Hijab-কুরআন ও হাদিসের আলোকে চেহারার পর্দা
Hijab-কুরআন ও হাদিসের আলোকে চেহারার পর্দা
লেটস ডিসকাস এবাউট পর্দা/জিলবাব/আবায়া/বোরকা/হিজাব … আমরা এইগুলো পরিই নিজেকে ঢেকে রাখতে,সৌন্দর্য ঢাকতে পরি এটা মাথায় না রেখে আমি আমাকে ঢেকে রাখি এটা মাথায় রাখা উচিৎ। এবার কেউ লম্বা খাটো কালো মোটা চিকন যাই হোক না কেনো নিজেকে ঢেকে রাখাই হবে মূল উদ্দেশ্য।
ঢেকে রাখা অনেক রকম,একটা হলো র্যাপ করা,মানে অবয়ব প্রকাশ করে কাপড় পেচানো, আরেকটা হলো এমন ভাবে ঢাকা যেন না ঢাকার মতই, আরেকটা হলো ঢাকার থেকে না ঢাকাই ভাল,যেমন আমি একটা রুপার বাটি কে হিরামনিমুক্তা খচিত স্বর্নের ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিলাম।
আরেকটা হলো উপরের কোনটাই না। না আঁটসাঁট, না না ঢাকার মত, আর না রংগাচংগা। আমরা যারা বোরকা পরি, তাদের নিয়তটা আসলে কী হয়? আল্লাহ বলেছেন নিজেকে ঢেকে রাখতে তাই রাখি?
নাকি আরো বেশি সুন্দর দেখা যাবে তাই? নাকি মানুষ দ্বীনদার ভাববে তাই? নাকি আমি মুসলিম, আমার ঘরের মহিলারা করে তাই আমিও করি,নাকি ঢেকে রাখলে খারাপ পুরুষরা বিরক্ত করবে বা তাই? … ইন্নামাল আমালু বিন্নিয়াত।
নিয়তের উপর নির্ভর করেই কিন্তু আমাদের আমল কবুল হয় বা নেকি মিলে। আমার যেই নিয়তই থাকুক,আমি কিন্তু গায়ে ঠিকই কাপড় একটা দিয়ে রেখেছি,আসলে গায়ে এতো কাপড় জড়িয়ে রাখা মোটেও আরামদায়ক কিছু না।
কষ্ট করছি অথচ সোওয়াবের বদলে গুনাহ হচ্ছে আমার।বলেন তো বোকাটা কে এখানে? আসলে মনটাকে ঠিক করতে হবে। নিয়তটাকে শুদ্ধ করতে হবে। পর্দার ধরনটা বুঝতে হবে।
গুরুত্বটা বুঝতে হবে,কিভাবে পর্দা করবো তাও বুঝতে হবে।কেনো পর্দা করছি আমি তা আগে ভাল করে জানত্ব হবে। কেনো করছেন?উপরে বর্ণিত কারণ গুলোর জন্য? আপনি নামাজ পড়েন কেনো? পড়লে পেট ভরে?পড়লে গায়ে আর মশা মাছি বসে না?
খাবার খেলে যেমন ইমিডিয়েট ফল পাচ্ছেন,অর্থাৎ পেট ভরছে,শরীরে শক্তি আসছে নামাজ পড়ার পর কি এমন কোনো ফল পাচ্ছেন?পাচ্ছেন না,তাহলে কেনো পড়ছেন? বছরের পর বছর যে নামাজ কাযা করেছেন সেটা মাফের জন্য তবে কেন মরিয়া হলেন? রোজা কেনো রাখেন? জাকাত কেনো দেন?
ঘুমালে যে তৃপ্তটা হচ্ছে,এমন কিছু পাচ্ছেন? নাকি আল্লাহর আদেশ তাই আদায় করছেন? আদায় না করলে হুকুম অমান্য করার দরুন আজাব হবে তাই আদায় করছেন? এখন বলুন পর্দা কেনো করবেন?ভালো দেখাবে তাই? নাকি ছেলেরা ডিস্টার্ব করবে তাই?
কুরআন বা হাদিসে কোথাও কিন্তু এই দায়ভার নেয় নাই যে আপনি পর্দা করলেই আর ইভ টিজ,রেইপ ইত্যাদির শিকার হবেন না। কিংবা বলা হয়নাই এসব থেকে বেচে থাকতে পর্দা করতে হবে।
এই ধারণা আমাদের ভিতর ঢুকে গেছে,আমরা এসব থেকে বেচে থাককে পর্দা করি। পর্দাটা নামাজ রোজার মতই একটা হুকুম। দিনের পর দিন বেপর্দা থাকা আর দিনের পর দিন নামাজ আদায় না করা একই বিষয়।
নামাজ ফরজ হওয়ার পর থেকে যদি গত ১০ বছর নামাজ আদায় না করে থাকেন,তবে পর্দা ফরজ হওয়ার পর থেকে গত ১০ বছর পর্দা না করা বিষয় দুটোতে পার্থক্য নেই।
পর্দার নিয়তটা হবে আমি আল্লাহর একটা হুকুম পালন করছি।কেনো করছি,করলে কী ফায়দা সেটা ভাবার কাজ নেই, আল্লাহ বলছেন সো আমি তা পালন করবো, কাউক খুশি করতে না,নিজেকে ভাল দেখাতে না,আল্লাহ যেভাবে করতে বলেছেন ঠিক সেভাবেই করবো।
মনকে বুঝাতে হবে,প্রোপার পর্দা অনেক কঠিন। গরমে কষ্ট হয়, শ্বাস বন্ধ হয়,মাথা ধরে, গায়ে গন্ধ হয় ঘেমে,পথে ঘাটে চলতে কষ্ট হয়,আরো নানান কিছু। কিন্তু আমি সব সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিবো, কারণ?
কারণ এটা আল্লাহর হুকুম ও তাকে খুশি করতেই আমি এই ইবাদাতটা করবো। আল্লাহ বলেছেন আমাদেরকে ঢেকে রাখতে পর্দা করতে,তাই জেনে নিবো আমাদেরকে কিভাবে ঢাকবো, উপরে ঢেকে রাখার কত গুলা নমুনা লিখেছি,আমি আমার নিজেকে এমন ভাবে ঢাকবো না যেন আমাকে সুন্দর লাগে আরো,আমার শরীরের সেইপ আরো ফুটে ওঠে।
আরো আকর্ষণীয় লাগে,মানুষ তাকিয়ে থাকে,ছেলেরা ঘুরে ঘুরে দেখে।এসবে আসলে আমার পর্দা হয়না। এসবে খামাখা গায়ে কাপড় ঝুলিয়ে রাখা হয়। কোন কিছুর গুরুত্ব না বুঝলে আসলে সেটা প্রপার ভাবে পালন করা যায় না।
যেমন আমি একটা আমল করছি,কিন্তু দেখা যাবে যদি সে আমলের ফজিলত জানা থাকে তখন সে আমলটা বেড়ে যায়। আর জানা না থাকলে আমলটা ছুটে যায় মাঝে মাঝে। গুরুত্বের পাশাপাশি এটাও জানা লাগবে আমি পর্দা না করলে আমার কী কী গুনাহ ও আজাব হতে পারে। সব কিছুর পর আমি দেখবো আমি পর্দাটা করবো কিভাবে, কেমন কাপড় দিয়ে করবো।
১। পর্দার কাপড়টা যেন একেবারে পাতলা না হয়, এতে পর্দা না করার মতই।
২। সিল্কি বা বেশি থলথলে যেন না হয়,এতে হাটার সময় মানুষ থেকে কাপড় বেশি নাচে।
৩। কালো কাপড় উত্তম,কারণ কালোতে আকর্ষণ কম থাকে।
৪। কালোর মাঝে সাধারণ কালোটা বেছে নিবো,চিকচিক করে বা গ্লেজ দেয় এমন কাপড় না। এতে করে রৌদের মাঝে নজর পড়ে।
৫। কালো না নিয়ে যদি অন্য কালার চাই তবে এমন কালার নিবো না যা নজর কাটবে। যেমন মেরুন, গোলাপি,লাল ইত্যাদি। একদম ডার্ক নীল যা কালোর কাছাকাছি, একদম ডার্ক খয়েরি যা কালোর কাছাকাছি। এর বেশি অন্য কালার সাজেস্ট করতে পারছিনা।
৬। অবশ্যই সম্পুর্ন বোরকাটা যেন এক কালারের হয়, আজকাল দেখা যায় নিকাব এক কালার,বোরকার কবজি এক কালার,খিমার এক কালার, নিচের বোরকা এক কালার, আবার বোরকার নিচে কুচি দিয়ে অন্য কালারের কাপড় লাগানো।
৭। বোরকাটা একদম সাদামাটা হবে। কাজ ছাড়া,কুচি ছাড়া,কোমরে বেল্ট ছাড়া,
৮। উড়না বা স্কার্ফ দিয়ে নিকাব বাধবো না, এতে পরিপুর্ন পর্দা হয়না।
৯। বুকের কাছে টাইট হয় এমন খিমার পরবো না
১০। ভ্রু কপাল বের হয়ে থাকে এমন নিকাব পরবো না বা এভাবে স্কার্ফ দিয়েও বাধবো না।
১১। হিজাব ৮/১০ প্যাচ দিবো না।
১২। হিজাবের উপর আবার কাধে বা মাথায় আলাদা উরনা ঝুলাবো না
১৩। পাথর বসানো কোন পিন ইউজ করবো না। বা কোন অলংকার ঝুলাবোনা মাথায় কাধে বুকে হাতে কোথাও না।
১৪। টাইট চিপা আঁটসাঁট হবে না।
১৫। মাথা ফুলায়ে হিজাব বাধবো না। এই গুলো আমরা করবো না কারণ এতে আমাদের পরিপূর্ণ পর্দা হয়না। আমাদেরকে আরো সুন্দর লাগে। ছেলেরা তাকিয়ে থাকে। মনে হয় যেন বিয়ে বাড়িতে পরে যাওয়া লম্বা গাউন পরে পথে ঘাটে হাটছি !
কেমন হবে আমার পর্দা-
১। উপরে বলেছি কি রকম কাপড় চুজ করবো। পাতলা সিল্কি থলথলে চিকচিকি কাপড় না।সাধারণ কালোর মাঝে কম গরম তবে লেপ্টে থাকেনা এমন কাপড়
২। আপাদমস্তক এক কালারের হবে।
৩। কোন রকম কুচি,ডিজাইন হবে না
৪। খিমার টা লম্বা চওড়া হবে,যাতে আমাদের কাধের সেইপ,কোমরের সেইপ, বুকের সেইপ বুঝা না যায়।
৫। খিমারের উপর নিকাবটা না বেধে নিচে বাঁধবো, উপরে বাধলে মাথার সেইপের কারনে কাধ প্রকাশ পায়। এই ক্ষেত্রে মাথায় টুপি পরে এরপর নিকাব বেধে এরপর উপরে খিমার দিতে পারি। এটা উপরে নিকাব বাধার থেকে বেশি আরাম দায়ক। ও এতে চোখের অংশটা কম প্রকাশ পায়।
৬। হাত পা সতরের অন্তর্ভুক্ত, তা ঢেকে রাখবো। মোজা পরা বাধ্যতামূলক না। খিমারের নিচেও হাত রেখে ঢেকে রাখা যায়। তবে মোজা আরামদায়ক। আজকাল অনলাইন পেইজ গুলায় কালার ফুল আবায়ার প্রচুর চল।
খারাপ লাগে এসব দেখে। মনে হয় যেন লং গাউন। সহিহ পর্দা থেকে এইসব আবায়া কয়েক ক্রোশ দূরে। আমরা পর্দা করি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য। উনার হুকুম তামিল করার জন্য। নিজেকে সুন্দর দেখাতে না বা অন্যের চোখে সুন্দর হতে না।
কুরআন ও হাদিসের আলোকে চেহারার পর্দা (নিকাব) পর্ব – ১
পর্ব – ১ অনেক অপরাধীকে কেবল তার পাপবোধ ও অনুশোচনার জন্যে ক্ষমা করে দেয়া হয়,একজন অপরাধী কিংবা পাপী ব্যক্তির যদি পাপকাজ করার পর অনুশোচনাই না আসে, তবে তওবা ও গোনাহ মাফের তাওফিক তার নাসীবে জোটবে না !!
ইসলামে পাপকে পাপ মনে করা, অন্যায়কে অন্যায় মনে করাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ । কিন্তু বর্তমান যুগে অনেকের মাঝেই পাপকে পাপ মনে করার বদলে উক্ত পাপকে জায়েজ বানানোর নানা অপচেষ্টা করতে দেখা যায়, তেমনি একটা গর্হিত অন্যায় হচ্ছে, ‘চেহারা খোলা রাখা জায়েজ’ বলে বেড়ানো !!
আপনি মদকে জায়েজ মনে করে খেলে যেমন কোন অনুশোচনা আসবে না, তেমনি ঐ হিজাবী বোনদেরও অনুশোচনা জাগ্রত হয় না, যারা অবলীলায় চেহারা খোলা রাখাকে জায়েজ বলে বেড়ান নানা অপব্যাখ্যা আর খোড়া যুক্তির আলোকে !!
যারা বলেন পর্দা ফরজ নয় তারা কুরআন ও কত গুলো হাদিসকে অস্বীকার করছেন এক নজর দেখে নিন !!
প্রথমত জানা উচিত, পর্দা করা ফরজ ইবাদাত,অন্যান্য ইবাদাত যেমন সালাত হজ ইত্যাদিতে যেমন যথাযথভাবে আদায় করা গুরুত্বপূর্ণ,তেমনি পর্দা ও হিজাবও যথাযথভাবে করা গুরুত্বপূর্ণ,পর্দাকে যারা হেলাফেলার চোখে দেখেন, বা বোরকা হিজাব দেখলে ইনসাল্ট করেন অথবা অবহেলা তাচ্ছিল্যের ভাব যাদের আসে, তাদের ঈমানের শুদ্ধতাই হুমকির মুখে নিপতিত।
পর্দা ফরজ হওয়ার দলীলঃ
সুরাহ আন নুর ৩০/৬০ নং আয়াত, এই আয়াত দুটোর অর্থ ও তাফসির পড়ে দেখুন, এইখানে আয়াতের শুরুতে আল্লাহ বলেছেনঃ ” আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে,আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে
” ১- দৃষ্টি সংযত রাখা,
২- লজ্জাস্থানের হিফাজত করা,
৩- সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না,
৪- বক্ষদেশ আবৃত রাখা উপরের ৪টি পয়েন্ট লক্ষ করুন,
১মটা হচ্ছে আপনার নজর হিফাজত করুন এমন সব মানুষ বা দৃশ্য থেকে যা আপনাকে ব্যভিচারের দিকে আকৃষ্ট করে ধাপে ধাপে,
২য়টা হচ্ছে লজ্জাস্থান হেফাজত করা ও ৪র্থটা হচ্ছে বক্ষদেশ আবৃত রাখা ,
আপনাকে এইখানে ব্যভিচার থেকে ও ব্যভিচারের প্রতি আকৃষ্ট করে এমন সব আবেদন থেকে বেচে থাকার জন্য দেহের সৌন্দর্য যেন কারো নজর না কাড়ে সেজন্য তা ঢেকে রাখতে বলা হয়েছে, আয়াতে শুধু লজ্জাস্থান ও বক্ষের কথা উল্লেখ করার মানে এই নয় যে এইটুকু ছাড়া বাকী শরীর উন্মুক্ত রাখা জায়েজ !
৩য় পয়েন্টে বলা হয়েছে সৌন্দর্য প্রকাশ না করতে, এখন নারী সৌন্দর্য বলতে আসলে কী বোঝায় ? সৌন্দর্য হতে পারে ন্যাচারাল অথবা কৃত্রিম, আপনার শরীরের গঠন ও হতে পারে কিংবা নজর কাড়া পোশাক ও সাজগোজ হতে পারে, মেকাপ করা চেহারাও হতে পারে … এতে করে কী বোঝা গেলো ?
এই দুই অঙ্গ সহ আপনার শরীরের সমস্ত সৌন্দর্য প্রকাশ করবেন না, একটা মেয়ের শরীরে যত যায়গায় সৌন্দর্য আছে তা সে গোপন করবে, যারা বলছেন চেহারা ঢাকা জরুরি না তারা কি তাহলে চেহারাকে সৌন্দর্যর বাহিরে রাখছেন ?
আয়াতের পরের অংশ দেখুনঃ ” আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই-এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।”
এই আয়াতে খেয়াল করে দেখুন, যাদের কথা বলা হয়েছে তারা মাহরাম, অধীনস্থ যৌনকামনা মুক্ত পুরুষ ও মেয়েদের অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক (খুবই বৃদ্ধ বা একেবারে বাচ্চা ছেলে ) এদেরকে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে,
অর্থাৎ এদের সামনে পর্দা না করার অনুমতি আছে, মানে চেহারা দেখানো যাবে, আচ্ছা এদেরকে আলাদা কেনো করা হলো যদি মুখ ঢাকা জরুরিই না হয় ? মুখ তো সবাইকেই দেখানো যাবে তাইনা ? তাহলে আয়াতে এদের কথা আলাদা করে কেনো আসলো আর বলা হয়েছে এদের কাছে সৌন্দর্য প্রকাশ করা যাবে ?
আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন!
আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে জানতে লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।
আইডিসি মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
আপনি আইডিসি মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.
আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।
কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।
ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।
এখানে হাস্যকর ব্যাপারটি হচ্ছে, যারা বলেন সৌন্দর্য ঢেকে রাখা বলতে চেহারা উদ্দেশ্য নয়, বাকী দেহ উদ্দেশ্য। তবে, যাদের কাছে সৌন্দর্য প্রকাশের অনুমতি দেয়া হলো (যেমন বাবা ভাই ছেলে ইত্যাদি), তাদের কাছে কোন সৌন্দর্য প্রকাশ করবে? তাদের মত অনুযায়ী, চেহারা তো সবার ক্ষেত্রেই প্রকাশযোগ্য।
মাহরাম হোক বা গাইরে মাহরাম। তাহলে বাবা ভাইদের সামনে বাড়তি কোন অংগ প্রকাশ করবে? মানে চেহারা চুল ছাড়া শরীরের আর কী কী দেখাবে?! সঠিক কথা হচ্ছে, আয়াতে সৌন্দর্যের মধ্যে চেহারাও শামিল, এই জন্যেই, মাহরামের সামনে চেহারা খোলা রাখতে পারবে, আয়াতের পরের অংশে সেই অনুমতিই দেয়া হয়েছে !
এবার ৬০ নং আয়াত দেখা যাক, আল্লাহ বলেছেনঃ ” বৃদ্ধা নারী যারা বিবাহের আশা রাখে না, যদি তারা সৌন্দর্য প্রকাশ না করে তাদের বস্ত্র খুলে রাখে, তাদের জন্য দোষ নেই, তবে এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্যে উত্তম। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা “
এখানে বলেছে মুখ খোলা রাখলে দোষ নেই, সেটা কাদের জন্য ? সব মেয়ে দের জন্য ?? নাকি খাস করে দেওয়া হয়েছে শুধু মাত্র বৃদ্ধা নারীরা ?? সব মেয়েদের জন্য এই হুকুম হলে তো আর বৃদ্ধা নারীর কথা আলাদা ভাবে বলা হতো না !
তারপরেও শর্ত দেওয়া আছে ” যদি তারা সৌন্দর্য প্রকাশ না করে ” আমরা জানি বার্ধক্যজনিত কারনে মেয়েদের শরীরের সৌন্দর্য কমে যায়, আকর্ষন থাকেনা, চামড়া কুঁচকে যায়, তাদের দিকে তাকালে কোনো পুরুষের কাম ভাব জাগেনা, যাদের এমন হয় তারা মুখ খোলা রাখলে দোষ নেই,কিন্তু এ থেকেও বিরত থাকতে বলা হয়েছে !!
বৃদ্ধাদেরকেও বলা হয়েছে মুখ খুলে রাখা থেকে বিরত থাকতে, আর যুবতী মেয়েদের জন্য কিভাবে মুখ খোলা রাখা জায়েজ হয় ?
আবার এমন অনেক বৃদ্ধা আছেন যাদের এখনো সৌন্দর্যে ভাটা পরেনি, বয়স বেশি হয়েছে তা বুঝা যায় না, শরীর ভারি হয়নি, দেখতে কম বয়সী লাগে,সেই ক্ষেত্রে তারাও তো মুখ খুলে রাখতে পারবে না, কারন এতে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ পাবে … আরেক টা কথা, এই আয়াতে বস্ত্র খুলে রাখা বলতে জামা কাপড় যেন না বুঝেন কেউ ! তাহলে অর্থ দাঁড়াবে বয়স্কা বৃদ্ধা তারা চাইলে বস্ত্রহীন ও থাকতে পারবে !!
কুরআন ও হাদিসের আলোকে চেহারার পর্দা (নিকাব) পর্ব – ২
এবার সুরা আহজাবের ৫৯ নং আয়াত দেখুন,আল্লাহ বলেছেনঃ “হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বল, ‘তারা যেন তাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে। ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”
এই আয়াতের ভুল অর্থ ব্যাখ্যা করেন বেশির ভাগ ফাঁকিবাজ আপু আর ভাইয়ারাও, এটা হচ্ছে নিজে নিজে আয়াতের অর্থ বুঝে তাফসির করা, আলহামদুলিল্লাহ্ এতোজন মুফাসসির এই হাদিসের তাফসির করে গেছেন এরপরেও তো আর দরকার নেই নিজেদের মন গড়া অর্থ বোঝার ! এই আয়াতে দুইটা বিষয় লক্ষণীয়,
একঃ জীলবাবের কিছু অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেওয়া,
দুইঃ চেনার ব্যপারে কাছাকাছি পন্থা হবে। জীলবাব, খিমার এইগুলো ছিল সাহাবিয়াদের পর্দা করার বস্ত্র, এইগুলোকে যদি এই জুগের বোরখার মত মনে করেন তাহলে ভুল করবেন, উনারা এমন চাদর পরতেন যা মাথা থেকে নেমে মুখ গলা বুক সহ সমস্ত শরীর ঢেকে যেতো, শরীরের অবয়বও বোঝা যেতো না,এমনকি সেই চাদর খুব পাতলাও হতো না।
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা) বলেনঃ ” আল্লাহ তাআলা মুমিনদের মহিলাদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন যে, তারা কোনো প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হলে যেন জিলবাব তথা চাদর দ্বারা মাথার উপর দিক থেকে নিজেদের মুখমন্ডল ঢেকে বের হয়,
তবে একটি চোখ খোলা রাখবে (প্রয়োজনে দেখার জন্য) উম্মে সালামা (রা) বলেনঃ এই আয়াত নাযিল হওয়ার পর থেকে আনসারি মহিলাগণ (মদীনা শরীফের স্থায়ী অধিবাসিনী) কালো চাদর পরে অতি ধীরস্থিরতার সাথে ঘর হতে বের হতেন। মনে হত যেন তাদের মাথার উপর কাক বসে আছে।
সাহাবী আলী (রা) এর শিষ্য আবু উবাইদাহ আস-সালমানী, কাতাদাহ প্রমুখ বলেনঃ মুমিন লোকদের স্ত্রীগণ মাথার উপর থেকে চাদর এভাবে পরিধান করত, চলার পথে রাস্তা দেখার জন্যে চক্ষু ব্যতীত শরীরের অন্য কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রকাশ পেত না “
১ম বিষয় তো পরিষ্কার যে সাহাবিয়ারা মুখ ঢেকে রাখতেন জিলবাব দিয়ে ! ২য় বিষয় চেনার ব্যপারে কাছাকাছি পন্থা হবে বলতে কী বুঝেন ? যারা মুখ খোলা রাখা জায়েজ বলেন তারা আয়াতের এই অংশ দ্বারা বুঝেন ও বোঝান যে মুখ খোলা থাকলে তাদেরকে দেখে চেনা যাবে,যে তারা আসলে কারা, কার বিবি কার মেয়ে ইত্যাদি !
আচ্ছা বলেন তো আমরা বিভিন্ন পেশার মানুষদের কিভাবে চিনে থাকি? ডক্টরকে চিনি তার সাদা এপ্রোন দেখে, পুলিশ /আর্মি এদের চিনি তাদের পোশাক দেখে, খেলোয়াড় চিনি তাদের জার্সি দেখে ইত্যাদি, ঠিক তেমনিভাবে জিলবাবে আবৃত মহিলাদের দেখে আমরা চিনবো যে তারা ফাহেশা নারী নন, তারা পর্দানশিন পরহেজগার নারী,তাই তাদেরকে পথে ঘাটে কেউ উত্যক্ত করবে না …
এইখানে তিনটা আয়াত নিয়ে আলোচনা করা হল। তিনটা দিয়েই প্রমানিত যে মুখ খোলা রাখা জায়েজ নয় বরং মুখ ঢাকা ফরজ। যারা খোলা রাখা জায়েজ মনে করেন তারা মূলত এই তিন আয়ার অস্বীকার করছেন।
এবার আসা যাক হাদিসে …
১ঃ বিয়ে সংক্রান্ত হাদিসে নবিজী (সা) বলেছেনঃ “তোমাদের কেউ যখন কোন নারীকে বিবাহের প্রস্তাব দিবে তখন সম্ভব হলে যেন তাকে দেখে নেয় যা তাকে বিবাহে উৎসাহিত করে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি একটি মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেবার পর তাকে দেখার আকাঙ্ক্ষা-অন্তরে গোপন রেখেছিলাম।
অতঃপর আমি তার মাঝে এমন কিছু দেখি যা আমাকে তাকে বিয়ে করতে আকৃষ্ট করলো। অতঃপর আমি তাকে বিয়ে করি। (সুনানে আবু দাউদ-২০৮২) সাহবিয়ারা মুখ খোলা রাখলে তাদেরকে আলাদা ভাবে দেখার কথা বলা হতো না, এবং বলা হতো না যে দেখলে গুনাহ হবে না, অর্থাৎ বিয়ে ছাড়া অন্য কারণে দেখলে গুনাহ হবে,বলুন তো কেনো গুনাহ হবে যদি মুখের পর্দা ফরজ না হত?
২ঃ আয়েশা (রা) বলেনঃ আল্লাহ তায়ালা প্রথম শ্রেণীর মুহাজির নারীদের প্রতি দয়া করুন,আল্লাহ তায়ালা যখন “তারা যেন বক্ষদেশে নিজদের ওড়না ফেলে রাখে”(সুরা আন নুর ৩১) আয়াত নাযিল করলেন তখন তারা নিজেদের চাদর ছিঁড়ে তা দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত করেছিলেন। (সহীহ বুখারী ২/৭০০)
৩ঃ নবীজি (সা) যখন বলছিলেন সেই লোকের দিকে আল্লাহ কেয়ামতের দিন রহমতের দৃষ্টি দিবেন না যে অহংকার বশত টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পরে,তখন উম্মে সালামা(রা) জানতে চাইলেন মেয়েরা কত টুক কাপড় ঝুলিয়ে রাখবে?
নবীজি (সা) বললেন আধা হাত,উম্মে সালামা (রা) বললেন এরপরেও যদি পা দেখা যায়? জবাবে নবীজি (সা) বললেন তাহলে এক হাত। (সুনানে আবু দাউদ-৪১১৭) এই হাদিসে বোঝা গেলো মহিলাদের পা পর্যন্ত ঢেকে রাখা ফরজ ! আর আপনার কি মনে হচ্ছে সৌন্দর্যের মূল আমাদের চেহারা খোলা রাখা যাবে !!
৪ঃ আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- ইহরাম গ্রহণকারী নারী যেন নেকাব ও হাতমোজা পরিধান না করে।
(সহীহ বুখারী ৪/৬৩, হাদীস : ১৮৩৮) এর মানে ইহরাম ছাড়া নারীরা নিকাব ও হাত মোজা পরতেন! “ইহরাম অবস্থায় মুখে কাপড় রাখা নিশেধ” এটা একটা কঠিন দলিল তাদের কাছে, ঐযে, নিজ বুঝে কুরান বা হাদিসে ব্যাখ্যা করলে যা হয় তাই ! তাদের জবাবে নিম্নের এই হাদিসটিই যথেষ্ট !
হাদিসটা হলোঃ আয়িশা (রা) বলেনঃ আমরা রাসূলের সাথে এহরাম অবস্থায় ছিলাম, উষ্ট্রারোহী পুরুষরা আমাদের পার্শ্বদিয়ে অতিক্রম কালে আমাদের মুখামুখি হলে আমরা মাথার উপর থেকে চাদর টেনে চেহারার উপর ঝুলিয়ে দিতাম, তারা আমাদেরকে অতিক্রম করে চলে গেলে আমরা মুখমন্ডল খুলে দিতাম।
(ইবনে মাজাহ-২৯৩৫) পরিষ্কার অর্থ, বুঝাই যাচ্ছে মুখ খোলা রেখেছেন,কিন্তু বেপর্দা হোন নাই গাইরে মাহরামের সামনে। এবার বলি মজার কথা, ইহরাম অবস্থায় মুখ ঢেকে রাখা যাবেনা বলতে মুখে কাপড় যেন স্পর্শ না করে তা বলা হয়েছে, বেপর্দা থাকতে হবে তা বলা হয়নি কিন্তু !
মাথায় কিছু বেধে তা দিয়ে মুখ ঢাকলে সেই কাপড় মুখ স্পর্শ করবেই, কিন্তু মাথার উপর থেকে কাপড় ফেলে দিলে তা মুখ স্পর্শ করবেনা, আর এই পদ্ধতিই অবলম্বন করেছিলেন সাহাবিয়ারা। এই হাদিসে প্রমান হলো যে ইহরাম অবস্থা ছাড়া অন্য মহিলারা মুখ ঢেকে রাখতেন।
যারা “ইহরাম অবস্থায় মুখ খোলা থাকে, পর্দা ফরজ হলে ইহরাম অবস্থায় মুখ খোলা রাখা যাইত না ” বলেন, তাদের তো অন্তত এইটা বোঝা দরকার যে আপনি জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ইহরাম অবস্থায় থাকেন না, তাহলে কেনো সারা জীবন ইহরাম অবস্থায় থাকার হুকুমটা মানবেন ?
এছাড়া আরো কিছু বাকী থেকে যায়! ইহরাম অবস্থায় ছেলেরা মাথায় কিছু দিতে পারে না, তাই বলে কি ইহরাম ছাড়া তারা টুপি রুমাল কিছুই পরতে পারবেনা? ইহরাম অবস্থায় শেলাইহিন চাদর পরতে হয়, তাই বলে কি সারাজীবন দুই পিস সেলাইহিন কাপড়ে থাকে তারা ??
এইখানে গুটি কয়েক হাদিস ও আয়াত লিখলাম, এমন আরো অনেক হাদিস আছে যেখানে সাহাবিয়াদের চলাফেরা বা নবীজির হুকুম থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত যে সাহাবিয়ারা মুখ ঢাকতেন !!
এরপরেও এইসব আয়াত ও হাদিসের উলটা ব্যাখ্যা বের করেন তারা,অনেকে বিদাতও বলে দেন মুখ ঢাকাকে, কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ্ প্রতিটা খোঁড়া যুক্তির উত্তম জবাব দিয়ে গেছেন তাদের থেকে এবং আমাদের থেকে অনেক বড় বড় উলামাগন, এমনকি আমি আজ যা লিখেছি তার থেকেও উত্তম ভাবে জবাব লিখে গেছেন তারা।
যারা বলেন মুখ খোলা রাখা জায়েজ তারা মুলত এইসব আয়াত ও হাদিস অস্বীকার করেন এবং অন্যদের ব্রেইন ওয়াশ করেন !!
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হিফাজত করুন সবাইকে, কেউ যদি মুখ খোলা রাখতে চান, তবে রাখেন সেটা একান্তই আপনার ব্যক্তিগত ইচ্ছা, কিন্তু মনে করবেন না যে এটা জায়েজ !!
যারা অর্ধ নগ্ন, ওয়েস্টার্ন পরে, টাইট ফিট জামা পরে চুল খোলা রাখে তাদেরকে দাওয়াত দিয়ে পর্দার ভিতর আনা উচিত, সেটা না করে আমরা যারা পর্দা করে তাদের নিকাব নিয়ে টানা টানি করছি, অনেকে তো নিকাবকে বিদাতই বলে দিচ্ছি।
Post Credit: Zainab Al-Gazi
আরও পড়ুন…
Duas Of The Quran-কুরআনের সব দু’আ
আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন!
আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে জানতে লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।
আইডিসি মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
আপনি আইডিসি মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.
আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।
কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।
ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।