মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে একে অপরের সাথে হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে জীবনযাপন করে। পারস্পরিক কল্যাণকামিতা স্বাভাবিক হলেও, সবসময় সুস্থ পরিবেশ বজায় থাকে না। হিংসা, যাদু এবং বদনজর—এই নীরব ফিতনাগুলো সর্বকালে কমবেশি থাকলেও, বর্তমান সময়ে মহামারীর রূপ নিয়েছে। বদনজর, যাদু, আসরের অস্তিত্ব নিয়ে অনেকের মধ্যে অবিশ্বাস কাজ করে; কেউ বিজ্ঞানকে দোহাই দেন, আবার কেউ একে কুসংস্কার বলে উড়িয়ে দেন। তবে যারা ইসলামে বিশ্বাসী, তাদের জন্য কোরআন ও হাদীসের আলোকে বদনজর সম্পর্কে সঠিক আকীদা জানা অত্যন্ত জরুরি।


বদনজর বিষয়ে ইসলামী আকীদা

ইসলাম বদনজরের অস্তিত্বকে সম্পূর্ণরূপে স্বীকার করে। এটি কোরআন ও হাদীসের বহু দলীল দ্বারা প্রমাণিত।

হাদীসের আলোকে বদনজর:

১. আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: عَنِ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ‏”‏الْعَيْنُ حَقٌّ‏”‏‏.‏ “বদনজর সত্য!” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং: ৫৭৪০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং: ২১৮৭)

২. আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন: عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ الْعَيْنُ حَقٌّ، وَلَوْ كَانَ شَيْءٌ سَابَقَ الْقَدَرَ سَبَقَتْهُ الْعَيْنُ، وَإِذَا اسْتُغْسِلْتُمْ فَاغْسِلُوا ‏” “বদনজর সত্য। ভাগ্যের চেয়েও আগে বেড়ে যায় এমন কিছু যদি থাকতো, তাহলে অবশ্যই সেটা হতো বদনজর! যদি তোমাদের বদনজরের জন্য গোসল করতে বলা হয় তবে গোসল করে নিও।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং: ২১৮৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং: ২৭৪৬)

৩. জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন: عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ أَكْثَرُ مَنْ يَمُوتُ مِنْ أُمَّتِي بَعْدَ قَضَاءِ اللَّهِ وَقَدَرِهِ بِالْعَيْنِ ‏”‏ ‏.‏ “আল্লাহর ফায়সালা ও তাক্বদিরের পর, আমার উম্মতের সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হবে বদনজরের কারণে!” (মুসনাদে আবী দাউদ, হাদীস নং: ৩৮৬৯)

৪. আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন: عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ اسْتَعِيذُوا بِاللَّهِ مِنَ الْعَيْنِ فَإِنَّ الْعَيْنَ حَقٌّ ‏” “তোমরা বদনজর থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও, কেননা বদনজর সত্য!” (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং: ৩৫১০)

৫. জাবের (রা.) এবং আবু যর গিফারী (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) বলেছেন: عَنْ جَابِرٍ، وَأَبِي ذَرٍّ، قَالَا: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ‏”‏الْعَيْنُ تُدْخِلُ الرَّجُلَ الْقَبْرَ، وَالْجَمَلَ الْقِدْرَ‏”‏ “বদনজর মানুষকে কবর পর্যন্ত আর উটকে রান্নার পাতিল পর্যন্ত পৌঁছে দেয়!” (মুসনাদে শিহাব, হাদীস নং: ৯৯০; সনদ হাসান)

৬. আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন: عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ‏”‏الْعَيْنُ تُدْخِلُ الْجَمَلَ الْقِدْرَ، وَتُدْخِلُ الرَّجُلَ الْقَبْرَ‏”‏ “বদনজর মানুষকে উঁচু থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়!” (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং: ২৭৪৫; মু’জামে তাবারানী, হাদীস নং: ১০৯৭২; সনদ হাসান)

কোরআনের আলোকে বদনজর:

১. সূরা ইউসুফ, আয়াত ৬৭: ﴿وَقَالَ يَا بَنِيَّ لَا تَدْخُلُوا مِن بَابٍ وَاحِدٍ وَادْخُلُوا مِن أَبْوَابٍ مُّتَفَرِّقَةٍ ۖ وَمَا أُغْنِي عَنكُم مِّنَ اللَّهِ مِن شَيْءٍ ۖ إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ ۖ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ ۖ وَعَلَيْهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُتَوَكِّلُونَ﴾ইয়াকুব (আ.) বললেন: হে আমার সন্তানেরা! (শহরে প্রবেশের সময়) তোমরা সবাই একই দরজা দিয়ে প্রবেশ করো না, বরং পৃথক পৃথক দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। আল্লাহর কোন বিধান থেকে আমি তোমাদেরকে রক্ষা করতে পারি না, নির্দেশ আল্লাহরই চলে। তাঁরই উপর আমি ভরসা করি, আর ভরসাকারীদের তাঁর উপরেই ভরসা করা উচিত।” ইবনে আব্বাস (রা.), ইমাম মুজাহিদ (রহ.), কাতাদাহ (রহ.) সহ সকল মুফাসসিরীন এই আয়াতের প্রসঙ্গে বলেন যে, ইয়াকুব (আ.) সন্তানদের ব্যাপারে বদনজরের আশঙ্কা করেছিলেন। কারণ তারা হয়তো স্বাস্থ্যবান বা সুন্দর চেহারার অধিকারী ছিলেন। এজন্য তিনি সন্তানদেরকে শহরে প্রবেশের সময় আলাদা আলাদাভাবে প্রবেশ করতে বলেছেন। পাশাপাশি এটাও উল্লেখ করে দিয়েছেন যে, এসব (বদনজর) আল্লাহর তৈরি সিস্টেম, এখানে তার কিছু করার নেই, আল্লাহর ওপর ভরসা ছাড়া। (বিস্তারিত দেখুন: তাফসীরে ইবনে কাসির; বায়ানুল কোরআন)

২. সূরা কাহফ, আয়াত ৩৯: ﴿وَلَوْلَا إِذْ دَخَلْتَ جَنَّتَكَ قُلْتَ مَا شَاءَ اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ ۚ إِن تَرَنِ أَنَا أَقَلَّ مِنكَ مَالًا وَوَلَدًا﴾ “যদি তুমি আমাকে ধনে ও সন্তানে তোমার চাইতে কম দেখ, তবে যখন তুমি তোমার বাগানে প্রবেশ করলে, তখন একথা কেন বললে না; আল্লাহ যা চান, তাই হয়। আল্লাহর দেওয়া ব্যতীত কোন শক্তি নেই।” এই আয়াত থেকে আলেমরা প্রমাণ করেন যে, কোনো কিছু দেখে মুগ্ধ হলে সাথে সাথে ‘মাশা-আল্লাহ, সুবহানাল্লাহ’ অথবা ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলতে হয়। যদি আলোচ্য আয়াতে উল্লেখিত ব্যক্তি নিজের বাগান দেখে মুগ্ধ হয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতো, আল্লাহকে স্মরণ করতো, তাহলে তার বাগান হয়তো নষ্ট হতো না। এ ব্যাপারে বায়হাকী শরীফের হাদীস উল্লেখযোগ্য: আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন- “কোনো পছন্দনীয় বস্তু দেখার পর যদি কেউ বলে, مَا شَاءَ اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ (আল্লাহ যা চেয়েছে তেমন হয়েছে, আল্লাহ ছাড়া কারো ক্ষমতা নেই) তাহলে কোনো (বদনজর ইত্যাদি) বস্তু সেটার ক্ষতি করতে পারবে না।” (বিস্তারিত দেখুন: দুররে মানসুর; ইবনে কাসির)

৩. সূরা কলাম, আয়াত ৫১: ﴿وَإِن يَكَادُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَيُزْلِقُونَكَ بِأَبْصَارِهِمْ لَمَّا سَمِعُوا الذِّكْرَ وَيَقُولُونَ إِنَّهُ لَمَجْنُونٌ﴾ “কাফেররা যখন কোরআন শুনে, তখন তারা (এমন ভাবে তাকায় যে মনে হয়) তাদের দৃষ্টি দ্বারা যেন আপনাকে আছাড় দিয়ে ফেলে দিবে এবং তারা বলে: ও তো একজন পাগল!!” এ আয়াত প্রসঙ্গে মুফাসসিররা বলেন যে, এক লোক বদনজরের কারণে প্রসিদ্ধ ছিলো। মক্কার কাফিররা ওই লোকটাকে ডেকে এনেছিল, রাসূল (সা.) যখন কোরআন পড়তে বসতেন, তখন ওই লোকটা নজর দেওয়ার চেষ্টা করতো। কিন্তু কাজ না হলে বলতো, ‘ধুর! এতো পাগল, এজন্য এর কিছু হচ্ছে না’ (নাউযুবিল্লাহ)। (বিস্তারিত দেখুন: তাফসীরে মাযহারী; মা’রিফুল কোরআন)

উপরোক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে, বদনজর একটি প্রমাণিত সত্য। এটি যদিও মৌলিক আকীদা নয় যা ঈমানের সাথে সরাসরি সম্পর্ক রাখে, তবুও কোরআন, হাদীস ও ইজমা দ্বারা প্রমাণিত বিষয় অস্বীকার করলে ঈমান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।


বদনজর থেকে বাঁচার উপায় ও কিছু ঘটনা

বদনজর থেকে বাঁচার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অনুসরণ করা যেতে পারে:

টিপস ও করণীয়:

১. নিয়ামত গোপন রাখা: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” اسْتَعِينُوا عَلَى قَضَاءِ حَوَائِجِكُمْ بِالْكِتْمَانِ فَإِنَّ كُلَّ ذِي نِعْمَةٍ مَحْسُودٌ ” “নিজের প্রয়োজন পূরণ হওয়া পর্যন্ত সেটা গোপন রাখার মাধ্যমে সাহায্য লাভ করো! কেননা, প্রতিটা নিয়ামত লাভকারীর সাথেই হিংসুক থাকে!” (তাবারানী) এর অর্থ হলো, অহেতুক অন্যের সামনে নিজের, নিজের সম্পদের, সন্তানের প্রশংসা না করা। নিজের প্রজেক্ট, প্রপার্টি বা ব্যবসার গোপন আলোচনা অন্যদের সামনে প্রকাশ না করা। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী আলোচনা করলে কথার মাঝে আল্লাহর যিকির করা। যেমন: “আলহামদুলিল্লাহ, এ বছর ব্যবসায় কোনো লস যায়নি।” “আল্লাহর রহমতে আমার ছেলে বেশ ভালো রেজাল্ট করেছে!” “মাশা-আল্লাহ ভাবি! আপনি তো কাপড়ে অনেক ভালো ফুল তুলতে পারেন!”

২. প্রশংসার সময় আল্লাহর যিকির: শুধু খারাপ মানুষের নয়, ভালো মানুষের নজরও লাগতে পারে। বদনজর লাগার আসল কারণ হলো, আমরা যখন কোনো বস্তু বা ব্যক্তির প্রশংসা করি, তখন আল্লাহর নাম স্মরণ করি না, মাশা-আল্লাহ বা বারাকাল্লাহ বলি না। আমাদের উচিত, কিছু দেখে মুগ্ধ হলে ‘মাশা-আল্লাহ, বারাকাল্লাহ’ বলা। যেমন, সূরা কাহাফের আয়াতে আল্লাহ বলেন: ﴿وَلَوْلَا إِذْ دَخَلْتَ جَنَّتَكَ قُلْتَ مَا شَاءَ اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ﴾ “যখন তুমি তোমার বাগানে প্রবেশ করলে, তখন কেন ‘মাশা-আল্লাহ; লা-কুও্ওয়াতা ইল্লা-বিল্লাহ’ (সব আল্লাহর ইচ্ছাতে হয়েছে, আল্লাহ ছাড়া কারো ক্ষমতা নেই) বললে না?” (সূরা কাহফ, ১৮:৩৯) যদি অন্য কেউ আপনার কিছুর প্রশংসা করে, কিন্তু যিকির না করে, তাহলে আপনার উচিত হবে আল্লাহর যিকির করা।

৩. সালামের প্রচলন: অধিক পরিমাণে সালামের প্রচলন করলে হিংসা দূর হয়ে যায়, ইনশাআল্লাহ।

৪. আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়া: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ اسْتَعِيذُوا بِاللَّهِ مِنَ الْعَيْنِ فَإِنَّ الْعَيْنَ حَقٌّ ‏” “তোমরা বদনজর থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও, কেননা বদনজর সত্য!” (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং: ৩৫১০)

৫. সকাল-সন্ধ্যায় দু’আ পাঠ: রাসূল (সা.) হাসান ও হুসাইন (রা.)-কে ফুঁ দেওয়ার জন্য যে দু’আ পড়তেন, তা ইবরাহীম (আ.)ও ইসমাইল (আ.) ও ইসহাক (আ.)-এর জন্য পড়তেন। দু’আটি হলো: أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ উচ্চারণ: আ’উযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মাহ। মিং-কুল্লি শাইত্বনিও ওয়াহা-ম্মাহ। ওয়ামিং-কুল্লি ‘আইনিল্লা-ম্মাহ। অর্থ: আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমার দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টির অনিষ্ট হতে পানাহ চাচ্ছি। (বুখারী, হাদীস নং: ৩৩৭১; তিরমিযী, হাদীস নং: ২০৬৬; আবু দাউদ, হাদীস নং: ৩৮৯৪; ইবনে মাযাহ, হাদীস নং: ৩৫২৫; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস নং: ২০৭৮) এই দু’আ সকাল-সন্ধ্যায় কয়েকবার পড়ে বাচ্চাদের ফুঁ দিয়ে দিবেন, নিজের জন্যও পড়বেন।

সাহল ইবনে হুনাইফ (রা.)-এর ঘটনা: সাহল ইবনে হুনাইফ (রা.) একবার গোসলের জন্য জামা খুলেছিলেন। তিনি বেশ সুঠাম দেহের অধিকারী ছিলেন। বদরী সাহাবী আমির ইবনে রবী’আ (রা.) তাঁকে দেখে মুগ্ধ হয়ে বললেন, “এতো সুন্দর মানুষ আমি জীবনে দেখিনি। এমনকি এত সুন্দর কোনো যুবতীকেও দেখিনি।” আমির (রা.)-এর কথা বলার পরপরই সাহল (রা.) বেহুশ হয়ে পড়ে গেলেন এবং তার জ্বর চলে আসলো। মারাত্মক জ্বরে তিনি ছটফট করতে লাগলেন। অন্য সাহাবীগণ রাসূল (সা.)-কে জানালেন। সংবাদ পেয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) অবস্থা দেখতে আসলেন। সাহল (রা.)-কে হঠাৎ এমনটা হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি ঘটনাটি খুলে বললেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) তখন বললেন: “তোমরা কেন তোমাদের ভাইকে নজর দিয়ে হত্যা করছো?” আমির ইবনে রবী’আ (রা.)-কে ডেকে বললেন: “তুমি যখন তাকে দেখলে, তখন আরো বরকতের দু’আ কেন করলে না? বারাকাল্লাহ কেন বললে না?” এরপর প্রিয় নবী (সা.) আমির (রা.)-কে বললেন: “অজু কর!” আমির (রা.) অজু করলেন। অতঃপর নবীজি (সা.)-এর নির্দেশে অযুর পানি সাহল (রা.)-এর গায়ে ঢেলে দিলেন। আল্লাহর রহমতে কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেন। (মুয়াত্ত্বা মালেক, হাদীস নং: ১৭৩৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং: ১৫৯৮০; সুনানে ইবনে মাযাহ, হাদীস নং: ৩৫১০; সুনানে নাসাঈ, হাদীস নং: ৭৬১৭) এই ঘটনা থেকে বোঝা যায় যে, ভালো মানুষের নজরও লাগতে পারে, এমনকি বদরী সাহাবী আমির ইবনে রবী’আ (রা.)-এর মতো ব্যক্তির নজরও লাগতে পারে।

উম্মুল মুমিনীন হাফসা (রা.)-এর ঘটনা: হাফসা (রা.) কোনো সাহাবীর বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন, ফিরে এসে রাসূল (সা.)-কে ওদের হালহাকিকত শোনালেন। বললেন, “ইয়া রাসুলাল্লাহ! ওই সাহাবীর সন্তানরা প্রায় সময় অসুস্থ হয়ে থাকে…” রাসূল (সা.) বললেন, “আসলে বদনজর তাদের দিকে খুব দ্রুত কাজ করে!” আসমা (রা.)-এর ব্যাপারেও এরকম ঘটনা পাওয়া যায়। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং: ২১৮৬)

Increase Your Business with Expert Digital Solutions!

Get Unlimited Facebook Ad Credit, Guaranteed SEO Rankings, & Professional Web Development – all under one roof at MahbubOsmane.com!

 14+ Years of Experience – Guaranteed SEO Rankings 800+ Satisfied Clients – Unlimited Facebook Ad Credit Proven Results, Maximum ROI – Professional Web Development

Contact us ( +8801716988953 WhatsApp ) today and take your business to the next level!  Visit: MahbubOsmane.com


বদনজরের জন্য রুকইয়াহ ও শরঈ বিধান

রুকইয়াহ বা ঝাড়ফুঁকের ক্ষেত্রে উলামাদের মতামত হলো, যদি ঝাড়ফুঁকে শিরকি কিছু না থাকে তাহলে তা বৈধ হবে। এক্ষেত্রে সতর্কতাবশত কোরআনের আয়াত অথবা দু’আয়ে মাসুর (যা হাদীস বা আসারে সাহাবায় আছে) দ্বারা করা উত্তম।

ঝাড়ফুঁকের বৈধতার প্রমাণ: আওফ ইবনু মালিক আশজাঈ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা জাহেলী যুগে বিভিন্ন মন্ত্র দিয়ে ঝাড়-ফুঁক করতাম। তাই আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে আরয করলাম, “ইয়া রাসুলাল্লাহ! এ ব্যাপারে আপনার কী অভিমত?” তিনি বললেন: عَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ الْأَشْجَعِيِّ، قَالَ: كُنَّا نَرْقِي فِي الْجَاهِلِيَّةِ فَقُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، كَيْفَ تَرَى فِي ذَلِكَ؟ فَقَالَ: ‏”‏اعْرِضُوا عَلَيَّ رُقَاكُمْ، لَا بَأْسَ بِالرُّقَى مَا لَمْ يَكُنْ فِيهِ شِرْكٌ‏”‏তোমাদের মন্ত্রগুলো আমার কাছে পেশ করতে থাকবে, যদি তাতে শিরক না থাকে তাহলে কোনো সমস্যা নেই।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং: ২২২০)

বদনজরের জন্য ঝাড়ফুঁক করার ব্যাপারে বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী সহ প্রায় হাদীসের কিতাবে একাধিক হাদীস আছে। সহীহ মুসলিমে স্বতন্ত্র একটি অধ্যায়ই আছে বদনজরের জন্য রুকইয়াহ করা নিয়ে।

আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْمُرُنِي أَنْ أَسْتَرِقِيَ مِنَ الْعَيْنِ “রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে বদনজরের জন্য রুকইয়াহ (ঝাড়-ফুঁক) করার হুকুম করতেন।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং: ২১৮৫)


বদনজরের চিকিৎসা পদ্ধতি

প্রথম পদ্ধতি: যদি জানা যায় কার নজর লেগেছে যদি জানা যায় কার নজর লেগেছে, তাহলে আমির ইবনে রবী’আ (রা.) এবং সাহল ইবনে হুনাইফ (রা.)-এর হাদীসের অনুসরণ করে যার নজর লেগেছে তাকে অজু করতে বলবে। অযুর পানিগুলো একটি পাত্রে জমা করবে, এরপর আক্রান্ত ব্যক্তির গায়ে ঢেলে দিবে। নোট: কুলি করার পানি না নিলেও সমস্যা নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শুধু হাতমুখ ধোয়া পানি নিয়ে অপরজন হাত মুখ ধুলেই বদনজর নষ্ট হয়ে যায়।

দ্বিতীয় পদ্ধতি: রোগীর মাথায় হাত রেখে দু’আ ও ফুঁ রোগীর মাথায় হাত রেখে নিম্নোক্ত দু’আগুলো পড়বে এবং পড়া শেষে রোগীর গায়ে ফুঁ দিবে। এভাবে কয়েকবার করবে। এটি বাচ্চাদের জন্য বিশেষত উপকারী।

১. أُعِيْذُكُمْ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّةِ ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ উচ্চারণ: উ’ঈযুকুম বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মাহ। মিং কুল্লি শাইত্বা-নিও- ওয়াহা-ম্মাহ। ওয়ামিং কুল্লি “আঈনিল্লা-ম্মাহ। (বুখারী, হাদীস নং: ৩৩৭১; তিরমিযী, হাদীস নং: ২০৬৬; আবু দাউদ, হাদীস নং: ৩৮৯৪)

২. بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللَّهُ يَشْفِيكَ، بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ উচ্চারণ: বিসমিল্লা-হি আরকীক। মিং কুল্লি শাইয়িই ইউ’যীক। মিং শাররি কুল্লি নাফসিন আও “আইনি হাসিদ। আল্লা-হু ইয়াশফীক। বিসমিল্লা-হি আরকীক। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং: ২১৮৬)

৩. بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ، وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ، وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ উচ্চারণ: বিসমিল্লা-হি ইউবরীক। ওয়ামিং কুল্লি দা-ঈই ইয়াশফীক। ওয়ামিং শাররি হাসিদিন ইযা- হাসাদ। ওয়া শাররি কুল্লি যী “আঈন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং: ২১৮৬)

৪. اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبْ الْبَاسَ، اشْفِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা রাব্বান না-স। আযহিবিল বা’স। ইশফি ওয়াআংতাশ শা-ফী। লা-শিফাআ ইল্লা-শিফাউক। শিফাআল লা-ইউগা-দিরু সাক্বামা-। (বুখারী, হাদীস নং: ৫৭৪২; মুসলিম, হাদীস নং: ২১৫১)

এরপর চাইলে সাথে ৩ বার অথবা ৭ বার করে সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ইখলাস, ফালাক, নাস পড়ে ফুঁ দিতে পারেন। সমস্যা বেশি হলে উল্লেখিত পদ্ধতিতে রুকইয়াহ করা শেষে, আরেকবার এগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে খাবেন এবং গোসল করবেন। সুস্থ হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন এই কাজগুলো করা উচিত। এছাড়া কোনো অঙ্গে ব্যথা থাকলে এসব দু’আ-কালাম পড়ে তেলে ফুঁ দিয়ে প্রতিদিন মালিশ করতে পারেন।

তৃতীয় পদ্ধতি: গাছ, গৃহপালিত পশু, দোকান অথবা বাড়িতে নজর লাগলে যদি কোনো গাছ, গৃহপালিত পশু, দোকান অথবা বাড়িতে নজর লাগে, তাহলে উপরের সূরা এবং দু’আগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিবেন। এরপর ওই পানিটা (গাছে/ঘরে/পশুর গায়ে) ছিটিয়ে দিবেন।

চতুর্থ পদ্ধতি: বদনজরের জন্য সেলফ রুকইয়াহ (যদি কার নজর লেগেছে না জানা যায়) যদি না জানা যায় আপনাকে কার নজর লেগেছে, অথবা অনেক দিনের সমস্যা হয়, কিংবা যদি অনেকজনের নজর লাগে, তাহলে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত। নিজে নিজে রুকইয়াহ করার জন্য এই পদ্ধতিটি সবচেয়ে উপযোগী।

নিয়মাবলী: ১. রুকইয়াহ শারইয়্যার আয়াতগুলো তেলাওয়াত বা শ্রবণ: সমস্যা ভালো হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন রুকইয়াহ শারইয়্যার আয়াতগুলো তেলাওয়াত করবেন অথবা শুনবেন। সরাসরি শোনা সম্ভব না হলে অডিও রেকর্ড শুনবেন। এভাবে প্রতিদিন কমপক্ষে ১/২ বার পুরো রুকইয়াহ শুনুন, আরও বেশি শুনলে বেশি ফায়দা। নোট: অডিও শুনতে চাইলে “বদনজর (Evil Eye)” এরটা রিকোমেনডেড। এছাড়া সা’দ আল গামিদীর আধাঘণ্টার রুকইয়াহও শুনতে পারেন। (ডাউনলোড লিংক: ruqyahbd.org/download) রুকইয়াহ শুনলে শারীরিক প্রভাব অনুভূত হতে পারে, যেমন: প্রচণ্ড ঘুম আসা, মাথাব্যথা, হাত-পা কামড়ানো, শরীর ঘামানো, বেশি বেশি প্রস্রাব হওয়া ইত্যাদি। এ সত্ত্বেও শুনতে থাকবেন এবং ঘুম আসলে জেগে থাকার চেষ্টা করবেন। সমস্যা সমাধান হলেই ভালো অনুভব করবেন। কয়েকবার মনোযোগ দিয়ে শোনার পরেও যদি কোনো প্রভাব অনুভব না করেন, তাহলে আলহামদুলিল্লাহ, আপনার কোনো সমস্যা নেই।

২. রুকইয়ার গোসল: সম্ভব হলে প্রতিদিন, নইলে একদিন পরপর রুকইয়ার গোসল করবেন। একদম সুস্থ হওয়া পর্যন্ত। রুকইয়ার গোসলের পদ্ধতি: একটি বালতিতে পানি নিবেন। তারপর ওই পানিতে দুই হাত ডুবিয়ে নিচের জিনিসগুলো পড়বেন (যদি টয়লেট আর গোসলখানা একসাথে হয়, তাহলে এসব অবশ্যই বাহিরে এনে পড়তে হবে):

  • কোনো দরুদ শরীফ ৭ বার
  • সূরা ফাতিহা ৭ বার
  • আয়াতুল কুরসি ৭ বার
  • তিনকুল (ইখলাস, ফালাক, নাস) প্রত্যেকটা ৭ বার
  • শেষে আবার দরুদ শরীফ ৭ বার পড়ার পর হাত উঠাবেন এবং এই পানি দিয়ে গোসল করবেন। প্রথমে এই পানি দিয়ে গোসল করলেন, পরে অন্য পানি দিয়ে ভালোমতো করলেন, সমস্যা নেই। যিনি অসুস্থ, তিনি যদি পড়তে না পারেন, তাহলে অন্য কেউ পানিতে হাত রেখে পড়ে দিবে, এরপর অসুস্থ ব্যক্তি গোসল করবেন। আবশ্যক না হলেও, উত্তম হচ্ছে, প্রথমে রুকইয়াহ শুনে এরপর গোসল করতে যাওয়া। মোটকথা, প্রতিদিন রুকইয়াহ শুনবেন এবং উপরের নিয়ম অনুযায়ী রুকইয়ার গোসল করবেন। সমস্যা অনুযায়ী ৩-৭ দিন লাগতে পারে। সমস্যা বেশি মনে হলে ২১ দিন করতে পারেন। সমস্যা ভালো হয়ে রুকইয়াহ শুনলে আর কিছুই অনুভব করবেন না। তবে সমস্যা ভালো হওয়ার পরেও ২-৩ দিন রুকইয়াহ করা উচিত।

বদনজর থেকে বাঁচার জন্য করণীয়

১. কথাবার্তায় আল্লাহর যিকির: সব কথার মাঝে আল্লাহর যিকির করবেন। যেমন: “আলহামদুলিল্লাহ”, “মাশা-আল্লাহ”, “বারাকাল্লাহ” ইত্যাদি।

২. সকাল-সন্ধ্যার দু’আ পাঠ: হাদীসে বর্ণিত সকাল-সন্ধ্যার দু’আগুলো নিয়মিত পড়বেন, বিশেষতঃ ‘বিসমিল্লাহিল্লাযি…’ এবং তিন ক্বুল তিনবার করে।

৩. পর্দার অভ্যাস: মেয়েদের জন্য অবশ্যই পর্দার অভ্যাস করা উচিত।

৪. বাচ্চাদের জন্য ফুঁ দেওয়া: বাচ্চাদের ক্ষেত্রে উচিত হলো, মাঝে মাঝেই সূরা ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁ দেওয়া। রাসূলুল্লাহ (সা.) এমনটা করতেন।

৫. বিশেষ দু’আ পাঠ: এই দু’আ সকাল-সন্ধ্যায় কয়েকবার পড়ে বাচ্চাদের ফুঁ দিয়ে দিবেন, নিজের জন্যও পড়বেন: أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ উচ্চারণ: আ’উযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মাহ। মিং-কুল্লি শাইত্বনিও ওয়াহা-ম্মাহ। ওয়ামিং-কুল্লি ‘আইনিল্লা-ম্মাহ। (বুখারী, হাদীস নং: ৩৩৭১)


বদনজর এবং প্রচলিত কুসংস্কার

ছোট বাচ্চাদের বদনজর থেকে বাঁচানোর জন্য অনেকে কালো টিপ ব্যবহার করেন, আঙ্গুল কামড়ে দেন, বা হিন্দুয়ানী প্রথায় টাকা ঘুরিয়ে নজর কাটান। কেউবা মরিচ, পানপাতা দিয়ে নজর কাটান। অবাক করা বিষয় হলো, অনেক সময় এগুলোতে কাজও হয়। কারণ এতে শয়তানের সাহায্য ও সূক্ষ্ম ধোঁকা থাকে। শয়তান নিজেই সমস্যা সৃষ্টি করে এবং যখন আপনি তার পছন্দের কাজ করেন, তখন সে সমস্যা করা বন্ধ করে দেয়। ফলে আপনি ভাবেন যে এটাতেই কাজ হচ্ছে, অথচ শয়তান আপনার ঈমান নিয়ে খেলছে।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি: عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: ‏”‏إِنَّ الرُّقَى وَالتَّمَائِمَ وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ‏”‏ فَقَالَتْ زَيْنَبُ امْرَأَتُهُ: لِمَ تَقُولُ هَذَا؟ فَوَاَللَّهِ، لَقَدْ كَانَتْ عَيْنِي تَرْمَدُ، فَكُنْتُ آتِي فُلَانًا الْيَهُودِيَّ فَيَرْقِيهَا، فَإِذَا رَقَاهَا سَكَنَتْ، فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ: إِنَّمَا ذَلِكِ الشَّيْطَانُ، كَانَ يَنْخَسُهَا بِيَدِهِ، فَإِذَا رَقَاهَا كَفَّ عَنْهَا، وَقَدْ كَانَ يَكْفِيكِ أَنْ تَقُولِي كَمَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: ‏”‏أَذْهِبْ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ، اشْفِ وَأَنْتَ الشَّافِي، لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا‏”‏ “মন্ত্রপাঠ, তাবিজ/কবচ ও বশ করা শিরক।” একথা শুনে (উনার স্ত্রী) যয়নব (রা.) বলেন: “তুমি এ কী বলছো, আল্লাহর শপথ! আমার চোখে ব্যথা হলে আমি একজন ইয়াহূদীর কাছে যেতাম, সে মন্ত্র পাঠের পর আমার চোখে ফুঁ দিলে ব্যথার উপশম হতো।” তখন আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, “এতো শয়তানের অপকর্ম ছিল, সে নিজেই চোখে ব্যথা দিত, আর যখন ওই ইয়াহূদী যখন তাতে ফুঁ দিত, তখন সে বিরত থাকতো। তোমার জন্য তা-ই পাঠ করা উচিত ছিল, যা রাসূলুল্লাহ (সা.) করতেন। আর তা হলো: أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا হে মানুষের রব! যন্ত্রণা দূর করে দিন, আরোগ্য দান করুন, আপনিই আরোগ্যদাতা, আপনার দেওয়া আরোগ্য ব্যতীত কোনো আরোগ্য নেই, (এমন আরোগ্য দিন) যার পরে আর কোনো রোগ বাকী থাকে না।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং: ৩৮৪৩)

সুতরাং, এসব প্রচলিত কুসংস্কার বাদ দিয়ে কোরআন ও সুন্নাহ মেনে চিকিৎসা করুন। শিফার পাশাপাশি সওয়াবও মিলবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদেরকে সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে হিফাজত করুন এবং সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।

✍️ লিখেছেন:মাহবুব ওসমানী

মাহবুব ওসমানী — একজন ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক এবং IslamiDawahCenter.com এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি কুরআন ও সহীহ হাদীসভিত্তিক বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 

To learn more, comment below or message us on wa.me/+966549485900 or  wa.me/+8801716988953 or call us at +44-73801-27019. Email at hi@islamidawahcenter.com

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন।