Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) এর জীবনী
Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) এর জীবনী
কোন হাদিস সহি আর কোন হাদিস মিথ্যা তা পার্থক্য করা যখন কঠিন হয়ে যাচ্ছিল তখন পৃথিবীতে আগমন করেন Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ)। Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) হচ্ছেন সমকালীন মুহাদ্দিছদের ইমাম। পুরো নাম হলো মুহাম্মদ বিন ইসমাইল বিন ইবরাহীম বিন মুগীরাহ বিন বারদিযবাহ। তাঁকে আমীরুল মুমিনীন ফীল হাদীছও বলা হয়। ১৯৪ হিঃ সালের ১৩ই শাওয়াল জুমআর রাত্রিতে তিনি বুখারা নামক স্থানে জন্ম গ্রহণ করেন। বুখারা তার জন্মস্থান বলে তাকে বুখারী বলা হয়।
Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) এর শৈশব কাল ও জ্ঞান অর্জনঃ
শিশুকালেই তাঁর পিতা ইন্তেকাল করেন। পিতার মৃত্যুর পর তিনি তার মাতার তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হন। দশ বছর বয়সে উপনীত হয়ে তিনি জ্ঞান চর্চার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন। অল্প বয়সেই তিনি পবিত্র কুরআন মুখস্ত করেন। শৈশব কালে মক্তবে লেখাপড়া করার সময়ই আল্লাহ্ তাঁর অন্তরে হাদীছ মুখস্ত ও তা সংরক্ষণ করার প্রতি আগ্রহ ও ভালবাসা সৃষ্টি করে দেন। ১৬ বছর বয়সেই হাদীছের প্রসিদ্ধ কিতাবগুলো পাঠ সমাপ্ত করেন।
তাঁর জীবনীতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি ছোট বেলায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। এতে তাঁর মাতা আল্লাহর কাছে খুব ক্রন্দন করেন এবং স্বীয় সন্তানের দৃষ্টি শক্তি ফেরত দেয়ার জন্য তাঁর কাছে অবিরাম দুআ করে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ এক দিন তাঁর মা স্বপ্নে দেখলেন যে আল্লাহর নবী ইবরাহীম (আঃ) তাঁকে লক্ষ্য করে বলছেনঃ ওহে! তোমার সন্তানের দৃষ্টি শক্তি ফেরত চেয়ে আল্লাহর দরবারে তোমার ক্রন্দনের কারণে তিনি তোমার সন্তানের দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন। তখন তিনি প্রকৃত ঘটনা যাচাই করার জন্য স্বীয় সন্তানের কাছে গিয়ে দেখেন সত্যিই তাঁর সন্তান সম্পূর্ণ দৃষ্টি শক্তি ফেরত পেয়েছে।
Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) এর স্মরণ শক্তির প্রখরতাঃ
১৮ বছর বয়সে তিনি হজ্জ পালনের জন্য মক্কায় গমণ করেন। মক্কায় অবস্থান করে তিনি ইলমে হাদীছের চর্চা শুরু করেন। অতঃপর তিনি এই উদ্দেশ্যে অন্যান্য দেশ ভ্রমণ করেন এবং এক হাজারেরও অধিক মুহাদ্দিছের নিকট থেকে হাদীছ সংগ্রহ করেন। জ্ঞান অর্জনের জন্য সারা রাত জেগে তিনি অত্যন্ত কঠিন পরিশ্রম করতেন। তাঁর স্মৃতি শক্তি ছিল অত্যন্ত প্রখর। বলা হয় যে তিনি সনদসহ ছয় লক্ষ হাদীছের হাফেয ছিলেন। আলেমগণ তাঁর জীবনীতে উল্লেখ করেছেন, যে কোন কিতাবে একবার দৃষ্টি দিয়েই তিনি তা মুখস্ত করে নিতেন। তাঁর জীবনীতে আরও বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি যখন বসরার মুহাদ্দিছদের হাদীছের ক্লাশে হাজির হতেন তখন অন্যান্য ছাত্রগণ খাতা-কলম নিয়ে বসে উস্তাদের নিকট থেকে হাদীছ শুনতেন এবং প্রতিটি হাদীছই লিখে নিতেন। কিন্তু Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) তা করতেন না। কয়েক দিন পর তাঁর সাথীগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ আপনি শুধু আমাদের সাথে বসে থাকেন কেন? হাদীছগুলো না লিখার কারণই বা কি? এভাবে সময় নষ্ট করে লাভ কি? সাথীরা যখন এ বিষয়ে পীড়াপীড়ি করতে থাকলো তখন ১৬ দিন পর তিনি বললেনঃ আপনারা আমার নিকট বারবার একই প্রশ্ন করছেন। তবে আপনারা যে সমস্ত হাদীছ লিখেছেন তা আমাকে পড়ে শুনান। বন্ধুরা তা দেখানোর পর তিনি সমস্ত হাদীছ মুখস্ত শুনিয়ে দিলেন এবং আরও অতিরিক্ত পনের হাজার হাদীছ শুনালেন। অতঃপর তাঁর সাথীগণ তাদের কাছে রক্ষিত কিতাবের হাদীছগুলো ইমাম বুখারীর মুখস্ত হাদীছের সাথে মিলিয়ে ভুল-ভ্রান্তি ঠিক করে নিলেন। অতঃপর তিনি বন্ধুদেরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ এরপরও কি তোমরা বলবে যে, আমি এখানে অযথা সময় নষ্ট করছি? সে দিন থেকেই হাদীছ শাস্ত্রে তারা ইমাম বুখারীকে প্রাধান্য দেয়া শুরু করলেন।
Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) বলেনঃ আমার অন্তরে এক লক্ষ সহীহ হাদীছ ও দুই লক্ষ যঈফ হাদীছ মুখস্ত রয়েছে। সহীহ বুখারীর অন্যতম ভাষ্যকার কুস্তুলানীর বক্তব্য অনুযায়ী তিনি ছয় লক্ষ হাদীছের হাফেয ছিলেন। মুহাদ্দিছ ইবনে খুযায়মা (রঃ) বলেনঃ পৃথিবীতে Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) অপেক্ষা অধিক অভিজ্ঞ এবং হাদীছের হাফেয আর কেউ জন্ম গ্রহণ করে নি। কেউ কেউ বলেনঃ খোরাসানের যমীনে Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) এর মত আর কেউ জন্ম গ্রহণ করেন নি।
Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) এর বাল্যকালের একটি ঘটনা অত্যন্ত চমকপ্রদ। তখন তিনি দশ বছর বয়সের কিশোর। এ সময় তদানিন্তন শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ ইমাম দাখিলীর ক্লাশে হাদীছের পাঠ গ্রহণ করছিলেন। মুহাদ্দিছ দাখিলী এই সনদে একটি হাদীছ উপস্থাপন করলেনঃ
سفيان عن أبي الزبير عن إبراهيم
“সুফিয়ান বর্ণনা করেন আবুয্ যুবাইর হতে আর আবুয যুবাইর বর্ণনা করেন ইবরাহীম হতে”। বালক বুখারী প্রতিবাদ করে বললেনঃ আবুয যুবাইর ইবরাহীম হতে হাদীছটি বর্ণনা করেন নি। মুহাদ্দিছ দাখিলী তাঁকে ধমক দিয়ে বললেও তিনি দৃঢ় চিত্তে এবং সবিনয়ে আরজ করলেনঃأبو الزبير عن إبراهيم নয়: বরং زبير بن عدي عن إبراهيم । আপনি দয়া করে একবার আপনার মূল কিতাবের সাথে মিলিয়ে দেখুন। এভাবে বার বার অনুরোধ করার ফলে উস্তাদের মনে সংশয় দেখা দিল। তিনি মূল কিতাব দেখে ইমাম বুখারীকে লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমার কথাই ঠিক। তখন মুহাদ্দিছ দাখিলী তার জন্য প্রাণ খুলে দুআ করলেন।
Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) হাদীছ সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেনঃ
হাদীছ সংগ্রহের জন্য Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করে অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন। সে সময় যে সমস্ত দেশে বিজ্ঞ মুহাদ্দিছগণ বসবাস করতেন তার প্রায় সবগুলোতেই তিনি ভ্রমণ করেছেন এবং তাদের নিকট থেকে হাদীছ সংগ্রহ করেছেন। খোরাসানের বিভিন্ন অঞ্চল ছাড়াও তিনি যে সমস্ত দেশে ভ্রমণ করেছেন তার মধ্যে রয়েছে মক্কা, মদীনা, ইরাক, হিজায, সিরিয়া, মিশর এবং আরও অনেক শহর।
বাগদাদে আগমণ ও তাঁর স্মরণ শক্তির পরীক্ষাঃ
তৎকালীন সমগ্র ইসলামী রাজ্যে যখন মুহাদ্দিছ হিসেবে Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) এর খ্যাতি ও পরিচিতির কথা ছড়িয়ে পড়ল তখন সেই যুগের বড় বড় মুহাদ্দিছগণ তাঁকে পরীক্ষা করতে চাইলেন। তাই তিনি যখন বাগদাদে আগমণ করলেন তখন চারশত মুহাদ্দিছ একত্রিত হয়ে ১০০টি সহীহ হাদীছ নির্বাচন করে তার সনদ ও মতন পাল্টিয়ে দিয়ে ১০ ভাগে বিভক্ত করে দশজন মুহাদ্দিছের হাতে সোপর্দ করলেন। অতঃপর তাঁর জন্য হাদীছের মজলিস স্থাপন করা হলো। তিনি যখন আসন গ্রহণ করলেন তখন প্রথমে একজন মুহাদ্দিছ ১০টি হাদীছ নিয়ে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে একটি একটি করে সবগুলো হাদীছ পাঠ করে শেষ করলেন। প্রতিটি হাদীছ পড়া শেষ হলেই ইমাম বুখারী বলতেনঃ لاأعرفه অর্থাৎ এ ধরণের কোন হাদীছ আমার জানা নেই। এমনিভাবে ১০ জন বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ১০০টি হাদীছ তাঁর সামনে পেশ করলেন। সকল হাদীছের ক্ষেত্রেই তিনি একই কথা বললেন। পরিশেষে তিনি সকলকে ডেকে উলটপালট কৃত হাদীছগুলোর প্রত্যেকটি হাদীছকে তার আসল সনদের দিকে ফিরিয়ে দিলেন এবং ঠিক করে দিলেন। হাদীছগুলোর সনদ থেকে কোন রাবীর নাম বাদ পড়েনি এবং মতনসমূহ থেকে একটি শব্দও ছুটে যায়নি। এমনকি হাদীছগুলো সঠিকভাবে সাজানোতে মুহাদ্দিছগণ তাঁর কোন ভুল-ত্র“টি ধরতে পারেন নি। বলা হয় যে, সমরকন্দে যাওয়ার পরও তাঁকে একই নিয়মে পরীক্ষা করা হয়েছিল। এতে সেই যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ হিসেবে সকলেই তাঁকে স্বীকৃিত প্রদান করেন।
Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) এর উস্তাদ ও ছাত্রগণঃ
Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) থেকে অসংখ্য মুহাদ্দিছ সহীহ বুখারী বর্ণনা করেছেন। খতীব বাগদাদী (রঃ) বুখারীর অন্যতম রাবী ফিরাবরির বরাত দিয়ে বলেন যে, তার সাথে প্রায় সত্তর হাজার লোক Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) থেকে সরাসরি সহীহ বুখারী পড়েছেন। তাদের মধ্যে আমি ছাড়া আর কেউ বর্তমানে জীবিত নেই। তাঁর ছাত্রদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম মুসলিম, ইমাম তিরমিজী, ইমাম নাসাঈ। তিনি যাদের কাছে হাদীছ শুনেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল, ইসহাক বিন রাহওয়াই এবং আরও অনেকেই। তিনি আটবার বাগদাদে আগমণ করেছেন। প্রতিবারই তিনি ইমাম আহমাদ বিন হাম্বালের সাথে দেখা করেছেন। প্রত্যেক সাক্ষাতের সময়ই ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রঃ) তাঁকে খোরাসান ছেড়ে দিয়ে বাগদাদে স্থায়ীভাবে বসবাস করার প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন।
সহীহ বুখারী সংকলনের কারণঃ
Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) পূর্বে শুধু সহীহ হাদীছসমূহ একত্রিত করে কেউ কোন গ্রন্থ রচনা করেন নি। সহীহ বুখারী সংকলনের পূর্বে আলেমগণ সহীহ ও যঈফ হাদীছগুলোকে এক সাথেই লিখতেন। কিন্তু Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ)ই সর্বপ্রথম যঈফ হাদীছ থেকে সহীহ হাদীছগুলোকে আলাদা করে লিখার কাজে অগ্রসর হন।
তিনি তাঁর বিশিষ্ট উস্তাদ ইসহাক বিন রাহওয়াই হতে এই মহৎ কাজের অনুপ্রেরণা লাভ করেন। তিনি স্বয়ং বর্ণনা করেন যে, এক দিন আমি ইসহাক ইবনে রাহওয়াইয়ের মসজিদে বসা ছিলাম। তিনি বললেনঃ তোমাদের কেউ যদি হাদীছের এমন একটি গ্রন্থ রচনা করত, যাতে শুধু সহীহ হাদীছগুলোই স্থান পাবে, তাহলে খুবই সুন্দর হতো। মজলিসে উপস্থিত সকলেই তাঁর কথা শুনলেও এ কাজে কেউ অগ্রসর হওয়ার সাহস পায় নি। ইমাম ইসহাকের কথাগুলো Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) এর অন্তরে গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল। তিনি সেই দিন হতেই এই মহান দায়িত্ব পালন করবেন বলে মনে মনে স্থির করলেন।
তাঁর জীবনীতে আরও উল্লেখ করা হয় যে, তিনি একবার স্বপ্নে দেখলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র শরীরে মাছি বসছে। তিনি এতে কষ্ট পাচ্ছেন। আর Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) হাতে পাখা নিয়ে তাঁর পবিত্র শরীর থেকে মাছিগুলো তাড়িয়ে দিচ্ছেন। তিনি এই স্বপ্নের কথা সেই যুগের একাধিক আলেমের কাছে প্রকাশ করলে সকলেই বললেন যে, তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীছের সাথে যে সমস্ত জাল ও বানোয়াট হাদীছ ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে তা থেকে সহীহ হাদীছগুলো আলাদা করবে। আলেমদের ব্যাখ্যা শুনে অবিমিশ্রিত সহীহ হাদীছ সম্বলিত একটি কিতাব রচনার প্রতি তাঁর আগ্রহ আরও বৃদ্ধি পায়।
সহীহ বুখারী রচনায় Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) এর শর্ত ও সতর্কতাঃ
Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) তাঁর কিতাবে কেবল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত সহীহ হাদীছগুলোই বর্ণনা করেছেন। কোন হাদীছকে সহীহ হিসেবে সাব্যস্ত করার জন্য এবং তা সহীহ বুখারীতে লিপিবদ্ধ করার জন্য তিনি সুস্পষ্ট করে কোন শর্তের কথা উল্লেখ না করলেও আলেমগণ তাঁর কাজের মূল্যায়ন করে নিম্নলিখিত শর্তগুলো বের করেছেনঃ
১) হাদীছের রাবী (বর্ণনাকারী) তার উপরের রাবীর সমসাময়িক হতে হবে এবং উভয়ের মাঝে সাক্ষাত হওয়া প্রমাণিত হতে হবে। অর্থাৎ সাক্ষাত করা এবং হাদীছ শুনা প্রমাণিত হওয়া জরুরী। এই শর্তে তিনি অন্যান্য মুহাদ্দিছদের খেলাফ (ভিন্ন মত প্রকাশ) করেছেন। এই ক্ষেত্রে ইমাম মুসলিমের শর্ত হচ্ছে উভয়ের মাঝে সাক্ষাত সম্ভব হলেই চলবে। জীবনে কমপক্ষে একবার সাক্ষাত হয়েছে বলে প্রমাণিত হওয়া এবং নির্দিষ্ট কোন হাদীছ শুনা জরুরী নয়।
২) রাবী ছিকাহ তথা নির্ভরযোগ্য হতে হবে।
৩) বর্ণনাকারীকে ন্যায়পরায়ন অর্থাৎ মানুষের সাথে কথা-বার্তায় ও লেনদেনে সত্যবাদী হতে হবে।
৪) রাবী (বর্ণনাকারী) পূর্ণ ম্মরণশক্তি সম্পন্ন হওয়া।
৫) হাদীছের সনদ মুত্তাসিল হওয়া। অর্থাৎ মাঝখান থেকে কোন রাবী বাদ না পড়া।
কোন হাদীছে উপরোক্ত শর্তগুলো পাওয়া গেলেই Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) স্বীয় কিতাবে তা লিখে ফেলেন নি। বরং প্রতিটি হাদীছ লিখার আগে তিনি গোসল করে দুই রাকআত নামায পড়েছেন এবং ইস্তেখারা করেছেন। তাঁর অন্তরে যদি হাদীছটি সম্পর্কে কোন প্রকার সন্দেহ জাগতো তাহলে সে হাদীছটি শর্ত মোতাবেক সহীহ হওয়া সত্ত্বেও তিনি সহীহ বুখারীতে লিখতেন না। এইভাবে মসজিদে নববীতে বসে তিনি তা লিখা শুরু করেন এবং একটানা ১৬ বছর এই কাজে দিন-রাত পরিশ্রম করেন। লিখা শেষ করেই তাড়াহুড়া করে তা মানুষের জন্য প্রকাশ করেন নি; বরং কয়েকবার তিনি তাতে পুনঃদৃষ্টি প্রদান করেছেন, ভুল-ত্র“টি সংশোধন করেছেন এবং পরিমার্জিত করেছেন। তিনবার তিনি তা লিপিবদ্ধ করেন। সর্বশেষ লিখিত কপিটিই বর্তমানে মুসলিম জাতির নিকট অমূল্য রত্ম হিসেবে সংরক্ষিত রয়েছে।
Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) এর উস্তাদ ও সমসাময়িক বিজ্ঞজন এবং বন্ধুগণের নিকট কিতাবটি পেশ করলে তাদের সকলেই তা পছন্দ করেন। যারা এই কিতাবটির প্রশংসা করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল, আলী ইবনুল মাদীনী, ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন এবং আরও অনেকেই। তারা সকলেই এর সকল হাদীছকে সহীহ বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাদের পরে এই উম্মাত আল্লাহ্ তাআলার কিতাবের পরই এটিকে সর্বাধিক সহীহ বলে গণ্য করেছেন।
Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) এর দানশীলতা ও উদারতাঃ
Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) প্রচুর ধন-সম্পদের মালিক ছিলেন। মুহাম্মাদ বিন আবু হাতিম বলেনঃ Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) এর এক খণ্ড যমীন ছিল। এ থেকে তিনি প্রতি বছর সাত লক্ষ দিরহাম ভাড়া পেতেন। এই বিশাল অর্থ থেকে তিনি খুব সামান্যই নিজের ব্যক্তিগত কাজে খরচ করতেন। তিনি খুব সীমিত খাদ্য গ্রহণ করতেন। বেশীর ভাগ সময়েই খাদ্য হিসেবে শসা, তরমুজ ও সবজি গ্রহণ করতেন। সামান্য খরচের পর যে বিশাল অর্থ অবশিষ্ট থাকতো তার পুরোটাই ইলম অর্জনের পথে খরচ করতেন এবং অভাবীদের অভাব পূরণে ব্যয় করতেন। তিনি সব সময় দীনার ও দিরহামের একটি থলে সাথে রাখতেন। মুহাদ্দিছদের মধ্যে যারা অভাবী ছিলেন তাদেরকেও তিনি প্রচুর পরিমাণ দান করতেন।
Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) এর জীবনীর সাথে সম্পৃক্ত একটি স্মরণীয় ঘটনাঃ
Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) এর জীবনীতে উল্লেখ করা হয় যে, তিনি একবার একটি থলের ভিতর একহাজার স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে হাদীছ অন্বেষণে সফরে বের হলেন। সফর অবস্থায় কোন এক চোর এই স্বর্ণমুদ্রাগুলো দেখে ফেলে এবং তা চুরি করার জন্য Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) এর পিছনে লাগে। কিন্তু চোর তা চুরি করার সকল প্রকার চেষ্টা করা সত্ত্বেও ব্যর্থ হয়। পথিমধ্যে Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) পানি পথে ভ্রমণের জন্য জাহাজে আরোহন করলে চোরও তাঁর সাথে যাত্রা শুরু করে। সেখানেও সে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরিশেষে চোর মুদ্রাগুলো চুরি করার নতুন এক কৌশল অবলম্বন করে। সে এই বলে চিৎকার করতে থাকে যে, এই জাহাজে উঠার পর আমার একহাজার স্বর্ণমুদ্রা চুরি হয়ে গেছে। মুদ্রাগুলো একটি থলের ভিতর ছিল। সে থলেটির এমন ধরণ বর্ণনা করল, যা সে ইতিপূর্বে ইমামের কাছে দেখেছিল। চিৎকার ও কান্নাকাটির মাধ্যমে চোরটি জাহাজের মাঝি-মাল্লাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়।
মাঝি-মাল্লাগণ এক এক করে সকল যাত্রীর পকেট ও শরীর তল্লাশি করা শুরু করল। এই দৃশ্য দেখে Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) চিন্তা ও হতাশায় পড়ে গেলেন। তিনি ভাবলেন, এখন যদি আমাকে তল্লাশি করা হয় তাহলে তো আমার কাছে একহাজার স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া যাবে। আর আমিই চোর হিসাবে সাব্যস্ত হবো। আমি অভিযোগ অস্বীকার করলেও আমার কথায় কেউ কর্ণপাত করবেনা। আর আমি যদি আজ চোর হিসেবে ধরা পড়ি তাহলে সারা দুনিয়ায় খবর ছড়িয়ে পড়বে যে, মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল আল বুখারী এক হাজার স্বর্ণ মুদ্রা চুরি করেছে। আমার সারা জীবনের সাধনা ব্যর্থ হবে। আমি যে সমস্ত সহীহ হাদীছ সংগ্রহ করেছি, তাও লোকেরা গ্রহণ করবেনা এবং পবিত্র ইলমে হাদীছের অবমাননা হবে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে তিনি এক হাজার স্বর্ণমুদ্রার মায়া ত্যাগ করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীছের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখার সিদ্বান্ত গ্রহণ করলেন।
তাই তালাশকারীগণ তাঁর শরীরে তল্লাশি চালানোর আগেই তিনি অতি গোপনে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রাসহ থলেটি পানিতে ফেলে দিলেন। এরপর সকলের মাল-পত্র ও শরীর তল্লাশির এক পর্যায়ে Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) এর শরীরও তল্লাশি করা হলো। জাহাজের কারও কাছে কোন থলের ভিতর এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া গেলনা।
পরিশেষে জাহাজের লোকেরা চোরকেই মিথ্যাবাদী হিসেবে সাব্যস্ত করে সকলকে হয়রানি করার শাস্তি দিলো এবং আল্লাহ্ তাআলা তাকেই অপদস্ত করলেন। পরে চোর তাঁর সাথে একান্তে মিলিত হয়ে বললঃ জনাব! আপনার সাথের এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা কোথায় রেখেছেন? উত্তরে তিনি বললেনঃ তোমার চক্রান্ত বুঝতে পেরে আমি তা পানিতে ফেলে দিয়েছি। এভাবেই আল্লাহ্ তাআলা Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) এবং তাঁর সংগৃহীত সহীহ হাদীছের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখলেন।
আলেমদের মূল্যায়নে সহীহ বুখারীঃ
সংক্ষিপ্তভাবে কিতাবটি সহীহ বুখারী হিসাবে প্রসিদ্ধি অর্জন করলেও এর পূর্ণ নাম হচ্ছে الجامع الصحيح المسند من أمور رسول الله صلى الله عليه وسلم وسننه وأيامه “আল জামেউস সহীহহুল মুসনাদু মিন উমরি রাসূলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়া সুনানিহি ওয়া আইয়্যামিহি”। তবে কারও কারও বর্ণনায় দীর্ঘ নামটির মধ্যে শব্দের তারতম্য রয়েছে। এই কিতাবে তিনিই সর্বপ্রথম হাদীছসমূহকে আধুনিক পদ্ধতিতে সুবিন্যাস্ত করেন। কিতাবটি রচনার জন্য তিনি মদীনা মুনাওয়ারায় গমণ করেন। মসজিদে নববীতে বসে একটানা ১৬ বছর কঠোর পরিশ্রম এবং ঐকান্তিক সাধনার ফলশ্র“তিতে সম্পাদিত এই গ্রন্থটি সর্বযুগের সকল আলেমের নিকট সমাদৃত হয়। সমকালীন মুহাদ্দিছ ও আলেমগণ এই মহাগ্রন্থের চুলচেরা বিশ্লেষণ, বিচার-বিবেচনা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং আলোচনা-পর্যালোচনা করেছেন।
সমগ্র উম্মাত সর্বসম্মতভাবে এই গ্রন্থটিকে أصح الكتب بعد كتاب الله “আল্লাহর কিতাবের পর সর্বাধিক বিশুদ্ধ ও নির্ভুল কিতাব” বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। উপরে বলা হয়েছে যে, প্রায় সত্তর হাজার লোক Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) এর নিকট হতে এই কিতাবটি শ্রবণ করেছেন। বর্তমান মুসলিম জাহানের এমন কোন স্থান ও ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাওয়া যাবেনা, যেখানে এই কিতাবটি শিক্ষা দান করা হয়না। ইসলামী শিক্ষা ধারার শিক্ষার্থীগণ এই গ্রন্থটি অধ্যয়ন ও পাঠ দানের যোগ্যতা অর্জন করার মাধ্যমেই বড় আলেম রূপে স্বীকৃত হয়ে থাকেন।
এ যাবৎ সহীহ বুখারীর যতগুলো ব্যাখ্যা গ্রন্থ বের হয়েছে, হাদীছের অন্য কোন কিতাবের এত বেশী সংখ্যক ব্যাখ্যা গ্রন্থ বের হয়নি। এই ব্যাখ্যা গ্রন্থগুলোর মধ্যে আল্লামা হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী কর্তৃক রচিত ‘ফতহুল বারী’ সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান দখল করে আছে। কেউ কেউ সহীহ বুখারীর উপর লিখিত ব্যাখ্যা গ্রন্থ শতাধিক বলে মন্তব্য করেছেন।
Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) এর শেষ জীবনে ও কঠিন পরীক্ষাঃ
Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) এর শেষ জীবন খুব সুখ-শান্তিতে অতিবাহিত হয়নি। বুখারার তৎকালীন আমীরের সাথে তাঁর মতবিরোধ হয়েছিল। ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ এই যে, যুগ শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ হিসাবে যখন Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) এর সুনাম ও সুখ্যাতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল তখন বুখারার আমীর স্বীয় সন্তানদেরকে সহীহ বুখারী পড়ানোর জন্য ইমামের কাছে প্রস্তাব করলেন। আমীর আরও প্রস্তাব করলেন যে, তার সন্তানদের পড়ানোর জন্য ইমাম বুখারীকে রাজ দরবারে আসতে হবে। কারণ সাধারণ জনগণের সাথে মসজিদে বসে আমীরের ছেলেদের পক্ষে সহীহ বুখারী পড়া সম্ভব নয়।
Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) তাঁর মসজিদ ও সাধারণ লোকদেরকে ছেড়ে দিয়ে রাজ দরবারে গিয়ে আলাদাভাবে আমীরের ছেলেদেরকে বুখারী পড়ানোতে ইলমে হাদীছের জন্য বিরাট অবমাননাকর ভেবে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন। তিনি পরিস্কার জানিয়ে দিলেন যে, আমি কখনও হাদীছের ইলমকে হেয় প্রতিপন্ন করতে পারবোনা আর না পারবো এই মহান রত্মকে আমীর-উমারাদের দারস্থ করতে। আমীর যদি সত্যিকার অর্থে ইলমে হাদীছের প্রতি অনুরাগী হয়ে থাকেনন, তাহলে তিনি যেন তাঁর সন্তানদেরকে নিয়ে আমার মসজিদে উপস্থিত হন।
এতে আমীর ইমামের প্রতি রাগান্বিত হয়ে তাঁকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করলেন এবং ইমামের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোর জন্য দুনিয়া পূজারী কিছু আলেম ঠিক করলেন। আমীরের আদেশ এবং ষড়যন্ত্রের প্রেক্ষিতে তিনি জন্মভূমি বুখারা ত্যাগ করে নিশাপুরে চলে যান। নিশাপুরেও অনুরূপ দুঃখজনক ঘটনা ঘটলে পরিশেষে সমরকন্দের খরতঙ্গ নামক স্থানে চলে যান। বুখারা থেকে বের হওয়ার সময় ইমাম আল্লাহর কাছে এই দুআ করেন যে, হে আল্লাহ্! সে আমাকে যেভাবে অপমান করে বের করে দিলো তুমিও তাকে অনুরূপ লাঞ্ছিত করো। এক মাস পার হওয়ার পূর্বেই খুরাসানের আমীর খালেদ বিন আহমাদের বিরুদ্ধে জনগণ বিদ্রোহ ঘোষণা করে তাকে ক্ষমতা ছাড়া করলো। পরবর্তীতে বাগদাদের জেলে থাকা অবস্থায় সে মৃত্যু বরণ করে। শুধু তাই নয়, যারাই Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) এর বিরুদ্ধে আমীরের সহযোগীতা করেছে তারাই পরবর্তীতে লাঞ্ছিত হয়েছে।
Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) সম্পর্কে আলেমদের কিছু অভিমতঃ
১) ইমাম ফাল্লাস (রঃ) বলেনঃ যে হাদীছ সম্পর্কে Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) জানতেন না, সেটি হাদীছ নয়।
২) ইমাম আবু নুআইম আহমাদ বিন হাম্মাদ (রঃ) বলেনঃ Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) হচ্ছেন এই উম্মতের ফকীহ। ইয়াকুব বিন ইবরাহীমও অনুরূপ বলেছেন।
৩) কোন কোন বিদ্যান ফিকহ ও হাদীছ শাস্ত্রে Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) কে আহমাদ বিন হাম্বাল এবং ইসহাক বিন রাহওয়াইয়ের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন।
৪) কুতাইবা বলেনঃ পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম হতে আমার নিকট অনেক লোক এসেছেন। কিন্তু মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল আল বুখারী যতবার এসেছেন আর কেউ এত বেশীবার আগমণ করেন নি।
৫) ইমাম আবু হাতিম রাযী বলেনঃ যে সমস্ত মুহাদ্দিছ বাগদাদে আগমণ করেছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে অধিক জ্ঞানী হলেন Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ)।
৬) ইমাম তিরমিজী (রঃ) বলেনঃ হাদীছের ইল্লত (দুর্বলতা), ইতিহাস এবং সনদ সম্পর্কে Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) এর চেয়ে অধিক জ্ঞানী ইরাক এবং খোরাসানের যমীনে আর কাউকে দেখিনি।
৭) ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রঃ) বলেনঃ খোরাসানের যমীনে Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) এর অনুরূপ আর কেউ জন্ম গ্রহণ করেন নি।
৮) ইমাম আলী ইবনুল মাদীনী (রঃ) বলেনঃ Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) এর সমকক্ষ আর কেউ ছিলনা।
৯) মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বিন নুমাইর ও আবু বকর ইবনে আবী শায়বা বলেনঃ আমি তাঁর মত আর কাউকে দেখিনি।
১০) আলী বিন হাজার বলেনঃ তাঁর মত আর কেউ আছে বলে আমার জানা নেই।
Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) এর এবাদত-বন্দেগী ও তাকওয়ার কিছু বিবরণঃ
হাদীছ চর্চায় সদা ব্যস্ত থাকলেও এবাদত বন্দেগীতে তিনি মোটেও পিছিয়ে ছিলেন না। তাঁর জীবনীতে উল্লেখিত হয়েছে যে, তিনি প্রতি বছর রামাযান মাসের দিনের বেলায় একবার কুরআন খতম করতেন। আবার তারাবীর নামাযের পর প্রতি তিন রাত্রিতে একবার খতম করতেন। মুহাম্মাদ বিন আবু হাতিম আল ওয়াররাক বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাত মোতাবেক তিনি শেষ রাতে তের রাকআত তাহাজ্জুদ নামায পড়তেন। তিনি আরও বলেন যে, আমি তাঁর সাথে থাকা সত্ত্বেও আমাকে কখনই জাগাতেন না। আমি বলতামঃ আপনি আমাকে ঘুম থেকে কখনই জগ্রত না করার কারণ কী? উত্তরে Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) বলতেনঃ তুমি যুবক। আমি তোমার ঘুমকে নষ্ট করতে চাইনা।
সহীহ বুখারী ছাড়াও Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) এর আরও কয়েকটি কিতাবঃ
সহীহ বুখারী ছাড়াও তিনি আরও কয়েকটি মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন। তার মধ্যে রয়েছেঃ
১) আল আদাবুল মুফরাদ। (বাংলায় অনুবাদ হয়েছে)
২) তারীখুল কাবীর। এতে তিনি হাদীছের রাবীদের (বর্ণনাকারীদের) জীবনী সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
৩) তারীখুস সাগীর। এতে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীসহ বেশ কিছু রাবীর জীবনী উল্লেখ করেছেন।
৪) খালকু আফআলিল ইবাদ। এতে তিনি মুতাজেলাদের একটি ভ্রান্ত মতবাদের প্রতিবাদ করেছেন।
৫) রাফউল ইয়াদাইন ফিস্ সালাত (নামাযে রাফউল ইয়াদাইন করা)।
৬) জুযউল কিরাআত খালফাল ইমাম (ইমামের পিছনে মুক্তাদীর কিরাআত পড়া)।
৭) কিতাবুয যুআ-ফাআস্ সাগীর।
৮) কিতাবুল কুনা (মুহাদ্দিছদের উপনাম সম্পর্কে)।
৯) আত্ তাওয়ারীখ ওয়াল আনসাব (রাবীদের জন্ম-মৃত্যু ও বংশ পরিচয় সম্পর্কে)।
১০) কিতাবুত তাওহীদ।
১১) আখবারুস্ সিফাত। এ ছাড়া তাঁর আরও অনেক গ্রন্থ রয়েছে।
Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) এর ওফাতঃ
Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) শেষ বয়সে উপনীত হয়ে বিভিন্ন ফিতনার কবলে পড়ে পার্থিব জীবনের প্রতি ভীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েন। এক দিন তিনি তাহাজ্জুদের নামাযে আল্লাহর নিকট এ বলে আবেদন জানান যে, “হে আল্লাহ্! এ সুবিশাল পৃথিবী আমার জন্য একান্তই সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। অতএব তুমি আমাকে তোমার নিকট তুলে নাও। মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দা Imam Bukhari – ইমাম বুখারী (রঃ) এর ব্যাথা ভারাক্রান্ত হৃদয়ের সবিনয় নিবেদন কবুল করলেন। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই ইলমে হাদীছের এই খাদেম দুনিয়া থেকে চির বিদায় গ্রহণ করেন। নিভে গেল মুসলিম উম্মাহর গগনচুম্বী দিপ্যমান প্রদীপ। সমরকন্দের খরতঙ্গ জনপদেই ৬২ বছর বয়সে হিজরী ২৫৬ সালের ঈদুল ফিতরের রাত্রিতে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। ঈদের দিন যোহরের নামাযের পর তাঁর জানাযার নামায অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর অসীয়ত মোতাবেক তিনটি সাদা কাপড় দিয়ে তাঁকে কাফনে জড়ানো হয়।
তাঁর জীবনীতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, দাফন করার পর তাঁর কবর থেকে মিসকের সুগন্ধির চেয়েও অধিক সুঘ্রাণ বের হতে থাকে। বেশ কিছু দিন এই অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। লোকেরা তাঁর কবর থেকে মাটি নেওয়া শুরু করে দেয়। অতঃপর বিষয়টি নিয়ে মানুষ ফিতনায় পড়ার আশঙ্কায় প্রাচীর দিয়ে মজবুতভাবে কবরটি ঢেকে দেয়া হয়।
আল্লাহর কাছে বিনয়ের সাথে দুআ করি, তিনি যেন এই মহান ব্যক্তিকে জান্নাতের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় দান করেন, তাঁর মর্যাদা সমুন্নত করেন, তাঁকে তাঁর একমাত্র আদর্শ ও মহান ইমাম প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর সাথে ঠাই দেন এবং আমাদেরকেও তাঁর সাথে কবুল করে নেন। আমীন।
তথ্যসূত্রঃ
১) আলবেদায়া ওয়ান নেহায়া
২) আল ওয়াফী ফিল ওয়াফিয়াত
৩) সিয়ারু আলামিন্ নুবালা
৪) তাহযীবুল কামাল ও অন্যান্য।
আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন।
আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে বিস্তারিত জানতে লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।
আইডিসি মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
আপনি আইডিসি মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.
আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।
কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।
ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।
ইসলামী দাওয়াহ সেন্টারকে সচল রাখতে সাহায্য করুন!
ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার ১টি অলাভজনক দাওয়াহ প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠানের ইসলামিক ব্লগটি বর্তমানে ২০,০০০+ মানুষ প্রতিমাসে পড়ে, দিন দিন আরো অনেক বেশি বেড়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।
বর্তমানে মাদরাসা এবং ব্লগ প্রজেক্টের বিভিন্ন খাতে (ওয়েবসাইট হোস্টিং, CDN,কনটেন্ট রাইটিং, প্রুফ রিডিং, ব্লগ পোস্টিং, ডিজাইন এবং মার্কেটিং) মাসে গড়ে ৫০,০০০+ টাকা খরচ হয়, যা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। সেকারনে, এই বিশাল ধর্মীয় কাজকে সামনে এগিয়ে নিতে সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে আপনাদের দোয়া এবং আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন, এমন কিছু ভাই ও বোন ( ৩১৩ জন ) দরকার, যারা আইডিসিকে নির্দিষ্ট অংকের সাহায্য করবেন, তাহলে এই পথ চলা অনেক সহজ হয়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ। যারা এককালিন, মাসিক অথবা বাৎসরিক সাহায্য করবেন, তারা আইডিসির মুল টিমের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন, ইংশাআল্লাহ।
আইডিসির ঠিকানাঃ খঃ ৬৫/৫, শাহজাদপুর, গুলশান, ঢাকা -১২১২, মোবাইলঃ +88 01609 820 094, +88 01716 988 953 (নগদ/বিকাশ পার্সোনাল) ইমেলঃ info@islamidawahcenter.com, info@idcmadrasah.com, ওয়েব: www.islamidawahcenter.com, www.idcmadrasah.com সার্বিক তত্ত্বাবধানেঃ হাঃ মুফতি মাহবুব ওসমানী ( এম. এ. ইন ইংলিশ )