন। নিচে তা হাদীসসহ উপস্থাপন করা হলো:


দাজ্জালের ভয়াবহ ফিতনা সম্পর্কে

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ
“أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِشَرِّ النَّاسِ؟ قَالُوا: بَلَى، قَالَ: مَنْ أَدْرَكَ الدَّجَّالَ، فَعَمِلَ بِأَعْمَالِهِ.”
সহীহ ইবনে হিব্বান: ৬৮০৪

নবী ﷺ বলেন: “আমি কি তোমাদের সবচেয়ে খারাপ মানুষের কথা বলব? সে হচ্ছে, যে দাজ্জালকে পাবে এবং তার কাজের অনুকরণ করবে।”


দাজ্জালের শরীরিক গঠন

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ:
“إِنَّ الدَّجَّالَ مَمْسُوحُ الْعَيْنِ، وَإِنَّهُ مَكْتُوبٌ بَيْنَ عَيْنَيْهِ: كَافِرٌ، يَقْرَؤُهُ كُلُّ مُسْلِمٍ.”
সহীহ বুখারী: ৭১৩১

দাজ্জালের একটি চোখ অন্ধ, এবং তার কপালে “كَافِرٌ” (কাফির) লেখা থাকবে, যা প্রত্যেক মুসলিম পড়তে পারবে।


দাজ্জালের অবিশ্বাসী দাবি

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ:
“يَأْتِي الدَّجَّالُ فَيَقُولُ لِلأَعْرَابِيِّ: أَرَأَيْتَ إِنْ بَعَثْتُ لَكَ أَبَاكَ وَأُمَّكَ، أَتَشْهَدُ أَنِّي رَبُّكَ؟”
সহীহ মুসলিম: ২৯৩৮

দাজ্জাল এক ব্যক্তিকে বলবে: “তোমার পিতা-মাতাকে জীবিত করে দিলে কি তুমি আমাকে তোমার রব হিসেবে মানবে?” সে এমন বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে।


দাজ্জাল কতদিন পৃথিবীতে থাকবে?

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ:
“يَمْكُثُ الدَّجَّالُ فِي الْأَرْضِ أَرْبَعِينَ صَبَاحًا…”
সহীহ মুসলিম: ২৯৩৭

দাজ্জাল চল্লিশ দিন পৃথিবীতে থাকবে — প্রথম দিন হবে এক বছরের সমান, দ্বিতীয় দিন এক মাসের, তৃতীয় দিন এক সপ্তাহের, আর বাকি দিনগুলো সাধারণ দিনের মতো।


দাজ্জালের মৃত্যু ও ঈসা (আঃ) কর্তৃক হত্যা

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ:
“فَيَطْلُبُهُ عِيسَى حَتَّى يُدْرِكَهُ بِبَابِ لُدٍّ، فَيَقْتُلُهُ.”
সহীহ মুসলিম: ২৯৩৭

ঈসা (আঃ) তাকে লুদের দরজার কাছে ধরবেন এবং হত্যা করবেন

“লুদের দরজা” (Bāb Ludd / باب لُدٍّ) – কোন জায়গা?

হাদীসের রেফারেন্স:

عَنْ النَّوَّاسِ بْنِ سَمْعَانَ قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ:
“فَيَطْلُبُهُ عِيسَى حَتَّى يُدْرِكَهُ بِبَابِ لُدٍّ، فَيَقْتُلُهُ.”
“ঈসা (আঃ) দাজ্জালকে অনুসরণ করবেন, অবশেষে তিনি তাকে লুদের দরজার কাছে ধরবেন এবং হত্যা করবেন।” সহীহ মুসলিম: হাদীস ২৯৩৭


লুদের দরজা কোথায়?

ভৌগোলিক অবস্থান:

“লুদ” (Ludd) একটি প্রাচীন শহর, বর্তমানে এটি ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত একটি শহর, যার আধুনিক নাম লোদ (Lod)। এটি তেল আবিব শহরের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত এবং বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এই শহরেই অবস্থিত।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:

“লুদ” ছিল এক প্রাচীন কানানীয় শহর। বাইবেল ও তাওরাতে একে “Lydda” নামেও উল্লেখ করা হয়েছে। ইসলাম পূর্ব যুগেও এই শহর ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র।


হাদীসের ব্যাখ্যায় “লুদের দরজা” এর গুরুত্ব

উলামায়ে কেরাম বলেন:

“باب لُدٍّ” বলতে বোঝানো হচ্ছে লুদ শহরের কোন একটি প্রবেশদ্বার বা এলাকাগত সীমা।

দাজ্জাল যখন পৃথিবীতে মহাফিতনা ছড়াবে, তখন ঈসা (আঃ) আসমান থেকে অবতরণ করে তাকে ধাওয়া করবেন, এবং শেষপর্যন্ত লুদ নামক স্থানে তাকে হত্যা করবেন।

ইমাম আন-নববী (রহ.) বলেন:
“بَاب لُدٍّ هو موضع معروف قرب بيت المقدس من جهة فلسطين.”
“লুদের দরজা হচ্ছে একটি বিখ্যাত স্থান যা বায়তুল মুকাদ্দাসের (জেরুজালেমের) নিকট ফিলিস্তিনের এক অঞ্চল।” শরহ আন-নববী ‘আলা সহীহ মুসলিম


বর্তমান প্রেক্ষাপটে “লুদ” শহর

আজকের দিনে ইহুদি-নিয়ন্ত্রিত ইসরায়েলের অধীনে থাকা এই শহর ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনের অংশ।

মুসলিমদের বিশ্বাস মতে, ভবিষ্যতে ঈসা (আঃ) পুনরায় আগমন করলে এই শহরেই তিনি দাজ্জালকে হত্যা করবেন।


সংক্ষেপে:

📌 নাম باب لُدٍّ (লুদের দরজা)
📍 অবস্থান বর্তমান ইসরায়েলের লোদ (Lod) শহর
📚 উৎস সহীহ মুসলিম ২৯৩৭, সহীহ তিরমিযী ২২৩৩
🕌 গুরুত্ব দাজ্জালের শেষ পরিণতি এখানেই ঘটবে
🌐 আধুনিক তথ্য বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর এই শহরেই


দাজ্জাল থেকে বাঁচার উপায়

নবী ﷺ আমাদের কিছু নির্দিষ্ট আমল শিখিয়েছেন, যার মাধ্যমে দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচা সম্ভব:

সূরা কাহফ পাঠ

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ:
“مَنْ قَرَأَ عَشْرَ آيَاتٍ مِنْ سُورَةِ الْكَهْفِ عُصِمَ مِنَ الدَّجَّالِ.”
সহীহ মুসলিম: ৮০৯

যে ব্যক্তি সূরা কাহফের প্রথম দশ আয়াত পাঠ করবে, সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাবে।


উপসংহার

দাজ্জাল এমন এক মহাফিতনা, যা মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ফিতনা হিসেবে চিহ্নিত। আমাদের দায়িত্ব হলো — ইলম হাসিল করা, হাদীস জানা, ঈমান মজবুত করা, এবং দাজ্জাল থেকে বাঁচার আমল নিয়মিতভাবে পালন করা।

লিখেছেন:মাহবুব ওসমানী – প্রকাশনা: Islamidawahcenter.com


Mahbub Osmane — একজন ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক এবং IslamiDawahCenter.com এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি কুরআন ও সহীহ হাদীসভিত্তিক বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 

To learn more, comment below or message us on wa.me/+966549485900 or  wa.me/+8801716988953 or call us at +44-73801-27019. Email at hi@islamidawahcenter.com

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।

আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে বিস্তারিত জানতে  লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।

আইডিসি  মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।