Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ)
Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ)
Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে হাম্বল আবু আবদুল্লাহ আল-শাইবানী একজন বিখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্ব, ইসলামি আইন এবং হাদিস বিশারদ। ইসলামের প্রচলিত চার মাযহাবের একটি হাম্বলী মাযহাব তার দিকেই সম্পৃক্ত। মুসলিম বিশ্বে ইমাম আহমদ, শাইখুল ইসলাম উপাধিতে পরিচিত। ইমাম আহমদের সংকলিত হাদিস গ্রন্থ মুসনাদকে তাঁর বিখ্যাত কীর্তি মনে করা হয়।
ঐতিহাসিকগন বলেন, Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এর পিতা তাকে নিয়ে মুরউ থেকে যখন বাগদাদ চলে যান, তখন তিনি তার মায়ের গর্ভে ছিলেন। তারপর ১৬৪ হিজরী (৭৮০ খ্রীষ্টাব্দ) সালের রবিউল আউয়াল মাসে তার মা তাকে বাগদাদে প্রসব করেণ। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ১০ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং-৫৫০, প্রকাশনি ইসলামি ফাউন্ডেশন, প্রকাশকাল সেপ্টেম্বর-২০১০)।
Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এর ছেলে সালিম থেকে বর্ণিত আছে যে, তার পিতা বলেন, “তখন আমার মা আমার উভয় কান ছিদ্র করে তাতে দুটি মুক্তা স্থাপন করে দেন। বড় হওয়ার পর মা আমাকে মুক্তাগুলো দিয়ে দেন। আমি সেগুলো ত্রিশ দিরহামে বিক্রি করি”। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৯/৫৫০)।
ইমাম সাহেবের নাম ও বংশ লতিকাঃ
আহমাদ, পিতা নামঃ মুহাম্মদ, দাদার নামঃ হাম্বল এবং তার নিজের উপনাম আবূ আব্দুল্লাহ। ইবনে কাসির (রহঃ) আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে তার যে বংশ তালিকা উল্লেখ করেছেন তাতে বুঝা যায় Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) আল্লাহর নবী ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের বংশধর। আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে তার বংশধারা এই ভাবে বর্ণিতঃ আহমাদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে হাম্বল ইবনে হিলাল ইবনে আসাদ ইবনে ইদ্রীস ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে হায়্যান ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আনাস ইবনে আওফ ইবনে কাসিত ইবনে মাজিন ইবনে শায়বান ইবনে যাহল ইবনে ছালাবা ইবনে উকাবা ইবনে সাব ইবনে আলী ইবনে বকর ইবনে রাবিয়া ইবনে নাযার ইবনে মাদ ইবনে আদনান ইবনে আদাদ ইবনে হামীসা ইবনে হামল ইবনে নাবত ইবনে কায়দার ইবনে ইসমাইল ইবনে ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম। আবু আব্দুল্লাহ আশ শায়বানী, আল-মারুযী, আল-বাগদাদী। আল হাফিজুল কাবীর আবু বকর আর বায়হাকী তার রচিত গ্রন্থ মানাকিবে আহমদ এ তারই শায়খ মুসতাদরাক এর রচয়িতা হাকিম আবু আব্দুল্লাহ আল হাকিম এর সূত্রে এই বংশধারা উল্লেখ করেছেন। ইমাম আহম্মদের ছেলে সালিম থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন, আমার পিতা আমার কিতাবে এই বংশধারা দেখতে পেয়ে বলেন, এ দিয়ে তুমি কি করবে? তিনি এই বংশধারা কে অস্বীকার করেন নি। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ১০ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং-৫৫০, প্রকাশনি ইসলামি ফাউন্ডেশন, প্রকাশকাল সেপ্টেম্বর-২০১০)।
ইমামের ১৩ তম পূর্ব পুরুষ শায়বান এর দিকে সম্পৃক্ত করায় তাকে আশ শায়বানী, তাঁর জন্মভূমি মুরউ এর দিকে সম্পৃক্ত করায় আল-মারুযী, অতঃপর ইমামের অবস্থান বাগদাদ এর দিকে সম্পৃক্ত করায় ‘‘আল বাগদাদী” ও বলা হয়।
প্রতিপালনঃ
তার বয়স যখন মাত্র তিন বছর তখন তার পিতা মারা যান। পরে তার মা তাকে লালন পালন করেন। Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এর মাতা তাকে ইলমে ওহির এক নিরলস ধারকরূপে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাই খুব ছোট বয়সেই তিনি তার ছেলেকে মক্তবে ভর্তি করে দেন। শিশু আহমদ প্রথমত কুরআন হিফজ করেন।
Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) ছোট বয়সেই শিক্ষায় মনোনিবেশ হন। তিনি প্রখর মেধাশক্তি সম্পন্ন ছিলেন। অতি সহজেই অনেক কিছু মুখস্ত করে ফেলতেন। ইবরাহীম আল হারবী (রহঃ) বলেন, ‘‘মনে হয় যেন আল্লাহ তা’আলা ইমাম আহমাদকে আদি-অন্তের সকল প্রকার জ্ঞান দান করেছেন।’’ (ত্ববাকাতুল হানাবিলাহ- ১/৯ পৃঃ, সিয়ারু আলমিন্নুবালা- ১১/১৮৮ পৃঃ)।
Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) শৈশবে কাজি আবু ইউসুফ এর মজলিসে যাওয়া আসা করতেন। পরে তা ছেড়ে দিয়ে হাদিস শ্রবণে মনোনিবেশ করেন। স্বীয় শায়খদের নিকট থেকে হাদিস শ্রবনের ঘটনা ঘটে ১৮৭ হিজরীতে তখন ইমাম এর বয়স ছিল ১৬ বছর।
কুরাআন হিফজ করার পর, তিনি ভাষাতত্ত্বের জ্ঞান অর্জন করেন এবং লেখা শিখেন। মহান আল্লাহ তাকে দান করেছিলেন অসাধারণ ধীশক্তি। একবার যা শুনতেন তা আর কখনো ভুলতেন না। অল্পদিনের মধ্যেই তিনি একজন কৃতিছাত্র হিসেবে পরিচিত হয়ে যান। সেই সময় বাগদাদের বহু লোক দূর দূরান্তে সেনাবাহিনীর সদস্য হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তারা পত্রমারফত তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করত তাই যে সকল মহিলাগন নিরক্ষর ছিলেন তারা কিশোর আহমদ দিয়ে তাদের পত্র পড়িয়ে শুনতেন এবং জবাব লিখিয়ে নিতেন। যুবক আহমদ তাদের পক্ষ থেকে যে সব পত্র লিখতেন তাতে কখনও কোন অমার্জিত কথা লিখতেন না। তিনি ছিলেন অত্যন্ত শান্ত-শিষ্ট ও বুদ্ধিমান। লোকজন তাদের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা-দীক্ষার ব্যাপারে কিশোর আহমদকে আদর্শরূপে গ্রহণ করেন।
তার গোটা জীবন আল্লাহর ইবাদতের পাশাপাশি তিনটি কাজে অতিবাহিত হয়েছে।
ক. হাদিস শিক্ষা গ্রহন ও হাদিস শিক্ষাদানের জন্য
খ। হাদিস সংগ্রহ ও সংকলনের কাজের জন্য
গ. বাতিলের মুকাবিলা করার জন্য
শিক্ষা জীবন বা হাদিস শিক্ষা গ্রহনঃ
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) হাদিস শিক্ষার প্রতি মনোনিবেশ করেন। বাগদাদের মুহাদ্দিসের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে তিনি ইলমে হাদিসের গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। ইসলামী খেলাফতের রাজধানী বাগদাদের লেখাপড়া সমাপ্ত করে তিনি বসরা, কুফা, হেজাজ, শাম প্রভৃতি অঞ্চল সফর করেন এবং প্রতিটি স্থানের বিখ্যাত সব মুহাদ্দিসগণের কাছ থেকে হাদিস শিক্ষা করেন।
বাগদাদের মুহাদ্দিসদের মধ্যে তাঁহার হাদীসের উস্তাদ হইতেছেন হুশাইম ইবনে বশীর ইবনে আবূ হাযেম (মৃঃ ১৮৩ হিঃ)। তাঁহার খিদমতে তিনি একদিক্রমে চার বৎসর পর্যন্ত অব্স্থান করেন- ১৬ বৎসর বয়স হইতে ২০ বৎসর পর্যন্ত, (১৭৯-১৮৩হিঃ)। এই সময়ে তিনি বাগদাদের অপর একজন মুহাদ্দিস উমাইর ইবনে আবদুল্লাহ ইবেন খালিদ হইতে যথেষ্ট সংখক হাদীস শ্রবণ করেন। আবদুর বহমান ইবনে মাহাদী ও আবূ বকর ইবনে আইয়াশ নামক অপর দুইজন মুহাদ্দিসের নিকট হইতে হাদীস শিখিয়াছেন বলিয়া উল্লেক করা হইয়াছে। (হাদীস সংকলনের ইতিহাস, মাওলানা আব্দুর রহীম পৃষ্ঠা -৩৪৮)।
১৮৬ হিঃ সনে তিনি হাদীস শিক্ষার উদ্দেশ্যে বিদেশ ভ্রমণ শুরু করেন। প্রথমে বসরা গমন করেন,তারপর হিজায উপস্থিত হন। এই উদ্দেশ্যে তিনি ইয়েমেন ও কূফা শহরেও গমন করেন। বসরা শহরে তিনি পরপর পাঁচবার উপস্থিত হন। কোন কোন বার তখায় তিনি ক্রমাগতভাবে তিন মাস করে অবস্থান করেন। হিজাযে তিনি পাচঁবার গমন করেছেন। বিদেশে এইসব সফরের মূলে তাঁর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল হাদীস শিক্ষা ও সংগ্রহ করা। বস্তুতপক্ষে এই সময়কার শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসগণের নিকট হতেই তিনি হাদীস শিক্ষা ও সংগ্রহ করেছেন।
Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) হাদীস শিক্ষা ও সংগ্রহের অভিযানে প্রথম হতেই একটি নীতি পালন করে চলতেন। তা হচ্ছে হাদীস শ্রবণের সঙ্গে সঙ্গে উহাকে লিখে নেওয়া। তিনি তাঁর অসাধারণ স্মৃতিশক্তির উপর একান্তভাবে নির্ভর করতেন না। বরং যাই শুনতেন তাই কাগজের উপর লিখে নেয়া ছিল তাঁর স্থায়ীভাবে অনুসৃত নীতি।
তাঁর শ্রুত হাদীসসমূহ তাঁর সম্পূর্ণ মুখস্থই থাকত, কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি কোন হাদীস স্বীয় পাণ্ডুলিপি না দেখিয়া কখনো বর্ণনা করতেন না। কেউ কোন হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে- তা স্মরণ ও মুখস্থ থাকা সত্ত্বেও স্বীয় কিতাব খুলিয়া উহার সন্ধান করিতেন ও পরে তাহা সম্মুখে পড়িয়া শুনাইতেন। তিনি যখন কাউকেও হাদীস লিখাতেন তখন হাদীস লিখিত হওয়ার পর তাঁকে বলতেনঃ যা লিখিয়াছ, তা পড়ে শুনাও। এর মূলে তাঁর লক্ষ্য থাকত যে, হাদীসের ভাষা ও শব্দে যেন কোনরূপ পার্থক্য হতে না পারে। (হাদীস সংকলনের ইতিহাস, মাওলানা আব্দুর রহীম পৃষ্ঠা -৩৪৯)।
Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এর মনোবল ছিল অত্যন্ত দৃঢ়। তিনি আপন সিদ্ধান্তে ছিলেন অবিচল। একবার যা সিদ্ধান্ত নিতেন, যে কোন ত্যাগের বিনিময়ে তা বাস্তবায়িত করে ছাড়তেন। একবার তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে, পবিত্র মক্কায় গিয়ে তিনি হজ্জ করবেন এবং কয়েকদিন হেজাজে অবস্থান করবেন। তারপর হাদিস শেখার জন্যে ইয়ামান যাবেন এবং সেখানে গিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বিন হুমামের দরবারে উপস্থিত হবেন। ইমাম আহমদ তার সহপাঠী ইয়াহিয়া ইবনে মুঈনের কাছে তার অভিপ্রায়ের কথা ব্যক্ত করলেন এবং তারা উভয়ে এ নিয়তে মক্কা প্রবেশ করলেন। প্রবেশ করে সবেমাত্র ‘তাওয়াফে কুদুম‘ সমাপ্ত করেছেন, এমন সময় আব্দুর রাজ্জাক ইবনে হুমামের দিকে উভয়ের চোখ পড়ল। ইয়াহিয়া ইবনে মুঈন, ইবনে হুমামকে পূর্ব থেকেই চিনতেন। তিনি এগিয়ে গিয়ে তাকে সালাম করে তার সাথে ইবনে হাম্বলের পরিচয় করিয়ে দিলেন। আব্দুর রাজ্জাক ইবনে হুমাম, ইমাম আহমদকে দীর্ঘ জীবন লাভ ও সীরাতুল মুস্তাকীমের উপর দৃঢ়পদ থাকার দোয়া দিলেন এবং আবেগভরা কণ্ঠে বললেন যে, আমি দূর থেকে তোমার বড় প্রশংসা শুনেছি। কথোপকথনের এক পর্যায়ে ইমাম আহমদ, আব্দুর রাজ্জাক ইবনে হুমামকে লক্ষ্য করে বললেন, আমরা ইনশাআল্লাহ আগামীকাল হাদিস শেখার জন্য আপনার খেদমতে উপস্থিত হবো। এরপর ইবনে হুমাম চলে গেলে ইবনে মুঈন ইমাম আহমদকে বললেন, অঙ্গীকার কেন করলে? আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কর। আল্লাহ আমাদের ইয়ামান যাতায়াতের কষ্ট থেকে বাঁচিয়েছেন। এখানেই শাইখকে পেয়ে গেছি। Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) বললেন যে, আমার আল্লাহর কাছে লজ্জালাগে যে হাদিস সংগ্রহের জন্য কোন অভিপ্রায় পোষণ করে তা ত্যাগ করব। আমরা ইয়ামান যাব এবং সেখানে গিয়েই শাইখের কাছে হাদিস শিখব।
ইমাম বায়হাকী বলেন, ইমাম আহমেদ তার মুসনাদে ও অন্য কিতাবে ইমাম শাফেয়ীর থেকে রিওয়ায়াত করেছেন। এবং তার থেকে কুরায়শ এর বংশধারা এবং উল্লেখ যোগ্য ফিকহা আয়ত্ব করছেন। ইমাম আহম্মেদ যখন ইন্তেকাল করেন, তখন তার ত্যাজ্য সম্পত্তির শধ্যে ইমাম শাফিয়ীর দুটি পুস্তক আল কাদীমা ও আল জাদীদা পাওয়া গিয়েছিল। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৯/৫৫২, ইঃ ফাঃ)।
শিক্ষা সফরঃ
জ্ঞান পিপাসু ইমামুস সুন্নাহ্ Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) বাগদাদের উল্লেখযোগ্য সকল আলিম হতে শিক্ষা গ্রহণের পর বিভিন্ন প্রান্তে জ্ঞান আহরণে ছুটে চলেন।
তিনি সফর করেন কুফা, বাসরা, মক্কা, মদীনা, ত্বারতুস, দামেস্ক, ইয়ামান, মিসর ইত্যাদি অঞ্চলে। তিনি পাঁচবার হাজ্জব্রত পালন করেন তন্মধ্যে তিনবার পায়ে হেঁটে হাজ্জ পালন করেন। (মুকাদ্দামাতু কিতাব মাসায়িলি ইমাম আহমাদ- ১/২০ পৃঃ)।
তিনি বলেন, আমি পাঁচবার হজ্জ করেছি। তার মাঝে তিন বার পায় হেঁটে। এর প্রতি হজ্জে আমি ব্যয় করেছি ত্রিশ দিরহাম করে। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ১০/৫৫১)।
Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এর শিক্ষকবৃন্দঃ
Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) বাগদাদসহ গোটা মুসলিম জাহানের প্রায় সকল শিক্ষা কেন্দ্রে জ্ঞানের সন্ধানে অবতরণ করেন, ফলে তাঁর শিক্ষক হাতেগনা কয়েকজন হতে পারে না বরং তাঁর শিক্ষক অগণিত ও অসংখ্য। ইমাম যাহাবী (রহঃ) বলেন, ইমাম আহমাদ (রহঃ) ‘‘মুসনাদে আহমাদ’’ গ্রন্থের হাদীসসমূহ যে সব শিক্ষক হতে গ্রহণ করেন তাঁদের সংখ্যা হলো দুইশত তিরাশি (২৮৩) জন। (সিয়ারু আলাম আন্নুবালা, ১১/১৮০ পৃঃ)।
এছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে বহু সংখ্যক শিক্ষক রয়েছেন। নিন্মে প্রসিদ্ধ কয়েকজন শিক্ষকের নাম উল্লেখ করা হলঃ
১) ইমাম সুফইয়ান বিন উয়ায়নাহ (রহঃ)।
২) ইমাম ওয়াকী বিন আল জাররাহ্ (রহঃ)।
৩) ইমাম মুহাম্মদ বিন ইদ্রীস আশ্শাফেয়ী (রহঃ)।
৪) ইমাম আব্দুর রায্যাক আস সানআনী (রহঃ)।
৫) ইমাম কুতাইবাহ বিন সাঈদ (রহঃ)।
৬) ইমাম আলী ইবনুল মাদীনী (রহঃ)।
৭) ইমাম ইবনু আবী শাইবাহ (রহঃ)। ইত্যাদি। (মকাদ্দামাহ্ কিতাব মাসায়িল ইমাম আহমাদ, ১/২১ পৃঃ)।
Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এর দরস বা হাদিস শিক্ষাদানঃ
চল্লিশ বছর বয়স থেকে Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) হাদিসের দরস দেয়া শুরু করেন। মুসলিম জাহানের দূর-দূরান্তে তার ব্যক্তিত্বের কথা ছড়িয়ে পড়ছিলো। ফলে তার কাছে ছাত্র ও সাধারণ শ্রোতাদের ভিড় জমতো। কোন কোন বর্ণনাকারীর মতে তার দরসে ছাত্র ও শ্রোতাদের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে যেতো। তন্মধ্যে বিশেষ একটা গ্রুপ ছিল যারা Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এর গৃহে গিয়ে দরস গ্রহণ করতো। তারা হাদিস শুনতো এবং লিখতো।
দরসের এ মজলিসগুলো ছিল অত্যন্ত ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ। উপস্থিত ভক্তবৃন্দ অত্যন্ত আদব ও শিষ্টাচারের সাথে দরসে বসতো। অর্থহীন কোন কৌতুকের কথা বা হাদিসের দরসের আদব পরিপন্থী কোন আলোচনা ইমাম আহমদের দরসে কখনও শোনা যেত না। তিনি দরিদ্রদের ধনাঢ্যদের উপর প্রাধান্য দিতেন। Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এর এক সাথী আবু বকর মরুঝীর বর্ণনা করেন, আমি দরিদ্রদের ইমাম আহমদের দরসে যতটা সম্মানিত ও গৃহীত হতে দেখেছি, তা অন্য কোথাও দেখিনি। তিনি দরিদ্রদের প্রতি অধিক আন্তরিক ছিলেন। তার মধ্যে নম্রতা ও গাম্ভির্যের চমৎকার সমন্বয় ছিল। তিনি তাড়াহুড়ো পছন্দ করতেন না। স্থিরতা ও গাম্ভীর্যের ছাপ তার চেহারায় স্পষ্ট ছিল।
Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) অসাধারণ ধীশক্তির অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও স্মৃতির উপর নির্ভর করে তিনি কখনো হাদিস বর্ণনা করতেন না। বরং যখনই হাদিস বর্ণনার প্রয়োজন হতো তখনই কিতাবের শরণাপন্ন হতেন। তার ছাত্রদেরও তিনি হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে কিতাবের সাহায্য নিতে নির্দেশ দিতেন। মূলত এ বিষয়টি ছিল ইমাম আহমদের অত্যধিক সাবধানতার ফল। কিন্তু এর ফলে ধীরে ধীরে কিতাবের প্রচলন হয়ে যায়।
পূর্বেই বলা হয়েছে যে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল ছিলেন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসগণের অন্যতম। হাদিস ভাণ্ডার থেকে মুসলমানদের প্রাত্যহিক জীবনের বিধি-বিধান আহরণের জন্য ইজতিহাদ বা গবেষণার পাশাপাশি তিনি বিপুল পরিমাণ হাদিস মুখস্থও করেছিলেন। তার সংকলিত হাদিসগ্রন্থ ‘মুসনাদে আহমদ‘ থেকেই ইলমে হাদিসে তার জ্ঞানের বিস্তৃতি ফুটে ওঠে। তার এ সুবৃহৎ সংকলন গ্রন্থে অন্তভুক্ত হাদিসের সংখ্যা চল্লিশ হাজার।
Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এর ছাত্র বৃন্দঃ
Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এর ছাত্র অগণিত হওয়াই স্বাভাবিক, তাদের সংখ্যাও গণনা সম্ভব নয় এবং তালিকাও বর্ণনা সহজ নয়। যিনি লক্ষাধিক হাদীসের হাফেয, চল্লিশ হাজার হাদীস গ্রন্থের সংকলক তাঁর ছাত্র বিশ্বজুড়ে হওয়াই স্বাভাবিক।
এই যুগের বড় বড় মুহাদ্দিসগণ তাঁর নিকট হতে হাদীস গ্রহণ করেছেন। তাঁদের মধ্যে ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম, ইমাম শাফেয়ী, আবদুর রাযযাক অকী প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) হাদীসের সত্যতা নির্ণয়ের ব্যাপারে Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এর উপর পূর্ণমাত্রায় নির্ভর করতেন। তাঁকে তিনি বলেই রেখেছেন, হে আবূ আবদুল্লাহ! আপনার দৃষ্টিতে যখনই কোন সহীহ হাদীস পৌঁছবে আপনি তা আমাকে অবশ্যই জানাবেন। আমি তার ভিত্তিতে আমার ফিকাহর মাযহাব ঠিক করব।
Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এর মজলিসে পাঁচ হাজার পর্যন্ত ছাত্রের সমাবেশ ঘটন, কাজেই তার ছাত্র সংখ্যা নির্ণয় খুবই কঠিন কাজ। নিম্নে কয়েকজন নক্ষত্রতুল্য ছাত্রের নাম উল্লেখ করা হলঃ
১. ইমাম মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল আল বুখারী (রহঃ)।
২. ইমাম মুসলিম বিন হাজ্জাজ আল কুশায়রী (রহঃ)।
৩. ইমাম আবূ দাঊদ আস সিজিস্তানী (রহঃ)।
৪. ইমাম আবূ ঈসা অত্তিমিযী (রহঃ)।
৫. ইমাম আবূ আব্দুর রহমান আন্নাসাঈ (রহঃ)।
৬. ইমাম সালিহ বিন আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ)।
৭. ইমাম আব্দুল্লাহ্ বিন আহমাদ বিন হাম্বল (রহ.) ইত্যাদি। (তাহ্যীবুল কামাল, ১/৪৪০-৪৪২ পৃঃ।, সিয়ারু আলামুন্নুবালা)।
হাদীসের জগতে Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ)
হাদীসের জগতে Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, তাঁর হাদীসের পারদর্শিতা সম্পর্কে এক কথায় বলা যায় তিনি হাদীসের এক বিশাল সাগর। ইমাম আব্দুল ওয়াহ্হাব আল ওয়ার্রাক বলেন, ‘‘আমি ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলের মত আর কাউকে দেখিনি। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো আপনি অন্যের চেয়ে ইমাম আহমাদ (রহঃ) এর মাঝে জ্ঞান-গরিমা বা মর্যাদা বেশী কি পেয়েছেন? তিনি বললেন, Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এমন একজন ব্যক্তি যাকে ৬০,০০০ (ষাট হাজার) প্রশ্ন করা হয়েছে তিনি সকল প্রশ্নের জবাবে হাদ্দাছানা ওয়া আখাবারানা অর্থাৎ হাদীস হতে জবাব দিয়েছেন অন্য কিছু বলেন নি। (ত্ববাকাতুল হানাবিলাহ, ১/৯ পৃঃ)।
অতএব এক বাক্যে বলা যায় যে, Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) হাদীসের সাগর ছিলেন। এ ছাড়াও এর জলন্ত প্রমাণ হলো ইমামের সংকলিত সুপ্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থ ‘‘আল মুসনাদ’’ যার হাদীস সংখ্যা চল্লিশ হাজার। (তাদবীনুস সুন্নাহ আন্নাবাবীয়্যাহ, ১২২ পৃঃ)।
হাদীসের জগতে Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এক অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। হাদীস শাস্ত্রে মুসতালাহ, ঈলাল, আসমাউর রিজাল, জারহ-তাদীল ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে তাঁর অসামান্য কৃতিত্ব বিদ্যমান রয়েছে। হাদীস শিক্ষাদানেও তাঁর কৃতিত্ব অতুলনীয়, তাঁর একেক মজলিসে পাঁচ হাজারেরও অধিক ছাত্র অংশ গ্রহণ করত। (মুকাদ্দামাহ কিতাব মাসায়িলি ইমাম আহমাদ, ১/২৪, ২৫ পৃঃ)।
সহীহ বুখারী তে ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল থেকে বর্ণিত হাদীস রয়েছে ৫ টি, সেগুল হলঃ আরবী সহীহ বুখারী এর ৩৭৭, ২১০৮, ৪৪৭৩, ৫১০৫, ৫৮৭৯ নং হাদীস।
সহীহ মুসলিম এ ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল থেকে বর্ণিত হাদীস রয়েছে ১৯ টি, সেগুল হলঃ আরবী সহীহ মুসলিম এর ৪২০/১৬৬, ৫১৯/২১৫, ১১১৭/৫০২, ১৩১৩/৫৮১, ১৬৪৪/৭১০, ৩০৯৫/১২৮৪, ৩১৩৯/১২৯৮, ৩৯৬২/১৫৫১, ৪৩৭৭/১৬৭৬, ৪৫৭৪/১৭৫৬, ৪৬৯৬/১৮১৪, ৪৯৯৬/১৯৩৪, ৫৪৪৫/২০৮১, ৫৪৭৯/২০৯২, ৫৬০৪/২১৩৯, ৫২১০/২১৪৩, ৬০১৩/২৩০৯, ৬২৫৬/২৪২১, ৬৩০৯/২৪৪৯ নং হাদীস।
সুনানে আবু দাউদ এ ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল থেকে বর্ণিত হাদীস রয়েছে ১০ টি, সেগুল হলঃ আরবী সুনানে আবু দাউদ এর ৩৮৫,৫১৭,১৪২৮,১৮৩৭,১৯০৭,১৯৫১,২০১৬,২৩৭০,২৩৭৪,৪০০০ নং হাদীস।
সহীহ ইবন খুজাইমাহ এ Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস রয়েছে ১ টি, তা হলঃ আরবী সহীহ ইবন খুজাইমাহ ১/৫৯ হাদীস ১১২।
ইমাম ইবন হিব্বান এর সহীহ আল-ইহসান গ্রন্থে Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস রয়েছে ২৪ টি। (সেগুলর নম্বর উল্লেখ করা হল না)
ইমাম আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবন ইসমাইল আল-বুখারী রাহিমাহুল্লাহ, (সহীহ বুখারী এর লেখক), আসমা উল রিজাল শাস্ত্রে ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল এর কথাকে দলীল হিসাবে গ্রহন করেছেন। (ইমাম বুখারির কিতাব আদ দুয়াফা-৮০,১১০,২৪০,৩৫৫; আল তারিখ আল করীর ৭/২৯১)।
হাদীস শাস্ত্রে ইমাম আহমাদ সম্পর্কে ভাল মন্তব্য করেন নি এমন মুহাদ্দিস খুজে পাওয়া যাবে না, ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ, ইবন কায়্যুম, ইবন কাসীর, সহ আরো অসংখ্য মুহাদ্দিস ইমাম আহমাদ এর প্রশংসা করেছেন।
Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এর রচনাবলীঃ
প্রসিদ্ধ চারজন ইমামের মধ্যে যিনি সবচেয়ে বেশী গ্রন্থ রচনা করেছেন তিনি হলেন Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ)। শুধু তাই নয় বরং তাঁর সংকলিত হাদীস গ্রন্থ ‘‘মুসনাদ’’ সর্ব প্রসিদ্ধ। ইমামের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ নিম্নে বর্ণনা করা হলোঃ
১. হাদীস গ্রন্থ ‘‘আল মুসনাদ’’ (হাদীস সংখ্যা চল্লিশ হাজার)।
২. আয যুহদ।
৩. ফাযায়িলুস সাহাবাহ।
৪. আল ঈলাল ওয়া মারিফাতির রিজাল।
৫. আল ওয়ার‘।
৬. কিতাবুস সালাত।
৭. আর রাদ্দু আলাল জাহমিয়্যাহ।
৮. রিসালাতু ইমাম আহমাদ।
৯. আল মাসায়িল।
১০. আহকামুন্নিসা।
১১. কিতাবুল মানাসিক।
১২. কিতাবুস সুন্নাহ, ইত্যাদি।
মসনদে আহমদ সম্পর্কে দুটি কথাঃ
এ গ্রন্থ সংকলিত হওয়ার পর তার ভক্ত অনুরক্তদের জন্য তার উপদেশ ছিল, যে হাদিস এ সংকলনে পাবে না, মনে করবে তা কোন হাদিসই নয়। তার এ উক্তি থেকে বুঝা যায় তিনি তার এ সংকলন গ্রন্থে হাদিসরূপে প্রাপ্ত সকল বর্ণনাই অন্তভূক্ত করতে চেয়েছিলেন। অবশ্য তার এ উক্তি নিয়ে মুহাদ্দিস মহলে সামান্য বিতর্কের সূচনা হয়েছিল। সে বিতর্কের সমাধানও হয়েছে এভাবে ইমাম আহমদ (রহঃ) মূলতঃ তখনকার সময় পর্যন্ত প্রাপ্ত ও প্রসিদ্ধ সকল হাদিস এ সংকলনে অন্তভুর্ক্ত করার বিষয়টি বোঝাতে চেয়েছেন। অতএব তার উক্তির অর্থ এ নয় যে, এ সংকলনের বাইরে আর কোন হাদিসই থাকতে পারে না।
Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) আহলুস সুন্নাহর ইমামঃ
Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) সকল প্রকার ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত কিন্তু প্রকাশ্যভাবে সুন্নাহকে আকড়ে ধরা হতে সামান্যতম ছাড় দিতে প্রস্তুত নন, প্রয়োজনে জীবন জেতে পারে তবুও সুন্নাহর অনুসরণ বর্জন হতে পারে না, ইমাম ইসহাক বিন রাহুয়াহ (রহঃ) বলেন, ‘‘যদি ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল না হতেন এবং তাঁর ইসলামের জন্য ত্যাগ স্বীকার না হত তাহলে ইসলাম বিনাশ হয়ে যেত, অর্থাৎ যখন সকলেই ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় কুরআনকে মাখলুক হিসাবে স্বীকার করে নিল, তখন পৃথিবীর বুকে একজনই মাত্র ইসলামের সঠিক বিশ্বাস ধারণ করেছিলেন, তিনিই হলেন ইমাম আহমাদ। আল্লাহ তা’আলা তাঁর মাধ্যমেই ইসলামের সঠিক আকীদাহ্ বিশ্বাসকে টিকিয়ে রেখেছিলেন।
Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এর আকীদাহ্-বিশ্বাসঃ
পৃথিবীর বুকের সকল আলেম সামাজ খলিফার হুকুমে যখন ইচ্ছা অনিচ্ছায় সকলেই মুতাযিলাদের বাতিল আকীদাহ-বিশ্বাস গ্রহণ করে তখন একক ব্যক্তি যিনি কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে সঠিক আকীদাহ্ বিশ্বাসের উপর অটল ছিলেন। এমনকি নির্মম, নিষ্ঠুর নির্যাতনেও তিনি সঠিক আকাদীহ্ হতে সামান্যতমও বিচ্যুত হননি। সুতরাং একবাক্যে বলা যায় যে, তিনি সঠিক আকীদায় শুধু বিশ্বাসী নয় বরং সঠিক আকীদায় বিশ্বাসীদের অন্যতম ইমাম ছিলেন।
তার আকিদা বিশ্বাস সম্পর্কে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের কোন ইমাম, মুজতাহিদ, মুহাদ্দিস সন্দেহ পোশণ করে না। তার আকিদা বিশ্বাস শতভাগ বিশুদ্ধ ছিল। আকিদা সম্পর্কে তিনি “কিতাবুস সুন্নাহ” এবং “আর রাদ্দু আলাল জাহমিয়্যাহ” নামে দুটি কিতাব লেখেন। যা আজ ও খাটি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আলেমদের নিকট দলীল হিসাবর পরিগনিত হয়।
Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এর উপর রাষ্ট্রীয় বা সরকারী নির্যাতন
‘কুরআন আল্লাহর সৃষ্টি’ দাবীর বিরোধিতা করায় Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) কে রাষ্ট্রীয়ভাবে চরম নির্যাতনের স্বীকার হ’তে হয়েছিল। এটি ছিল কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী আক্বীদা, যার বিরুদ্ধে ইমাম আহমাদ কঠোর ও অনড় অবস্থান নিয়েছিলেন। মূলতঃ কুরআন হ’ল আল্লাহর কালাম। এটা সৃষ্ট নয়।
নির্যাতনের বিবরণঃ
হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) লিখেছেন, ‘খলীফা মামূন বাগদাদের প্রতিনিধি ইসহাক্ব বিন ইবরাহীম বিন মু‘ছআবকে পত্র মারফত নির্দেশ দেন যে, তিনি যেন মানুষকে ‘খলকে কুরআন’-এর দিকে আহবান জানান। পত্র পেয়ে ইসহাক্ব বিন ইবরাহীম একদল হাদীছ বিশারদকে তলব করে তাদেরকে খলকে কুরআনের প্রতি সমর্থন করার আহবান জানান। কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করেন। ইসহাক্ব বিন ইবরাহীম তাদেরকে প্রহার ও ভাতা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেন। ফলে তাদের অধিকাংশ অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাতে সমর্থন ব্যক্ত করেন। কিন্তু Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) ও মুহাম্মাদ বিন নূহ আল-জুনদ তাদের মতের উপর অটল থাকেন। ফলে খলীফার নির্দেশে দু’জনকে এক উটে চড়িয়ে খলীফার নিকট পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তখন তারা দু’জন শৃঙ্খলাবদ্ধ ছিলেন।
তার সাথী মুহাম্মাদ বিন নূহ (রহঃ) পথিমধ্যেই মারা যান। ইমাম আহমাদ (রহঃ) তাঁর জানাযা পড়ান। কয়েদখানায় Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) পায়ে বেড়ি বাঁধা অবস্থায় কয়েদীদের ছালাতে ইমামতী করতেন। ইতিমধ্যে খলীফা মামূন মারা যান এবং মু‘তাছিম বিল্লাহ খলীফা হন।
খলীফা মু‘তাছিম বিল্লাহর (১৮০-২২৭ হিঃ) আমলে Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) উপরে নির্যাতনঃ
Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) কে কয়েদখানা হ’তে বের করে খলীফা মু‘তাছিম-এর সম্মুখে উপস্থিত করা হয়। ইমাম আহমাদ বলেন, ‘আমি শিকলগুলোর জন্য হাঁটতে পারছিলাম না। আমি মু‘তাছিমের ভবনে উপস্থিত হ’লাম। আমাকে একটি ঘরে ঢুকিয়ে দেয়া হ’ল। সেখানে কোন বাতি ছিল না। আমি ওযূ করার জন্য মনস্থ করলাম। হাত বাড়িয়ে পানি ভর্তি একটি পাত্র পেলাম। আমি তা দ্বারা ওযূ করলাম। তারপর ছালাতের জন্য দাঁড়ালাম। কিন্তু কিবলা ঠিক করতে পারলাম না। ভোর হ’লে বুঝতে পারলাম যে আমি কিবলামুখী হয়েই ছালাত আদায় করেছি। আল-হাম্দুলিল্লাহ।
পরের দিন মু‘তাছিম বিল্লাহ আব্দুর রহমান নামের একজনকে বললেন, তুমি তার সাথে কথা বল। আব্দুর রহমান আমাকে বললেন, কুরআনের ব্যাপারে আপনার অভিমত কি? আমি বললাম, ইলম সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? তিনি নিশ্চুপ রইলেন। আমি বললাম, পবিত্র কুরআন আল্লাহর জ্ঞান বিশেষ। আর যে ব্যক্তি বিশ্বাস করল যে, আল্লাহ মাখলূক, সে আল্লাহ্কে অস্বীকার করল। আব্দুর রহমান বলল, আল্লাহ ছিলেন। কিন্তু কুরআন ছিল না। আমি বললাম, আল্লাহ ছিলেন কিন্তু তাঁর ইলম ছিল না। এবার তিনি চুপসে গেলেন। এভাবে দীর্ঘ তর্ক-বিতর্ক চলল।
তারপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনও তারা Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এর সাথে বির্তক করে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইমাম আহমাদের কন্ঠ সুউচ্চ ছিল এবং তাঁর দলীল তাদেরকে পরাজিত করে। বিতর্কে নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু পবিত্র কুরআন-সুন্নাহর উদ্ধৃতি দেয়ার মত যোগ্যতা তাদের কারো ছিল না। আলোচনার মধ্যে খলীফা বলেন, আহমাদ! আপনি প্রশ্নের জবাব দিন। আমি বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন! তারা আমার সামনে মহান আল্লাহর কিতাবের একটি আয়াত বা রাসূল (সাঃ) এর একটি হাদীস পেশ করুক। আমি তাদেরকে জবাব দিব। অবশেষে তাঁর দলীল-প্রমাণের সাথে পেরে না উঠে তারা খলীফাকে উত্তেজিত করে তুলল এই বলে যে, হে আমীরুল মুমিনীন! লোকটি কাফের ও বিভ্রান্ত-বিভ্রান্তকারী।
তাদের উস্কানিতে খলীফা ক্রোধান্বিত হ’লেন। ইমাম আহমাদ বলেন, ‘খলীফা আমাকে বললেন, আল্লাহ তোমাকে অভিশপ্ত করুন। আমি আশা করেছিলাম, তুমি আমার প্রশ্নের জবাব দিবে। কিন্তু তুমি কোন জবাব দিলে না। তারপর বললেন, একে ধরে বিবস্ত্র করে ফেল। তারপর (মাটিতে) হেঁচড়াও’।
Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) বলেন, আমাকে তারা বিবস্ত্র করে ফেলল এবং মাটিতে হেঁচড়াল। আমি চরম নির্যাতনের শিকার হ’লাম। আমি বললাম, আমীরুল মুমিনীন! মহান আল্লাহ্কে ভয় করুন। আল্লাহ্কে ভয় করুন। রাসূল (সাঃ) বলেছেন,لاَ يَحِلُّ دَمُ امْرِئٍ مُسْلِمٍ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ‘যে মুসলিম সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তার রক্ত প্রবাহিত করা হালাল নয়’। এমতাবস্থায় আপনি কিসের ভিত্তিতে আমার রক্তকে হালাল ভাবছেন, অথচ আমি তো সেরূপ কোন অপরাধ করিনি? হে আমীরুল মুমিনীন! স্মরণ করুন, আজ আমাকে যেমন আপনার সামনে দাঁড়াতে হয়েছে, তেমনি আপনাকেও একদিন আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। মনে হ’ল, একথা শুনে তিনি থমকে গেলেন। কিন্তু খলীফার পাশে থাকা লোকেরা বলতে লাগল, আমীরুল মুমিনীন! নিশ্চয়ই লোকটি ভ্রান্ত, বিভ্রান্তকারী ও কাফের। ফলে খলীফা আমাকে নানা রকম শাস্তি দিতে লাগলেন। জল্লাদদের আনা হ’ল। তারা একেকজন আমাকে দু’টি করে চাবুক মারতে শুরু করল। একজন দু’টি চাবুক মেরে সরে যাচ্ছে, আর অপরজন এসে অনুরূপ দু’টি চাবুক মারছে। তারা আমাকে আঘাতে আঘাতে জর্জরিত করে ফেলে। আমি কয়েকবার বেহুঁশ হয়ে পড়ি। আঘাত থেমে গেলে আমার চেতনা ফিরে আসে। মু‘তাছিম তার মতাদর্শ গ্রহণ করার আহবান জানাচ্ছেন। কিন্তু আমি তার আহবানে সাড়া দিলাম না। তারা পুনরায় প্রহার করতে শুরু করে। খলীফা তৃতীয়বারের মত আমার নিকটে এসে আহবান জানালেন। কিন্তু বেদম প্রহারের চোটে আমি তার বক্তব্য বুঝতে পারিনি। তারা আবারো আমাকে মারতে শুরু করে দিল। আমি বেহুঁশ হয়ে গেলাম। আমি প্রহারও অনুভব করতে পারছিলাম না। খলীফা ভয় পেয়ে যান এবং আমাকে ছেড়ে দিতে নির্দেশ করেন। এটা ছিল ২২১ হিজরীর ২৫শে রমযানের ঘটনা।
এরপর খলীফা Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) কে মুক্তি দিয়ে দেন। সেদিন Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) কে ত্রিশের অধিক চাবুক মারা হয়। কেউ বলেন, আশিটি। কিন্তু আঘাত ছিল বেদম ও তীব্র।
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলকে যখন দারুল খেলাফত হ’তে ইসহাক্ব বিন ইবরাহীমের গৃহে নিয়ে যাওয়া হ’ল, তখন তিনি ছায়েম ছিলেন। ছিয়াম ভেঙ্গে দুর্বলতা দূর করার জন্য তাকে ছাতু এনে দেয়া হয়। কিন্তু তিনি ছিয়াম ভাঙ্গতে অস্বীকার করেন এবং ছিয়াম পূর্ণ করেন। যোহরের সময় তিনি লোকদের সাথে ছালাত আদায় করলেন।
বর্ণিত আছে যে, ইমাম আহমাদকে যখন প্রহার করার জন্য দাঁড় করানো হয় তখন তাঁর পায়জামার ফিতা ছিঁড়ে গিয়েছিল। তিনি শংকিত হয়ে পড়লেন পায়জামা খসে পড়ে যায় কি না। তাই তিনি সতর ঢেকে নিয়ে আল্লাহর কাছে দো‘আ করলেন। ফলে মহান আল্লাহ তাঁর পায়জামা পূর্বের ন্যায় করে দেন। আরো বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছিলেন, হে সাহায্যপ্রার্থীদের সাহায্যকারী! হে বিশ্বজগতের মা‘বূদ। তুমি যদি জেনে থাকো, আমি তোমারই সন্তুষ্টি লাভে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত আছি তাহ’লে আমার ইযযত ক্ষুন্ন হ’তে দিও না।
নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তন ও চিকিৎসা গ্রহণঃ
নিজ গৃহে ফিরে আসার পর চিকিৎসক এসে তার দেহ হ’তে থেতলে যাওয়া নষ্ট গোশত কেটে ফেলেন এবং তাঁর চিকিৎসা করতে থাকেন। খলীফার প্রতিনিধি Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এর খোঁজ-খবর রাখছিলেন। আল্লাহ তাঁকে সুস্থতা দান করার পর তিনি কিছুদিন জীবিত থাকেন। যারা তার উপর অত্যাচার চালিয়েছিল তন্মধ্যে বিদ‘আতীদের ব্যতীত তিনি সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে তিনি কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতটি তেলাওয়াত করতে থাকেন- وَلْيَعْفُوْا وَلْيَصْفَحُوْا ‘তারা যেন তাদের ক্ষমা করে এবং তাদের দোষ-ত্রুটি উপক্ষো করে’ (নূর ২৪/২২)।
নির্যাতনের পর Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এর অবস্থানঃ
দারুল খেলাফত হ’তে ইমাম আহমাদ নিজ বাড়িতে ফিরে এসে অবস্থান করতে থাকেন। নিজ সম্পদ থেকে প্রতি মাসে প্রাপ্ত মাত্র সতের দিরহাম দিয়ে পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় নির্বাহ করতেন এবং তাতেই তুষ্ট থাকতেন।
এরপর খলীফা মুতাওয়াক্কিল যখন খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি নির্যাতনের ধারা তুলে নেন। কিন্তু ইবনুল বালখী নামক এক বিদ‘আতী খলীফার নিকটে নালিশ করল যে, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলের আশ্রয়ে জনৈক ব্যক্তি গোপনে লোকদের থেকে বায়‘আত নিচ্ছে। ফলে খলীফার নির্দেশে রাতে Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এর ঘরে তল্লাশী চালানো হয়। খলীফার লোকেরা ইমাম সাহেবের গৃহে তল্লাশী করে বুঝতে পারে যে, ইমাম আহমাদের উপরে অপবাদ দেয়া হয়েছে।
খলীফা মুতাওয়াক্কিল-এর নিকটে যখন এ সংবাদ গেল এবং জানতে পারলেন যে, Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) নির্দোষ, তখন তিনি দশ হাযার দিরহাম ইমাম আহমাদের নিকটে প্রেরণ করেন। কিন্তু ইমাম আহমাদ মুদ্রাগুলি গ্রহণ করতে অস্বীকার করলেন। খলীফার দূত ইয়াকূব বিন ইবরাহীম বললেন, ‘হে আবূ আব্দুল্লাহ! মুদ্রাগুলি গ্রহণ করাই আপনার জন্য কল্যাণকর মনে করছি’। এই বলে তিনি দিরহামগুলি ইমাম আহমাদের নিকটে রেখে চলে গেলেন।
ইমাম আহমাদ মুদ্রাগুলি দরিদ্রদের মাঝে বণ্টন করে দেন। এমনকি তিনি একটি দিরহামও রাখেননি। মুদ্রাগুলি যে থলেতে ছিল তিনি সেটাও দান করে দেন। অথচ তার পরিবারের লোকজন তখন চরম অভাব-অনটনে জীবন যাপন করছিল।
খলীফা মুতাওয়াক্কিল ইমাম আহমাদকে তার নিকটে যাওয়ার জন্য বলেন। বিষয়টি ইমাম আহমাদকে অবহিত করা হ’ল। ইমাম আহমাদ বললেন, আমি বৃদ্ধ ও দুর্বল। কিন্তু খলীফা পুনরায় সংবাদ পাঠালেন যে, যেকোন প্রকারেই হোক তাঁকে আমার কাছে আসতেই হবে।
অসুস্থতা সত্ত্বেও ইমাম আহমাদ ছেলে ও এক স্ত্রীকে নিয়ে খলীফার দরবারে পৌঁছলেন। শীর্ষনেতৃবর্গ প্রতিদিন ইমাম আহমাদের নিকট উপস্থিত হয়ে খলীফার সালাম পৌঁছাতেন। খলীফা তার নিকট উক্ত গৃহের উপযোগী কোমল বিছানা ও অন্যান্য সরঞ্জামাদী পাঠিয়ে দেন। খলীফা প্রতিদিন তাঁর নিকটে ঝুড়ি ভর্তি রকমারী খাদ্য, ফল-ফলাদি ও বরফ পাঠিয়ে দিতেন। খলীফা ভাবতেন, তিনি তা থেকে আহার করছেন। কিন্তু ইমাম আহমাদ তা থেকে কিছুই খেতেন না। বরং তিনি লাগাতার ছিয়াম রাখতেন। এভাবে কোন খাদ্য গ্রহণ না করে তিনি আটদিন অবস্থান করেন। এছাড়াও তিনি ছিলেন অসুস্থ। ওবায়দুল্লাহ বিন ইয়াহ্ইয়া বিন খাকান খলীফার পক্ষ থেকে উপঢৌকন হিসাবে বিপুল সম্পদ নিয়ে উপস্থিত হন। কিন্তু ইমাম আহমাদ সেগুলি গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। ওবায়দুল্লাহ বিন ইয়াহ্ইয়ার পীড়াপীড়ি সত্ত্বেও তিনি তা গ্রহণ করলেন না। অগত্যা আমীর সম্পদগুলি নিজ হাতে ইমাম আহমাদের পরিবার-পরিজনের মাঝে বণ্টন করে দেন।
খলীফা তাঁর জন্য প্রতি মাসে চার হাযার দিরহাম নির্ধারিত করে ভাতা চালু করলে Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) খলীফাকে নিষেধ করেন। তিনি তার পরিবারকে বলেন, ‘আমার আর অল্প কটা দিন বাকী। আমার মরণ চলে এসেছে। তারপর হয়ত জান্নাতে যাব বা জাহান্নামে যাব। আমরা কি এমন অবস্থায় দুনিয়া থেকে যাব যে আমাদের পেট এসব সম্পদ গ্রহণ করেছে’। কিন্তু পরিবারের লোকেরা ছহীহ হাদীসের মাধ্যমে তার বিপক্ষে দলীল দেন যে, ‘প্রার্থনা ও মোহ ব্যতীত এই সম্পদ থেকে যা কিছু তোমার নিকট আসবে, তা তুমি গ্রহণ করবে’।
তাছাড়া তারা এই যুক্তিও পেশ করে যে, ইবনু ওমর ও ইবনু আববাস (রাঃ) বাদশাহর হাদিয়া গ্রহণ করেছেন। জবাবে তিনি বললেন, ‘এটা আর ওটা সমান নয়। আমি যদি জানতাম যে, এই সম্পদ যোর-যুলুম ব্যতীত বৈধভাবে সংগৃহীত হয়েছে, তাহ’লে আমি পরওয়া করতাম না’।
রোগবৃদ্ধিঃ
Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এর দুর্বলতা বাড়তে থাকে। খলীফা ডাক্তার প্রেরণ করেন। ডাক্তার বললেন, ‘আমীরুল মুমিনীন! তার রোগ হ’ল খাদ্যের স্বল্পতা এবং ছিয়াম ও ইবাদতের আধিক্য। তারপর খলীফার মা ইমাম আহমাদকে দেখার জন্য তার নিকটে আবেদন পাঠালেন। ইমাম আহমাদ প্রথমে অপরাগতা প্রকাশ করলেও পরে এই আশায় সম্মতি প্রদান করেন যে, তাতে হয়ত তিনি তাড়াতাড়ি বাগদাদে ফিরে যেতে পারবেন। ইমাম আহমাদের নির্দেশে একটি খচ্চর নিয়ে আসা হ’ল। ইমাম আহমাদ তাতে আরোহণ করে খলীফার মজলিসে এসে উপস্থিত হ’লেন।
খলীফার মা বললেন, বৎস! এই লোকটির ব্যাপারে মহান আল্লাহ্কে ভয় কর। তুমি লোকটাকে তার পরিজনের কাছে ফিরিয়ে দাও।
খলীফা তাকে চলে যাওয়ার অনুমিত দেন এবং তার জন্য একটি জাহাজ প্রস্তুত করেন। কিন্তু Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) তাতে আরোহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি একটি ছোট নৌকায় চড়ে গোপনে বাগদাদে প্রবেশ করেন। Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) কিছুদিন যাবত খলীফা ও তার লোকদের সাথে মেলামেশার জন্য আক্ষেপ করতে থাকেন এবং বলতে থাকেন, আমার জীবনের দীর্ঘ সময় তাদের থেকে নিরাপদ ছিলাম। কিন্তু শেষ বয়সে এসে বিপদগ্রস্ত হ’লাম।
খলীফার নিকট থাকাকালে Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) তীব্র অনাহারে কাতর হয়ে পড়েছিলেন এবং মৃত্যুমুখে পতিত হওয়ার উপক্রম হয়েছিলেন। এরপরও তিনি খলীফার দেয়া কোন খাদ্য ও উপহার গ্রহণ করেননি। ইমাম আহমাদের পুত্র আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বলেন, আববাজান ছামুর্রা থেকে ফিরে আসার পর আমরা দেখতে পেলাম, তার চক্ষুদ্বয় কোটরে ঢুকে গেছে। ছয় মাসের আগে সুস্থ ও সতেজ হননি।
Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এর ওফাতঃ
২৪১ হিজরীতে রবীউল আউয়াল মাসের জুম‘আর দিনে এই মহান মুজতাহিদ, সুন্নাতের ধারক ও হাদীছের রক্ষক আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে জগতবাসীকে কাঁদিয়ে পরপারের যাত্রী হন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। তাঁর মৃত্যুতে মানুষের এত ভিড় হয়েছিল যে, রাজপথ সব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
খলীফা তাঁর জন্য কাফনের কাপড় পাঠালে ইমাম সাহেবের ছেলেরা তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন। কেননা Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) জীবদ্দশায় খলীফার কোন কিছু গ্রহণ করতেন না। বরং তার ছেলেরা একটি কাপড়ের ব্যবস্থা করেন, যা ইমাম সাহেবের বাড়ির চাকরাণী বুনন করেছিল। তাঁর জানাযায় বিপুল সংখ্যক লোকের সমাগম হয়েছিল বিধায় একাধিকবার তার জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।
শিক্ষণীয় বিষয়সমূহঃ
উপরোক্ত ঘটনা থেকে নিম্নরূপ শিক্ষা মেলে-
(১) Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) সুন্নাতের ধারক-বাহক হওয়ায় নিদারুণ কষ্ট সহ্য করেছিলেন। তারপরও তিনি হক্ব হ’তে বিন্দুমাত্র হটে যাননি।
(২) নিজেদের স্বার্থ হাছিলের জন্য বিদ‘আতীরা সরকারের অনুগামী গোলাম হয়ে থাকে। নিজেদের স্বার্থে তারা সুন্নাত ও সুন্নাতের বাহককে দুনিয়া হ’তে বিদায় দিতেও কোনরূপ দ্বিধা করে না।
(৩) শাসক শ্রেণী কর্তৃক ইমাম ও শীর্ষস্থানীয় আলেমগণ নির্যাতিত হয়েছেন। যা আজও অব্যাহত আছে।
(৪) ইমাম আহমাদের লাখো সমর্থক থাকা সত্ত্বেও তিনি ছবর করেছেন। তিনি চরম ধৈর্যের মাধ্যমে খলীফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা থেকে বিরত থেকেছেন।
(৫) আজকে যারা অধৈর্য হয়ে মুসলিম সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করছে তাদের উচিৎ Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এর জীবনী থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা।
(৬) যালেম সরকারের হাতে এক সময় ক্ষমতা থাকলেও শেষে তাদেরই পরাজয় ঘটে।
Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) সম্পর্কে বিদ্যানগণঃ
Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) সম্পর্কে পূর্ববর্তী মুহাদ্দিসদের অভিমতঃ
১। ইমাম আলী ইবন আল মাদীনী (মৃঃ ২৩৪ হিজরি) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা’আলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পর দুই জন ব্যাক্তির মাধ্যমেই ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, একজন হলেন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু অপরজন হলেন Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ)”। (তবকাত আল-হানাবিলাহ, পৃঃ ১/৩১)।
২। ইমাম আব্দুল ওয়াহহাব আল ওয়াররাক বলেনঃ “আমি Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এর মত আর কাউকে দেখিনি, তাকে জিজ্ঞাসা করা হল আপনি অন্যের চেয়ে ইমাম আহমাদের মাঝে জ্ঞান বা মর্যাদার বেশী পেয়েছেন কি? তিনি বললেনঃ Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এমন একজন ব্যাক্তি যাকে ৬০,০০০ (ষাট হাজার) প্রশ্ন করা হল, তিনি সকল প্রশ্নের জবাবে হাদ্দাছানা ওয়া আখবারানা অর্থাৎ শুধু হাদীস হতে জাবাব দিয়েছেন অন্য কিছু বলেন নি”। (তবকাত আল-হানাবিলাহ, পৃঃ ১/৯)।
৩। ইমাম আবু হাতীম মুহাম্মাদ বিন ইদ্রীস আর-রাযী (মৃঃ ২৭৭ হিজরি) বলেছেনঃ “সহীহ ও যইফ(দুর্বল) হাদীস সম্পর্কে আহমাদ ইবন হাম্বল খুব ভাল বুঝতেন” (আল জারাহ ওয়াত্তাদিল ১/৩০২)।
৪. ইমাম আবু হাতীম আরো বলেছেনঃ “যদি তুমি কোন মানুষকে দেখ আহমাদ ইবন হাম্বলকে ভালবাসতে তাহলে যেনে রেখ সে একজন সুন্নাহ এর অনুসারী”। (আল জারাহ ওয়াত্তাদিল ১/৩০৮)।
৫. ইমাম আবু রাজা কুতাইবা বিন সা’ইদ (মৃঃ ২৪০ হিজরি) বলেছেনঃ “আহমাদ ইবন হাম্বল হলেন সমগ্র পৃথিবীর ইমাম”। (আল জারাহ ওয়াত্তাদিল ১/২৯৫)।
৬। ইমাম আবু রাজা কুতাইবা আরো বলেছেনেঃ “আস-সাওরী এখানে নেই, ন্যায়পরায়নতা মরে গেছে; আহমাদ (ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল) এখানে নেই, মানুষেরা দ্বীনের (ধর্মের) মধ্যে বিদ’আত প্রবেশ করিয়ে ফেলবে”। (তারিখে বাগদাত ৪/৪১৭)।
৯. ইমাম আবু উবাইদ আল-কাসীম বিন সালাম (মৃঃ ২২৪ হিজরি) বলেছেনঃ “জ্ঞান চার জনের মধ্যে শেষ হয়েছে (আহমাদ, ইবন আল-মাদীনী, ইবন মঈন এবং আবু বকর ইবন আবী শায়বাহ), আহমাদ ইবন হাম্বল তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ফকীহ ছিলেন” (আল জারাহ ওয়াত্তাদিল ১/২৯৩)।
১০. আবু ছাওর ইবরাহীম বিন খালীদ আল-ফকীহ (মৃঃ ২৪০ হিজরি) বলেছেনঃ “Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) বড় ফকীহ ছিলেন সুফিয়ান ছাওরী থেকে” (আল জারাহ ওয়াত্তাদিল ১/২৯৩)।
১১. ইমাম আলী ইবন আব্দুল্লাহ আল-মাদীনী (মৃঃ ২৩৪ হিজরি) বলেছেনঃ “আমাদের সঙ্গীদের মধ্যে আবু আব্দুল্লাহ আহমাদ ইবন হাম্বল(ইমাম আহমাদ) থেকে বড় হাফীয অন্য কেউ নেই”(আল জারাহ ওয়াত্তাদিল ১/২৯৫)।
১২. ইমাম ইবন আল-মাদীনী আরো বলেছেনঃ “আহমাদ ইবন হাম্বল আমাদের নেতা(ইমাম)”। (তারীখে বাগদাদ ৪/৪১৭, মানাকিব –১০৯)।
১৩. আমর বিন মুহাম্মাদ বিন বুকায়র আল-নাকীব (মৃঃ ২৩২ হিজরি) বলেছেনঃ “যদি আহমাদ ইবন হাম্বল হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে আমাকে সঙ্গতি দেয়, তাহলে আমি ভ্রুক্ষেপ করি না যে কে আমার বিরধিতা করছে”। (আল জারাহ ওয়াত্তাদিল ১/২৯৬)।
১৪. মুহাদ্দিস কবীর ইমাম আহমাদ বিন সিনান আল-ওয়াসিতি (মৃতঃ ২৫৯ হিজরি) বলেছেনঃ “ইয়াযীদ বিন হারুন (মৃতঃ ২০৬ হিজরি) কে Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) থেকে অন্য কাউকে বেশী প্রশংসা করতে আমি দেখি নি। যখন তিনি আমাদের নিকট কোন হাদীস বর্ণনা করতেন তখন তাকে (ইমাম আহমাদ) তার (ইয়াযীদ বিন হারুন) সাথে বসাতেন; এবং যখন আহমাদ অসুস্থ হলেন, তার (ইমাম আহমাদ) সুস্থ হওয়ার খবর নেওয়ার জন্য ইয়াযীদ বিন হারুন তার (ইমাম আহমাদ) কাছে গমন করতেন” (আল জারাহ ওয়াত্তাদিল ১/২৯৭)।
১৫. আসমা উল রিজাল এর একজন প্রখ্যাত ইমাম, ইমাম ইয়াহইয়া ইবন মঈন (মৃতঃ ২৩৩ হিজরি) বলেছেনঃ “মানুষেরা বলে যে আহমাদ ইবন হাম্বল এর মত আমার হওয়া উচিত, না আল্লাহর শপথ! আমি আহমাদ ইবন হাম্বল এর মত হতে পারব না” (আল জারাহ ওয়াত্তাদিল ১/২৯৮)।
১৬. আবু আল আব্বাস মুহাম্মাদ বিন আল হুসাইন বিন আব্দুর রাহমান আল-আনমাতি (মৃঃ ২৯৩ হিজরি) বলেছেনঃ “আমরা একটি জনসমাবেশে ছিলাম যেখানে ইয়াহইয়া ইবন মঈন, আবু খাইথামাহ জুহাইর বিন হারব, প্রধান আলেমদের একটি দল উপস্থিত ছিল। তারা আহমাদ ইবন হাম্বল এর প্রশংসা করছিলেন এবং তার গুনাবলী ব্যক্ত করছিলেন, তাই একজন বললোঃ ‘এসব কথা বলার ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রম করবেন না।’ ইয়াহইয়া ইবন মঈন বললেনঃ ‘আহমাদ ইবন হাম্বল এর বেশী প্রশংসা করা কি নিন্দামূলক কাজ? এমনকি যদি আমরা তার প্রশংসা করা শুরু করি আমাদের সকল সমাবেশে তার পরও আমরা তার সম্পূর্ণ গুনাবলী বর্ণনা করে শেষ করতে পারব না’”। (হিলায়াত আল আউলিয়া৯/১৬৯,১৭০ এবং তারিখে বাগদাদী ৪/৪২১))।
১৭. মুহাদ্দিস আবু জা’ফর মুহাম্মাদ বিন হারুন আল-মাখরামি (মৃতঃ ২৬৫ হিজরি) বলেছেনঃ “যদি তুমি কাউকে দেখ যে সে আহমাদ ইবন হাম্বলকে হীন করছে তাহলে যেনে রাখ সেই ব্যক্তি একজন পথভ্রষ্ট বিদ’আতী”। (আল জারাহ ওয়াত্তাদিল ১/৩০৯)।
১৮. ইমাম ইবরাহীম বিন ইসহাক বিন ইবরাহীম বিন বাশীর আল-হারবী (মৃঃ ২৮৫ হিজরি) বলেছেনঃ “সা’ঈদ ইবন আল-মুসাইয়াব তার জমানায় ইমাম ছিলেন, সুফইয়ান ছাওরী তার জমানায় ইমাম ছিলেন, এবং আহমাদ ইবন হাম্বল তার জমানায় ইমাম ছিলেন”। (হিলায়াত আল আউলিয়া ৯/১৬৭ এবং তারিখে বাগদাদী ৪/৪১৭)।
১৯. যখন ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইয়াহইয়া আল-নিসাবুরী আল-ধাহলী (মৃঃ ২৫৮ হিজরি) শুনেছিলেন ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল এর মৃত্যুর খবর, তখন তিনি বলেছিলেনঃ “বাগদাদের সকল মানুষ তাদের গৃহে দুঃখিত আহমাদ ইবন হাম্বল এর জন্যে”। (হিলায়াত আল আউলিয়া ৯/১৭০০।
২০. এটি শুনে, আবু আব্দুল্লাহ আল-হারিছ বিন আসাদ আল-মুহাসিবী আল-বাগদাদী (মৃঃ ২৪৩ হিজরি) বলেছেনঃ “আহমাদ ইবন হাম্বল অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন যা সুফইয়ান আছ-ছাওরী এবং আল-আওযায়ী এর সাথে ঘটেনি”। (হিলায়াত আল আওলিয়া ৯/১৬৭)।
২১. আবু আল-হাসান আলী বিন ইসমাইল বিন ইশহাক বিন সালীম আল-আশ’আরী (আবুল হাসান আশ’আরী নামে পরিচিত) (মৃঃ ৩২৪ হিজরি) বলেছেনঃ “আমাদের অভিমত এবং যেই আকীদা আমরা অনুসরন করি তা হল দৃঢ় ভাবে ধরা আল্লাহর কিতাব এবং রাসুল মুহাম্মাদ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাহ, যা সাহাবীদের থেকে বর্ণিত হয়েছে তা, তাবেয়ী এবং হাদীসের আইম্মা থেকে আমরা আশ্রয় গ্রহন করি। এবং আমরা তাও অনুসরন করি যা আবু আব্দুল্লাহ আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাম্বল (ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল) বলেছেন- আল্লাহ তার চেহারাকে উন্নীত করুক এবং তার মর্যাদা বৃদ্ধি করুক এবং তাকে সবচেয়ে ভাল বিনিময় দান করুক। যদি কোন ব্যাক্তি তার (ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল) কথার বিরুদ্ধে যায় তাহলে আমরা সেই ব্যক্তির কাছ থেকে বিরত থাকব, কারন তিনি (ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল) ছিলেন ইমাম আল-ফাযেল, এবং রা’ঈস আল-কামীল। আল্লাহ তার (ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল) মাধ্যমে সত্যকে স্পষ্ট করেছেন এবং পথভ্রষ্টতাকে দূরীভূত করেছেন। তিনি (ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল) মানহাযকে (পথকে) স্পষ্ট করেছেন (মানুশের জন্য) এবং ধ্বংস করেছেনঃ বিদ’আতীদের, বিদ’আতকে, পথভ্রষ্টদের পথভ্রষ্টতাকে, সন্দিহানদের সন্দেহকে। আল্লাহ তার দয়া দেখাক এই মুকাদ্দাম ইমামকে এবং শ্রেষ্ঠ বন্ধুকে এবং সকল মুসলিম আইম্মাদের।” (আল ইবনে আন উসুল আদ দিয়ানাহ পৃ–৪)।
২২. ইমাম হাজ্জাজ বিন আবী ইয়াকুব ইউসুফ বিন হাজ্জাজ আশ-শা’ইর আছ-ছাকাফী আল-বাগদাদী (মৃঃ ২৫৯ হিজরি) বলেছেনঃ “আমি একবার আহমাদের (ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল) কপালে চুমু দিলাম এবং বললাম, ‘হে আবু আব্দুল্লাহ! তুমি সুফইয়ান(ইমাম সুফইয়ান ছাওরী) এবং মালিকের(ইমাম মালিক) পর্যায়ে পৌঁছে গেছ’। (মানাকিব আহমদ পৃঃ ১৩৪৫)।
২৩. ইমাম আলী ইবনুল মাদীনী (রহঃ) বলেন,: আল্লাহ তা’আলা রাসূল (ছাঃ)-এর পর দু’জন ব্যক্তির মাধ্যমেই ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একজন হলেন আবূ বকর (রা.) যার মাধ্যমে মুরতাদ ও ভন্ড নাবীদের দমন করেছেন, আর অপরজন আহমাদ বিন হাম্বল, যার মাধ্যমে কুরআনের মানহানীর সময় কুরআনকে সমুন্নত করেছেন। (ত্বব্কাত আল হানাবিলাহ, ১/৩১ পৃঃ)।
২৪. ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন : আমি বাগদাদ হতে বের হয়ে ইমাম আহমাদের চেয়ে অধিক আল্লাহভীরু, তাকওয়াশীল, ফাকীহ ও জ্ঞানী আর কাউকে পাইনি। (তারিখে বাগদাদ, ৪/৪১৯ পৃঃ, মানাকিব বাইহাকী, ১/৫২৯ পৃঃ)।
আল্লাহ আমাদেরকে Imam Hambal – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এর জীবনী হ’তে শিক্ষা গ্রহণে তাওফীক্ব দান করুন। আর আমাদেরকে বিপদে-আপদে ছবর করার তাওফীক্ব দিন। অন্যদিকে শাসকদেরকে হেদায়াত দান করুন, যেন তারা প্রকৃত আলেমদেরকে যথাযথভাবে সম্মান করতে পারেন-আমীন!
আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন।
আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে বিস্তারিত জানতে লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।
আইডিসি মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
আপনি আইডিসি মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.
আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।
কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।
ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।
ইসলামী দাওয়াহ সেন্টারকে সচল রাখতে সাহায্য করুন!
ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার ১টি অলাভজনক দাওয়াহ প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠানের ইসলামিক ব্লগটি বর্তমানে ২০,০০০+ মানুষ প্রতিমাসে পড়ে, দিন দিন আরো অনেক বেশি বেড়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।
বর্তমানে মাদরাসা এবং ব্লগ প্রজেক্টের বিভিন্ন খাতে (ওয়েবসাইট হোস্টিং, CDN,কনটেন্ট রাইটিং, প্রুফ রিডিং, ব্লগ পোস্টিং, ডিজাইন এবং মার্কেটিং) মাসে গড়ে ৫০,০০০+ টাকা খরচ হয়, যা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। সেকারনে, এই বিশাল ধর্মীয় কাজকে সামনে এগিয়ে নিতে সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে আপনাদের দোয়া এবং আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন, এমন কিছু ভাই ও বোন ( ৩১৩ জন ) দরকার, যারা আইডিসিকে নির্দিষ্ট অংকের সাহায্য করবেন, তাহলে এই পথ চলা অনেক সহজ হয়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ। যারা এককালিন, মাসিক অথবা বাৎসরিক সাহায্য করবেন, তারা আইডিসির মুল টিমের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন, ইংশাআল্লাহ।
আইডিসির ঠিকানাঃ খঃ ৬৫/৫, শাহজাদপুর, গুলশান, ঢাকা -১২১২, মোবাইলঃ +88 01609 820 094, +88 01716 988 953 (নগদ/বিকাশ পার্সোনাল) ইমেলঃ info@islamidawahcenter.com, info@idcmadrasah.com, ওয়েব: www.islamidawahcenter.com, www.idcmadrasah.com সার্বিক তত্ত্বাবধানেঃ হাঃ মুফতি মাহবুব ওসমানী ( এম. এ. ইন ইংলিশ )