Salatul Khusuf/সালাতুল কুসূফ বা সূর্যগ্রহণের সালাত ও সালাতুল খুসুফ বা চন্দ্রগ্রহণের নামাজ এবং এই দুই নামাযের পদ্ধতি

 

আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অসংখ্য কুদরতের মধ্যে অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ। আজ বুধবার (২৬ মে, ২০২১) সন্ধ্যায় পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ হতে যাচ্ছে ইনশাআল্লাহ। সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত ভীতসন্ত্রস্ত থাকতেন। এ সময়ে সালাত আদায় করা ও তাওবা-ইস্তিগফার করে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা সুন্নাহ।

 

॥॥ সালাতুল খুসুফ বা চন্দ্রগ্রহণের নামাজের সময় ॥॥

অবস্থান ভেদে দেশের আকাশে মেঘের উপস্থিতির সাপেক্ষে সন্ধ্যা ৬ঃ৩০ থেকে প্রায় রাত ৮টা পর্যন্ত চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে। ঢাকায় চন্দ্রগ্রহণ শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টা ৪১ মিনিটে এবং শেষ হবে ৭টা ৫১ মিনিট ১৮ সেকেন্ডে। ময়মনসিংহে শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টা ৪২ মিনিট ৪২ সেকেন্ডে এবং শেষ হবে ৭টা ৫৩ মিনিটে। চট্টগ্রামে সন্ধ্যা ৬টা ৩২ মিনিট ১৮ সেকেন্ডে ‍শুরু হবে এবং শেষ হবে ৭টা ৪২ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডে। সিলেটে শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টা ৩৭ মিনিট ১৮ সেকেন্ডে এবং শেষ হবে ৭টা ৪৭ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডে।

খুলনায় শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টা ৪২ মিনিট ২৪ সেকেন্ডে এবং শেষ হবে ৭টা ৫২ মিনিট ৪২ সেকেন্ডে। বরিশালে শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টা ৩৯ মিনিটে এবং শেষ হবে ৭টা ৫৩ মিনিট ১৮ সেকেন্ডে। রাজশাহীতে শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টা ৪৮ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডে এবং শেষ হবে ৭টা ৫৯ মিনিট ১২ সেকেন্ডে। আর রংপুরে শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টা ৪৯ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে এবং শেষ হবে ৭টা ৫৯ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডে।

 

॥॥ সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাযের পদ্ধতি ॥॥

১) তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার) বলবে। সানা পড়বে। এরপর আউযুবিল্লাহ পড়ে সূরা ফাতিহা পড়বে। তারপর দীর্ঘ তেলাওয়াত করবে।

২) এরপর দীর্ঘক্ষণ রুকু করবে।

৩) এরপর রুকু থেকে উঠে ‘সামি আল্লাহু লিমান হামিদা, রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’ বলবে।

৪) এরপর সূরা ফাতিহা পড়বে এবং দীর্ঘ তেলাওয়াত করবে; তবে পরিমাণে প্রথম রাকাতের তেলাওয়াতের চেয়ে কম।

৫) এরপর দ্বিতীয়বার রুকু করবে এবং দীর্ঘক্ষণ রুকুতে থাকবে; তবে প্রথম রুকুর চেয়ে কম সময়।

৬) এরপর রুকু থেকে উঠে ‘সামি আল্লাহু লিমান হামিদা, রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’ বলে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে।

৭) এরপর দীর্ঘ দীর্ঘ দুইটি সেজদা করবে এবং দুই সেজদার মাঝখানেও দীর্ঘসময় বসে থাকবে।

৮) এরপর দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াবে এবং প্রথম রাকাতের মত দুই রুকুসহ ইত্যাদি করবে। কিন্তু, সবকিছুর দীর্ঘতা প্রথম রাকাতের চেয়ে কম হবে।

৯) এরপর তাশাহুদ পড়ে সালাম ফিরাবে।

[দেখুন: ইবনে কুদামার রচিত ‘আল-মুগনি’ (৩/৩২৩), নববীর রচিত ‘আল-মাজুম’ (৫/৪৮)।

 

॥॥ সালাতুল কুসূফ (সূর্যগ্রহণের সালাত) ও সালাতুল খুসুফ (চন্দ্রগ্রহণের সালাত) ॥॥

সূর্য ও চন্দ্র যখন গ্রহণের সময় আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চেহারা ভয়ে বিবর্ণ হয়ে যেতো। তখন তিনি সাহাবীদের নিয়ে জামায়াতে নামাজ পড়তেন, কান্নাকাটি করতেন। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। আরবীতে সূর্যগ্রহণকে ‘কুসূফ’ আর চন্দ্রগ্রহণকে ‘খুসুফ’ বলা হয়। আর সূর্যগ্রহণের নামাজকে ‘সালাতুল কুসূফ’ এবং চন্দ্রগ্রহণের নামাজকে ‘সালাতুল খুসুফ’ বলা হয়।

দশম হিজরীতে যখন পবিত্র মদীনায় সূর্যগ্রহণ হয়, ঘোষণা দিয়ে লোকদেরকে নামাজের জন্য সমবেত করা হয়েছিল। তারপর সম্ভবত নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনের সর্বাধিক দীর্ঘ নামাজের জামায়াতের ইমামতি করেছিলেন। সেই নামাজের কিয়াম, রুকু, সিজদাহ মোটকথা, প্রত্যেকটি রুকন সাধারণ অভ্যাসের চেয়ে অনেক দীর্ঘ ছিলো।

হাদীসের দলিলের আলোকে ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহ ও ইমাম সুফিয়ান সাওরি রাহিমাহুল্লাহর মতে চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণের নামাজটি ২টি রুকু ও ৪টি সিজদা সহকারে দুই রাকাআত বিশিষ্ট। অর্থাৎ আমরা যে কোনো সুন্নত-নফল ২ রাকাত নামাজ যেভাবে পড়ি এ নামাজও সেই একই নিয়মে পড়তে হবে। যদিও অন্য হাদীসে চার রুকু ও চার সিজদার মাধ্যমে দুই রাকাত নামাজ পড়ার বর্ণনাও পাওয়া যায়। এ বর্ণনার আলোকে অন্য মাযহাবের অনেক ইমামগণ দ্বিতীয় পদ্ধতির ব্যাপারে মত দিয়ে থাকেন।

সূর্যগ্রহণকালীন সালাতুল কুসূফ নামাজ মসজিদে জামায়াতের সাথে পড়া সুন্নাহ। তবে একাকী ঘরে পড়লেও তা আদায় হবে। ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহর মতে চন্দ্রগ্রহণের নামাজ বাসায় পড়া উত্তম যেহেতু এটা রাতে পড়তে হয়। নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই এ নামাজ পড়া সুন্নাহ।

 

॥॥ সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ কেন হয়? ॥॥

সূর্য, চাঁদ, পৃথিবী এক সরল রেখাতে এলে গ্রহণের ঘটনা ঘটে। সূর্যগ্রহণের সময়, ভ্রমণরত অবস্থায় চাঁদ কিছু সময়ের জন্য পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে, তখন কিছু সময়ের জন্য পৃথিবীর কিছু জায়গা থেকে সূর্যকে আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে আর দেখা যায় না। চাঁদের ছায়া এসে পৌঁছায় পৃথিবীর ওপর। যে কারণে ছায়া পড়া অংশে খানিক সময়ের জন্য দিনের আলো থাকে না।

অপরদিকে চন্দ্রগ্রহণ হয়, যখন চাঁদ আর সূর্যের মাঝখানে থাকে পৃথিবীর অবস্থান। পৃথিবী তখন আলোর উৎস বন্ধ করে দেয়। ফলে সূর্য থেকে কিছু সময়ের জন্য চাঁদের উপর আলো পড়ত পারে না। তখন আমরা চাঁদের পৃষ্ঠে পৃথিবীর ছায়া দেখতে পাই।

অবিশ্বাসী বিজ্ঞানীরা প্রথম যখন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সালাতুল কুসূফের (সূর্যগ্রহণের নামাজের) আমল সম্পর্কে জানতে পারলো, তখন তারা এটা নিয়ে বিদ্রুপ করলো (নাউযুবিল্লাহ)। তারা বললো, এ সময় এত ভয় পাওয়ার বা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার কী যৌক্তিকতা আছে? সূর্যগ্রহণের সময় চন্দ্রটি পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে চলে আসে বলে সূর্যগ্রহণ হয়। ব্যস এতটুকুই! এখানে কান্নাকাটি করার কী আছে? মজার বিষয় হলো, বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় যখন এ বিষয় নিয়ে গবেষণা শুরু হলো, তখন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এই আমলের তাৎপর্য বেরিয়ে আসলো।

 

॥॥ সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ নিয়ে কুসংস্কার ॥॥

চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ নিয়ে আমাদের দেশে অসংখ্য কুসংস্কার আছে। অনেক কুপ্রথা আছে। যেগুলো আসলে কোনো ভাবেই ইসলামের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। আগের কালের ‘মুরুব্বি’দের ধারণাপ্রসূত এসব কুসংস্কারগুলো বিজ্ঞান বা ইসলাম সম্মত নয়। যেমন – বলা হয়ে থাকে সূর্যগ্রহণের সময় গর্ভবতী নারী মুরগি কাটলে বিকলাঙ্গ সন্তান জন্ম নেয়। এসময় রান্না করা বা খাওয়া যাবে না ইত্যাদি। এসকল কথাই ভিত্তিহীন ও কুসংস্কার। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনো বিষয়কে সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্যের লক্ষণ মনে করাকে সম্পূর্ণ নিষেধ করেছেন। যা অনেক সময় শিরকের পর্যায়ে চলে যায়।

চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের সময় করণীয় কী সে বিষয়ে সুস্পষ্ট হাদীস রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন “… চন্দ্র ও সূর্য আল্লাহর দু’টি নিদর্শন। আর চন্দ্র গ্রহণ ও সূর্য গ্রহণ কারো জন্ম ও মুত্যুর কারণে সংঘটিত হয় না। অতএব তোমরা যখন চন্দ্র গ্রহণ ও সূর্য গ্রহণ দেখতে পাও, তখন তাকবীর পড় আর আল্লাহর কাছে দু‘আ কর এবং সলাত আদায় কর ও সদাক্বাহ্‌ কর।…।” (মুসলিম ১৯৭৪)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পুত্র ইবরাহীম যেদিন ইন্তিকাল করেন সেদিন সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। সাহাবিরা বলাবলি করছিলেন যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পুত্র ইন্তিকাল করায় সূর্যগ্রহণ হয়েছে। সে প্রসঙ্গেই বলা হয়েছে যে ‘কারো জন্ম বা মৃত্যুতে তার আলো নিষ্প্রভ হয় না’।

এমনিভাবে প্রত্যেক ভীতিকর অবস্থাতে যেমন- প্রবল বাতাস প্রবাহকালে, অতিবৃষ্টি, গাঢ় অন্ধকার, ভূমিকম্প ইত্যাদি সময়ে নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব। চন্দ্র গ্রহণের নামাজ কারও কারও মতে, সূর্য গ্রহণের নামাজের অনুরূপ মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করা সুন্নত। কিন্তু ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহ বলেন, যেহেতু এ নামাজ রাত্রিকালীন তাই ঘরে একাকী আদায় করা উত্তম।

আল্লাহ আমাদেরকে চন্দ্র-সূর্যের গ্রহণকালীন ক্ষতিকর বিকিরণ ও অন্যান্য যে কোনো আশংকা বা বিপর্যয় যদি থেকে থাকে তা থেকে রক্ষা করুন। আমাদেরকে রক্ষা করুন সকল ধরণের কুসংস্কার ও কুপ্রথা পালন করা থেকে। আমাদেরকে অটল রাখুন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহর উপর। আমীন।

Courtesy: Daily Ayah

 

আরও পড়ুন…

 

Polashi Tragedy/পলাশী ট্রাজেডির ২৬৩ বছর ও বিশ্বাসঘাতকদের পরিণতি

 

পালাশীর আম্রকানন তো একটা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। এই আনুষ্ঠানিকতাকে গুরুত্ব দিয়ে কি লাভ যদি না অনুষ্ঠানের ইন্তিজামীয়া কমিটিকে না চিনি না বুঝি!!!
ইতিহাসে কে ঐতিহাসিকের দৃষ্টিতে দেখলেই হবে না, ইতিহাসকে ইতিহাসের দৃষ্টিতেই মূল্যায়ন করতে হবে। এজন্য
১/কলোনিয়াল সিস্টেমকে বুঝতে হবে।
২/কলোনি কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় তা জানতে হবে।
৩/শুধুমাত্র সিরাজুদ্দৌলা,লর্ড ক্লাইভ,মীর জাফর,ঘষেটি বেগমসহ কয়েকটি চরিত্রের মাঝে পলাশীর পাঠ এবং পাঠনকে সীমাবদ্ধ রাখতে পারাই কলোনিয়াল সিস্টেমের প্রকৃত সফলতা।
সিস্টেমকে বুঝুন। ব্যক্তি চরিত্রে কি আসে যায়!!
যদি সিস্টেমকে ধরতে পারেন তবে দেখবেন পলাশী থেকে কুদুস হয়ে ইস্তাম্বুল সবখানেই বৃটিশ জায়নবাদী বর্ণবাদী সিস্টেমের জয়জয়কার। ভুলেও জায়োনিজম শব্দের মাঝে জেমস বন্ডীয় ভন্ড থ্রিলকে বুঝবেন না।
সিস্টেমকে কিভাবে বুঝবেন
১/প্রশ্ন করুন আজকের সুদী অর্থনীতি কি করে আসল??? সুবে বাংলায় কি এই অর্থনীতি ছিল?? না থাকলে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী এলাকাটায় অর্থনীতি কিভাবে চলত।
২/ পৃথিবীর কলোনিয়াল ইতিহাসের পাঠ কেন্দ্রে পলাশী নেই কেন??
৩/ পলাশীর স্থান আমাদের পাঠ্যসূচীতে এত কম কেন?? পলাশীকে নিয়ে আমাদের জাতীয় পর্যায়ে আলোচনা নেই কেন?? পলাশী কেন শুধু মুসলিম চিন্তাশীল যুবক শ্রেণীতেই সীমাবদ্ধ??? ১৭৫৭, ১৮৫৭ এর দুইচারটা ঘটনা বলেই ১৯৪৭ থেকেই বা কেন শুরু হয়?? ইতিহাসের পাঠে কেন ধারাবাহিকতা নেই ?? ১৭৫৭ আগের ইতিহাস কই???
তার থেকে বড় কথা হলো ১৭৫৭,১৮৫৭, ১৯৪৭ সবগুলোই মুসলমানদের পরাজয়ের ইতিহাস।
৪/ এখানের মানুষ, এখানের সমাজ কি আজকের মতো প্রতিক্রিয়াশীলতা, হীনমন্যতা, চৌর্যবৃত্তি নিয়ে পলাশী পূর্বে তৎকালীন সময়ে সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে একট টুকরো জান্নাত হয়েছিল !!! বৃটিশ,ওলন্দাজ, ফরাসীরা কি বাঙালী ললনার ভালোবাসার টানে এসেছিল???
৫/ সুলতানি আমলের সুলতানরা কি শাসন করে ইরান,তুরান,আফগান , আরব,তুর্কিতে চলে গিয়েছে??? নাহ!!
তাহলে ইংরেজরা কেন লন্ডনে চলে গেল??
৬/ এই ভূমির মানুষ ২০০ বছরের শাসনে ইংরেজ হলো না কিন্তু কি এমন শাসন মুসলিমরা করলো যে হিন্দু বৌদ্ধ থেকে ৯০% মুসলমান হইল আবার
২০০ বছরের শোষণ শেষে মুসলিমই রইল কেন???
৭/ কোনটা শাসন আর কোনটা শোষণ??
৮/ আপনি কি এখন শাসন করছেন নাকি এখনও শোষিত??
৯/ বাংলা থেকে কুদুস সবখানে বৃটিশ কারণটা কি??
১০/ বৃটিশ গেল কিন্তু বেনিয়া আইন, সমাজ, সংস্কৃতি কি চলে গিয়েছে?? ৭০০ বছরের ঐতিহ্য কি ফিরে এসেছে?? ৭০০ বছরের সোনালী ধারার কি নবায়ন হয়েছে??
১২/ ক্ষমতার ভার বৃটিশরা মুসলিম থেকে নিয়েছিল কিন্তু ফেরত দিল ব্রাহ্মণের হাতে । যেখানে ব্রাহ্মণ শাসন থেকে বাঁচতেই ইসলামকে এই ভূমিতে দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল???
ভারতকে ভারত বানানো আমরাই ভারতে অচ্ছুৎ হলাম কি করে??
১৩/ জ্ঞানের দ্বীনি আর দুনিয়াবি করণ কেমনে হলো?? আলেম শ্রেণী আর শিক্ষিত শ্রেণী নামে দুইভাগ হয় কি করে ???
১৪/ শেষে বিট্রিশ লেখক লরেন্স ব্রাউন এর দ্যা প্রসপেক্টাস অফ ইসলাম বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে শেষ করি
“আমরা যখন ভারতে ইসলামের দেওয়ানী ও ফৌজদারী আইনকে সেকেলে ও অকেজো মনে করে রহিত করে দিয়ে কেবল মুসলিম পার্সনাল -ল’ হিসেবে রেখে দিলাম তখন তারা খুব ক্ষুদ্ধ হলো। কারণ এর ফলে তাদের অবস্থা এককালীন ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিম যিম্মীদের অনুরূপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন আমাদের নীতি শুধু ভারতীয় মুসলমানদের মনঃপুতই হয়নি বরং মুসলিম রাষ্ট্রগুলোও আমাদের অনুসরণ করছে। তুরস্ক এবং আলবেনিয়া তো বিবাহ ,তালাক ও উত্তরাধিকার আইন পর্যন্ত আমাদের মানদন্ডে সংশোধন করে নিয়েছে। এথেকে এ কথাই প্রমাণিত হচ্ছে যে “আইনের উৎস হচ্ছে আল্লাহর ইচ্ছা মাত্র”- মুসলমানদের এ ধারণাটি নিছক একটি পবিত্র কাহিনী (Pious Fiction) ছাড়া আর কিছুই ছিল না।”
এগুলোকে না বুঝলে এই ভূমির আঁকুতি মিনতিকে না বুঝলে পলাশীর আর জরিনার বিয়ের মাঝে কোন তফাৎ নাই।

 

২৩ জুন, ১৭৫৭ সাল। এদেশের ইতিহাস সম্পর্কে যারা সামান্যও পড়েছেন, তারাও নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা এবং পলাশী যুদ্ধ সম্পর্কে বেশ অবগত আছেন। আমি আজ আবার নতুন করে আজ থেকে ২৬৩ বছর আগে আজকের এই দিনে পলাশীর আম্রকাননে কীভাবে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয় এবং পরবর্তীতে কীভাবে উপমহাদেশকে দু’শো বছর সেই গোলামীর গ্লানি বয়ে বেড়াতে হয়েছে তা নিয়ে আলাপ করবো না।

যুদ্ধের কাহিনী যেহেতু আমাদের সবারই কম বেশি জানা। তাই সেদিকে না গিয়ে আমি কেবল দুইটা বিষয় নিয়ে একটু আলাপ করবো। প্রথমত; নবাব সিরাজকে নাটক উপন্যাসের মাধ্যমে যেভাবে ইতিহাসের ভিলেন বানানো হয়েছে, আসলে তা কতটুকু ঠিক বা যুদ্ধের পর তার পরিবার ও অনুচরদের সাথে কেমন ব্যবহার করা হয়েছে তা নিয়ে সামান্য বলবো। পাশাপাশি যাদের কারণে পলাশীর পরাজয়, পরবর্তিতে তাদের কী করুণ পরিণতি হয়েছিলো তা আলাপে নিয়ে আসবো।

ভূমিকা না বাড়িয়ে শুরু করি- ইতিহাস সম্পর্কে যারা সচেতন তারা সবাই জানেন ইংরেজদের সাথে পলাশীর প্রান্তরে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার সময় নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার বাহিনী ছিল ৫০,০০০ হাজার আর রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বে ইংরেজ বাহিনী ছিল মাত্র ৩৫০০ এর কাছাকাছি।

নবাবের হাতে যে বিপুল সৈন্যসংখ্যা ছিল তা দিয়ে ইংরেজদের এদেশ থেকে বিতাড়িত করা অসম্ভব কাজ ছিল না। এমনকি মীরজাফরের অধীনস্ত যে ১৬০০০ সৈন্য ছিলো, তারাও যদি যুদ্ধে অবতীর্ণ হতো তাহলে নবাবের বিজয় অর্জন একেবারেই স্বাভাবিক ছিল। মীর জাফর থেকে শুরু করে পরাজয়ের জন্য আরও যারা বিশ্বাসঘাতকতা করে পিছনে কলকাটি নেড়েছে তাদের নিয়ে পরে আলাপ করবো।

এখন একটা প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠে সৈন্য সংখ্যা, অস্ত্রভান্ডার, রসদ ও বাহন বিদেশিদের তুলনায় অনেক বেশি, তাছাড়া আপন প্রকৃতি, পরিবেশ সবই ছিল নিজেদের অনুকুলে তথাপি এই ঐতিহাসিক পরাজয় কেন হয়েছিলো?

জাতির মধ্যে অনৈক্য এবং ক্ষমতালোভী স্বার্থান্বেষী বিশ্বাসঘাতক গোষ্ঠীদের ষড়যন্ত্রের পাশাপাশি একটা মহল বিশেষ করে নাটক-সিনেমায় নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে অত্যাচারী, নারী লোভী, মাতাল এবং আরো অনেক দোষে দোষী সাব্যস্ত করে। এবং এটাও একটা কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়।

তরুণ যুবক সিরাজের কিছু দোষ ত্রুটি থাকাই স্বাভাবিক, অস্বাভাবিক কিছু নয়। সত্যিকারভাবে ইতিহাসের বিচার বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, এগুলো অতিরঞ্জিত। চলুন, আমরা একটু ইতিহাসে চোখ বুলাই- সিরাজের নানা আলীবর্দী খান ইন্তেকাল করেন ১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দে ৯ এপ্রিল, নানার মৃত্যুর পরই তো সিরাজ উত্তরাধিকার সূত্রে ক্ষমতায় আসে। আর পলাশী যুদ্ধে সিরাজের পতন ঘটে ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুন, অর্থাৎ ১৪ মাস ১৪ দিন পর।

এই ১৪ মাস ১৪ দিন, তাকে চর্তুদিকে ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করে টিকে থাকতে হয়েছে। কিশোর সিরাজউদ্দৌলা ক্ষমতায় বসেই এই ১৪ মাসে কমপক্ষে ১২০০ মাইল দুর্গম পথ তাকে অতিক্রম করতে হয়েছে। সে সময়ে ছিলো না কোনো উন্নত যানবাহন। করতে হয়েছে পাঁচ, পাঁচটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। চর্তুদিকে অসংখ্য ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করতে হয়েছে। তাকে তো আলেকজান্ডারের চেয়েও দ্রুত গতিতে পথ চলতে হয়েছে। রাত কাটাতে হয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে ও অশ্বপৃষ্ঠে। দিন কাটাতে হয়েছে ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করে।

নানাজীর উদ্যোগে সেই অল্প বয়সে বিবাহিত সিরাজের তখন আপন স্ত্রী লুৎফা, শিশু কন্যা জোহরারও প্রতি ফিরে তাকাবারও তো ফুরসত ছিল না। নাটকে আলেয়া নামের আর্য সুন্দরীদের মোহাবিষ্ট জালে রূপাকৃষ্ট পতঙ্গের মতো লাম্পট্য লীলায় সময় কাটাবার সুযোগ তিনি পেলেন কোথায়?

এগুলো আমরা একটু গভীরভাবে উপলব্ধি করলেই তো বুঝতে পারার কথা। কেবলমাত্র সিরাজের প্রতি নিষ্ঠুরতাকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য হতভাগ্য নবাবের চরিত্রহনন করা হয়। নানা ধরনের মিথ্যাচারের মাধ্যমে কলঙ্কিত করা হয় তরুণ নবাবকে। নিষ্ঠুরতা কত ভয়াবহ ছিলো সামান্য করে বলি।

মোহাম্মদী বেগ, মীরনের নির্দেশে সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি। সিরাজকে হত্যার পর তার পত্নী লুৎফুন্নেসাকে চরমভাবে লাঞ্ছিত করে সে। নবাব সিরাজের সঙ্গে তিনিও ধরা পড়েছিলেন তার একমাত্র কন্যা উম্মে জোহরাসহ ১৭৫৭ সালের ২৪ জুন।

ধরা পড়ার পর লুৎফুন্নেসার ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। মুর্শিদাবাদের জেলখানায় ধারাবাহিক নির্যাতনে তিনি মৃত প্রায় হয়ে যান। ১৭৫৮ সালে কন্যাসহ বন্দি বেগম লুৎফুন্নেসাকে ঢাকায় পাঠিয়ে বন্দি করে রাখা হয় জিঞ্জিরা প্রাসাদে। এখানে মা ও মেয়ে প্রায় আট বছর বন্দি থাকেন।
নির্লজ্জভাবে পিতা মীরজাফর ও পুত্র মীরন উভয়েই লুৎফুন্নেসাকে বিয়ে করার জন্য জোরজবরদস্তি করতে থাকে। কিন্তু এই মহীয়সী নারী উভয়ের প্রস্তাব ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করেন।

১৭৬৫ সালে তিনি মুক্তি পেয়ে কন্যাসহ মুর্শিদাবাদ ফিরে আসেন। এবং অতি দীনহীন ভাবে জীবন কাটাতে থাকেন। ১৭৯০ সালের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি স্বামী নবাব সিরাজের কবরগাহে তসবিহ, তাহলিল, তেলাওয়াত, দোয়া, দরুদ পাঠ করেই কাটান। মুর্শিদাবাদের তৎকালীন অধিবাসীরা একজন বেগমের প্রতি নির্যাতন ও নিষ্ঠুরতা অশ্রুসিক্ত নয়নে অবলোকন করছে।

সিরাজের অনুগত, দেশপ্রেমিক সেনাপতি ও আমত্যদেরও একে একে হত্যা-নির্যাতনের শিকারে পরিণত করা হয়। ষড়যন্ত্রকারী রায়দুর্লভ বিষ প্রয়োগে হত্যা করেন অকৃত্রিম সিরাজভক্ত মোহনলালকে। খাজা আবদুল হাদি খানকে মীরজাফর মেরে ফেলেন বিশ্বাসঘাতকতা করে। সিরাজ অনুগত ঢাকার ভূতপূর্ব নায়েব রায় বল্লভ সেনকে গঙ্গার জলে ডুবিয়ে মারা হয়। পাটনার নায়েব, আরেক সিরাজ সুহৃদ, রামনারায়ণকেও খুবই নিষ্ঠুরভাবে খুন করা হয়। মোটের ওপর, পলাশীর যুদ্ধের ২০ বছরের মধ্যে প্রায় সকল সিরাজ অনুগত সেনাপতি, আমীর-ওমরাহকে সমূলে নিশ্চিহ্ন করা হয়।

একটা কথা বার বার উচ্চারিত হয়, পলাশীর ঐতিহাসিক ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা নিই নাই। শিক্ষা নেয়া আর না নেয়া নিয়ে আমার কিছু বলার নেই, কারণ ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নেয়া বাঙালির মজ্জাগত ব্যাপার। তাই আমি কেবল এত নির্যাতন, নিপীড়ন চালানোর কুশলীব যারা ছিলেন, তাদের কি পরিণতি হয়েছিলো তা তুলে ধরছি, এতে যদি কেউ শিক্ষা নিই আর কি। বর্তমান ও ভবিষ্যতে পর্দার আড়ালে এমন কিছু করার আগে যেন হাজার বার ভাবতে হয়।

প্রকৃতির যে একটা বিচার আছে তা আমরা পলাশীর প্রেক্ষাপট তৈরির খলনায়কদের নির্মম পরিণতি দেখে কিছুটা হলেও বুঝতে করতে পারি। সিরাজের হত্যাকারী মোহাম্মদী বেগ উন্মাদ অবস্থায় দাম্পত্য কলহে এক কূপে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে। মীরনের মৃত্যু ঘটেছিল বজ্রপাতে। তার আগে সিরাজের খালা ষড়যন্ত্রকারী ঘসেটি বেগমকে মীরণ প্রবল খরস্রোতা বুড়িগঙ্গায় নৌকা ডুবিয়ে মেরে ফেলে। মীর জাফর ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে দু’দুবার বাংলার মসনদে বসেছিলেন। কিন্তু শেষ বয়সে মারাত্মক কুষ্ঠ ব্যাধিতে তার ভবলীলা সাঙ্গ হয়।

মীর কাশিম আলী খান পরবর্তীতে বাঙলার নবাব হয়েছিলেন; কিন্তু শুরুতেই তিনি ছিলেন বাংলার মুসিলম শাসন অবসানের মূল ষড়যন্ত্রের অন্যতম সহযোগী। ভগবান গোলায় নবাবকে তিনি সর্বপ্রথম ধরিয়ে দেন তার শ্যালক মীরনের হাতে। শেষ পর্যায়ে এসে মীর কাশিম অনুধাবন করলেন একদা এই চক্রের সাথে হাত মিলিয়ে তিনি বাঙলার মুসলমানদের স্বার্থের চরম ক্ষতি সাধন করেছেন, এখন আর কোনো উপায় নেই।

মীর কাশিম বুঝলেন ঠিকই, কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। কিন্তু মূল ষড়যন্ত্রকারীরা কি চিরকালই পর্দার অন্তরালে থেকে যাবে?

মুঙ্গেরের দুর্গশীর্ষ থেকে বস্তায় ভরে গঙ্গার বুকে তিনি নিক্ষেপ করেন জগৎশেঠ আর রায়দুর্লভের জীবন্ত দেহ। অপর এক অপঘাতে নিহত হলো রাজা রাজ বল্লভ। পরবর্তীকালে তার সব কীর্তি পদ্মা নদী গ্রাস করে কীর্তিনাশা নামধারণ করলো।

কিন্তু এত করেও মীর কাশিম তার শেষ রক্ষা করতে পারলেন না। বক্সারের যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর ইংরেজ কর্তৃক বিতাড়িত হয়ে বনে জঙ্গলে আত্মগোপন করেই রইলেন। জঙ্গলেই তার দুই ছেলে নিহত হন। নির্বংশ মীর কাশিম আলী খান এরপর কোথায় উধাও হয়ে যান ইতিহাস সে সম্পর্কে নীরব। দীর্ঘ দিন পর তার লাশ পাওয়া যায় দিল্লির আজমেরি গেটের কাছে রাস্তার ওপরে।

ষড়যন্ত্রকারীদের ইংরেজরা প্রায়ই প্রচুর অর্থবিত্ত এবং পদক, পদবি দিয়ে তুষ্ট করত বলে জানা যায়। এ রকম এক পদক বিতরণী অনুষ্ঠানে হাজির হয়েও পদক প্রাপ্ত হিসেবে ডাক না পাওয়ায় অপমানে, ক্ষোভে সভাস্থলে উমিচাঁদের হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। নন্দকুমার ভূষিত ছিল মহারাজা উপাধিতে কিন্তু ওয়ারেন হেস্টিংসের সাজানো মামলায় আসামি হিসেবে তাকে শেষ পর্যন্ত শেওড়া গাছে ঝুলতে হয় ফাঁসি কাষ্ঠে।

ইয়ার লতিফ নিরুদ্দেশ হয়ে গোপনে মৃত্যুবরণ করেন। রায় দুর্লভ ভগ্ন স্বাস্থ্য নিয়ে কারাগারে ধুকে ধুকে মারা গেছেন। স্ক্র্যাপ্টন বাংলায় লুটপাট করে বিলেতে ফেরার পথে জাহাজ ডুবিতে মারা যায়। ওয়াটসন কোম্পানির চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়ে মনের দুঃখে ও অনুশোচনায় ক্রমাগত অসুস্থ হয়ে কোনো ঔষুধে প্রতিকার না পেয়ে শোচনীয়ভাবে মৃত্যু বরণ করেন।

এভাবেই দেখা যায় বাংলার মুসলমানদের স্বার্থবিরোধী ভূমিকা পালনকারীদের ইতিহাস কাউকেই ক্ষমা করেনি, চক্রান্তকারীদের ভোগ করতে হয়েছে মর্মান্তিক পরিণতি।

(উপরে উল্লেখিত ব্যক্তিদের ন্যাক্কারজনক ভূমিকা সম্পর্কে আপনার জানা না থাকলে পলাশীর আগে ও পরের বিস্তারিত ইতিহাস পড়ে নিতে পারেন, লেখার কলেবর আরও করতে চাইনি বলে তাদের বিশ্বাসঘাতকতার খতিয়ান লিখলাম না)

শেষ করি সেই প্রথম দিকের কথা দিয়ে, অবশ্য এটা সবারই জানা কথা। তাহলো, এত সৈন্য, শক্তি-সামর্থ থাকার পরেও কেন পলাশীর প্রান্তরে মুসলিমদের শোচনীয়ভাবে পরাজয় হয়েছিলো?

বিস্তারিত কথায় যাচ্ছি না, কেবল দুইটা কারণ বলেই ইতি টানবো-

এক. আমরা শত্রু চিনতে ভুল করি। মীর জাফর বারবার ষড়যন্ত্র করা সত্ত্বেও নবাব সিরাজউদ্দৌলা তাঁর উপর নির্ভরশীল হতে দেখা যায়। হয়তো নবাবের বয়স কম এবং সহজ সরল ছিলেন বলেই। তবুও আমি বলবো এটা বাঙালির মজ্জাগত স্বভাব। আমরা শত্রু চিনতে বার বার ভুল করি। বিশ্বাসঘাতকদের বার বার বিশ্বাস ভঙ্গের সুযোগ করে দিই।

দুই. এই কারণটা ইতিহাসবিদ উইলিয়াম ড্যালরিম্পল এর মুখেই শুনুন, তার লেখা নতুন বই ‘দ্য অ্যানারকি: দ্য রিলেন্টলেস রাইজ অব দ্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’ এ নিয়ে লিখেন, “অলস বাঙালিদের জন্যই পলাশী যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলা হেরে গেছেন”।

এই বিষয়ে রবার্ট ক্লাইভ তার আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন, “সে দিন স্থানীয় অধিবাসীরা ইংরেজদের প্রতিরোধ করতে চাইলে লাঠিসোটা আর হাতের ইটপাটকেল মেরেই তাদের খতম করে দিতে পারতো। কিন্তু এ দেশবাসীরা তা উপলব্ধি করতে পারেনি। যেকোনো কারণেই হোক সে দিন বাংলার মানুষ এগিয়ে যায়নি। তাদের রাজনৈতিক সচেতনতার তখন খুবই অভাব ছিল”।

আসলে আমরা বরাবরই অলস, অসচেতন, স্বার্থপর এবং নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা জাতি। আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, পলাশীর ট্র্যাজেডির পরেও বাংলার সাধারণ মানুষ, কৃষক সমাজ দৈনন্দিন জীবন, নিত্যদিনের মতোই মাঠে কৃষি কাজ করেছে। ফসল বুনেছে। অথচ পলাশীর যুদ্ধে গোটা জাতীয় জীবনে কি নিদারুণ ভাগ্য বিপর্যয় ঘটলো, এক ঘণ্টার প্রহসনের যুদ্ধে গোটা জাতির স্বাধীনতা হরণ করে নিয়ে গেল গোটা কয়েক বেনিয়া ইংরেজ অথচ তাদের কারো টনক নড়লো না।

টনক যখন নড়লো, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। তাদের আর তখন কিছুই করার ছিল না। অবশ্য তার একশো বছর পর প্রথম শক্তভাবে রুখে দাঁড়াতে সক্ষম হয় বাংলার কৃষক সমাজ। যাক সেটা ভিন্ন আলাপ।

সিরাজউদ্দৌলা কখনো তার দেশের প্রজাদের সাথে কোনো অবস্থাতেই বিশ্বাসঘাতকতা করেনি। কখনো স্বেচ্ছায় স্বদেশকে বিকিয়ে দেননি। তার চরিত্রেও কোনো কালিমা ছিলো না। পলাশীর প্রান্তরে মর্মান্তিক নাট্যমঞ্চে এক মাত্র তিনি ছিলেন মূল নায়ক। সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন বাঙলার স্বাধীনতার শেষ প্রতীক।

তথ্যসূত্র:
১. 100 Decisive Battles: From Ancient Times to the Present by Paul K. Davis (1999).
২. Ali Vardi and His Times by K. K. Datta (1939)
৩. ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে বাংলার স্বাধীনতার অবসান এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়সমূহ -ড. মাহফুজ পারভেজ
৪. মোজাফ্ফরনামা: নবাব আলিবর্দি খান থেকে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা
৫. সিরাজের পুত্র ও বংশধরদের সন্ধানে -অমলেন্দু দে
৬. পলাশী থেকে বাংলাদেশ
৭. Sirajuddaula by Sushil Chaudhury and KM Mohsin (2012)

 

পোস্ট ক্রেডিটঃ Md Sayem Muhaimin

 

 

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন!

 

আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে  জানতে  লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।

আইডিসি  মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আপনি আইডিসি  মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।

 

Islami Dawah Center Cover photo

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টারকে সচল রাখতে সাহায্য করুন!

 

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার ১টি অলাভজনক দাওয়াহ প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠানের ইসলামিক ব্লগটি বর্তমানে ২০,০০০+ মানুষ প্রতিমাসে পড়ে, দিন দিন আরো অনেক বেশি বেড়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।

বর্তমানে মাদরাসা এবং ব্লগ প্রজেক্টের বিভিন্ন খাতে (ওয়েবসাইট হোস্টিং, CDN,কনটেন্ট রাইটিং, প্রুফ রিডিং, ব্লগ পোস্টিং, ডিজাইন এবং মার্কেটিং) মাসে গড়ে ৫০,০০০+ টাকা খরচ হয়, যা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। সেকারনে, এই বিশাল ধর্মীয় কাজকে সামনে এগিয়ে নিতে সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে আপনাদের দোয়া এবং আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন, এমন কিছু ভাই ও বোন ( ৩১৩ জন ) দরকার, যারা আইডিসিকে নির্দিষ্ট অংকের সাহায্য করবেন, তাহলে এই পথ চলা অনেক সহজ হয়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।

যারা এককালিন, মাসিক অথবা বাৎসরিক সাহায্য করবেন, তারা আইডিসির মুল টিমের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন, ইংশাআল্লাহ।

আইডিসির ঠিকানাঃ খঃ ৬৫/৫, শাহজাদপুর, গুলশান, ঢাকা -১২১২, মোবাইলঃ +88 01609 820 094, +88 01716 988 953 ( নগদ/বিকাশ পার্সোনাল )

ইমেলঃ info@islamidawahcenter.com, info@idcmadrasah.com, ওয়েব: www.islamidawahcenter.com, www.idcmadrasah.com সার্বিক তত্ত্বাবধানেঃ হাঃ মুফতি মাহবুব ওসমানী ( এম. এ. ইন ইংলিশ, ফার্স্ট ক্লাস )