Islam values good manners the most – ইসলাম ভালো আচরণকে সবচেয়ে বেশি মূল্য দেয়

 

ভালো ব্যাবহার আমরা সবাই প্রত্যাশা করি। কিন্তু আমরা প্রায়ই অন্যের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করিনা। সামান্য একটু অসতর্কতার কারণে আমাদের আচরণে একজন মানুষ অনেক কষ্ট পেতে পারে। তাই আমাদের সবসময় সচেতন থাকা উচিত; যাতে আমাদের আচরণে কেউ বিন্দুমাত্র কষ্ট না পায়।

যার আচরণ যত বেশি সুন্দর সবাই তাকে তত বেশি ভালোবাসে, সম্মান ও শ্রদ্ধা করে। যার আচরণ ভালো নয় সবাই তাকে ঘৃণা করে ও এড়িয়ে চলে। সুন্দর ব্যবহার সুন্দরভাবে কথা বলা সুন্দর মনের পরিচয় বহন করে।

মানুষের একটি ভালো কথা যেমন একজনের মন জয় করে নিতে পারে, তেমনি একটু খারাপ বা অশোভন আচরণ মানুষের মনে কষ্ট দেয়। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হিসেবে আমাদের উচিৎ সর্বদা মানুষের সঙ্গে ভালো ও সুন্দর ব্যাবহার করা।

Islam values good manners the most – ইসলাম ভালো আচরণকে সবচেয়ে বেশি মূল্য দেয় (আল-কুরআনের বর্ণনা) : 

পবিত্র আল-কুরআনে সুন্দর আচরণের ব্যাপারে অনেক আয়াত রয়েছে। আল্লাহর নবীও ছিলেন সুন্দর আচরণের মূর্তপ্রতীক। নিন্মে সুন্দর আচরণ সম্পের্কে কিছু আয়াত উল্লেখ করা হলো :

# আল্লাহ্ বলেন, আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন, পক্ষান্তরে আপনি যদি রূঢ় ও কঠিন হৃদয় হতেন, তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। কাজেই আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য মাগফিরাত কামনা করুন। (সূরা আল-ইমরান : ১৫৯)।

# আল্লাহ্ বলেন, মুমিনদের জন্য আপনি আপনার ডানা অবনমিত করুন অর্থাৎ কোমল আচরণ করুন। (সূরা হিজর : ৮৮)।

# আল্লাহ্ বলেন, কেউ যখন তোমাকে সৌজন্যমূলক সম্ভাষণ জানাবে প্রতি-উত্তরে তুমি তাকে তার চাইতে সুন্দর ধরনের সম্ভাষণ জানাও, কিংবা অন্তত ততটুকুই জানাও। (সূরা নিসা ৮৬)।

# আল্লাহ্ বলেন, তোমরা আল্লাহ্ ছাড়া কারও উপাসনা করবে না, পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, এতিম ও দরিদ্রদের সাথে সদ্ব্যবহার তথা সুন্দর আচরণ করবে এবং মানুষকে সুন্দর কথা বলবে। (সূরা বাকারা : ৮৩)।

# মহান আল্লাহ্ বলেন, তোমরা তোমাদের পিতা-মাতা, নিকটাত্মীয়, এতিম, দরিদ্র, প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, পথিক এবং যারা তোমাদের অধিকারে এসেছে, সবার সাথে সুন্দর আচরণ কর। (সূরা নিসা : ৩৬)।

# আল-কুরআনে ইরশাদ হচ্ছ, পৃথিবীতে দম্ভভরে পদচারণা করো না। নিশ্চয় তুমি তো ভূপৃষ্ঠকে কখনোই বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনোই পর্বত সমান হতে পারবে না। এসবের মধ্যে যেগুলো মন্দ কাজ সেগুলো তোমার পালনকর্তার কাছে অপছন্দনীয়। (সূরা বনি ইসরাইল : ৩৭-৩৮)।

# স্বয়ং রাসূল (সাঃ) ছিলেন উত্তম নৈতিক চরিত্রের সর্বোত্তম মডেল। আল্লাহ্ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আপনি উত্তম নৈতিক চরিত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত।’ (সূরা আল-কালাম : ৪)।

# মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘রহমান-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মূর্খরা কথা বলতে থাকে, তখন তারা বলে, সালাম।’ (সূরা আল-ফুরকান : ৬৩)।

Islam values good manners the most – ইসলাম ভালো আচরণকে সবচেয়ে বেশি মূল্য দেয় (হাদিস শরীফের বর্ণনা) :

এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন মুমিনের আমলনামায় সুন্দর আচরণের চেয়ে অধিক ভারী আমল আর কিছুই হবে না। যে ব্যক্তি অশ্লীল ও কটু কথা বলে বা অশোভন আচরণ করে, তাকে আল্লাহতায়ালা ঘৃণা করেন। আর যার ব্যবহার সুন্দর, সে তার ব্যবহারের কারণে নফল রোজা ও তাহাজ্জুদের সওয়াব লাভ করবে। ’ -সুনানে তিরমিজি

# রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘সবচেয়ে বেশি যা মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে তা হলো- আল্লাহতায়ালার ভয় ও সুন্দর আচরণ। আর সবচেয়ে বেশি যা মানুষকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবে তা হলো- (মানুষের) মুখ এবং লজ্জাস্থান। ’ -সুনানে তিরমিজি

# রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘সুন্দর আচরণই নেক আমল। ’ –সহিহ মুসলিম

# রাসূল (সা.) আরও বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যার আচার-ব্যবহার সুন্দর, সে আমার সবচেয়ে বেশি প্রিয় এবং কিয়ামতের দিন সে আমার সবচেয়ে কাছে থাকবে। ’ -সুনানে তিরমিজি

# রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও ইরশাদ করেন, ‘অশোভন-অশ্লীল কথা ও আচরণের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। আর যার আচরণ যত সুন্দর তার ইসলাম তত সুন্দর। ’ -মুসনাদে আহমদ

# আরেক হাদিসে আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যার আচার-ব্যবহার সুন্দর, আমি তার জন্য সর্বোচ্চ জান্নাতে একটি বাড়ির নিশ্চয়তা প্রদান করছি। -সুনানে আবু দাউদ

# রাসূল (সা.) আরও বলেছেন, ‘যদি কেউ বিনম্রতা ও নম্র আচরণ লাভ করে, তাহলে সে দুনিয়া ও আখেরাতের পাওনা সব কল্যাণই লাভ করল। আর রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং সুন্দর আচরণ বাড়িঘর ও জনপদে বরকত দেয় এবং আয়ু বৃদ্ধি করে। ’ –আহমদ

এক বোন ভালো ব্যাবহার এর সুন্দর একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন যা আমাদের জন্য শিক্ষণীয়। আপনাদের সুবিধার্থে তা এখানে উল্লেখ করলাম।

 

‘অনার্স থার্ড ইয়ারে থাকতে এক স্বনামধন্য প্রফেসর স্যারের ছেলেকে পড়াতাম। নিজের শিক্ষকের ছেলেকে তার বাসায় পড়াতে গিয়ে দেখলাম, আমি পড়ার টেবিলে বসলে আমার স্টুডেন্ট যতটা তাড়াহুড়া করে তার বই খাতা আনতো, তার চেয়ে প্রফেসর স্যার আরো দ্রুত তার ছেলের বই খাতা নিয়ে আসতো আই মিন ছেলেকে হেল্প করতেন। ওনার ছেলে পড়া না শিখলে স্যার এসে ক্ষমা চেয়ে নিতেন! মারার জন্যে বেত দিয়ে যেতেন!

আমার প্রতি আমার ছাত্রের যতটা না ভক্তি ছিলো, তার চেয়েও বেশি ভক্তি এবং শ্রদ্ধা ঐ প্রফেসর স্যার আমাকে করতেন। আমি নিজেই লজ্জা পেয়ে যেতাম। চুপ করে থাকতাম স্যারের কান্ড দেখে, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা আরও বেড়ে যেতো।

স্যারকে একদিন জিজ্ঞেস করলাম, ‘স্যার আপনি তো আমাকে নাম ধরেই ডাকতে পারেন!’ তখন স্যার উত্তর দিলেন, “মা, আমি যেভাবে তোমাকে ট্রিট করবো, আমার ছেলেও তোমাকে সেভাবেই ট্রিট করবে, আমি তোমাকে সম্মান প্রদর্শন না করলে, সে শিখবে কোথা থেকে? আমার ছেলে, শিক্ষকের সম্মান বুঝবে কি করে, আমি যদি তার শিক্ষককে ঐ সম্মানটা দিতে না পারি!’

আমি জাস্ট অবাক হয়ে তাকিয়েছিলাম!!

এখনকার বাবা-মা’রা তার ছেলে-মেয়েদের সামনেই শিক্ষককে প্রশ্ন করে — কি ব্যাপার কাল আসলা না কেনো? সময় দিয়ে পড়াও না কেনো? শিখায়ে দাওনা কেনো? তোমার পড়ানো বুঝেনা কেনো? শিক্ষক বেরিয়ে গেলে তার মোজার গন্ধ- মুখের গন্ধ- পোশাক নিয়ে হাসাহাসি হয়!!! আরও অনেক কিছু!

অভিভাবক হিসেবে যে শিক্ষককে অসম্মান করছি তার স্টুডেন্ট এর সামনে, সেই শিক্ষক যদি তাকে পড়াশোনা গলাধঃকরণ করেও দেয়, দিন শেষে এই শিক্ষা আপনার ছেলে-মেয়ের কোনো কাজে আসবেনা! লিখে রাখেন! কারন স্ব-সম্মানিত মানুষ যা বুঝাবে আপনার ছেলে-মেয়ে তার কিয়দংশ হলেও গ্রহন করতে পারবে। আর অসম্মানিত মানুষ আপনার বাচ্চাকে যা-ই পড়াক না কেনো, ঐ পড়া কিন্তু তার মাথায় সহজে ঢুকবেনা। কারণ সন্তানের কাছে ঐ শিক্ষকের ভ্যালু আপনি নিজেই কমিয়ে দিয়েছেন।

সুন্দর আচরণ বলতে আমরা বুঝি কারও সাথে সুন্দর করে কথা বলা, দেখা হলে সালাম দেয়া, কুশলাদি জিজ্ঞেস করা, কর্কশ ও কঠিন ভাষায় কথা না বলা, ঝগড়া-ফাসাদে লিপ্ত না হওয়া, ধমক বা রাগের সুরে কথা না বলা, গিবত বা পরনিন্দা না করা, অপমান-অপদস্থ না করা, উচ্চ আওয়াজে কথা না বলা, গম্ভীর বা কালো মুখে কথা না বলা, সর্বদা হাসিমুখে কথা বলা, অন্যের সুখে সুখী হওয়া এবং অন্যের দুঃখে দুঃখী হওয়া, বিপদে দেখা করে সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রকাশ করা সুন্দর আচরণের অন্তর্ভুক্ত। প্রকৃতপক্ষে মানুষের ভালো-মন্দ পরিচয় নির্ভর করে সুন্দর আচরণের ওপর। তাই Islam values good manners the most – ইসলাম ভালো আচরণকে সবচেয়ে বেশি মূল্য দেয়। 

 

IDC Partner

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন।

 

আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে বিস্তারিত জানতে  লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।

আইডিসি  মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আপনি আইডিসি  মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।

Islami Dawah Center Cover photo

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টারকে সচল রাখতে সাহায্য করুন!

 

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার ১টি অলাভজনক দাওয়াহ প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠানের ইসলামিক ব্লগটি বর্তমানে ২০,০০০+ মানুষ প্রতিমাসে পড়ে, দিন দিন আরো অনেক বেশি বেড়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।

বর্তমানে মাদরাসা এবং ব্লগ প্রজেক্টের বিভিন্ন খাতে (ওয়েবসাইট হোস্টিং, CDN,কনটেন্ট রাইটিং, প্রুফ রিডিং, ব্লগ পোস্টিং, ডিজাইন এবং মার্কেটিং) মাসে গড়ে ৫০,০০০+ টাকা খরচ হয়, যা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। সেকারনে, এই বিশাল ধর্মীয় কাজকে সামনে এগিয়ে নিতে সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে আপনাদের দোয়া এবং আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন, এমন কিছু ভাই ও বোন ( ৩১৩ জন ) দরকার, যারা আইডিসিকে নির্দিষ্ট অংকের সাহায্য করবেন, তাহলে এই পথ চলা অনেক সহজ হয়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ। যারা এককালিন, মাসিক অথবা বাৎসরিক সাহায্য করবেন, তারা আইডিসির মুল টিমের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন, ইংশাআল্লাহ।

আইডিসির ঠিকানাঃ খঃ ৬৫/৫, শাহজাদপুর, গুলশান, ঢাকা -১২১২, মোবাইলঃ +88 01609 820 094, +88 01716 988 953 (নগদ/বিকাশ পার্সোনাল) ইমেলঃ info@islamidawahcenter.com, info@idcmadrasah.com, ওয়েব: www.islamidawahcenter.com, www.idcmadrasah.com সার্বিক তত্ত্বাবধানেঃ হাঃ মুফতি মাহবুব ওসমানী (এম. এ. ইন ইংলিশ)