Ruqyah of OCD

আজকাল অনেকেই ওয়াসওয়াসা বা অবসেসিভ-কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার (OCD) নামক মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। এটি এমন একটি মানসিক অসুস্থতা, যা বারবার অযাচিত চিন্তা বা অনুভূতি (অবসেশন) অথবা কোনো কাজ বারবার করার তাড়না (কম্পালশন) সৃষ্টি করে। এই সমস্যা দৈনন্দিন জীবন, ইবাদত এবং মানসিক শান্তি নষ্ট করে দেয়। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি শয়তানের কুমন্ত্রণা।

আপনি কি ইদানীং নিম্নলিখিত কোনো সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন?

১. কারণে-অকারণে চিন্তিত থাকছেন? মাথায় বিক্ষিপ্ত চিন্তা ঘোরাঘুরি করার কারণে দৈনন্দিনের কাজ, সালাত, ইবাদত, যিকির, তিলাওয়াত ইত্যাদিতে মন বসছে না?

২. আপনি অথবা আপনাদের পরিবারের কোনো একজন কি হঠাৎ পরিবর্তন হয়ে গেছে? কেমন যেন উদাস ভাব চলে এসেছে, কিছুই ভালো লাগছে না।

৩. সালাত বা ওযু নিয়ে বেশি দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন? বারবার মনে হচ্ছে ঠিকমতো ওযু হচ্ছে না, নামাজের এই অংশটা ঠিকমত হলো না।

৪. পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অথবা পরনের কাপড় নিয়ে আপনি কি অতিরিক্ত চিন্তা করছেন?

৫. আপনি কি অপ্রয়োজনে টয়লেট বা বাথরুমে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করছেন?

৬. আপনি কি আপনার প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে বাজে স্বপ্ন দেখছেন? যা আপনাকে ভীত করছে?

৭. আপনার কানে কি ফিস ফিস করে শোনা যাচ্ছে আপনি কুফরের দিকে ধাবিত হচ্ছেন (কুফরি করছেন)?

৮. আপনি কি ওযু-গোসল বা ইস্তিঞ্জার সময় এক অঙ্গ বারবার ধুচ্ছেন? তবুও মনে হচ্ছে ধোয়া হয়নি ঠিকমতো?

৯. আপনার বারবার মনে হচ্ছে যে, ওযু ভেঙ্গে যাচ্ছে? মনে হচ্ছে প্রস্রাবের ফোঁটা পড়ছে, অথবা সবসময় মনে হচ্ছে বায়ু বের হয়ে যাচ্ছে? কিন্তু আপনি নিশ্চিত হতে পারছেন না।

১০. আল্লাহ, রাসূল অথবা ঈমানের ব্যাপারে, ইসলামের মৌলিক ব্যাপারে অবমাননাকর মাথায় চিন্তা আসে?

১১. মুরব্বি, উস্তাদ বা বয়োজ্যেষ্ঠদের সামনে বসলে, তাদের সাথে কথা বলতে লাগলে কি আপনার ভেতর থেকে কেউ বারবার বেয়াদবির জন্য উস্কে দিতে চায়?

১২. আপনি কি কোনো অদ্ভুত শব্দ কণ্ঠ শুনতে পাচ্ছেন? কারো সাথে এটা নিয়ে আলোচনা করলে ভাবছে, আপনি প্যারানয়েড বা পাগল হয়ে যাচ্ছেন!

১৩. আপনি কি নামাজের রাকাত ভুলে যাচ্ছেন? অথবা অন্য আরকানগুলোর ব্যাপারে ভুল হচ্ছে? সাজদাহ একটা দিয়েছেন না দুইটা দিয়েছেন সন্দেহ লাগছে? আর এসব কি প্রায় দিনই হচ্ছে?

১৪. নামাজে সাজদা করতে গেলে মনের মধ্যে বিভিন্ন অশ্লীল ছবি কিংবা দেবদেবীর মূর্তি ভেসে উঠছে?

যদি আপনার উত্তর “হ্যাঁ” হয়, তবে বুঝতে হবে আপনি শয়তানি ওয়াসওয়াসা রোগে আক্রান্ত। এক-দুইদিন এরকম হতেই পারে, কিন্তু সবসময় বা দিনের পর দিন যদি আপনার মাঝে এই লক্ষণগুলো দেখা যায়, তাহলে সত্যিই আপনি শয়তানি ওয়াসওয়াসা রোগে আক্রান্ত।


ওয়াসওয়াসা রোগের জন্য রুকইয়াহ ও প্রতিকার

ইসলাম ওয়াসওয়াসাকে শয়তানের কুমন্ত্রণা হিসেবে দেখে এবং এর থেকে মুক্তির জন্য বেশ কিছু আমল ও দিকনির্দেশনা প্রদান করে।

১. বেশি বেশি এই দোয়াটি পড়া:

প্রতি নামাজের আগে-পরে, অন্যান্য ইবাদতের সময়, কোনো গুনাহের জন্য ওয়াসওয়াসা অনুভব করলে এই দোয়াটি পড়া উচিত:

أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ، مِنْ غَضَبِهٖ وَعِقَابِهِ، وَشَرِّ عِبَادِهِ، وَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ، وَأَنْ يَّحْضُرُوْنِ

(আউযু বিকালিমাতি-ল্লাহিত তাম্মাতি মিন গাদাবিহি ওয়া ইকাব্বিহি ওয়া শাররি ইবাদিহি ওয়া মিন হামাযাতিশ-শায়াতিনি ওয়া আঁই ইয়াহদুরুন)

২. ওয়াসওয়াসা অনুভব করলে এই আয়াতটি পাঠ করা:

বিশেষতঃ ঈমান নিয়ে সংশয় উদিত হলে সুরা হাদীদ, আয়াত নং ৩ এর এই অংশটি পড়া উচিত:

هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ ۖ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ

(হুওয়াল আউওয়ালু ওয়াল আখিরু ওয়াজ জহিরু ওয়াল বাতিনু ওয়া হুয়া বিকুল্লি শাইয়িন আলিম।)

আর সকাল-সন্ধ্যায় সূরা ইখলাস পড়া।

৩. আয়াতুল হারক (আযাব এবং জাহান্নাম সংক্রান্ত আয়াত) বেশি বেশি তিলাওয়াত করা অথবা প্রতিদিন ৩-৪ বার এসবের তিলাওয়াত শোনা।

৪. নাপাক থেকে বেঁচে থাকা, বিশেষত প্রস্রাবের ছিটা থেকে বাঁচা। যথাসম্ভব সর্বদা ওযু অবস্থায় থাকা।

৫. পুরুষ হলে জামাআতের সাথে নামাজ পড়া, মুত্তাকী পরহেজগারদের সাথে উঠাবসা করা।

৬. সকাল-সন্ধ্যায় ও ঘুমের আগের আমলগুলো গুরুত্বের সাথে করা। টয়লেটে প্রবেশের দোয়া পড়া।

৭. আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকা। যথাসম্ভব ওয়াসওয়াসাকে পাত্তা না দেয়া; ইগনোর করা, এমনকি মুখে বিরক্তির ভাবও প্রকাশ না করা।


শয়তানের উঁচু স্তরের ধোঁকা “কোনো গোনাহের প্রতি আসক্তি” / এডিকশন থেকে বাঁচার উপায়

শয়তানের ধোঁকা সব এক স্তরের নয়। সাধারণ ওয়াসওয়াসা একবার পাপ করলেন, তাওবাহ ইস্তিগফার করলেন, কাহিনী শেষ। কিন্তু কিছু ওয়াসওয়াসা এডিকশনের স্তরে চলে যায়, যা থেকে বেরিয়ে আসা খুব কঠিন। এটা শয়তানের এমন এক চক্র, যেখানে সে আপনাকে বন্দি করে ফেলে:

১. পাপের চিন্তা আসে: কোনো বাজে ছবি, প্রেমিকার হাত ধরে ঘুরতে দেখা, বা কোনো গল্প পড়ে।

২. দ্বিধা ও নফসের সাথে ধস্তাধস্তি: মনে হয় এটা করা উচিত হবে না; এটা পাপ। এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করেন।

৩. নফসকে সামান্য ছাড় দেয়ার চেষ্টা: “এবার করার পর তাওবাহ করে নেব, এই একবারই শেষ; আর করবো না, কত পাপই তো করি দৈনিক; এ আর তেমন কী।” এই পয়েন্টটাই সবচেয়ে ভয়াবহ, এই স্টেপে বাইরের শয়তান আর ভেতরের নফসে আম্মারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আপনার বিরুদ্ধে লাগে।

৪. পরাজয় ও পাপে জড়িয়ে পড়া: অবশেষে আপনি নিজের প্রবৃত্তির কাছে পরাজিত হয়ে সেই কাজে জড়িয়ে পড়েন (যেমন: জিএফ/বিএফকে ফোন দেন, অথবা পর্ন দেখতে শুরু করেন কিংবা মাস্টারবেট)।

৫. অনুশোচনা ও প্রতিজ্ঞা: পাপ করার পর আপনার মনে অনুশোচনা জাগে, আর আপনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেন; তাওবাহ-ইস্তিগফার করেন যে, ভবিষ্যতে আর কখনো এ কাজ করবেন না।

৬. পুনরাবৃত্তি: এর কয়েকদিন পর আবার কোনো ট্রিগারে চাপ পড়ে… আবার আপনি পাপ করেন, আবার……

এ থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কী?

১. আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণরূপে নিজেকে সঁপে দেওয়া: শয়তান অনেক শক্তিশালী, বুদ্ধিমান এবং জ্ঞানী। শয়তানকে পরাস্ত করার জন্য অবশ্যই আমাদের আল্লাহর সাহায্য দরকার হবে। এজন্য আল্লাহ কুরআনে আমাদের বারবার শিখিয়েছেন তাঁর কাছে কিভাবে আত্মসমর্পণ করতে হবে, কিভাবে শয়তানের বিরুদ্ধে আল্লাহর নিকট সাহায্য চাইতে হবে।

কুরআনের আয়াতসমূহ:

সূরা মুমিনুন, আয়াত ৯৭-৯৮: وَقُل رَّبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ ﴿٩٧﴾ وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَن يَحْضُرُونِ ﴿٩٨﴾ (ওয়াকুল রব্বি আউযু বিকা মিন হামাযাতিশ শায়াতীনি। ওয়া আউযু বিকা রব্বি আঁই ইয়াহদুরুন।) “এবং বলুন: হে আমার পালনকর্তা! আমি শয়তানের প্ররোচনা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি, হে আমার প্রভু! আমার নিকট তাদের উপস্থিতি থেকেও আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি।”

সূরা নাহল, আয়াত ৯৮: فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ (ফাইযা ক্বারাতাল ক্বুরআনা ফাস্তা’ইজ বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রজীম।) “অতএব, যখন আপনি কোরআন পাঠ করেন তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করুন।”

সূরা হা-মীম সেজদাহ ৩৬, সূরা আল আ’রাফ ২০০: وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ ۖ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ (ওয়া ইম্মা ইয়ানযাগান্নাকা মিনাশ শাইতানি নাযগুন ফাস্তা’ইজ বিল্লাহি ইন্নাহু হুওয়াস সামি’উল আলিম।) “যদি শয়তানের পক্ষ থেকে আপনি কিছু কুমন্ত্রণা অনুভব করেন, তবে আল্লাহর শরণাপন্ন হোন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।”

তিরমিযী ও মুস্তাদরাকে হাকেমে বর্ণিত কোরআন হিফযের জন্য রাসূল (সাঃ) এর শিখিয়ে দেওয়া দো’আর প্রথম অংশও খুব গুরুত্বপূর্ণ: “اللَّهُمَّ ارْحَمْنِي بِتَرْكِ الْمَعَاصِي أَبَدًا مَا أَبْقَيْتَنِي، وَارْحَمْنِي أَنْ أَتَكَلَّفَ مَا لَا يَعْنِينِي، وَارْزُقْنِي حُسْنَ النَّظَرِ فِيمَا يُرْضِيكَ عَنِّي” (আল্লাহুম্মার হামনি বিতারকিল মা’আসিয়ি আবাদাম মা আবকাইতানি, ওয়ার হামনি আন আতাকাল্লাফা মা লা ইয়া’নিনি, ওয়ারঝুকনি হুসনান নাঝারি ফীমা ইউর্দিকা আ’ন্নি।)

২. ওয়াসওয়াসার ট্রিগার শনাক্ত করা এবং এ থেকে বেঁচে থাকা:

একটি নোটবুক রাখুন এবং প্রতিদিন কোন সময় আপনি পাপে জড়িয়ে পড়ছেন, কীভাবে জড়ালেন, পাপ করার আগে কী ঘটনা ঘটেছিল – এসব নোট রাখুন। কিছুদিন পর আপনি অনেকগুলো কমন ট্রিগার খুঁজে পাবেন (যেমন: বাজে পিকচারের দিকে দৃষ্টি যাওয়া, কোনো গল্প পড়া, কাউকে জিএফ/বিএফ এর সাথে ঘুরতে বা ফোনে কথা বলতে দেখা ইত্যাদি)। এখন আপনাকে এই ট্রিগারগুলো থেকে বেঁচে থাকতে হবে। যখনই এসব ট্রিগার আপনার সামনে আসবে, সতর্ক হয়ে যান। সাথে সাথে ইস্তিগফার ও দোয়া পড়ুন। যদি পর্ন দেখতে খুব ইচ্ছা হয়, দেরি না করে ওযু করে কোরআন তিলাওয়াত করতে বসে যান। কিছু নতুন এবং ভালো শখ/হবি ধরুন, যখনই এসব চিন্তা আসবে সাথে সাথে ইস্তিগফার করে অন্য কাজে মন দিন। দিনের বেলা অহেতুক বসে থাকলে যদি শয়তান কুমন্ত্রণা দেয়, তাহলে দিনে কখনই আপনার অহেতুক বিছানায় শুয়ে বসে থাকা উচিত হবে না।

৩. জিকির বাড়িয়ে দেওয়া:

কোনো শাইখের পরামর্শ নিয়ে জিকির করতে পারেন। রাতে নামাজের অভ্যাস না থাকলে ধরতে চেষ্টা করুন। যদি শেষ রাতে জাগনা পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে তবে ইশার সুন্নাত ও বিতরের মাঝে কিয়ামুল্লাইল বা তাহাজ্জুদের নিয়তে কয়েক রাকাত পড়ে নিন এবং শেষ রাতে নামাজ পড়ার তাওফিক চেয়ে দোয়া করুন। নিশ্চয়ই দোয়া মুমিনের হাতিয়ার!


শয়তান ও খারাপ জ্বিন কখন আপনাকে সহজে আক্রমণ করতে পারে? (সাথে এডিকশনের ৩য় স্তর)

খারাপ জ্বিন সর্বাবস্থায় আপনার ওপর আক্রমণ করতে পারে না। শয়তানের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। সবসময় আপনাকে বশ করতে পারে না। তবে আক্রান্ত হয়ে গেলে মুশকিল। শায়খরা বলেছেন, খবিস জ্বিন ৪ অবস্থায় মানুষের ভেতর ঢুকতে পারে:

১. খুব ভীত অবস্থায় ২. খুব রাগান্বিত অবস্থায় ৩. খুব উদাসীন অবস্থায় ৪. কুপ্রবৃত্তির গোলামী করা অবস্থায় (মানে যখন কোনো খারাপ কাজ করছে)

এসব হচ্ছে খারাপ জ্বিন মানুষের ওপর আসর করার অবস্থা। এ অবস্থায় নাকি জ্বিনের অনেক কষ্ট হয়, বিশেষত কেউ যদি দোয়া-কালাম পড়ে, আর অপরদিকে জ্বিনকে যদি কোনো যাদুকর জোর করে পাঠায় তাহলে তো বেচারা জ্বিনের জান খারাপ। সারকথা হচ্ছে, হাদিসে বর্ণিত সকাল-সন্ধ্যার দোয়াগুলো পড়ার অভ্যাস করা উচিত এবং গাফেল না হওয়া উচিত। এতে খারাপরা সুযোগ পেয়ে যায়।

এডিকশনের তৃতীয় স্তর:

আপনি যখন বিভিন্নভাবে গুনাহকে এড়িয়ে যেতে অভ্যস্ত হয়ে যান, তখন শয়তান আপনার দুর্বল সময়ের অপেক্ষায় থাকে। যেমন, একজন তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিলেন: বেচারা পর্ন স্টোরি অ্যাডিক্ট। সে সবসময় চেষ্টা করে বেঁচে থাকতে। কিন্তু কখনো কখনো তা হয় না। যেমন, সে ভালো কোনো বই বা লেখা পড়ছে, কখনো মাত্র একটা ইঙ্গিতসূচক শব্দও নাকি তাকে আঁকড়ে ধরে, মাথা থেকে সরাতেই পারে না। শেষে শয়তানের কাছে হার মেনে কখনো বাজে ছবি দেখতে বসে, কখনো খারাপ গল্প… কখনো সকালে ঘুম থেকে উঠছে “হালকা ঘুম হালকা জাগ্রত এমন অবস্থায় এসব ধোঁকা তার মাথায় আসে”, আর তাড়াতে পারে না।

এই অবস্থায়, মাথাকে ফাঁকা রাখা যাবে না। চেষ্টা করতে হবে কিছু না কিছুতে ব্যস্ত থাকতে।

Increase Your Business with Expert Digital Solutions!

Get Unlimited Facebook Ad Credit, Guaranteed SEO Rankings, & Professional Web Development – all under one roof at MahbubOsmane.com!

 14+ Years of Experience – Guaranteed SEO Rankings 800+ Satisfied Clients – Unlimited Facebook Ad Credit Proven Results, Maximum ROI – Professional Web Development

Contact us ( +8801716988953 WhatsApp ) today and take your business to the next level!  Visit: MahbubOsmane.com


অনাহূত ভাবনা (ওয়াসওয়াসা রোগ) ও তার প্রতিকার

১. অনাহূত চিন্তা-ভাবনার চিকিৎসা হল ভ্রুক্ষেপ না করা:

মানুষের মনে বিভিন্ন মন্দ ভাবনা আসে। কখনও এমনসব অবাঞ্ছিত চিন্তাও তার মনে উদয় হয় যে, ঈমান সম্পর্কেই সন্দেহ সৃষ্টি হয়ে যায়। এমন কোনো মানুষ নেই, যার মনে এ ধরনের চিন্তা কখনই আসে না। এটি বিশেষত যারা দ্বীনের পথে চলতে আরম্ভ করেছে, তাদের মনে বেশি আসে। এই সমস্যার সমাধান হল ভ্রুক্ষেপহীনতা। মন্দ চিন্তা যদি আসে তবে আসুক। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করার প্রয়োজন নেই। এই চিন্তাই করবেন না যে, কী চিন্তা আসছে আর কী যাচ্ছে।

২. এই সব চিন্তাও ঈমানের আলামত:

এই সব অবাঞ্ছিত চিন্তাও ঈমানের আলামত। হাদীস শরীফে এসেছে, এক সাহাবী হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, আল্লাহর রাসূল! অনেক সময় আমার মনে এমন সব কথা আসে, যা মুখে উচ্চারণ করার চেয়ে আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়াও আমার কাছে অধিক পছন্দনীয়। আমি কী করতে পারি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:

সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান, বাবু বয়ানিল ওয়াসওয়াসা ফিল ঈমান: “এটা তো খাঁটি ঈমানের আলামত।”

অর্থাৎ এই সব অবাঞ্ছিত চিন্তা তো ঈমানের চিহ্ন। কেননা, এসব চিন্তা শুধু মুমিনের মনেই আসে, পাপাচারীর মনে আসে না। হযরত হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী (রাহ.) এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, চোর ওই গেরস্তের বাড়িতেই যায় যার মালদৌলত আছে। যে ঘরে কিছু নেই সেখানে চোর কেন যাবে? তো এই চোরও (শয়তান) ওই অন্তরেই কুমন্ত্রণা দেয় যাতে ঈমানের দৌলত আছে। এজন্য এইসব অনাহূত চিন্তা যখন মনে আসে, তখন আল্লাহর শুকরিয়া গোযারী করা উচিত যে, আলহামদুলিল্লাহ, আমার অন্তরে ঈমান আছে। তা না হলে এই সব চিন্তা আমার মনে সৃষ্টি হত না।

৩. মন্দ চিন্তায় উদ্বিগ্ন হওয়া ঈমানের আলামত:

এটা ঈমানের লক্ষণ এভাবেও যে, আপনার মনে এই সব কথা আসলে আপনি উদ্বিগ্ন হন। আপনার কাছে এগুলো মন্দ চিন্তা বলে মনে হয়। বোঝা গেল যে, অন্তরে ঈমানের দৌলত রয়েছে। কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে সান্ত্বনাবাণী শুনিয়েছেন:

সূরা আ‘রাফ ২০০: وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ ۚ إِنَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ (ওয়া ইম্মা ইয়ানযাগান্নাকা মিনাশ শাইতানি নাযগুন ফাস্তা’ইজ বিল্লাহি ইন্নাহু সামি’উন আলিম।) “আর যদি শয়তানের প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে আল্লাহর শরণাপন্ন হও।”

আল্লাহ তাআলা বলেন, এই কুমন্ত্রণা মুমিনদের চুল পরিমাণ ক্ষতি করতে পারে না আল্লাহর হুকুম ছাড়া। এজন্য এইসব অনাহূত ভাবনা যখন আপনাকে বিরক্ত করে, তখন স্মরণ করুন যে, এটা ঈমানের আলামত। শয়তান তার উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করছে। তাকে বলে দিন, ঠিক আছে তুমি তোমার মতো চেষ্টা করো, আমিও আমার মতো চেষ্টা করছি। এরপর নিজ কাজে মগ্ন হয়ে যান। এতে বেশি মনোযোগ দিবেন না, কারণ এই চিন্তাকে গুরুত্ব দিলে শয়তানের উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে যাবে।

৪. নিজ কাজে মশগুল থাকুন:

এই সমস্যার সমাধান হল, ভ্রুক্ষেপ না করা। অর্থাৎ কী চিন্তা আসল, কী চিন্তা গেল – তা না ভেবে নিজের কাজে মশগুল থাকুন। যেমন এখন আপনার নামাজ পড়ার সময়, আপনার মনে যে ভাবনাই আসুক আপনি নামাজে মশগুল হয়ে যান। আপনার এখন তেলাওয়াতের সময়, মনে যত চিন্তাই আসুক আপনি তেলাওয়াতে মশগুল হয়ে যান। এভাবে অন্য কোনো কাজের সময় হয়ে থাকলে তাতে লেগে যান। মোটকথা, এদেরকে আপনার নির্ধারিত কাজে প্রতিবন্ধক হওয়ার সুযোগ দিবেন না। এটাই সমাধান।

৫. আরেকটি পদ্ধতি:

মুফতি শফী (রাহ.) বলতেন, যদি কোথাও অন্ধকার হয়ে আসে, তবে তার সমাধান এই নয় যে, তুমি লাঠি নিয়ে অন্ধকার তাড়াতে নেমে পড়বে। কেননা, এভাবে অন্ধকার দূর হবে না। অন্ধকার দূর করার পন্থা এই যে, তুমি একটি বাতি জ্বালিয়ে দাও। বাতির আলো যেখানে পৌঁছাবে সেখান থেকে অন্ধকার বিদায় নিবে। মানুষের মনে শয়তানের পক্ষ থেকে যেসব কুচিন্তা, প্রশ্ন-সংশয় সৃষ্টি হয় সেগুলোও এক ধরনের অন্ধকার। একে তাড়ানোর চেষ্টায় লেগে যাওয়া সমাধান নয়; বরং তোমার মন-মস্তিষ্কে আল্লাহর স্মরণের বাতি জ্বালিয়ে দাও। বন্দেগী ও আনুগত্যের চেরাগ জ্বালিয়ে দাও। দেখবে আঁধার দূর হয়ে গেছে।

৬. অন্য চিন্তায় মগ্ন হও:

এ ধরনের চিন্তা যদি বেশি আসে, তাহলে এর সমাধান হযরত থানভী (রাহ.) এভাবে দিয়েছেন যে, এক্ষেত্রেও তা দূর করার চিন্তা ঠিক নয়। কেননা, যতই দূর করার চেষ্টা করবে ততই তা জোরদার হবে। এ সময় অন্য কাজে মনোনিবেশ করুন অথবা ভিন্ন চিন্তায় মশগুল হোন। দর্শন শাস্ত্রে আছে – মানুষের চিন্তা এক মুহূর্তে দুই বিষয়ে নিবদ্ধ হয় না। আপনি যদি নিজেকে ভিন্ন কাজে বা ভিন্ন চিন্তায় মশগুল করেন, তাহলে প্রথম চিন্তা এমনিই দূর হয়ে যাবে।

৭. ঔষধ উদ্দেশ্য নয়, সুস্থতা উদ্দেশ্য:

হযরত থানভী (রাহ.) বলছেন যে, অনাহূত ভাবনা দূর করার জন্য যে ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয়েছে অর্থাৎ সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করা – এটাকে নিছক ঔষধ মনে করবে না। অর্থাৎ এই ব্যবস্থা প্রয়োগের পর চিন্তা দূর হলো কি হলো না এই অপেক্ষায় না থেকে নিজ কাজে মশগুল থাকবে। মনে রাখতে হবে যে, এটা নিছক মাধ্যম নয়, এটাই মূল কাজ। অতএব একদিন, দুইদিন, তিন দিন এই পন্থা অনুসরণের পরও যদি দেখা যায়, অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না তবুও তা পরিত্যাগ করা যাবে না।

৮. মানসিক প্রশান্তি উদ্দেশ্য নয়:

হযরত থানভী (রাহ.) বলেছেন যে, ‘মানসিক প্রশান্তি লাভকে মূল লক্ষ্য বানাবে না।’ অর্থাৎ এই সব ভাবনা দূর হোক – এটা আপনি কেন কামনা করছেন? মানসিক প্রশান্তির জন্য? এই সব চিন্তা সর্বদা আপনার মন-মস্তিষ্ককে অস্থির করে রাখে, তাই স্থিরতা ও প্রশান্তির জন্য তা থেকে নিস্তার পাওয়া দরকার? এই সম্পর্কে হযরত (রাহ.)-এর বক্তব্য এই যে, প্রশান্তি লাভকে উদ্দেশ্য বানানো যাবে না; বরং উদ্দেশ্য এই হবে যে, ওইসব ভাবনা থেকে মনকে মুক্ত করে প্রয়োজনীয় কাজে মনোনিবেশ করুন।

৯. আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকুন:

ভ্রুক্ষেপ না করা সত্ত্বেও যদি চিন্তার উৎপাত বন্ধ না হয়, তাহলে এই কষ্টের উপরই সন্তুষ্ট থাকুন। কেননা, আপনার সম্পর্কে এটাই আল্লাহর ফয়সালা। এটাই আপনার তাকদীর। আল্লাহ যদি চান, আমি জীবনভর এই অবস্থায় থাকি তবে তো আমার অসন্তুষ্ট হওয়ার উপায় নেই। আমার এই কষ্টভোগই যদি আল্লাহর মর্জি হয় তবে এতেই আমি সন্তুষ্ট।

১০. দুনিয়াতে তো কষ্ট হয়েই থাকে:

দুনিয়াতে মানুষ যতই সাধ্য-সাধনা করুক, যতই যে বাদশাহ-আমীর হোক, পূর্ণ শান্তি কেউ পায় না। কেননা, দুনিয়া পূর্ণ শান্তির স্থানই নয়। আল্লাহ তাআলা তিনটি জগৎ সৃষ্টি করেছেন: জান্নাত (শুধু শান্তি), জাহান্নাম (শুধু অশান্তি), এবং দুনিয়া (শান্তি ও অশান্তি উভয়ই)। অতএব কেউ যদি কামনা করে, আমি শুধু শান্তিই পাব, দুঃখ ও পেরেশানী যেন আমাকে স্পর্শ না করে, তবে তা কখনো পূরণ হবে না। এই দুনিয়াতে কষ্ট ভোগ করতেই হবে। এখন ইচ্ছা হলে এতে সবরও করা যায়, ইচ্ছে হলে বেছবরীও করা যায়। বান্দা যদি আল্লাহর ফয়সালায় এই বলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে যে, যে কষ্ট তাঁর পক্ষ থেকে এসেছে আমি তাতে রাজি, তাহলে সে আল্লাহ তাআলার শুভ সংবাদকে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।

কুরআন, সূরা যুমার, আয়াত ১০: إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُم بِغَيْرِ حِسَابٍ (ইন্নামা ইউওয়াফফাস সাবিরুনা আজরাহুম বিগাইরি হিসাব।) “নিশ্চয়ই সবরকারীদেরকে দেওয়া হবে অগণিত বিনিময়।”

১১. ‘রিযা বিলকাযা’ তে রয়েছে প্রশান্তি:

রিযা বিলকাযা (আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকার) চেয়ে বড় শান্তির উপায় আর নেই। হযরত বাহলূল মাজযূব (রাহ.)-কে কেউ জিজ্ঞাসা করল, কেমন আছেন? তিনি বললেন, খুব ভালো আছি। অত্যন্ত শান্তিতে আছি। লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, কেমন শান্তি? তিনি বললেন, আরে ভাই, ওই লোকের শান্তির পরিমাপ কে করতে পারে যার ইচ্ছার বিপরীতে কিছুই পৃথিবীতে হয় না! জগতের সকল বিষয় তো আমার ইচ্ছা মাফিক হচ্ছে! লোকেরা বলল, জনাব, পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত এমন কেউ আসেনি, যার ইচ্ছে মাফিক সবকিছু হয়েছে। তিনি বললেন, প্রকৃত বিষয় এই যে, আমি নিজের ইচ্ছাকে মাওলার ইচ্ছায় বিলীন করে দিয়েছি, তাঁর যা ইচ্ছা সেটাই আমার ইচ্ছা। তিনি যাতে খুশি আমিও তাতে খুশি। আর যেহেতু বিশ্বজগতে কোনো কিছুই তাঁর ইচ্ছার বিপরীতে ঘটে না তাহলে আমারও ইচ্ছার বিরোধী কোনো কিছু নেই।

মোটকথা, ভ্রুক্ষেপহীনতা সত্ত্বেও যদি এই সব অনাহূত ভাবনা দূর না হয়; বরং যথারীতি তা আসতেই থাকে, তাহলেও ভীত ও পেরেশান হওয়ার কারণ নেই। এক্ষেত্রে এই ভেবে হালতের উপর সন্তুষ্ট থাকাই কাম্য যে, আল্লাহ যখন আমার জন্য এটাই পছন্দ করেছেন তো আমি তাতে খুশী। তবে ওই সব ভাবনা মোতাবেক কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন এবং আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

✍️ লিখেছেন:মাহবুব ওসমানী


মাহবুব ওসমানী — একজন ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক এবং IslamiDawahCenter.com এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি কুরআন ও সহীহ হাদীসভিত্তিক বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 

To learn more, comment below or message us on wa.me/+966549485900 or  wa.me/+8801716988953 or call us at +44-73801-27019. Email at hi@islamidawahcenter.com

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন।