Tawarruq কী? (সংজ্ঞা ও প্রক্রিয়া)
Tawarruq হলো一种 আর্থ-বাণিজ্যিক চুক্তি যেখানে একজন ব্যক্তি নগদ অর্থের প্রয়োজন হলে একটি পণ্য (অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক পণ্য) ক্রয় করে উক্ত পণ্য ক্রয়মূল্য ও সময় অনুযায়ী ঋণের ভিত্তিতে (আংশিক বা পরবর্তী সময়ে) বিক্রয় করে। এরপর তিনি সেই পণ্যকে তৃতীয় ব্যক্তিকে তৎক্ষণাৎ বা শপথে নগদে বিক্রি করে নগদ অর্থ লাভ করে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তিনি একটি নির্ধারিত বাড়তি মূল্য (profit margin) সহ অর্থ প্রদান করবে এমন একটি বিক্রয়চুক্তি ও নগদ অর্জনের ব্যবস্থা গড়ে তোলে।
পদ্ধতি সংক্ষেপে:
- ব্যাংক/বিক্রেতা একটি পণ্য (যেমন—তেল, খেজুর, ধাতু বা নির্ধারিত পণ্য) তার খুচরা বা বাজারমূল্যে বিক্রয় করে, কিন্তু ক্রেতাকে স্থগিত পেমেন্টের শর্ত দেয় (deferred payment, higher price)।
- ক্রেতা সেই একই পণ্য অন্য কোথাও বা তৃতীয় পক্ষকে তৎক্ষণাৎ নগদ বিক্রয় করে (spot sale, lower/higher বা বাজারমূল্যায়), এবং নগদ অর্থ পান।
- ক্রেতা তার বকেয়া পেমেন্ট ব্যাংক/বিক্রেতাকে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী পরিশোধ করে (original হাই-প্রাইস + মুনাফা)।
উদাহরণ হিসেবে দেওয়া আপনার অবস্থা:
- আপনার ১০ লক্ষ নগদ প্রয়োজন।
- ব্যাংক একটি পণ্য (উদাহরণস্বরূপ তেল) বিক্রি করছে ১৩ লক্ষ মূল্যে, পেমেন্ট স্থগিত করে।
- আপনি সেই পণ্যটি একই দিন বা প্রায় সময় হার দিনে ১০ লক্ষ নগদ বিক্রি করে নগদ পান।
- পরবর্তীতে ব্যাংকে ১৩ লক্ষ পরিশোধ করবেন।
- আপনি ১০ লক্ষ পান, ব্যাংক ১৩ লক্ষ, এবং এমন হয় যে আপনি মূলত ১০ লক্ষ ঋণ নিয়েছেন কিন্তু ১৩ লক্ষ দেবার চুক্তি করেছেন—এই ধাঁচকে Tawarruq ধরা হয় (ব্যবসার ছত্রে, মুনাফার আড়ালে)।
কোরআন ও হাদিস বিষয়ক প্রামাণ্য
হাদিস উদাহরণ
নিচের হাদিসে বর্ণিত আছে:
আবু সাঈদ আল-খুদরী ও আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত:
একজন খাইবারের গভর্নর নবী (ﷺ)-এর কাছে খাইবারের একধরনের উৎকৃষ্ট খেজুর (জানিব-কোয়ালিটি) নিয়ে আসে। নবী (ﷺ) জিজ্ঞেস করেন, “খাইবারের প্রতিটি খেজুর কি এমন?” তিনি বললেন, “না, (অল) লাহি, আমরা ১ সা (sa‘) উৎকৃষ্ট খেজুরকে ২ সা নিম্নমানের খেজুরের সঙ্গে বিনিময় করি, আবার ২ সা উৎকৃষ্টকে ৩ সা নিম্নমানের বলে।” তখন নবী (ﷺ) নির্দেশ দেন:
«لَا تَفْعَلْ: بِعِ الْجَمْعَ بِالدَّرَاهِمِ ثُمَّ اشْتَرِ بِالدَّرَاهِمِ جَنِيبًا»
“একসঙ্গে (dates ↔ dates বিনিময়) করো না, বরং মিশ্রিত খেজুর দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করো, তারপর ওই দিরহাম দিয়ে জানিব-খেজুর কিনো।”
এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে একই ধরণের পণ্য ↔ পণ্য বেচাকেনায় (যেখানে মান, পরিমাণ ভিন্ন) সুস্পষ্ট পরিমাপে (hand-to-hand, like-for-like ব্যতিরেকে) বিনিময় করলে বাড়তি (excess) বুঝিয়ে রিবা (usury/riba al-fadl) সৃষ্টি হয়, এবং এধরনের চুক্তি নিষিদ্ধ।
আরেকটি হাদিসে, বিলাল (রাঃ)-এর বর্ণনায়:
তিনি জানায় যে তাঁর কাছে নিম্নমানের খেজুর ছিল, যা তিনি ২ সা ↔ ১ সা মাধ্যমে বিক্রি করেছিলেন উন্নতমানের খেজুরের জন্য। তখন নবী (ﷺ) বললেন:
«عَيْنُ الرِّبَا عَيْنُ الرِّبَا لَا تَفْعَلْ وَلَكِنْ إِذَا أَرَدْتَ … فَبِعِ التَّمْرَ بِبَيْعٍ آخَرَ ثُمَّ اشْتَرِ … بِهِ»
“এটি রিবার (interest/usury) সুত্র, এভাবে করো না; যদি তুমি কিছু কিনতে চাও, তাহলে প্রথম বিক্রয় এবং দ্বিতীয় ক্রয়কে আলাদা চুক্তিতে করো।”
এই হাদিসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে একই ধরনের পণ্য ↔ পণ্য বিনিময়ে (যেখানে পরিমাণ/মান ভিন্ন হলে) রিবার ধরণ আছে (riba-al-fadl), এবং যদি বিক্রি হতে হয় তাহলে বিক্রি এবং ক্রয়কে আলাদা (separate contracts) মাধ্যমে করেতে হবে।
কোরআন সংক্রান্ত রেফারেন্স
আল্লাহ তায়ালা BUYING-SELLING (বায়/বাই) ইজাজত দিয়েছেন এবং রিবা নিষিদ্ধ করেছেন —
«أَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا»
“আল্লাহ বেচাকেনাকে হালাল করেছেন এবং রিবাকে হারাম ঘোষণা করেছেন।”
এই সাধারণ আয়াত শর্ত হিসেবে রিবা-নিষিদ্ধ হওয়ার নীতি প্রকাশ করে, এবং যে বাণিজ্য তার গঠন বা উদ্দেশ্যে রিবার (interest/usurious gain) না থাকে, সেটি جائز বলে ধরছে অনেক মুফতি ও ফিকহ গ্রন্থ।
ফিকহ-রদ্বিমত: অনুমোদন বনাম আপত্তি
বিভিন্ন ইমাম ও ফিকহ-মধ্যস্থরা Tawarruq সম্পর্কিত মতবিন্যাস দিয়েছেন। নিচে প্রধান মতভেদসমূহ বর্ণনা করা হলো:
| মৎবাদ/মত | বিবরণ / যুক্তি | মন্তব্য |
|---|---|---|
| নিষিদ্ধ/বিরোধী (যেমন কিছু মালিকী/হানাফি এবং ব্যক্তিগত মত) | তাদের মতে, যদি ক্রেতার আসল উদ্দেশ্য শুধু নগদ অর্থ প্রাপ্তি হয় (পণ্যের ব্যবহার নয়), তাহলে এই ধাঁচের চুক্তি আসলে riba al-fadl বা bay‘ al-‘inah-র ছদ্মবেশ হতে পারে। | তারা বলছেন যে চুক্তির বাহ্যিক রূপ সঠিক হলেও উদ্দেশ্য (niyyah) এবং বাস্তবতা রিবার ছল হতে পারে |
| অনুমোদন-যোগ্য (শর্তসহ) (যেমন শাফিই, হামবালী কিছু ধাঁচ) | যদি পণ্য বিক্রয় ও নগদ বিক্রয় স্বতন্ত্রভাবে হয়, তৃতীয় পক্ষ জড়িত হয়, বাজার-মূল্য বজায় থাকে, এবং পূর্বানুমোদিত buy-back না হয়, তাহলে এটি শর্তসাপেক্ষে বৈধ। | তবে এই অনুমোদন, বিশেষ করে ব্যাংক/আধুনিক Tawarruq-এ জটিলতা ও মতপার্থক্য রয়েছে |
| সমালোচনামূলক (আগত-আলোচনার বিষয়) | বর্তমান সময়ের “আয়োজিত/সংগঠিত Tawarruq” (organized tawarruq)-র ক্ষেত্রে অনেক শর্ত নীরিক্ষণ ও প্রশ্ন রয়েছে — যেমন পণ্য বাস্তব মালিক হস্তান্তর হয়নি, দ্বৈত এজেন্সি, নিয়ন্ত্রণ-নিষ্কাশন ইত্যাদি, যা ইসলামি নীতির বিপরীতে যেতে পারে। | এই আলোচনায় ʻsubstance over formʼ (চুক্তির সত্যিকারের উদ্দেশ্য)-র বিষয় গুরুত্ব পাচ্ছে |
আপনার উদাহরণ: বিশ্লেষণ ও প্রশ্ন–উত্তর প্রেক্ষাপট
আপনার উদাহরণ অনুযায়ী:
- আপনি নগদ অর্থ দরকার ১০ লক্ষ।
- ব্যাংক একটি পণ্য (যেমন তেল) ১৩ লক্ষ মূল্যে বিক্রি করছে, পেমেন্ট স্থগিত।
- আপনি সেই পণ্য বিক্রি করে ১০ লক্ষ নগদ পান, ব্যাংকে ১৩ লক্ষ পরিশোধের বাধ্যবাধকতা নিচ্ছেন।
ফিকহ-বিশ্লেষণ
| বিষয় | বিবেচনা |
|---|---|
| চুক্তির প্রকৃতি | এটি একটি deferred-payment sale + spot sale চেইন, যাকে সাধারণ Tawarruq বলা হয়। |
| মালিকানার বাস্তবতা | ফিকহ অনুযায়ী যদি বিক্রয় হওয়া পণ্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘exchange of same commodity for different quantity/quality’ হয় তাহলে এটি রিবা al-fadl হতে পারে হাদিস অনুযায়ী; Sunnah তবে হাদিসে নির্দেশ দেওয়া হয়—“mixed dates sell for money, then buy good dates with money”—অন্তত ঐ রূপান্তর হলে চুক্তি বৈধ হতে পারে। |
| উদ্দেশ্য (Niyyah) | যদি উদ্দেশ্য শুধু নগদ নেওয়া হয়, পণ্যের সেবা বা ব্যবহার না হয়, তাহলে কিছু ফকিহ এ দাবি করেন যে এটি হিন্ডারস্ট সঙ্গে-riba উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে (যদি চুক্তি রিকা-‘inah-এর মতো হয়) |
| চুক্তির স্বচ্ছতা ও পার্টিদের স্বাধীনতা | অনেক আধুনিক Islamic Finance ফতোয়ার মতে, যদি এই ধরনের চুক্তি ন্যূনতম চারটি স্বতন্ত্র পক্ষ (buyer, original seller, commodity broker(s), third-party buyer) জড়িত হয় এবং স্বচ্ছ আইনগত শর্ত মানা হয়, তখন organized tawarruq-র কিছু ক্ষুদ্র ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণযোগ্য হয়। |
| আর্থিক, নৈতিক ও সামাজিক প্রভাব | ইসলামে রিবা-বিরোধী শিক্ষা থাকায়, রুটিন/বিনিয়োগচালিত tawarruq সুবিধার বদলে ঝুঁকি এবং ‘হিলাহ’ (চাল, legal stratagem) হিসাবে ব্যবহারের সম্ভাবনা হয়ে ওঠে, যা অনেক পন্ডিত আপত্তি করে থাকেন। |
আমি কি মনে করি?
আমার মতে, Tawarruq-এর বৈধতা সম্পূর্ণ নির্ধারিত নয়; এটির কারণ-উদ্দেশ্য, চুক্তির বাস্তবতা, পার্টি-স্বাধীনতা, এবং বোঝাপড়ার স্বচ্ছতা অনুযায়ী এটি কিছু ক্ষেত্রে বৈধ হতে পারে কিন্তু বেশির-ভাগ organised/ব্যান্ড-ভিত্তিক চুক্তি তে রিবা-ছল বা হিলাহ-এর সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।
- যদি চুক্তি আসল ব্যবসা/বিক্রয় উদ্দেশ্যে হয়, অর্থাৎ ক্রেতার পণ্য ব্যবহার বা বিক্রয় উদ্দেশ্য থাকে, এবং চুক্তির সব ধাপ স্বতন্ত্র ও নিয়ম অনুযায়ী হয়, তাহলে হাদিস-নিয়ম (যেমন mixed dates ↔ cash ↔ buy good dates)-এর আলোকে কিছু পণ্ডিত এটি হালাল ধরেছে।
- কিন্তু যদি চুক্তি শুদ্ধ “ঋণ” চক্র হিসেবে তৈরি হয়, অর্থাৎ অর্থ-লাভ উদ্দেশ্য প্রধান হয়, পণ্য ব্যবহার বা সেবা উদ্দেশ্য না হয়, এবং চুক্তির পরিপন্থী/legal loophole-র উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে এটি রিবা-এর মতোই হতে পারে।
এই বিষয়ে মুফতি/শায়েখ-মাশায়েখদের মতামত নেওয়া, চুক্তির কাগজ-পত্র (contractual documentation) খতিয়ে দেখা এবং স্থানীয় ইসলামী ব্যাংকিং ফিকহ বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত হবে।
উপসংহার ও সুপারিশ
- Tawarruq একটি জটিল আর্থিক চুক্তি, যার বৈধতা ফিকহ-নিয়ম, উদ্দেশ্য, চুক্তি ধরণ অনুযায়ী পরিবর্তনশীল।
- সাধারণ নীতিতে বায়/বিক্রয় + নগদ ↔ নগদ চক্র এবং একই ধরণের পণ্য বিনিময় excess-সহ Islam prohibits (riba al-fadl/Hadith)।
- চুক্তি গ্রহণের আগে শায়েখ-মাশায়েখের উপদেশ নেওয়া উচিত এবং contract agreements (ownership transfer, third-party sale, asset existence) নিশ্চিত হওয়া জরুরি।
- ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি Tawarruq সেবা দেয়, তবে তার methodology (commodity, agency, transparency) খতিয়ে দেখা জরুরি।
