সুবিদপুর দরবার শরীফ / ইসলামী দাওয়াহ সেন্টারের অজিফা 

১। আয়াতুল কুরসীঃ 

اَللهُ لآ إِلهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ، لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَّلاَ نَوْمٌ، لَهُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْأَرْضِ، مَنْ ذَا الَّذِىْ يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ، يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيْطُوْنَ بِشَيْئٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَآءَ، وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ، وَلاَ يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَ هُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ-

আয়াতুল কুরসি বাংলা অর্থঃ

অর্থ : আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। কোন তন্দ্রা বা নিদ্রা তাঁকে পাকড়াও করতে পারে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু তাঁরই মালিকানাধীন।তাঁর হুকুম ব্যতিত এমন কে আছে যে, তাঁর নিকটে সুফারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখে ও পিছনে যা কিছু আছে সবকিছুই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসমুদ্র হতে তারা কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না, কেবল যতুটুকু তিনি দিতে ইচ্ছা করেন তা ব্যতিত। তাঁর কুরসি সমগ্র আসমান ও জমিন পরিবেষ্টন করে আছে। আর সেগুলির তত্ত্বাবধান তাঁকে মোটেই শ্রান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও মহান’।

ফজিলতঃ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, প্রত্যেক ফরয ছালাত শেষে আয়াতুল কুরসী পাঠকারীর জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য আর কোন বাধা থাকে না মৃত্যু ব্যতীত’। শয়নকালে পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত তার হেফাযতের জন্য একজন ফেরেশতা পাহারায় নিযু্ক্ত থাকে। যাতে শয়তান তার নিকটবর্তী হ’তে না পারে’। মুত্তাফাক্কুন আলাইহ ( যে হাদিস সহিহ বুখারি ও সহিস মুসলিম শরিফে পাওয়া যায় তাকেই মুত্তাফাকুন আলাইহি হাদিস বলা হয়। ) , মিশকাত হা/২৪৫৮ দো‘আসমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘আশ্রয় প্রার্থনা’ অনুচ্ছেদ-৮


২। সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত

সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের ফজিলত সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিস বর্ণিত হয়েছে। মাকাল বিন ইয়াসার (রা,) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সকাল বেলা তিন বার “আউজুবিল্লাহিস সামীয়িল আলীমি মিনাশ শাইতানির রাজীম” পড়বে। এরপর সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত তিলাওয়াত করবে। আল্লাহ তাআলা উক্ত ব্যক্তির জন্য ৭০ হাজার ফেরেস্তা নিযুক্ত করেন; যারা উক্ত ব্যক্তির জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকে। আর এ সময়ের মাঝে যদি লোকটি মারা যায়, তাহলে সে শহীদের মৃত্যু লাভ করবে। আর যে ব্যক্তি এটি সন্ধ্যার সময় পড়বে, তাহলে তার একই মর্যাদা রয়েছে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩০৯০; আবু দাউদ, হাদিস : ২৯২২; মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ১৯৭৯৫; কানজুল উম্মাল, হাদিস : ৩৫৯৭)

সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত নিম্নরূপঃ هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ (22) هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ (23) هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ [الحشر:22-24]

উচ্চারণ : হুআল্লা হুল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়া, আলিমুল গাইবী ওয়াশ শাহাদাদি, হুয়ার রাহমানুর রাহিম। হুআল্লা হুল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল মালিকুল কুদ্দুসুস সালামুল মু’মিনুল মুহাইমিনুল আজিজুল জাব্বারুল মুতাকাব্বির। ছুবহানাল্লাহি আম্মা য়ুশরিকুন। হুআল্লাহুল খালিকুল বা-রিউল মুছাওয়িরু লাহুল আসমাউল হুসনা। ইউছাব্বিহু লাহু মা ফিস-সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্; ওয়া হুয়াল আজিজুল হাকিম।

অর্থ : ‘তিনিই আল্লাহ তাআলা, যিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই; তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যকে জানেন, তিনি পরম দয়ালু, অসীম দাতা।’ (২২) ‘তিনিই আল্লাহ তিনি ব্যতিত কোনো উপাস্য নেই। তিনিই একমাত্র মালিক, পবিত্র, শান্তি ও নিরাপত্তাদাতা, আশ্রয়দাতা, পরাক্রান্ত, প্রতাপান্বিত, মাহাত্মশীল। তারা যাকে অংশীদার করে আল্লাহ তা’ আলা তা থেকে পবিত্র।’ (২৩) ‘তিনিই আল্লাহ তাআলা, স্রষ্টা, উদ্ভাবক, রূপদাতা, উত্তম নামগুলো তারই। নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে, সবই তার পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়। (সুরা হাশর, আয়াত : ২৪)

৩। “আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান নার।” সাত বার ( اللَّهُمَّ أَجِرْنِى مِنَ النَّارِ ) অর্থ:“হে আল্লাহ! আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দাও”
ফজিলত: হজরত হারিস ইবনে মুসলিম আত-তামিমি (রা.) থেকে তাঁর পিতার সূত্র থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.) সূত্রে বর্ণনা করেন, “নবী করিম (সা.) তাঁকে চুপে চুপে বলেন, যদি তুমি মাগরিবের নামাজ থেকে অবসর হয়ে সাতবার বল—‘আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার’, তাহলে তুমি ওই রাতে মারা গেলে তোমার জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তি লেখা হবে। আর যখন তুমি ফজরের নামাজ শেষ করবে, তখনো অনুরূপ বলবে, অতঃপর তুমি যদি ওই দিন মারা যাও, তাহলে তোমার জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তি লেখা হবে। ” (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৭৯)

৪। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম -১৯ বার, (আরবি: ‘بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ‎‎) একটি আরবি বাক্য যার অর্থ “পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে”, 

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে ব্যক্তি দোজখ রক্ষী ১৯ জন ফেরেস্তার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে চায় তার অবশ্যই উচিত সংখ্যক বার বিসমিল্লাহ পাঠ করা। কারণ বিসমিল্লাহি রয়েছে মোট ১৯ টি বর্ণ এক একটি বর্ণ পাঠ করার ফলে ওই ব্যক্তি একেকটা ফেরেশতার আজাব হতে মুক্তি পাবে।

৫। রাদিতু বিল্লাহি রব্বাও ওয়া বিল ইসলামি দিনাও ওয়া বিমুহাম্মাদিন (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাবিয়্যা – ৩বার। ( رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا وَبِالإِسْلاَمِ دِينًا وَبِمُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم نَبِيًّا ) ‘

অর্থ : আমি আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট আমার প্রতিপালক হিসেবে এবং ইসলামের প্রতি সন্তুষ্ট আমার দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সন্তুষ্ট আমার নবি হিসেবে।

হজরত মুনজির রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে এ দোয়াটি পড়বে- رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا وَبِالإِسْلاَمِ دِينًا وَبِمُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم نَبِيًّا

উচ্চারণ : রাদিতু বিল্লাহি রব্বাও ওয়া বিল ইসলামি দিনাও ওয়া বিমুহাম্মাদিন (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাবিয়্যা।’

অর্থ : আমি আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট আমার প্রতিপালক হিসেবে এবং ইসলামের প্রতি সন্তুষ্ট আমার দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সন্তুষ্ট আমার নবি হিসেবে।

(যদি কেউ এ দোয়াটি পড়ে, প্রিয়নবি বলেন,) আমি তার (জান্নাতের) দায়িত্ব নিলাম। কেয়ামতের দিন আমি তাকে হাত ধরে জান্নাতে নিয়ে যাব।’ [মুজামে কাবির-৮৩৮ মুজামুস সাহাবাহ-১৬৯৬]

৬। ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম – ১০ বার। ( *سُبحَانَ اللّهِ وَ بِحَمْدِهِ ، سُبحَانَ اللّهِ الْعَظِيمِ* ) ’

অর্থ : মহান আল্লাহ পবিত্র, সমস্ত প্রশংসা তাঁরই, মহান আল্লাহর পবিত্রতা, যিনি শ্রেষ্ঠতর। ’

উপকার : হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, দুটি বাক্য এমন রয়েছে, যা বলা সহজ, আমলের পাল্লায় অনেক ভারী, আর আল্লাহর কাছেও অধিক পছন্দনীয়। সেটি হলো, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪০৬)

৭। সাইয়িদুল ইস্তিগফার (সাইয়েদুল ইস্তেগফার – Sayyidul istighfar) বা ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দো‘আ – ১ বার।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এই দো‘আ পাঠ করবে, দিনে পাঠ করে রাতে মারা গেলে কিংবা রাতে পাঠ করে দিনে মারা গেলে, সে জান্নাতী হবে’।

اَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّىْ لآ إِلهَ إلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَنِىْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّمَا صَنَعْتُ، أبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَىَّ وَأَبُوْءُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْلِىْ، فَإِنَّهُ لاَيَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী, ওয়া আনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাসতাত্বা‘তু, আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা ছানা‘তু। আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূউ বিযাম্বী ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার পালনকর্তা। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার দাস। আমি আমার সাধ্যমত তোমার নিকটে দেওয়া অঙ্গীকারে ও প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হ’তে তোমার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার উপরে তোমার দেওয়া অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমি আমার গোনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কেউ নেই’। বুখারী, মিশকাত হা/২৩৩৫ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘ইস্তিগফার ও তওবা’ অনুচ্ছেদ-৪।

৮। সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার, আল্লাহু আকবার ৩৩ বার, তারপর ১ বার
لَا إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ

সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার, আল্লাহু আকবার ৩৩ বার। এর পর ১ বার
لَا إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু। লাহুল মুলকু। ওয়ালাহুল হামদু। ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির। অথবা আল্লাহু আকবার দিয়ে ১০০ পূর্ণ করা যায়।
অর্থ: আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। তিনি একক। তার কোনো শরিক নেই। সার্বভৌমত্বের মালিক তিনি। সকল প্রশংসা তার। তিনি সবকিছুর ওপর সামর্থ্যবান।

নবী(সা:) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয সালাতের পর সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার, আল্লাহু আকবার ৩৩ বার পাঠ করার পর এই দোয়া (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু…) ১বার পাঠ করে মোট ১০০ বার পূর্ণ করবে তার সমস্ত গুনাহ(ছগীরা) মাফ হয়ে যাবে; যদিও তা সুমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়। (ই.ফা.১২২৮, ই.সে.১২৪০) সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১২৩৯ হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

৯। بِسْمِ اللَّهِ الَّذِى لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَىْءٌ فِى الأَرْضِ وَلاَ فِى السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ –  বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস সামায়ি ওয়া-হুয়াস সামিউল আলিম। – ৩ বার,
অর্থ : আল্লাহর নামের উসিলায় সাহায্য প্রার্থনা করছি। যার নামের সঙ্গে থাকা অবস্থায় আসমান ও জমিনের কোনো কিছুই কোনো ক্ষতিসাধন করতে পারে না। তিনি সবকিছু শোনেন ও জানেন।
ফজিলতঃ বিশিষ্ট সাহাবি হজরত উসমান ইবনে আফফান (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সকালে এ দোয়া তিনবার পাঠ করবে, সে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো আকষ্মিক দুর্ঘটনার শিকার হবে না। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় এ দোয়া তিনবার পাঠ করবে সে সকাল পর্যন্ত কোনো আকষ্মিক দুর্ঘটনার শিকার হবে না।-আবু দাউদ : ৫০৯০, তিরমিজি : ৩৩৮৮


১০। اَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَ الْجُنُوْنِ وَ الْجُذَامِ وَمِنْ سَىِّءِ الْاَسْقَامِ – আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাসি ওয়াল জুনুন
ওয়াল ঝুজাম ওয়া মিন সায়্যিল আসক্বাম। – ৩ বার’ 

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনার কাছে আমি শ্বেত রোগ থেকে আশ্রয় চাই। মাতাল হয়ে যাওয়া থেকে আশ্রয় চাই। কুষ্ঠু রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে আশ্রয় চাই। আর দূরারোগ্য ব্যাধি (যেগুলোর নাম জানিনা) থেকে আপনার আশ্রয় চাই।’

তিরমিজিতে এসেছে, আরও একটি দোয়া পড়তে বলেছেন রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামঃ

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الأَخْلاَقِ وَالأَعْمَالِ وَالأَهْوَاءِ وَ الْاَدْوَاءِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন মুনকারাতিল আখলাক্বি ওয়াল আ’মালি ওয়াল আহওয়ায়ি, ওয়াল আদওয়ায়ি।’

অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার কাছে খারাপ (নষ্ট-বাজে) চরিত্র, অন্যায় কাজ ও কুপ্রবৃত্তির অনিষ্টতা এবং বাজে অসুস্থতা ও নতুন সৃষ্ট রোগ বালাই থেকে আশ্রয় চাই।’ _সূনানে তিরমিজি


১১। أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ উচ্চারণ: ‘আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম – ১০ বার’ অর্থ: বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

‘আউযুবিল্লাহি মিনাশ শয়তানির রাজীম’ পাঠ করার কতিপয় ক্ষেত্র-

(১) কোরআন তেলাওয়াতের শুরুতে: কোরআন তেলাওয়াত একটি ইবাদত। কোরআনের প্রতিটি হরফ পাঠের বিনিময়ে ১টি করে নেকি রয়েছে। আর একটি নেকি ১০টি নেকির সমান। (তিরমিযী; মুসতাদরাকে হাকেম; মিশকাত হাদিছ সহিহ)।

তাই কোরআন তেলাওয়াতের সময় যাতে শয়তান ধোঁকা দিতে না পারে সেজন্য কোরআন তেলাওয়াতের পূর্বে আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে আশ্রয় চাওয়ার নিদের্শ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآَنَ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
‘যখন তুমি কোরআন তেলাওয়াত করবে তখন অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবে’(সূরা: নাহল, আয়াত: ৯৮)।

(২) সালাতে শয়তান ওয়াসওসা (কুমন্ত্রণা) দিলে: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

عن عُثْمَانَ بْن أَبِي الْعَاصِ رضي الله عنه أنه أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ الشَّيْطَانَ قَدْ حَالَ بَيْنِي وَبَيْنَ صَلَاتِي وَقِرَاءَتِي يَلْبِسُهَا عَلَيَّ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ( ذَاكَ شَيْطَانٌ يُقَالُ لَهُ خَنْزَبٌ ، فَإِذَا أَحْسَسْتَهُ فَتَعَوَّذْ بِاللَّهِ مِنْهُ وَاتْفِلْ عَلَى يَسَارِكَ ثَلَاثًا قَالَ : فَفَعَلْتُ ذَلِكَ فَأَذْهَبَهُ اللَّهُ عَنِّي .
ওসমান বিন আবুল ‘আস (রা.) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! শয়তান আমার মধ্যে এবং আমার সালাত ও কেরাআতের মধ্যে অন্তরায় হয়ে আমার কেরাআতে জটিলতা সৃষ্টি করে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘এ হচ্ছে শয়তান, যাকে ‘খিনযাব’ বলা হয়। তুমি তার আগমন অনুভব করলে আল্লাহর নিকট তিনবার আশ্রয় প্রার্থনা করবে (অর্থাৎ আউযুবিল্লাহি মিনাশ শয়তানির রাজীম পাঠ করবে) এবং বাম দিকে তিনবার থুথু ফেলবে।’

তিনি (ওসমান রা.) বলেন, ‘এরপর থেকে আমি এমনটি করি। ফলে আল্লাহ তাকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেন।’ (সহিহ মুসলিম হা/২২০৩)।

(৩) রাগের সময়: রাগ শয়তানের পক্ষ থেকে আসে। তাই রাগের সময় শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হবে। সুলায়মান ইবনু সূরাদ (রা.) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে উপবিষ্ট ছিলাম। তখন দু’জন লোক গালা গালি করছিল। তাদের একজনের চেহারা লাল হয়ে গিয়েছিল এবং তার রগ গুলো ফুলে গিয়েছিল।

তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

إِنِّي لأعلَمُ كَلِمةً لَوْ قَالَهَا لَذَهَبَ عنْهُ مَا يجِدُ، لوْ قَالَ: أَعْوذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ ذَهَبَ منْهُ مَا يجدُ
‘আমি এমন একটি দোয়া জানি, এই লোকটি তা পড়লে তার রাগ দূর হয়ে যাবে। সে যদি পড়ে ‘আউযুবিল্লা-হি মিনাশ শায়তানির রাজীম’ তবে তার রাগ চলে যাবে।’

তখন সুলায়মান তাকে বলল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তুমি আল্লাহর নিকট শয়তান থেকে আশ্রয় চাও। সে বলল, আমি কি পাগল হয়েছি?।’ (বুখারি ও মুসলিম)।

(৪) খারাপ স্বপ্ন দেখলে: জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

إِذَا رَأَى أَحَدُكُمُ الرُّؤْيَا يَكْرَهُهَا، فَلْيَبْصُقْ عَنْ يَسَارِهِ ثَلَاثًا وَلْيَسْتَعِذْ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ ثَلَاثًا وَلْيَتَحَوَّلْ عَنْ جَنْبِهِ الَّذِي كَانَ عَلَيْهِ
‘যদি তোমাদের কেউ এমন স্বপ্ন দেখে যা সে পছন্দ করে না, তাহলে তিনবার বাম দিকে থুথু দেবে। আর তিন বার শয়তান থেকে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় চাবে (অর্থাৎ আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম পাঠ করবে।) আর যে পার্শ্বে শুয়েছিল, তা পরিবর্তন করবে। (অর্থাৎ পার্শ্ব পরিবর্তন করে শুবে)।’ (সহিহ মুসলিম)।

(৫) মনের মধ্যে শয়তান কুমন্ত্রনা দিলে: আল্লাহ বলেন,

إِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّـهِ
‘শয়তানের কুমন্ত্রণা যদি তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে তুমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করো, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ’ (সূরা: আ‘রাফ, আয়াত: ২০০; ফুসসিলাত: ৩৬)। আল্লাহু আলাম।

১২। দোয়ায়ে মাকালিদুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ – ১০ বার
– سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّ  هُوَ الۡاَوَّلُ وَ الۡاٰخِرُ وَ الظَّاهِرُ وَ الۡبَاطِنُ

বিয়াদিহিল খাইর-يحيي ويميت وهو على كل شي قدير

অথবা 

سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّ হিল আলিয়্যিল আযীম, আল আউয়ালু ওয়াল আখিরু ওয়াজ জাহিরু ওয়াল বাতিনু বিয়াদিহিল খাইর-يحيي ويميت وهو على كل شي قدير

১৩। ইস্তেগফার – ৭ বার / ১০ বার / ৭০ বার / ১০০ বার /২০০ বার। أَستَغْفِرُ اللهَ / 

أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِىْ لآ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ وَ أَتُوْبُ إِلَيْهِ / استغفر الله الذي لا اله الا هو الحي القيوم واتوب اليه / استغفر الله ربي من كل ذنب واتوب اليه لا حول ولا قوه الا بالله العلي العظيم / اللهم انت ربي لا اله الا انت خلقتني وانا عبدك وانا على عهدك ووعدك ما استطعت اعوذ بك من شر ما صنعت ابوء لك بنعمتك علي  وابوء بذنبي فاغفر لي فانه لا يغفر الذنوب الا انت

১৩. আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতূউবু ইলাইহি’।
অর্থ : আমি আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। আমি অনুতপ্ত হৃদয়ে তাঁর দিকে ফিরে যাচ্ছি বা তওবা করছি’। এই দো‘আ পড়লে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন, যদিও সে জিহাদের ময়দান থেকে পলাতক আসামী হয়’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দৈনিক ১০০ করে বার তওবা করতেন’।

ইস্তিগফারের ১৭টি উপকারিতা:

১. অধিক ইস্তিগফারের কারণে প্রচুর বর্ষণ হয়। বাগান ও শস্যে ভালো ফসল হয়। নদী-নালা থাকে জীবন্ত।
২. ইস্তিগফারকারীকে আল্লাহ উত্তম সন্তান, সম্পদ ও জীবিকার দ্বারা সম্মানিত করেন।
৩. দীন পালন সহজ হয়। এবং কর্মজীবন হয় সুখের।
৪. আল্লাহ ও বান্দার মাঝে যে দূরত্ব আছে, তা ঘুচে যায়।
৫. ইস্তিগফারকারীর কাছে দুনইয়াকে খুব তুচ্ছ করে দেয়া হয়।
৬. মানব ও জীন শয়তান থেকে তাকে হিফাযত করা হয়।
৭. দীন ও ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করা যায়।
৮. আল্লাহর ভালোবাসা অর্জিত হয়।
৯. বিচক্ষণতা ও বিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।
১০. দুশ্চিন্তা, পেরেশানি দূর হয়।
১১. বেকারত্ব দূর হয়।
১২. আল্লাহ তা’আলার নৈকট্য অর্জিত হয়। তার তাওবার কারণে আল্লাহ আনন্দিত হন।
১৩. মৃত্যুর সময় ফেরেস্তারা তার জন্য সুসংবাদ নিয়ে আসে।
১৪. হাশরের মাঠে মানুষ যখন প্রচন্ড গরম ও ঘামের মধ্যে থাকবে, তখন ইস্তিগফারকারী থাকবে আরশের ছায়াতলে।
১৫. কিয়ামাতের দিন মানুষ যখন অস্থির থাকবে, ইস্তিগফারকারী তখন ডানপন্থী মুত্তাকিনদের দলে থাকবে।
১৬. মন্দ কজ থেকে বেঁচে থাকা যায়।
১৭. আরশ বহনকারী ফেরেশতাগণও তার জন্য দু’আ করেন।

অধিক ইস্তিগফারের উপকারিতাঃ 

আল্লাহর হুকুম পালন

পবিত্র কোরআনের বহু আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের অধিক ইস্তিগফারের তাগিদ দিয়েছেন। কারণ আমরা সবাই গুনাহগার। ইচ্ছায়, অনিচ্ছায়, প্রকাশ্যে, গোপনে আমরা প্রতিনিয়তই গুনাহ করে থাকি। কিন্তু আমাদের মধ্যে তারাই উত্তম যারা গুনাহ হয়ে গেলে মহান আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চেয়ে নিই।

মহান আল্লাহর কাছে প্রতিনিয়ত ইস্তিগফার ছাড়া আমাদের মুক্তির কোনো পথ নেই। আমরা যতই গুনাহগার হই, তিনি তার চেয়ে কোটি গুণ ক্ষমাশীল। তাই পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৯)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও। ’ (সুরা হুদ, আয়াত : ৩)
উপরোক্ত আয়াতগুলোতে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের হুকুম করছেন, যে তোমরা (ইস্তিগফার করো) ক্ষমা চাও। অতএব ইস্তিগফারের প্রথম উপকারিতা হলো এর মাধ্যমে মহান আল্লাহর হুকুমের তামিল হয়।

গুনাহ মাফ হয়ে যায়

আমরা অনেকেই ধারণা করি যে আমরা এত বেশি পাপ করেছি আল্লাহ কি আমাদের ক্ষমা করবেন? এই চিন্তা থেকে আমরা আরো বেশি গুনাহের দিকে ধাবিত হতে থাকি। অথচ মহান আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন, কেউ কোনো গুনাহ হয়ে গেলে যদি তাঁর কাছে ক্ষমা চান তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর কেউ কোনো মন্দ কাজ করে অথবা নিজের প্রতি জুলুম করে পরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহকে সে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু পাবে। ’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১১০)

বিপদ দূর হয়

মহান আল্লাহ মাঝে মাঝে বান্দাকে তাদের পাপের শাস্তিস্বরূপ বিভিন্ন ধরনের বিপদাপদ ও আজাব দিয়ে থাকেন। কিন্তু তারা যখন ইস্তিগফারে লিপ্ত হয়ে যায়, তখন তিনি আজাব উঠিয়ে নেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং আল্লাহ এমনও নন যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে (্ইস্তিগফার করবে) অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন। ’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ৩৩)। অতএব কোনো ধরনের বিপদাপদ ও মহামারি দেখা দিলে মুমিনের প্রধান কাজ হলো বেশি বেশি ইস্তিগফার করা।

দুশ্চিন্তা দূর হয়

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের জন্য ‘ইস্তিগফার’ (ক্ষমা প্রার্থনা) আবশ্যক করে নেবে, আল্লাহ তাকে সব দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেবেন, সব সংকীর্ণতা থেকে উদ্ধার করবেন এবং তাকে এমনভাবে জীবিকার ব্যবস্থা করবেন যা তার চিন্তার বাইরে। ’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩৮১৯)

রিজিকে বরকত হয়

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সৎকর্ম ছাড়া অন্য কিছু আয়ুষ্কাল বাড়াতে পারে না এবং দোয়া ছাড়া অন্য কিছুতে তাকদির রদ হয় না। মানুষ তার পাপকাজের দরুন তার প্রাপ্য রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০২২)।

অতএব রিজিকের বরকতের জন্য পাপমুক্ত থাকা আবশ্যক। পাপমুক্ত থাকার অন্যতম মাধ্যম হলো ইস্তিগফার। ইস্তিগফারের মাধ্যমে মহান আল্লাহ বান্দাকে পরিশুদ্ধ করেন। ফলে তার রিজিকের অভাবও দূর হয়ে যায়। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তিগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস : ৭৬৭৭)

দুনিয়ার সফলতা

ইস্তিগফারের মাধ্যমে যেমন আখিরাতের মুক্তি পাওয়া যায়, তেমনি দুনিয়াতেও এর সুফল অপরিসীম। এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ রিজিকে বরকত দেন। সম্মান বাড়িয়ে দেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থন করো, তারপর তার দিকেই ফিরে আসো। তিনি তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষাবেন। আর তিনি তোমাদেরকে আরো শক্তি দিয়ে তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবেন এবং তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিও না। (সুরা হুদ, আয়াত : ৫২)

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরবিদরা লেখেন, ‘আল্লাহ তাআলা হুদ (আ.)-কে আদ জাতির কাছে নবীরূপে প্রেরণ করেছিলেন। দৈহিক আকার আকৃতিতে ও শারীরিক শক্তি-সামর্থ্যের দিক দিয়ে আদ জাতিকে মানব ইতিহাসে অনন্য বলে চিহ্নিত করা হয়। হুদ (আ.)-ও উক্ত জাতিরই অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এ আয়াত ও পূর্ববর্তী আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, তিনি তাদেরকে মৌলিকভাবে তিনটি দাওয়াত দিয়েছিলেন। এক. তাওহিদ বা একত্ববাদের আহ্বান এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো সত্তা বা শক্তিকে ইবাদত উপাসনা না করার আহ্বান। দুই. তিনি যে তাওহিদের দাওয়াত নিয়ে এসেছেন, তাতে তিনি একজন খালেস কল্যাণকামী, এর জন্য তিনি তাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চান না। তিন. নিজেদের অতীত জীবনে কুফরি শিরকি ইত্যাদি যত গুনাহ করেছ সেসব থেকে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং ভবিষ্যতের জন্য ওই সব গুনাহ থেকে তওবা কর। যদি তোমরা সত্যিকার তাওবা ও ইস্তিগফার করতে পারো তবে তার বদৌলতে আখিরাতের চিরস্থায়ী সাফল্য ও সুখময় জীবন তো লাভ করবেই। দুনিয়াতেও এর বহু উপকারিতা দেখতে পাবে। দুর্ভিক্ষ ও অনাবৃষ্টির পরিসমাপ্তি ঘটবে যথাসময়ে শক্তি-সামর্থ্য বর্ধিত হবে। এখানে ‘শক্তি’ শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যার মধ্যে দৈহিক শক্তি এবং ধন, বল ও জনবল সবই অন্তর্ভুক্ত। (কুরতুবী; ইবন কাসীর)। অতএব বোঝা গেল, ইস্তিগফারের মাধ্যমে মানুষের যেমন আখিরাতের মুক্তি অর্জন হয়, তেমনি দুনিয়াতেও ধন সম্পদ এবং সন্তানাদির মধ্যে বরকত হয়ে থাকে।

আখিরাতের সফলতা

উপরোক্ত আয়াতে আমরা জেনেছি যে ইস্তিগফারের মাধ্যমে বান্দা দুনিয়ার সফলতা অর্জন করে। এবার জানব মহান আল্লাহ ইস্তিগফারকারীদের জন্য আখিরাতে কী পুরস্কার রেখেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন, আমি কি তোমাদেরকে এসব বস্তু থেকে উত্কৃষ্টতর কোনো কিছুর সংবাদ দেব? যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতসমূহ, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর পবিত্র স্ত্রীগণ এবং আল্লাহর নিকট থেকে সন্তুষ্টি। আর আল্লাহ বান্দাদের সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা। যারা বলে, হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি; কাজেই আপনি আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে আগুনের আজাব থেকে রক্ষা করুন। তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, অনুগত, ব্যয়কারী এবং শেষ রাতে ক্ষমাপ্রার্থী। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৫-১৭)। উপরোক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর জান্নাতি বান্দাদের কিছু বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। যার মধ্যে অন্যতম হলো তারা শেষ রাতে ক্ষমাপ্রার্থী। অর্থাৎ যারা শেষ রাতে উঠে মহান আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করে।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, মহামহিম আল্লাহ তাআলা প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেন, কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছে এমন যে, আমার নিকট চাইবে। আমি তাকে তা দিব। কে আছে এমন যে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব। (বুখারি, হাদিস : ১১৪৫)।

১৪। সুরা ফাতিহা ৩ বার
۞ সূরা ফাতিহা ৩ বার পড়লে ২ বার কুরআন শরীফ পড়ার ছওয়াব হয় (মাযহারী)।

۞ সূরা কদর ৪ বার পড়লে ১ বার কুরআন শরীফ পড়ার ছওয়াব হয় (মুনসাদে আহমাদ)।
۞ সূরা যিলযাল ২ বার পড়লে ১ বার কুরআন শরীফ পড়ার ছওয়াব হয়।
۞ সূরা আদিয়াত ২ বার পড়লে ১ বার কুরআন শরীফ পড়ার ছওয়াব হয় (মাওয়াহীবুর রহমান)।
۞ সূরা কাফিরুন ৪ বার পড়লে ১ বার কুরআন শরীফ পড়ার ছওয়াব হয় (তিরমিযি)।
۞ সূরা ইখলাস ৩ বার পড়লে ১ বার কুরআন শরীফ পড়ার ছওয়াব হয় (তিরমিযি)।
۞ সূরা নাসর ৪ বার পড়লে ১ বার কুরআন শরীফ পড়ার ছওয়াব হয় (তিরমিযি)।
۞ সুরা ইয়াসীন ১ বার পাঠ করলে ১০ বার কোরআন খতমের সওয়াব পাওয়া যায় (বায়হাকি, শোআবুল ইমান)।
۞ আয়তাল কুরছী ৪ বার পড়লে ১ বার কুরআন শরীফ পড়ার ছওয়াব হয় (মাওয়াহীবুর রহমান)।
۞ প্রত্যেকদিন সূরা ইখলাস ২০০ বার পাঠ করলে ৫০ বছরের গোনাহ মাফ হয় (তিরমিযি ও দারেমী)।
۞ সুরা তাকাছুর পাঠ করলে ১০০০ আয়াত পড়ার সওয়াব পাওয়া যায় (বায়হাকি, শোআবুল ইমান)।

১৫। সুরা ইখলাস ১০ বার 

بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ | শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

(1 قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ বলুন, তিনি আল্লাহ, এক, Say: He is Allah, the One and Only;

 ( قُلْ বলো Say,  هُوَ “তিনি “He,  ٱللَّهُ আল্লাহ (is) Allah,  أَحَدٌ এক-অদ্বিতীয় the One

(2 اللَّهُ الصَّمَدُ আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, Allah, the Eternal, Absolute;

( ٱللَّهُ আল্লাহ Allah, ٱلصَّمَدُ অমুখাপেক্ষী the Eternal the Absolute )

(3 لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি He begetteth not, nor is He begotten;

( لَمْ নি Not,  يَلِدْ তিনি (কাউকে) জন্ম দেন He begets,  وَلَمْ এবং নি and not,  يُولَدْ তাঁকে জন্ম দেয়া হয় He is begotten )

(4 وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ এবং তার সমতুল্য কেউ নেই। And there is none like unto Him.

( وَلَمْ এবং নাই And not,  يَكُن (হয়) is,  لَّهُۥ তাঁর for Him, كُفُوًا সমতুল্য/ সমান equivalent,  أَحَدٌۢ কেউই” any [one]”)

হজরত আলী (রাঃ) বলেন, রাসুল সাঃ বলেছেন যে ব্যক্তি ফজর নামাজের পর ১০ বার সম্পুর্ণ সুরা ইখলাস পাঠ করবে -সেই দিন যাবতীয় কষ্ট,বিপদ, ও শয়তানী চক্রান্ত থেকে নিরাপদে থাকবে ৷
(ইবনে আসাকির,কানজুল উম্মাল,দুররে মানসুর)

রমজান মাসে ১০ বার পাঠ করলে,৭০০ বার পাঠ করার নেকি পাবে ৷ প্রায় ২৩৩ বার কুরান খতমের নেকি পাওয়া যাবে – সুবহানাল্লাহ। 

সূরা এখলাস এমন একটি সূরা যেটা একবার তেলাওয়াত করলে কোরআন শরীফের এক তৃতিয়াংশ তেলাওয়াত হয়ে যায়।
তিনবার পাঠ করলে ১খতম কুরানের নেকি পাওয়া যায় ৷ প্রতিদিন করার মত সুন্দর একটি আমল ৷

হজরত আবু দারদা হতে বর্ণিত- রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন তোমাদের মধ্যে কেও রাত্রে কুরানের এক তৃতিয়ীংশ তেলাওয়াত করতে কি সক্ষম? সাহাবাগণ বললেন কে এক রাত্রে এক তৃতিয়াংশ কুরান পড়তে কে সক্ষম হবে? (সাহাবীগণ খুব সুন্দর ভাবে সময় নিয়ে কুরান পড়তেন) রাসুল (সাঃ) বললেন সুরা এখলাস কুরানের এক তৃতীয়াংশ ৷ (মুসলিম)

একবার পাঠ করলে যদি এক তৃতীয়াংস হয় তাহলে ৩বার পাঠ করলে ১ খতম কুরানের নেকি পাওয়া যাবে ৷ আর রমজান মাসে তিনবার পাঠ করলে ৭০ বার কুরান খতমের নেকি পাওয়া যাবে ৷ বাকি মাসে ৩বার পাঠ করলে এক খতমের সমান নেকি পাবে ৷


১৬। সুরা ফালাক ৩ বার

بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

(1 قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের পালনকর্তার, Say: I seek refuge with the Lord of the Dawn.

(  قُلْ বলো Say,  أَعُوذُ “আমি আশ্রয় চাই “I seek refuge,  بِرَبِّ স্রষ্টার নিকট in (the) Lord, ٱلْفَلَقِ প্রভাতের (of) the dawn )

(2 مِن شَرِّ مَا خَلَقَ তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার অনিষ্ট থেকে, From the mischief of created things;

( مِن হতে From , شَرِّ অনিষ্ট (the) evil,  مَا যা (of) what,  خَلَقَ তিনি সৃষ্টি করেছেন He created)

(3 وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে, যখন তা সমাগত হয়, From the mischief of Darkness as it overspreads;

( وَمِن এবং হতে And from,  شَرِّ অনিষ্ট (the) evil,  غَاسِقٍ রাতের অন্ধকারের (of) darkness,  إِذَا যখন when, وَقَبَ তা গভীর হয় it settles )

(4 وَمِن شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে জাদুকারিনীদের অনিষ্ট থেকে From the mischief of those who practise secret arts;

( وَمِن এবং হতে And from,  شَرِّ অনিষ্ট (the) evil, ٱلنَّفَّٰثَٰتِ ফুঁকদানকারীর (রাতের) অনিষ্ট (of) the blowers,  فِى মধ্যে in,  ٱلْعُقَدِ গিঁটগুলোর the knots )

(5 وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে। And from the mischief of the envious one as he practices envy.

( وَمِن এবং হতে And from,  شَرِّ অনিষ্ট (the) evil , حَاسِدٍ হিংসুকের (of) an envier,  إِذَا যখন when, حَسَدَ সে হিংসা করে” he envies”)

১। সূরা ইখলাস,  ফালাক ও  নাস এ তিনটি সূরা সকাল ও বিকাল ৩ বার করে পড়লে সব ধরনের অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকা যাবে ।
( সহীহ তিরমিযী হা: ২৮২৯

২। প্রতি ফরজ সালাতের পর সূরা ইখলাস ফালাক ও নাস এ তিনটি সূরা একবার করে পাঠ করতে হবে । (আবু দাউদ হা:১৩৬৩)

৩। নবী (স:) রাতে ঘুমানোর পূর্বে সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস একবার করে পড়ে হাতে ফুকে সমস্ত শরীরে একবার বুলিয়ে দিতেন । এভাবে তিনি ৩ বার করতেন।
(বুখারী তাও: হা:৫০৭০)

৪। যে কোন সময় অসুস্থতা অনুভব করলে সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস এ তিনটি সূরা পড়ে শরীরে ফুক দিতে হবে ।(বুখারী হা:৪৬২৯)

৫। জিন ও মানুষের বদনজর থেকে নিরাপদ থাকার জন্য সূরা ফালাক ও নাস পাঠ করে শরীরে ফুকতে হবে ।(সহীহুল জামে হা:৪৯২০)

সূরা ইখলাসের ফজিলতঃ

১) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) (সূরা) ‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ সম্পর্কে বলেছেন, “নিঃসন্দেহে এটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য”। (মুসলিম ৮১২)

২অপর এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবাগনকে বললেন, ‘তোমরা কি এক রাতে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পড়তে অপারগ?’ প্রস্তাবটি তাদের পক্ষে ভারী মনে হল। তাই তারা বলে উঠলেন ‘হে আল্লাহর রাসূল! এ কাজ আমাদের মধ্যে কে করতে পারবে?’ ( অর্থাৎ কেও পারবে না।) তিনি বললেন, “কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ, আল্লাহুস সামাদ” (সূরা ইখলাস) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য”। (অর্থাৎ, এই সূরা পড়লে এক তৃতীয়াংশের কুরআন পড়ার সমান নেকী অর্জিত হয়।) (সহীহুল বুখারি ৫০১৫)

৩. উক্ত সাহাবী (রাঃ) আরো বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি কোন লোককে সূরাটি বারবার পড়তে শুনল। অতঃপর সে সকালে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিকট এসে তা ব্যক্ত করল। সে সূরাটিকে নগণ্য মনে করেছিল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, “সেই সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ আছে, নিঃসন্দেহে এই সূরা (ইখলাস) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান”।(সহীহুল বুখারি ৫০১৫)

৫) আনাস (রাঃ) হতে বর্নিত, এক ব্যক্তি নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি এই (সূরা) ‘কূল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ ভালবাসি। তিনি বললেন, ‘ এর ভালবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে’। (সহীহুল বুখারি ৭৭৪)

সূরা ফালাক ও সূরা নাসের ফজিলতঃ

১) উকবাহ বিন আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একদা বললেন, ‘তুমি কি দেখনি, আজ রাতে আমার উপর কতকগুলি আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে; যার আনুরূপ আর কিছু দেখা যায়নি? (আর তা হল,) ‘কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক্ক’ ও ‘কুল আউযু বিরাব্বিল নাস’। (মুসলিম ৮১৪)

২) আবূ সাঈদ খুদরী ( রাঃ) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন ‘রাসূলুল্লাহ (সূরা ফালাক্ক ও নাস অবতীর্ণ হবার পূর্ব পর্যন্ত নিজ ভাষাতে) জিন ও বদ নজর থেকে (আল্লাহর) আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। পরিশেষে যখন উক্ত সূরা দু’ টি অবতীর্ণ হল, তখন ঐ সূরা দু’টি দ্বারা আশ্রয় প্রার্থনা করতে লাগলেন এবং অন্যান্য সব পরিহার করলেন’। (তিরমিজী ২০৫৮)


১৭। সুরা নাস ৩ বার

بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

(1 قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ , বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করিতেছি মানুষের পালনকর্তার, Say: I seek refuge with the Lord and Cherisher of Mankind,

( قُلْ বলো Say  أَعُوذُ “আমি আশ্রয় চাই “I seek refuge ,  بِرَبِّ  রবের নিকট in (the) Lord,  ٱلنَّاسِ মানুষের (of) mankind )

(2 مَلِكِ النَّاسِ , মানুষের অধিপতির, The King (or Ruler) of Mankind,

( مَلِكِ মহা অধিপতির (নিকট) (The) King,  ٱلنَّاسِ মানুষের (of) mankind)

(3 إِلَهِ النَّاسِ , মানুষের মা’বুদের, The Allah (for judge) of Mankind,

إِلَٰهِ ইলাহ্‌র (নিকট) (The) God,  ٱلنَّاسِ মানুষের (of) mankind)

(4 مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ , তার অনিষ্ট থেকে, যে কুমন্ত্রণা দেয় ও আত্নগোপন করে, From the mischief of the Whisperer (of Evil), who withdraws (after his whisper)

( مِن হতে From,  شَرِّ অমঙ্গল (the) evil,  ٱلْوَسْوَاسِ কুমন্ত্রণার (of) the whisperer, ٱلْخَنَّاسِ আত্নগোপনকারী the one who withdraws )

(5 الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ , যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে , (The same) who whispers into the hearts of Mankind,

( ٱلَّذِى যে The one who, يُوَسْوِسُ কুমন্ত্রণা দেয় whispers,  فِى মধ্যে in,  صُدُورِ অন্তরসমূহের (the) breasts,  ٱلنَّاسِ মানুষের (of) mankind)

(6 مِنَ الْجِنَّةِ وَ النَّاسِ , জ্বিনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে। ,Among Jinns and among men.

( مِنَ মধ্য হতে From, ٱلْجِنَّةِ জিনের the jinn,  وَٱلنَّاسِ ও মানুষের and men )

১। সূরা ইখলাস,  ফালাক ও  নাস এ তিনটি সূরা সকাল ও বিকাল ৩ বার করে পড়লে সব ধরনের অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকা যাবে ।( সহীহ তিরমিযী হা: ২৮২৯

২। প্রতি ফরজ সালাতের পর সূরা ইখলাস ফালাক ও নাস এ তিনটি সূরা একবার করে পাঠ করতে হবে । (আবু দাউদ হা:১৩৬৩)

৩। নবী (স:) রাতে ঘুমানোর পূর্বে সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস একবার করে পড়ে হাতে ফুকে সমস্ত শরীরে একবার বুলিয়ে দিতেন । এভাবে তিনি ৩ বার করতেন।
(বুখারী তাও: হা:৫০৭০)

৪। যে কোন সময় অসুস্থতা অনুভব করলে সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস এ তিনটি সূরা পড়ে শরীরে ফুক দিতে হবে ।(বুখারী হা:৪৬২৯)

৫। জিন ও মানুষের বদনজর থেকে নিরাপদ থাকার জন্য সূরা ফালাক ও নাস পাঠ করে শরীরে ফুকতে হবে ।(সহীহুল জামে হা:৪৯২০)

সূরা ইখলাসের ফজিলতঃ

১) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) (সূরা) ‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ সম্পর্কে বলেছেন, “নিঃসন্দেহে এটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য”। (মুসলিম ৮১২)

২অপর এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবাগনকে বললেন, ‘তোমরা কি এক রাতে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পড়তে অপারগ?’ প্রস্তাবটি তাদের পক্ষে ভারী মনে হল। তাই তারা বলে উঠলেন ‘হে আল্লাহর রাসূল! এ কাজ আমাদের মধ্যে কে করতে পারবে?’ ( অর্থাৎ কেও পারবে না।) তিনি বললেন, “কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ, আল্লাহুস সামাদ” (সূরা ইখলাস) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য”। (অর্থাৎ, এই সূরা পড়লে এক তৃতীয়াংশের কুরআন পড়ার সমান নেকী অর্জিত হয়।) (সহীহুল বুখারি ৫০১৫)

৩. উক্ত সাহাবী (রাঃ) আরো বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি কোন লোককে সূরাটি বারবার পড়তে শুনল। অতঃপর সে সকালে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিকট এসে তা ব্যক্ত করল। সে সূরাটিকে নগণ্য মনে করেছিল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, “সেই সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ আছে, নিঃসন্দেহে এই সূরা (ইখলাস) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান”।(সহীহুল বুখারি ৫০১৫)

৫) আনাস (রাঃ) হতে বর্নিত, এক ব্যক্তি নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি এই (সূরা) ‘কূল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ ভালবাসি। তিনি বললেন, ‘ এর ভালবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে’। (সহীহুল বুখারি ৭৭৪)

সূরা ফালাক ও সূরা নাসের ফজিলতঃ

১) উকবাহ বিন আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একদা বললেন, ‘তুমি কি দেখনি, আজ রাতে আমার উপর কতকগুলি আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে; যার আনুরূপ আর কিছু দেখা যায়নি? (আর তা হল,) ‘কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক্ক’ ও ‘কুল আউযু বিরাব্বিল নাস’। (মুসলিম ৮১৪)

২) আবূ সাঈদ খুদরী ( রাঃ) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন ‘রাসূলুল্লাহ (সূরা ফালাক্ক ও নাস অবতীর্ণ হবার পূর্ব পর্যন্ত নিজ ভাষাতে) জিন ও বদ নজর থেকে (আল্লাহর) আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। পরিশেষে যখন উক্ত সূরা দু’ টি অবতীর্ণ হল, তখন ঐ সূরা দু’টি দ্বারা আশ্রয় প্রার্থনা করতে লাগলেন এবং অন্যান্য সব পরিহার করলেন’। (তিরমিজী ২০৫৮)

১৮। দুরুদ শরীফ ১১ বার।
দরুদে গাউসিয়া:- اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ سَيِّدِنَا وَمَوْلَانَا مُحَمَّدٍ مَّعْدَنِ الْجُوْدِ وَالْكَرَمِ وَاٰلِهٖ وَبَارِكْ وَسَلِّمْ – (আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা সয়্যিদিনা ওয়া মাওলানা মুহাম্মাদিম মাআদিনিল যুদি ওয়াল কারামি ওয়া আলিহি ওয়া বারিক ওয়া সাল্লিম।)
ফযিলত: এ দুরূদ শরীফ পাঠ করলে- ১.জীবিকায় বরকত হবে ২.সমস্ত কাজ সহজ হবে ৩.মৃত্যুকালে কলেমা নসীব হবে ৪.প্রাণবয়ু সহজে বের হবে ৫.কবর প্রশস্ত হবে ৬.কারো মুখাপেক্ষী থাকবেনা ৭.আল্লাহর সৃষ্টি তাকে ভালোবাসবে।

দরূদে খাইর:-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ سَيِّدِنَا وَنَبِيِّنَا وَشَفِيْعِنَا وَمَوْلَآنَا مُحَمَّدٍ صَلَّي اللهَ عَلَيْهِ وَعَليٰ اٰلِهٖ وَاَصْحَابِهِ وَاَزْوَاجِهِ وَبَارِكْ وَسَلِّمْ
(আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা সইয়্যিদিনা ওয়া নাবিয়্যিনা ওয়া শাফীয়িনা ওয়া মাওলানা মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলা আলিহী ওয়া আসহাবিহী ওয়া আযওয়াজিহী ওয়া বারিক ওয়া সাল্লিম।)
ফযিলত: যিনি সর্বদা এই দুরূদ শরীফ আমল করবেন- তিনি অবশ্যই দেশের সর্দার হবেন। যদি তা না হয়, তবে অন্তত স্বীয় বংশের সর্দার রূপে বা শ্রেষ্ঠ ধনী রূপে ইজ্জত পাবেন। প্রত্যহ চাশ্ত নামাযের পর ২১বার পড়লে ইন্শাআল্লাহ ধনী হয়ে যাবে।
দরূদে রুইয়াতে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম):-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَليٰ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍنِ النَّبِيِّ اْلاُمِيِّ
(আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিনি ন্নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি)
ফযিলত: হযরত শেখ আব্দুল কাদের জিলানী (রা:) বা বড় পীর (রা:) গুনিয়াতুত্তালিবীন এ লিখেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার রাতে দুই রাকাত নফল নামাজ এই নিয়্যতে পড়ে যে, প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পর ১বার আয়াতুল কুরসী ও ১৫বার সূরা ইখলাস এবং নামাজ শেষে এই দুরূদ শরীফ ১০০০ বার পড়বে অবশ্যই সে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখতে পাবে। যদি ঐ রাতে না দেখে তবে ২য় শুক্রবার আসার পূর্বে দেখতে পাবে। এবং তার সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।

আরো পড়ুনঃ Durood Sharif – ফজিলতসহ ৪১ টি দরুদ শরীফ & Importance of Durood Sharif

জিকীরের নিয়তঃ আমি আমার কলবের দিকে মোতাওাজ্জিহাছি, আমার কলব দাদা পীররসাহেব কেবলার পাক কলবের উছিলা হয়ে আল্লাহ্‌ তায়ালার আরশে মুয়াল্লার দিকে মোতাওাজ্জিহাছি, আল্লাহ্‌ তায়ালার আরশে মুয়াল্লা হইতে কদেরিয়া তরিকার নিসফত অনুযায়ী ১ জর্বি আল্লাহ্‌ আল্লাহ্‌ জিকীরের ফায়েজ আমার কলবে আসুক, আমার কলব মুহাব্বাতের সহিত ১ জর্বি আল্লাহ্‌ আল্লাহ্‌ জিকির করতে থাকুক – ইয়া আল্লাহ্‌। 

যেভাবে জিকির করলে পরিপূর্ণতা ও সাওয়াব পাবেন মুমিন

জিকির করবেন কীভাবে? জিহ্বায়, ক্বলবের স্মরণে নাকি অর্থ বুঝে? জিকিরের পরিপূর্ণতাই বা আসে কীভাবে? না বুঝে জিকির করলে সাওয়াব পাওয়া যাবে কি? সব সময় জিকির করা প্রসঙ্গে বিশ্বনবির বক্তব্যই বা কী ছিল?

ইমাম বুখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি ‘আল্লাহর জিকিরের ফজিলত’ নামে একটি অধ্যায় হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ বুখারিতে সংযোজন করেছেন। এ জিকির দ্বারা কী উদ্দেশ্য, তা বর্ণনা করে ইবনে হাজার আসকালানি বলেছেন, ‘এ জিকির হলো ওই সব শব্দ বা বাক্য, যা বললে সাওয়াব পাওয়া যায়।


এসব জিকিরের মধ্যে ‘সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার, লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ, বিসমিল্লাহ, হাসবুনাল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহসহ দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ কামনায় যে কোনো দোয়া করাই জিকিরের শামিল।

এ ছাড়াও নিয়মিত ফরজ নামাজ ও কাজ, কুরআন তেলাওয়াত, জ্ঞানার্জন এবং নফল নামাজ আদায় করাকেও জিকির হিসেবে গন্য করা হয়।

জিকির শুধুমাত্র মানুষের জিহ্বার উচ্চারণের মাধ্যমেও হতে পারে। আবার জিহ্বার উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে অন্তরের স্মরণ বা উপলব্দি সংযুক্ত হলে তা উত্তম ও পরিপূর্ণতার জিকিরে পরিণত হবে। অন্তরের স্মরণের সঙ্গে সঙ্গে যদি জিকিরের অর্থ উপলব্দি করে মুমিন তবে তা হবে আরো উত্তম এবং ফজিলতপূর্ণ।

সুতরাং জিকির জিহ্বার দ্বারা উচ্চারণ হোক আর অন্তরের স্মরণের সঙ্গে হোক কিংবা অর্থ উপলব্দির মাধ্যমেই হোক, সব ধরনের জিকিরেই সাওয়াব পাবে মুমিন। সাওয়াব পাওয়ার জন্য অন্তরের সম্পর্ক ও অর্থের সম্পর্ক জরুরি নয়। তবে পরিপূর্ণ ও উত্তম জিকিরের জন্য এসবই প্রযোজ্য।


এ কারণেই জগৎ বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার ইমাম ফখরুদ্দিন রাজি রহমাতুল্লাহি আলাইহি জিকিরকে ৩ ভাগে ভাগ করেছেন।

> মুখের জিকির
কোনো চিন্তা-গবেষণা ছাড়াই জিহ্বার উচ্চারণে জিকির করা। ‘সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার, লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ, বিসমিল্লাহ, হাসবুনাল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ, কুরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি মুখে উচ্চারণ করা।

> কলবের জিকির
আল্লাহর জাত, সিফাত (গুণাবলী), বিধানাবলী, আদেশ, নিষেধ ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা করার মাধ্যমে অন্তর দিয়ে আল্লাহকে স্মরণ করা।

> অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জিকির
সব সময় মানুষের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আল্লাহর আনুগত্যে রত থাকা বা পরিচালিত হওয়া। আর এ জন্যই নামাজকে কুরআনে জিকির বলা হয়েছে। নামাজে মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আল্লাহর নির্দেশ পালনে জিকিরে রত থাকে।

অনেকে আবার জিকিরকে ৭ ভাগে ভাগ করেছেন। আর তাহলো-

> চোখের জিকির : আল্লাহর ভয়ে চোখ দিয়ে প্রবাহিত হওয়া।
> কানের জিকির : মনোযোগ দিয়ে আল্লাহর কথা শোনা।
> মুখের জিকির : আল্লাহর প্রশংসা করা।
> হাতের জিকির : দান-সাদকা ও কল্যাণকর কাজ করা।
> দেহের জিকির : আল্লাহর বিধান পালন করা।
> ক্বলবের জিকির : আল্লাহর ভয়ে ভিত হওয়া বা তাকওয়া অর্জন করা। আল্লাহর রহমতের আশা করা।
> আত্মার জিকির : আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত তাকদির ও ফয়সালার উপর পরিপূর্ণ রাজি ও সন্তুষ্ট থাকা।

সব যুগের ইসলামি স্কলারগণ জিকিরের বিষয়ে একমত হয়েছেন যে-
আল্লাহর জিকিরের অর্থ হলো ওই সব জিকির, যা যপ বা উচ্চারণ করলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। কুরআন তেলাওয়াত, নামাজ আদায়, তাসবিহ-তাহলিল, পিতামাতার জন্য দোয়াসহ কুরআন-সুন্নাহর মাসনুন দোয়া ও আল্লাহর ফরজ বিধান পালন।

এ ছাড়াও জিকিরের আলাদা আলাদা ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। হাদিসে এ সব ফজিলত বর্ণনার কারণ উঠে এসেছে-

হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে আমার সর্বশেষ যে কথাটি হয়েছিল, যে কথাটি বলে আমি তাঁর থেকে শেষ বিদায় নিয়েছিলাম তা হলো-

আমি তাঁকে প্রশ্ন করেছিলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে প্রিয় আমল (কাজ) কোনটি?
তিনি বলেছিলেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ যে, তুমি যখন মৃত্যুবরণ করবে তখনো তোমার জিহ্বা আল্লাহর জিকিরে সিক্ত (আদ্র) থাকবে।’ অর্থাৎ সব সময় মুমিনের মুখে আল্লাহর জিকির চলতে থাকবে।

সুতরাং মানুষের উচিত জিকিরের উল্লেখিত বিষয়গুলো প্রতি যথাযথ খেয়াল রাখা। সে আলোকে জিকির করা। জিকিরে মানুষের জবান, ক্বলব ও আত্মাকে আদ্র রাখা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সব সময় জিকেরর সঙ্গে জীবন যাপন করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালের যাবতীয় কল্যাণ ও রহমত দান করুন। আমিন।

সুফিদের লতিফা

লতিফাঃ সূফিবাদের পরিভাষায় লতিফা একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। তাদের মতে লতিফার সাথে মানুষের জড় জগতের কোন সম্পর্ক নেই। লতিফা বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে আধ্যাত্মিক। সূফিবাদের পরিভাষায়, লতিফা মানুষের অন্তরের ভিতর অবস্থিত এমন কিছু নির্দিষ্ট স্থান, যার উপর আল্লাহ পাকের যিকিররত অবস্থায় আল্লাহ পাকের নূর অবতীর্ণ হয়। তারা বলে থাকে, লতিফা হল চিকন, পাতলা, সুক্ষ্মস্তর বিশিষ্ট একটি বস্তু যা মানুষের অন্তরের ভিতর বিশেষ স্থানে অবস্থিত। লতিফা এমন এক বিষয় যা কখনও চোখে দেখা যায় না, কানে শোনা যায় না এবং মস্তিষ্কে কল্পনা করা যায় না।

লতিফার প্রকারভেদঃ

লতিফা মোট দশটি। সেগুলো হলঃ কলব, রুহ, শিররুন, খাবী, আকফা, নাফস, আব, আতস, খাক, বাদ লতিফা। তবে এসকল লতিফার ভিতর প্রথম ছয়টি লতিফা হল মূখ্য আর বাকিগুলো হল গৌণ। যখন এই লতিফা নিম্নে এসকল লতিফা নিয়ে নিম্নে সামান্য আলকপাত করা হলঃ

কলব লতিফাঃ সুফিদের মতে, আল্লাহ পাকের জ্যোতি ধারনের ঐ আধার যার অবস্থান মানুষের বাম স্তনের দুই আঙ্গুল নীচে অবস্থিত। যা দেখতে অনেকটা অর্ধাকার ডিম্বাকৃতির পুষ্পকলার ন্যায়। কলব লতিফা আল্লাহ পাকের লাল বর্ণের ন্যায় আধার ধারন করে উহার নূর লাল। ইহা তওবার মাকাম। হযরত সাইয়্যিদিনা আদম (আঃ)-এর ওসীলায় ফায়েয প্রাপ্ত হয়ে থাকে। এই লতিফার স্থান আদম (আঃ) এর পায়ের নীচে। যে ব্যক্তি এই লতিফার বেলায়েতপ্রাপ্ত হবে তাকে আদমই মাশরাফ বলা হয়। তাদের দলিলঃ কলবের কথা কুরআন-হাদীসের ভিতর অসংখ্য জায়গায় পাওয়া যায়। যেমন আল্লাহ বলেন,

ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَتَطۡمَٮِٕنُّ قُلُوبُهُم بِذِكۡرِ ٱللَّهِ‌ۗ أَلَا بِذِڪۡرِ ٱللَّهِ تَطۡمَٮِٕنُّ ٱلۡقُلُوبُ (٢٨)

অর্থঃ ওরা যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর জিকিরে তাদের অস্তর প্রশান্ত হয়। জেনে রেখ আল্লাহর স্মরণে তাদের চিত্ত প্রশান্ত হয়৷ (সুরা রাদ ১৩:২৮)।

রাসূল(সাঃ) বলেছেন,“শরীরের দেহে একটি মাংস আছে যদই তা পরিশুদ্ব হয় তবে গোটা শরীর পরিশুদ্ব হয়। আর যদি তা খারাপ হয়, তবে সমস্ত শরীরই খারাপ হয়।মনে রেখো তা হল কালব বা দিল”।[বুখারী ও মুসলিম]

মন্তব্যঃ এই আয়াতে ও সহিহ হাদিসে যেহেতু কলব শব্দটি এসেছে। আর জিকির দ্বারা কলব প্রশান্ত এবং পরিশুদ্ব হয়। এই কথার উপর ভিত্তিকরে, তারা কলবের অবস্থান (লোকেশন) খুজার চেষ্টা করে আর বিভ্রান্ত হয়েছে। এর অবস্থান সম্পর্কে কুরআন হাদিস কিছু বলনি, তা হলে আমাদের মনমত স্থান নির্ধারণ করা কতটা যৌক্তিক। তারা শুধু স্থান নির্ধারণ করে থেমে থাকেনি তারা এর আকার, রং এবং আল্লাহ নূরের তাজাল্লী বর্ষনের মত আকিদাও পোশন করে থাকে।

তাদের ভ্রান্ত ধারনা মতে, একজন মুমিনের কলব আল্লাহের আরশে পরিণত হতে পারে। ভাল কাজের দ্বারা এ লতিফাটি উজ্জলতা বৃদ্বি পায় আর এক সময় তা সম্পূর্ণরুপে শ্বেতবিন্দুতে পরিণত হয়। আর মানুষ যখন পাপ কাজ করে তখন তা কৃষ্ণ বর্ণে পরিণত হয় এবং সেখান থেকে আল্লাহ পাকের নূরের তাজাল্লী উঠে যায়। তাই কলবকে কলুষমুক্ত রাখার জন্য আল্লাহ পাকের যিকির বেশি করতে হবে আর তার দ্বারা আল্লাহ পাকের আরশ লাভ করা যায়।

মন্তব্যঃ জিকির দ্বারা কলব প্রশান্ত এবং পরিশুদ্ব হয় কথা যেমন সঠিক, আরশ লাভ হয় কলবের উজ্জলতা বৃদ্বি শ্বেতবিন্দুতে পরিণত হওয়া ঠিত ততটা মিথ্যা অনুমান।

রুহ লতিফাঃ রুহ লতিফাটি মানুষের ডান স্তনের দুই আঙ্গুল নিচে অবস্থিত। এই লতিফাটি আল্লাহ পাকের সাদা জ্যোতি ধারন করতে সক্ষম। সুফিদের মতে, হযরত সাইয়্যিদিনা নুহ্ (আঃ) ও হযরত সাইয়্যিদিনা ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ (আঃ)-এর উসীলায় ফায়েয প্রাপ্ত হয়ে থাকে। রূহে নূরের রং লাল। সাধনার যে চরম পর্যায় এর বেলায়েত প্রাপ্ত হয়। সে নূহে মাশরাফ এবং ইব্রাহীমে মাশরাফ প্রাপ্ত হয়। এই লতিফাকে মানুষের প্রাণকেন্দ্র বলা হয়। ভালকাজের দ্বারা একজন মানুষের রুহের শুভ্রতা বৃদ্বি পায় এবং এর দ্বারা সে অতি সহজে সে আল্লাহ পাকের তত্ত্বজ্ঞান লাভ করতে সমর্থ হয়। এবং পাপাচারের দ্বারা মানুষ বাহ্যিকভাবে জীবিত থাকলেও আত্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করে। আল্লহ পাকের সিফাতের ফিকিরের দ্বারা রুহ লতিফা আল্লাহ পাকের তত্ত্বজ্ঞান লাভে সমর্থ হয়। রুকেতে সিফাত উচ্চারণের দ্বারা আল্লাহ পাকের সিফতের প্রতি ধ্যান-ফিকির রুহের দ্বারা করা হয়।

মন্তব্যঃ এসকল কথা থেকে ইসলাম ধর্ম অনেক পবিত্র কারন কল্পিত কথামালা ইসলাম হতে পারেনা। এমন কথা বললে দলিল দিতে হবে।

শিররুনঃ এ কথাটির অর্থ হল গোপনীয়তা কিংবা গোপন হৃদ্বয়। এ লতিফাটি মানুষের বুকের একেবারে মাঝ বরাবর একটু নীচে অবস্থিত। এ লতিফাটি আল্লাহ পাকের সবুজ জ্যোতিকে আকর্ষণ করে। বলা হয়ে থাকে এ লতিফাটি হযরত মুসা কালীমুল্লাহ (আঃ) এর উসীলায় ফায়েয প্রাপ্ত হয়ে থাকে। সিরের নূরের রং সাদা। যে ব্যক্তি এই শির লতিফার বেলায়েতপ্রাপ্ত হয় তাকে মূসলে মাশরাফ বলা হয়। এ লতিফা শুভদৃষ্ট এবং অশুভদৃষ্ট নির্দেশনা দিয়ে থাকে। আল্লাহ পাকের সিফত এবং আহকামের গুঢ় রহস্য উদঘাটনের মধ্য দিয়ে এর বেলায়েত অর্জন করা যায়। নামাযের ভিতর ১ম সিজাদাহের দ্বারা শিরের ফিকির হয়।

খাফি লতিফাঃ এলতিফাটিও অত্যন্ত গোপনীয়। এটি আল্লাহ পাকের কৃষ্ণ রঙ ধারন করতে সক্ষম। এটি মানুষের বুকের মাঝখানে রুহের নীচে অবস্থিত। এই লতিফাটি ইসা (আঃ)এর পায়ের নীচে অবস্থিত। যে ব্যক্তি এর বেলায়েতপ্রাপ্ত হবে সে হবে ইসা মাশরাফ।এ লতিফাটি মানুষের কর্ম ও চিন্তা অনুযায়ী মানুষের অন্তরে আনন্দ এবং বেদনা দেয়।আল্লাহ পাকের সিফাতের মধ্যে নিজেকে ফানা করার মধ্য দিয়ে এ লতিফার বেলায়েত লাভ করা যায়। নামাযের সময় ২য় সিজদাহের দ্বারা খফীরের দ্বারা ফানা হয়।

আকফা লতিফাঃ এই লতিফাটি অতি গোপনীয়। ইহা মানুষের বুকের মাঝে নীচে অবস্থিত। এই লতীফাটি আল্লাহ পাকের সবুজ বর্ণ ধারন করতে সক্ষম। এ লতিফার ব্যাপারে আরও বলা হয় যে, এই লতিফাটি মুহাম্মদ (সাঃ) এর পায়ের নীচে অবস্থিত। যে ব্যক্তি এ লতিফার বেলায়েত প্রাপ্ত হবে সে হবে মুহাম্মদী মাশরাফ। একে মানুষের মস্তিষ্কের দেহ এবং মনের রাজা স্বরুপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। মানুষের অন্তরে প্রাপ্ত চিন্তা মস্তিষ্কের অনুমোদন প্রাপ্ত কাজ বাস্তবে পরিণত করে। বাকাবিল্লাহের দিকে ধাবিত হয়ে এর বেলায়েত অর্জন করা যায়। নামাযরত অবস্থায় তাশহাদুদ পাঠের মধ্য দিয়ে আকফার খিলফত লাভ করা হয়।

নাফসঃ এই লতীফাটি মানুষের কোন অঙ্গে থাকে তা সঠিকভাবে বলা যায় না। ধারনা করা হয় যে, এইলতিফাটি মানুষের দুই চোখ অথবা দুই কপালের মাঝখানে অথবা নাভির নীচে অবস্থিত। ইহা মরীচীকার ন্যায় রুপ ধারন করে। ইহা কখনও সাদা, কখনও কালো আবার নীল বর্ণ ধারন করে। তবে বেশির ভাগ সময় এটি বিজলী বর্ণের ন্যায় সাদা সাদা হয়। এ লতিফার মাধ্যমে শয়তান মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রনা দেয় এবং মানুষকে ধোকায় ফেলে। আর যাদের পীর-আউলিয়াদের সহুবতে থাকবে তারা নফসের কু-প্রবৃত্তি হয়ে বত্য রাখতে পারবে। নামাযের সময় নিয়্যত থেকে তাকবীরে তাহরীমা পর্যন্ত নফসকে জবাই করা হয়।

আব লতিফাঃ আব অর্থ পানি। মানুষের সকল মৌলিক উপাদান আব নিয়ে গঠিত। ওলামা-মাশায়েখগণ এর মোরাকাবা করে থাকেন। যিকিরের মাধ্যমে এর মোকারাবা করা হয়।এই যিকিরের দ্বারা মাকামে কানায়েত(অল্পতুষ্টি) ফায়েযপ্রাপ্ত হয়। এই যিকিরের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন বাহিরের পানি আর ভিতরের পানি একত্রিত হয়ে যিকির করছে।

আতস লতিফাঃ আতসের অর্থ হল আগুন। এই লতিফাটি মানুষের বিভিন্ন অংগ-প্রত্যংগে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। তাসলীম এর মাধ্যমে এর মোকারাবা করা হয়।লতিফার যিকিরের দ্বারা আল্লহ এর ইশক এবং মহব্বত পয়দা হয় এবংদুনিয়া ভষ্মীভূত হয়।এই লতিফার দ্বারা হাকীকতে মাকাম পয়দা হয়।

খাক লতিফাঃ এটি ফার্সী শব্দ। এর অর্থ হল মাটি। সমস্ত শরীরের হাড়, গোশত, চামড়া, চুল এ লতিফার অন্তর্ভূক্ত। এ লতিফার দ্বারা রিজা মোকারাবা করা হয়।যিকিরের সময় তকদীরের উপর সন্তুষ্টির ব্যাপারে এ লতিফা কাজে আসে। এ লতিফার যিকিরের দ্বারা সহনশীল হওয়ার অভ্যাস পয়দা করা যায়।এ লতিফার যিকিরের দ্বারা আল্লাহ পাকের প্রতিটি বিধানের প্রতি রাজি থাকার ব্যাপারে উদ্বুদ্ব করে।

বাদ লতিফাঃ এর অর্থ হল বায়ু। শরীরের ভিতর ফাঁকা জায়গাকে বাদ লতিফা বলা হয়। এটি সবদিকে বিরাজমান।এই লতিফার যিকিরের দ্বারা ছবরের ফায়েজ হয়।সর্বপ্রকার বিপদ-আপদ হতে নিজেকে রক্ষা করার জন্য এই লতিফার যিকির করতে হবে।ধংসবের স্বভাব পরিহার করার জন্য এ লতিফার যিকির করতে হবে।খেয়াল রাখতে হবে যেন,ভিতরের বাতাস এবং বাহিরের বাতাস একত্রিত করে যিকির করতে হবে। সুফিগণ মনে করে পাপাচার্য থেকে মুক্ত রাখার জন্য লতিফার গুরুত্ব অপরিসীম। লতিফার যিকির ছাড়া কখনও আত্মশুদ্বি অর্জন সম্ভব নয়। তাই তারা এই লতিফাগুলির মাধ্যমে তাদের জিকির, মোরাকাবা, ধ্যাস ইত্যাদি আমলগু করে থাকে। এই জন্য তারা লতীফার জিকির করার আগে এন নিয়ত করে থাকে।

যেমনঃ হে আল্লাহ আমি আমার অমুক (রুহ) লতিফার তরফে মুতাওয়াল্লি আছি, আমার অমুক (রুহ) লতিফা আমার পীর সাহবের অমুক (রুহ) লতিফার কামিল হয়ে আল্লাহ পাকের মুতাওয়াজ্জের আছে।

নিয়তের পর চোখ বন্ধ করে, নামযের শেষ বৈঠকের মত বসে প্রথমে পৃথক পৃথক লতফার জন্য যিকির করা। এরপর দশ লতিফার জন্য একত্রে যিকির করা। তখন সুবিগন, তারা কল্পনা করে নাভীর নীচে নফস হতে লা টেনে রুহ পর্যন্ত আনে। অতঃপর ইলা খফি হতে সির টেনে হা শব্দ আখফা পর্যন্ত নিয়ে আসে। হা এর সাথে দুনিয়ার মহব্বত বের হয়ে যাবে। জিকিরের শব্দ স্বীয় কলবের উপর আঘাত করে ময়লা দূর করবে।

ফলাফলঃ সুফিদের মতে, এর দ্বারা প্রতিটি অংশ নূরেতাজাল্ল পয়দা হবে। এবং এর প্রভাবে রঙ আনুপাতিকভাবে বিভিন্ন রঙ অন্তঃচক্ষুতে দৃষ্ট হয়। দশ লতিফার যখন একত্রে যিকির করে তখন সকল লতিফার যিকির মিলিত হয়ে এক শব্দের প্রতিধবনি করে এবং লতিফাসমূহের বিভিন্ন রঙ একত্রে মিলিত হয়ে এক অভিনব নূরানী রঙ ধারন করে এবং যিকিররত ব্যক্তি এক পরম শান্তি অনুভব করে। যখন সে দশ লতিফা আয়ত্ব করবে তখন তার জিকির কে সুলতানুল আজগর বলা হয়।

এই লতিফার আমল কতটুকু শরীয়ত সম্মত?

ফুরফুরা পীর আবুল আনছান সিদ্দিকীর জামাতা বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ বহু গ্রন্থ প্রনেতা ডক্টর খন্দকর মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর কে লতিফা সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, লতিফা সম্পর্কে কুরআন হাদিসে কিছু নেই। ইহা পর্বরতীকালে কোন পীর তার মুরিদের ইসলাহ জন্য দিয়েছেন। কাজেই এসব বাদ দিয়ে সুন্নাহ সম্মত ইবাদত করতে হবে।

তাই কুরআন সুন্নাহ আলোকে বলতে গেলে বলতে হবে ইহা পরিস্কার বিদআত। ইহাকে কোন অবস্থায় ইবাদাত বলা যাবে না। ইহা দ্বীনের মধ্যে এক নতুন সুষ্টি। বিদআত শব্দের আভিধানিক অর্থ নতুন আবিষ্কার। শরিয়াতের পরিভাষায় বিদআত হচ্ছে ধর্মের নামে নতুন কাজ, নতুন ইবাদাত আবিষ্কার করা।যে সমস্ত কাজ গুলো কোরান বা হাদিসের অন্তর্ভুক্ত নয় সে সব কাজগুলোই বিদআত এর আওতায় পড়ে। ইমাম ইবনে কাসির এর মতে বিদআত শব্দের আভিধানিক অর্থ হল, অর্থাৎ পূর্ববর্তী কোন নমুনা ছাড়াই নতুন আবিষকৃত বিষয়।[আন-নিহায়াহ, পৃঃ ৬৯, কাওয়ায়েদ মা’রিফাতিল বিদআ’হ, পৃঃ ১৭]

আর শরীয়তের পরিভাষায়-অর্থাৎ আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে নতুন করে যার প্রচলন করা হয়েছে এবং এর পক্ষে শরীয়তের কোন ব্যাপক ও সাধারণ কিংবা খাস ও সুনির্দিষ্ট দলীল নেই।[কাওয়ায়েদ মা’রিফাতিল বিদআ’হ, পৃঃ ২৪]।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম বলেছেন, “তোমরা (দ্বীনের) নব প্রচলিত বিষয়সমূহ থেকে সতর্ক থাক। কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয় বিদআ‘ত এবং প্রত্যেক বিদআত ভ্রষ্টতা”।[সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৯৯১ ও সুনান আত-তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৭- তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান ও সহীহ বলেছেন।]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম তাঁর এক খুতবায় বলেছেন:“নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী আল্লাহ্র কিতাব এবং সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদের আদর্শ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল (দ্বীনের মধ্যে) নব উদ্ভাবিত বিষয়। আর নব উদ্ভাবিত প্রত্যেক বিষয় বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআত হল ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম।[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৩৫ ও সুনান আন-নাসায়ী, হাদীস নং ১৫৬০, হাদীসের শব্দ চয়ন নাসায়ী থেকে।]

মন্তব্যঃ সুতারং বলা যায় লতিফা সুফিদের আবিস্কৃত একটি বিদআত যাতে বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই। সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)

আল্লাহ্‌ তায়ালা আমাদেরকে এই Daily Tasbeeh গুলো নিয়মিত আদায় করার তাওফিক দান করুন,আমিন। এই Daily Tasbeeh গুলো আদায় করে আমাদের জন্য দোয়া করবেন, এই দরখাস্ত আপনাদের কাছে।