Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) এর জীবনী

 

ইসলামের মহান বানী মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য দুনিয়াতে যুগে যুগে যেসকল ওলি আল্লাহর আবির্ভাব ঘটেছে তন্মধ্যে বড় পীর Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) অন্যতম। সেকারণে তাঁকে গাউসুল আজম হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়।

জন্মঃ

বড় পীর Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) ২য় রমযান ৪৭০ হিজরী বা ১৯ মার্চ, ১০৭৮ বাগদাদের জিলান শহরে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পুরো নাম আল-সাইয়িদ মহিউদ্দীন আবু মুহাম্মদ আব্দুল কাদির আল-জিলানী আল-হাসানী ওয়াল-হুসাইনী। তাঁর পিতার নাম আবু সালেহ মুছা জঙ্গী। মাতার নাম সাইয়েদা উম্মুল খায়ের ফাতেমা। তিনি ছিলেন হজরত ইমাম হাসান (রা.) এর বংশধর। বড় পীর Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) এর জন্ম ইরাকের অন্তর্গত জিলান নামক স্থানে হয় বলে তাকে জিলানী বলা হয়। তার উপাধি ছিল আবু মোহাম্মদ মুহিউদ্দীন।

 

বংশধারাঃ

Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) বংশধারা ছিল হাসানী হোসাইনী। তিনি বাবা-মা উভয় দিক থেকে রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বংশীয়ভাবে সম্পর্কিত।

 

পিতার বংশ ধারা-

Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ)-এর পিতার নাম (১) হযরত সাইয়্যিদ আবু সালেহ মূসা (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (২) হযরত সাইয়্যেদ আবু আবদুল্লাহ (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (৩) হযরত সাইয়্যেদ ইয়াহইয়া জাহেদ (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (৪) হযরত সাইয়্যেদ মােহাম্মদ (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (৫) হযরত সাইয়্যেদ দাউদ (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (৬) হযরত সাইয়্যেদ মূসা সানী (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (৭) হযরত সাইয়্যেদ আবদুল্লাহ সানী (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (৮) হযরত সাইয়্যেদ মূসা আল জোহন (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (৯) হযরত সাইয়্যেদ আবদুল্লাহ আল-মহজ (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (১০) হযরত সাইয়্যেদ হাসান মােসান্নাহ (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (১১) হযরত সাইয়্যেদ হাসান (রাঃ), এবং তাঁর পিতার নাম (১২) শেরে খােদা হযরত আলী মাের্তজা (রাঃ)।

 

মাতার বংশ ধারা-

Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ)-এর মাতার নাম (১) সাইয়্যেদা উম্মুল খায়ের ফাতেমা (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (২) হযরত আবদুল্লাহ সাউমেয়ী (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (৩) হযরত সাইয়্যেদ আবু জামাল (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (৪) হযরত মােহাম্মদ (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (৫) হযরত আবু আতা আবদুল্লাহ (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (৬) হযরত আবু আলাউদ্দিন (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (৭) হযরত আলী জওয়াদ (রহঃ), তাঁর
পিতার নাম (৮) আলী রেজা (রহঃ), তাঁর  পিতার নাম (৯) হযরত মূসা কাজেম (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (১০) হযরত ইমাম জাফর সাদেক (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (১১) হযরত ইমাম বাকের (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (১২) হযরত ইমাম জয়নুল আবেদীন (রহঃ), তাঁর পিতার নাম (১৩) হযরত ইমাম হােসেন (রাঃ) এবং তাঁর পিতার নাম (১৪) হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু।

 

ছেলেবেলাঃ

Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) এর বয়স যখন মাত্র ৫ বৎসর তখনই তিনি পিতৃহীন হন। তার লালন-পালন ও পড়াশোনার দায়িত্ব এসে পড়ে মায়ের উপর। মা চরকায় সুতা কেটে জিবীকা নির্বাহ করতে শুরু করেন। মাতা পুত্রকে কখনও কখনও অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাতে হয়। যেদিন ঘরে কিছু খাবার না থাকতো তখন মা বলতেন,”আজ আমরা আল্লাহপাকের মেহমান”। খুব অল্প বয়সেই Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) মকতবে যাওয়া শুরু করেন। বাল্যবয়সেই বিভিন্ন আলৌকিক ঘটনাও ঘটতে শুরু করে।

 

শিক্ষা জীবন ও ধর্ম প্রচারঃ

Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) এর বাল্য শিক্ষার হাতে খড়ি হয়েছিল জ্ঞানবান পিতা ও গুনবতী মাতার মাধ্যমে। তিনি স্বীয় পিতা -মাতার মাধ্যমেই প্রথমিক স্তরের শিক্ষনীয় বিষয়গুলি গৃহে বসেই সমাপ্ত করেছিলেন। সর্বপ্রথমেই তিনি পবিত্রকোরান পাঠ করা শিক্ষা করেন ও সম্পুর্ন কোরান হেফজ করেন। গৃহশিক্ষার বাইরেও তিনি জিলান নগরের স্থানীয় মক্তবেও বিদ্যা শিক্ষা করেছিলেন। তার প্রখর ধীশক্তি, প্রত্যুতপন্নমতিত্ব ও আল্লাহ প্রদত্ত প্রজ্ঞার ফলে বাল্যকালেই তিনি অসাধারন পান্ডিত্য অর্জন করতে সক্ষম হন।

তিনি মাকে দ্বীনী উচ্চশিক্ষার জন্য বাগদাদ গমনের ইচ্ছার কথা জানালেন। মা হৃষ্টচিত্তে অনুমতি দিয়ে তার পাথেয় প্রস্তুতিতে লেগে গেলেন। রওনার দিন জামার ভেতরে ৪০টি স্বর্নমুদ্রা সেলাই করে দিয়ে তার মা বললেন,”আল্লাহর নাম নিয়ে রওয়ানা হও।সততা ও বিশ্বস্ততাকে নিজের আদর্শরুপে শক্ত হাতে ধারন করবে।”

ঘটনাক্রমে রাস্তায় ডাকাত পড়লো। এক ডাকাত শিশু আব্দুল কাদিরকে তার কাছে কিছু আছে কিনা জিজ্ঞেস করলো। তিনি অকপটে স্বীকার করলো জামার ভিতর সেলাইকরা ৪০টি স্বর্নমুদ্রার কথা। বালকের সততায় ও সরলতায় ডাকাত মুগ্ধ হয়ে জিজ্ঞেস করলো, এবিপদের মুহুর্তে লোকেরা প্রকাশ্য সম্পদও গোপন করে ফেলে আর তুমি এ গোপন সম্পদের কথা কেন আমাকে বললে? বালক আ্ব্দুল কাদির জবাব দিল,”আমার আম্মা আমাকে সর্বদা সত্য কথা বলার উপদেশ দিয়েছেন।”

আল্লাহওয়ালাদের কথায় এমন প্রভাব থাকে যা পাষান হৃদয়ও একমুহুর্তে গলিত হতে পারে। ডাকাত সর্দার কাদতে শুরু করলো এবং বলল,”এবালকটি তার মায়ের নির্দেশ এত বিপদের মধ্যেও যেভাবে মানল ,আমি কি আমার সৃষ্টিকর্তার হুকুম কি এভাবে মানছি ? আমিতো অর্থ-সম্পদের লোভে মহান মালিকের অবাধ্য হয়ে শত শত মানুষের সর্বনাশ করছি”। কাফেলার লুন্ঠিত সম্পদ ফিরিয়ে দিয়ে ডাকাত তার গোটা দল সহ তওবা করে ডাকাতি ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলো । বলা হয় এই ব্যক্তিটিই নাকি পরবর্তীতে আল্লাহর এক ওলীতে পরিনত হয়েছিলেন। আল্লাহুআলম।

উচ্চ শিক্ষার জন্য ৪৮৮ হিজরীতে যখন প্রথম তিনি বাগদাদ গমন করেন তখন তার বয়স হয়েছিল আঠার বৎসর। বাগদাদ এসে তিনি শায়েখ আবু সাইদ ইবনে মোবারক মাখযুমী হাম্বলী, আবুল ওয়াফা আলী ইবনে আকীল এবং আবু মোহাম্ম ইবনে হোসাইন ইবনে মুহাম্মদ (রঃ) এর নিকট ইলমে ফিখ, শায়েখ আবু গালিব মুহাম্মদ ইবনে হাসান বাকিল্লানী, শায়েখ আবু সাইদ ইবনে আব্দুল করীম ও শায়েখ আবুল গানায়েম মুহম্মদ ইবনে আলী ইবনে মুহম্মদ (রঃ) প্রমুখের নিকট এলমে হাদীস এবং শায়েখ আবু যাকারিয়া তাবরেয়ী (রঃ) নিকট সাহিত্যের উচ্চতর পাঠ লাভ করেন। শায়খ জীলানীর বাহ্যিক ও আধ্যাত্নিক জ্ঞান চর্চার গূরু শায়খ আবু সাঈদ মাখযুমীর মনে তরুন এ শিষ্যের যোগ্যতা ও প্রতিভা সম্পর্কে এতই সুধারনা ও আস্থাশীলতার সৃষ্টি করল যে, নিজ হাতে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা তত্তাবধান ও পরিচালনার দায়িত্ব Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) এর নিকট অর্পন করে তিনি নিজে অবসর গ্রহন করেন।

তখন Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) এ মাদ্রাসার উন্নতি ও উৎকর্ষের কাজে আত্ননিয়োগ করেন। হাদীস ,তাফসির, ফিকহ ও অন্যান্য জ্ঞান বিজ্ঞানের শিক্ষাদান নিজেই শুরু করেন। পাশাপাশি ওয়াজ নসিহত ও তাবলিগের কর্মসুচীও চালু করেন । অল্পদিনের মধ্যেই এ প্রতিষ্ঠানের সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লো এবং দেশ বিদেশের বিদ্যার্থীরা এতে ছুটে আসতে লাগলো। এ পর্যায়ে মাদরাসার নামকরনও শায়খের সাথেই সম্পৃক্ত হয়ে ‘মাদরাসায়ে কাদেরিয়া” হয়ে গেল।

 

IDC Partner

 

তরীকতের দীক্ষা গ্রহণঃ

তরীকতের পথ খুবই কষ্টকর ও সমস্যা সংকুল। প্রতি পদে পদে এতে রয়েছে বিপদের সম্ভাবনা। আরো আছে চিরশত্রু শয়তানের পাতা ফাঁদে পড়ে ঈমানচ্যুত হয়ে পথভ্রষ্ট হবার আশংকা। তাই একাকী এ পথে চলা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আর এটা সমীচিনও নয়।  ডাক্তারী শাস্ত্র আয়ত্ব করার জন্য যেমন কেবলমাত্র পুঁথিগত বিদ্যা লাভই যথেষ্ট নয় বরং একজন বিজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে থেকে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জন করাও অত্যাবশ্যকীয়। একজন শিক্ষাগুরুর পথ নির্দেশও তাই এপথে চলার জন্য একান্ত অপরিহার্য্য। বাগদাদ নগরীর মুজাফফরিয়া মহল্লায় বাস করেন শায়খ হাম্মাদ বিন মুসলিম দাব্বাস (রহঃ) । সহজ সরল অনাড়ম্বর তাঁর জীবন যাত্রা। আঙ্গুর ও খেজুরের রস বিক্রি করা তাঁর পেশা। তাই মানুষ তাঁকে দাব্বাস বলে ডাকে। দাব্বাস শব্দের অর্থ রস বিক্রেতা। এই মহান বুজুর্গের রসে কোনাদিনও মাছি বসেনা। সিরিয়ার রাহবা গ্রামে জন্ম নিয়েছিলেন তিনি।

বাগদাদে আসার পর আর কখনও ফিরে যাননি স্বীয় জন্মভূমিতে এ মহান দরবেশ। বেছে নিয়েছেন তালেবে মাওলাগণকে সঠিক পথে পরিচালিত করার মহান দায়িত্ব। যুগের কর্ণধার এই মহান সাধকের নিকটই তরীকতের প্রাথমিক দীক্ষা নিলেন Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ)। আত্মনিয়োগ করলেন কঠিন আধ্যাত্মিক সাধনায়। প্রথম দর্শনেই নবাগত সদস্যের অতি উজ্জল ভবিষ্যতের বিষয়ে জানতে পারলেন শায়খ হাম্মাদ বিন মুসলিম দাব্বাস (রহঃ)। আল্লাহ তা’য়ালার অশেষ রহমতের চির জ্যোর্তিময় বলয় সদা পরিবেষ্টন করে আছে তাঁর এ নতুন শিষ্যকে। সময় তাঁর জন্য অপেক্ষমান। সে সময় সন্নিকটে যখন এ অনারব যুবক অভিসিক্ত হবেন সমস্ত গাউসদের নেতা বা ‘গাউসুল আযম’রূপে। একদিন তামাম শিষ্যদের ভরা মজলিসে তিনি বলেই ফেললেন সেকথা। তিনি বললেন, “সেই সময় সমাগত প্রায়, যখন দুনিয়ার সমস্ত অলি আল্লাহ্গণের গর্দানে থাকবে তাঁর কদম। এই অনারব ব্যক্তির মুখে এক সময় উচ্চারিত হবে একথা, আমার কদম সকল অলি আল্লাহ্গণের স্কন্ধে” তাঁর এই ঘোষনার সময় তখনকার সমস্ত অলি আল্লাহ্গণ তাঁর কদমের উদ্দেশ্যে নিজেদের ঘাড় নত করে দেবে।

মহান সাধক শায়েখ হাম্মাদ বিন মুসলিম দাব্বাস (রহঃ) এর সান্নিধ্যে দীর্ঘদিন কাটিয়ে সাধনা পথের সুকঠিন ও বিপদসংকুল বাঁকগুলো একে একে পার হয়ে গেলেন তিনি। কঠিন রিয়াজত ও মুশাহিদার মাধ্যমে তরীকতের সুকঠিন পথ পাড়ি দেবার মত  শক্তি ও সাহস সঞ্চার হলো তাঁর নিজের মধ্যে। এবার শুধুই এগিয়ে চলার পালা। যে বাজ পাখী দুর আকাশে  উড়ে বেড়াবার জন্যই জন্ম নিয়েছে তাকে কি করে খাঁচায় আটকাবেন শায়খ? কিন্তু তিনি যে তাঁকে নির্বিঘ্নে অসীম নীলাকাশে রাজত্ব করার মত একটা শক্ত ভিত তৈরী করে দিতে পেরেছেন সেটাইবা কম কীসে ?  প্রভুর প্রেম ও মারিফাতের প্রচন্ড নেশায় পেয়ে বসেছে তরূণ Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) । দয়াময় প্রভুর মিলন সুধা আকন্ঠ পান না করে যেন কিছুতেই নিস্তার নেই তাঁর।

অতি উচ্চাশা মনে নিয়ে দুরু দুরু বুকে এবার তিনি গিয়ে হাজির হলেন যুগশ্রেষ্ট তাপস শায়খ হযরত আবু সাঈদ মুবারক মাখযুমী (রহঃ) এর নিকট। তাঁকে মুরীদ করে নিলেন এ সাধক। তাঁর মনের আশা পূরণের পথও বাতলে দিলেন তিনি। এভাবে দিন-রাত কঠোর তপস্যা ও রিয়াজত-মুশাহিদা-মুজাহিদার মধ্য দিয়ে কেটে গেল তাঁর আরো পঁচিশটি বছর। সার্থক হলো তাঁর রিয়াজত, আর পরিপূর্ণতা পেল তাঁর কঠোর সাধনা।

 

Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) এর লিখিত বইঃ

তিনি কাব্য, সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, ভূগোল ইত্যাদি বিষয়ের পণ্ডিত ছিলেন। তার রচিত বহু গ্রন্থ রয়েছে। এসব গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য

  • কিতাব সিরর আল-আসরার ওয়া মাযহার আল-আনওয়ার, (রহস্যের গোপন বই এবং আলোর প্রকাশ)
  • ফুতুহ আল গাইব (অদৃশ্যের রহস্য)
  • গুনিয়াতুত তালেবীন (অন্বেষকদের ধন) غنیہ الطالیبین
  • ক্বসীদায়ে গাউসিয়া
  • আল-ফুয়ুদাত আল-রব্বানিয়া (প্রভুর অনুগ্রহের প্রকাশ)
  • পনেরোটি চিঠি: খামসাতা ‘আশারা মাকতুবান
  • কিবরিয়াত এ আহমার
  • জান্নাত ও জাহান্নামের সংক্ষিপ্ত বিবরণ
  • মহিমান্বিত প্রতিভাস (আল-ফাতহ আর-রব্বানী)

 

Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) এর চারিত্রিক গুণাবলিঃ

স্বভাব–চরিত্রঃ

Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) রাসুলে করিম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)–এর পূর্ণ অনুসারী। মানুষে মানুষে তিনি কোনো পার্থক্য করতেন না। বাদশাহ-ফকিরকে দেখতেন একই নজরে। এমনকি গরিবকে দিতেন তিনি প্রাধান্য। আমির লোকদের হাদিয়া তিনি গ্রহণ করতেন না। তবে গরিবের হাদিয়া গ্রহণ করতেন সন্তুষ্টচিত্তে। জীবনে শাহি–দরবারে কখনো গমন করেননি। তাঁর দরবারে যত হাদিয়া উপস্থিত হতো তিনি দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত লোকদের মধ্যে তা বিলিয়ে দিতেন। মানুষের দুঃখ সহ্য করতে পারতেন না। তা দূর করার জন্য ব্যাকুল ছিলেন। তিনি বন্ধুবৎসল, বিনয়ী, মিষ্টভাষী ও অমায়িক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। অপরের সালামের অপেক্ষা তিনি করতেন না। আগেই সালাম দিতেন, মুসাফাহার জন্য আগেই হাত বাড়িয়ে দিতেন।

আচার ব্যবহারঃ

তিনি উপরােক্ত অনুপম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন বলে তাঁর আচার ব্যবহার ছিল অত্যন্ত মধুর এবং আকর্ষণীয়। মানুষ তাঁর আচার ও ব্যবহারে যেমনই মুগ্ধ হত, তেমনই তাঁর বশহয়ে যেত। তিনি মানুষকে যােগ্য সম্মান দান করতেন। ছােটদেরকে স্নেহ ও আদর করতেন পক্ষান্তরে তাঁর ব্যক্তিত্ব এবং আত্মসচেতনতা এই ধরনের ছিল যে, তাঁর সামনে উপস্থিত স্বয়ং রাজ্যের খলীফা পর্যন্ত নিজেকে তাঁর নিকট ক্ষুদ্র মনে করতেন। অথচ Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) সাহেব সকলের সাথেই একান্ত বিনয় ও বিনম্র ব্যবহার করতেন।

ধৈর্য ও সংযমঃ

ধৈর্য ও সংযম তাঁর মহান চরিত্রের বৈশিষ্ট্য ছিল এ বিষয়ে তিনি নিজেই বলেন, কখনও কখনও আমার উপর ইলমে বাতেনের এমন গুরুতর বােঝা চাপিয়ে দেওয়া হত যে, পৃথিবীর কোন পাহাড় পর্বতের উপর তা অর্পিত হলে নিমিষেই তা চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যেত।

স্নেহ-মমতা গাম্ভীর্যঃ

স্নেহ-মমতার মূর্ত প্রতীক ছিলেন Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ)। তিনি স্বীয় ভক্ত এবং শিষ্য মণ্ডলীকে যেমন মায়া মমতার বন্ধনে বেঁধে  রাখতেন, তেমনি তাঁর অকৃত্রিম, অনুপম স্নেহ আকর্ষণে তারা তাঁকে মনে প্রাণে ভালোবাসতো ও গভীর ভাবে শ্রদ্ধা করত।
এইজন্য ভক্ত ও অনুরক্তগণ তাঁর সাহচর্যে ও তাঁর পবিত্র দরবারে উপস্থিত থাকা কালে পরম আনন্দ অনুভব করত।

সাহসিকতাঃ

তিনি দৃঢ় মনােবল, সৎসাহস এবং নির্ভিকতায় ছিলেন সুউচ্চ হিমাদ্রীর মত। তাঁর প্রতিটি কাজে, কর্তব্যে এবং দায়িত্ব পালনে কখনও অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেন নাই। সর্বদা তিনি ন্যায়ের ঝান্ডা উচ্চ রাখতেন। বাদশাহ বা খলীফাদের কাছে চিঠি পত্র লিখার প্রচলিত রীতি প্রথমে বাদশাহর সীমাহীন স্তুতি, প্রশংসা এবং নিজেকে অধম হতে অধমের স্তরে অবনমত করা (যাহা বিনয় নয় বরং সৎ সাহসের অভাবজনিত ভীরুতা) Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) এই প্রচলনকে খুবই খারাপ মনে করতেন এবং নিজে এই রীতি হতে সর্বোতভাবে দূরে থাকতেন।

দয়ামায়া ও দানশীলতাঃ

Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) এর তুল্য দয়ালু, ক্ষমাশীল এবং দানশীল ব্যক্তি সে সময়ে সারা দুনিয়ায় বিরল বৈ কি! মানুষের জন্য তাঁর দয়ামায়া ছিল অসীম। পরদুঃখ দেখলে তার হৃদয় কেঁদে উঠতো। কাউকে বিপন্ন দেখলে তার বিপদ উদ্ধার করতে তিনি অবিলম্বে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। দানের ক্ষেত্রে তিনি মুক্ত হস্ত ছিলেন। কখনও কোন প্রার্থী তার দরজা হতে বঞ্চিত হয়ে ফিরে গেছে বলে শুনা যায় না।

ইবাদতের কঠোর সাধনাঃ

তিনি একাধারে ৪০ বছর পর্যন্ত ইশার নামাজের অযু দিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করেছেন। প্রত্যহ শেষ রাত্রে পাঠ করতেন, আল মুহিতুল আলমে, আর রাব্বুশ শহীদ, আল হাসীবুল ফায়্যায়িল খাল্লাকি, আল খালিকু, আল বারিউ, আল মুসাব্বিরু। উক্ত দোয়া পাঠ করার সাথে সাথে লোক চক্ষুর সামন থেকে অদৃশ্য হয়ে যেতেন। তিনি রাতের একটা সময় জিকির ও মোরাকাবা করে কাটাতেন। যৌবনের অধিকাংশ সময় রোজা রেখে কাটিয়েছেন। যখন নফল নামাজ আদায় করতেন সুরা ফাতেহার পর সূরা আর রহমান, সূরা মুজাম্মিল কিম্বা সুরা ইখলাস পড়তেন। তন্দ্রার ভাব আসলে দেখে দেখে কোরআন তেলাওয়াত করতেন।

Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) এর কেরামত ও উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনাঃ

০১) কথিত আছে যে Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) মাতৃগর্ভে থাকাকালীন সময়ে পবিত্র কুরআনের ১৮ পারা মুখস্ত করেন। বাল্যকালে যখন তাকে মক্তবে কুরআন শিক্ষার জন্য পাঠানো হয় তখনই তার এ মহান কেরামত প্রকাশিত হয়।

০২) অত্যন্ত শিশু অবস্থায় রমজানের ও ঈদের চাঁদ দেখার ব্যাপারে সংশয় দেখা দিলে গাউছ পাকের মায়ের দুধপান করা না করার উপর তার সমাধান নির্ধারিত হয় কারণ গাউছ পাক পবিত্র রমজান মাসে জন্ম গ্রহণ করলে তার মায়ের বর্ণনানুযায়ী তিনি সুবহে সাদেক থেকে ইফতার পর্যন্ত রমজান মাসে কোনদিনও মায়ের দুধ পান করেননি।

২৯ শাবান। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় জিলানবাসীদের কেউ রমজানের চাঁদ দেখতে পায়নি। সকলে রোজা রাখা না রাখার বিষয় নিয়ে সংশয়ের মধ্যে পড়ে গেলেন। এমতবস্থায় রাতের শেষাংশে সুবহে সাদেকের পূর্বে তথা ১ রমজান ধরাধামে আসেন Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ)। শিশু Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) জন্মের পর সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত দুধ ও মধু পান করেন। কিন্তু সুবহে সাদিকের পর তাকে আর কিছু খাওয়ানো যায়নি। এ আশ্চার্যজনক খবর ছড়িয়ে পড়লে সকলে বুঝতে পারল মাহে রমজান শুরু হয়েছে।

০৩) Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) শৈশবকালে যখনি খেলাধুলার মনোনিবেশ করতে আগ্রহী হতেন তখনি একটি গায়েবী আওয়াজ শুনতে পেতেন,“হে মোবারক শিশু আমার দিকে এস! অন্যত্র আবদুল কাদের রহ:) নিজে বর্ণনা করেন, রাত্রিকালে যখনি আমি অসাবধানবশতঃ নিদ্রায় অভিভূত হয়ে পড়তাম তখনি এ বানী আমার অন্তরে প্রতিধ্বনি হত, হে আবদুল কাদের, ঘুমাবার জন্য তুমি দুনিয়াতে আসনি বরং ঘুমন্ত ও মোহান্বিত মানবকুলকে জাগ্রত করার জন্য তোমাকে প্রেরণ করা হয়েছে।

০৪) Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) যখন মাতৃগর্ভে তখন একদিন তার মাতা সাইয়্যেদেনা উম্মুল খায়ের ফাতেমা (রঃ) স্বপ্নে দেখেন যে মানব জাতির আদি মাতা, হযরত আদম (আ:) এর স্ত্রী হজরত হাওয়া (আ:) সহাস্য আনন্দে তাকে বলছেন,”ওগো ফাতেমা! তুমি বিশ্বচরাচরের ভাগ্যবতী মহিলা। তোমার গর্ভে যে সন্তান আছে, সে হবে আওলিয়াকুল শিরমনি গাউসুল আজম।” অনুরুপ আরেক স্বপ্নে দেখলেন হযরত ইব্রাহিম (আ:) এর স্ত্রী বিবি সারা (র:) মধুর স্বরে বললেন,”হে সৌভাগ্যবতী ফাতেমা! আল্লাহ পাকের মারেফাত তত্ত্বের শ্রেষ্ঠ পথ প্রদর্শক ‘নুরে আজম’ তোমার গর্ভে আছে। সুতরাং তুমি নিবিষ্ট মনে আল্লাহর গুনগানে নিমগ্ন থেক।”
একই ভাবে আবার দেখলেন ফেরাউনের পুন্যবতী স্ত্রী আসিয়া (আ:) মধুর কন্ঠে বলছেন,”ওগো সৌভাগ্যবতী ও মর্যাদাশীলা ফাতেমা ! আমি তোমাকে এক অনির্বচনীয় শুভসংবাদ প্রদান করছি। তুমি অতিশয় সৌভাগ্যবতী ও মর্যাদাশীলা রমনী।তোমার গর্ভে যে আওলিয়াকুল শ্রেষ্ঠ সন্তানের আবির্ভাব হয়েছে,পৃতিবীর বুকে তার উপাধি হবে ‘রওশন জমির’। সুতরাং তুমি সতর্কতার সহিত সেই শুভক্ষনের জন্য অপেক্ষা করতে থাক।”এরকম আরো বহু স্বপ্ন তিনি তার গর্ভাবস্থায় দেখেন।

৫) একবার তিনি মক্তবে উপস্হিত হলে সেখানে বসার জন্য কোন স্থান পাচ্ছিলেন না। এমন সময় অদৃশ্য হতে আওয়াজ হলো,”হে শিক্ষার্থীগন! এই বালকের জন্য তোমরা একটু স্থান করে দাও, যাতে তিনি বসতে পারেন।” কেউই আওয়াজের দিকে তেমন লক্ষ্য দিল না। পরিশেষে আবার গম্ভীর কন্ঠে দৈববানী ঘোষিত হলো, ”হে শিক্ষার্থীগন! তোমরা কি দেখতে পাচ্ছ না যে, আল্লাহর প্রিয় অলী দ্বারে দাড়িয়ে আছে? উঠ, তাকে বসার স্থান করে দাও। অযথা বিলম্ব করে সময় অপচয় কর না।”এই অদৃশ্য বানী ছাত্র শিক্ষক সকলের কর্নেই ভীষনভাবে আঘাত করল। সকলেই হতচকিত ও বিস্ময়াপন্ন হয়ে গেল এবং Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) কে বসবার স্থান করে দিল।

IDC Partner

কাদেরিয়া ত্বরিকার প্রবর্তণঃ

Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচার ও প্রসারে অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছেন। মুসলামানকে ভ্রান্তির বেড়াজাল থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে কোরআন সুন্নাহ ভিত্তিক মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকেন। মানুষকে আল্লাহ ও রাসূল (সা.) মুখী করার জন্য বিভিন্ন আমল বাতলিয়ে দিতেন। Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) যখন দুনিয়ার জীবন ত্যাগ করে পরপারে যান তখন তাঁর ভক্ত অনুসারীরা তাঁর আমল ও চরিত্রকে সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে কাদেরীয়া তরিকা প্রবর্তন করেন। সে সময়কাল থেকে কাদেরীয়া তরিকার প্রচলন আমাদের দেশেও প্রচলিত হয়েছে।

বেলায়াতের উচ্চস্তরের গাউসুল আজম সারা জাহানে প্রত্যেক জামানায় ৩১৩ জন অলি জমিনে বিদ্যমান থেকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর শান মান প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত থাকেন। সূফীতাত্ত্বিক পরিভাষায় তাঁদের আখইয়ার বলা হয়। ৩১৩ জন অলির মধ্যে ৪০ জন আবদাল, ৭ জনকে আবরার, ৫ জনকে আওতাদ, ৩ জন নকীব, ৪ জন নুজবা ও ১ জন গাউসুল আজম থাকেন। যাকে কুতুবুল আউলিয়া বা সুলতানুল আউলিয়া বলা হয়। বাকিরা অন্যান্য সাধারণ পর্যায়ের অলি। তৎজমানায় গাউসগণের মধ্যে যিনি সর্বোচ্চ মর্যাদায় অভিষিক্ত, বেলায়েতে ওজমা ও গাউসিয়তে কোবরার সুমহান আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন তিনি হচ্ছেন Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ)।

Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) এর উপদেশঃ

গাউসুল আজম বড় পীর Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) উপদেশের এমন সব মণি-মুক্তা ছড়িয়ে রেখে গেছেন, যার ঔজ্জ্বল্য কোনো দিনই হারাবে না। যেমন: তিনি বলেন, মুমিনের কাজ তিনটি: আল্লাহর হুকুম পালন করা, তাঁর নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা এবং তাঁর ইচ্ছা–সিন্ধুতে নিজেকে বিলীন করে দেওয়া। প্রথমে ফরজ, পরে সুন্নত ও তারপরে নফল। ফরজ ছেড়ে সুন্নত–নফল নিয়ে মশগুল থাকা আহম্মকি। সুন্নত আদায় বাকি রেখে নফল আদায়ের চেষ্টারও কোনো মূল্য নেই। ফরজ ছেড়ে দিয়ে সুন্নত ও নফল নিয়ে থাকা বাদশাহকে পরিত্যাগ করে গোলামের খিদমতে আত্মনিয়োগের শামিল। শুধু প্রতিমাপূজার নামই শিরক নয়, প্রবৃত্তির দাসত্ব করাও শিরকের শামিল। আসুন তাঁর জীবনের দু’টি ঘটনা থেকে আমরা উপদেশ গ্রহণ করি। যথাঃ

০১) একবার এক মরুপ্রান্তরে Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) ভ্রমণ করছিলেন। ইবাদত-বন্দেগী ও ধ্যানসাধনার এক বিশেষ ক্ষণে অদৃশ্য থেকে আওয়াজ এলো! হে আবদুল কাদের আমি তোমার প্রতি সন্তুষ্ট। সাধনার মাধ্যমে তুমি আজ এমন এক পর্যায়ে উপনীত হয়েছ যে, আমি আল্লাহ তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গিয়েছি। অতএব, এখন থেকে শরীয়তের কোন বিধান তোমার উপর বাধ্যতামূলক নেই। তুমি ইবাদত কর বা না কর, এতে কিছু আসবে যাবে না। যে কোন ধরনের কাজে তুমি এখন থেকে স্বাধীন। এ ধরনের কথা শুনে Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) খুব দৃঢ়তার সাথে ‘লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ পড়লেন। অদৃশ্য আওয়াজটি বন্ধ হয়ে গেল। তিনি বলতে লাগলেন হে অভিশপ্ত শয়তান, তোর কুমন্ত্রণা থেকে আমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করি। তোর এ প্রস্তাব শুনেই আমি বুঝতে পেরেছি যে, এ তোর ভয়াবহ কৌশল। আমকে পথচ্যুত করার এক মারাত্মক কূটচাল। কেননা, পবিত্র কোরআনে আছে, আল্লাহ কোন মানব সন্তানের সাথে সরাসরি কথা বলেন না। তাছাড়া সাধনার কোন পর্যায়েই ইবাদ-বন্দেগীর দায়িত্ব কারো উপর থেকে তুলে নেয়া হয় না। শরীয়ত অমান্য করার নির্দেশ আল্লাহ কখনও কোন ব্যক্তিকে দেন না। তোর আওয়াজ শোনামাত্রই আমি বুঝতে পেরেছি যে, এমন বাণী আল্লাহর পক্ষ থেকে আসতে পারে না। এ নিশ্চয়ই শয়তানের কৌশল।

এ কথা শুনে শয়তান বলল, এ ধরনের কথা বলে এর আগে আমি এই প্রান্তরেই অন্তত ২৭ জন সাধকের সর্বনাশ করেছি। আজ আপনি নিজ প্রজ্ঞা, জ্ঞান ও উচ্চপর্যায়ের সাধনাবলেই রক্ষা পেয়ে গেলেন, হে যুগশ্রেষ্ঠ ওলী। তখন এ কথা শুনে Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) আবার পড়লেন ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’। অর্থাৎ আল্লাহর খাস রহমত ছাড়া ধূর্ত প্রতারক শয়তান থেকে বেঁচে থাকার কোন শক্তি ও ক্ষমতা আমার নেই। শয়তানের প্ররোচনা থেকে রক্ষা পাওয়ারও দোয়া আল্লাহর প্রিয় নবী (সা.) আমাদের শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন। Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) এ দোয়া পড়ে বলতে লাগলেন, ঘটনার শেষ অংশে এসে তুই আমাকে নতুন করে আবার ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করছিস হে বিতাড়িত শয়তান। তুই বুঝাতে চাইছিস যে, আমার জ্ঞান ও প্রজ্ঞার দ্বারা আমি রক্ষা পেয়েছি। অথচ আমি যে দোয়াটি পড়েছি, এতে বলা আছে ‘আল্লাহর সাহায্য ও করুনা ছাড়া রক্ষার কোন উপায় বান্দার নেই। এ মন্তব্য শুনে শয়তান বলল, সত্যিই আপনি আল্লাহর প্রকৃত খাস বান্দা। কোনভাবেই আমি আপনাকে খোদাবিমুখ করতে পারলাম না। একথা বলে শয়তান ব্যর্থ হয়ে দূরে সরে গেল।

০২) তার মাতা তাকে জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে বাগদাদে পাঠানোর প্রাককালে চল্লিশটি দিরহাম তার কাপড়ে সেলাই করে দিলেন। এবং মিথ্যা কথা না বলার জন্য নছিয়ত করেন। পথিমধ্যে একদল দস্যু কর্তৃক তার কাফেলা আক্রান্ত হল। সবার কাছ থেকে সবকিছুই লুট পাট করে নিল। Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) একপাশে দাড়ানো ছিলেন। দস্যুরা তার কাছে কিছু আছে কিনা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, তার কাছে চল্লিশ দিরহাম আছে। অতঃপর তারা Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) কে তাদের সর্দারের কাছে নিয়ে গেলেন। সর্দার পুনরায় তার কাছে জানতে চাইলো একথা সত্য কিনা? গাউছুল আযম নির্দ্বিধায় বললেন, তা সত্য। দস্যু সর্দার জানতে চাইলো, এ রকম অকপটে সত্য কথা বলার কারণ কি? গাউছুল আযম বললেন, মায়ের নির্দেশ সর্বাবস্থায় সত্য কথা বলার। একথা শুনে দস্যু সর্দারের ভাবান্তর সৃষ্টি হল এবং মনে হতে লাগলো এ বালক তার মায়ের আদেশ পালন করার নিমিত্তে নিজের শেষ সম্বলটুকু হাতছাড়া হবে জেনেও অকপটে সত্য কথা বললো আর আমরা আল্লাহ ও রাসুলের (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নির্দেশ ভুলে গিয়ে আজীবন মানুষের উপর কতইনা অত্যাচার জুলুম করে চলেছি।  তার সততার গুনে অনেকগুল মানুষ হিদায়াত পেল।

Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) এর ওফাতঃ

৫৬১ হিজরি ১১ রবিউস সানি তিনি (রহ.) নশ্বর পৃথিবী ত্যাগ করে। তাঁর স্মরণে প্রতিবছর ১১ রবিউস সানী বিশ্বব্যাপী পালিত হয়েছে ফাতেহা-ই-ইয়াজদহম। বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভির্য্যের সাথে Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) এর ওফাত দিবস উপলক্ষে ফাতেহা-ই-ইয়াজদহম পালিত হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক চন্দ্র মাসের ১১ তারিখ কাদেরীয়া তরিকার অনুসারীরা Abdul Qadir Gilani – আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) এর ওফাতের তারিখে গেয়ারভী শরীফ পালন করেন।

আইডিসির সাথে যোগ দিয়ে উভয় জাহানের জন্য ভালো কিছু করুন।

 

আইডিসি এবং আইডিসি ফাউন্ডেশনের ব্যপারে বিস্তারিত জানতে  লিংক০১ ও লিংক০২ ভিজিট করুন।

আইডিসি  মাদরাসার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

আপনি আইডিসি  মাদরাসার একজন স্থায়ী সদস্য /পার্টনার হতে চাইলে এই লিংক দেখুন.

আইডিসি এতীমখানা ও গোরাবা ফান্ডে দান করে  দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা অর্জন করুন।

কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতেআইডিসি ‘র সাথে যোগাযোগ করুন।

ইসলামিক বিষয়ে জানতে এবং জানাতে এই গ্রুপে জয়েন করুন।

Islami Dawah Center Cover photo

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টারকে সচল রাখতে সাহায্য করুন!

 

ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার ১টি অলাভজনক দাওয়াহ প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠানের ইসলামিক ব্লগটি বর্তমানে ২০,০০০+ মানুষ প্রতিমাসে পড়ে, দিন দিন আরো অনেক বেশি বেড়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।

বর্তমানে মাদরাসা এবং ব্লগ প্রজেক্টের বিভিন্ন খাতে (ওয়েবসাইট হোস্টিং, CDN,কনটেন্ট রাইটিং, প্রুফ রিডিং, ব্লগ পোস্টিং, ডিজাইন এবং মার্কেটিং) মাসে গড়ে ৫০,০০০+ টাকা খরচ হয়, যা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। সেকারনে, এই বিশাল ধর্মীয় কাজকে সামনে এগিয়ে নিতে সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে আপনাদের দোয়া এবং আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন, এমন কিছু ভাই ও বোন ( ৩১৩ জন ) দরকার, যারা আইডিসিকে নির্দিষ্ট অংকের সাহায্য করবেন, তাহলে এই পথ চলা অনেক সহজ হয়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ। যারা এককালিন, মাসিক অথবা বাৎসরিক সাহায্য করবেন, তারা আইডিসির মুল টিমের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন, ইংশাআল্লাহ।

আইডিসির ঠিকানাঃ খঃ ৬৫/৫, শাহজাদপুর, গুলশান, ঢাকা -১২১২, মোবাইলঃ +88 01609 820 094, +88 01716 988 953 (নগদ/বিকাশ পার্সোনাল) ইমেলঃ info@islamidawahcenter.com, info@idcmadrasah.com, ওয়েব: www.islamidawahcenter.com, www.idcmadrasah.com সার্বিক তত্ত্বাবধানেঃ হাঃ মুফতি মাহবুব ওসমানী ( এম. এ. ইন ইংলিশ )