Islah-By-Peer – শায়েখ মুরশীদ উস্তাদ বা পীরের মাধ্যমে ইসলাহের সুন্দর পদ্ধতী
Islah-By-Peer – শায়েখ মুরশীদ উস্তাদ বা পীরের মাধ্যমে ইসলাহের সুন্দর পদ্ধতী
মাওলানা মুফতি খালেদুজ্জামান খানকাহী নেযাম বলুন আর তরীকতের লাইন বলুন অথবা পীর-মুরীদীর লাইন যাই বলুন না কেনো এখানে একটা কথা প্রচলিত আছে, ডাক্তারের কাছে যেমন রোগীর নিজের কোনো গোপনীয় রোগের কথা বলতে লজ্জা করলে রোগ পরিপূর্ণ নিরাময় হয় না তদ্রুপ মুরীদও শায়খের কাছে নিজের সব গোপন কথা খুলে না বললে পরিপূর্ণ আতœশুদ্ধি হয় না। কেননা শায়খ হলো, রুহানী ডাক্তার। সুতরাং তার কাছে নিজের জীবনের সব আকাম কুকামের কথা খুলে বলতে হবে। নিজের কোনো প্রাইভেসি রাখা যাবে না। নইলে ইসলাহ হবে না।
আমার বুঝে আসে না এই ভ্রষ্টতা কবে কিভাবে আসলো?
এই খপ্পরে অনেকে পড়ে পরে আফসোস করেছে। অথচ শরীয়তের মেজাজ হলো, মানুষের গোপন কথা বা দোষ ট্রুটি জানার চেষ্টা করা জায়েযের প্রশ্নই আসে না বরং তা আরো ঢেকে রাখার চেষ্টা করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। গুনাহ করা যেমন গুনাহ তদ্রুপ গুনাহের কথা অন্যের কাছে প্রকাশ করাও গুনাহ। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ অশ্লীল কাজ প্রকাশ করা পছন্দ করেন না।
রাসূলুল্লাহ সা. থেকে শ্রেষ্ঠ মুসলিহ আর কে?
অথচ হাজার হাজার হাদীসের পৃষ্ঠা অনুসন্ধান করেও এমন একটা ঘটনা পাওয়া যায় না যেখানে তিনি কারো গোপনীয় অবস্থা জানানোর প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে আর না তিনি কৌশলে জানার চেষ্টা করেছেন। বরং একাধিক হাদীস দ্বারা এর উল্টা মানুষের গোপন খারাপ অবস্থা জানার প্রতি তিনি বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। শুধু মায়েযে আসলামী আর ইমরাআতে গামিদিয়্যার হাদীস দেখুন।
রাসূলুল্লাহ সা. এর কি প্রতিক্রিয়া ছিলো?
না, তুমি এ কাজ করতেই পারো না, সম্ভবত তাকে স্পর্শ করেছো অথবা চুম্বন করেছো। এরপরও মায়েযে আসলামী রা. অটল থাকলে তিনি বললেন, ওর মাথা কি ঠিক আছে? মুখ শুঁকে দেখো তো মদ পান করেছে নাকি? অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ যথাসম্ভব চেষ্টা করেছেন সে নিজের খারাবীর কথা প্রকাশ না করুক। বরং আল্লাহর কাছে নিজের অবস্থা বলে সংশোধন করে নিক। অনেক মুরীদ শায়খের প্রতি অতিভক্তি প্রদর্শন করতে গিয়ে নিজের ঐ সমস্ত গোপন গুনাহের কথাও প্রকাশ করে দেয় যার উপর আল্লাহ তা’আলা নিজের মহান সাত্তারের গুনে পর্দা দিয়ে রেখেছিলেন। আরে ভাই আল্লাহর এই সাত্তারের পর্দা ফেঁড়ে আপনি কিভাবে সংশোধন হবেন? হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলতেন,
“আল্লাহ দুনিয়াতে যার গুনাহের উপর পর্দা দিয়ে গোপন রেখে মানুষের সামনে লাঞ্চিত করেন নাই আশা করা যায় আখেরাতেও আল্লাহ তার গুনাহের উপর পর্দা দিয়ে রাখবেন।”
আপনি চিন্তা করুন নিজের কোনো জঘন্য গুনাহের কথা শায়খের কাছে প্রকাশ করলেন এবং শায়খও আপনাকে কয়েক বছর মুজাহাদার মাধ্যমে পরিপূর্ণ ইসলাহ করে খেলাফতও দিয়ে দিলো কিন্তু তিনি কি কখনো আপনার বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে তার কন্যাকে আপনার কাছে বিবাহ দিবেন? আপনার অতীত কি তাকে এই কাজ থেকে বাঁধা দিবে না?
সুতরাং কখনই নিজের এমন গুনাহের কথা শায়খের কাছে প্রকাশ করা উচিত নয় যার উপর আল্লাহ পর্দা দিয়ে রেখেছেন। কেননা ইসলামে এমন কিছু গুনাহ আছে যা থেকে তওবা করলেও তার জের সম্পূর্ণরুপে মুছে ফেলা যায় না। তাহলে মাহদুদ ফিল কজফের ক্ষেত্রে
“ওলা তুকবালু শাহাদান আবাদা” নাযিল হতো না। ওয়াহশী রা. এর তাওবা যে খালেস ছিলো এতে তো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকীদায় বিশ্বাসী কোনো মানুষ সন্দেহ পোষণ করতে পারে না। রাসূলুল্লাহ সা.ও তো তার তওবা এবং ইসলাম গ্রহণ করেছেন কিন্তু হামযা হত্যার কথা তিনি বিস্মৃতি হননি। হযরত উমর ফারুক রা. তাঁর উপর মদ্যপানের অনেকবার হদ প্রয়োগ করার পরও যখন তাকে মদ্যপান থেকে নিবৃত্ত করতে পারলেন না তখন এ বলে তার অবস্থা আল্লাহর হাওয়ালা করে নিরাশ হয়ে বললেন যে, সম্ভবত এটা তার প্রতি রাসূলুল্লাহ সা. এর মনোকষ্টের প্রতিক্রিয়া। অথচ তার দ্বারায় ইসলামের কত খেদমতও আল্লাহ নিয়েছেন। মনে রাখতে হবে আবেগ আবেগের জায়গায় আর বাস্তবতা বাস্তবতার জায়গায় রাখতে হবে। একটি ঘটনা মনে পড়লো, একবার হযরত উমর রা. হযরত সালমান ফারসী রা. এর অনেক মানাকেব এবং ফাযায়েল বয়ান করলেন। তখন সালমান ফারসী রা. বললেন, আমার এতো মানাকেব এবং ফাযায়েলের কথা আপনি বললেন যা স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, তাহলে কুরাইশের কোনো মেয়েকে আমার সাথে বিবাহ দিন। হযরত উমর ফারুক রা. তখন আর কোনো কথা বললেন না।
কেননা হযরত সালমান ফারসী রা. এর মানাকেব আপন জায়গায় সঠিক কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, তার সাথে কুরাইশের কন্যা বিবাহ দিতে হবে। কেননা বিবাহের মধ্যে কুফুর মাসয়ালা আছে। আর আরব ও আযমের মধ্যে কুফু কিভাবে হবে? এজন্য উমর রা. নিশ্চুপ হয়ে গেছেন। আপনার যদি এমন কোনো গুনাহ থাকে যা আপনি শায়খের কাছে বলতে লজ্জা বা ইতস্ততবোধ করছেন তাহলে বুঝবেন এই কথা একমাত্র এক আল্লাহ ছাড়া কাউকে বলা যাবে না। রাত তিনটার সময় উঠে তাহাজ্জুদ পড়ে কান্নাকাটি করে নিজের গুনাহের কথা আল্লাহর কাছে স্বীকার করে মাফ করে নিন। কেননা হাকীকী মুসলিহ তো একমাত্র আল্লাহই। শায়খ বা মুরশিদ তো ইসলাহের উসীলা বা সবাব। এ কারনেই (মাজাজান) শায়খকে মুসলিহ বলা হয়।
“ইয়া আয়্যুহাল্লাজিনা আমানুত্তাকুল্লাহা ওয়া কূলূ কওলান সাদীদা ইয়ুসলিহ লাকুম আ’মালাকুম”
এর মধ্যে ইয়ুসলিহ এর ফায়েল তো আল্লাহই। সুতরাং মুসলিহে হাকীকীর কাছে নিজের অতীতের কৃত গুনাহগুলো স্বীকার করে মাফ করে নিন। আর শায়খের কাছে নিজের বর্তমান যে সমস্ত আখলাকে রাজীলাহ বা আমরাজে কলবিয়্যাহ আছে সেগুলোর ইসলাহ করুন। আমি এটা বলছি না যে শায়খের প্রয়োজন নাই। বর্তমান এই ফেতনার যুগে হক্কানী শায়খ ও মুরশিদ এর প্রয়োজনীয়তা এবং আবশ্যকীয়তা কোনো বিবেকবান সচেতন আলেম অস্বীকার করতে পারে না। আমি নিজেও একজন শায়খ ও মুরশিদের কাছে বায়আত এবং শায়খের সবক নিয়মিত আদায় করার চেষ্টা করি। বরং আমার উদ্দেশ্য হলো, শায়খের কাছে এমন গুনাহের কথা প্রকাশ করা উচিত নয় যার উপর আল্লাহ পর্দা দিয়ে রেখেছেন। সুতরাং এই পোষ্ট নিয়ে কোনো ধরনের ভূল বুঝাবুঝির অবকাশ নেই। ইসলাহ হওয়ার জন্য ইসলাম নিজের কৃত গুনাহের কথা শায়খের কাছে খুলে বলার উপর নির্ভরশীল করেনি। বরং মিম্নোক্ত শুধু দু’টি জিনিষের উপর ইসলাহের শর্তারোপ করেছেন তথা-
1. তাকওয়া বা আল্লাহর ভয়ে গুনাহবর্জন।
2. কওলে সাদীদ বা সত্যকথন। যদি কোনো ব্যক্তি কারো গোপন গুনাহের কথা শুনার প্রতি আগ্রহ বা লালায়িত দেখেন তাহলে বুঝতে হবে তিনি নিজেই আতিœক ব্যাধিতে আক্রান্ত। এ কারনে আকাবিরে আসলাফের জীবনীতে দেখা যায় তারা কখনোই অন্যেও গোপন গুনাহের কথা জানতে চেষ্টা করতেন না। এই কারনেই ইমাম আবু হানিফা র. প্রথমে যখন কাশফের মাধ্যমে মানুষের ওযুর পানির মধ্যে তার কৃত গুনাহের ধরন ও আছর দেখতে লাগলেন তখন তিনি মানুষের প্রতি খারাপ ধারনা সৃষ্টি হয়ে যাবে এই আশংকায় আল্লাহর এই কাশফ বন্ধ করে দেয়ার জন্য দোয়া করলেন। কেননা এটা স্পষ্ট তাজাসসুস। আর তাজাসসুস হারাম। ওয়ালা তাজাসসাসু। এগুলো আমার ধারণা বা কল্পনা নয়। বরং এই কাজ করে পরে অনেক মানুষকে অনুতপ্ত হতে দেখেছি। আল্লাহ তা’আলা সকলকে সঠিক বুঝার তাওফীক দান করুন।
লেখক: সিনিয়য়র শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া লালমাটিয়া, ঢাকা।
আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন!
আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে জানতে লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।
আইডিসি মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
আপনি আইডিসি মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.
আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।
কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।
ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।
ইসলামী দাওয়াহ সেন্টারকে সচল রাখতে সাহায্য করুন!
ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার ১টি অলাভজনক দাওয়াহ প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠানের ইসলামিক ব্লগটি বর্তমানে ২০,০০০+ মানুষ প্রতিমাসে পড়ে, দিন দিন আরো অনেক বেশি বেড়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।
বর্তমানে মাদরাসা এবং ব্লগ প্রজেক্টের বিভিন্ন খাতে (ওয়েবসাইট হোস্টিং, CDN,কনটেন্ট রাইটিং, প্রুফ রিডিং, ব্লগ পোস্টিং, ডিজাইন এবং মার্কেটিং) মাসে গড়ে ৫০,০০০+ টাকা খরচ হয়, যা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। সেকারনে, এই বিশাল ধর্মীয় কাজকে সামনে এগিয়ে নিতে সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে আপনাদের দোয়া এবং আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন, এমন কিছু ভাই ও বোন ( ৩১৩ জন ) দরকার, যারা আইডিসিকে নির্দিষ্ট অংকের সাহায্য করবেন, তাহলে এই পথ চলা অনেক সহজ হয়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।
যারা এককালিন, মাসিক অথবা বাৎসরিক সাহায্য করবেন, তারা আইডিসির মুল টিমের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন, ইংশাআল্লাহ।
আইডিসির ঠিকানাঃ খঃ ৬৫/৫, শাহজাদপুর, গুলশান, ঢাকা -১২১২, মোবাইলঃ +88 01609 820 094, +88 01716 988 953 ( নগদ/বিকাশ পার্সোনাল )
ইমেলঃ info@islamidawahcenter.com, info@idcmadrasah.com, ওয়েব: www.islamidawahcenter.com, www.idcmadrasah.com সার্বিক তত্ত্বাবধানেঃ হাঃ মুফতি মাহবুব ওসমানী ( এম. এ. ইন ইংলিশ, ফার্স্ট ক্লাস )
Related Posts
Leave a Reply Cancel reply
Categories
- advices
- Ahle Hadis
- Allah
- Amal
- Arabic Communication
- Arabic Grammar
- Arif Azad
- Bangladesh
- Biography
- Child care
- Country
- Death
- Dowry
- Dua
- Education
- Eid
- Family
- Fasting
- Fatwa
- Gazwatul Hind
- Hadith
- Hajj
- Halal or Haram
- Humble
- Husband & Wife
- IDCM
- Iman
- Interest
- Islamic Books
- Islamic Days
- Islamic Economi
- Islamic Education
- Islamic FAQ
- Islamic Future
- Islamic History
- Islamic Lectures
- Islamic Life
- Islamic Politics
- Islamic Rules
- islamic song
- islamic story
- Jihad
- Jinn
- let's learn arabic
- Magic
- Marriage
- Mosque
- Motivation
- Muhammad SM
- Muslims
- News
- Parenting
- Patriotism
- Pending
- Personal Development
- Poet
- Pornography
- Press Release
- Prophets
- Quran
- Quran and Science
- Quran Interpretation
- Qurbani
- Relations
- Rizq
- Ruqyah
- Sacrifice
- Sadaqah
- Safety
- Sahaba
- Salah
- Salat
- Sex
- Sin
- Tajweed
- Taqwa
- Tasawwuf
- Tawba
- Tawhid
- Veil
- Weed
- Zakat
Recent Posts
- ব্যাংকে রাখা ফিক্সড ডিপোজিটের উপর কি প্রতি বছর যাকাত আবশ্যক? – Zakat on Fixed Deposit – সমিতির টাকার ওপর জাকাত আসবে কি? March 25, 2023
- Symptoms of Bad and Good Death – খারাপ এবং ভালো মৃত্যুর আলামত সমূহ March 20, 2023
- Taweez in Islam – ইসলামে তাবিজ জায়েজ হলেও কেন তাবিজ থেকে দূরে থাকা উত্তম? March 20, 2023
- Dua to be rich – ধনী হওয়ার দোয়া/আমল- আজ থেকেই শুরু হোক ধনী হওয়ার পথচলা March 7, 2023
- Islam has never encouraged polygamy – ইসলাম একাধিক বিয়েকে কখনো উৎসাহিত করে নি! January 9, 2023