Magic To Break Marriage and Ruqyah | বিয়ে ভাঙার যাদু এবং রুকইয়াহ
Magic To Break Marriage and Ruqyah | বিয়ে ভাঙার যাদু এবং রুকইয়াহ
বিয়ে ভাঙার যাদু / Magic-To-Break-Marriage
কাউকে বিয়ে ভাঙা বা আটকে রাখার জন্য বান মারলে অথবা তাবিজ করলে অথবা যাদু করলে সাধারণত এমন দেখা যায় প্রস্তাব আসে, সবকিছু পারফেক্ট থাকলেও পছন্দ হয়না। সব ঠিকঠাক থাকার পরও হয়তো ছেলে বেঁকে বসে, নয়তো মেয়ে। কোনোনা কোনোভাবে বিয়ে ভেঙে যায়। মেয়েদের ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক গুণধর হওয়া সত্ত্বেও কোনো প্রস্তাব আসে না। কেউ প্রস্তাব দিলে পছন্দ হওয়ার বদলে উল্টা খারাপ লাগতে লাগে। আমার এক রিলেটিভের এই সমস্যা ছিল, ওর বিয়ের আলোচনা উঠলেই সপ্তাহ-খানেকের জন্য অসুস্থ হয়ে যেত! কত মারাত্মক! তাইনা?
এই যাদুতে আক্রান্ত হলে সচরাচর কিছু লক্ষণ দেখা যায়-
১. মাথা ব্যথা। ঔষধ খেয়েও তেমন ফায়দা হয়না।
২. প্রায়সময়ই মানসিক অশান্তিতে থাকা, থাকা। মাঝেমধ্যেই বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত খুব অস্বস্তিতে ভুগা।
৩. ঘুমের মধ্যে শান্তি না পাওয়া, ঠিকমত ঘুমোতে না পারা, আবার ঘুম থেকে উঠার পর অনেকক্ষণ কষ্ট হওয়া।
৪. মাঝেমধ্যেই পেট ব্যথা করা।
৫. ব্যাকপেইন। বিশেষত: মেরুদণ্ডের নিচের দিকে ব্যথা করা।
লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, অনেকের ওপর বিয়ের আটকে রাখার জন্য যাদু করতে জ্বিনের সাহায্য নেয়া হয়। এজন্য কারো-কারো এই যাদু সংক্রান্ত সমস্যার সাথে সাথে জ্বিন রিলেটেড সমস্যাগুলোও দেখা যায়। দুঃখজনক হলেও সত্য, এই শয়তানী যাদুর প্রচলন আমাদের দেশে খুব বেশি, আল্লাহ হিফাজত করুন। আমরা প্রথমে সামনা সামনি রুকইয়ার পদ্ধতি আলোচনা করে, তারপর সেলফ রুকইয়ার নিয়ম আলোচনা করবো।
রাকি দিয়ে বিয়ে ভাঙার রুকইয়া পদ্ধতি
১. আপনি পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে রুগীর পাশে বসে জোর আওয়াজে রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়বেন, মাঝেমধ্যে ফুঁ দিবেন। যদি জ্বিনের সমস্যা থাকে তবে রুগীর ওপর জ্বিন চলে আসবে, জিন এলে জিজ্ঞেস করতে পারেন- ‘কিভাবে যাদু করেছে, যেসব জিনিশ দিয়ে যাদু করেছে, সেগুলো কোথায় আছে’। জ্বিনেরা যদিওবা খুব মিথ্যুক তবুও যদি বলে দেয় ভালো, না বললে নাই। যাহোক, সম্ভব হলে এটা জিজ্ঞেস করে, তারপর জ্বিন তাড়াবেন। ( জিন চিকিৎসার বিস্তারিত এই লিংক থেকে দেখুন।) আর যাদুর জিনিশ যদি পাওয়া যায়, তাহলেঃ
“সুরা আ’রাফ ১১৭-১২২ঃ
ইউনুস ৮১-৮২ঃ
সুরা ত্বহা ৬৯”
উপরের আয়াতগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে সেগুলো কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখতে হবে, তাহলে ইনশাআল্লাহ যাদু নষ্ট হয়ে যাবে।
২. আর যদি জ্বিন না আসে, এমনি অস্বস্তি বোধ করে, ঘুমঘুম লাগে, মাথাব্যথা করে, কান্না পায়-তাহলে বুঝতে জ্বিন দিয়ে যাদু করেনি, অন্যভাবে করেছে, তাহলে আরও ২/১বার রুকইয়া করে দেখুন, এরপর ৩য় পয়েন্ট অনুসরণ করুন।
৩. উপরের নিয়মে রুকইয়া করার পর একটা বোতলে পানি নিয়ে “সুরা আ’রাফ ১১৭-১২২, ইউনুস ৮১-৮২, সুরা ত্বহা ৬৯” আয়াতগুলো পড়ে ফুঁ দিন , আয়াতগুলো উপরে দেয়া আছে। পানি কিছুটা এখনি খেতে বলুন, বাকিটা রেখে দিতে বলুন। এরপর নিচের প্রেসক্রিপশন ফলো করতে বলে দিন, আর এক-দুই সপ্তাহ পরপর আপডেট জানাতে বলুন।
বিয়ে ভাঙার সেলফ রুকইয়া পদ্ধতি।
১. বিয়ে সমস্যার জন্য নিজে নিজে রুকইয়া করতে চাইলে প্রথমে মানসিক প্রস্তুতি নিন, এটা পাক্কা নিয়ত করে নিন সমস্যার একটা বিহিত করেই ক্ষান্ত হবো, নিজে নিজে রুকইয়া করলে অনেককে কয়েকদিন পরেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে দেখা যায়। এজন্য রুকইয়া করার ক’দিন মানসিক সাপোর্ট দেয়ার মত একজন থাকলে খুব ভালো হয়।
২. খুব ভালোভাবে পাক-পবিত্র হয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়ুন, সবচেয়ে উত্তম হল তাহাজ্জুদের সময়, নইলে অন্য যেকোনো জায়েজ ওয়াক্তে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ুন, এরপর দু’হাত তুলে আল্লাহর কাছে আপনার সমস্যা থেকে ‘পরিত্রাণের’ জন্য এবং সুস্থতার জন্য দু’আ করে, ইস্তিগফার ও দরুদ শরিফ পড়ে ট্রিটমেন্ট শুরু করুন। হাতের কাছে এক বোতল পানি নিয়ে বসুন। প্রথমে সিহরের রুকইয়া অথবা শাইখ সুদাইসের বা অন্য কোনো ক্বারির সাধারণ রুকইয়া শুনুন। সমস্যা থাকলে অবশ্যই বুঝতে পারবেন, যেমন: অনেক ঘুম ধরবে, মাথাব্যথা করতে পারে, তলপেটে ব্যথা করতে পারে, হাতপা ব্যথা করতে পারে, শরীরের ভেতর ছটফট করতে পারে, অকারণে কান্না আসতে পারে। কিছু খাইয়ে যাদু করলে রুকইয়া শুনতে গিয়ে বমি বমি লাগতে পারে, বমি হয়ে গেলে ভালো, হয়তোবা সাথে যাদুর জিনিশ বের হয়ে যাবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যাদের রুকইয়া শুনে বমি হয়, সাধারণত তাঁরা সহজেই সুস্থ হয়ে যান।
৩. রুকইয়া শোনার পর পানির বোতলটি নিন, নিয়ে “সুরা আ’রাফ ১১৭-১২২, ইউনুস ৮১-৮২, সুরা ত্বহা ৬৯” এই আয়াতগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিন। কিছু পানি এখনি খেয়ে নিন, বাকিটা রেখে দিন এবং নিচের প্রেসক্রিপশন ফলো করুন।
বিয়ে ভাঙার রুকইয়াহ প্রেসক্রিপশন:
১. এই পানি ৩দিন বা ৭দিন দুইবেলা করে খেতে হবে, আর প্রতিদিন গোসলের পানিতে কিছু পানি মিশিয়ে গোসল করতে হবে। চাইলে আপনি সাধারণ রুকইয়ার গোসলও করতে পারেন (নিয়ম নিচে দেয়া আছে)। আর রুকইয়ার ওঁই পানি যদি শেষ হয়ে যায়, তাহলে আবার এক বোতল পানি নিয়ে শুদ্ধ করে কোরআন পড়তে পারে; এরকম কেউ আয়াতগুলো পড়ে ফুঁ দিলেই হবে। এজন্য প্রফেশনাল কারো দরকার নেই, তবে বরকতের জন্য কোনো মুরব্বি অথবা আলেমকে অনুরোধ করতে পারেন, সেটা ভিন্ন বিষয় তবে যার সমস্যা সে নিজে পড়তে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়।
সাধারণ রুকইয়ার গোসল: বালতিতে পানি নিয়ে তাতে দু’হাত ডুবিয়ে যেকোনো দরুদ শরিফ, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ইখলাস, ফালাক, নাস, শেষে আবার দরুদ শরিফ- সব ৭ বার করে পড়ে ওই পানি দিয়ে গোসল করবেন, উপরের যেকোনোভাবে রুকইয়ার গোসল করে পরে চাইলে অন্য পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন।
২. দুই থেকে চার সপ্তাহ প্রতিদিন ২ ঘণ্টা করে রুকইয়া শুনতে হবে, আয়াতুল কুরসি’র রুকইয়া ১ঘন্টা, সুরা ইখলাস, ফালাক্ব, নাস-এর রুকইয়া ১ঘন্টা। কোনো দিন খুব ব্যস্ত থাকলে আধাঘণ্টা করে হলেও শুনবেন, বাদ দিবেন না। ( রুকইয়াহ অডিও লিংকঃ https://islamidawahcenter.com/ruqyah-audio/ ) তবে এখানে একটা অপশন আছে, প্রতিদিন শোনার ক্ষেত্রে অন্য কারো হেল্প নিতে পারেন, অর্থাৎ অন্য কেউ যদি আপনার সমস্যার নিয়াতে রুকইয়া শোনে তবুও আপনি উপকার পাবেন, ব্যস্ততা থাকলে চাইলে ভাগ করে নিতে পারেন, আপনার ফ্রেন্ড শুনল ১ঘন্টা, আপনি ১ঘন্টা শুনলেন! এটা পরিক্ষিত!!
৩. রুকইয়া ভালোভাবে কাজ করার জন্য নামাজ-কালাম ঠিকঠাক পড়তে হবে, ফরজ ইবাদাতে যেন ত্রুটি না হয়। (মেয়েদের পর্দা করা ফরজ)
৪. সকাল সন্ধ্যার মাসনুন দোয়া, এবং ৩ কুল (সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস)এর আমল ঠিকঠাক করবেন।
৫. ঘুমের আগে আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমাবেন, আর তিনবার ৩ কুল পড়ে হাতে ফুঁ দিয়ে পুরো শরীরে হাত বুলিয়ে নিবেন।
লক্ষনীয়ঃ ৩ – ৭দিন রুকইয়ার পানি খেতে হবে এবং গোসল করতে হবে। আর ২ থেকে ৪ সপ্তাহ প্রতিদিন রুকইয়া শুনতে হবে।
মন্তব্য: ১। কয়দিন মেয়াদি রুকইয়া করবেন এটা প্রথমেই ঠিক করে নিন। অর্থাৎ ৩দিন না ৭দিন পানি খাবেন আর গোসল করবেন, কতদিন রুকইয়া শুনবেন ২ সপ্তাহ, ৩ সপ্তাহ নাকি ১মাস এগুলো শুরুতেই ঠিক করে নিন, প্রতি সপ্তাহ শেষে যে আপনাকে মানসিক সাপোর্ট দিচ্ছে তাঁরসাথে আপনার অবস্থা পর্যালোচনা করুন।
২। উপরের নিয়ম অনুযায়ী একবার ২সপ্তাহ বা একমাসের রুকইয়া শেষে আল্লাহ না করুক যদি বুঝেন সমস্যা এখনো যায়নি, তবে আবার শুরু থেকে রুকইয়া করবেন, অনেকে ওপর একাধিক যাদু করে, তখন একটা একটা করে চিকিৎসা করতে হবে।
৩। খেয়াল রাখবেন, বিয়ের জন্য রুকইয়া করতে গেলে অধিকাংশেরই প্রথম প্রথম বেশ কষ্ট হয়, কখনো সমস্যা বেড়ে যায়, তবে ধৈর্য ধরে চিকিৎসা করে যেতে হবে, ইনশাআল্লাহ! আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।
৪. বেশীরভাগ ক্ষেত্রে প্রথম সপ্তাহেই উন্নতি টের পাওয়া যায়, তবে এরপরেও সপ্তাহখানেক আধঘণ্টা-একঘণ্টা করে হলেও রুকইয়া শুনে যাওয়া উচিৎ, তাহলে ইনশাআল্লাহ সুস্থ হয়ে যাবেন।
৫. আর যাদুর কারণে যদি শারীরিক কোনো সমস্যা তথা অসুখ-বিসুখ হয়, যা ভালো হচ্ছিলো না। এসবের জন্য রুকইয়া করার পর ডাক্তারের চিকিৎসা করালে ঠিক হয়ে ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ তায়ালা আমাদের হেফাজত করুন! আমীণ!
Prayers of quick marriage – যে আমলে নারী-পুরুষের দ্রুত বিয়ে হয়
বিয়ে একটি মানবিক প্রয়োজন। মহান আল্লাহ তাআলার বিধানও বটে। মূলত সৃষ্টিগতভাবেই নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। নারী ছাড়া পুরুষ এবং পুরুষ ছাড়া নারীর জীবন অসম্পূর্ণ। বিয়ের মাধ্যমে মানুষের নিঃসঙ্গতা ও একাকীত্ব দূর হয়। জীবনে সুখ-প্রশান্তি ও আনন্দের ফল্গুধারা বয়ে যায়।
বস্তুত জীবনে বিয়ের গুরুত্ব কী বলার অপেক্ষা রাখে না। আল্লাহ তাআলা হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করার পর হজরত হাওয়া (আ.)-কে তার জীবনসাথিরূপে সৃষ্টি করেন। তাদের বিয়ের মাধ্যমে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করে দেন। সেই ধারাবাহিকতা এখনো পৃথিবীতে চলমান।
পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আর তাঁর (আল্লাহ) নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে যে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও মায়া সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা রুম, আয়াত : ২১)
আরও পড়ুন : দাম্পত্য জীবনে মিথ্যা বলা জায়েজ?
কোন আমল করলে দ্রুত বিয়ে হয় কিংবা বিয়ের ব্যবস্থা ও আনুসাঙ্গিক অন্যান্য কাজ সহজ হয়, এই ব্যাপারে উলামায়ে কেরাম অনেক আমলের কথা উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে বিশেষ দুইটি কোরআনি আমলের কথা এখানে উল্লেখ করা হচ্ছে।
যে দোয়ায় উত্তম জীবনসঙ্গী লাভ হয়
পবিত্র কোরআনুল কারিমে আল্লাহর নবী মুসা (আ.)-এর কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। সেখানে মুসা (আ.)-এর একটি দোয়াও এসেছে। যে দোয়া পড়ার পর আল্লাহ তাআলা তার বিয়ে ও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। আশ্রয়ের পাশাপাশি উত্তম জীবনসঙ্গীনিরও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সেই দোয়াটি হলো-
ﺭَﺏِّ ﺇِﻧِّﻲ ﻟِﻤَﺎ ﺃَﻧْﺰَﻟْﺖَ ﺇِﻟَﻲَّ ﻣِﻦْ ﺧَﻴْﺮٍ ﻓَﻘِﻴﺮٌ – উচ্চারণ : রাব্বি ইন্নি লিমা- আনজালতা ইলাইয়া মিন খাইরিন ফাকির।
অর্থ : হে আমার পালনকর্তা, তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ পাঠাবে, আমি তার মুখাপেক্ষী। (সুরা আল-কাসাস, আয়াত : ২৪)
চক্ষু শীতলকারী স্ত্রী/স্বামী লাভের দোয়া
আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের পরিচয়ে অনেক গুণাগুণের কথা কোরআনে বলা হয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম হলো- তারা পুণ্যবান স্ত্রী ও সন্তানের জন্য দোয়া করেন। কোরআনে বর্ণিত দোয়াটি আপনিও করতে পারেন। ইনশাআল্লাহ আপনি প্রশান্তিদায়ক স্ত্রী লাভে ধন্য হবেন। দোয়া শিখিয়ে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻫَﺐْ ﻟَﻨَﺎ ﻣِﻦْ ﺃَﺯْﻭَﺍﺟِﻨَﺎ ﻭَﺫُﺭِّﻳَّﺎﺗِﻦَﺍ ﻗُﺮَّﺓَ ﺃَﻋْﻴُﻦٍ ﻭَﺍﺟْﻌَﻠْﻨَﺎ ﻟِﻠْﻤُﺘَّﻘِﻴﻦَ ﺇِﻣَﺎﻣًﺎ – উচ্চারণ : রাব্বানা-হাবলানা-মিন আজওয়া-জিনা- ওয়া যুররিইয়া-তিনা, কুররাতা আ‘ইউনিওঁ, ওয়াজ‘আলনা-লিলমুত্তাকিনা ইমা-মা-।
অর্থ : হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান করো এবং আমাদের আল্লাহভীরুদের জন্য আদর্শস্বরূপ করো। (সুরা ফুরকান, আয়াত : ৭৪)
সুতরাং যারা বিয়ের উপযুক্ত বা বিয়ের বয়স হয়েছে কিংবা বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে, তাদের জন্য দ্রুত বিয়ে করতে রয়েছে কিছু আমল। যে আমল করলে আল্লাহর অনুগ্রহে দ্রুত বিয়ে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এর কিছু হলো-
ইসতেগফা করা
সব সময় জবানে ইসতেগফার জারি রাখা। অর্থাৎ ‘আসতাগফিরুল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ’ পড়া। কেননা যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইসতেগফার করে, সে মুসতাজেবুদ দাওয়াহ হয়ে যায়। যার দোয়া আল্লাহ কখনো ফেরত দেন না।
اَسْتَغْفِرُ الله – اَسْتَغْفِرُ الله – উচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ।
اَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِىْ لَا اِلَهَ اِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ وَ اَتُوْبُ اِلَيْهِ – উচ্চারণ : ‘আসতাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।’
সুরা ইয়াসিন পাঠ করা
সুরা ইয়াসিন বিয়ে সংক্রান্ত সব সমস্যার সমাধান করে দেয়। সুরা ইয়াসিন পড়ার একটি বিশেষ আমল রয়েছে। যাদের বিয়ের প্রস্তাব আসে কিন্তু বিয়ে হয় না। তাদের জন্য এ আমলটি কার্যকরী। আর তাহলো-
সুরা ইয়াসিনে ৭টি মুবিন রয়েছে। প্রতিদিন সকালে সূর্য যখন পূর্ব আকাশে লাল হয়ে উঠে তখন, পশ্চিমমুখী হয়ে সুরা ইয়াসিন পড়া। আর যখনই ‘মুবিন’ শব্দ তেলাওয়াত করা হবে তখনই শাহাদাত আঙুল দিয়ে পেছনের দিকে অর্থাৎ সূর্যের দিকে ইশারা করা।
সুরা আদ-দোহাসহ সুরা কাসাসের এ আয়াত পাঠ করা-
فَسَقَى لَهُمَا ثُمَّ تَوَلَّى إِلَى الظِّلِّ فَقَالَ رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ উচ্চারণ : ‘ফাসাক্বা লাহুমা ছুম্মা তাওয়াল্লা ইলাজজিল্লি ফাক্বালা রাব্বি ইন্নি লিমা আংযালতা ইলাইয়্যা মিন খায়রিং ফাক্বির।’
হজরত মুসা আলাইহিস সালাম যখন খুব একাকি ও বিষন্নতা অনুভব করতেন তখন তিনি এ আয়াতটি বেশি বেশি পাঠ করতেন।
তাই ওলামায়ে কেরাম নারী-পুরুষদের এ আমলটি দিয়ে থাকেন। যদি কোনো ছেলে এ আয়াতটি ১০০ বার পাঠ করে তাহলে শীঘ্রই আল্লাহ তাআলা তার জন্য ভালো পাত্রীর ব্যবস্থা করে দেন। আর মেয়েরা যদি নিয়মিত সুরা দোহা ১১ বার তেলাওয়াত করে তবে তাদের জন্য আল্লাহ তাআলা সর্বোত্তম পাত্রের ব্যবস্থা করে দেন।
সুরা তাওবার 129 নং আয়াতটি তেলাওয়াত করা
فَإِن تَوَلَّوْاْ فَقُلْ حَسْبِيَ اللّهُ لا إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ – উচ্চারণ : ফাইং তাওয়াল্লাও ফাকুল হাসবিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহুয়া আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আজিম।’
প্রতিদিন নামাজ আদায় করার পরপর বিয়ে আকাঙ্খী নারী-পুরুষের নিয়মিত এ আমলটি করা।
সুরা মরিয়ম পড়া
দিনের যে কোনো ওয়াক্তের নামাজ আদায় করে সুরা মারইয়াম তেলাওয়াত করা। এ আমলটি যারা বিয়ে করবে তারা পড়বে। যদি ছেলে মেয়েরা না পড়ে কিংবা পড়তে না পারে তাদের বাবা-মা বা অভিভাবকরাও পড়তে পারবে।
তাসবিহে ফাতেমি পড়া
নিয়মিত নামাজের পর তাসবিহে ফাতেমি পড়া। আর তাসবিহে ফাতেমি পড়ার আগে কুরআন তেলাওয়াত ও দরূদ পাঠ করে পড়া উত্তম। তাসবিহে ফাতেমি হলো-
– سُبْحَانَ الله : আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার পড়া।
– اَلْحَمْدُ لِلّه : আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার পড়া।
– اَللهُ اَكْبَر : আলহামদুলিল্লাহ ৩৩/৩৪ বার পড়া।
সুরা মুজাম্মিল পড়া
যদি কোন মেয়ে বড় হয়ে যায়, কোন বিয়ের প্রস্তাব না পায় তাহলে মা-বাবা অথবা অভিভাবক যে কোনো একজন শুক্রবার জুমআর নামাজের পর ২ রাকাআত নামাজ আদায় করে ২১ বার সুরা মুজাম্মিল পড়বে।
সুরা মারইয়াম পড়ুন :
দিনের যে কোনো এক নামাজের পরে একবার সুরা মারইয়াম পড়ুন। এই আমলটি যে কোনো মেয়েও করতে পারে আবার মেয়ের মাও করতে পারেন।
আল্লাহপাকে বেশি বেশি স্মরণ করুন :
১১ বার দুরূদ শরীফ এর পরে ৩১৩ বার আল্লাহর নাম এর পরে আবার ১১বার দুরূদ শরীফ এভাবে ৪১দিন প্রত্যেক নামাজের পরে যদি কেউ পড়ে তাহলে অবশ্যই সে তার বিবাহের জন্য একটি সুন্দর প্রস্তাব পাবে।
দাম্পত্য জীবনে মিথ্যা বলা জায়েজ?
সত্য বলার গুরুত্ব অপরিসীম। সত্য মুক্তি দেয় এবং মিথ্যা ধ্বংস ডেকে আনে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা মুসলমানদের কর্তব্য। তবে মানুষের দুর্বলতা-অক্ষমতা বিবেচনায়, সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় এবং শত্রুকে পরাভূত করতে ক্ষেত্র বিশেষে কৌশলের আশ্রয় নিয়ে নেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে ইসলাম।
তিন স্থানে মিথ্যা বলার অনুমতি থাকার কথা হাদিসে এসেছে। আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তিন অবস্থা ছাড়া কোনো অবস্থাতেই মিথ্যা বলা বৈধ নয়। (তা হলো) স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করার জন্য তার সঙ্গে স্বামীর মিথ্যা বলা, যুদ্ধক্ষেত্রে মিথ্যা বলা এবং মানুষের মধ্যে বিবাদ নিরসনে মিথ্যা বলা।’ (তিরমিজি, হাদিস ১৯৩৯; আবু দাউদ, হাদিস ৪৯২১)
সংসার সুখের করতে
দাম্পত্য কলহ বা সাংসারিক মনোমালিন্য এড়াতে অথবা সংসার সুখের করতে স্বামী-স্ত্রীর দুজনেরই কৌশলের আশ্রয় নিয়ে অতিরিক্ত প্রশংসা করা দোষণীয় নয়। এদিকেই ইঙ্গিত করে উম্মু কুলসুম বিনতে উকবা ইবনে আবি মুআইত (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের বিবাদ মিটিয়ে দেয়, কল্যাণের কথা বলে এবং কল্যাণ বাড়ায় সে মিথ্যুক নয়।’
ইমাম ইবনে শিহাব (রহ.) বলেন, ‘মানুষ যেসব বিষয়ে (সাধারণত) মিথ্যা বলে তাতে মিথ্যা বলার অনুমতি থাকার কথা আমি কখনও শুনিনি। তবে তিনটি বিষয় ছাড়া- যুদ্ধ, মানুষের বিবাদ নিরসন এবং স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর কথোপকথন বা স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর কথোপকথন।’ (মুসলিম, হাদিস ২০৬৫)
তবে সেই কৌশলের আশ্রয় নিয়ে মিথ্যা বলার সুনির্দিষ্ট সীমারেখা রয়েছে। কারণ স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরে মিথ্যা বলার অর্থ হলো- সম্পর্কের স্থায়িত্ব ও সংসার টিকিয়ে রাখতে ভালোবাসা-প্রেমের বহিঃপ্রকাশ করার ক্ষেত্রে কৌশলী হওয়া। যেমন স্বামী বলতে পারবে- ‘তুমি অনেক সুন্দর মাশাআল্লাহ’, ‘তুমি চাঁদের চেয়েও সুন্দর’, পৃথিবীতে তুমিই আমার আপনজন’, ‘আমার চোখে তুমিই পৃথিবীর সুন্দরতম নারী’ ইত্যাদি। তবে মিথ্যা বলার সুযোগ থাকার অর্থ মোটেও কারো অধিকার খর্ব করা বা দায়িত্ব থেকে পালিয়ে বেড়ানো নয়।
শান্তির খোঁজে ও ক্ষতি এড়াতে
ইমাম বাগাভি (রহ.) আবু সুলাইমান আল-খাত্তাবির সূত্রে বলেন, ‘শান্তির খোঁজে এবং ক্ষতি এড়াতে এ বিষয়গুলোতে বাড়িয়ে বলা এবং সত্য অতিক্রম করার জন্য কখনো-সখনো মানুষ অপারগ হয়ে পড়ে। এ কারণেই যেখানে মীমাংসার সম্ভাবনা থাকে সেখানে টুকটাক ঝামেলা হলে মিথ্যা বলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। … আর স্ত্রীর সঙ্গে মিথ্যা বলার অর্থ হলো তাকে গুরুত্ব দেওয়া, আপন করে নেওয়া, অন্তরে যতটুকু ভালোবাসা আছে তার চেয়ে বেশি প্রকাশ করা, এর মাধ্যমে স্থায়ী সম্পর্কের প্রচেষ্টা করা এবং তার চরিত্র সংশোধনের চেষ্টা করা।’ (শারহুস সুন্নাহ : ১৩/১১৯)
শুধু সংসারেই নয়, দুটি মানুষের মধ্যে সমঝোতা করিয়ে দিতেও এমন কৌশলী হওয়ার অনুমতির কথা হাদিসে বলা হয়েছে। তাই দাম্পত্য কলহ নিরসনে তা আরও বেশি উত্তম বলে বিবেচিত হবে। সুফইয়ান ইবনে উইয়াইনা বলেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি কারো কাছে অপারগ হয়ে পড়ার কারণে তাকে সন্তুষ্ট করতে কথা বানায় এবং সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে, সে মিথ্যাবাদী হবে না। কারণ হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি মানুষের মধ্যে মীমাংসা করে দেয় সে মিথ্যাবাদী নয়।’
সুফইয়ান ইবনে উইয়াইনা বলেন, ‘সুতরাং সাধারণ মানুষের মধ্যে মীমাংসা করে দেওয়ার চেয়ে নিজের জীবনসঙ্গীর সঙ্গে মীমাংসা করা উত্তম।’
পৃথিবীতে সব মানুষের সংসার ভালোবাসায় ভরপুর থাকে না। ঝগড়া-বিবাদ ও দাম্পত্য কলহে অনেক সংসার ভেঙে যায়। তাই সাংসারিক জীবনে এক সঙ্গে চলতে গেলে অনেক ক্ষেত্রে কৌশলের আশ্রয় নেওয়ার বিকল্প থাকে না।
সত্যের আশ্রয় ও খলিফার বক্তব্য
উমর (রা.)-এর যুগে এক লোক স্ত্রীকে বললো, ‘তোমাকে আল্লাহর কসম করে বলছি- তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?’ সে বলল, ‘আল্লাহর কসম করেই যেহেতু বলেছো, তাহলে (আমি বলব) ‘না’।’ লোকটি বের হয়ে গেলো এবং উমর (রা.)-এর কাছে নালিশ করলো।
উমর (রা.) তার স্ত্রীর কাছে লোক পাঠালেন এবং বললেন, ‘তুমি কি তোমার স্বামীকে বলেছো- তুমি তাকে ভালোবাসো না?’ সে বললো, ‘আমিরুল মুমিনিন, সে আমাকে আল্লাহর কসম করে বলেছে- তো আমি কি মিথ্যা বলবো?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ মিথ্যা বলো। সব সংসারই ভালোবাসার ওপর নির্মিত হয় না। তবে মানুষ ইসলাম ও সামাজিক মর্যাদার কারণে একসঙ্গে বসবাস করে।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সংসারে স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই কিছু অধিকার থাকে— যা আদায় করা পরস্পরের দায়িত্ব। সেসব অধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া মোটেও ইসলাম অনুমোদন করে না। তেমনিভাবে স্বামী-স্ত্রীর এমন কিছু বিষয় থাকে, যাতে একে অন্যের ওপর হস্তক্ষেপ করার অধিকার রাখে না। সেসব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য উদ্দেশ্যমূলক মিথ্যা বলাও শরিয়ত অনুমোদন করে না।
ইমাম নাবাবি (রা.) ‘শারহু মুসলিম’-এ বলেন, ‘স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর মিথ্যা বলা এবং স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর মিথ্যা বলার অনুমতি থাকার অর্থ হলো- পরস্পরের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটানো, আবশ্যক নয় এমন বিষয়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়া— ইত্যাদি বিষয়ে মিথ্যা বলা। তবে স্বামীর জন্য বা স্ত্রীর জন্য আবশ্যক এমন কোনো বিষয় থেকে বঞ্চিত করার জন্য অথবা স্বামীর বা স্ত্রীর অধিকার নেই এমন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য প্রতারণা করা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম।’
তাই স্ত্রীর অধিকার খর্ব করা যেমন স্বামীর জন্য বৈধ নয়, তেমনি স্বামীর অধিকার খর্ব করাও স্ত্রীর জন্য বৈধ নয়। স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে প্রথম স্ত্রীর মতামতের যেমন সামাজিক গুরুত্ব রয়েছে, তেমনি দ্বিতীয় স্ত্রীর সামাজিক মর্যাদা পাওয়ারও অধিকার রয়েছে। এ ক্ষেত্রে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া এবং গোঁজামিল করা শরিয়তসম্মত নয়। হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানি রাহিমাহুল্লাহ ‘ফাতহুল বারি’-তে বলেন, ‘স্বামী-স্ত্রীর মিথ্যা বলা সেসব বিষয়ের জন্য প্রযোজ্য, যেসব বিষয়ে স্বামী বা স্ত্রী অপরজনের অধিকার খর্ব করবে না অথবা স্বামী বা স্ত্রীর অধিকার নেই এমন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না।’
দ্রুত বিয়ে হওয়ার আমল ও দোয়া
প্রশ্নঃ বিয়ের জন্য কী রুকিয়া শুনলে কাজ হবে? বা বিয়েতে কোনো বাধা থাকলে কী কেটে যাবে? আর কী আমল করলে তাড়াতাড়ি বিয়ে হবে? জানাবেন–ইনশাআল্লাহ।— Rubbya sumi
জবাব:
এক. আমাদের সমাজের একটি বড় বিচ্যুতি হল, ক্যারিয়ার গঠনের ধোঁয়াশায় পড়ে যথাসময়ে বিয়ে না করা। পরবর্তীতে যা হয়, তাহল, পাত্র/পাত্রীর বয়স বেড়ে যায় এবং বিবাহ কঠিন হয়ে যায়। আর নিজেদের এই বিচ্যুতি থেকে জন্ম নেয় জাদু-টোনা-নির্ভর নানা ধরণের অন্ধ-বিশ্বাস। মনে রাখবেন, বিয়ে-শাদি অবশ্যই আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আর জাদু আমাদের জীবনের ভাল-মন্দের আসল কার্যকারণ নয়, বরং আমাদের জীবনে সেটাই ঘটে যা আল্লাহ তাআলা আমাদের ভাগ্যে নির্ধারণ করে রেখেছেন। আল্লাহ বলেন, قُلْ لَنْ يُصِيْبَنَا إِلاَّ مَا كَتَبَ اللهُ لَنَا هُوَ مَوْلَانَا তুমি বল, আল্লাহ আমাদের ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন, তা ব্যতীত কিছুই আমাদের নিকট পৌঁছবে না। তিনিই আমাদের অভিভাবক। (তওবা ৫১)
সুতরাং আপনার বিয়ে কেউ বন্ধ করে রেখেছে-প্রথমে এই অমূলক ধারণা পরিহার করুন। দুরাবস্থা, দুর্ভাগ্যের নাগাল ও মন্দভাগ্য থেকে মুক্তির জন্য বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,لاَ يَرُدُّ الْقَضَاءَ إِلاَّ الدُّعَاءُ ভাগ্য পরিবর্তন হয় না দোয়া ব্যতীত। (তিরমিযী ২১৩৯)
দুই. প্রিয় দীনি বোন, পাশাপাশি আপনাকে কিছু আমল বলে দিচ্ছি, ইনশা-আল্লাহ এর উসিলায়ও আপনার এই দুরাবস্থার আমূল পরিবর্তন আসবে।
নিম্নের দোয়াগুলো বেশি বেশি পড়ুন–
اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُبِكَ مِنْ جَهْدِالْبَلَاءِ وَدَرْكِ الشَّقَاءِ وَسُوْءِ الْقَضَاءِ و شَمَاتَةِ الْاَعْدَاءِ
অর্থাৎ, হে আল্লাহ, অবশ্যই আমি তোমার নিকট কঠিন দুরাবস্থা, দুর্ভাগ্যের নাগাল, মন্দভাগ্য এবং দুশমনের হাসি থেকে রক্ষা কামনা করছি। (বুখারি ৬৩৪৭)
اَللّهُمَّ إِنَّا نَجْعَلُكَ فِيْ نُحُوْرِهِمْ وَنَعُوْذُ بِكَ مِنْ شُرُوْرِهِمْ
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমরা তোমাকেই তাদের মুখোমুখী করছি এবং তাদের অনিষ্টতা থেকে তোমারই কাছে আশ্রয় চাচ্ছি ।
যেহেতু আপনি আপনার সাথে কারো শত্রুতার আশঙ্কা করছেন, তাই উক্ত দোয়াটি বেশি করে পড়ুন। আবু মুসা আল-আশআরী রাযি.থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ যখন কোন সম্প্রদায় দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা করতেন তখন দোয়াটি বলতেন। (আবূদাউদ ১৫৩৭)
যথাসম্ভব সার্বক্ষণিক ইস্তেগফার করুন। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
مَنْ لَزِمَ الاِسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا وَمِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِب
যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন। (আবূদাউদ ১৫২০)
কোনো কোনো আলেম বলেন, যেসব যুবক-যুবতীদের বিবাহের বয়স অতিক্রম হয়ে যাচ্ছে কিন্তু বিয়ে হচ্ছে না, তাদের মধ্যে যুবকেরা ডান হাত দিয়ে বাম হাতের কব্জি চেপে ধরে এবং যুবতীরা বাম হাত দিয়ে ডান হাতের কব্জি চেপে ধরে প্রত্যহ ফজরের নামাজের পর সূর্যোদয়ের আগে ৪০ বার হিসাবে ৪০ দিন পর্যন্ত আল্লাহর গুণবাচক নাম ‘ইয়া ফাত্তাহু’ (يا فتّاح) -অর্থ হে উন্মুক্তকারী বা প্রস্তুতকারী-পড়লে দ্রত বিয়ে হয়।
কোনো কোনো আলেম বলেন, চল্লিশ দিন সূরা মুমতাহিনা তেলাওয়াত করলে দ্রত বিয়ে হয়।
তিন. প্রিয় দীনি বোন, আমলের পাশাপাশি আল্লাহর উপর ভরসা রেখে বৈধ পন্থায় পাত্রের সন্ধান ও চেষ্টা করুন। وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ ‘‘আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।” (সূরা তালাক ৩)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
ﺛَﻠَﺎﺛَﺔٌ ﺣَﻖٌّ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﻮْﻧُﻬُﻢْ : ﺍﻟﻤُﺠَﺎﻫِﺪُ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻟﻤُﻜَﺎﺗَﺐُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺍﻷَﺩَﺍﺀَ، ﻭَﺍﻟﻨَّﺎﻛِﺢُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺍﻟﻌَﻔَﺎﻑَ
অর্থাৎ, তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহ্ তায়ালার জন্য কর্তব্য হয়ে যায়। আল্লাহ্ তায়ালার রাস্তায় জিহাদকারী, চুক্তিবদ্ধ গোলাম যে তার মনিবকে চুক্তি অনুযায়ী সম্পদ আদায় করে মুক্ত হতে চায় এবং ওই বিবাহিত ব্যক্তি যে (বিবাহ করার মাধ্যমে) পবিত্র থাকতে চায়। (তিরমিযী ১৬৫৫, নাসায়ী ৩২১৮)
এরপর দীনদার ও চরিত্রবান পাত্র পেলে তার প্রস্তাব নাকচ করা উচিত হবে না। আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
إِذَا خَطَبَ إِلَيْكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ دِينَهُ وَخُلُقَهُ فَزَوِّجُوهُ ، إِلَّا تَفْعَلُوا تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الْأَرْضِ وَفَسَادٌ عَرِيضٌ
তোমরা যে ছেলের দ্বীনাদারি ও চরিত্রের ব্যাপারে সন্তুষ্ট হতে পার সে যদি প্রস্তাব দেয় তাহলে তার কাছে বিয়ে দাও। যদি তা না কর তাহলে পৃথিবীতে মহা ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হবে। (তিরমিযী ১০৮৪)
পরিশেষে দোয়া করি, আল্লাহ আপনার সকল পেরেশানি দূর করে দিন। আমীন।
والله اعلم بالصواب – উত্তর দিয়েছেন – শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী
কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার (রুকইয়াহ) হাদিয়া।
ঢাকার মধ্যে রুকইয়ার হাদিয়া প্রতি রোগী প্রথমবার ৫০০০ টাকা, ২য়/তয় বার ৪০০০ টাকা, আর ঢাকার বাহিরে হলে প্রথমবার ১০,০০০ টাকা, ২য়/৩য় বার ৮০০০ টাকা । বি. দ্রঃ খুব বেশি দূরত্ব, অসুস্থতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং বড় বেশি কঠিন রোগীর ক্ষেত্রে হাদিয়া আলোচনা সাপেক্ষে কম বেশি হতে পারে। এই ইসলামিক চিকিৎসা পদ্ধতি দিয়ে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে, কোরআন হাদিসের চিকিৎসা সমাজে কায়েম করানো, আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে দীন-ইসলামের খাদেম হিসাবে কবুল করুন, আমীন, সুম্মা আমীন।
আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন!
আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে জানতে লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।
আইডিসি মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
আপনি আইডিসি মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.
আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।
কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।
ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।
ইসলামী দাওয়াহ সেন্টারকে সচল রাখতে সাহায্য করুন!
ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার ১টি অলাভজনক দাওয়াহ প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠানের ইসলামিক ব্লগটি বর্তমানে ২০,০০০+ মানুষ প্রতিমাসে পড়ে, দিন দিন আরো অনেক বেশি বেড়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।
বর্তমানে মাদরাসা এবং ব্লগ প্রজেক্টের বিভিন্ন খাতে (ওয়েবসাইট হোস্টিং, CDN,কনটেন্ট রাইটিং, প্রুফ রিডিং, ব্লগ পোস্টিং, ডিজাইন এবং মার্কেটিং) মাসে গড়ে ৫০,০০০+ টাকা খরচ হয়, যা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। সেকারনে, এই বিশাল ধর্মীয় কাজকে সামনে এগিয়ে নিতে সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে আপনাদের দোয়া এবং আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন, এমন কিছু ভাই ও বোন ( ৩১৩ জন ) দরকার, যারা আইডিসিকে নির্দিষ্ট অংকের সাহায্য করবেন, তাহলে এই পথ চলা অনেক সহজ হয়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।
যারা এককালিন, মাসিক অথবা বাৎসরিক সাহায্য করবেন, তারা আইডিসির মুল টিমের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন, ইংশাআল্লাহ।
আইডিসির ঠিকানাঃ খঃ ৬৫/৫, শাহজাদপুর, গুলশান, ঢাকা -১২১২, মোবাইলঃ +88 01609 820 094, +88 01716 988 953 ( নগদ/বিকাশ পার্সোনাল )
ইমেলঃ info@islamidawahcenter.com, info@idcmadrasah.com, ওয়েব: www.islamidawahcenter.com, www.idcmadrasah.com সার্বিক তত্ত্বাবধানেঃ হাঃ মুফতি মাহবুব ওসমানী ( এম. এ. ইন ইংলিশ, ফার্স্ট ক্লাস )