Israil/ইজরাইল

Israil/ইজরাইল পশ্চিম এশিয়া তথা মধ্যপ্রাচ্যের একটি রাষ্ট্র। এটি ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণ-পূর্ব তীরে ও লোহিত সাগরের উত্তর তীরে অবস্থিত। দেশটির উত্তর স্থলসীমান্তে লেবানন, উত্তর-পূর্বে সিরিয়া, পূর্বে জর্দান ও ফিলিস্তিনি-অধ্যুষিত ভূখণ্ড পশ্চিম তীর, পশ্চিমে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজা উপত্যকা এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে মিশর অবস্থিত।

ভূমধ্যসাগরের উপকূলে অবস্থিত তেল আবিব দেশটির অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত প্রাণকেন্দ্র এবং বৃহত্তম মহানগর এলাকা। Israil/ইজরাইল সমগ্র জেরুসালেম শহরকে তার রাজধানী হিসেবে দাবী করে আসছে, যদিও এই মর্যাদা সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রই স্বীকার করে না। শহরের পশ্চিমভাগ ইজরাইলের নিয়ন্ত্রণাধীন এবং এখানে দেশটির সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি অবস্থিত। ইজরাইলের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গুয়াতেমালা ও ইতালি ব্যতীত অন্য ৮৭টি দেশের দূতাবাস তেল আবিব নগর বা জেলায় অবস্থিত (২০২১ সালের তথ্যানুযায়ী)। এছাড়া হাইফা ও বে-এরশেভা আরও দুইটি বৃহৎ মহানগর এলাকা।

অর্থনৈতিকভাবে Israil/ইজরাইল একটি অত্যন্ত উন্নত শিল্পপ্রধান রাষ্ট্র। স্থূল আভ্যন্তরীণ উৎপাদনের হিসেবে ইজরাইলের বিশ্বের ৩৪তম বৃহত্তম অর্থনীতি। দেশটি অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার সদস্যরাষ্ট্র। বিশ্বব্যাংকের হিসাবমতে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে এটি এশিয়ার ৩টি উচ্চ-আয়ের রাষ্ট্রগুলির একটি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মতে এটি বিশ্বের ৩৯টি অগ্রসর অর্থনীতিসমৃদ্ধ দেশগুলির একটি।

Israil/ইজরাইল এ প্রায় ৯৩ লক্ষ লোকের বাস। এটি মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ; এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪২৫ জন অধিবাসী বাস করে। এদের মধ্যে ৬৭ লক্ষ ইহুদী জাতি ও ধর্মাবলম্বী এবং ১৯ লক্ষ আরব জাতিভুক্ত (যাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান)। এটিই বিশ্বের একমাত্র রাষ্ট্র যেখানে ইহুদীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়। ইজরাইলের জনগণ অত্যন্ত উচ্চশিক্ষিত; এখানকার প্রায় অর্ধেক জনগণের (২৫-৬৪ বছর বয়সীদের মধ্যে) বিশ্ববিদ্যালয় বা তার সমপর্যায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে, যা বিশ্বের ৩য় সর্বোচ্চ। দেশটির জীবনযাত্রার মান সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ, এশিয়াতে ৫ম এবং বিশ্বে ১৯তম।

Israil/ইজরাইল নিজেকে একটি ইহুদী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দাবী করে। এখানে একটি প্রতিনিধিত্বমূলক সংসদীয় গণতন্ত্র বিদ্যমান। এর এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার নাম ক্নে‌সেত। প্রধানমন্ত্রী সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন।

Israil/ইজরাইল যারা শাসন করে তারা মূলত ইউরোপীয় ইহুদী। এদেরকে বলা হয় আশকেনাজি জুইশ। এরা ইউরোপ থেকে এসে ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডে গেঁড়ে বসা ইহুদী। কিছু আরব ইহুদী আছে, যারা আগে থেকেই ফিলিস্তিনে ছিল। আর কিছু অন্যান্য আরব দেশ থেকে এসেছে। এদেরকে বলা হয় মিজরাহি জুউশ। হিস্পানিক কিছু জুইশ আছে। তবে এলিট শ্রেণী হচ্ছে- আশকেনাজি জুইশ। এরাই মূলত জার্মান আর ফ্রান্স থেকে বিতাড়িত হয়ে ফিলিস্তিনীদের জমি দখল করেছে।

এরা অসম্ভব উগ্র, জেনোফোবিক এবং ধণী। ইজরাইলের এলিট শ্রেণী হচ্ছে এরা। এদের কালচারের সাথে আরব ইহুদীদের কালচার কোনোভাবেই মিলেনা। ইহুদী ধর্ম অনুযায়ী মেসিয়াহ (মুসলমানদের কাছে দাজ্জাল) না আসা পর্যন্ত ইহুদীদের জন্য আলাদা দেশ গঠন করা পুরোপুরিভাবে নিষিদ্ধ। এই কারণেই অন্যান্য দেশের অর্থোডক্স ইহুদী এবং ইহুদী ধর্মগুরুগণ ইজরায়েলের বিরোধী। কারণ এই রাষ্ট্র ইহুদী ধর্মমতেও নিষিদ্ধ।

ধর্মীয় দেশ দাবী করলেও Israil/ইজরাইল মূলত কোনো ইহুদী দেশ নয়, এটা একটা জায়োনিস্ট দেশ। সহজ ভাষায় বললে- জায়োনিজম হচ্ছে ইহুদী জাতীয়তাবাদের একটি পলিটিক্যাল টার্ম। জায়োনিস্ট হওয়ার জন্য ইহুদী হওয়া শর্ত নয়। অর্থাৎ ইহুদী নন এমন ব্যক্তিরাও জায়োনিস্ট হতে পারেন। আবার ইহুদী মানেও জায়োনিস্ট নয়। জায়োনিজমকে বাংলায় সম্ভবত ইহুদীবাদ বলা হয়। হিন্দু আর হিন্দুত্ববাদ যেমন এক নয়, অনেকটা সেরকম। ইহুদী ধর্মকে বলা হয় জুদাইজম।

জায়নবাদের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছে স্টেট অব ইজরায়েল জাতির পিতা থিউডর হার্ৎজেল। যার স্বপ্ন ছিল তার মুভমেন্টের সমর্থক ইহুদীদের জন্য আলাদা একটা দেশ হবে এবং সেটা হবে ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমিতে। সে অবশ্য তার জীবদ্দশায় Israil/ইজরাইল দেখে যেতে পারেনাই। তবে সে নানাভাবে চেষ্টা করেছিল। ওসমানী খলীফা আব্দুল হামীদকে সে চিঠি লিখে প্রস্তাব দিয়েছিল যেন ইহুদীদের জন্য বাইতুল মোকাদ্দাসের কাছে কিছু জমি বরাদ্ধ দেয়া হয়। বিনিময়ে তুরস্কের সব ঋণ পরিশোধ করে দেয়া হবে। খলীফা এই প্রস্তাব নাকচ করে দিলে ১৯০১ সালের মে মাসে থিওডর তার ক্লোজফ্রেন্ড পোলিশ ফিলিপ নিউলিন্সকিকে দিয়ে আবার প্রস্তাব পাঠায়। এবারে খলীফার জন্য বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ সহ নানা উপহারের প্রস্তাব দেয়া হয়। উল্লেখ্য যে, অন্যান্য ব্যবসা এবং সুদের ব্যবসা করে ইহুদীরা অনেক আগে থেকেই প্রচুর সম্পদের মালিক। ব্যাংকিং কনসেপ্ট জিনিসটাই ইহুদীদের থেকে তাদের সুদের ব্যবসা থেকে এসেছে। এই কারণে তাদের সম্পত্তি ছিল অঢেল।

খলীফা আব্দুল হামীদ বলেছিলেন- ফিলিস্তিনের ভূমি আমার একার সম্পদ নয় যে আমি লিখে দেব। প্রতিটা মুসলমানের রক্তের ফোঁটাতে এর মালিকানা। আমি বেঁচে থাকতে সেটা হতে দিতে পারিনা। খলীফা আব্দুল হামীদ মারা গেছেন, ওসমানী খেলাফত ধ্বংস হয়েছে। খেলাফত বিলুপ্ত হয়েছে। বৃটিশরা যুদ্ধে জিতেছে। থিউডর হার্ৎজেল মারা গেছে। কিন্তু তার আইডিওলজি দিনে দিনে শক্তিশালী হয়েছে। তার স্বপ্নের দেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

বৃটিশরা ইউরোপ থেকে মার খাওয়া ইহুদীদের জন্য জায়গা বরাদ্ধ করে দিল ফিলিস্তিনে। থিউডরের স্বপ্নের সেই দেশ প্রতিষ্ঠিত হলো ফিলিস্তিনীদের রক্তের উপর। লাখ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হলো। ঘরবাড়ী এবং জীবন হারালো। জায়োনিস্টদের তখন সশস্ত্র মিলিশিয়া ছিল। তারা ফিলিস্তিনীদের হত্যা করতো, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে সেই ভূমি দখল করতো এবং তারা বিশেষভাবে বৃটিশদের সহায়তা পেত।

ইহুদীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত এই ইজরাইলে ইহুদীরাই বৈষম্যের শিকার হয়। যারা কালো ইহুদী তারাও বৈষম্যের শিকার হয়। এ নিয়ে তারা অনেকবার রাস্তায় নেমেছে। সবচেয়ে বেশী শিকার হয় আরব ইহুদীরা। কারণ তাদের ভাষা আরবী, তাদের বেশভূষা আরব মুসলমানদের মত। আরবী বলার কারণে তাদের চাকরী হয়না, আরবদের মত পোষাক পরায় চাকরী হয় না। ধর্মে ইহুদী হওয়ার পরও জাতিতে একই না হওয়ায় তারা নানা বৈষম্য, বুলিং এবং হেনস্থার শিকার হয়। তাদের বলা হয় আরবদের ঘৃণা করতে। তো যারা পূর্বে আরব দেশে ছিল, তারা অর্থ্যাৎ বৃদ্ধরা বিষয়টা মেনে নিতে পারেনা। তারা প্রতিবাদ করে। কোনো লাভ হয় না।

যারা নিজ ধর্ম ইহুদীদের সাথেই এমন করে, তারা আরব মুসলমানদের সাথে কেমন আচরণ করবে সেটা সহজেই অনুমেয়।Israil/ইজরাইল শুরু থেকেই বৃটিশ এবং আমেরিকানদের প্রত্যক্ষ সাপোর্ট পেয়ে আসছে। আরব Israil/ইজরাইল যুদ্ধে আমেরিকান সৈন্যরা ইজরাইলের পক্ষে যুদ্ধ করেছে বলেও বলা হয়।

এখনো যখন Israil/ইজরাইল ফিলিস্তিনীদেরকে হত্যা করে, নারী-শিশুদেরও হত্যা করে, ধরে নিয়ে যায় এ নিয়ে জাতিসংঘ ইজরাইলের বিরুদ্ধে কোনো প্রস্তাব আনলে আমেরিকা ভেটো দেয়। সরাসরি Israil/ইজরাইল কে রক্ষা করে। জাতিসংঘের আইন, আন্তর্জাতিক আইন, মানবাধিকার, যুদ্ধাপরাধ আইন সব কিছুই তারা নিয়মিত লংঘন করে। কিন্তু তাতে তাদের কোনো কিছুই হয় না। কারণ আমেরিকা আছে। তারা প্রকাশ্যেই Israil/ইজরাইল কে রক্ষা করে নেয়, একদম নগ্নভাবে।

Israil/ইজরাইল এর কোনো সীমানা নেই। কারণ, তারা প্রতিদিনই দখল করে চলেছে। যেকোনো দিন ইহুদী সেটেলার এসে আপনাকে বলবে এই ঘর আমার। এরপর Israil/ইজরায়েলী পুলিশ এসে আপনাকে বের করে দেবে, পুরুষদের জেলে নিয়ে যাবে। তারপর বুলডোজার এসে আপনার ঘর গুঁড়িয়ে দেবে। এরপর সরকারী টাকায় সেখানে ইহুদীদের জন্য ঘর বানানো হবে।
নিজেদের শত শত বছরের ভিটেবাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়া ফিলিস্তিনীরা এক দিনেই উদ্বাস্তু হয়ে গেল। রিফিউজি হিসেবে কোথাও আশ্রয় নিতে হবে। এভাবে তারা প্রতিদিন ঘরবাড়ী দখল করে নেয় আর ফিলিস্তিনীরা উদ্বাস্তু হয়। ইহুদীদের জন্য ঘরবাড়ী বানানোর জন্য যে টাকা খরচ হয়, তার জন্যও আমেরিকা থেকে সরকারী এবং বেসরকারিভাবে টাকা আসে। আবার প্রতিবছর ইজরায়েলের জন্য প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা আসে।

পশ্চিমের দেশগুলোতে ইজরায়েলীদের জন্য প্রায় ভিসা ফ্রী। নামী দামী ইউনিভার্সিটি গুলোতে তারা স্কলারশিপ পায়। এর বাইরে আবার প্রায় সব বড় বড় কোম্পানীর বিলিয়ন ডলারের ইনভেস্টমেন্ট আছে ইজরাইলে। তারা শিক্ষাখাতে ইনভেস্ট করে, গবেষণা খাতে ইনভেস্ট করে, ট্যুরিজম খাতে ইনভেস্ট করে।

অন্যদিকে ফিলিস্তিনীরা আগামীকাল পর্যন্ত তাদের বাড়ীটা থাকবে কিনা জানে না। প্রাণ থাকবে কিনা সেটাও জানেনা। স্কুলটা থাকবে কিনা তাও জানেনা। রাত বিরাতে এসে তল্লাশী চালিয়ে ইজরায়েলী পুলিশ যাকে তাকে ধরে নিয়ে যায়। অল্পবয়সী শিশু হলেও কোনো রক্ষা নাই।

ফিলিস্তিনীদের সেনাবাহিনী কিংবা পুলিশ ফোর্স রাখারও পারমিশন নাই। ফিলিস্তিনী সিকিউরিটি ফোর্স নামে একটা বাহিনী আছে, তাদের ভারী কোনো অস্ত্র রাখার অনুমতি নাই। ইজরাইলের এর সাথে এক চুক্তিতে এটা মেনে নেয় ইয়াসির আরফাতের পিএলও। ফলে মাহমুদ আব্বাস নামের প্রেসিডেন্ট হলেও কাজে কোনো ক্ষমতা তার নাই।

Israil/ইজরাইল দখল করতে করতে ফিলিস্তিনকে এমনভাবে দখল করেছে- একপাশে গাযা উপত্যকা, অন্যপাশে পশ্চিম তীর। মাঝখানে Israil/ইজরাইল। ব্যাপারটা অনেকটা পূর্ব পাকিস্তান আর পশ্চিম পাকিস্তানের মত পশ্চিম তীর আর গাযা, মাঝখানে ভারতের মত ইজরায়েল। মনে করার সুবিধার্তে, গাযা হচ্ছে বাংলাদেশ, পশ্চিম তীর পাকিস্তান। মাঝখানে ভারত হচ্ছে Israil/ইজরাইল। (ভৌগোলিক অবস্থান বা ম্যাপ বুঝার সুবিধার্তে বললাম)।

Israil/ইজরায়েলীরা পৃথিবীর ১৬০টি দেশে প্রায় ভিসা ফ্রী ঘুরতে পারলেও ফিলিস্তিনীরা এক জায়গায় থেকে অন্য জায়গায় যেতে ইজরাইলের অনুমতি নিতে হয়। ফিলিস্তিনের গাযা উপত্যকা থেকে যদি কেউ ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে যেত চায়, তাহলে অনেকদিন আগে এপ্লাই করতে হয়। তাও ৯০% ক্ষেত্রে অনুমতি পাওয়া যায় না। জিজ্ঞাবাদে Israil/ইজরাইল সন্তুষ্ট হলেই কেবল অনুমতি দেয়। বেশীরভাগ গাযাবাসী কখনো আল আকসা মসজিদ চোখে দেখেনি। কারণ আল আকসা পশ্চিমতীরে।

পিএলও আর হামাস হচ্ছে ফিলিস্তিনের দুটি রাজনৈতিক দল। হামাস সংখ্যাগরিষ্ঠ গাযাতে আর পিএলও পশ্চিম তীরে। তবে ২০০৬ সালে পুরো ফিলিস্তিনের নির্বাচনে হামাস পিএলওর উপরে জয়লাভ করে ফিলিস্তিনের ক্ষমতায় আসে। ইসমাইল হানিয়া প্রধানমন্ত্রী হয়। মাহমুদ আব্বাস প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা দখল করে নেয়। অনেকটা পাকিস্তানের নির্বাচনের মত। শেখ মুজিবুর রহমান নির্বাচিত হয়েও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। ইসমাইল হানিয়ার ক্ষেত্রেও তাই ঘটে। এরপর থেকে ইসমাইল হানিয়া তার এলাকা গাযাতেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকেন। বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হয়ে যাওয়ার মত। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ফিলিস্তিন নিজেই তো স্বাধীন নয়।

মাহমুদ আব্বাসের পিএলও Israil/ইজরায়েলী সকল শর্ত মেনে ফিলিস্তিন তথা পশ্চিমতীরকে ডিমিলিটাইরাইজড করলেও গাযার হামাস সেটা মেনে নেয়নি। পশ্চিম তীরে Israil/ইজরায়েলী শর্ত অনুযায়ী কোনো সেনাবাহিনী নেই। সিকিউরিটি ফোর্স আছে, যাদের নামে মাত্র একটা পুলিশ ফোর্স আছে। যেটা আছে তাদেরও শর্ত হচ্ছে Israil/ইজরায়েলী পুলিশকে সাহায্য করতে হবে। তাদের কোনো ভারী অস্ত্র নেই। হাল্কা অস্ত্র যা আছে, সেটাও Israil/ইজরাইল এর দেয়া। ওদের গাড়ীও ইজরাইলের দেয়া। যা Israil/ইজরাইল সবসময় ট্র‍্যাক করে।

কোনো ফিলিস্তিনীকে জোর করে বেআইনিভাবে ধরে নিয়ে গেলেও ফিলিস্তিনী সিকিউরিটি ফোর্স কিছু করতে পারেনা। এজন্য পশ্চিম তীরের যেকোনো বাড়ীতে Israil/ইজরায়েলী পুলিশ চাইলে যেকোনো সময় তল্লাশী চালাতে পারে। আমরা যে পাথর ছুড়ার দৃশ্য দেখি, এগুলা বেশীরভাগই পশ্চিম তীরের। কারণ তাদের অস্ত্র রাখার অনুমতি নেই। ইচ্ছে হলেই যে ঘরবাড়ি থেকে বের করে দিয়ে দখল করে নেয়, সেটাও পশ্চিমতীরে। কারণ পশ্চিমতীর Israil/ইজরায়েলী অকিউপ্যাশনে। এখানকার বাসিন্দারা মোটামুটি চলাচলের স্বাধীনতা পেলেও ঘরবাড়ী কখন বেদখল হয়ে যাবে বলতে পারেনা। এতে ফাতাহ বা পিএলও কিছু করতে পারেনা।

অন্যদিকে হামাস শাসিত গাযা উপত্যকা ইজরাইলের কোনো শর্ত মানেনা। তাদের মিলিটারী আছে। তাদের অঞ্চলে Israil/ইজরায়েলী পুলিশ ঢুকতে পারেনা। তারা নিজেরাই সেখানকার নিরাপত্তা দেয়। তাদের আর্টিলারি ইউনিট আছে। তাদের কাছে ভারী অস্ত্র আছে। যার বেশীরভাগ তারা নিজেরাই তৈরী করে। এখানে Israil/ইজরায়েলী সেটেলাররা তো দূরের কথা, Israil/ইজরায়েলী পুলিশ, আর্মীও ঢুকতে পারেনা।

Israil/ইজরাইল এর শর্ত মেনে না নেয়ায় গাযা উপত্যকাকে Israil/ইজরাইল চারিদিক থেকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। গাযার দুইদিকে Israil/ইজরাইল, একদিকে মিশর আরেকদিকে সমুদ্র। তাদের উপর Israil/ইজরাইল ল্যান্ড, এয়ার এন্ড সী ব্লক দিয়ে রেখেছে। গাযা উপত্যকাকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জেল খানা। মিশর সীমান্তে আব্দেল ফাত্তাহ আল সিসি দেয়াল তুলে দিয়েছে। ফিলিস্তিনীদের চলাচলের জন্য মাটির নীচে সুড়ঙ্গ ছিল, সেগুলো সে বন্ধ করে দিয়েছে। মুহাম্মদ মুরসী ক্ষমতায় আসার পর যখন মিশর সীমান্ত ফিলিস্তিনীদের জন্য খুলে দেয়, তখন Israil/ইজরাইল মুরসীকে সবচেয়ে বড় থ্রেট হিসেবে নেয়।Israil/ইজরাইল, সৌদি ও আমিরাত জোট মুরসীকে হটিয়ে সিসিকে ক্ষমতায় আনে। সে সময়ে সিসিকে সবার আগে অভিনন্দন জানায় সৌদি আরব। যদিও ইজরাইলের উদ্দেশ্য আর তাদের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন, লক্ষ্য ছিল একই। কপাল পুড়ে ফিলিস্তিনীদের।
এরপর থেকেই ফিলিস্তীনের জন্য সেই সীমান্ত বন্ধ হয়ে যায়। সুড়ঙ্গ পথ ব্যবহারের জন্য মিশর সীমান্তে যে ঘরবাড়ি গুলো ছিল, বুলডোজার দিয়ে সেসব বাড়ীও ভেঙে দেয় মিশর।

হামাস শাসিত গাযায় শিক্ষার হার ৯৯%। Israil/ইজরায়েলী হামলায় ঘরবাড়ি ভেঙে গেলে সবার আগে তারা স্কুল গুলোকে ঠিক করে। তাদের একটা আন্তর্জাতিক মানের ইউনিভার্সিটি আছে। গাযায় একটা বিমানবন্দর ছিল, গাযা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট নামে, যা Israil/ইজরাইল ধ্বংস করে দেয়। পুরো ফিলিস্তিনে আর কোনো এয়ারপোর্ট নেই।

ফিলিস্তিনী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সাথে ইজরাইলের ফুল স্কেলে দুইবার যুদ্ধ হয়। এতে Israil/ইজরায়েলী আর্মীর ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। ২০১৪ সালের যুদ্ধে Israil/ইজরায়েলী সেনাদের ব্যাপক প্রাণহানি ঘটলে Israil/ইজরাইল পিছু হটে। জুলাইয়ের ৮ তারিখ থেকে আগস্টের ২৬ তারিখ পর্যন্ত স্থায়ী এই যুদ্ধে প্রায় ১শ Israil/ইজরায়েলী সেনা নিহত হয়, অপরদিকে দুই হাজার ফিলিস্তিনী শহীদ হয়। কিন্তু ইজরাইলের জন্য এটাও ছিল বিশাল ধাক্কা।

গাযা উপত্যকায় খাবার, নিত্যপ্রয়োজনীয় অষুধ সহ চোরাই পথে আনতে হয়। ইরান চোরাইপথে অস্ত্র আর কাতার টাকা দেয়। এর বাইরে তুরস্ক সমুদ্র সীমা আর Israil/ইজরায়েলী সীমা ব্যবহার করে জাহাজভর্তি খাবার, অষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য গাযায় পৌঁছে দেয়। একবার তুরস্কের একটা জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছিল Israil/ইজরাইল। সৌদি আরব সহ অন্যান্য আরবদেশ গুলো তাদের দানের একটা বড় অংশ ফিলিস্তিনে পাঠায়। তবে সেটা গাযায় নয় বরং পশ্চিমতীরে যায়।

Israil/ইজরাইল হামাসকে বার বার বলছে- তোমরা যদি আমাদের শর্ত মেনে নাও, সেনাবাহিনী বিলুপ্ত করো, অস্ত্র সমর্পণ করো, নিরস্ত্র হও তাহলে তোমাদের অবরোধ আমরা তুলে নেব। তোমরা যেখানে চাও যেতে পারবে। আমাদের এখানে চাকরী করতে পারবে। যা কিনতে চাও, তা কিনতে পারবে। মাহমুদ আব্বাসের পিএলও পশ্চিমতীরে এই শর্ত মেনে নিলেও ইসমাইল হানিয়া আর খালিদ মিশালের গাযা উপত্যকার হামাস সেটা মেনে নেয়নি। যার কারণে তারা অবরুদ্ধ। এই কারণে পশ্চিমতীরের ফিলিস্তিনীরা Israil/ইজরাইল এর দিকে ঢিল আর পাথর ছুঁড়লেও গাযা উপত্যকার ফিলিস্তিনীরা অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করে, ইজরাইলের দিকে মিসাইল ছুঁড়ে।

যদিও Israil/ইজরায়েলী অত্যাধুনিক ডিফেন্স সিস্টেম আইরন ডোম ফিলিস্তিনীদের এই মিসাইল আকাশে থাকতেই ধ্বংস করে।
তবে এইবার ইজরাইলের আইরন ডোম হামাসের মিসাইল গুলো সব আটকে দিতে সক্ষম হয়নি। অনেক গুলো মিসাইল Israil/ইজরাইল এর নানা শহরের রাস্তা এবং ভবনে আঘাত হেনেছে। এতে Israil/ইজরাইল সহ তার মিত্ররা বেশ অবাক হয়েছে।
যদিও এ ব্যাপারে ইসমাইল হানিয়ে গত বছর বলেছিলেন। আইরন ডোম কতটা আঘাত ঠেকাতে সক্ষম সেটা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে। কারণ হামাসের মিসাইল গুলো কোনো অত্যাধুনিক মিসাইল নয়। এগুলো তারা পাইপ এবং অন্যান্য পরিত্যক্ত জিনিসপত্র থেকে বানায়। এই হ্যান্ডমেইড রকেট গুলো আঘাত হানার পর আইরন ডোম কতটা সেফ সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

প্রায় চার বিলিয়ন ডলার বার্ষিক সামরিক সহায়তা, বিলিয়ন ডলারের শিক্ষা এবং রিসার্চের ইনভেস্টমেন্ট, প্রায় ভিসা ফ্রী ট্রাভেল, নামী ইউনিভার্সিটিতে স্কলারশিপ, আমেরিকা, কানাডা, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপের একনিষ্ঠ সাপোর্ট এত কিছু পাওয়া ইজরাইলের সাথে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনের তুলনা করার সময় আপনারা যারা “Israil/ইজরাইল জ্ঞান বিজ্ঞানে কত এগিয়েছে অথচ ফিলিস্তিন জ্ঞান বিজ্ঞানে আগায় নাই কেন?” বলেন, আপনাদের লজ্জা করে না?

লিখেছেন: তাহমিদুল ইসলাম।

আইডিসির সাথে যোগ  য়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন।

 

আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে বিস্তারিত জানতে  লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।

আইডিসি  মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আপনি আইডিসি  মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।

Islami Dawah Center Cover photo

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টারকে সচল রাখতে সাহায্য করুন!

 

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার ১টি অলাভজনক দাওয়াহ প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠানের ইসলামিক ব্লগটি বর্তমানে ২০,০০০+ মানুষ প্রতিমাসে পড়ে, দিন দিন আরো অনেক বেশি বেড়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।

বর্তমানে মাদরাসা এবং ব্লগ প্রজেক্টের বিভিন্ন খাতে (ওয়েবসাইট হোস্টিং, CDN,কনটেন্ট রাইটিং, প্রুফ রিডিং, ব্লগ পোস্টিং, ডিজাইন এবং মার্কেটিং) মাসে গড়ে ৫০,০০০+ টাকা খরচ হয়, যা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। সেকারনে, এই বিশাল ধর্মীয় কাজকে সামনে এগিয়ে নিতে সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে আপনাদের দোয়া এবং আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন, এমন কিছু ভাই ও বোন ( ৩১৩ জন ) দরকার, যারা আইডিসিকে নির্দিষ্ট অংকের সাহায্য করবেন, তাহলে এই পথ চলা অনেক সহজ হয়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।

যারা এককালিন, মাসিক অথবা বাৎসরিক সাহায্য করবেন, তারা আইডিসির মুল টিমের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন, ইংশাআল্লাহ।

আইডিসির ঠিকানাঃ খঃ ৬৫/৫, শাহজাদপুর, গুলশান, ঢাকা -১২১২, মোবাইলঃ +88 01609 820 094, +88 01716 988 953 ( নগদ/বিকাশ পার্সোনাল )

ইমেলঃ info@islamidawahcenter.com, info@idcmadrasah.com, ওয়েব: www.islamidawahcenter.com, www.idcmadrasah.com সার্বিক তত্ত্বাবধানেঃ হাঃ মুফতি মাহবুব ওসমানী ( এম. এ. ইন ইংলিশ )