zionism/জায়োনিজম

সম্ভবত ১৯৪৫ সালের পরে নাৎসি বাহিনীদের নেতা এডলফ হিটলার একটি কথা বলেছিলেন:
”আমি চাইলে সব ইহুদিদের হত্যা করতে পারতাম। কিন্তু কিছু ইহুদি বাচিয়ে রেখেছি এই জন্য যে, যাতে পৃথিবীর মানুষ বুঝতে পারে আমি ইহুদি হত্যায় কেন মেতেছিলাম।”
আবার, নাৎসি বাহিনীর প্রধান জেনারেল হারমান জিউরিং যখন জার্মানি ত্যাগ করেন তখন তিনি ইহুদিদের কাছে ধরা পড়ে যান। তাকে হত্যার পূর্বে তার শেষ ইচ্ছা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ” আমি ইহুদি ধর্ম গ্রহণ করতে চাই। ” প্রতুত্তরে, তাকে বলা হলো তুমি zionism/জায়োনিজম গ্রহণ করলেও তোমার মৃত্যু অনিবার্য। কিন্তু, জেনারেল হারমান বলেন, ” আমি আমার মৃত্যুর আগে অন্তত আরেকটি ইহুদির মৃত্যু উপভোগ করতে চাই ”
কেনই বা একজন জার্মান খ্রিস্টান নাগরিক শুধুমাত্র একটি ধর্মের মানুষদের হত্যা করতে চেয়েছিল যেখনে কিনা বর্তমানে ইসরায়েলের সাথে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে প্যালেস্টাইনের সাথে; বাংলায় যাকে আমরা চিনি ফিলিস্তিন হিসেবে?
আর ইসরায়েল মানেই কি এরা শুধুমাত্র মুসলিম ফিলিস্তিনিদের সাথে সমস্যা?
ইসরায়েল রাষ্ট্র সংগঠিত হওয়ার পিছনে রয়েছে অনেক বিশাল ইতিহাস; তবে খুবই কম বাক্যে সেটি বুঝানোর চেষ্টা করব।
সালটা ছিল ১৮৯৭। এইসময় সেসময়ের বিখ্যাত ২জন ইহুদি Theodor Herzl ও Max Nordau প্রতিষ্ঠা করেন World Zionist Organization (WZO)। আর এই ইহুদিরাই মূলত পরবর্তীতে ১ম বিশ্বযুদ্ধের মদতদাতা হিসেবে কাজ করে। ১ম বিশ্বযুদ্ধের শুরুর দিকে ১৯১৪ থেকে ১৯১৬ সাল পর্যন্ত জার্মানি মোটামুটি নিশ্চিত ছিল তারা সহজেই জিতে যাবে। ব্রিটেনকে জার্মানি শান্তি আলোচনায় আসার সুযোগ করে দেয় এবং ব্রিটিশরাও খুব সহজে মেনে নেয় এটি। তারাও শান্তি আলোচানায় আসার জন্য প্রস্তুত হয়। কিন্তু এই ১৯১৬ সলের শান্তি আলোচনা পরবর্তীতে হয় ১৯১৯ সালে প্যারিস শান্তি সম্মেলনে। তখনকার সময়ে জার্মানে কিছু ইহুদি বা জায়োনিস্ট ছিল; যারা সেই ১৯১৬ সালের সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির সময়ে ব্রিটেনকে এক মহাশক্তি হিসেবে জাগিয়েছিল। তারা ব্রিটিশদের আশ্বাস দেয় শান্তি চুক্তিতে যাবার প্রয়োজন নেই। কিন্তু তাদেরও এই ক্ষেত্রে অনেক বিশাল একটা শর্ত ছিল। সেসময়ই মোটামুটি ঘটে যায় এখনকার ফিলিস্তিনি মুসলিমদের ভাগ্য। কারণ জার্মান জায়োনিস্টরা ব্রিটিশদের কাছে ফিলিস্তিনের বিনিময়ে জার্মানদের বিরুদ্ধে যাওয়ার শর্ত উপস্থাপন করে। ব্রিটিশরাও কোনো কিছু না বুঝেই মেনে নেয় সেই শর্ত। ব্যস! শুরু হয়ে গেল আসল টার্নিং পয়েন্ট!
জায়েনিস্টরা তাদের মিডিয়ার মাধ্যমে পুরো বিশ্বে ছড়াতে থাকে জার্মানবিরোধী সংবাদ। মানুষের সামনে তারা এসব এমনভাবে উপস্থাপন করে যেন জার্মানরা অত্যাচারী, জার্মানরা জঙ্গি। অথচ: এই জার্মানরাই প্রথম ব্রিটিশদের শান্তিচুক্তিতে আসার প্রস্তাব দেয়; যেখানে তারা খুব সহজেই জিতে যাচ্ছিল। ফলস্বরূপ ১৯১৯ সালের প্যারিস শান্তি চুক্তিতে ১১৭ জন ইহুদি চেয়ে বসে ফিলিস্তিনের চাবি এবং জার্মান সম্রাটও বুঝতে পারে কেনই বা তারা এমন করেছিল। সেখান থেকেই সেসময়ের ফিলিস্তিন হয়ে উঠে আজকের এই ইসরায়েল।
এইজন্যই বোধ হয় হিটলার উপরের সেই উক্তিটি করেছিলেন। জায়েনিস্টরা কিভাবে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তিকে হার মানাতে পারে এটাই তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। এইজন্যই ইসরায়েলকে খুব সহজে জাতিসংঘ কিছু বলতে পারে না; কারণ সেই প্যারিস শান্তি চুক্তি। তারা সংখ্যায় নগন্য হলেও বিশ্বে তাদের প্রভাব অনেক এবং অনেক বেশি। যেটা তাদের অন্য এক ইতিহাসের কারণে হয়েছে।

পৃথিবীর ইতিহাসে সম্ভবত ইহুদিরাই সবেচেয়ে বেশি নির্যাতিত, নিপীড়িত এবং বিরক্তিকর এক জাতি। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় ইহুদিরা নিজেদের কারণেই নানা সময়ে নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছে। ইহুদিদের একটি স্বভাব হলো তাদের বাইরে অর্থাৎ ইহুদিদের বাইরের কেউ তাদের কোনোভাবে অনুগ্রহ করলে সেটি তারা ভুলে যায়। অথবা তারা অন্যের মাধ্যমে যে অনুগ্রহ পেয়েছে তা তাদের প্রাপ্য বলে ধরে নেয়। কিন্তু নিজেরা কোনো জায়গা থেকে কোনোভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে থাকলে তার প্রতিশোধ না নেওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নিতে চায় না। পবিত্র কুরআনে ইহুদিদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় বনি ইসরাইল নামে।

zionism/জায়োনিজম বা জায়নবাদ কী?

zionism/জায়োনিজম হলো এক ধরণের ভাবাদর্শ এবং জাতীয়দাবাদি আন্দোলন। zionism/জায়োনিজম বা জায়নবাদ নামের এই ভাবাদর্শ যা ইহুদি শ্রেষ্ঠত্ববাদকে লালন করে সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে সমর্থন করে। লেভাণ্টের একটি বিস্তৃত জায়গা নিয়ে ইহুদিদের জন্য একটি নিজস্ব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা zionism/জায়োনিজম বা জায়নবাদি জাতীয়তাবাদি আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য। zionism/জায়োনিজম (Zionism) শব্দটি এসেছে হিব্রু জায়ন (zion) শব্দ থেকে। হিব্রু ভাষার শব্দ ‘জায়ন’ দিয়ে বোঝানো হয় জেরুসালেম শহরকে। তবে জায়ন হলো মূলত জেরুসালেমের একটি পাহাড়ের নাম। পাহাড়টি মাউন্ট জায়ন (Mount Hill) বা জায়ন’স হিল (Zion’s Hill) নামে পরিচিত।

সত্যিকার অর্থে zionism/জায়োনিজম একক কোনো মতবাদ, ভাবাদর্শ বা জাতীয়তাবাদ নয়। বিভিন্ন রকমের zionism/জায়োনিজম এর উপস্থিতি চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা। সাধারণ zionism/জায়োনিজম বা জায়নবাদ, রাজনৈতিক zionism/জায়োনিজম বা জায়নবাদ, ধর্মীয় zionism/জায়োনিজম বা জায়নবাদ, শ্রমিক বা সমাজতান্ত্রিক zionism/জায়োনিজম বা জায়নবাদ (বামপন্থী), সংশোধনবাদি zionism/জায়োনিজম বা জায়নবাদ, সবুজ zionism/জায়োনিজম বা জায়নবাদ ইত্যাদি। বিশ্বজড়ে যে zionism/জায়োনিজম বা জায়নবাদ নিয়ে চর্চা হচ্ছে তা হলো রাজনৈতিক zionism/জায়োনিজম বা জায়নবাদ। সাধারণভাবে চর্চিত এই zionism/জায়োনিজম বা জায়নবাদ অর্থ হলো জায়ন পাহাড়কে কেন্দ্র করে বা কেনানের আশেপাশে বিস্তির্ণ এলাকা নিয়ে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।

zionism/জায়োনিজম বা জায়নবাদ হলো এমন একটি রাজনৈতিক ভাবাদর্শ যা গড়ে উঠেছে ইহুদিবাদ বা জুদাইজম (Judaism) থেকে। zionism/জায়োনিজম বা জায়নবাদে বিশ্বাসীরা চায় নিজেদের জন্য এমন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে, যেখানে তারাই হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাঁরা কোথাও সংখ্যলঘু হয়ে থাকতে চায় না।

ইহুদিদের ধর্ম, জুদাইজম-শ্রেষ্ঠত্ব-মতবাদ, সংখ্যালঘু হয়ে না থাকার চেয়ে সংখ্যাগুরু হয়ে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা, ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় সম্পর্ক বিবেচনায় জায়ন পাহাড় বা জেরুসালেমের ভূমিতে বিচরণের প্রত্যাশা, প্রতিজ্ঞা ইত্যাদি মিলে যে বিশেষ রাজনৈতিক ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকে zionism/জায়োনিজম বা জায়নবাদ বলে।

জায়োনিস্ট কারা?

সকল ইহুদি জায়োনিস্ট (Zionist) বলে বিবেচিত হয় না। যেসব ইহুদি ইহুদি-শ্রেষ্ঠত্ববাদকে ও zionism/জায়োনিজম কে ধারণ করে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করেছে এবং প্রতিষ্ঠিত ইহুদি রাষ্ট্রকে রক্ষা ও রাষ্ট্রের আয়তন বৃদ্ধি করার জন্য চেষ্টা করে চলেছে তাদেরকে জায়োনিস্ট বলা হয়।

থিওডর হার্জল এবং ওয়ার্ল্ড জায়োনিস্ট অরগানাইজেশন (Theodor Herzl & WZO)

আধুনিক zionism/জায়োনিজম এর জনক হলেন থিওডর হার্জল। থিওডর হার্জল ১৮৬০ সালের ২ মে তৎকালীন অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্যের হাঙ্গেরি রাজ্যের পেস্ট শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন সাংবাদিক, লেখক এবং রাজিনীতিবিদ। হার্জল ১৮৯৭ সালে ওয়ার্ল্ড জায়োনিস্ট অরগানাইজেশন (World Zionist Organization – WZO) নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। এই ইহুদিবাদি সংস্থার মাধ্যমে তিনি এবং তার সহযোগীরা তাঁদের নিজেদের ভাবাদর্শের প্রচার করতেন এবং ফিলিস্তিনে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচার চালাতেন। থিওডর হার্জলের অন্যতম প্রধান সহকর্মি ছিলেন ম্যাক্স সিমন নরডাউ (Max Simon Nordau)। নরডাউও যুক্ত ছিলেন ওয়ার্ল্ড জায়োনিস্ট অরগানাইজেশন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে।

যদিও ফিলিস্তিনে ইসরায়েল নামে ইহুদিদের নিজস্ব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পূর্বেই থিওডর হার্জল মারা যান, তবুও ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠাতা তাকেই ধরা হয়। ইসরায়েলের জনক থিওডর হার্জল।

zionism/জায়োনিজম বা জায়োনবাদের ঐতিহাসিক পটভূমি

হিব্রু  তানাখে বর্ণিত বাণী অনুযায়ী ইহুদিরা মনে করে যে, কেনান (লেভান্ট) অঞ্চল ঈশ্বর তাদেরকে দান করেছেন। এই লেভান্ট বা কেনান অঞ্চলকে ইহুদিরা প্রতিশ্রুত দেশ (Promised Land) বলে মনে করে। এই অঞ্চলটি আবার খ্রিস্টান ও মুসলমানদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ।

কেনান থেকে ইহুদিদের নির্বাসন শুরু হয়েছিল ৫৮৬ খ্রিস্টপূর্ব থেকে। তখন সমগ্র কেনান তথা লেভান্টের শাসনক্ষমতা ব্যাবিলনিয়দের হাতে। নেবুচাদনেজার ছিলেন তৎকালীন ব্যবিলনিয় রাজা। রাজা নেবুচাদনেজারের নির্দেশে মাউন্ট টেম্পলে অবস্থিত ইহুদিদের ফার্স্ট টেম্পল ধ্বংস করা হয়। এটিও ৫৮৬ খ্রিস্টপুর্বেরই ঘটনা। তখন ইহুদিদের অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন হয়ে যায়। ব্যাবিলনিয় শাসনামলে ইহুদিরা খুব একটা ভালো ছিল না। তদেরকে না খেয়ে ও পরিশ্রম করে করে মরতে হতো, এরকম শোনা যায়।

পরবর্তিতে প্রথম শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজ্যের সময় রোমানদের সাথেও সম্পর্কও ভালো যায় না। দ্বিতীয় শতাব্দীতে রোমানদের সাথে ইহুদিদের দ্বিতীয় যুদ্ধের (বার কোখবা যুদ্ধ) পর ইহুদিদের তাদের জুদেয়া (Judea) প্রদেশ থেকে, বিশেষ করে জেরুসালেমে চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। এর পূর্বে যখন লেভান্ট বা কেনানের শাসনক্ষমতা ব্যাবিলনিয়দের (পারস্য) হাতে ছিল তখন থেকেই ইহুদি নির্বাসন শুরু হলেও, তখন ইহুদিদের এই অঞ্চলে নিষিদ্ধ করা হয়নি। রোমান-ইহুদি দ্বিতীয় যুদ্ধে ইহুদিরা পরাজিত হলে জেরুসালেম ছাড়তে হয় সকল ইহুদিকে। সেই যুদ্ধে সেকেন্ড টেম্পলও ধ্বংস হয়। এটি ১১৫ থেকে ১১৭ সালের কথা।

ইহুদিরা ইউরোপে থাকা শুরু করে। কেউ কেউ সেখানে বিচ্ছিন্নভাবে থাকে আবার কেউ কেউ গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে থাকে। খেয়ে থাকুক, না খেয়ে থাকুক, অন্যের দাস হয়ে থাকুক অথবা অন্য যে ভাবেই তারা দিন পার করুক না কেন তাদের মধ্যে থেকে কখনোই ইহুদিবাদ মুছে যায়নি। তারা সুযোগ পেলেই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করতে চাইত। তাদেরকে বিভিন্ন সময়ে অকৃতজ্ঞ থাকতে দেখা গেছে। ইতিহাসবিদেরা মনে করেন, ইহুদিরা চারিত্রিকভাবে কখনোই ভালো ছিল না, যার কারণে নানান সময়ে শাসকদের রোষানলে পড়তে হয়েছে। ইহুদিরা সংখ্যায় কম হয়েও কৌশলে বিভিন্ন জায়গায় প্রবেশ করে বা প্রবেশের সুযোগ পেলে সেখানেরই ক্ষতি করে বের হতো কিংবা ওইসব নিজেদের করে নিত। আড়াইহাজার বছরেরও বেশি সময়ের ইতিহাস এই ইহুদিদের। zionism/জায়োনিজম কে ফোকাস করা এই নিবন্ধে তাঁদের আড়াইহাজার বছরের সকল ইতিহাস ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়।

বিভিন্ন ঘটনা, প্রতিঘটনা, সম্মেলন, পরামর্শ, সিদ্ধান্ত, পুনঃসিদ্ধান্ত ইত্যাদির মধ্যদিয়ে সময় অতিবাহিত হতে হতে ১৮৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ওয়ার্ল্ড জায়োনিস্ট অরগানাইজেশন। ইহুদিরা তখন খুবই চাইছিল নিজেদের একটি দেশ হোক। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের দেশ গঠনের প্রস্তাব আসে। কেউ কেউ সেই সব প্রস্তাবে সাড়া প্রদান করলেও কারও প্রস্তাব সাফল্যের মুখ দেখেনি। পরবর্তিতে থিওডর হার্জল বিষয়টি নিয়ে ভাবেন। হার্জল একটি ইহুদি রাষ্ট্রের রূপরেখা তুলে ধরেন এবং প্রচারণাও করতে থাকেন। তখন সেটি বেশ গুরুত্বের সাথে নেয় সবাই। বিশেষ করে তখনকার রাব্বি এবং সেফার্ডিরা হার্জলের এই প্রস্তাবকে খুব প্রশংসার চোখেই দেখেছিলেন। ইহুদি পণ্ডিতদের বলা হয় রাব্বি। এবং পর্তুগাল ও স্পেনে বসবাসরত ইহুদি ধর্মাবলম্বিদের বলা হতো সেফার্ডি।

থিওডর হার্জল চেয়েছিলেন আর্জেন্টিনা বা ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্রের জন্ম দিতে। আর্জেন্টিনাকে পছন্দ করার কারণ ছিল এর বিস্তৃত এবং বিচ্ছিন্ন জনবহুল অঞ্চল এবং নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু। কিন্তু ফিলিস্তিনে রাষ্ট্র গড়ায় তিনি অধিক আগ্রহী ছিলেন, কারণ ফিলিস্তিনের সাথে তাদের ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় উভয় সম্পর্কই রয়েছে। যেহেতু ধর্মগ্রন্থে বলা হয়েছে কেনান (লেভান্ট) অঞ্চল স্রষ্টা তাদেরকেই দান করেছেন এবং ওই অঞ্চলকেই তাদের প্রতিশ্রুত দেশ মনে করে সেহেতু আর্জেন্টিনার চেয়ে ফিলিস্তিনকেই বেছে নেয় ইহুদিরা। জায়ন পাহাড় কিংবা জেরুসালেমের ভূমিতে তাঁরা পুনরায় বিচরণ করতে চাইল, সেখানে প্রতিষ্ঠা করতে চাইল নিজেদের সার্বভৌম রাষ্ট্র। এভাবেই zionism/জায়োনিজম বা জায়নবাদের প্রতিষ্ঠা হয়েছে। থিওডর হার্জলকে বলা হয় zionism/জায়োনিজম তথা ইহুদি রাষ্ট্রের প্রবক্তা। ফিলিস্তিনের জমিতে জেরুসালেমকে ঘিরে যে ইসরায়েল নামের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেই ইসরায়ল রাষ্ট্রের জনক বলা হয় থিওডর হার্জলকে।

zionism/জায়োনিজম ও জুদাইজম এক নয়

ইহুদি এবং ইহুদিবাদ (Judaism) আর zionism/জায়োনিজম এক নয়। zionism/জায়োনিজম হলো ইহুদি ধর্মের অনুসারীদের একটি বিশেষ গোষ্ঠী যারা রাজনৈতিকভাবে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে ও অন্যের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে মরিয়া হয়ে আছে। আর অন্যদিকে জুদাইজম হলো ইহুদি ধর্মের ধর্মীয় শান্তিপ্রিয় মতবাদ। zionism/জায়োনিজম ও জুদাইজম সম্পুর্ণ ভিন্ন বা আলাদা। যারা zionism/জায়োনিজম কে ধারণ করে তারা সকলেই ইহুদি কিন্তু সকল ইহুদি zionism/জায়োনিজম সমর্থন করে না। আবার এমনো জায়োনিস্ট আছে যারা পুরোপুরিভাব ইহুদিবাদে (জুদাইজম) বিশ্বাসী নয়। নাস্তিক জায়োনিস্টের সংখ্যাও কম নয়। নাস্তিক জায়োনিস্টদের কাছে ধর্ম বিশ্বাস কিছু না হলেও এরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাব বিস্তার করতে চায়।

zionism/জায়োনিজম এবং জুদাইজম নিয়ে যা কিছুই বলা হোক না কেন, আপনি যদি বিশ্বের খবরাখবর রাখেন তাহলেই বুঝতে পারবেন এই দুইটি কখনোই এক নয়। zionism/জায়োনিজম বা জায়নবাদকে সন্ত্রাসবাদ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। স্বয়ং ইহুদিরাই, যারা জায়োনিস্ট নন, তারাই স্পষ্ট করে বলছে যে, zionism/জায়োনিজম হলো রাষ্ট্রীয়ভাবে সঙ্ঘবদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। পৃথিবীতে অন্যতম বর্ণবাদি হলো জায়োনিস্টরা।

 

আইডিসির সাথে যোগ  য়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন।

 

আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে বিস্তারিত জানতে  লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।

আইডিসি  মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আপনি আইডিসি  মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।

Islami Dawah Center Cover photo

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টারকে সচল রাখতে সাহায্য করুন!

 

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার ১টি অলাভজনক দাওয়াহ প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠানের ইসলামিক ব্লগটি বর্তমানে ২০,০০০+ মানুষ প্রতিমাসে পড়ে, দিন দিন আরো অনেক বেশি বেড়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।

বর্তমানে মাদরাসা এবং ব্লগ প্রজেক্টের বিভিন্ন খাতে (ওয়েবসাইট হোস্টিং, CDN,কনটেন্ট রাইটিং, প্রুফ রিডিং, ব্লগ পোস্টিং, ডিজাইন এবং মার্কেটিং) মাসে গড়ে ৫০,০০০+ টাকা খরচ হয়, যা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। সেকারনে, এই বিশাল ধর্মীয় কাজকে সামনে এগিয়ে নিতে সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে আপনাদের দোয়া এবং আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন, এমন কিছু ভাই ও বোন ( ৩১৩ জন ) দরকার, যারা আইডিসিকে নির্দিষ্ট অংকের সাহায্য করবেন, তাহলে এই পথ চলা অনেক সহজ হয়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।

যারা এককালিন, মাসিক অথবা বাৎসরিক সাহায্য করবেন, তারা আইডিসির মুল টিমের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন, ইংশাআল্লাহ।

আইডিসির ঠিকানাঃ খঃ ৬৫/৫, শাহজাদপুর, গুলশান, ঢাকা -১২১২, মোবাইলঃ +88 01609 820 094, +88 01716 988 953 ( নগদ/বিকাশ পার্সোনাল )

ইমেলঃ info@islamidawahcenter.com, info@idcmadrasah.com, ওয়েব: www.islamidawahcenter.com, www.idcmadrasah.com সার্বিক তত্ত্বাবধানেঃ হাঃ মুফতি মাহবুব ওসমানী ( এম. এ. ইন ইংলিশ )