The story of the six women mentioned in the Quran

The story of the six women mentioned in the Quran -কুরআনে উল্লেখিত ছয় নারীর গল্প

তাদের কাহিনীতে বুদ্ধিমানদের জন্য রয়েছে প্রচুর শিক্ষণীয় বিষয়, এটা কোন মনগড়া কথা নয়, কিন্তু যারা বিশ্বাস স্থাপন করে তাদের জন্যে পূর্বেকার কালামের সমর্থন এবং প্রত্যেক বস্তুর বিবরণ রহমত ও হেদায়েত।

(সূরা ইউসুফ, আয়াত: ১১১)

কুরআনে বর্ণিত লোকদের জীবনী থেকে আমরা আমাদের জীবনের জন্য মূল্যবান শিক্ষা অর্জন করতে পারি। পবিত্র এই গ্রন্থে বিশ্ববাসীর জন্য নৈতিক পথ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সাথে সাথে উদাহরণ হিসেবে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনাও প্রসঙ্গক্রমে এখানে আলোচনা করা হয়েছে।

কুরআনে বর্ণিত নারীদের শুধু ঐতিহাসিক গুরুত্বের কারণেই আলোচনা করা হয়নি বরং নির্দিষ্ট শিক্ষা প্রদান করার উদ্দেশ্যে তাদের আলোচনা কুরআন কারীমে আনা হয়েছে যাতে তাদের কাহিনী থেকে সকল মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। কাউকে তাদের কাজের জন্য মানবতার কাছে অনুকরণীয় আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, আবার কারো কাজ থেকে দূরে থাকার জন্য সতর্কতার জন্য তাদের আলোচনা করা হয়েছে।

পবিত্র কুর’আনে মোট ২৪ জন নারীর কাহিনী আলোচনা করা হয়েছে। এখানে কুর’আনে আলোচিত সকল নারীদের মধ্য থেকে বিখ্যাত ছয়জন নারী সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।

হাওয়া (আ.)
কুরআন কারীমে হাওয়া (আ.) কে তার নামে উল্লেখ করা হয়নি বরং তাকে ‘আদমের স্ত্রী’ হিসেবে উল্লেখ করে তার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ কর্তৃক প্রথম নারী হিসেবে তৈরি হওয়ার পর, প্রথম মানুষ আদম (আ.) এর স্ত্রী হিসেবে তার সাথেই তিনি জান্নাতে বসবাস করতে থাকেন।

শয়তানের প্ররোচনায় প্রতারিত হয়ে তারা আল্লাহর নিষেধ করা গাছের ফল খেয়ে ফেলেন। আল্লাহর নিষেধ অমান্য করায় তাদেরকে জান্নাত থেকে বহিস্কার করে পৃথিবীতে পাঠানো হয়। তারা তাদের গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকেন। কু্র’আনে তাদের ক্ষমা প্রার্থনার যে দোয়াটি উল্লেখ করা হয়েছে,

তারা উভয়ে বলল,

“হে আমাদের পালনকর্তা আমরা নিজেদের প্রতি জুলম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন, তবে আমরা অবশ্যই অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যাব।” (সূরা আরাফ, আয়াত: ২৩)

হাওয়া (আ.) হলেন মানুষের মধ্যে আশার প্রতীক। সার্বিকভাবে তার চরিত্র ক্ষমা প্রার্থনার গুরুত্ব এবং পাপে পতিত মানুষের জন্য পাপ থেকে মুক্তির আশাকে প্রকাশ করেছে। যে সবসময় তার গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে এবং আল্লাহর কাছে অনবরত তার গুনাহ মাফের জন্য ক্ষমা চাইতে থাকে, আল্লাহ তার প্রার্থনা আবশ্যিকভাবেই কবুল করবেন। হযরত হাওয়া (আ.) এর কাহিনী থেকে আমরা এই শিক্ষাই গ্রহণ করতে পারি।

মরিয়ম (আ.)
তিনিই একমাত্র নারী, যাকে কুরআনে তার নাম উল্লেখ করেই সম্বোধন করা হয়েছে। তার চরিত্র পূর্ণ নৈতিকতা ও পবিত্রতার প্রতীক এবং ইসলামের দৃষ্টিতে তিনি উচ্চতর মর্যাদার অধিকারী একজন নারী। তার সম্মানার্থে আল্লাহ পবিত্র কুরআন কারীমের একটি পূর্ণ সূরারই নামকরণ করেছেন।

কুরআন কারীমে তার সম্পর্কে বলা হয়েছে,

ফেরেশতা বলল, হে মারইয়াম!, আল্লাহ তোমাকে পছন্দ করেছেন এবং তোমাকে পবিত্র পরিচ্ছন্ন করে দিয়েছেন। আর তোমাকে বিশ্ব নারী সমাজের উর্ধ্বে মনোনীত করেছেন। (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ৪২)

শৈশব থেকেই মরিয়ম (আ.) আল্লাহর ইবাদতে নিজেকে উৎসর্গ করেন। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর, আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন ফেরেশতা এসে তাকে কোনপ্রকার পুরুষের সংশ্লিষ্টতা ছাড়াই এক পবিত্র শিশুর জন্ম দেওয়ার সুসংবাদ দান করে। পরবর্তীতে তিনি আল্লাহর রাসূল হযরত ঈসা (আ.) কে জন্মদান করেন। ঈসা (আ.) এর উর্দ্ধারোহনের কয়েক বছর পর তিনি স্বাভাবিকভাবেই ইন্তেকাল করেন। তার চারিত্রিক শুদ্ধতা ও পবিত্রতার জন্য তিনি সকল নারীদের জন্যই এক অনুকরণীয় আদর্শ।

মুসা (আ.) এর মা
মিসরে অবস্থানকারী বনী ইসরাইলীদের প্রতি মিসরের শাসক ফেরআউনের নির্মম নির্যাতনের সমকালীন সময়ে হযরত মুসা (আ.) জন্মগ্রহণ করেন। এমন এক সময়ে মুসা (আ.) এর মা তাকে মিসরে জন্মদান করেন, যখন ফেরাউন বনী ইসরাইলীদের সকল পূত্র সন্তানকে হত্যার আদেশ জারি করেছিল।

এমন দুঃসময়ে আল্লাহ মুসা (আ.) এর মাকে ওহী করেন। হযরত মুসা (আ.) এর মা আল্লাহর ওহীর উপর আস্থা স্থাপন করে আল্লাহর নির্দেশনা অনুসারে কাজ করেন। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে,

আমি মূসা-জননীকে আদেশ পাঠালাম যে, তাকে স্তন্য দান করতে থাক। অতঃপর যখন তুমি তার সম্পর্কে বিপদের আশংকা কর, তখন তাকে নদীতে নিক্ষেপ কর এবং ভয় করো না, দুঃখও করো না। আমি অবশ্যই তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব এবং তাকে পয়গম্বরগণের একজন করব। (সূরা আল-ক্বাসাস, আয়াত: ৭)

মুসা (আ.) এর মাতা আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে তাকে নদীতে ভাসিয়ে দেন এবং আল্লাহ পরবর্তীতে তার ওয়াদামত মুসা (আ.) কে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেন। আল্লাহর প্রতি চরম বিশ্বাসের শিক্ষা আমরা তার এই কাজ থেকে গ্রহণ করতে পারি।

সাবার রানী বিলকিস
হযরত সুলাইমান (আ.) সমকালীন আরবের দক্ষিনের প্রাচীন রাজ্য সাবার রানী হিসেবে তাকে উল্লেখ করা হয়েছে। কুরআনে তাকে প্রতিপত্তিশালী ও প্রজ্ঞাবান শাসক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত সুলাইমান (আ.) তাকে ইসলাম গ্রহণের জন্য আহবান করেছিলেন। তার উপদেষ্টাদের উপদেশ উপেক্ষা করে তিনি নিজে সুলাইমান (আ.) এর বানীর সত্যতা পরীক্ষা করেন এবং পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণ করেন। কুরআনে বলা হয়েছে,

সে (সুলায়মান) বললো, তার (বিলকীসের) সামনে তার সিংহাসনের আকার-আকৃতি বদলিয়ে দাও, দেখব সে সঠিক বুঝতে পারে, না সে তাদের অন্তর্ভুক্ত, যাদের দিশা নেই? অতঃপর যখন সে এসে গেল, তখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, তোমার সিংহাসন কি এরূপই? সে বলল, মনে হয় এটা সেটাই। আমরা পূর্বেই সমস্ত অবগত হয়েছি এবং আমরা আজ্ঞাবহও হয়ে গেছি। (সূরা নামল, আয়াত: ৪১, ৪২)

শিরক ও অবিশ্বাসের ঘন অন্ধকার থেকে রানী বিলকিসের তাওহীদের শিক্ষা অর্জনের যোগ্যতা থেকে আমরা সত্যকে গ্রহণ করে নেওয়ার মানসিকতার শিক্ষা অর্জনের অনুপ্রেরণা লাভ করতে পারি।

নূহ (আ.) এর স্ত্রী ও লুত (আ.) এর স্ত্রীঃ
পবিত্র কুর’আনে আল্লাহ শুধু তার প্রতি বিশ্বাসী নারীদের কথাই উল্লেখ করেন নি বরং তাকে অবিশ্বাসকারী ও তার অবাধ্য নারীদের কথাও উল্লেখ করেছেন আমাদের শিক্ষার জন্য।

হযরত নুহ (আ.) এর স্ত্রী এবং হযরত লুত (আ.) এর স্ত্রী তাদের মধ্যে অন্যতম। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, উভয় নারীই দুইজন মহান নবীর স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও তারা তাদের প্রতি প্রেরিত নবীর শিক্ষাকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করে।

তারা উভয়েই আল্লাহর রাসূলদ্বয়ের সাথে বিশ্বাঘাতকতা করে এবং তার প্রতিদানে আল্লাহ তাদেরকে করুন পরিণতির দিকে নিক্ষেপ করেন।

কুর’আনে বলা হয়েছে,

আল্লাহ কাফেরদের জন্যে নূহ-পত্নী ও লূত-পত্নীর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন। তারা ছিল আমার দুই ধর্মপরায়ণ বান্দার গৃহে। অতঃপর তারা তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করল। ফলে নূহ ও লূত তাদেরকে আল্লাহ কবল থেকে রক্ষা করতে পারল না এবং তাদেরকে বলা হল: জাহান্নামীদের সাথে জাহান্নামে চলে যাও। (সূরা তাহরিম, আয়াত: ১০)

আল্লাহর নবীদের সাথে এত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্বত্ত্বেও তারা তাদের অবিশ্বাসের কারনে আল্লাহর শাস্তি থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করতে পারেনি।

নুহ (আ.) এর স্ত্রী তার জাতির লোকের সাথেই মহাপ্লাবনে ডুবে প্রাণ হারায় এবং লুত (আ.) স্ত্রীও তার লোকদের সাথে সাথে আল্লাহর গজবে ভূমি ধ্বসে তলিয়ে যায়।

এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আল্লাহ কুর’আনে এই ব্যক্তিত্বদের বর্ণনা একারণেই প্রদান করেছেন, যাতে আমরা তাদের কাছ থেকে শিক্ষা অর্জন করতে পারি।

প্রতিটি ব্যক্তির জীবনেই আমাদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে, যার থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আমরা আমাদের জীবনকে উন্নত করতে পারি।

আমরা যদি প্রকৃতই আমাদের জীবনকে উন্নত করতে চাই, তবে আমাদের উচিত কুরআনের শিক্ষা অনুসারে আমাদের জীবনকে গঠন ও পরিচালনা করা।

IDC Partner

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন।

আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে বিস্তারিত জানতে  লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।

আইডিসি  মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আপনি আইডিসি  মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।

Islami Dawah Center Cover photo

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টারকে সচল রাখতে সাহায্য করুন!

 ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার ১টি অলাভজনক দাওয়াহ প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠানের ইসলামিক ব্লগটি বর্তমানে ২০,০০০+ মানুষ প্রতিমাসে পড়ে, দিন দিন আরো অনেক বেশি বেড়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।

বর্তমানে মাদরাসা এবং ব্লগ প্রজেক্টের বিভিন্ন খাতে (ওয়েবসাইট হোস্টিং, CDN,কনটেন্ট রাইটিং, প্রুফ রিডিং, ব্লগ পোস্টিং, ডিজাইন এবং মার্কেটিং) মাসে গড়ে ৫০,০০০+ টাকা খরচ হয়, যা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। সেকারনে, এই বিশাল ধর্মীয় কাজকে সামনে এগিয়ে নিতে সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে আপনাদের দোয়া এবং আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন, এমন কিছু ভাই ও বোন ( ৩১৩ জন ) দরকার, যারা আইডিসিকে নির্দিষ্ট অংকের সাহায্য করবেন, তাহলে এই পথ চলা অনেক সহজ হয়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ। যারা এককালিন, মাসিক অথবা বাৎসরিক সাহায্য করবেন, তারা আইডিসির মুল টিমের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন, ইংশাআল্লাহ।

আইডিসির ঠিকানাঃ খঃ ৬৫/৫, শাহজাদপুর, গুলশান, ঢাকা -১২১২, মোবাইলঃ +88 01609 820 094, +88 01716 988 953 (নগদ/বিকাশ পার্সোনাল) ইমেলঃ info@islamidawahcenter.com, info@idcmadrasah.com, ওয়েব: www.islamidawahcenter.com, www.idcmadrasah.com সার্বিক তত্ত্বাবধানেঃ হাঃ মুফতি মাহবুব ওসমানী ( এম. এ. ইন ইংলিশ )