Imam Muslim – ইমাম মুসলিম (রহঃ) এর জীবনী

Imam Muslim – ইমাম মুসলিম (রহঃ) এর জন্মঃ

আল-ইমাম আল-হাফেজ হুজ্জাতুল ইসলাম আবুল হুসাইন মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ আল-কুশিয়ারী আন-নায়সাবুরী ২০২ হিজরি/৮১৭ ঈসাই মতান্তরে ২০৬ হিজরি/৮২১ ঈসাই অথবা ২০৪ হিজরি/৮১৯ ঈসাই সনে খুরাসানের অন্তর্গত নায়সাবুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নির্ভেজাল আরব বংশজাত। তার পরিবারের আদি বাসস্থান নায়সাবুর ।

Imam Muslim – ইমাম মুসলিম (রহঃ) এর বাল্যকালঃ

Imam Muslim – ইমাম মুসলিম (রহঃ) এর বাল্যকাল সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না। তবে বাল্যকাল থেকেই তিনি অত্যন্ত মেধাবী ও বিদ্যানুরাগী ছিলেন। তিনি ছোট বেলাতেই পবিত্র কুর’আন হিফজ করেন। Imam Muslim – ইমাম মুসলিম (রহঃ) তাঁর পিতা-হাজ্জাজ এবং নায়সাপূরের অন্যান্য ‘আলিমগণের নিকট থেকে শিক্ষা অর্জন করেছেন। সে সময়ে নায়সাপূর ছিল জ্ঞান চর্চার কেন্দ্রবিন্দু। তাঁর ঘরের ও বাইরের পরিবেশ ছিল জ্ঞান অর্জন ও জ্ঞান বিতরণের অনন্য পরিবেশ। তাঁর পিতা ছিলেন একজন হাদীস বিশারদ।
ইব্ন ‘আসাকির (মৃত ৫৭১ হিজরী/ ১১৭৬ খ্রীষ্টাব্দ) Imam Muslim – ইমাম মুসলিম (রহঃ) এর শিষ্য-মুহাম্মাদ ইব্ন ‘আবদিল-ওয়াহ্যাব আল-ফাররা থেকে বর্ণনা করেনوَكَانَ أبُوْهُ اَلْحَجَّاجُ بنُ مُسْلِمٍ مِنْ مَشِيْخَةِ أبِىْ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا. -‘ইমাম মুসলিমের পিতা হাজ্জাজ ইব্ন মুসলিম আমার পিতার অন্যতম শায়খ ছিলেন।’

Imam Muslim – ইমাম মুসলিম (রহঃ) এর শিক্ষা জীবনঃ

Imam Muslim – ইমাম মুসলিম (রহঃ) শৈশবে পিতা-মাতার স্নেহ-মমতায় প্রতিপালিত হন। তাঁদের নিকটেই তার প্রাথমিক শিক্ষা আরম্ভ হয়। শৈশবেই তিনি অসাধারণ মেধাবীচরিত্রবান ও বিনম্র স্বভাবের বালক হিসাবে সহপাঠী ও বাল্যসাথীদের মাঝে সুপরিচিত ছিলেন। তিনি কিশোর বয়সেই হাদীস শিক্ষা শুরু করেন। তিনি মাতৃভূমি নায়সাপূরে প্রথম হাদীস শ্রবণ ও সংগ্রহের সূচনা করেন। সাথে সাথে তাফসীরইতিহাস ও অন্যান্য ইসলামী বিষয়ও অধ্যয়ন করতে থাকেন। এই বিদ্যাপীঠেই তিনি সর্বপ্রথম ২১৮ হিজরী/ ৮৩৩ খ্রীষ্টাব্দে হাদীসের দারসে উপস্থিত হয়ে হাদীস শ্রবণ করতে আরম্ভ করেন। তখন এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ছিলেন তৎকালীন প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ইমাম আয্-যুহ্লী। তাঁর নিকট থেকে Imam Muslim – ইমাম মুসলিম (রহঃ) মনোযোগ সহকারে হাদীস শিক্ষা লাভ করতে থাকেন। শিক্ষকমণ্ডলীর নিকট থেকে হাদীস শ্রবণের পরে সাথে সাথেই তিনি শ্রুত সমস্ত হাদীস লিখে রাখতেন। লেখা শেষ হলে তিনি সহপাঠীদের বৈঠকে হাদীস সমূহ পুনরালোচনা করতেন। ফলে অতি অল্প সময়ে হাদীস শাস্ত্রে বিশেষ জ্ঞান ও পাণ্ডিত্য লাভে সক্ষম হন।
ইমাম যুহ্লীর মজলিস ত্যাগঃ 
ইমাম বুখারী (রহঃ) যখন নায়সাপূরে উপস্থিত হন, Imam Muslim – ইমাম মুসলিম (রহঃ) তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। ‘ইলমে হাদীসে তাঁর অফুরন্ত জ্ঞানভাণ্ডার হতে তিনি (মুসলিম) জ্ঞান আহরণ করতে লাগলেন। এদিকে ইমাম বুখারী নায়সাপূরে এসে হাদীসের দারস দিতে শুরু করলে অন্যান্য মুহাদ্দিসগণের দারস শিক্ষার্থী শূন্য হয়ে পড়ে। কারণ শিক্ষার্থীরা ইমাম বুখারীর দারসে বসতে শুরু করেন। এমনকি বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ইমাম যুহ্লীও (মৃত ২৫৮ হিজরী) নিয়মিত ইমাম বুখারীর দারসে উপস্থিত হয়ে হাদীস শ্রবণ করেন। অন্যান্য মুহাদ্দিসের দারস শিক্ষার্থী শূন্য হওয়ায় হিংসুকরা ইমাম বুখারীর সাথে বিদ্বেষ পোষণ করতে শুরু করে। ইতোমধ্যে خَلْقُ الْقُرْآنِ (কুর’আন সৃষ্ট কি-না) সম্পর্কিত মাস’আলায় ইমাম বুখারী ও ইমাম যুহ্লীর মাঝে মতানৈক্য সৃষ্টি হয়। ইমাম মুসলিম ইমাম বুখারীর পাবলম্বন করেন। যুহ্লী ইমাম বুখারীর বিরুদ্ধে মানুষকে উত্তেজিত করে এবং লোকজনকে বুখারীর নিকটে যেতে নিষেধ করে। যাতে ইমাম বুখারী নাইসাপূর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন। Imam Muslim – ইমাম মুসলিম (রহঃ) ব্যতীত অধিকাংশ লোক তাঁর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে। কিন্তু Imam Muslim – ইমাম মুসলিম (রহঃ) নিয়মিত ইমাম বুখারীর সাথে সাক্ষাত করতে থাকেন। ইমাম যুহ্লীর নিকটে এই খবর পৌঁছল যে, Imam Muslim – ইমাম মুসলিম (রহঃ) তাঁর পূর্বের মতের উপরেই অটল আছেন। যদিও এ কারণে তিনি হিজায ও ‘ইরাকে তিরষ্কৃত হয়েছেন কিন্তু তিনি স্বীয় মত পরিবর্তন করেননি।
একদিন Imam Muslim – ইমাম মুসলিম (রহঃ) যুহ্লীর দারসে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে উপস্থিত হয়ে হাদীস শুনছিলেন। ইমাম যুহ্লী তাঁর দারসের শেষ পর্যায়ে সহসা ঘোষণা করেন, সহসা উস্তাদ ঘোষণা করেন, ‘বিশেষ একটি মাসয়ালায় যে ব্যক্তি বুখারির মতের সাথে একমত তাঁর উচিত আমার মজলিস ত্যাগ করা’। Imam Muslim – ইমাম মুসলিম (রহঃ) সাথে সাথে মজলিস ত্যাগ করে ঘরে চলে আসেন এবং এই উস্তাদের নিকট হতে শ্রুত ও গৃহীত হাদিসসমূহের পাণ্ডুলিপি ফেরত পাঠিয়ে দেন । তিনি এই উস্তাদের সূত্রে হাদিস বর্ণনা সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করেন’’।
সফরসমুহঃ
Imam Muslim – ইমাম মুসলিম (রহঃ) হাদীস শিক্ষার উদ্দেশে তৎকালীন মুসলিম জাহানের সবগুলি কেন্দ্রেই গমন করেন। বিশেষতঃ ইরাক, হিজায, মিশর প্রভৃতি অঞ্চল ব্যাপকভাবে ভ্রমণ করে তথায় অবস্থানকারী হাদীসের শ্রেষ্ঠ উস্তাদ ও মুহাদ্দিসের নিকট হতে হাদীস শিক্ষা ও সংগ্রহ করেন । তিনি এ সকল স্থানের ইমাম বুখারীর (মৃত্যুঃ ২৫৬ হিঃ) অনেক উস্তাদ এবং অন্যদের নিকট থেকেও হাদিস শ্রবণ ও গ্রহণ করেন । Imam Muslim – ইমাম মুসলিম (রহঃ) সর্বপ্রথম ২১৮/৮১৩ সনে হাদিসের দারসে বসতে শুরু করেন । ইয়াহইয়া আত-তামীমী আন-নায়সাবুরী, আল-কা’নাবী, আহমাদ ইবনে ইউনুস, ইসমা’ঈল ইবনে আবী উইয়াস, সা’ঈদ ইবনে মানসূর, আউন ইবনে সাল্লাম, আহমাদ ইবনে হাম্বল – এ সকল প্রখ্যাত হাদিসবিদ ছাড়া আরও অনেকের নিকট তিনি হাদিসের পাঠ গ্রহণ করতেন। তাছাড়া ইমাম শাফি’ঈ-এর শাগরিদ হারমালা এবং প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইসহাক ইবনে রাহুইয়াহ-র নিকট থেকেও তিনি হাদিস শোনেন । তিনি একাধিকবার বাগদাদ সফর করেন । তাঁর সর্বশেষ বাগদাদ সফর ছিল হিজরী ২৫৯ সনে । বাগদাদের হাদিসবিদরা তাঁর নিকট থেকে শ্রুত হাদিস বর্ণনা করেছেন।
IDC Partner

Imam Muslim – ইমাম মুসলিম (রহঃ) এর ছাত্রগণঃ

 

Imam Muslim – ইমাম মুসলিম (রহঃ) ছিলেন ‘উলূমে হাদিসের এক বিশাল সাগর’। বিশ্বের সকল হাদিস বিশারদ তাঁকে এ বিষয়ের একজন শ্রেষ্ঠ ইমাম বলে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। তাঁর যুগের বড় বড় মুহাদ্দিসগণ তাঁর নিকট হাদিস শিক্ষা করেছেন। তাঁর প্রখ্যাত শাগরিদদের মধ্যে ইবরাহীম ইবনে আবী তালিব, ইবন খুযাইমা, সাররাজ, আবু আওয়ানা, আবু হামেদ ইবনে শারকী, আবু হামেদ আহমাদ ইবনে হামাদান, ইবরাহীম ইবনে মুহাম্মাদ, মাককী ইবনে আবাদান, আব্দুর রাহমান ইবনে আবি হাতেম, মুহাম্মাদ ইবনে মাখলাদ, ইমাম তিরমিযী, মুসা ইবনে হারুন, আহমেদ ইবনে সালমা, ইয়াহইয়া ইবনে সায়েদ প্রমুখের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তারা সকলে হাদিস শাস্ত্রে ইমাম মুসলিমের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে তাঁর সূত্রে হাদিস বর্ণনা করেছেন। অবশ্য ইমাম তিরমিযী ইমাম মুসলিমের সূত্রের মাত্র একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন।

Imam Muslim – ইমাম মুসলিম (রহঃ) এর ইমাম মুসলিম রচিত গ্রন্থ সমূহঃ

ইমাম মুসলিমের মহামূল্য রচনাবলী তাঁর পাণ্ডিত্যের কথা অকাঠ্যভাবে প্রমাণ করে । তাঁর গ্রন্থাবলীর অধিকাংশই হাদিস ও তৎসম্পর্কিত বিষয়ে প্রণীত।
Imam Muslim – ইমাম মুসলিম (রহঃ) রচিত গ্রন্থসমূহ –
তাঁর বিখ্যাত হাদিস সংকলণ “আস-সাহীহ” ছাড়াও নিম্নলিখিত গ্রন্থাবলীর কথা ইতিহাসে পাওয়া যায়ঃ-
১. আল-মুসনাদ আল-কাবীর
২. কিতাব আল-জামি ‘আলা আল-আবওয়াব
৩. কিতাব আল-আসমা’ ওয়া আল-কুনা’
৪. কিতাব আল-তাময়ীয
৫. কিতাব আল-ইফরাদ
৬. কিতাব আল-আকরান
৭. কিতাবু সুওয়ালাতিহি আহমাদ ইবনে হাম্বল
৮. কিতাব আল ‘ইলাল ওয়া কিতাব আল-ওয়াহদান
৯. কিতাবু হাদিসে ‘আমার ইবনে শূ’আইব
১০. কিতাব আল-ইনতিফা বি-উহুব আল-সিবা’
১১. কিতাবু মাশায়িখ শু’বা
১২. কিতাবু মাশায়িখ মালিক ওয়া কিতাবু মাশায়িখ আল-সাওরী
১৩. কিতাবু মান লায়সা লাহু ইল্লা রব্বিন ওয়াহিদ
১৪. কিতাব আল-মুখাদরামিন
১৫. কিতাব আওলাদ আল-সাহাবা
১৬. কিতাবু আওহাম আল-মুহাদ্দিসীন
১৭. কিতাব আল-তাবাকাত
১৮. কিতাবু আফরাদ আল-শামিয়্যীন ।
সহীহ মুসলিম (আরবি: صحيح مسلم‎‎) হাদিস বিষয়ক একটি সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ। এটি কুতুব আল-সিত্তাহ অর্থাৎ হাদীস বিষয়ক প্রধান ছয়টি গ্রন্থের দ্বিতীয় গ্রন্থ।
‘সহীহ মুসলিম’ হাদিসের অন্যতম একটি গ্রন্থের নাম। ইমাম মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ ইবনে মুসলিম আল কুশাইরী হলেন এই মহান গ্রন্থের সংকলক।
Imam Muslim – ইমাম মুসলিম (রহঃ) এর অন্যান্য সংকলনের মধ্যে সহীহ মুসলিম হলো সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ও গ্রহনযোগ্য। মুসলিম হাদীস বিশারদদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোরআন মাজীদের পর পৃথিবীর বুকে বিশুদ্ধতম দ্বিতীয় গ্রন্থ হলো ‘সহীহ মুসলিম’। শক্তিশালি পরিকল্পনার পাশাপাশি অত্যন্ত যত্নের সাথে গুছিয়ে Imam Muslim – ইমাম মুসলিম (রহঃ) তৈরি করেছেন সংকলনটি। উক্ত কর্মটি সম্পন্ন করতে তার সময় লেগেছে প্রায় পনের বছর। এই গ্রন্থ সংকলনে তার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও সযত্ন সুন্দর বিন্যাসকে বিবেচনা করে তার যুগের পশ্চিমা বহু মুহাদ্দিস সহীহ মুসলিমকে সহীহ বুখারী’র উপর প্রাধান্য দিয়ে তাকে ‘শ্রেষ্ঠ হাদীস গ্রন্থ’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন। তাদের অন্যতম একজন হাফিজুল হাদীস আবু আলী নায়সাবুরী বলেন: ‘আসমানের নিচে ইলমে হাদীস সংক্রান্ত ইমাম মুসলিমের কিতাব অপেক্ষা বিশুদ্ধতম কোন কিতাব নাই।’
হাদিসের এ গ্রন্থ সংকলনের ক্ষেত্রে ইমাম মুসলিম তার একান্ত আস্থাভাজন ছাত্রদের সহযোগিতাও নিয়েছেন। তার ছাত্র আহমদ বিন সালামা বলেন, ‘ইমাম মুসলিমের সাথে তার ‘সহীহ’ সংকলনের ক্ষেত্রে আমি পনেরো বছর কাজ করেছি, এতে প্রায় ১২ হাজার হাদীস রয়েছে (পুনরুক্তসহ)। পুনরুক্ত বাদ দিলে হাদীসের সংখ্যা হবে প্রায় ৪০০০।’ ইমাম মুসলিম তার মুখস্ত তিন লক্ষাধিক হাদীস থেকে বাছাই করে বিশুদ্ধ হাদীসের এ সংকলনটি তৈরি করেছেন।
IDC Partner
Imam Muslim – ইমাম মুসলিম (রহঃ) তার ‘সহিহ’ রচনার পর বলেছিলেন, ‘মুহাদ্দিসরা ১০ বছর পর্যন্তও যদি হাদিস লিখতে থাকেন, তবুও তাদের অবশ্যই এ বিশুদ্ধ মুসনাদ গ্রন্থের ওপর নির্ভর করতে হবে। ’

বস্তুত Imam Muslim – ইমাম মুসলিম (রহঃ) অত্যন্ত সত্য কথাই বলেছেন। তার মৃত্যুর পর সুদীর্ঘ ১২০০ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও আজ অবধি মুসলিম শরিফের মানের দ্বিতীয় কোনো গ্রন্থ রচনা করা সম্ভব হয়নি কারও পক্ষে। Imam Muslim – ইমাম মুসলিম (রহঃ) মুসলিম শরিফ রচনায় শুধু নিজের স্মৃতিশক্তির ওপরই নির্ভর করেননি। তিনি এটি রচনার পর তৎকালীন শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসগণের সামনে পেশ করেছেন। তাদের পরামর্শ গ্রহণ করেছেন, তাদের স্বীকৃতি নিয়ে চূড়ান্ত রচনার কাজটি সমাধা করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘আমি এ গ্রন্থখানা আবু জুরআ আর-রাজির কাছে পেশ করেছি। তিনি যে যে হাদিসের সনদে দোষ আছে বলে ইঙ্গিত করেছেন, আমি তা পরিত্যাগ করেছি, আর যে যে হাদিস সম্পর্কে মত দিয়েছেন যে এগুলো সহিহ, আমি সেগুলো গ্রন্থে সন্নিবেশিত করেছি। ’

বস্তুত বুখারি শরিফ ও মুসলিম শরিফের হাদিস বিশুদ্ধতার মানদণ্ডে সমপর্যায়ের হওয়ার কারণেই দু’টিকে একত্রে ‘সহিহাইন’ বলা হয়।

Imam Muslim – ইমাম মুসলিম (রহঃ) তার আসসহিহর ভূমিকায় ‘সহিহ’ রচনার কারণ সম্পর্কে দু’টি বিষয় উল্লেখ করেছেন-

ক. ইমাম মুসলিম (রহ.)-এর বিখ্যাত সাগরেদ আবু ইসহাক ইবরাহিম তার কাছে একটি উন্নতমানের সহিহ হাদিসগ্রন্থ সংকলন করার জন্য অনুরোধ জানান। কিতাবের ভূমিকায় তিনি তার ছাত্রের জন্য দোয়া করেছেন,

খ. ইমাম মুসলিম (রহ.) দ্বিতীয় কারণটি এভাবে উল্লেখ করেছেন- কেবল তোমার ইচ্ছা পূরণ করতে গিয়ে সহিহ হাদিসগুলো বাছাই করার কষ্ট স্বীকার করা আমার পক্ষে সম্ভব হতো না। কিন্তু আমি যখন জানতে পারলাম যে, তথাকথিত মুহাদ্দিসরা সাধারণ মানুষের মধ্যে মিথ্যা ও মুনকার হাদিসগুলো ছড়িয়ে দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে, তখন তোমার অনুরোধে সাড়া দেওয়া আমার জন্য আরো সহজ হয়ে গেল।

যাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেনঃ
১/ইসহাক ইবন রাহওয়ে,
২/ইমাম বুখারী
তিনি সাহাবীদের জীবনী বিষয়ক “মুসনাদ আল-কাবীর” রচনায় হাত দিলেও তা শেষ করে যেতে পারেননি । একমাত্র ‘আস-সাহীহ’ ছাড়া তাঁর রচনার আর কোনটিই বর্তমানে পাওয়া যায় না। এই কিতাবগুলো পৃথিবীর শ্রেষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরীতে সংগ্রহ আছে।

Imam Muslim – ইমাম মুসলিম (রহঃ) এর সম্বন্ধে অনান্য মুসলিম মনিষীর বক্তব্যঃ

হাকেম বলেন, ‘ইমাম মুসলিম ছিলেন দীর্ঘাকৃতির। মাথার চুল ও দাড়ি ছিল সাদা । পাগড়ির একটি দিক দু’কাধের মাঝখানে ছেড়ে দিতেন। তিনি ছিলেন কাপড়ের ব্যবসায়ী’। ইমাম মুসলিমের প্রতিভা ও যোগ্যতার অকপট স্বীকৃতি দিয়েছেন তাঁর যুগের ও পরের বহু মনিষী ।
Imam Muslim – ইমাম মুসলিম (রহঃ) উস্তাদ মুহাম্মাদ ইবনে আবদিল ওয়াহহাব আল-ফাররা বলেনঃ ‘ইমাম মুসলিম মানব জাতির মধ্যে অন্যতম আলিম য় ইলমের সংরক্ষণকারী । আমি তাঁর সম্পর্কে শুধু ভাল ছাড়া আর কিছু জানি না ।’
আবু বাকর আল-জারূদিও ঠিক একই মন্তব্য করেছেন ।
মাসলামা ইবনে কাসিম বলেন, ‘অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য উঁচু মর্যাদার একজন ইমাম তিনি’ ।
ইবনে আবী হাতেম বলেন, ‘আমি তাঁর সূত্রে হাদিস লিখেছি। তিনি অন্যতম বিশ্বস্ত হাফেজে হাদিস। হাদিস বিষয়ে তাঁর গভীর জ্ঞান। আমার পিতাকে তাঁর সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেনঃ ‘অত্যন্ত সত্যবাদী’। তিনি আরও বলেছেনঃ ‘হাফেজে হাদিস বলতে চারজনকেই বুঝায়। তারা হলেনঃ আবু যূর’আ, মুহাম্মাদ ইবনে ইসমা’ঈল, আদ-দারিমী ও ইমাম মুসলিম’।
ইবনুল আখরাম বলেন, ‘আমাদের এই শহর তিনজন হাদিস বিশারদ সৃষ্টি করেছেঃ তাঁরা হলেনঃ মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াহইয়া, ইব্রাহীম ইবনে আবী তালিব ও ইমাম মুসলিম’ ।
ইসহাক ইবনে মানসূর একবার ইমাম মুসলিমকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘যতদিন আল্লাহ্‌ তা’আলা আপনাকে মুসলমানদের জন্য জীবিত রাখবেন আমরা কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবো না’।
আহমাদ ইবনে সালমা বলেন, ‘আমি আবু যুর’আ আবু হাতেমকে হাদিসের বিশুদ্ধতা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে তাদের যুগের অন্যান্য মাশায়িকদের ওপর ইমাম মুসলিমকে প্রাধান্য দিতে দেখেছি’।
হাফেজ আবু কুরাইশ বলেছেন, ‘পৃথিবীতে হাফেজে হাদিস মাত্র চারজন। ইমাম মুসলিম তাদের একজন’ ।
ইবনে খাল্লিকান ইমাম মুসলিমকে ‘সাহিহ গ্রন্থের অধিকারী, হাদিসের অন্যতম ইমাম ও হাফেজ এবং মুহাদ্দিসকুলের এক প্রধান স্তম্ভ বলে উল্লেখ করেছেন’।

Imam Muslim – ইমাম মুসলিম (রহঃ) এর ওফাতঃ

Imam Muslim – ইমাম মুসলিম (রহঃ) ২৬১ হিজরি/৮৭৫ ঈসাই সনের ২৫শে রজব রোববার নায়সাবূরে ইন্তেকাল করেন। নায়সাবূরের শহরতলী নাসরাবাদে ২৬শে রজব সোমবার তাঁকে দাফন করা হয়। তাঁর জন্মের সন সম্পর্কে মতভেদ থাকায় মৃত্যুকালে তাঁর সঠিক বয়স সম্পর্কেও মতপার্থক্য দেখা যায়। ইবনে হাজার আসকালানী Imam Muslim – ইমাম মুসলিম (রহঃ) এর মৃত্যুর কারণ সম্বন্ধে একটি বিবরণ প্রদান করেছেন। Imam Muslim – ইমাম মুসলিম (রহঃ) জন্য হাদিস বিষয়ক একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সেই মজলিসে একটি হাদিস আলোচিত হয়। হাদিসটি Imam Muslim – ইমাম মুসলিম (রহঃ) এর জানা ছিল না। মজলিস শেষে বাড়ি ফিরে রাতে এক ঝুরি খুরমা সামনে নিয়ে হাদিসটি তালাশ করতে বসেন। একটি একটি করে খুরমা মুখে দিচ্ছেন আর হাদিসটি অনুসন্ধান করছেন। এভাবে সকাল হয়ে যায়, খুরমাও শেষ হয় এবং হাদিসটিও তিনি পেয়ে যান। এই অতিরিক্ত খুরমা ভক্ষণই তাঁর মৃত্যুর বাহ্যিক কারণ।

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন।

 

আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে বিস্তারিত জানতে  লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।

আইডিসি  মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আপনি আইডিসি  মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।

Islami Dawah Center Cover photo

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টারকে সচল রাখতে সাহায্য করুন!

 

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার ১টি অলাভজনক দাওয়াহ প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠানের ইসলামিক ব্লগটি বর্তমানে ২০,০০০+ মানুষ প্রতিমাসে পড়ে, দিন দিন আরো অনেক বেশি বেড়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।

বর্তমানে মাদরাসা এবং ব্লগ প্রজেক্টের বিভিন্ন খাতে (ওয়েবসাইট হোস্টিং, CDN,কনটেন্ট রাইটিং, প্রুফ রিডিং, ব্লগ পোস্টিং, ডিজাইন এবং মার্কেটিং) মাসে গড়ে ৫০,০০০+ টাকা খরচ হয়, যা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। সেকারনে, এই বিশাল ধর্মীয় কাজকে সামনে এগিয়ে নিতে সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে আপনাদের দোয়া এবং আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন, এমন কিছু ভাই ও বোন ( ৩১৩ জন ) দরকার, যারা আইডিসিকে নির্দিষ্ট অংকের সাহায্য করবেন, তাহলে এই পথ চলা অনেক সহজ হয়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ। যারা এককালিন, মাসিক অথবা বাৎসরিক সাহায্য করবেন, তারা আইডিসির মুল টিমের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন, ইংশাআল্লাহ।

আইডিসির ঠিকানাঃ খঃ ৬৫/৫, শাহজাদপুর, গুলশান, ঢাকা -১২১২, মোবাইলঃ +88 01609 820 094, +88 01716 988 953 (নগদ/বিকাশ পার্সোনাল) ইমেলঃ info@islamidawahcenter.com, info@idcmadrasah.com, ওয়েব: www.islamidawahcenter.com, www.idcmadrasah.com সার্বিক তত্ত্বাবধানেঃ হাঃ মুফতি মাহবুব ওসমানী ( এম. এ. ইন ইংলিশ )