নিচু লোকের প্রধান হাতিয়ার হলো অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ!

 

✍️ লিখেছেনঃ মাহবুব ওসমানী
🕌 প্রকাশনায়ঃ Islamidawahcenter.com

ভূমিকা:

একজন মানুষের চরিত্র ও ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায় তার কথাবার্তা ও আচরণে। মানুষ যখন নিজেকে সভ্য, মার্জিত ও সংযত রাখে, তখনই তার প্রকৃত মূল্যায়ন হয়। পক্ষান্তরে, নিচু মানসিকতার মানুষরা তাদের ব্যর্থতা, হীনমন্যতা ও হিংসা প্রকাশ করে অশ্লীল, কটু ও কুৎসিত ভাষার মাধ্যমে। তারা যুক্তির পরিবর্তে গালাগাল, অপমান ও অশ্লীলতাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। ইসলাম এমন অপসংস্কৃতির ঘোর বিরোধী।

কোরআনের দৃষ্টিতে অশ্লীল ভাষা:

 

আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কোরআনে বলেন:

وَقُلْ لِعِبَادِي يَقُولُوا الَّتِي هِيَ أَحْسَنُ ۚ إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنزَغُ بَيْنَهُمْ ۚ إِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلْإِنسَانِ عَدُوًّا مُّبِينًا
“আর তুমি আমার বান্দাদের বলে দাও যেন তারা উত্তম কথা বলে। শয়তান তো তাদের মাঝে বিদ্বেষ সৃষ্টি করে। শয়তান তো মানুষের প্রকাশ্য শত্রু।”
সূরা আল-ইসরা: ٥٣

এ আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, অশ্লীল ভাষা শুধু একজন ব্যক্তিকে নিচু করে না, বরং তা সমাজে বিদ্বেষ, বিভেদ ও শত্রুতার বীজ বপন করে।

আরেক স্থানে আল্লাহ বলেন:

لَا يُحِبُّ اللَّهُ الْجَهْرَ بِالسُّوءِ مِنَ الْقَوْلِ إِلَّا مَن ظُلِمَ ۚ وَكَانَ اللَّهُ سَمِيعًا عَلِيمًا
“আল্লাহ খারাপ কথা প্রকাশ্যে বলা পছন্দ করেন না, তবে যিনি অত্যাচারিত হয়েছেন (তাঁর জন্য ব্যতিক্রম)। আল্লাহ তো সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।”
সূরা আন-নিসা: ١٤٨

রাসূলুল্লাহ ﷺ এর হাদীস:

 

রাসূলুল্লাহ ﷺ কঠোর ভাষায় গালাগাল ও অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন:

إِنَّ الْمُؤْمِنَ لَيْسَ بِاللَّعَّانِ، وَلَا الْفَاحِشِ، وَلَا الْبَذِيءِ
“একজন মুমিন গালাগালি করাে না, অশ্লীল ভাষায় কথা বলে না এবং কুরুচিপূর্ণ কথাও বলে না।”
সহীহ তিরমিযী: ১৯৭৭

অন্য হাদীসে এসেছে:

سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوقٌ، وَقِتَالُهُ كُفْرٌ
“মুসলমানকে গালি দেওয়া ফাসেকি, আর তার সঙ্গে যুদ্ধ করা কুফর।”
সহীহ বুখারী: ৪৮; সহীহ মুসলিম: ৬৪

অশ্লীল ভাষার কারণ ও প্রতিকার:

কারণসমূহ:

  • অন্তরের রোগ (হিংসা, অহংকার)

  • ইলমের অভাব

  • কু-সংগ

  • আত্মনিয়ন্ত্রণের অভাব

প্রতিকারসমূহ:

  • আল্লাহভীতি অর্জন করা

  • রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাহ অনুসরণ করা

  • উত্তম বন্ধু নির্বাচন করা

  • ধৈর্য ও সংযমের অভ্যাস করা

ইতিহাস থেকে শিক্ষা:

 

ইসলামের শ্রেষ্ঠ যুগে সাহাবায়ে কেরাম রা. কেউই গালাগালি ও কু-ভাষা ব্যবহার করতেন না। একবার হযরত আবু বকর রা. এর সাথে এক ব্যক্তি অন্যায় আচরণ করলে, তিনি কিছুই বললেন না। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন:

من كف غضبه ستر الله عورته، ومن ملك نفسه عند الغضب، ملأ الله قلبه رضا يوم القيامة
“যে ব্যক্তি রাগ সংবরণ করে, আল্লাহ তার গোপন বিষয় আড়াল করবেন। যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, কিয়ামতের দিনে আল্লাহ তার অন্তরকে সন্তুষ্টিতে পূর্ণ করবেন।”
মুসনাদ আহমাদ: ২/১৯৫

উপসংহার:

 

অশ্লীল ভাষা কখনোই শক্তির প্রকাশ নয়, বরং তা নৈতিক দীনতা ও আত্মিক দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ। একজন সত্যিকারের মুসলিম কখনোই অশ্লীল বা কুরুচিপূর্ণ কথা বলেন না। তাই আমাদের উচিত—জ্ঞান অর্জন করে, অন্তর পরিশুদ্ধ করে, সুন্দর ভাষা ও আচরণের মাধ্যমে ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরা।

“Foul language is the primary weapon of the poorly mannered,” Hazrat Ali R:

🖋️ লেখক পরিচিতি:
মাহবুব ওসমানী — একজন ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক এবং Islamidawahcenter.com এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি কুরআন ও সহীহ হাদীসভিত্তিক বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

To learn more, comment below or message us on WhatsApp: +966549485900 / +8801716988953 or call us at +44-73801-27019. Email at hi@islamidawahcenter.com

 

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন।