taqwa/তাকওয়া

taqwa/তাকওয়া অর্থ হলো, যেসব জিনিস থেকে, যেসব কাজকর্ম থেকে আল্লাহ ও তার রাসূল (সা.) নিষেধ করেছেন, সেসব থেকে বেঁচে থাকা। এসব জিনিসের কল্পনাও যদি চলে আসে, তবে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করা। পক্ষান্তরে যেসব হকুম ইসলাম দিয়েছে, সেসব অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলা। taqwa/তাকওয়া একটি বিশেষ গুণের নাম। তাকওয়া একটি বিশেষ গুণ, একটি স্বকীয় বৈশিষ্ট্য, একটি স্বভাব-প্রকৃতি, একটি চরিত্রগুণ।

ইবাদত এক জিনিস আর taqwa/তাকওয়া অন্য জিনিস। তাকওয়া মানসিকতার নাম। মানুষ ইবাদত তো করছেই, কিন্তু আচার-অনুষ্ঠানে, ক্রোধের মুহূর্তে এবং জাগতিক বিষয়াবলিতে মানুষের কর্ম ও জীবনাচার অবিশ্বাসপূর্ণই থেকে যাচ্ছে। তাই এর নাম তাকওয়া নয়। অনুরূপভাবে কেবল অনুসরণ-আনুগত্যে লেগে যাওয়া, গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা তাকওয়া নয় বরং taqwa/তাকওয়া হলো এ সবের মানসিকতা ও অভ্যাস তৈরি হয়ে যাওয়া।

এ জন্য আল্লাহ ইবাদত বা অন্য কিছুর কথা না বলে taqwa/তাকওয়ার কথা বলেছেন। অর্থাৎ ইবাদতে লিপ্ততা যেন কোনো স্বার্থপরতা কিংবা প্রবৃত্তিপূজার কারণে না হয় বরং আল্লাহকে ভয় করে হয়। এটা যেন মানসিকতা ও স্বভাবে পরিণত হয়। সুতরাং taqwa/তাকওয়া অর্থ কোনো কাজ করার আগেই মানুষ চিন্তা করবে, এ কাজটি কেমন? একি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করবে, না অসন্তুষ্ট করবে?

কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় taqwa/তাকওয়া অর্জনের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। taqwa/তাকওয়ার সবচেয়ে ভালো সংজ্ঞা দিয়েছেন বিশিষ্ট সাহাবি উবাই ইবনে কাব (রাঃ)। একবার উমর (রাঃ) উবাই ইবনে কাব (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, taqwa/তাকওয়া কী? উবাই ইবনে কাব (রাঃ) বলেন, আপনি কি কখনো কাঁটা বিছানো পথে হেঁটেছেন? উমর (রাঃ) বলেন, হ্যাঁ। উবাই ইবনে কাব (রাঃ) বলেন, (কাঁটা বিছানো পথে) আপনি কিভাবে হেঁটেছেন? উমর (রাঃ) বলেন, খুব সাবধানে, কষ্ট সহ্য করে হেঁটেছি, যাতে আমার শরীরে কাঁটা বিঁধে না যায়। উবাই ইবনে কাব (রাঃ) বলেন, এটাই হচ্ছে taqwa/তাকওয়া। (তাফসিরে কুরতুবি, ইবনে কাসির) কাঁটাযুক্ত পথে কাঁটা থেকে বাঁচার জন্য মানুষ যেভাবে সতর্ক হয়ে চলে, ঠিক সেভাবে আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ যা নিষিদ্ধ করেছেন সেগুলো থেকে বেঁচে থাকা এবং আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার পাওয়ার জন্য আল্লাহ যা ভালোবাসেন, সেই অনুযায়ী আমল করার নাম taqwa/তাকওয়া। মূলত taqwa/তাকওয়া অন্তরের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সহজ বাংলায় বলা হয় আল্লাহভীতি।

taqwa/তাকওয়া হচ্ছে সব ভালো কাজের উৎস, পুণ্য কাজের জন্য পথের দিশারি। taqwa/তাকওয়া হচ্ছে ভালো কাজের মাধ্যমে আল্লাহর আজাব থেকে বেঁচে থাকা। আগের ও পরের সব উম্মতকে taqwa/তাকওয়া অর্জনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘আর নিশ্চয়ই আমি নির্দেশ দিয়েছিলাম তোমাদের আগে যাদের কিতাব দেওয়া হয়েছিল তাদের এবং তোমাদেরও; যেন তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করো।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৩১)

taqwa/তাকওয়ার তিনটি স্তরঃ

(১) হারাম থেকে বেঁচে থাকা।

(২) সংশয়পূর্ণ বস্তু থেকে বাঁচা।
(৩) বৈধ বস্তু থেকেও বাঁচা, সংশয়ে পতিত হবার ভয়ে।

taqwa/তাকওয়ার উপকারিতাঃ

(১)  আল্লাহর সাহায্য ও নৈকট্য পাওয়া যায়।

(২)  শেষ পরিণাম ভালো হয়।

(৩)  উত্তম প্রতিদান পাওয়া যায়।

(৪)  সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।

(৫)  দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা অর্জিত হয়।

(৬)  উপকারী ইলম অর্জনে সহায়ক হয়।

(৭)  সত্য ও বিশুদ্ধ বিষয় পেতে সহায়ক হয়।

(৮)  অফুরন্ত রিজিক পাওয়া যায়।

(৯)  জান্নাত পাওয়া যায়।

(১০) জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল বসা ছিলেন। ইত্যবসরে তাঁর কাছে আগমন করলেন এক নারী। এসে বললেন:
-হে আবু আবদুল্লাহ! আমি প্রদীপের আলোতে বসে, কাপড় তৈরির জন্য সুতা বুনন করি। রাতেরবেলা প্রায়ই আমার পাশ দিয়ে, সুলতানের মশালবাহক সৈন্যসামন্তরা অতিক্রম করে। আমার জন্য কী তাদের মশালের আলোতে সুতা বুনন করা জায়েজ হবে?
আগন্তুক এই নারীর কথায় ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল কেঁদে ফেললেন। এরপর জিজ্ঞেস করলেন:
-কে তুমি?
-আমি বিশরে হাফির বোন।
-তুমি ওই মশালের আলোতে সুতা বুনন কোরো না; তাহলে তোমাদের ঘর থেকে সত্যনিষ্ঠ taqwa/তাকওয়া বেরিয়ে যাবে!
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. নারীটির অতি সূক্ষ্ম প্রশ্ন এবং নারীর হারামের সংশয়ের ভয় দেখে কেঁদে ফেললেন! (সূত্র: صفة الصفوة ২/১৪৭, ইমাম আবুল ফারাজ ইবনুল জাওযি)
আমাদেরকে সংশয়পূর্ণ বস্তু থেকে বেঁচে থাকতে হবে। এটাও তাকওয়া।
আমরা আজকাল নিজেকে গঠন করার পিছনে মেহনত করি না, মেহনত করি নিজেকে সেলেব্রিটি বানানোর জন্য। আল্লাহ ওয়ালা, এখলাস ওয়ালা, taqwa/তাকওয়া ওয়ালা বানানোর পিছনে মেহনত করি না। মেহনত করি সুনাম অর্জনের জন্য, অঢেল সম্পদের মালিক হওয়ার জন্য, একটা ভালো চাকরির জন্য, একটা সুন্দরী বউ পাওয়ার জন্য! “লাইফ সেটেল হওয়া” বলে একটা শব্দ খুব ইউস করে থাকি আমরা। লাইফ সেটেল বলতে বুঝাই; ‘একটা ভালো চাকরি পেয়ে যাওয়া।’ ব্যাস চাকরির উপার্জন থেকে বাড়ি-গাড়ি, সুন্দরী বউ ইত্যাদি হুহু করে চলে আসবে!
এই টেন্ডেন্সিটা মূলত পশ্চিমা টেন্ডেন্সি। তাদের কাছে যেমন দুনিয়াটাই সবকিছু তেমনি আমাদের এই ‘লাইফ সেটেল হওয়ার’ পিছনে লুকায়িত অর্থ হলো; “দুনিয়াটাই সবকিছু”! অথচ লাইফ সেটেল হওয়ার অর্থ এটা হওয়া উচিত ছিলো — “পাক্কা দ্বীনদার, আল্লাহ ওয়ালা হয়ে যাওয়া। রাসূল (সঃ) এর সুন্নাহ এবং আল্লাহর হুকুম জীবনে বাস্তবায়ন করা!”
এখন প্রশ্ন হলো, তাতে কি হবে?
তাতে করে নিজের উপর যে দুনিয়ার বাজেটটা রেখেছেন আল্লাহ পাক। যতোটুকু সম্পদ রেখেছেন, যতটুকু টাকা রেখেছেন, বউ রেখেছেন, গাড়ি-বাড়ি রেখেছেন, এগুলোর মধ্যে সুখ-শান্তি দিয়ে দিবেন তিঁনি। কেননা তিঁনিই শান্তির মালিক, তাঁর হুকুম না মেনে ভিন্ন পন্থাকে উদ্দেশ্য বানিয়ে কখনো সুখ-শান্তি আসতে পারে না!
একটা চাকরি, একটা গাড়ি, একটা বড়ি, সুন্দরী বউ এগুলো হলো দুনিয়াবি জরুরত। এগুলো মাকসাদ বা উদ্দেশ্য নয়। জীবনের উদ্যেশ্য বা লক্ষ হলো; আল্লাহর সন্তুষ্টি, তাঁর দেওয়া জীবনকে তাঁর তরেই শপে দেওয়া। বস্তুত এটার নামই লাইফ সেটেল হয়ে যাওয়া। তাই এই ক্ষণস্থায়ী জগতে, আমার এই মুসাফিরের জীবনটাকে টাকা পয়সা, বাড়ি-গাড়ি, চাকরি ইত্যাদিকে উদ্দেশ্য না বানিয়ে, লাইফ সেটেলের মতো হাস্যকর নাম না দিয়ে বরং রবের দিকে ফোকাস করি। আমার বাজেটে যা আছে তা তো আমি পাবোই, বরং এর একদানা বেশিও নয়, কমও নয়। এজন্য এক কবি বলেছেন-
“চলবে কিসে!
ভাবছো মিছে!
যার ভাবনা তিনি ভাবছেন,
তুমি ভাবো তাকে!”
taqwa/তাকওয়া মানে দ্বীনদারি ঠিক রেখে হালাল উপার্যনের জন্য চেষ্টা করা। একটা চাকরি আল্লাহর জন্য ছেড়ে দিতে হলে ভেঙে পরা যাবে না। একটু দৈন্য, দারিদ্র্যতা আসলে ভেঙে পরা যাবে না। কারণ, ওই যে, আমাদের লক্ষই হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি!
আমরা কেন এতো দুঃখী জানেন? এর মূল কারণ হলো; দুনিয়াটাকেই ভোগবিলাসের স্থান ভাবি। ঠিক এ কারণেই চাকরি চলে গেলে, ব্যবসায় লস খেলে, বেকারত্বে থাকলে ভীষণভাবে ভেঙে পরি। রবকে না ডেকে বরং দুনিয়ার ক্ষমতাধরকে ডেকে থাকি।
এখনো কেন আমাদের চোখ খুলে না? এখনো কেন আমরা আল্লাহ পাক থেকে এতো উদাসীন? তিঁনি আমাদের রিজিকের জিম্মাদারি (দায়িত্ব) নেওয়ার পরেও কেন আমরা এতো দুশ্চিন্তায় পড়ি? রিজিকের ব্যাপারে তো আল্লাহ তা’আলা বলেই দিয়েছেন — ‘দুনিয়ায় বিচরণকারী এমন কোনো প্রাণী নেই, যার রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর ওপর নেই। তাদের স্থায়ী এবং অস্থায়ী অবস্থানস্থল সম্পর্কে তিনি অবহিত। সব কিছুই একটি সুস্পষ্ট।’—(সুরা হুদ : আয়াত ৬)
আল্লাহতালা আমাদের সকলকে বুঝার ও আমল করার তৌফিক এনায়েত ফরমান আমিন।

আইডিসির সাথে যোগ  য়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন।

 

আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে বিস্তারিত জানতে  লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।

আইডিসি  মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আপনি আইডিসি  মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।

Islami Dawah Center Cover photo

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টারকে সচল রাখতে সাহায্য করুন!

 

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার ১টি অলাভজনক দাওয়াহ প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠানের ইসলামিক ব্লগটি বর্তমানে ২০,০০০+ মানুষ প্রতিমাসে পড়ে, দিন দিন আরো অনেক বেশি বেড়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।

বর্তমানে মাদরাসা এবং ব্লগ প্রজেক্টের বিভিন্ন খাতে (ওয়েবসাইট হোস্টিং, CDN,কনটেন্ট রাইটিং, প্রুফ রিডিং, ব্লগ পোস্টিং, ডিজাইন এবং মার্কেটিং) মাসে গড়ে ৫০,০০০+ টাকা খরচ হয়, যা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। সেকারনে, এই বিশাল ধর্মীয় কাজকে সামনে এগিয়ে নিতে সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে আপনাদের দোয়া এবং আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন, এমন কিছু ভাই ও বোন ( ৩১৩ জন ) দরকার, যারা আইডিসিকে নির্দিষ্ট অংকের সাহায্য করবেন, তাহলে এই পথ চলা অনেক সহজ হয়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।

যারা এককালিন, মাসিক অথবা বাৎসরিক সাহায্য করবেন, তারা আইডিসির মুল টিমের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন, ইংশাআল্লাহ।

আইডিসির ঠিকানাঃ খঃ ৬৫/৫, শাহজাদপুর, গুলশান, ঢাকা -১২১২, মোবাইলঃ +88 01609 820 094, +88 01716 988 953 ( নগদ/বিকাশ পার্সোনাল )

ইমেলঃ info@islamidawahcenter.com, info@idcmadrasah.com, ওয়েব: www.islamidawahcenter.com, www.idcmadrasah.com সার্বিক তত্ত্বাবধানেঃ হাঃ মুফতি মাহবুব ওসমানী ( এম. এ. ইন ইংলিশ )