Surah Abasa সূরা আবাসা ও সূরা আবাসা এর ফযিলত

 

sura-abasa

Surah Abasa সূরা আবাসা ও সূরা আবাসা এর ফযিলত

بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

 

(1)  عَبَسَ وَتَوَلَّى তিনি ভ্রূকুঞ্চিত করলেন এবং মুখ ফিরিয়ে নিলেন। (The Prophet) frowned and turned away,

( عَبَسَ সে ভ্রুকুঞ্চিত করল He frowned,  وَتَوَلَّىٰٓ ও (মুখ ফিরালো) অনাগ্রহ দেখালো and turned away )

 

(2)  أَن جَاءهُ الْأَعْمَى কারণ, তাঁর কাছে এক অন্ধ আগমন করল। Because there came to him the blind man (interrupting).

( أَن  (এ জন্যে) যে Because,  جَآءَهُ তার (কাছে) এসেছে came to him,  ٱلْأَعْمَىٰ এক অন্ধ the blind man,

 

(3)  وَمَا يُدْرِيكَ لَعَلَّهُ يَزَّكَّى আপনি কি জানেন, সে হয়তো পরিশুদ্ধ হত, But what could tell thee but that perchance he might grow (in spiritual understanding)?

( وَمَا এবং কিসে But what,  يُدْرِيكَ তোমাকে জানাবে would make you know,  لَعَلَّهُۥ সে হয়তো that he might,  يَزَّكَّىٰٓ পরিশুদ্ধ হতো purify himself)

 

(4)  أَوْ يَذَّكَّرُ فَتَنفَعَهُ الذِّكْرَى অথবা উপদেশ গ্রহণ করতো এবং উপদেশ তার উপকার হত। Or that he might receive admonition, and the teaching might profit him?

( أَوْ বা Or,  يَذَّكَّرُ উপদেশ গ্রহণ করতো be reminded,  فَتَنفَعَهُ তাকে অতঃপর উপকার দিত so would benefit him,  ٱلذِّكْرَىٰٓ উপদেশ the reminder? )

 

(5)  أَمَّا مَنِ اسْتَغْنَى পরন্তু যে বেপরোয়া, As to one who regards Himself as self-sufficient,

( أَمَّا পক্ষান্তরে As for,  مَنِ যে (him) who,  ٱسْتَغْنَىٰ বেপরোয়া হলো (উন্নাসিকতা দেখালো) considers himself free from need)

 

(6)  فَأَنتَ لَهُ تَصَدَّى আপনি তার চিন্তায় মশগুল। To him dost thou attend;

(  فَأَنتَ অথচ তুমি So you,  لَهُۥ তার জন্যে to him,  تَصَدَّىٰ মনযোগ দিচ্ছো give attention)

 

(7)  وَمَا عَلَيْكَ أَلَّا يَزَّكَّى সে শুদ্ধ না হলে আপনার কোন দোষ নেই। Though it is no blame to thee if he grow not (in spiritual understanding).

( وَمَا কিন্তু নাই And not, عَلَيْكَ তোমার উপর (দায়িত্ব) upon you,  أَلَّا যদি না that not,  يَزَّكَّىٰ সে পরিশুদ্ধ হয় he purifies himself )

 

(8)  وَأَمَّا مَن جَاءكَ يَسْعَى যে আপনার কাছে দৌড়ে আসলো But as to him who came to thee striving earnestly,

( وَأَمَّا আর অন্যপক্ষে But as for, مَن যে (he) who,  جَآءَكَ তোমার কাছে আসল came to you,  يَسْعَىٰ দৌড়ে striving

 

(9)  وَهُوَ يَخْشَى এমতাবস্থায় যে, সে ভয় করে, And with fear (in his heart),

( وَهُوَ এবং সে While he,  يَخْشَىٰ ভয় করে fears )

 

(10)  فَأَنتَ عَنْهُ تَلَهَّى আপনি তাকে অবজ্ঞা করলেন। Of him wast thou unmindful. 

( فَأَنتَ অথচ তুমি But you,  عَنْهُ তার থেকে from him,  تَلَهَّىٰ অনীহা প্রকাশ করছ (are) distracted )

 

(11)  كَلَّا إِنَّهَا تَذْكِرَةٌ কখনও এরূপ করবেন না, এটা উপদেশবানী। By no means (should it be so)! For it is indeed a Message of instruction:

( كَلَّآ কখনও না Nay!,  إِنَّهَا নিশ্চয়ই তা Indeed it, تَذْكِرَةٌ উপদেশ (is) a reminder )

 

(12)  فَمَن شَاء ذَكَرَهُ অতএব, যে ইচ্ছা করবে, সে একে গ্রহণ করবে। Therefore let whoso will, keep it in remembrance.

( فَمَن অতএব যে So whosoever, شَآءَ চায় wills, ذَكَرَهُۥ (তা স্মরণ করবে) তা গ্রহণ করবে may remember it )

 

(13)  فِي صُحُفٍ مُّكَرَّمَةٍ এটা লিখিত আছে সম্মানিত, (It is) in Books held (greatly) in honor,

( فِى মধ্যে (লিপিবদ্ধ) In,  صُحُفٍ সহিফাসমূহের sheets,  مُّكَرَّمَةٍ (যা) সম্মানিত honored )

 

(14)  مَّرْفُوعَةٍ مُّطَهَّرَةٍ উচ্চ পবিত্র পত্রসমূহে, Exalted (in dignity), kept pure and holy,

(  مَّرْفُوعَةٍ উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন Exalted,  مُّطَهَّرَةٍۭ পবিত্র purified )

 

(15)  بِأَيْدِي سَفَرَةٍ লিপিকারের হস্তে, (Written) by the hands of scribes-

( بِأَيْدِى হাতে In (the) hands,  سَفَرَةٍ দূতদের/লিপিকার (of) scribes )

 

(16)  كِرَامٍ بَرَرَةٍ যারা মহৎ, পূত চরিত্র। Honorable and Pious and Just.

( كِرَامٍۭ সম্মানিত Noble,  بَرَرَةٍ সততাসম্পন্ন dutiful )

 

(17)  قُتِلَ الْإِنسَانُ مَا أَكْفَرَهُ মানুষ ধ্বংস হোক, সে কত অকৃতজ্ঞ! Woe to man! What hath made him reject Allah.

( قُتِلَ ধ্বংস হোক Is destroyed,  ٱلْإِنسَٰنُ মানুষ the man,  مَآ কতই না how,  أَكْفَرَهُۥ তা অমান্যকারী ungrateful is he!)

 

(18)  مِنْ أَيِّ شَيْءٍ خَلَقَهُ তিনি তাকে কি বস্তু থেকে সৃষ্টি করেছেন? From what stuff hath He created him?

( مِنْ থেকে From,  أَىِّ কোন what,  شَىْءٍ বস্তু thing,  خَلَقَهُۥ তিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন He created him? )

 

(19)  مِن نُّطْفَةٍ خَلَقَهُ فَقَدَّرَهُ শুক্র থেকে তাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তাকে সুপরিমিত করেছেন। From a sperm-drop: He hath created him, and then mouldeth him in due proportions;

( مِن হতে From,  نُّطْفَةٍ শুক্র ফোঁটা a sperm drop,  خَلَقَهُۥ তিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন He created him,  فَقَدَّرَهُۥ অতঃপর তার নিয়তি নির্দিষ্ট করেছেন then He proportioned him )

 

(20)  ثُمَّ السَّبِيلَ يَسَّرَهُ অতঃপর তার পথ সহজ করেছেন, Then doth He make His path smooth for him

( ثُمَّ এরপর Then,  ٱلسَّبِيلَ পথ the way,  يَسَّرَهُۥ তার (জন্যে) সহজ করেছেন He made easy for him)

 

(21)  ثُمَّ أَمَاتَهُ فَأَقْبَرَهُ অতঃপর তার মৃত্যু ঘটান ও কবরস্থ করেন তাকে। Then He causeth him to die, and putteth him in his grave;

( ثُمَّ এরপর Then,  أَمَاتَهُۥ তাকে মৃত্যু দেন He causes him to die,  فَأَقْبَرَهُۥ অতঃপর তাকে কবরস্থ করেন and provides a grave for him )

 

(22)  ثُمَّ إِذَا شَاء أَنشَرَهُ এরপর যখন ইচ্ছা করবেন তখন তাকে পুনরুজ্জীবিত করবেন। Then, when it is His Will, He will raise him up (again).

( ثُمَّ এরপর Then,  إِذَا যখন when,  شَآءَ চাইবেন He wills,  أَنشَرَهۥ তাকে পুনরায় জীবিত করবেন  He will resurrect him)

 

(23)  كَلَّا لَمَّا يَقْضِ مَا أَمَرَهُ সে কখনও কৃতজ্ঞ হয়নি, তিনি তাকে যা আদেশ করেছেন, সে তা পূর্ণ করেনি। By no means hath he fulfilled what Allah hath commanded him.

( كَلَّا কখনও না Nay!,  لَمَّا না যা Not,  يَقْضِ সে পালন করে he has accomplished,  مَآ যা what,  أَمَرَهُۥ তাকে আদেশ করেছেন তিনি He commanded him)

 

(24)  فَلْيَنظُرِ الْإِنسَانُ إِلَى طَعَامِهِ মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক, Then let man look at his food, (and how We provide it):

( فَلْيَنظُرِ অতঃপর লক্ষ্য করুক Then let look, ٱلْإِنسَٰنُ মানুষ the man,  إِلَىٰ প্রতি at,  طَعَامِهِۦٓ তার খাদ্যের his food )

 

(25)  أَنَّا صَبَبْنَا الْمَاء صَبًّا আমি আশ্চর্য উপায়ে পানি বর্ষণ করেছি, For that We pour forth water in abundance,

( أَنَّا নিশ্চয়ই আমরা We,  صَبَبْنَا আমরা বর্ষণ করেছি [We] poured down,  ٱلْمَآءَ পানি the water,  صَبًّا (প্রচুর) বর্ষণ (in) abundance )

 

(26)  ثُمَّ شَقَقْنَا الْأَرْضَ شَقًّا এরপর আমি ভূমিকে বিদীর্ণ করেছি, And We split the earth in fragments,

( ثُمَّ এরপর Then,  شَقَقْنَا আমরা বিদীর্ণ করেছি We cleaved,  ٱلْأَرْضَ মাটিকে the earth,  شَقًّا (খুব) বিদীর্ণ splitting )

 

(27) فَأَنبَتْنَا فِيهَا حَبًّا অতঃপর তাতে উৎপন্ন করেছি শস্য, And produce therein corn,

( فَأَنۢبَتْنَا অতঃপর আমরা উৎপন্ন করেছি Then We caused to grow,  فِيهَا তার মধ্যে therein,  حَبًّا শস্য grain )

 

(28)  وَعِنَبًا وَقَضْبًا আঙ্গুর, শাক-সব্জি, And Grapes and nutritious plants,

( وَعِنَبًا ও আঙুর And grapes, وَقَضْبًا ও শাকসবজি and green vegetables )

 

(29)  وَزَيْتُونًا وَنَخْلًا যয়তুন, খর্জূর, And Olives and Dates,

( وَزَيْتُونًا এবং যয়তুন And olive, وَنَخْلًا ও খেজুর and date-palms)

 

(30)  وَحَدَائِقَ غُلْبًا ঘন উদ্যান, And enclosed Gardens, dense with lofty trees,

( وَحَدَآئِقَ এবং বাগানসমূহ And gardens,  غُلْبًا ঘন গাছপালাবিশিষ্ট (of) thick foliage )

 

(31)  وَفَاكِهَةً وَأَبًّا ফল এবং ঘাস And fruits and fodder,-

( وَفَٰكِهَةً এবং ফল And fruits,  وَأَبًّا গবাদি খাদ্য and grass )

 

(32)  مَّتَاعًا لَّكُمْ وَلِأَنْعَامِكُمْ তোমাদেরও তোমাদের চতুস্পদ জন্তুদের উপাকারার্থে। For use and convenience to you and your cattle.

( مَّتَٰعًا ভোগ্য সামগ্রী (রূপে) (As) a provision,  لَّكُمْ তোমাদের জন্যে for you, وَلِأَنْعَٰمِكُمْ ও তোমাদের চতুষ্পদ জন্তুর জন্যে and for your cattle )

 

(33)  فَإِذَا جَاءتِ الصَّاخَّةُ অতঃপর যেদিন কর্ণবিদারক নাদ আসবে, At length, when there comes the Deafening Noise,-

( فَإِذَا অতঃপর যখন But when,  جَآءَتِ আসবে comes,  ٱلصَّآخَّةُ কর্ণবিদারক ধ্বনি/ চিল্লানি, ২য় শিঙায়র ফু the Deafening Blast )

 

(34)  يَوْمَ يَفِرُّ الْمَرْءُ مِنْ أَخِيهِ সেদিন পলায়ন করবে মানুষ তার ভ্রাতার কাছ থেকে, That Day shall a man flee from his own brother,

( يَوْمَ সেদিন (The) Day,  يَفِرُّ পালাবে will flee,  ٱلْمَرْءُ মানুষ a man,  مِنْ হতে from, أَخِيهِ তার ভাই his brother)

 

(35)  وَأُمِّهِ وَأَبِيهِ তার মাতা, তার পিতা, And from his mother and his father,

( وَأُمِّهِۦ ও তার মা And his mother,  وَأَبِيهِ ও তার বাপ (হতে) and his father)

 

(36)  وَصَاحِبَتِهِ وَبَنِيهِ তার পত্নী ও তার সন্তানদের কাছ থেকে। And from his wife and his children.

( وَصَٰحِبَتِهِۦ ও তার স্ত্রী And his wife,  وَبَنِيهِ এবং তার সন্তানদের (হতে) and his children )

 

(37)  لِكُلِّ امْرِئٍ مِّنْهُمْ يَوْمَئِذٍ شَأْنٌ يُغْنِيهِ সেদিন প্রত্যেকেরই নিজের এক চিন্তা থাকবে, যা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে। Each one of them, that Day, will have enough concern (of his own) to make him indifferent to the others.

(  لِكُلِّ জন্যে প্রত্যেক For every,  ٱمْرِئٍ ব্যক্তির man,  مِّنْهُمْ  তাদের মধ্যকার among them,  يَوْمَئِذٍ সেদিন that Day,  شَأْنٌ (বিশেষ) অবস্থা (will be) a matter,  يُغْنِيهِ তাকে ব্যতিব্যস্ত করবে occupying him )

 

(38)  وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ مُّسْفِرَةٌ অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে উজ্জ্বল, Some faces that Day will be beaming,

(  وُجُوهٌ (অনেক) মুখ Faces,  يَوْمَئِذٍ সেদিন that Day,  مُّسْفِرَةٌ উজ্জ্বল (হবে) (will be) bright )

 

(39)  ضَاحِكَةٌ مُّسْتَبْشِرَةٌ সহাস্য ও প্রফুল্ল। Laughing, rejoicing.

( ضَاحِكَةٌ সহাস্য Laughing,  مُّسْتَبْشِرَةٌ প্রফুল্ল (হবে) rejoicing at good news )

 

(40)  وَوُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ عَلَيْهَا غَبَرَةٌ এবং অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে ধুলি ধূসরিত। And other faces that Day will be dust-stained,

( وَوُجُوهٌ এবং (অনেক) মুখ And faces,  يَوْمَئِذٍ সেদিন that Day,  عَلَيْهَا তার উপর upon them,  غَبَرَةٌ মলিনতা (আসবে) (will be) dust )

 

(41)  تَرْهَقُهَا قَتَرَةٌ তাদেরকে কালিমা আচ্ছন্ন করে রাখবে। Blackness will cover them:

( تَرْهَقُهَا তাকে আচ্ছন্ন করবে Will cover them,  قَتَرَةٌ অন্ধকার darkness )

 

(42)  أُوْلَئِكَ هُمُ الْكَفَرَةُ الْفَجَرَةُ তারাই কাফের পাপিষ্ঠের দল। Such will be the Rejecters of Allah, the doers of iniquity.

( أُو۟لَٰٓئِكَ ঐসব লোক Those,  هُمُ তারাই (যারা) [they],  ٱلْكَفَرَةُ কাফের (are) the disbelievers,  ٱلْفَجَرَةُ পাপী the wicked ones )

 

 

Sura Abasa – সূরা আবাসা (অর্থ, নামকরণ, শানে নুযূল, পটভূমি ও বিষয়বস্তু)

নামকরণ :

এই সূরার প্রথম শব্দ ( আরবী —) কে এর নাম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।

নাযিলের সময়– কাল

মুফাসসির ও মুহাদ্দিসগণ একযোগে এ সূরা নাযিলের নিম্নরূপ কারণ বর্ণনা করেছেন। একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মজলিসে মক্কা মুয়ায্‌যমার কয়েক জন বড় বড় সরদার বসেছিলেন। তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে উদ্যোগী করার জন্য তিনি তাদের সামনে ইসলামের দাওয়াত পেশ করছিলেন। এমন সময় ইবনে উম্মে মাকতূম (রা) নামক একজন অন্ধ তাঁর খেদমতে হাজির হলেন এবং তাঁর কাছে ইসলাম সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করতে চাইলেন। তার এই প্রশ্নে সরদারদের সাথ আলাপে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিরক্ত হলেন। তিনি তার কথায় কান দিলেন না। এই ঘটনায় আল্লাহর পক্ষ থেকে এ ই সূরাটি নাযিল হয়। এ ঐতিহাসিক ঘটনার কারণে এ সূরা নাযিলের সময় কাল সহজেই নির্দিষ্ট হয়ে যায়।

এ ব্যাপারে প্রথম কথা হচ্ছে , হযরত ইবনে উম্মে মাকতূম ( রা) একেবারেই প্রথম দিকে ইসলাম গ্রহণকারীদের একজন। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী ও হাফেজ ইবনে কাসীর বলেন : আরবী ————————( তিনি একেবারেই প্রথম দিকে মক্কায় ইসলাম গ্রহণ করেন ) এবং আরবী ———————————-( তিনি একেবারেই প্রথম দিকে ইসলাম গ্রহণকারীদের অন্তরভূক্ত)। অর্থাৎ ইসলাম প্রচারের একবারেই শুরুতে তিনি মক্কায় ইসলাম গ্রহণ করেন।

দ্বিতীয় ,যেসব হাদীসে এ ঘটনাটি বর্ণনা করা হয়েছে তার কোন কোনটি থেকে জানা যায় , এ ঘটনাটির আগেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। আবার কোন কোন হাদীস থেকে প্রকাশ হয় , এ সময় তিনি ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন এবং সত্যের সন্ধানেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসেছিলেন। হযরত আয়েশার ( রা) বর্ণনা মতে , তিনি এসে বলেছিলেন : আরবী ——————————————–“ হে আল্লাহর রসূল ! আমাকে সত্য সরল পথ দেখিয়ে দিন। ” ( তিরমিয , হাকেম ইবনে হিব্বান , ইবনে জারীর , আবু লাইলা ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস ( রা) বর্ণনা করেছেন : তিনি এসেই কুরআনের একটি আয়াতের অর্থ জিজ্ঞেস করতে থাকেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেন : আরবী ———————“ হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহ আপানাকে যে জ্ঞান শিখিয়েছেন আমাকে সেই জ্ঞান শেখান । ” ( ইবনে জারীর , ইবনে আবী হাতেম ) এসব বর্ণনা থেকে জানা যায় , তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহর নবী এবং কুরআনকে আল্লাহর কিতাব বলে মেনে নিয়েছিলেন। অন্যদিকে ইবনে যায়েদ তৃতীয় আয়াতে উল্লেখিত আরবী —————————-) ( হয়তো সে ইসলাম গ্রহণ করবে)। ( ইবনে জারীর ) আবার আল্লাহ নিজেই বলেছেন : “তুমি কী জানো হয়তো , সে সংশোধিত হয়ে যাবে অথবা উপদেশের প্রতি মনোযোগী হবে এবং উপদেশ দেয়া তার জন্য উপকারী হবে ? ” এ ছাড়া আল্লাহ এও বলেছেন : “ যে নিজে তোমার কাছে দৌড়ে আসে এবং ভীত হয় তার কথায় তুমি কান দিচ্ছো না। ” একথা থেকে ইংগিত পাওয়া যায় , তখন তার মধ্যে সত্য অনুসন্ধানের গভীরতর প্রেরণা সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেই হেদায়েতের উৎস মনে করে তাঁর খেদমতে হাযির হয়ে গিয়েছিলেন । তাঁর কাছেই নিজের চাহিদা পূরণ হবে বলে মনে করছিলেন। তাঁর অবস্থা একথা প্রকাশ করছিল যে , তাঁকে সত্য সরল পথের সন্ধান দেয়া হলে তিনি সে পথে চলবেন।

তৃতীয়ত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামরে মজলিসে সে সময় যারা উপস্থিত ছিল বিভিন্ন রেওয়ায়াতে তাদের নাম উল্লেখিত হয়েছে। তারা ছিল উতবা , শাইবা আবু জেহেল , উমাইয়া ইবনে খালাক , উবাই ইবনে খালফ প্রমুখ ইসলামের ঘোর শত্রুতা । এ থেকে জানা যায়, এ ঘটনাটি তখনই ঘটেছিল যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে এই লোকগুলোর মেলামেশা বন্ধ হয়নি। তাদের সাথে বিরোধ ও সংঘাত তখনো এমন পযর্যায়ে পৌঁছেনি যে , তাঁর কাছে তাদের আসা যাওয়া এবং তাঁর সাথে তাদের মেলামেশা বন্ধ হয়ে দিয়ে থাকবে। এসব বিষয় প্রমাণ করে , এ সূরাটি একেবারেই প্রথম দিকে নাযিলকৃত সূরাগুলোর অন্তরভুক্ত।

বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য

আপাতদৃষ্টিতে ভাষণের সূচনায় যে বর্ণনা পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে তা দেখে মনে হয় , অন্ধের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন ও তার কথায় কান না দিয়ে বড় বড় সরদারদের প্রতি মনোযোগ দেবার কারণে এই সূরায় নবী সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লামকে তিরস্কার ও তাঁর প্রতি ক্রোধ প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু পুরো সূরাটির সমস্ত বিষয়বস্তুকে একসাথে সামনে রেখে চিন্তা করলে দেখা যাবে , আসলে এখানে ক্রোধ প্রকাশ করা হয়েছে কুরাইশদের কাফের সরদারদের বিরুদ্ধে। কারণ এই সরদাররা তাদের অহংকার , হঠধর্মিতা ও সত্য বিমুখতার কারণে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সত্যের দাওয়াতকে অবজ্ঞা ও ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করছিল। এই সংগে এখানে নবীকে তাঁর সত্য দীনের দাওয়াত দেবার সঠিক পদ্ধতি শেখবার সাথে সাথে নবুওয়াত লাভের প্রথম অবস্থায় নিজের কাজ সম্পন্ন করার ব্যাপারে তিনি যে পদ্ধতিগত ভুল করে যাচ্ছিলেন তা তাকে বুঝানো হয়েছে । একজন অন্ধের প্রতি তাঁর অমনোযোগিতা ও তার কথায় কান না দিয়ে কুরাইশ সরদারদের প্রতি মনোযোগী হওয়ার কারণ এ ছিল না যে , তিনি বড়লোকদের বেশী সম্মানিত মনে করতেন এবং একজন অন্ধকে তুচ্ছ জ্ঞান করতেন , নাউযুবিল্লাহ তাঁর চরিত্রে এই ধরনের কোন বক্রতা ছিল না যার ফলে আল্লাহ তাঁকে পকড়াও করতে পারেন । বরং আসল ব্যাপার এই ছিল , একজন সত্য দীনের দাওয়াত দানকারী যখন তাঁর দাওয়াতের কাজ শুরু করেন তখন স্বাভাবিকভাবেই তাঁর দৃষ্টি চলে যায় জাতির প্রভাবশালী লোকদের দিকে। তিনি চান , এই প্রভাবশালী লোকেরা তাঁর দাওয়াত গ্রহণ করুক। এভাবে তাঁর কাজ সহজ হয়ে যাবে। আর অন্যদিকে দুর্বল , অক্ষম ও সমাজে প্রভাব প্রতিপত্তিহীন লোকদের মধ্যে তাঁর দাওয়াত ছড়িয়ে পড়লেও তাতে সমাজ ব্যবস্থায় কোন বড় রকমের পার্থক্য দেখা দেয় না। প্রথম দিকে রসূল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও প্রায় এই একই ধরণের কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন। তাঁর এই কর্মপদ্ধতি গ্রহণের পেছনে একান্তভাবে কাজ করেছিল তাঁর আন্তরিকতা ও সত্য দীনের দাওয়াতকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেবার প্ররণা । বড়লোকদের প্রতি সম্মাবোধ এবং গরীব , দুর্বল ও প্রভাবহীন লোকদেরকে তুচ্ছ জ্ঞান করার ধারণা এর পেছনে মোটেই সক্রিয় ছিল না। কিন্তু আল্লাহ তাঁকে বুঝালেন , এটা ইসলামী দাওয়াতের সঠিক পদ্ধতি নয়। বরং এই দাওয়াতের দৃষ্টিতে এমন প্রত্যেক ব্যক্তিই গুরুত্বের অধিকারী , যে সত্যের সন্ধানে ফিরছে , সে যতই দুর্বল , প্রভাবহীন ও অক্ষম হোক না কেন আবার এর দৃষ্টিতে এমন প্রত্যেক ব্যক্তিই গুরুত্বহীন , যে নিজেই সত্যবিমুখ , সে সমাজে যত বড় মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হোক না কেন। তাই ইসলামের দাওয়াত আপনি জোরেশোরে সবাইকে দিয়ে যান কিন্তু যাদের মধ্যে সত্যের গ্রহণ করার আগ্রহ পাওয়া যায় তারাই হবে আপনার আগ্রহের আসল কেন্দ্রবিন্দু । আর যেসব আত্মম্ভরী লোক নিজেদের অহংকারে মত্ত হয়ে মনে করে , আপনি ছাড়া তাদের চলবে কিন্তু তারা ছাড়া আপনার চলবে না , তাদের সামনে আপনার এই দাওয়াত পেশ করা এই দাওয়াতের উন্নত মর্যাদার সাথে মোটেই খাপ খায় না।

সূরার প্রথম থেকে ১৬ আয়াত পর্যন্ত এই বিষয়বস্তুই আলোচিত হয়েছে । তারপর ১৭ আয়াত থেকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াত প্রত্যাখ্যানকারী কাফেরদের প্রতি ক্রোধ প্রকাশ করা হয়েছে । তারা নিজেদের স্রষ্টা ও রিযিকদাতা আল্লাহর মোকাবিলায় যে দৃষ্টিভংগী ও কর্মনীতি অবলম্বন করেছিল প্রথমে সে জন্য তাদের নিন্দা ও তিরস্কার করা হয়েছে । সবশেষে তাদেরকে এই মর্মে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে , কিয়ামতের দিন তারা নিজেদের এই কর্মনীতির অত্যন্ত ভয়াবহ পরিণাম দেখতে পাবে।

‘আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক’। লেখাটি শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে।

IDC Partner

আইডিসির সাথে যোগ  দিয়ে উভয় জাহানের জন্য   ভালো কিছু করুন।

 

আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে বিস্তারিত জানতে  লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।

আইডিসি  মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আপনি আইডিসি  মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।

Islami Dawah Center Cover photo

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টারকে সচল রাখতে সাহায্য করুন!

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার ১টি অলাভজনক দাওয়াহ প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠানের ইসলামিক ব্লগটি বর্তমানে ২০,০০০+ মানুষ প্রতিমাসে পড়ে, দিন দিন আরো অনেক বেশি বেড়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।

বর্তমানে মাদরাসা এবং ব্লগ প্রজেক্টের বিভিন্ন খাতে (ওয়েবসাইট হোস্টিং, CDN,কনটেন্ট রাইটিং, প্রুফ রিডিং, ব্লগ পোস্টিং, ডিজাইন এবং মার্কেটিং) মাসে গড়ে ৫০,০০০+ টাকা খরচ হয়, যা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। সেকারনে, এই বিশাল ধর্মীয় কাজকে সামনে এগিয়ে নিতে সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে আপনাদের দোয়া এবং আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন, এমন কিছু ভাই ও বোন ( ৩১৩ জন ) দরকার, যারা আইডিসিকে নির্দিষ্ট অংকের সাহায্য করবেন, তাহলে এই পথ চলা অনেক সহজ হয়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ। যারা এককালিন, মাসিক অথবা বাৎসরিক সাহায্য করবেন, তারা আইডিসির মুল টিমের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন, ইংশাআল্লাহ।

আইডিসির ঠিকানাঃ খঃ ৬৫/৫, শাহজাদপুর, গুলশান, ঢাকা -১২১২, মোবাইলঃ +88 01609 820 094, +88 01716 988 953 ( নগদ/বিকাশ পার্সোনাল ) ইমেলঃ info@islamidawahcenter.com, info@idcmadrasah.com, ওয়েব: www.islamidawahcenter.com, www.idcmadrasah.com সার্বিক তত্ত্বাবধানেঃ হাঃ মুফতি মাহবুব ওসমানী (এম. এ. ইন ইংলিশ)