নর্থ–সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কুরআন অবমাননা: এক অগ্রহণযোগ্য ঘটনায় উত্তাল মুসলমান সমাজ, অপূর্ব পালকে দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হোক, বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রশাসনের দায় স্বীকার করতে হবে, এবং সরকার অবিলম্বে কঠোর ও স্পষ্ট ধর্মঅবমাননা আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
ঘটনার সারসংক্ষেপ ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
নর্থ–সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কুরআন অবমাননার ঘটনাটি (যেখানে এক ছাত্র ঠোঁটে শিস বাজাতে বাজাতে কুরআনকে পদপিষ্ট করেন) মুসলিম জনমনে এক ভয়ানক আঘাত হয়ে উপস্থিত হয়েছে। যে ভিডিওটি আজ সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, সেটি দেখেছেন এমন অনেকেই বলছেন—“নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে।”
এই ঘটনায় ইসলামপ্রেমীদের পক্ষ থেকে নিম্নলিখিত প্রশ্ন ও দাবি উত্থাপিত হচ্ছে:
- মানসিক রোগীর মর্যাদায় ভিত্তিহীনভাবে আড়াল
কেউ কেউ অপূর্ব পালকে “মানসিক রোগী” হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন, যেন এ ঘটনার নৈতিক ও আইনি দায়দায়িত্ব এড়ানো যায়। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় — একটি মানসিক রোগী কীভাবে দেশের নামকরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে? এমন যুক্তি দিয়ে ঘটনার মূল দোষ ও দায় এড়িয়ে দেওয়া হবে না। অতীতে ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য অনেকেই “মানসিক রোগী” দাবি করে বাঁচিয়ে দেওয়া হয়েছে — কিন্তু এটি মীমাংসার উপায় হতে পারে না। - বাদ দেওয়া হয়নি — কেন শুধুই ইসলামের দিকে আক্রমণ?
মুসলিম সমাজে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, মানবিক বা মনস্তাত্ত্বিক রোগীদের ক্ষেত্রে কি সাধারণভাবে এমন অবিচারণমূলক আচরণ দেখা যায়? বিশেষভাবে, একাধিকবার ইসলাম ও কুরআন-হাদিসকে নিশানা বানানো হয়েছে—এটি কোনো সাধারণ “আক্রমণ” নয়, বরং ধর্মবিরোধী পরিকল্পিত আক্রমণ বলে দেখা যাচ্ছে। - বিশ্ববিদ্যালয়-প্রশাসনের দায়িত্ব ও দায়বোধ
জানা গেছে, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক হাদিসের উদাহরণ দেওয়ায় অতীতে বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন ও বহিষ্কৃত হয়েছেন। কিন্তু কুরআন অবমাননার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলাটির তদারকি শুরু করার আগেই প্রতিক্রিয়া না দেখানো, এই দায় এড়িয়ে যাবে না। একটি সুশৃঙ্খল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমন কুলাঙ্গার ছাত্রকে প্রশ্রয় দেওয়া কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। - ধর্মীয় দাঙ্গার উসকানিদাতা
এমন ঘটনা স্পষ্টভাবে ধর্মীয় দাঙ্গা বাধানোর উস্কানিস্বরূপ। তাই ইসলামী জনমত এবং আইনগত প্রক্রিয়া উভয়ের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করা হচ্ছে। - সরকারের প্রতি দাবি
— অবিলম্বে ধর্মঅবমাননা (blasphemy) বিষয়ে কঠোর ও সুস্পষ্ট আইন প্রণয়ন করতে হবে।
— আইন থাকলেও তা কার্যকর বাস্তব প্রয়োগ করতে হবে, যাতে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ধর্মবিরোধী কাজ করা থেকে বিরত থাকে।
— বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর তত্ত্বাবধান ও নীতি নির্ধারণে এমনভাবে আইন-নিয়ম প্রণয়ন করতে হবে যে, ইসলামী মূল্যবোধ ও আবেগসম্পন্ন ব্যক্তিদের অবহেলা করা না যায়।
ইসলামিক প্রেক্ষাপট: কুরআন ও হাদিসের নির্দেশ
নিচে কিছু মর্মস্পর্শী কোরআন ও হাদিসের রেফারেন্স তুলে ধরা হলো, যেগুলো এমন ধর্মদ্রোহী অবস্থার বিরুদ্ধে আমাদের আত্মবিশ্বাস ও দাবিকে শক্তি দেবে:
📖 কোরআন
- إِنَّ الَّذِينَ يُؤْذُونَ اللّهَ وَرَسُولَهُ لَعَنَهُمُ اللّهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَأَعَدَّ لَهُم عَذَابًا مُهِينًا
— “নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদেরকে الدنيا ও آخِرাতে অভিশপ্ত করেছেন এবং তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন একটি বেদনাদায়ক শাস্তি।” (সূরা আল-আহজাব ৩৩:৫৭) Quran.com - وَلَا تَسُبُّوا الَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ فَيَسُبُّوا اللَّهَ عَدْوًا بِغَيْرِ عِلْمٍ
— “এবং যারা (অন্যদের) আল্লাহ ব্যতীত যাদের তারা ডাকে — তাদেরকে তুমি গালাগালি দিও না, যাতে তারা অন্যায্যভাবে (নিন্দায়) তোমাদের আল্লাহকে গালাগালি দেয়, অজ্ঞতার কারণে।” (সূরা আল-আন‘আম ৬:১০৮) Reddit - وَقُل لِّعِبَادِي يَقُولُوا الَّتِي هِيَ أَحْسَنُ ۚ إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنزَغُ بَيْنَهُمْ ۖ وَإِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلْإِنسَانِ عَدُوًّا مُبِينًا
— “আর বলো তোমাদের আল্লাহর بندেদের প্রতি — তারা যা বলুক, সেইটি হোক সেরা; নিশ্চয় শয়তান তাদের মধ্যে ফাটল ধরিয়ে দেয় — আর নিঃসন্দেহে শয়তান মানুষের প্রতি স্পষ্ট শত্রু।” (সূরা ইসরা ১৭:৫৩) — এই আয়াত আমাদের শিখায়, উত্তরে প্রতিহিংসা না, বরং নরম এবং বিবেচিত ভাষা ব্যবহার করতে। islamreligion.com
🌙 হাদিস
- রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “مَنْ آذَى مُؤْمِنًا فَقَدْ آذَانِي”
— “যিনি একজন বিশ্বাসীকে কষ্ট দেয়, সে আমাকে কষ্ট দিয়েছে।”
(সহীহ) — এই হাদিসটি উত্তম দৃষ্টিকোণ থেকে মুসলিমদের মধ্যে সৌহার্দ্য ও পারস্পরিক সম্মানের গুরুত্বকে নির্দেশ করে। Islam Web - অন্য একটি হাদিসে বলা হয়েছে: “مَنْ أَذَى مَسْلِمًا، أَذَاهُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ”
— “যিনি একজন মুসলিমকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তেমনি (ব্যাপারে) কষ্ট দেবে الدنيا ও آخِরাতে।” Islam-QA - হাদিস অনুযায়ী, একজন প্রকৃত বিশ্বাসী গালি দিয়ে বা নিন্দা দিয়ে অন্যকে উত্ত্যক্ত করে না (At-Tirmidhi) Jordan Iftaa+1
বিশ্লেষণ ও মন্তব্য
- ঘটনার মাত্রা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি
এই ধরনের ঘটনা — যেখানে কুরআন, যা মুসলিম_ummah-এর মহান সাধনা ও পরিচয়ের কেন্দ্র — অবমানিত হয়, তা শুধুই ব্যক্তিগত অপরাধ নয় — এটি সামগ্রিক সামাজিক ও ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি আঘাত। তাই দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করা হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে এমন কাজের প্রতিযোগিতা জন্ম না নিতে পারে। - মনস্তাত্ত্বিক রোগ (Ps ychological disorder) রক্ষাকবচ হিসেবে ব্যবহার – ন্যায্য কি?
যদি কেউ মানসিক রোগে আক্রান্ত থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট মানসিক স্বাস্থ্য আইন ও প্রমাণপ্রক্রিয়া প্রয়োগ করা হবে — কিন্তু একে অজুহাতে কি অপরাধ অস্বীকার করা যায়? সাধারণভাবে সমাজ ও বিশ্ববিদ্যালয়-প্রশাসনকে সচেতন থাকতে হবে, যেন কোনো ব্যক্তি “মানসিক রোগী” দাবি করে আইনগত ও শাস্তিগত দায় থেকে মুক্তি না পায়। - বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব ও পূর্ববৃত্তি
যে বিশ্ববিদ্যালয় এমন ঘটনা মেনে নিতে পারে, সে বিশ্ববিদ্যালয় কোন নৈতিক ভিত্তিতে থাকে? হাদিসের উদাহরণ দেওয়াকে দোষারোপ করে শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয়েছে, কিন্তু কুরআন অবমাননার মতো ঘটনা তৎক্ষণাৎ পদক্ষেপ করা হয়নি — এতে প্রশাসনিক ন্যায়বিচার ও ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কে প্রশ্ন ওঠে। - আইনি কাঠামো ও বাস্তব প্রয়োগ
ধর্মঅবমাননা বিষয়ে অন্তর্নিহিত আইন না থাকলে বা থাকলেও তা প্রয়োগ না হলে, এমন ঘটনা পুনরাবৃত্তি ঘটতেই পারে। তাই সরকারের প্রতি দাবি — কঠোর সংশোধিত আইন প্রণয়ন ও বিচারিক প্রক্রিয়ায় বাস্তব প্রয়োগ নিশ্চিত করা। - সম্প্রীতি ও সামাজিক শান্তি রক্ষার দায়
সুযোগ থাকতে পারে যে কোনো পক্ষ প্রতিক্রিয়াশীল উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। আমরা এখানে শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ এবং ধর্মীয় ও নৈতিক তত্ত্বাবধানের আহ্বান জানাই — কারণ ইসলাম প্রতিহিংসা নয়, ন্যায়ের ভিত্তিতে দাবির শিক্ষা দেয়।
সমাপনী বিবৃতি
নর্থ–সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যেভাবে কুরআন অবমানিত হয়েছে, সেটি একটি গভীর ধর্মীয় ও সামাজিক বিপর্যয়ের সূচনা। আমরা দাবি করি — অপূর্ব পালকে দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হোক, বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রশাসনের দায় স্বীকার করতে হবে, এবং সরকার অবিলম্বে কঠোর ও স্পষ্ট ধর্মঅবমাননা আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ নিশ্চিত করুক।
আল্লাহ্ সর্বোশেষে বিচারক, এবং আমরা আশা করি, মুসলিম জনমত ও আইনগত প্রক্রিয়া একযোগে কাজ করবে, যাতে ইসলামবিরোধী এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা বিমূর্ত স্বপ্নই হয়ে রয়ে যায়।
وَكَأَيِّن مِّن نَّبِيٍّ قَاتَلَ مَعَهُ رِبِّيُّونَ كَثِيرُونَ فَمَا وَهَنُوا لِمَا أَصَابَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَمَا ضَعُفُوا وَمَا اسْتَكَانُوا ۚ وَاللَّهُ يُحِبُّ الصَّابِرِينَ
(আলিমরং — “আর কত রসূল ছিল, যাঁদের সঙ্গে অনেক গুনাহীদ (বীর) লড়েছেন, কখনও দুর্বল হননি, কখনও পরাজয় মানেননি, কখনও কাপুরুষ হয়েছেন না। এবং আল্লাহ ধৈর্যশীলদের ভালোবাসেন।”)
(সূরা আলিমরং ৩:১৪৫ — উদাহরণস্বরূপ)
লিখেছেন: মাহবুব ওসমানী – প্রকাশনা: Islamidawahcenter.com
Mahbub Osmane — একজন ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক এবং IslamiDawahCenter.com এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি কুরআন ও সহীহ হাদীসভিত্তিক বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
To learn more, comment below or message us on wa.me/+966549485900 or wa.me/+8801716988953 or call us at +44-73801-27019. Email at hi@islamidawahcenter.com
আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন।
ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।
আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে বিস্তারিত জানতে লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।
আইডিসি মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।
কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।
