ফাতেমি মোহরের নির্ধারিত পরিমাণ – কুরআন ও হাদীসের আলোকে
ফাতেমি মোহরের (Fatemi Mohrana) নির্ধারিত পরিমাণ – কুরআন ও হাদীসের আলোকে
লিখেছেনঃ মাহবুব ওসমানী
ভূমিকা
ইসলামে বিয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো মহর (মোহর)। এটি স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীর জন্য নির্ধারিত একটি সম্পদ বা উপহার। মহানবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ তাঁর কন্যা ফাতিমা (র.আ.)-এর বিয়েতে যে পরিমাণ মোহর নির্ধারণ করেছিলেন, তা ইতিহাসে “মহর-ই-ফাতেমি (ফাতেমি মোহর)” নামে পরিচিত। এটি একটি মানদণ্ড বা আদর্শ হিসেবে গণ্য হয়।
এই প্রবন্ধে আমরা কুরআন, সহীহ হাদীস ও ইসলামী ইতিহাসের আলোকে মহর-ই-ফাতেমির নির্ধারিত পরিমাণ ও তা বর্তমান মুদ্রায় কত হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
মহরের গুরুত্ব – কুরআনের আলোকে
আল্লাহ তাআলা মহরের গুরুত্ব সম্পর্কে ইরশাদ করেন:
وَآتُوا ٱلنِّسَآءَ صَدُقَٰتِهِنَّ نِحْلَةً ۚ
“আর নারীদেরকে তাদের মোহর আনন্দ সহকারে প্রদান করো।”
📖 সূরা আন-নিসা (৪:৪)
এই আয়াতে স্পষ্টভাবে মহরের আদেশ দেয়া হয়েছে। এটি কোনো ঔপচারিকতা নয়, বরং ইসলামী অধিকার।
ফাতেমা (রাঃ)-এর মোহর কত ছিল?
রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর কন্যা ফাতিমা (রাঃ)-এর বিয়েতে মহর নির্ধারণ করেছিলেন ৪৮০ দিরহাম। অনেক হাদীসে এটি উল্লেখ আছে।
📜 সহীহ হাদীসের দলীল:
🔹 ইমাম বায়হাকি (রহ.) তাঁর কিতাব “সুনান আল-কুবরা”-তে হাদীস বর্ণনা করেছেন:
أنَّ عليًّا تَزوَّجَ فاطِمةَ على أربَعِمائةٍ وثمانينَ درهَمًا
“নিশ্চয়ই আলী (রাঃ) ফাতিমা (রাঃ)-কে চারশ’ আশি দিরহাম মোহরে বিয়ে করেছিলেন।”
📘 سُنَنُ الْبَيْهَقِيِّ الْكُبْرَىٰ، حديث: ١٤٤٠٠
🔹 ইমাম ইবনে আবি শাইবা (রহ.) বলেন:
زَوَّجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاطِمَةَ عَلَى أَرْبَعِمِائَةٍ وَثَمَانِينَ دِرْهَمًا
“নবী ﷺ ফাতিমা (রাঃ)-এর বিয়ে করেছিলেন ৪৮০ দিরহাম মোহরে।”
📘 مصنَّف ابن أبي شيبة، رقم الحديث: ١٧٠٢٦
এক দিরহাম এর ওজন
ইতিহাসবিদ ও হাদীস বিশারদগণের মতে, রাসূলুল্লাহ ﷺ- এর যুগে এক দিরহাম ছিল প্রায় ৩.১২৫ গ্রাম রূপা।
➤ সুতরাং,
৪৮০ দিরহাম × ৩.১২৫ গ্রাম = ১৫০০ গ্রাম রূপা (প্রায় ১.৫ কেজি)
বর্তমান মুদ্রায় ফাতেমি মোহরের পরিমাণ
যেহেতু ফাতেমি মোহর রূপা দ্বারা নির্ধারিত হয়েছিল, তাই বর্তমান রূপার বাজারমূল্য অনুযায়ী হিসাব করলে:
✅ যদি ১ গ্রাম রূপার দাম বাংলাদেশে হয় প্রায় ১০০ টাকা (মার্কেট ভেদে পরিবর্তন হতে পারে),
তাহলে,
১৫০০ গ্রাম × ১০০ টাকা = ১,৫০,০০০ টাকা (আনুমানিক)
📌 এটি নিছক হিসাব নয়, বরং নবীজির কন্যার জন্য নির্ধারিত মোহরের উপর ভিত্তি করে আদর্শ মহর হিসেবে বিবেচিত।
ফাতেমি মোহর নির্ধারণের তাৎপর্য
ফাতেমি মোহর নির্ধারণের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের এমন একটি মাঝামাঝি পরিমাণ শিক্ষা দিয়েছেন, যা neither too lavish nor too minimalistic। অতএব, এটি একটি আদর্শিক মানদণ্ড।
➡ যদিও মহরের সর্বনিম্ন বা সর্বোচ্চ পরিমাণ নির্ধারিত নয়, তবুও ফাতেমি মোহরকে অনুসরণ করা সুন্নাতসুলভ ও সম্মানজনক।
উপসংহার
মহর কেবল অর্থের লেনদেন নয়, বরং এটি নারীর প্রতি সম্মান ও ইসলামী আদর্শের প্রতীক। রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজ কন্যার জন্য যে মহর নির্ধারণ করেছিলেন, তা আমাদের জন্য আদর্শ। সুতরাং মুসলিম সমাজে এই ফাতেমি মোহরের শিক্ষা ও তাৎপর্য তুলে ধরা জরুরি।
اللَّهُمَّ وَفِّقْنَا لِاتِّبَاعِ سُنَّةِ نَبِيِّكَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي كُلِّ أُمُورِنَا، آمِين
📌 সংকলন ও লিখন:
মাহবুব ওসমানী — একজন ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক এবং Islamidawahcenter.com এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি কুরআন ও সহীহ হাদীসভিত্তিক বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
To learn more, comment below or message us on wa.me/+966549485900 or wa.me/+8801716988953 or call us at +44-73801-27019. Email at hi@islamidawahcenter.com
আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন।
- আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে বিস্তারিত জানতে লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।
- আইডিসি মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।
- কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।
- ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।